পাঁচ

পরদিন মেরি লিওকে বলিল, ‘কাল আমাদের বাটীতে কেমন উৎসব হইয়া গেল, তোমার সময় ছিল না বলিয়া তোমাকে ডাকি নাই।’

লিও হস্তস্থিত কলম দোয়াতের উপর রাখিয়া দিয়া কহিল, ‘ভালই করিয়াছিলে—কিন্তু আমারও কাল রাত্রে কিছুই কাজ হয় নাই, কিছু ক্ষতি হইয়াছে।’

মেরি মুখপানে চাহিয়া বলিল, ‘কেন কাজ হয় নাই?’

লিও কলম তুলিয়া লইল, পুস্তকে মনঃসংযোগ করিবার উপক্রম করিয়া বলিল, ‘সে কথা তুলিয়া কাজ নাই, আমি বলিতে পারিব না।’

এরূপ কথা জীবনে মেরি এই প্রথম শুনিল। বিস্মিত হইয়া বলিল, ‘কেন?’

‘তা জানি না; বোধ হয় মন কিছু নীচ হইয়া পড়িয়াছে।’

তাহার পর মেরি অনেকক্ষণ বসিয়া রহিল, অনেক কথা মনে মনে তোলাপাড়া করিল কিন্তু লিও আর মুখ তুলিল না, কোন কথাই জিজ্ঞাসা করিল না।

মেরি যাইবার সময় বলিল, ‘যাইতেছি।’

‘যাও।’

যাইবার সময় তাহার বোধ হইল যেন সে লিওর মনের কথা কতক বুঝিতে পারিয়াছে, কিন্তু প্রতিপন্ন করিবার উপায় নাই—শুধু অনুমান করা যায় মাত্র। যাহা হউক, ক্ষুদ্র পথটুকু সে বড় অন্যমনস্কভাবে অতিক্রম করিল। বাটীর ভিতের প্রবেশ করিবার সময় ভৃত্য একখানা টিকিট হাতে করিয়া কহিল, চার্লস বসিবার কক্ষে অপেক্ষা করিতেছেন।

মেরি ভ্রূ কুঞ্চিত করিয়া বলিল, ‘কেন?’

‘তাহা জিজ্ঞাসা করি নাই,—জিজ্ঞাসা করিয়া আসিব কি?’

মেরি একটু ভাবিয়া বলিল, ‘থাক, আমি নিজেই যাইতেছি।’

চার্লসের বিশেষ কিছুই কাজ ছিল না। সে শুধু গত নিশির আমোদ-উৎসবের জন্য ধন্যবাদ দিতে আসিয়াছিল। মেরি কক্ষে প্রবেশ করিলে সে অতিশয় ভদ্রতার সহিত অভিবাদন করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। মেরি হাত ধরিয়া অতিথিকে বসাইয়া কারণ জিজ্ঞাসা করিল,—কারণ পূর্বেই বলিয়াছি কিন্তু কথায় কথায় তাহা একটু অন্যরকমে দাঁড়াইতে চলিল।

মেরির কত ঐশ্বর্য, কত বিষয়-আশয়, কত মান-সম্ভ্রম! এই ত হইল প্রথম; তাহার পর মেরি কত উচ্চবংশীয়া, তাহার পিতা কত বড় বীর এবং সজ্জন ছিলেন—রাজদ্বারে তাঁহার যে পরিমাণ সম্ভ্রম ছিল সে পরিমাণের সম্ভ্রম অর্জন করিতে বিশেষ বুদ্ধি, বিবেচনাশক্তি, রাজনৈতিক জ্ঞান প্রভৃতির প্রয়োজন, মেরির পিতা Captain নোলের তাহা কিছুমাত্র কম ছিল না; এক কথায় আজকাল সেরূপ আর মিলে না। কিন্তু শেষের কথাগুলি আরও উচ্চ অঙ্গের, মেরির তাহার খুব ভাল লাগিতেছিল;—সেটা অন্য কিছু নয়, শুধু তাহার নিজের রূপ এবং যৌবনের ব্যাখ্যা এবং পক্ষপাত সমালোচনা। পুরুষের মুখে এ কথাগুলা স্ত্রীলোকের সর্বাপেক্ষা তৃপ্তিকর বোধ হয়, এ কথার কাছে আর কিছুই নয়। তাই কতক্ষণ দুইজনে নির্জন কক্ষে গল্প করিয়া অতিবাহিত করিল তাহা মেরি বুঝিতে পারিল না। ঘড়িতে যখন দুইটা বাজিল তখন চার্লস বিদায় হইল এবং যাইবার সময় সেই দিন সান্ধ্যভোজনের নিমন্ত্রণও লইয়া গেল।

সে চলিয়া গেলে, এই রূপ এবং ঐশ্বর্যের কাহিনীর তরঙ্গগুলা যখন অল্পে অল্পে শান্ত হইয়া আসিতে লাগিল, এবং তাহার প্রতিধ্বনিগুলা মেরির মস্তিষ্কের ভিতর ঠোকাঠুকি করিয়া ক্রমশঃ হীনবল হইয়া ধীরে ধীরে শূন্যে মিলাইয়া যাইতে লাগিল এবং যে অবশিষ্ট স্পন্দনটুকু নাচিয়া বেড়াইতেছিল, তাহাও যখন অন্য আর একটি অসীম সৌন্দর্যের পার্শ্বে কাতরভাবে ছুটিয়া পলাইবার প্রয়াস করিতে লাগিল, তখন তাহার বোধ হইল এই ঝোঁকের উপর আকস্মিক নিমন্ত্রণকার্যটা তেমন যুক্তিসঙ্গত হয় নাই। সন্ধ্যার পর সে আসিবে, দুইজনে একত্র আহার করিতে হইবে, হয়ত বা আর কেহই থাকিবে না, কত গল্প কত কথা বলিবার ও শুনিবার উপায় থাকিবে, কিন্তু মেরির তাহাতে আর তেমন মন উঠিল না। যদি আর কেহ জানিতে পারে? যদি তাহার ক্লেশ বোধ হয়? চঞ্চল হস্তে মেরি এক খণ্ড কাগজ লইয়া লিখিল, ‘তুমি সন্ধ্যার পর আসিও না; আমার শরীর মন্দ বোধ হইতেছে।’ কিন্তু এ পত্র চার্লসের নিকট পাঠাইতে লজ্জা বোধ হইল। অনেক চিন্তা করিয়া মেরি অবশেষে এইরূপ লিখিল, ‘যখন আসিবে তখন আর তিন-চারিজন বন্ধুকে আনিও। আনিতে পারিলে নিতান্ত সন্তুষ্ট এবং সুখী হইব।’ ভৃত্য পত্র লইয়া চলিয়া গেল।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে রাত্রে চার্লস আরও দুই-তিনজন বন্ধুকে সঙ্গে আনিল। আহারাদি শেষ করিয়া সকলেই একবাক্যে মেরিকে গান গাহিবার জন্য ধরিয়া বসিল। ইচ্ছা না থাকিলেও অতিথির অনুরোধ রাখিতে হইল; পিয়ানো-এ ঝঙ্কার দিয়া মেরির সুকণ্ঠ দুই-তিনটি সপ্তকের মধ্যে খেলা করিয়া ছুটিতে লাগিল, উৎসাহ ও আনন্দে চার্লস প্রভৃতি কয়েকবার উচ্চ শব্দ করিয়া উঠিল, কেহ বা আবেগের সহিত দুই-এক পদ সঙ্গে সঙ্গে গাহিয়া ফেলিল। ক্রমশঃ শেরি, হুইস্কি, ব্র্যাণ্ডি ও রামের শূন্যগর্ভ বোতলগুলির সংখ্যা যত বৃদ্ধি হইয়া চলিল, উৎসাহ, আবেগ, উচ্চস্বর ততই পরিপূর্ণভাবে নৈশ আকাশে ঠেলিয়া ফুঁড়িয়া উঠিতে লাগিল। জানালার ভিতর দিয়া এ শব্দ লিওর পাঠাগারে যে একদম প্রবেশ করে নাই তাহা নহে, কিন্তু ইচ্ছাপূর্বক আজ লিও জানালাগুলা একেবারে বন্ধ করিয়া দিয়াছিল। শব্দ-সাড়াগুলা সেখানে তেমন গোলযোগ করিতে পারিতেছিল না।

এদিকে গাহিতে গাহিতে মেরির কণ্ঠ শুষ্ক হইয়া আসিতেছে, পার্শ্বেও চার্লস কিংবা আর কেহ শেরির গ্লাস লইয়া দাঁড়াইয়া আছে। ক্রমাগত শেরি গ্লাসের মুখচুম্বন করিয়া মেরির গলাটা নিতান্ত সরস এবং মস্তিষ্ক অত্যন্ত সজীব হইয়া উঠিল। উৎসাহের সহিত গভীর রাত্রি পর্যন্ত পিয়ানোর ঝঙ্কার উঠিতে লাগিল।

শেষ হইলে, শয্যায় শয়ন করিয়া সেদিনের মত আজ আর নিদ্রা আসিল না; মেরি অনেক কথা ভাবিল। পুরুষের দল তাহার বড় প্রশংসা করিয়াছে—কেমন করিয়া তাহার শুভ্র পুষ্পকোরকতুল্য অঙ্গুলি কি-বোর্ডের উপর বিদ্যুৎ গতিতে ছুটিয়া যাইতেছিল এবং অঙ্গুলি সংলগ্ন বৃহৎ হীরক-অঙ্গুরীয় মধ্যে মধ্যে ঝকঝক করিয়া এক শোভা দশগুণ করিয়াছিল; কিন্তু সহসা মনে পড়িল হয়ত আর একজনের আরও শুভ্র, আরও সুন্দর, কিন্তু ক্লান্ত এবং অবসন্ন অঙ্গুলি দুইটি এখনও নিঃশব্দে কাগজের উপর দিয়া ধীরে ধীরে লিখিয়া চলিয়াছে। সে হয়ত সমস্ত শুনিয়াছে, হয়ত বা ক্লেশ অনুভব করিয়াছে, কিন্তু প্রতিবিধানের উপায় কৈ? মধু থাকিলে মৌমাছি আসিবেই, ধন থাকিলে তাহার চতুষ্পার্শ্বে লোকসমূহ জড় হইবেই, নূতন সম্বন্ধের বন্ধন যৌবনের অঙ্গ জড়াইয়া উঠিবার স্বতঃ প্রয়াস করিবেই—ইচ্ছা থাকিলেও এ বাঁধন নিজ হস্তে খুলিয়া ফেলা যায় না। মেরি কাতরভাবে উদ্ধারের কামনা এবং প্রার্থনা করিতে করিতে সে রাত্রে ঘুমাইয়া পড়িল।

পরদিন সে লিওর কাছে গিয়া বসিল, লিও লিখিতেছে, কৈ একবারও চাহিয়া দেখিল না। অনেকক্ষণ ধরিয়া মেরি কথা খুঁজিয়া পাইল না—তারপর সাহসে ভর করিয়া বলিল, ‘তোমার আর কত বাকি আছে?’

‘অনেক।’

‘আজ দু-তিনদিন ধরিয়া কি লিখিলে? আমাকে শুনাইবে না?’

এই সময়ে অনবধানতাবশতঃ কলমের মুখে অনেকখানি কালি উঠিয়াছিল; টপ করিয়া একটা বড় রকমের ফোঁটা শুভ্র কাগজের উপর পতিত হইল। লিও খাতাখানা ঈষৎ সরাইয়া কলমের মুখটা মুছিতে মুছিতে বলিল, ‘মেরি, তোমার মুখ দিয়া বড় তীব্র সুরার গন্ধ বাহির হইতেছে; এ গন্ধ আমার সহ্য হয় না—সরিয়া বস। অত কাছে বসিয়া থাকিলে আমার সমস্ত ভুল হইয়া যাইবে।’

একদণ্ডে মেরির চক্ষু দুটি চকচক করিয়া উঠিল; বলিল, ‘আমি তীব্র সুরা পান করি নাই।’

‘হইতে পারে। কিন্তু আমার নিকট ও গন্ধ বড় উগ্র বোধ হইতেছে। তুমি হয় সরিয়া বস, না হয় গৃহে যাও।’

মেরি উঠিয়া দাঁড়াইল। সে চিরকাল আদর ও যত্নের মধ্যে লালিত পালিত। এরূপ তাচ্ছিল্যের কথা শুনা তাহার অভ্যাস নহে। বড় অপমান বোধ হইল। তাহার সমস্ত হৃদয় আত্মাভিমানে পরিপূর্ণ, তাই এ ক্ষুদ্র যুবার কোমল অথচ রীতিমত দৃঢ় ও নির্ভীক সত্য কথা তাহার সমস্ত শরীরে অকস্মাৎ খর বিষের জ্বালা জ্বালাইয়া দিল। দাঁড়াইবার সময় সে ভাবিয়াছিল, খুব দুটো চড়া কথা শুনাইয়া দিবে; মিথ্যাবাদী, অকৃতজ্ঞ প্রভৃতি শব্দগুলা আরোপ করিয়া, তাহার বুকে ছুরির মত বিদ্ধ করিয়া দিবে—তারপর যথারীতি খুব একচোট কলহ করিয়া চিরদিনের মত বিচ্ছেদ করিয়া চলিয়া যাইবে, কিন্তু দাঁড়াইয়া উঠিয়া তাহার শব্দশাস্ত্রের অভিধানটা একেবারে কোথায় হারাইয়া গেল। ভ্রূ কুঞ্চিত করিল, চক্ষু বিস্ফারিত করিল, দন্তে অধর দংশন করিল কিন্তু কথা বাহির হইল না।

সম্মুখের দর্পণে সে চিত্র লিও দেখিতে পাইল। কাছে আসিয়া মেরির উন্নত গ্রীবার এক পার্শ্বে হাত রাখিয়া বলিল, ‘অপমান বোধ হইয়াছে?’

মেরির আত্মাভিমান এবার কথা খুঁজিয়া পাইল। তীব্রকণ্ঠে কহিল, ‘তুমি নীচ এবং ঈর্ষাপরবশ, তাই অপমান করিলে!’

লিও ধীরে ধীরে সরিয়া গেল। কহিল, ‘মেরি, জগতের মধ্যে ঐ দুটি কথা আমার সহ্য হয় না। অমন কথা আর মুখে আনিও না। তুমি অধঃপথে যাইতেছ, তাই সাবধান করিতে চাহিয়াছিলাম, কিন্তু তাহার পরিবর্তে ওরূপ মর্মান্তিক কথা শুনিবার বাসনা রাখি না।’

মেরি আরও ক্রুদ্ধ হইল। বলিল, ‘অধঃপথে কি করিয়া গেলাম?’

‘আমার তাই মনে হয়। ভদ্রঘরের স্ত্রীলোক, বিশেষত তুমি একান্তে অত রাত্রি পর্যন্ত যে আমোদ-প্রমোদ করিবে আমার সেটা ভাল বোধ হয় না। লোকেই বা কি বলিবে?’

আবার লোকের কথা! মেরি অস্থির হইয়া উঠিল। কহিল, ‘লোকে কিছুই মনে করে না। তুমি দরিদ্র কিন্তু আমার ধন ঐশ্বর্য আছে, তোমার মত অনবরত পরিশ্রম করিয়া আমার খাদ্য সংগ্রহ করিতে হইবে না, তোমার মত নির্জন গৃহে বসিয়া জনসমাজের নিকট অপরিচিত থাকিলেই বরং লোকে মন্দ বলিবে।’ তাহার পর একটু বিদ্রূপের হাসি হাসিয়া বলিল, ‘লিও, আপনার ভাগ্য দিয়া আমার ভাগ্য গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা করিও না—পিতা আমার জন্য অভিশাপ এবং মর্মপীড়া রাখিয়া যান নাই—যাহা সুখের,যাহা বাঞ্ছিত, সমস্তই যথেষ্ট দিয়া গিয়াছেন। যাহার এত আছে তাহার পক্ষে দু-দশজন বন্ধুবান্ধবকে নিমন্ত্রণ করিয়া আমোদ-প্রমোদ করিলে কেহই দুষে না।’

এত কথা মেরি কহিতে জানে, লিও তাহা জানিত না; এত স্নেহ, এত করুণা যে এত তীব্র বিষ ঢালিয়া তাহার সমস্ত চৈতন্য ওলটপালট করিয়া দিতে পারে, সে ধারণা লিও করিতে পারে নাই—তাই নিতান্ত নির্জীব অবসন্নভাবে বসিয়া পড়িল। কোন উত্তর বা কোনরূপ প্রতিবাদ খুঁজিয়া পাইল না। রাগের মাথায় মেরি চলিয়া গেল, তাহা সে দেখিল কিন্তু ফিরাইতে পারিল না, ইচ্ছাও বড় বেশি ছিল না, কিন্তু দুটো কথা বলিতে পারিলে বোধ হয় ভাল হইত।

আপনার কক্ষে পৌঁছিয়া মেরি, একখণ্ড রুমালে মুখ আবৃত করিয়া একটা সোফার উপর বসিয়া পড়িল—সমস্ত শরীরে অগ্নির উত্তাপ বাহির হইতেছে।

এই সময় একজন ভৃত্য আসিয়া কহিল, চার্লস অপেক্ষা করিতেছেন।

মেরি মুখ তুলিয়া তাহার পানে তীব্র কটাক্ষ করিয়া কর্কশ-কণ্ঠে কহিল, ‘তাড়াইয়া দাও।’

ভৃত্য অবাক হইয়া গেল। কিছুক্ষণ নিঃশব্দে দাঁড়াইয়া চলিয়া গেল। চার্লসের নিকটে গিয়া কহিল, ‘শরীর খারাপ, এখন দেখা হইবে না।’

চার্লস উৎকণ্ঠিতভাবে নানারূপ প্রশ্ন করিল। কখন শরীর খারাপ হইয়াছে, কেমন করিয়া হইল, কতক্ষণে সারিবে—ইত্যাদি অনেক কথা এক নিঃশ্বাসে কহিয়া গেল। উত্তর পাইল না। সদ্য তিরস্কৃত হইয়া ভৃত্য মহাশয় কিছু চটিয়াছিলেন; কিন্তু তিরস্কার যে তাহাকে করা হয় নাই, সে কথা সে বুঝিল না। বলিল, ‘আমি অত জানি না।’

হতাশ হইয়া চার্লস একটা ফুলের তোড়া তাহার হাতে দিয়া বলিল, ‘আমার নাম করিয়া এইটা দিও।’

ভৃত্য পার্শ্বের টেবিলে তাহা রাখিয়া দিয়া বলিল, ‘তিনি নীচে আসিলে দিব।’