কোরেল

কোরেল প্রথম প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ পত্রিকার ১৩৮২ বঙ্গাব্দের শারদীয় সংখ্যায়। এটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাল্যরচনা। ১৮৯৩ সালে এই রচনা তিনি আরম্ভ করেন, শেষ করেন ১৯০০ সালে। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক সঙ্কলিত ‘শরৎচন্দ্রের অপ্রকাশিত রচনাবলী’র “আত্মকথা” শীর্ষক লেখেContinue Reading

এক

লণ্ডন নগরের পঞ্চাশৎ মাইল উত্তরে কোরেল নামে একটি গ্রামে ক্ষুদ্র স্রোতস্বতীতীরস্থ দুইখানি অট্টালিকা গ্রামের শোভা শতগুণে বর্ধিত করিয়া রাখিয়াছিল। উভয়ের সৌন্দর্যে একটা সাদৃশ্য থাকিলেও একটি অপরটি অপেক্ষা এত বৃহৎ জমকাল এবং মূল্যবান যে, দেখিলে বোধContinue Reading

দুই

লিও একখানি পুস্তক লিখিয়াছিল। লণ্ডন নগরে তাহার একজন বন্ধু ছিলেন। সমালোচনার জন্য হস্তলিখিত পুস্তকখানি তাঁহার নিকট পাঠাইয়া দেয়। কিছুদিন পরে এইরূপ উত্তর আসিল, ‘বন্ধু, তোমার গৌরবে আমি গৌরবান্বিত হইয়াছি। তোমার লিখিত পুস্তকখানি একজন পুস্তক-প্রকাশকের নিকটContinue Reading

তিন

কোরেল গ্রামে প্রতি বৎসর অতি সমারোহের সহিত ঘোড়দৌড় হইত। আজি সেই উপলক্ষে প্রান্তস্থিত মাঠে বহু জনসমাগম হইয়াছিল। মেরি ধীরে ধীরে লিওর পশ্চাতে আসিয়া দাঁড়াইল। লিও তখনও অত্যন্ত মনোযোগের সহিত পুস্তক লিখিতেছিল, তাই দেখিতে পাইল না।Continue Reading

চার

দুইটার কিছু পূর্বে যখন মেরির প্রকাণ্ড জুড়ি গাড়ি প্রান্তরে আসিয়া উপস্থিত হইল তখন সমবেত জনমণ্ডলী বিপুল কলরবে কোলাহল করিয়া উঠিল। সে সুন্দরী, সে যুবতী, সে অবিবাহিতা, এবং বিপুল ধনের অধিকারিণী; মানবের যৌবনরাজ্যে তাহার স্থান অতিContinue Reading

পাঁচ

পরদিন মেরি লিওকে বলিল, ‘কাল আমাদের বাটীতে কেমন উৎসব হইয়া গেল, তোমার সময় ছিল না বলিয়া তোমাকে ডাকি নাই।’ লিও হস্তস্থিত কলম দোয়াতের উপর রাখিয়া দিয়া কহিল, ‘ভালই করিয়াছিলে—কিন্তু আমারও কাল রাত্রে কিছুই কাজ হয়Continue Reading

ছয়

প্রায় এক মাস অতীত হইল কেহই কাহারো সহিত সাক্ষাৎ করিল না। মেরি মনে করে যে, তাহার বাল্যসখাটি তাহার শরীরের ও মনের চতুষ্পার্শ্বে যে মমতার আবরণে ঢাকিয়া দিয়াছিল,তাহা অল্পে অল্পে সে কাটিয়া ফেলিয়াছে; আর তাহার উপরContinue Reading

সাত

নিজের জন্মতিথি উপলক্ষে বাটীতে আজ মহোৎসবের বিপুল আয়োজন হইতেছে, প্রতি বৎসরই ইহা হইত, কিন্তু এবার জাঁকজমক কিছু বেশি। সমস্ত বাটীময় ফল, ফুল ও রংদার পাতায় সাজান হইতেছে, সহস্র দীপ নানাবর্ণ বিচিত্র কাচপাত্রের ভিতরে সজ্জিত হইয়াContinue Reading

আট

আরও তিন দিন নিঃশব্দে অতিবাহিত হইয়া গেল। এইবার, এতদিন পরে লিওর চক্ষে খুব বড় দু’ ফোঁটা জল আসিয়া পড়িল। আজ মাসাধিক কাল হইল মেরি অল্পে অল্পে সরিয়া দাঁড়াইয়াছে, সামর্থ্যানুযায়ী অবহেলা তাচ্ছিল্য করিতে ত্রুটি করে নাইContinue Reading

নয়

এক সপ্তাহও অতিবাহিত হয় নাই, মেরি চার্লসকে হঠাৎ বলিল, ‘তুমি আমার একটা উপকার করিতে পারিবে?’ আজ মেরির চক্ষু দুটা কতকটা উন্মাদের মত চকচক করিতেছে। চার্লস কহিল, ‘কি রকম উপকার?’ মেরি একটু থামিয়া বলিল, ‘তবে শোন,Continue Reading

দশ

নোটিশ পাইয়া লিওপোল্ডের সমস্ত সংসার অন্ধকার বোধ হইল। সমস্ত রাত্রি চিন্তা করিয়াও সে কূল দেখিতে পাইল না। প্রাতঃকালে, মেরি আপনার কক্ষে বসিয়া রক্তবর্ণ চক্ষু নত করিয়া কি ভাবিতেছিল, এমন সময় ভৃত্য আসিয়া কহিল, ‘নীচে লিওContinue Reading

এগার

পনর দিনের মধ্যে লিওর রীতিমত সংজ্ঞা হইল না; পনর দিন মেরি তাহার শয্যা ত্যাগ করিল না। ডাক্তার বলিল, ‘মেরি, অত পরিশ্রম করিলে তুমিও পীড়িত হইয়া পড়িবে।’ মেরি ম্লান হাসিয়া উত্তর দিল, ‘ডাক্তার মহাশয়, এ সময়েContinue Reading