মনোরমা পশুপতির নিকট বিদায় হইয়াই দ্রুতপদে চিত্রগৃহে আসিল। পশুপতির সহিত শান্তশীলের কথোপকথন সময়ে শুনিয়াছিল যে, ঐ ঘরে হেমচন্দ্র রুদ্ধ হইয়াছিলেন। আসিয়াই চিত্রগৃহের দ্বারোন্মোচন করিল। হেমচন্দ্রকে কহিল, “হেমচন্দ্র, বাহির হইয়া যাও।”

হেমচন্দ্র গৃহের বাহিরে আসিলেন। মনোরমা তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে আসিল। তখন হেমচন্দ্র মনোরমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমি রুদ্ধ হইয়াছিলাম কেন?”

ম। তাহা পরে বলিব।

হে। যে ব্যক্তি আমাকে রুদ্ধ করিয়াছিল, সে কে?

ম। শান্তশীল।

হে। শান্তশীল কে?

ম। চৌরাদ্ধরণিক।

হে। এই কি তাহার বাড়ী?

ম। না।

হে। এ কাহার বাড়ী?

ম। পরে বলিব।

হে। যবন কোথায় গেল?

ম। শিবিরে গিয়াছে।

হে। শিবির! কত যবন আসিয়াছে?

ম। পঁচিশ হাজার।

হে। কোথায় তাহাদের শিবির?

ম। মহাবনে।

হে। মহাবন কোথায়?

ম। এই নগরের উত্তরে কিছু দূরে।

হেমচন্দ্র করলগ্নকপোল হইয়া ভাবিতে লাগিলেন।

মনোরমা কহিল, “ভাবিতেছ কেন? তুমি কি তাহাদিগের সহিত যুদ্ধ করিবে?”

হে। পঁচিশ হাজারের সঙ্গে একের যুদ্ধ সম্ভবে?

ম। তবে কি করিবে-ঘরে ফিরিয়া যাইবে?

হে। এখন ঘরে যাব না।

ম। কোথা যাবে?

হে। মহাবনে।

ম। যুদ্ধ করিবে না, তবে মহাবনে যাইবে কেন?

হে। যবনদিগকে দেখিতে।

ম। যুদ্ধ করিবে না, তবে দেখিয়া কি হইবে?

হে। দেখিতে জানিতে পারিব, কি উপায়ে তাহাদিগকে মারিতে পারিব।

মনোরমা চমকিয়া উঠিলেন। কহিলেন, “বিশ হাজার মানুষ মারিবে? কি সর্বনাশ! ছি! ছি!”

হে। মনোরমা, তুমি এ সকল সংবাদ কোথায় পাইলে?

ম। আরও সংবাদ আছে। আজি রাত্রিতে তোমাকে মারিবার জন্য তোমার ঘরে দস্যু আসিবে। আজি ঘরে যাইও না।

এই বলিয়া ঊর্ধ্বশ্বাসে পলায়ন করিল।