কোরেল

কোরেল প্রথম প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ পত্রিকার ১৩৮২ বঙ্গাব্দের শারদীয় সংখ্যায়। এটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাল্যরচনা। ১৮৯৩ সালে এই রচনা তিনি আরম্ভ করেন, শেষ করেন ১৯০০ সালে। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক সঙ্কলিত ‘শরৎচন্দ্রের অপ্রকাশিত রচনাবলী’র “আত্মকথা” শীর্ষক লেখে থেকে এ বিষয়ে শরৎচন্দ্রের ভাষ্য পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন—

“পিতার নিকট হতে অস্থির স্বভাব ও গভীর সাহিত্যানুরাগ ব্যতীত আমি উত্তরাধিকার সূত্রে আর কিছুই পাইনি। পিতৃদত্ত প্রথম গুণটি আমাকে ঘরছাড়া করেছিল। আমি অল্প বয়সেই সারা ভারত ঘুরে এলাম। আর পিতার দ্বিতীয় গুণের ফলে জীবন ভরে আমি কেবল স্বপ্ন দেখেই গেলাম। আমার পিতার পাণ্ডিত্য ছিল অগাধ। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা—এককথায় সাহিত্যের সকল বিভাগেই তিনি হাত দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনোটাই তিনি শেষ করতে পারেননি। তাঁর লেখাগুলি আজ আমার কাছে নেই—কবে কেমন করে হারিয়ে গেছে সেকথা আজ আর মনে পড়ে না। কিন্তু এখনও স্পষ্ট মনে আছে, ছোটবেলায় কত বার তাঁর অসমাপ্ত লেখাগুলি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিয়েছি। কেন তিনি এগুলি শেষ করে যান নি, এই বলে কত দুঃখই-না করেছি। অসমাপ্ত অংশগুলি কী হতে পারে ভাবতে-ভাবতে আমার অনেক বিনিদ্র রজনী কেটে গেছে। এই কারণে বোধহয় সতেরো বৎসর বয়সের সময় আমি গল্প লিখতে শুরু করি।”

সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় তাঁর “শরৎচন্দ্রের জীবন-রহস্য” গ্রন্থে জানিয়েছেন যে, শরৎচন্দ্রের একটি খাতা ছিল, তার নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘বাগান’। এই খাতায় তিনি কয়েকটি গল্প লেখেন। তার মধ্যের অন্যতম রচনা হচ্ছে ‘কোরেল’। ১৯০৩ সালে শরৎচন্দ্র বর্মায় যান। বর্মায় যাবার পর ‘বাগান’ খাতার অন্তর্গত অন্যান্য গল্প বিভিন্ন পত্রিকায় বা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়, কিন্তু ‘কোরেল’ থেকে যায় অপ্রকাশিত।

‘কোরেলে’র কাহিনীর পটভূমি ইংলণ্ড। এর পাত্রপাত্রীও ইংরেজ। বাল্যজীবনে শরৎচন্দ্র ইংরেজি উপন্যাসের অনুরাগী ছিলেন। শরৎসুহৃদ্ বিভূতিভূষণ ভট্টের ‘আমার শরৎদা’ (ভারতবর্ষ, ১৩৪৪ চৈত্র) রচনার থেকে এ খবর জানা যায়। সেই অনুরাগের পরিণাম সম্ভবতঃ ‘কোরেলে’র এই বিদেশী পটভূমি।

এরপর তিনি ‘কোরেল’ কাহিনীর অনেক পরিবর্তন করেন। পটভূমি বদলে যায়, পাত্রপাত্রীর নূতন নামকরণ হয়। এর ফলে গল্পেরও একটা নূতন নাম দেন তিনি, সে নাম ‘ছবি’। ১৩২৬ সালের পূজাবার্ষিকী ‘আগমনী’ পত্রিকায় (সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সম্পাদিত) প্রথম প্রকাশিত হয় ‘ছবি’।

কোরেল সর্বপ্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় ‘শরৎ সাহিত্য-সংগ্রহ’, অষ্টম সম্ভারে।