তিন
কর্নেল নীলাদ্রি সরকার
সামরিক দফতরের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার কর্নেল নীলাদ্রি সরকার চন্দনপুর-অন সী-তে প্রতি বর্ষায় কিছুদিন এসে কাটিয়ে যান। এখানে তার বন্ধু ডাক্তার সীতানাথ পট্টনায়কের একটি বাড়ি রয়েছে। সেখানেই তিনি উঠেছেন। ডাঃ পট্টনায়ক ভুবনেশ্বরের লোক। মাঝেমাঝে তিনি সস্ত্রীক এ বাড়িতে এসে থাকেন। তার হালকা সবুজ একটি ল্যাণ্ডমাস্টার গাড়ি রয়েছে। এবার তার স্ত্রী মালবিকা আর মেয়ে কল্যাণীও এসেছে সঙ্গে। কর্নেল এসেছেন পরে।
খুব ভোরে উঠে একবার সমুদ্রতীরে বেড়িয়ে আসা কর্নেল সরকারের অভ্যাস। ষাট পেরিয়েছে বয়স। চুল-দাড়ি সাদা হয়ে গেছে। কিন্তু ভিতরে যৌবনের প্রাণপ্রাচুর্য উদ্দাম।
আজ ভোরে কী খেয়াল হলো, কর্নেল সমুদ্রের দিকে গেলেন না। অবজারভেটরির কাছে এসে ডাইনে উত্তরের পথে চললেন। একপাশে বালিয়াড়ি, অন্যপাশে ছড়ানো-ছিটানো কিছু সুন্দর বাড়ি। চন্দনপুর-অনসী বড়লোকের জায়গা। তাই সাধারণ মানুষের কোনও জমজমাট বসতি গড়ে ওঠেনি। চারদিক ফাঁকা, খোলামেলা। কর্নেলের ইচ্ছে হলো, আজ আকাশ যখন পরিষ্কার–তখন টিলায় উঠে সূর্যোদয় দেখবেন। তিনি টিলার দিকে আস্তে আস্তে হাঁটছিলেন। সূর্য উঠতে এখনও আধঘন্টা দেরি আছে। টিলায় পৌঁছতে দশ মিনিট লাগবে মাত্র।
কাল রাত্রে পট্টনায়ক পরিবারের সঙ্গে খেতে বসে সভ্যতা ও সরলতার প্রসঙ্গ উঠেছিল। সেই কথাগুলো এখন মাথায় এল কর্নেলের। সরলতা! এখনও ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় অনেক মানবগোষ্ঠীর মধ্যে এটা টিকে রয়েছে। ঈশ্বর সরলতাকে রক্ষা করুন সভ্যতার থাবা থেকে। আরবস্তুত এই চমৎকার নির্মেঘ ভোরে আকাশ ও পৃথিবী জুড়ে সরলতা বিরাজ করছিল।
মাথার ওপর কী একটা পাখি উড়ে গেলে কর্নেল তাকে দেখার চেষ্টা করলেন। বোঝা গেল না। বার্ডওয়াচিং তার অন্যতম হবি। ভুল হয়েছে, বাইনোকুলারটা আনেননি। পাখিটার ডাক শুনে মনে হলো, দুর্লভ জাতের সেই উড-ডাক। এ অঞ্চলে উড-ডাক নাকি মাঝে মাঝে দেখতে পাওয়া যায়। কর্নেল মুখ তুলে পাখিটার মিলিয়ে যাওয়া লক্ষ করছিলেন। হঠাৎ তার কানে এল ধুপ-ধুপ শব্দ। তিনি দেখলেন, একটা হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জিপরা লোক ধুকুর-ধুকুর দৌড়ে আসছে। তার কানে এল : আমি চাপা দিইনি..আমি চাপা দিইনি! পাগল নাকি? কর্নেল কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
চন্দনপুর-অন-সী-তে এই ভোরবেলায় পাগল দেখতে পাওয়া এক দুর্লভ ঘটনা বটে! কর্নেল ভাবলেন। কাছাকাছি অনেককালের পুরনো একটা উন্মাদ আশ্রম বা লুনাটিক অ্যাসাইলাম আছে। সেকারণে এখানে প্রবাদ রটে আসছে যে চন্দনপুর অন-সীতে পাগল দেখতে পাওয়া নাকি দুর্লভ ও পরমাশ্চর্য ঘটনা এবং পাগলরা ভাল হতে অর্থাৎ পাগলামি সারাতে চায় না। তাই প্রাণ গেলেও এ তল্লাটে পা বাড়ায় না। অবশ্য এর সত্য-মিথ্যা যাচাই করা মুশকিল। অন্তত কর্নেল বহুবার এখানে এসেছেন, কোনও পাগল দেখেননি।
লোকটা সামনা সামনি আসামাত্র কর্নেল চমকে উঠলেন। আরে! এই লোকটাকে তো পানিগ্রাহী ফার্মে ট্রাকটার চালাতে দেখেছেন!
গোপালকিশোর কর্নেলকে যেন এতক্ষণে দেখল। দেখার সঙ্গে সঙ্গে হাউ-মাউ করে উঠল–স্যার, স্যার! আমার কোনও দোষ নেই–ঠাকুরের দিব্যি, আমি সবে, ক্ষেতে নেমেছি–অমনি স্যার…
কর্নেল মুহূর্তে টের পেলেন লোকটা একটা মারাত্মক কিছু দেখে ভীষণ শক্ খেয়েছে। তিনি তার সামনে দাঁড়িয়ে শক্ থেরাপি প্রয়োগ করার মতলবে ধমক দিলেন, আলবত তোমার দোষ। তুমিই তো চাপা দিয়েছ! স্বচক্ষে দেখেছি?
অমনি গোপালকিশোর কর্নেলের পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।…দোহাই স্যার, বাঁচান আমাকে! আমি খুন করিনি, আমি খুন করিনি!
কর্নেলের গায়ে পেশীগুলো শক্ত হয়ে গেল। খুন! মার্ডার! কী বলছে ও? দুহাতে ওর কাধ ধরে দাঁড় করালেন। তারপর এক মুহূর্ত ওর মুখটা দেখে নিয়ে সজোরে গালে এক চড় মারলেন। এই শক্ থেরাপি প্রয়োগ ছাড়া উপায় ছিল না।
চড় খেয়ে গোপালকিশোর কাঠ হয়ে দাঁড়াল। আস্তে আস্তে তার মুখে স্বাভাবিকতা ফুটে উঠল। একটা বড় নিশ্বাস ফেলে মাথাটা দুপাশে দোলাল হতাশভাবে। তারপর বলল, স্যার কি পুলিশ অফিসার?…
কিছু পরে অবজারভেটরিতে গিয়ে থানায় ফোন করে কর্নেল গোপালকিশোরের সঙ্গে পানিগ্রাহী ফার্মের দিকে যেতে যেতে ভাবছিলেন, এই তাঁর বিধিলিপি বলা যায়। শয়তানের সঙ্গে পাঞ্জা কষতে কষতেই তাঁর অবসরভোগী জীবনটা কেটে যাবে মনে হচ্ছে। একদণ্ড ফুরসত পাবেন না। এক চিরকালের খুনী সবসময় সব জায়গায় এমনি করে তার সামনে ফেলে দিচ্ছে একটা করে লাশ, তাকে লেলিয়ে দিচ্ছে নিজের পিছনে–এ এক বিচিত্র লুকোচুরি খেলা! রহস্যময় অন্ধকারে সেই খুনীকে খুঁজে বের না করা অব্দি তার রেহাই নেই। মাথায় জেদ চড়ে যায়। যৌবনে যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে শত্রুর সঙ্গে এমনি মরণপণ হারজিতের লড়াই করতে হয়েছে। তাকে। সেই থেকে ওই জেদের জন্ম। কর্নেল মনে মনে বলছিলেন, না ঈশ্বরনা। তুমি আমাকে পাদরি ভেবো না। আমি তোমার প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত প্রফেটও নই তাদের পায়ের নখের যোগ্যও নই। তবু কী জানি, জীবনে এ এক দুর্মর প্যাসনের পাল্লায় আমি পড়েছি যা আমাকে অনবরত একটি শক্তির বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়েছে, যে শক্তি জীবনবিরোধী। সে মৃত্যুর চেলা। এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মধ্যে সহজাত শক্তি হিসেবে সে জন্মায়–তার নাম হননেচ্ছা, হিংসার বিষাক্ত পিণ্ডের মতো তার অবচেতনায় উপস্থিতি। সুযোগ পেলে অনুকূল অবস্থা ও আবহাওয়ায় সেই পিণ্ড ডিনামাইটের মতো ফাটে ও ধ্বংস করে। সে হিসেবে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই এই হত্যাকারী রয়েছে। অস্তিত্বের অন্ধকার চোরকুঠুরি থেকে সে দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসে। তাই ডাঃ পট্টনায়কের মতো সজ্জন ভদ্র সুসভ্য মানুষকে। যদি দেখি–প্রিয়তমা স্ত্রী অথবা কন্যাকে হত্যা করে বসেছেন, বিস্মিত হবার– কিছু নেই।…
পরক্ষণে চমকে উঠলেন।…মাই গুডনেস! এ কী ভাবছি! হঠাৎ পট্টনায়কের কথাটা মাথায় এল কেন? এই আমি নীলাদ্রি সরকারও কি হননেচ্ছা থেকে মুক্ত? কে জানে! আমরা কোন মুহূর্তে কে কী করে ফেলব, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। সত্যি নেই। এমন কি, যে বিচারক ভারতীয় দণ্ডবিধির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, যিনি খুনীকে ফাঁসি দেন–তিনিও কি সেই সনাতন প্রবৃত্তি থেকে মুক্ত? উত্তরবঙ্গের সেই বিচারক ভদ্রলোকের কাহিনী সবাই জানে, যিনি স্ত্রী ও তিন মেয়েকে খুন করে বসলেন। ….
টিলার কাছাকাছি এসে বাঁদিকে পথ ঘুরল। সামনে পানিগ্রাহী ফার্ম দেখা গেল। টিলার পশ্চিমের ঢালু গা থেকে নেমে কিছু অসমতল এবং কিছু সমতল জমি বেড়া দিয়ে ঘেরা রয়েছে। টিলার গায়ের অংশে ইউক্যালিপটাস গাছের মধ্যে একটা কাঠের বাংলোমতো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। জমিটার দক্ষিণপ্রান্তে–সেই বাংলোর সরাসরি উল্টোদিকে ফার্মের গেট আর গুদাম। একটা চালাঘরও রয়েছে।
কর্নেল ভীষণ দুঃখিত। এই সরলতাময় ভোরবেলাটি পৃথিবীর জন্যে বয়ে। আনল এক ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ। যে চিরকালের খুনী তার এই সুন্দর দিনটি এভাবে মাটি করল, তার প্রতি ঘৃণায় ও রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। তার অন্যমনস্ক একটা হাত পকেটে ঢুকতেই একটি শক্ত বাঁকানো জিনিসের অস্তিত্ব টের পেলেন। রিভলভার! কী আশ্চর্য, আসবার সময় তাহলে কখন এটা পকেটে ঢুকিয়েছিলেন যথারীতি!
দুঃখে হাসলেন কর্নেল। বরাবর এটা হয়ে আসছে। অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে বলা যায়। বেরোলেই এটা সঙ্গে নিয়ে ফেলেন, জেনে বা না জেনেও। কেন নেন? আত্মরক্ষা! তাহলে মাই ডিয়ার ওল্ড ম্যান, তুমি সতত সতর্ক, কারণ তুমি সেই ইটারনাল মার্ডারারকে ভয় করো। তুমি ক্রমাগত দিনের পর দিন তার একটার পর একটা মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে তাকে বেআব্রু করে চলেছ–তাই তোমার এত অবচেতন ত্ৰাসনা জানি কখন সে তোমাকেই আক্রমণ করে বসে!
গোপালকিশোর ধরা গলায় রুদ্ধশ্বাসে বলল, এই যে স্যার, এই যে! আহা হা, এমন কমবয়সী মেয়ে স্যার! এত নিষ্ঠুর মানুষ থাকতে আছে–আহা হা!
দেখতে পাচ্ছি। বলে কর্নেল উঁচু আল থেকে যুবকের মতো লাফ দিয়ে নামলেন এতক্ষণে। পরক্ষণে তার নার্ভগুলো বর্তমান অবস্থার দিকে সক্রিয়তায় তৎপর হলো। অনেক হত্যাকাণ্ডের মতোই এও একটি নিছক হত্যাকাণ্ড। সূর্যের আভাস দেখা দিয়েছে দিগন্তে। একটু ঝুঁকে মেয়েটির মুখ লক্ষ্য করলেন। কোথায় যেন দেখেছেন! সম্ভবত সমুদ্রতীরেই। না, কাল বিকেলে যে চারটি মেয়ে তার কাছে সিগারেটের জন্যে আগুন চেয়েছিল, এ তাদের দলের নয়। কারণ, সেই স্ন্যাকস ও গারারাধারিনী তরুণীদের কারও গায়ে পাঞ্জাবি ছিল না।
পিঠে ছুরি মারা হয়েছে। কিন্তু ছুরিটা নেই। পিঠে মারা হয়েছে, তার একটা কারণ হতে পারে, দৌড়ে পালানোর সময় আঘাত করেছিল হত্যাকারী। কর্নেল সতর্ক চোখে আশেপাশে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করলেন। কোথাও একবিন্দু রক্ত নেই। মাটিটা বেলে। জল শুষে নিয়েছে। কাদা হয়নি বিশেষ। ঘাসে বা আগাছার পাতায় কোথাও এক ফোঁটা রক্ত লেগে নেই। লাশটা মনে হয় বাইরে থেকে এনে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও পায়ের দাগ নেই দেখা যাচ্ছে। নরম মাটিতে দাগ পড়া অনিবার্য ছিল। দেখা যাক, পুলিশ অফিসাররা কেউ আসুক। থানায় বলা হয়েছে ডাঃ পট্টনায়ককে সঙ্গে আনতে। পট্টনায়ক শুধু ডাক্তার নন, ফোরেনসিক-এক্সপার্টও। একসময় কলকাতায় ফেরেনসিক ইন্সটিটিউটে ইন্সট্রাক্টারও ছিলেন। সেই সূত্রে কর্নেলের সঙ্গে আলাপ হয়। শেয়ালদা স্টেশনে ট্রাকবন্দী একটা লাশের ব্যাপারে চমৎকার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন ভদ্রলোক।
গোপালকিপোর, তাহলে মেয়েটিকে তুমি চেনো না বলছ? কর্নেল এবার চুরুট ধরালেন।
আজ্ঞে না স্যার। এই প্রথম দেখছি।
কর্নেল মুখ ঘুরিয়ে জমির উত্তর-পূর্ব দিকে টিলার গায়ে সেই বাংলোটা দেখতে দেখতে বললেন, ওখানে কে থাকে?
গোপালকিশোর বলল, সায়েব যখন আসেন, থাকেন। বাকি সময় তালাবন্ধ থাকে।
কেউ থাকে না? কোনও মালী, কিংবা দাবোয়ান?
না স্যার। বাংলোটার বদনাম আছে। বলে গোপালকিশোর করুণ হাসল।
বদনাম! ভূতের নাকি? কর্নেল হেসে উঠলেন।
আজ্ঞে সেরকমই। রাতবিরেতে মানুষের আওয়াজ পাওয়া যায় কখনো। কখনো আবছা লোক দেখা যায়। আমরা আলো নিয়ে গিয়ে দেখেছি, কেউ নেই দরজা তালাবন্ধ রয়েছে ঠিকঠাক।
তুমি নিজে কখনো দেখেছ কি?
না স্যার আমার চোখে পড়েনি। ভোমরলালরা দেখেছে।
কে ভোমরলাল?
দারোয়ান স্যার। সে বেটা অবিশ্যি গাঁজা খায়। তবে হাসিরাম মালীও নাকি দেখেছে।
মিঃ পানিগ্রাহী এসব কথা জানেন?
না স্যার। ওনাকে এসব ফালতু কথা বলা যায় নাকি? তবে একবার…।
একবার?
সায়েব খুব বকেছিলেন এসে–শেবার ঘরের মেঝেয় কে বমি করে রেখেছিল।
বমি?
আজ্ঞে হ্যাঁ। অথচ আশ্চর্য, দরজায় তালা আটকানো ছিল দিব্যি।
তুমি বমিটা দেখেছিলে নিশ্চয়?
না স্যার, হাসিরাম দেখেছিল। ওকেই সব ধুতে হয়েছিল কি না। তাহলে তোমাদের বাংলোর ভূতে বমি করে দেখছি!
এইসময় একে একে গেটের পাশের গুদাম আর ঘরগুলো থেকে কিছু লোককে এদিকে আসতে দেখা গেল। কেউ কেউ দৌড়ে আসছিল। সবার আগে যে এল, তার গোঁফগালপাট্টা ইত্যাদি দেখেই বুঝলেন, এই ভোমরলাল। সে একলাফে কাছে এসে অস্ফুট আর্তনাদ করল, হা রামজী! এ কী ব্যাপার?
অন্যেরাও এসে ভিড় করল। বিস্মিত গুঞ্জন শুরু হলো। কর্নেল গম্ভীর স্বরে বললেন, ভোমরলাল, এটা খুনখারাবির ব্যাপার। তুমি সবাইকে বলো, সরে তফাতে গিয়ে দাঁড়াক। এক্ষুণি পুলিশ এসে যাবে।
গোপালকিশোর আদেশটা ঝট করে লুফে নিল। হাঁকডাক শুরু করল সে।…তফাতে যাও, তফাতে যাও! ভোমরলালও দারোয়ানী দেখাতে ছাড়ল না। সূর্য উঠছে। লাল একটা চাকা বেরিয়ে পড়েছে। সূর্যটা দেখতে দেখতে মন বিষণ্ণ হয়ে গেল কর্নেলের। হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটা দিনের শুরু, কোথায় পৌঁছবেন কে জানে! অবাক ভয় পাওয়া লোকগুলোর মুখে সুর্যের লালচে রঙ পড়েছে। একটা মুখে গিয়ে তার দৃষ্টি আটকে গেল। কী যেন রয়েছে মুখটায়। ঠোঁট দুটো কাঁপছে। কিছু জোর করে চেপে রাখলে মানুষের মুখে একটা দম আটকানো ছাপ। পড়ে, কর্নেল দেখেছেন। সরলতা! ডাঃ পট্টনায়ক সরলতা নিয়ে তর্ক করছিলেন মেয়ের সঙ্গে। এই সেই সরলতার দ্বিতীয় নমুনা বটে! কর্নেল লোকটার কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে নরম স্বরে বললেন, তোমার নাম কী ভাই? কিছু বলবে তুমি? বলো–কোনও ভয় নেই!
লোকটি অমনি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।…আমি হাসিরাম স্যার। আপনি পুলিশের অফিসার স্যার? কাল রাতে স্যার, আমি ঠিক দেখেছিলাম-সায়েবের বাংলোর মধ্যে যেন আলো জ্বলছে। এরা ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেবে বলে কিছু বলিনি স্যার। তখন বিষ্টি হচ্ছিল জোর। তারপর আলোটা যেমন জ্বলে উঠেছিল, আচমকা নিভে গেল স্যার।.।
ডিটেকশন করার ব্যাপারে ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়ার মূল্য আছে। কর্নেল সরকার চুরুট টানতে থাকলেন।..অনেক সময় ফ্যাক্টস বা বাস্তব তথ্যের চেয়েও ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া বেশি কাজ দেয়।