প্রথম পরিচ্ছেদ : গৌড়েশ্বর

অতি বিস্তীর্ণ সভমণ্ডপে নবদ্বীপোজ্জ্বলকারী রাজাধিরাজ গৌড়েশ্বর বিরাজ করিতেছেন। উচ্চ শ্বেত প্রস্তরের বেদির উপরে রত্নপ্রবালবিভূষিত সিংহাসনে, রত্নপ্রবালমণ্ডিত ছত্রতলে বর্ষীয়ান রাজা বসিয়া আছেন। শিরোপরি কনককিঙ্কিণী সংবেষ্টিত বিচিত্র কারুকার্যখচিত শুভ্র চন্দ্রাতপ শোভা পাইতেছে। এক দিকে পৃথগাসনে হোমাবশেষবিভূষিত, অনিন্দ্যমূর্তিContinue Reading

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : কুসুমনির্মিতা

উপনগর প্রান্তে গঙ্গাতীরবর্তী এক অট্টালিকা হেমচন্দ্রের বাসার্থে রাজপুরুষেরা নির্দিষ্ট করিলেন। হেমচন্দ্র মাধবাচার্যের পরামর্শনুসারে সুরম্য অট্টালিকায় আবাস সংস্থাপিত করিলেন। নবদ্বীপে জনার্দন নামে এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ বাস করিতেন। তিনি বয়োবাহুল্যপ্রযুক্ত এবং শ্রবণেন্দ্রিয়ের হানিপ্রযুক্ত সর্বতোভাবে অসমর্থ। অথচ নিঃসহায়।Continue Reading

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : নৌকাযানে

হেমচন্দ্র ত উপবনগৃহে সংস্থাপিত হইলেন। আর মৃণালিনী? নির্বাসিতা, পরপীড়িতা, সহায়হীনা মৃণালিনী কোথায়? সান্ধ্য গগনে রক্তিম মেঘমালা কাঞ্চনবর্ণ ত্যাগ করিয়া ক্রমে ক্রমে কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করিল। রজনীদত্ত তিমিরাবরণে গঙ্গার বিশাল হৃদয় অস্পষ্টীকৃত হইল। সভামণ্ডলে পরিচারকহস্তজ্বালিত দীপমালার ন্যায়,Continue Reading

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : বাতায়নে

হেমচন্দ্র কিছু দিন উপবনগৃহে বাস করিলেন। জনার্দনের সহিত প্রত্যহ সাক্ষাৎ হইত; কিন্তু ব্রাহ্মণের বধিরতাপ্রযুক্ত ইঙ্গিতে আলাপ হইত মাত্র। মনোরমার সহিতও সর্বদা সাক্ষাৎ হইত, মনোরমা কখন তাঁহার সহিত উপযাচিকা হইয়া কথা কহিতেন, কখন বা বাক্যব্যয় নাContinue Reading

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : বাপীকূলে

অকালজলদোদয়স্বরূপ ভীমমূর্তি রাজপুত্র হেমচন্দ্র তুরকের অন্বেষণে নিষ্ক্রান্ত হইলেন। ব্যাঘ্র যেমন আহার্য দেখিবামাত্র বেগে ধাবিত হয়, হেমচন্দ্র তুরক দেখিবামাত্র সেইরূপ ধাবিত হইলেন। কিন্তু কোথায় তুরকের সাক্ষাৎ পাইবেন, তাহার স্থিরতা ছিল না। হেমচন্দ্র একটিমাত্র তুরক দেখিয়াছিলেন। কিন্তুContinue Reading

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : পশুপতি

গৌড়দেশের ধর্মাধিকার পশুপতি অসাধরণ ব্যক্তি; তিনি দ্বিতীয় গৌড়েশ্বর। রাজা বৃদ্ধ, বার্ধক্যের ধর্ম্মানুসারে পরমতাবলম্বী এবং রাজকার্যে অযত্নবান হইয়াছিলেন, সুতরাং প্রধানামাত্য ধর্মাধিকারের হস্তেই গৌড়রাজ্যের প্রকৃত ভার অর্পিত হইয়াছিল। এবং সম্পদে অথবা ঐশ্বর্যে পশুপতি গৌড়েশ্বরের সমকক্ষ ব্যক্তি হইয়াContinue Reading

সপ্তম পরিচ্ছেদ : চৌরোদ্ধরণিক

মহম্মদ আলি বাহির হইয়া দৃষ্টিপথাতীত হইলে, অন্য এক জন গুপ্তদ্বার—নিকটে আসিয়া মৃদুস্বরে কহিল, “প্রবেশ করিব?” পশুপতি কহিলেন, “কর৷” একজন চৌরোদ্ধরণিক প্রবেশ করিল। সে প্রণত হইলে পশুপতি আশীর্বাদ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন শান্তশীল! মঙ্গল সংবাদ ত?”Continue Reading

অষ্টম পরিচ্ছেদ : মোহিনী

সেই রত্নপ্রদীপদীপ্ত দেবীমন্দিরে, চন্দ্রালোকবিভাসিত দ্বারদেশে, মনোরমাকে দেখিয়া, পশুপতির হৃদয় উচ্ছ্বাসোন্মুখ সমুদ্রের ন্যায় স্ফীত হইয়া উঠিল। মনোরমা নিতান্ত খর্বাকৃতা নহে, তবে তাঁহাকে বালিকা বলিয়া বোধ হইত, তাহার হেতু এই যে, মুখকান্তি অনির্বচনীয় কোমল, অনির্বচনীয় মধুর, নিতান্তContinue Reading

নবম পরিচ্ছেদ : মোহিতা

পশুপতি অতৃপ্তনয়নে দেখিতে লাগিলেন। দেখিতে দেখিতে মনোরমার সৌন্দর্য-সাগরের এক অপূর্ব মহিমা দেখিতে পাইলেন। যেমন সূর্যের প্রখর করমালায় হাস্যময় অম্বুরাশি মেঘসঞ্চারে ক্রমে ক্রমে গম্ভীর কৃষ্ণকান্তি প্রাপ্ত হয়, তেমনই পশুপতি দেখিতে দেখিতে মনোরমার সৌকুমার্যময় মুখমণ্ডল গম্ভীর হইতেContinue Reading

দশম পরিচ্ছেদ : ফাঁদ

পূর্বেই কথিত হইয়াছে যে, বাপীতীর হইতে হেমচন্দ্র মনোরমার অনুবর্তী হইয়া যবন-সন্ধানে আসিতেছিলেন। মনোরমা ধর্মাধিকারের গৃহ কিছু দূরে থাকিতে হেমচন্দ্রকে কহিলেন, “সম্মুখে এই অট্টালিকা দেখিতেছ?” হে। দেখিতেছি। ম। এখানে যবন প্রবেশ করিয়াছে। হে। কেন? এ প্রশ্নেরContinue Reading

একাদশ পরিচ্ছেদ : মুক্ত

মনোরমা পশুপতির নিকট বিদায় হইয়াই দ্রুতপদে চিত্রগৃহে আসিল। পশুপতির সহিত শান্তশীলের কথোপকথন সময়ে শুনিয়াছিল যে, ঐ ঘরে হেমচন্দ্র রুদ্ধ হইয়াছিলেন। আসিয়াই চিত্রগৃহের দ্বারোন্মোচন করিল। হেমচন্দ্রকে কহিল, “হেমচন্দ্র, বাহির হইয়া যাও।” হেমচন্দ্র গৃহের বাহিরে আসিলেন। মনোরমাContinue Reading

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : অতিথি-সৎকার

হেমচন্দ্র গৃহে প্রত্যাগমন করিয়া এক সুন্দর অশ্ব সজ্জিত করিয়া তদুপরি আরোহণ করিলেন; এবং অশ্বে কশাঘাত করিয়া মহাবনাভিমুখে যাত্রা করিলেন। নগর পার হইলেন; তৎপরে প্রান্তর। প্রান্তরেরও কিয়দংশ পার হইলেন, এমন সময়ে অকস্মাৎ স্কন্ধদেশে গুরুতর বেদনা পাইলেন।Continue Reading