দুই

লিও একখানি পুস্তক লিখিয়াছিল। লণ্ডন নগরে তাহার একজন বন্ধু ছিলেন। সমালোচনার জন্য হস্তলিখিত পুস্তকখানি তাঁহার নিকট পাঠাইয়া দেয়। কিছুদিন পরে এইরূপ উত্তর আসিল, ‘বন্ধু, তোমার গৌরবে আমি গৌরবান্বিত হইয়াছি। তোমার লিখিত পুস্তকখানি একজন পুস্তক-প্রকাশকের নিকট কতকটা বাধ্য হইয়া বিক্রয় করিয়াছি। পাঁচ শত পাউণ্ড পাঠাইলাম—রাগ করিও না, ভবিষ্যৎ উন্নতির বোধ হয় ইহাই সোপান।’

এ কথা শুনিয়া মেরির চক্ষে জল আসিল,—আনন্দে সে লিওর মুখচুম্বন করিয়া বলিল, ‘লিও জগতে তুমি সর্বপ্রধান কবি হইবে।’

লিও হাসিয়া উঠিল, ‘আর কিছু না হউক মেরি, পিতার ঋণ বোধ হয় পরিশোধ করিতে পারিব।’

মেরি আজকাল স্বয়ং উত্তমর্ণ, তাই এ কথার বড় লজ্জা পাইত। রাগ করিয়া বলিল, ‘এ কথা পুনর্বার বলিলে তোমার কাছে আমি আর আসিব না।’

লিও হাসিল, মনে মনে কহিল, ‘তোমার পিতার নিকট আমার পিতা ঋণী; আমরা দুজনে তাঁহাদের সন্তান, তাই আমি জীবিত থাকিলে এ ঋণ তোমার নিকট পরিশোধ করিবই।’

লিওর আজকাল বড় পরিশ্রম বাড়িয়াছে। নূতন পুস্তক লিখিতেছিল, আজ সমস্ত দিন মুখ তুলিয়া চাহে নাই। মেরি প্রত্যহ যেমন আসিত, আজিও তেমনি আসিয়াছিল। লিওর শয়নকক্ষ, পাঠাগার, বসিবার ঘর প্রভৃতি স্বহস্তে সাজাইয়া গুছাইয়া দিতেছিল। দাসদাসী সত্ত্বেও এ কাজটি মেরি নিজে করিয়া যাইত।

সম্মুখে একখানা দর্পণ ছিল, লিওর প্রতিবিম্ব তাহার উপর প্রতিফলিত হইয়াছিল। মেরি বহুক্ষণ ধরিয়া তাহা দেখিয়া বলিল, ‘লিও তুমি স্ত্রীলোক হইলে এতদিন ইংলণ্ডের রানী হইতে।’

লিও হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘কেন?’

‘অত রূপ দেখিয়া রাজা তোমাকে বিবাহ করিয়া সিংহাসনে লইয়া যাইতেন। তোমার মত কৃষ্ণ কুঞ্চিত কেশরাশি আমি আর্ট গ্যালারিতে কোন রাণীর দেখি নাই; এমন শুভ্র কোমল মুখশ্রী কোন্‌ সম্রাজ্ঞীর ছিল? গোলাপ পুষ্পের মত এমন কোমল মধুময় দেহশোভা স্বর্গে ভিনসেরও ছিল বলিয়া মনে হয় না।’

লিও খুব হাসিয়া উঠিল। কলেজে অধ্যয়নকালেও এমন কথা অনেকে কহিয়াছিল; বোধ হয় তাহাই মনে পড়িয়াছিল। হাসিয়া কহিল,’রূপ যদি চুরি করা যাইত তা হইলে তুমি বোধ হয় এ রূপ চুরি করিয়া আমাকে ফাঁকি দিয়া এতদিনে ইংলণ্ডের রানী হইয়া যাইতে।’

মেরি মনে মনে অপ্রতিভ হইয়া সলজ্জ হাসিয়া বলিল, ‘তুমি স্ত্রীলোকের মত দুর্বল, তাহাদের মত কোমল, তাহাদের মতই সুন্দর-তোমার রূপের সীমা নাই।’

এত রূপের নিকট মেরি আপনাকে বড় ক্ষুদ্র বিবেচনা করিত।