» চার

এগার বৎসর পরে দুর্গামণি হরিপালে বাপের ভিটায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তখন শরতের সন্ধ্যা এমনই একটা অস্বাস্থ্যকর ঝাপসা ধুঁয়া লইয়া সমস্ত গ্রামখানার উপর হুমড়ি খাইয়া বসিয়াছিল যে, তাহার ভিতরে প্রবেশ করিবামাত্রই দুর্গামণির বুকের ভিতরটা ছাঁৎ করিয়াContinue Reading

» তিন

ছোটভাই অনাথনাথকে বাধ্য হইয়া প্রাঙ্গণের প্রাচীরে একটা দ্বার ফুটাইতে হইল। অগ্রজের শ্রাদ্ধ-শান্তি হইয়া গেলে পনর-ষোল দিন পরে একদিন তিনি অফিসে যাইবার মুখে চৌকাঠের উপর দাঁড়াইয়া পান চিবাইতে চিবাইতে বলিলেন, আর না বললে ত নয় বোঠান,Continue Reading

» দুই

বড়ভাই গোলোকনাথ মারা গেলে, তার বিধবা স্ত্রী স্বর্ণমঞ্জরি নির্বংশ পিতৃকুলের যৎসামান্য বিষয়-আশয় বিক্রয় করিয়া হাতে কিছু নগদ পুঁজি করিয়া, কনিষ্ঠ দেবর অনাথনাথকেই আশ্রয় করিয়াছিলেন। তাহারই বিষের অসহ্য জ্বালায় হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হইয়া মেজভাই প্রিয়নাথ গত বৎসর ঠিকContinue Reading

» এক

মেজমাসিমা, মা মহাপ্রসাদ পাঠিয়ে দিলেন—ধরো। কে রে, অতুল? আয় বাবা আয়, বলিয়া দুর্গামণি রান্নাঘর হইতে বাহির হইলেন। অতুল প্রণাম করিয়া পায়ের ধূলা গ্রহণ করিল। নীরোগ হও বাবা, দীর্ঘজীবী হও। ওরে ও জ্ঞানদা, তোর অতুলদাদা ফিরেContinue Reading

» অরক্ষণীয়া

অরক্ষণীয়া উপন্যাসটি প্রথম পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় ১৯১৬ খৃষ্টাব্দে। অরক্ষণীয়া সেই সময়কার গোঁড়া হিন্দু সমাজব্যবস্থার প্রতি লেখকের এক নিদারুণ কটাক্ষ। যে সমাজ ত্রয়োদশবর্ষীয়া মেয়েকে আইবুড়ো মনে করে, সমাজের কলঙ্ক মনে করে কিন্তু আগ বাড়িয়ে কেউ তারContinue Reading

» তের : বিনোদের বেশ

বিনোদের বেশ একটি বন্ধুর দল জুটিয়াছিল যাহারা প্রতিনিয়তই তাহাকে মকদ্দমায় উৎসাহিত করিতেছিল। কারণ, হারিলে তাহাদের ক্ষতি নাই—জিতিলে পরম লাভ। অনেকদিনের অনেক আমোদ-প্রমোদের খোরাক সংগ্রহ হয়। আবার মকদ্দমা যে করিতেই হইবে, তাহাও একপ্রকার নিশ্চিত অবধারিত হইয়াছিল।Continue Reading

» বার : দশমীর পর একাদশী

দশমীর পর একাদশী গেল, দ্বাদশীও গেল, মাকে পাঠাইবার মত তিথি-নক্ষত্র গোকুলের চোখে পড়িল না। ত্রয়োদশীর দিন বাটীর পুরোহিত নিজে আসিয়া সুদিনের সংবাদ দিবামাত্র গোকুল অকারণে গরম হইয়া কহিল, তুমি যার খাবে, তারই সর্বনাশ করবে? যাও,Continue Reading

» এগার : নিমাই যখন দেখিল

নিমাই যখন দেখিল তাহার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা, জল্পনা-কল্পনা নিষ্ফল হইয়া গেল, তখন সে ভীষণ হইয়া উঠিল এবং ষ্পষ্ট শাসাইয়া দিতে বাধ্য হইল যে তাঁহাকে চাকরি ছাড়াইয়া আনার দরুন ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে। তিনি বাঁড়ুয্যেমশাইকে ইতিমধ্যে হাত করিয়াছিলেন।Continue Reading

» দশ : সামান্য কারণেই

সামান্য কারণেই গোকুলের চোখ রাঙ্গা হইয়া উঠিত। তাহাতে সারারাত্রি জাগিয়া সকালবেলা যখন সে তাহার ঘরে আসিয়া দাঁড়াইল, তখন সেই একান্ত রুক্ষমূর্তি দেখিয়া ভবানী ভীত হইলেন। গোকুল ঘরে পা দিয়া কহিল, ওঃ—সৎমা যে কেমন তা জানাContinue Reading

» নয় : নিমতলার কুণ্ডুদের

নিমতলার কুণ্ডুদের আড়ত কানা করিয়া গোকুলের শ্বশুর আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পাকা চুল, কাঁচা গোঁফ, বেঁটে আঁটসাঁট গড়ন। অত্যন্ত পাকা লোক। আড়তের ছোঁড়ারা আড়ালে বলিত, বাস্তুঘুঘু। শ্রাদ্ধবাটীতে একমুহূর্তেই তিনি কর্মকর্তা হইয়া উঠিলেন এবং ঘণ্টা-খানেকের মধ্যেই পাড়াসুদ্ধContinue Reading

» আট : চায়ের বাটিটা

চায়ের বাটিটা বিনোদ ব্রাহ্মণের হাত হইতে লইয়া ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিল। কিন্তু সে বস্তুটা যে কত গোপনে প্রস্তুত হইয়াছিল এবং পাত্রটা যে কাহার বুকের উপর গিয়া কতখানি আঘাত করিল, সে শুধু অন্তর্যামীই দেখিলেন। সমস্তদিনের মধ্যে বিনোদContinue Reading

» সাত : গোকুলের বড়মেয়ে

গোকুলের বড়মেয়ে হেমাঙ্গিনী তাহার ঠাকুরমার কাছে শুইত। সে ভোর হইতে-না-হইতে চেঁচাইতে চেঁচাইতে আসিল, কাকা এসেচে মা, কাকা এসেচে। পাশের ঘরে গোকুল শুইয়াছিল। সে ধড়ফড় করিয়া কম্বলের শয্যার উপর উঠিয়া বসিল। শুনিতে পাইল, তাহার স্ত্রী নিরানন্দ-বিস্ময়েরContinue Reading

» ছয় : তখন ঝগড়া হইল

তখন ঝগড়া হইল বটে, কিন্তু সেই রাত্রেই যে স্ত্রীর সহিত গোকুলের একটা মিটমাট হইতে বাকি রহিল না, সে তাহার পরদিনের ব্যবহারেই বুঝা গেল। হঠাৎ সকাল হইতেই সে সমস্ত কাজকর্মে হাঁকডাক করিয়া লাগিয়া গেল এবং আগামীContinue Reading

» পাঁচ : জয়লাল মাস্টারকে

জয়লাল মাস্টারকে গোকুল গোপনে আশী টাকা ঘুষ দিয়া আসিয়াছে—কথাটা প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত অনেকেই তাহার নির্বুদ্ধিতা লক্ষ্য করিয়া কটাক্ষ করিয়াছে। সে বিনোদের জন্য ছটফট করিতেছে, অথচ বিনোদ তাহাকে ভ্রুক্ষেপের দ্বারাও গ্রাহ্য করে না—এমনধারা একটা আভাসও বাড়িসুদ্ধContinue Reading

» চার : বিনোদ বিষয় পায় নাই

বিনোদ বিষয় পায় নাই, কথাটা প্রকাশ পাইবামাত্র পাড়ার দুই-চারিজন গাঁটের পয়সা খরচ করিয়া কলিকাতায় গিয়া খোঁজাখুঁজি শুরু করিয়া দিল। তখন আর কোন কথাই চাপা রহিল না। তাহারা ফিরিয়া আসিয়া বিনোদের ব্যাপার নাম-ধাম পরিচয় দিয়া একেবারেContinue Reading

» তিন : দশ বৎসর অতিবাহিত

দশ বৎসর অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে, জরাগ্রস্ত বৈকুণ্ঠ নিজেও মরিতে বসিয়াছে। কিন্তু গোকুলের সম্বন্ধে সে ভুল করে নাই, তাহা তাহার বাড়িটার পানে চাহিলেই বুঝা যায়। গঞ্জের ভিতর সে মুদীর দোকান আর নাই। তাহার পরিবর্তে প্রকাণ্ড গোলদারিContinue Reading

» দুই : আমার মা ভবানী

আমার মা ভবানী কৈ গো? বলিয়া লাঠির গোটা-দুই ঠোকা দিয়া ইস্কুলের ষষ্ঠ শিক্ষক জয়লাল বাঁড়ুয্যে সেইদিন সন্ধ্যাকালেই বৈকুন্ঠ মজুমদারেব বাড়ির ভিতরে আসিয়া দাঁড়াইলেন। তিনি বৈকুন্ঠের গোলদারি দোকানে চাল-ডাল-ঘি-তেল বাবদে অনেক টাকা বাকী ফেলিয়া গৃহিণীকে মাতৃসম্বোধনContinue Reading

» বৈকুণ্ঠের উইল

‘বৈকুণ্ঠ মজুমদার ব্যবসায়ী লোক, খুব সৎভাবে পরিশ্রমের মাধ্যমে তাঁর ধ্বংসপ্রায় মুদি দোকানকে বড় আড়তে পরিণত করেন তিনি। বৈকুণ্ঠের দুই ছেলে গোকুল এবং বিনোদ। গোকুল তাঁর প্রথম স্ত্রীর সন্তান, আর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান হচ্ছে বিনোদ। গোকুলContinue Reading

» এক : বৎসর পাঁচ-ছয় পূর্বে

বৎসর পাঁচ-ছয় পূর্বে বাবুগঞ্জের বৈকুণ্ঠ মজুমদারের মুদীর দোকান যখন অনেক প্রকার ঝড়ঝাপটা সহ্য করিয়াও টিকিয়া গেল, তখন অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করিল। কারণ, কি করিয়া যে বৈকুণ্ঠ তাল সামলাইল তাহা কেহই জানে না। সেই অবধি দোকানখানিContinue Reading

» বিংশ পরিচ্ছেদ : সে রাত্রে

সে রাত্রে এক-পা এক-পা করিয়া বৃদ্ধ কৈলাসচন্দ্র বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন। বাঁধান তুলসী-বেদীর উপর তখনও দীপটা জ্বলিতেছিল, তথাপি এ কি ভীষণ অন্ধকার! এইমাত্র সবাই ছিল, এখন আর কেহ নাই। শুধু মাটির প্রদীপটি সেই অবধি জ্বলিতেছে; তাহারওContinue Reading