সধবার একাদশী১
এই সুপরিচিত গ্রন্থখানির ভূমিকা লিখিতে যাওয়াই বোধ করি একটা বাড়াবাড়ি। অথচ, এই কাজের জন্যই আমি অনুরুদ্ধ হইয়াছি। খুব সম্ভব, আমাকেই ইঁহারা যোগ্য ব্যক্তি কল্পনা করিয়া লইয়াছেন।
যে বইয়ের দোষ-গুণ আজ অর্ধ শতাব্দী কাল ধরিয়া যাচাই হইতেছে,—বিশেষত, যে মারাত্মক উৎপাত কাটাইয়া সম্প্রতি ইহা খাড়া হইয়া উঠিল, তাহাতে মূল্য লইয়া ইহার আর দরদস্তুর করা সাজে না। বাঙ্গালা সাহিত্যের ভাণ্ডারে এ একখানি জাতীয় সম্পত্তি—এ সত্য মানিয়া লওয়াই ভাল।
অতএব, গ্রন্থ সম্বন্ধে নয়, আমি ইহার সংস্করণ সম্বন্ধেই দুই-একটা কথা বলিব।
অত্যন্ত দুর্দিনে দেশের অনেক বহুমূল্য বস্তুই বটতলার সংস্করণ সঞ্জীবিত রাখিয়াছে,—তাই আজ তাহাদের অনেকেরই ভদ্র সাজসজ্জা সম্ভবপর হইতে পারিয়াছে, এবং বাঙ্গালীর সম্পত্তি বলিয়াও গণ্য হইয়াছে।
জানি না, ইহারও কোন দিন বটতলার ছায়ায় মাথা বাঁচাইবার প্রয়োজন ঘটিয়াছে কি না, কিন্তু আমার বক্তব্য শুধু এই যে, যে-কোন সংস্করণই এত দিন যাবৎ ইহার প্রাণ বাঁচাইয়া আসিয়াছে, তাহার যত দোষ যত ত্রুটিই থাক, সে কেবল আমাদের কৃতজ্ঞতা নয়, ভক্তিরও পাত্র।
অথচ, শুনিতেছি, বাঙ্গালা সাহিত্যের সে দুঃসময় আর নাই, তাই দুঃখ যদি আজ সত্যই ঘুচিয়া থাকে ত, যে-সকল গ্রন্থ আমাদের ঐশ্বর্য, আমাদের গৌরব, তাহাদের মলিন জীর্ণ-বাস ঘুচাইবারও প্রয়োজন হইয়াছে।
প্রকাশক বলিতেছেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই নির্ভুল সুন্দর সংস্করণ, এবং একখানি মাত্র বই-ই তাঁহাদের প্রথম ও শেষ উদ্যম নয়।
উদ্দেশ্য সাধু, এবং প্রার্থনা করি, ইহা জয়যুক্ত হউক, কিন্তু ইহাও জানি, প্রকাশক কেবল সঙ্কল্প করিতেই পারেন, কিন্তু ইহার স্থায়িত্ব ও সিদ্ধি যাহাদের হাতে, সেই দেশের পাঠক-পাঠিকা যদি না চোখ মেলিয়া চান ত, কিছুতেই কিছু হইবে না। কিন্তু, এত বড় কলঙ্কের কথাও আমার ভাবিতে ইচ্ছা করে না।
বিলাত প্রভৃতি অঞ্চলে Oxford Press ‘World’s Classics’ নাম দিয়া একটির পরে একটি যে-সকল অমূল্য গ্রন্থরাজি প্রকাশ করিতেছেন, তাহারই সহিত এই নব-সংস্করণের একটা তুলনা করিবার কথা উঠিয়াছিল, কিন্তু আমি বলি—আজ নয়।
হয়ত, অনতিকাল মধ্যেই একদিন তাহার সময় আসিবে, কিন্তু তখন বাঙ্গালা দেশকে সে শুভ সংবাদ নিবেদন করিতে যোগ্যতর ব্যক্তিরও অভাব হইবে না। শিবপুর, ৬ই ফাল্গুন ১৩২৬।