দশ

কল্যাণীর কীর্তি

কর্নেল ওইভাবে সুমন্তকে নিয়ে ডাঃ পট্টনায়কের ঘরে ঢুকতেই সবাই চমকে উঠেছিল। ডাঃ পট্টনায়ক, মিঃ সেনাপতি, মিঃ আচার্য, পট্টনায়কের স্ত্রী মালবিকা, তার মেয়ে কল্যাণী আর একটি অচেনা যুবক বসে ছিল। কর্নেল ঢুকেই বললেন, মিঃ সেনাপতি, এই শ্রীমানটিকে এবার আপনার জিম্মায় তুলে দিতে চাই। বিহিত ব্যবস্থা করুন। এই যুবকটি অবশ্য ডাঃ পট্টনায়ক-ফ্যামিলির সুপরিচিত।

সেনাপতি ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, কে ও? মার্ডারার নাকি?

ঘরসুদ্ধ নড়ে উঠল সঙ্গে সঙ্গে। পট্টনায়করা স্বামী-স্ত্রী অস্ফুটে বললেন সুমন্ত! আশ্চর্য তো!

অচেনা যুবকটি লাফিয়ে উঠে বলল, এই সেই মুখ–বলেই অবাক হয়ে চুপ করে গেল।

কর্নেল হেসে বললেন, হ্যাঁ–ইনিই তিনি। মিস তন্দ্রা ভাদুড়ীর সঙ্গী বা সঙ্গিনী যাই বলুন। এবং তার হত্যাকারীও বটে।

যুবকটি বলল, সর্বনাশ! এ তো দেখছি আমাদের মতোই পুরুষমানুষ। চুল কেটে ফেলেছে দেখছি। তাহলেও চিনতে ভুল হচ্ছে না। কাল বিকেলে এই আমাকে টাকা দিয়েছিল জোক করার জন্যে। হা-এই। ওই তো বাঁ-হাতে উল্কি রয়েছে।

সেনাপতি তক্ষুনি দুজন সেপাই ডেকে সুমন্তকে তাদের জিম্মায় থানায় পাঠিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, এই ভদ্রলোকের নাম প্রবীর দাশ, একজন হরবোলা–আবার মডার্ন বহুরূপীও বলতে পারেন। সী বিচে নানারকম ফান দেখিয়ে রোজগার করা এঁর পেশা। কাল বিকেলে তার সঙ্গী বা সঙ্গিনী যাই বলুন প্রবীরবাবুকে বলেছিল, শার্কে গিয়ে রাত নটার পর মুখোশ পরে ছোরা হাতে জোক করতে হবে। পেশা–তার ওপর টাকা পাচ্ছেন। তাই কিছু তলিয়ে না দেখেই প্রবীরবাবু রাজি হয়ে যান। কথা হয়–ওরা দুজন শার্কে সাড়ে নটা অব্দি থাকবে। ঝড়বৃষ্টি হোক, আর যাই হোক–প্রবীরবাবুকে এই জোক করতেই হবে।…।

প্ৰবীর বলল, হ্যাঁ স্যার। সেটা পইপই করে বলে দিলেন উনি।

কর্নেল বললেন, গল্প শুনেও কিছু সন্দেহ হয়নি আপনার?

না স্যার। ইশারায় ডেকে ফিস ফিস করে কথা বলছিলেন। মেয়েদের দিকে আপন গড বলছি স্যার…চোখ তুলে কথা বলার অভ্যাস আমার নেই। তাই অতটা লক্ষ করিনি। তাছাড়াজলজ্যান্ত বুক রয়েছে, সেটাও দেখতে পাচ্ছি।

কর্নেল পকেট থেকে বেলুন দুটো বের করে দেখালেন। সবাই অবাক হলো, তারপর হেসে উঠল। কর্নেল বললেন, বুঝে গেছি। তারপর?

একটুখানি তাড়া করে গিয়ে আমি চলে গেলুম। বৃষ্টির মধ্যে আর কতক্ষণ থাকা যায়? তার ওপর ভয় ছিল নবকে। ভাগ্যিস, নব ঝাঁপিয়ে পড়েনি কিংবা দৌড়ে পিছু নেয়নি। খুব রিস্কের কাজ স্যারনবর মতো সাংঘাতিক লোকের সামনে ছুরি হাতে লম্ফঝম্প করা চাট্টিখানি কথা নয়। শুধু কুড়িটা টাকার জন্যে রাজি হয়েছিলুম। ভেবেছিলুম, নব ধরে ফেললে না হয় পরিচয় দেব, বলব-জোক করছি। নব আমাকে চেনে, স্যার। কেন যেন তখন চিনতে পারেনি, বুঝতে পারছিনে। যাই হোক, সকালে ওই খুনের খবর শুনে দেখতে গেলুম। গিয়ে তো আমার চোখ ছানাবড়া। সর্বনাশ, এতো সেই মেয়ে দুটির একটি। অমনি ভয় পেয়ে সরে গেলুম। কিন্তু আমি গরীব হই, বা লেখাপড়া ভাল শিখিনি বটে–বিবেক হারাইনি, স্যার। মনে খুব কষ্ট হতে লাগল। অবশেষে যা আছে রাতে, বলে বড়দারোগাবাবুর সামনে গিয়ে সব জানালুম। ওনারা আমাকে আটকে রাখলেন।

সেনাপতি বললেন, আপনাকে আটকে রাখিনি প্রবীরবাবু। তবে কোর্টের সমন পেলে যেন কেটে পড়বেন না। আপনি এখন আসতে পারেন।

না স্যার, সে কী কথা! তাহলে যেচে পড়ে বলতে আসব কেন? বলে প্রবীর চলে গেল।

কর্নেল বললেন, যাক্ গে। ডাঃ পট্টনায়ক, আপনার কাজ শেষ হয়েছে?

পট্টনায়ককে গম্ভীর দেখাল। বললেন, আমি ধাঁধায় পড়ে গেছি, কর্নেল। যে গাড়ির চাকার দাগ আমরা সকালে বাংলোর বাইরে দেখে এসেছি–আপনাকে তখন সন্দেহ হলেও বলিনি–ওটা আমারই গাড়ির। এই হলো প্রথম ধাঁধা। দ্বিতীয় ধাঁধা-ঘন্টা দুই আগে ছাপ নেওয়ার কাজ শেষ করে বেরোব ভাবলুম, গাড়ি বের করে স্টার্ট দিলুম-নিল না। ইঞ্জিনের ঢাকনা তুলে দেখি কারবুরেটারে একটা রক্তমাখা ছোরা আটকানো রয়েছে।

মার্ডার উইপন!

হ্যাঁ–তাই। কিন্তু এ কীভাবে সম্ভব হলো? তাছাড়া সবচেয়ে সাংঘাতিক ব্যাপার, ছোরার বাঁটে যার হাতের ছাপ পাচ্ছি, সেই সিগারেট কেসে তারই হাতের ছাপ রয়েছে।

ডাঃ পট্টনায়ক, আপনি সিগারেট কেসটা দেখে চমকে উঠেছিলেন কেন?

কর্নেল, ওটা আমার মেয়ে গত মার্চ মাসে উপহার দিয়েছিল সুমন্তকে। সুমন্ত তখন আমার বাড়ি প্রায়ই আসত। কল্যাণীর সঙ্গে হৃদ্যতা ছিল। ও ভাল গীটার বাজায় কল্যাণীরও এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে। তাই আমি সিগারেট কেসটা ওখানে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েছিলুম। তবে গেটের কাছে গাড়ির চাকা সম্পর্কে আপনার সিদ্ধান্ত প্রথমে চমকে দিয়েছিল। কারণ ও-গাড়ি তো আমারই।

কর্নেল কল্যাণীর দিকে তাকাতেই সে চোখ নামাল। কর্নেল বললেন, কল্যাণী, তুমি গত রাত্রে হ্যাঁ, জাস্ট ডিনারের পর আমরা যখন শুতে গেলুম, তখন দশটা কোথায় বেরিয়েছিলে গাড়ি নিয়ে? তারপর কোত্থেকে খানিক বাদে ফিরে এলে!

মালবিকা বললেন, কল্যাণী বেরিয়েছিল? সে কী!

হ্যাঁ। আপনাদের গ্যারাজটা বাগানের কোণে একটু দূরে কিন্তু আমি যে ঘরে ছিলুম, তার জানালা থেকে দেখা যায়। দেখলুম, কেউ বেরিয়ে গেল গাড়ি নিয়ে। ডাঃ পট্টনায়ক গেলেন–ভাবলুম। কিন্তু তার গলার আওয়াজ পেলুম শোবার ঘরে। আপনার সঙ্গে কথা বলছিলেন। তাহলে কল্যাণী ছাড়া আর কে হবে!

পট্টনায়ক ক্ষুব্ধভাবে বললেন, আশ্চর্য! ও কী যে করে–আমরা কিছু জানতে পারিনা।

কর্নেল বললেন, কল্যাণী, দিস ইজ ভেরি ভেরি ইমপরট্যান্ট। জবাব দাও, প্লীজ।

কল্যাণী আস্তে বলল, সুমন্ত আমাকে চিঠিতে সব জানিয়েছিল কলকাতা থেকে। জানিয়েছিল, ২২ জুলাই রাত্রে সে পানিগ্রাহীসায়েবের বাংলোয় থাকবে। আমাকে যেতে বলেছিল। কোন পথে কীভাবে যাব, তাও লিখেছিল। ২১ তারিখে চিঠিটা পাই। তারপর হঠাৎ শার্কের সামনে কাল বিকেলে ওকে মেয়ে সেজে বেড়াতে দেখি। সে ইশারায় আমাকে চুপ করতে বলে। আর বলে যে রাত দশটার পর যেন ফার্মের বাংলোয় কথামতো যাই।

তাই কথামতো তুমি গেলে। কিন্তু কোন পথে গেলে?

হিলের উত্তর দিকটা ঘুরে। দক্ষিণ ঘুরে গেলে পথ ভাল ছিল কিন্তু ওদিকে যেতে বারণ করেছিল সুমন্ত। বলেছিল, আমাকে কিছু দামী জিনিসপত্র রাখতে দেবে–তার দাম নাকি, পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা। সোজা গেলে অত রাতে ও রাস্তায় গাড়ি দেখে কেউ সন্দেহ করতে পারে–তাই উত্তর দিকের বালিয়াড়ি হয়ে যেতে হবে।

সুমন্তর ভয় ছিল পানিগ্রাহীর জন্যে। উনি ওই রাস্তাটা ব্যবহার করবেন, সে অনুমান করেছিল। তারপর?

আমি গিয়ে বাইরে গাড়ি রেখে ঢুলুম। অল্প আলো জ্বলছিল ঘরে। সুমন্ত দরজা খুলে দিল। সে আমাকে ঘরে ঢুকতেও দিল না। দরজার সামনে একটা মস্ত প্যাকেট গুঁজে দিয়ে বলল, শীগগির এটা নিয়ে যে-পথে এসেছ, চলে যাও। প্যাকেটটা লুকিয়ে রাখবে। আমি সকালে দেখা করব।

তুমি বেডরুমে তাহলে ঢোকোনি?

না। বাইরের ঘরের ভিতরই ঢুকিনি। ঢুকতে দিলে তো!

ঘরে কোনও মেয়ে ছিল, লক্ষ করেছিলে?

পর্দা থাকায় ভিতরটা দেখতে পাইনি। তবে–তবে আমার মনে হচ্ছিল, ঘরে আরও কেউ যেন আছে। কারণ, প্যাকেট নিয়ে চলে আসবার সময় ফিসফিস কথা কানে এসেছিল যেন। বৃষ্টির মধ্যে কানের ভুল ভেবেছিলুম।

সুমন্তকে তাহলে অন্ধকারে দেখেছিলে?

হ্যাঁ। আলো ভিতরে ছিল। প্যাকেটটা দিয়ে দরজা বন্ধ করেছিল তক্ষুনি।

সুমন্তের পোশাক কি ভিজে মনে হচ্ছিল তখন? ভাল করে ভেবে বলল।

অতটা লক্ষ…না, ভিজে ছিল। কারণ, প্যাকেট নেবার সময় টের পাচ্ছিলুম, ওর হাত ভিজে। হ্যাঁ সম্পূর্ণ ভিজে অবস্থায় ও ছিল। একটু কাঁপছিল মনে হলো।

তারপর তুমি কী করলে?

বাড়ি ফিরে এলুম। গ্যারাজে গাড়ি ঢুকিয়ে প্যাকেটটা ডিকিতে রাখলুম।

সকালে এল সুমন্ত?

হ্যাঁ। তখন আটটা প্রায়। মা পাশের একটা বাড়িতে গেলেন। আমি একা ছিলুম। এসে বলল, চুল কাটতে দেরি হলো। প্যাকেটটা এবার চাই। আমার শরীরে কোল থেকে জ্বর জ্বর ভাব ছিল–এখনও একটু টেম্পারেচার। রাতে ভিজেছিলুম একটুখানি। তা, সুমন্তকে চাবি দিলুম গ্যারাজ আর গাড়ির। সে চলে গেল। খানিক পরে জানালা দিয়ে চাবির রিঙটা গলিয়ে ফেলে বলল, পরে দেখা হবে। কাকেও কিছু বলল না। ওর কাঁধে একটা কিটব্যাগ দেখলুম।

সেনাপতি বললেন, কিটব্যাগে তাহলে প্যাকেটটা ভরেছিল। আর ছোরাটা ইঞ্জিনের মধ্যে রেখে কল্যাণী বা ডাঃ পট্টনায়ককে বিপদে ফেলতে চেয়েছিল। কর্নেল, প্যাকেটটায় কী থাকতে পারে বলে আপনার ধারণা?

কর্নেল বললেন, নিষিদ্ধ ড্রাগ।

সে কী! কোথায় পেল সে?

পানিগ্রাহী ভারতকে ঢিট করতে চেয়েছিলেন। তাই নিজের ট্যাকের কড়ি দিয়ে যোগাড় যন্ত্র করে সী ভিউ হোটেলে পাচার করার মতলব ছিল। ওঁর সুইডেন যাওয়াটা আকস্মিক ব্যাপার নয়। বিদেশে চেষ্টা-চরিত্র করে ওই জন্যেই গিয়েছিলেন ভদ্রলোক। মন্ত্রীর দলে গেলে কাস্টমস বেশি কড়াকড়ি করবে না, ভেবেছিলেন। এদিকে ভারতবাবু ওঁর বিরোধীদলের বিরাট ঘাঁটি বলতে পারেন!

হ্যাঁ–সে তো সবাই জানে এখানে।

পানিগ্রাহী জনৈক মহিলাকে প্যাকেটটা ভারতবাবুর হোটেলে সুবিধেমতো জায়গায় পাচার করতে নিযুক্ত করেছিলেন সম্ভবত। হা–এখনও সবই অনুমান। তাই সুইট নম্বর এতে কোনও মহিলা ছিলেন বা এখনও আছেন কি না এখনই জানা দরকার।

সুইট নম্বর এ? আলিকে বলা আছে আমাদের তদন্ত শেষ না হওয়া অব্দি কাকেও চেক আউট করতে দেবে না। যদি সকাল সাতটার মধ্যে কেউ গিয়ে থাকে–উপায় নেই।

সব আমার অনুমান। তাকে নিযুক্ত করার কারণ, পানিগ্রাহী মহিলাটিকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তার মানে মহিলাটি নিশ্চয় তাহলে তথাকথিত সোসাইটি গার্ল। পানিগ্রাহীর নির্বুদ্ধিতার মাত্রা দেখে তাক লেগে যায়। ভদ্রলোক গত ইলেকশানে হেরে গিয়েছেন তাই জেদ। অফকোর্স–দিস ইজ এ সাইকলজিকাল প্রসেস। বাজি ধরে ক্রমাগত নির্বুদ্ধিতা বাড়িয়ে চলা একটা জীবন-মরণ প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত ওঁর মতো লোকের পক্ষে। ক্রমশ জেদ বাড়ছে, ক্রমশ নির্বোধ হয়ে পড়ছেন, ক্রমশ পাগলের মতো সম্ভব-অসম্ভব পথে টাকা খরচ করে দেউলিয়া হবার পথে পা বাড়াচ্ছেন। হ্যাঁ–এই হচ্ছে পানিগ্রাহীর বর্তমান জীবন। ওইভাবে মিঃ শর্মাকে আনিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ভদ্রলোক কখন তন্দ্রা বা সুমন্ত খবর দেবে যে পাখি ফাঁদে পড়েছে। তখন উনি শর্মাকে লেলিয়ে দেবেন। মিঃ সেনাপতি, পানিগ্রাহী প্রচণ্ড সন্দেহবাতিকগ্রস্ত মানুষ–তা আমি টের পেয়েছি। যেমন–আপনাদের অর্থাৎ লোকাল পুলিশকে উনি বিশ্বাস করতে পারেন না। তাই আগেভাগে কিছু জানাননি। ভেবেছিলেন, শর্মার মাধ্যমে সে ব্যাপারটা সেটলড হবে।

আচার্য ও সেনাপতি হাসলেন।

কর্নেল বললেন, আমার ধারণা–উনি সন্দেহবাতিকগ্রস্ত। মহিলাটি মাল নিয়ে কেটে পড়েন কি না ওঁর সে সন্দেহও ছিল। তাই সুমন্তর পরামর্শে তাকে লাগালেন ওয়াচডগ হিসেবে। কিন্তু তন্দ্রাও যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে! হা-হেরে যাওয়া মানুষ এইরকমই হয়ে থাকে। ভাবে, সবাই তাকে ঠকাবে। এবং সে কারণে তন্দ্রার ওপর ওয়াচডগ রাখলেন সুমন্তকে। আর সুমন্ত ওঁকে ঠকাল–সত্যি সত্যি ঠকাল। আসলে সুমন্ত তো তাই চেয়েছিল। নির্বোধ পানিগ্রাহী ওকে বিশ্বাস করে ঠকলেন। এর ফলে হলো কী জানেন? এরপর পানিগ্রাহীর অবশিষ্ট বিশ্বাসটুকুও চলে গেল মানুষের ওপর। এটা ভালই হলো।

পট্টনায়ক বললেন, কিন্তু তাকে খুন করল কেন সুমন্ত?

খুব সঙ্গত ও স্বাভাবিক মোটিভ। কল্যাণীর সাক্ষে প্রমাণ পাচ্ছি, মালটা শেষ অব্দি যে-কোনওভাবে হোক–হয়তো মহিলাটির সঙ্গে যোগসাজস করে কিংবা তার ঘর থেকে চুরি করে সুমন্ত হাতিয়েছিল। তা টের পেয়ে ওকে কিছু বলে থাকবে। তা হয়তো পানিগ্রাহীর কানে তোলার জন্যে শাসিয়েছিল। তাই ওকে সরানোর দরকার হলো সুমন্তর। কিংবা কল্যাণীর হাতে মালটা তুলে দেওয়ার পর দুজনের মধ্যে বচসা শুরু হয়ে থাকবে–যার পরিণামে আকস্মিক রাগেও ছুরি মারতে পারে সুমন্ত। ওর মতো ছেলের পক্ষে এটা খুবই সহজ ও স্বাভাবিক। এখন সবটা নির্ভর করছে সেই মহিলাটি আর সুমন্তের কনফেশনের ওপর। পানিগ্রাহীর মুখ থেকে কথা বের করা কঠিন। ওঁর রাজনৈতিক অ্যামবিশান ওঁকে মরিয়া করেছে। সত্যি বলতে কী, আমাদের আজকের জীবনে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই ট্র্যাজেডি এত ব্যাপক আর গভীর, কহতব্য নয়। তার প্রমাণ আমরা প্রতিদিনই সংবাদপত্রে পাচ্ছি।

সেনাপতি বললেন, কর্নেল, ডোমপাড়ার চারজন লোক এসেছিল

কর্নেল বললেন, জানি। তারা তার লাশ বয়েছিল সুমন্তর কথায়।

লাশটা মর্গে চলে গেছে। সেনাপতি উঠে দাঁড়ালেন।…তার ঠিকানায় খবর গেছে। লালবাজারেও ওর ব্যাকগ্রাউণ্ড জানতে চেয়েছি। আজ রাতের মধ্যেই সব, পেয়ে যাব আশা আছে। তাহলে আপনি স্নানাহার সেরে নিন, আমরা সী ভিউতে গিয়ে সুইট এতে হানা দিই।

ওরা চলে গেলে কর্নেল হাসতে হাসতে বললেন, ডাঃ পট্টনায়ক, কল্যাণীকে বলুন–তার বন্ধু বিচ্ছেদের জন্যে যে বৃদ্ধটি দায়ী, তাকে যেন সে ক্ষমা করে।

কল্যাণী ঝাঁঝের সঙ্গে বলল, বন্ধু না হাতি! ভাল হাত আছে গিটারে–তাই! ও গোল্লায় যাক! খুনী গুণ্ডা কোথাকার! বলে সে উঠে নিজের ঘরে চলে গেল।

ডাঃ পট্টনায়ক বললেন, সত্যি, একালের ছেলেমেয়েদের আমরা বুঝতে পারিনে।