» » কেল্লাপাহাড়ের গুপ্তধন

বর্ণাকার

অজেয় রায়

কেল্লাপাহাড়ের গুপ্তধন

চার

ক্রমে চড়াইয়ে উঠি। পাহাড়ের পাদদেশে ঘন বাঁশ বন আর বাবলা গাছ। বড় বড় পাথরের খণ্ড ছড়িয়ে পড়ে আছে। কয়েকটা তেঁতুল আর বুনো আমগাছ দেখলাম।

কিছুদূর এগিয়ে যেতেই একটা সিঁড়ি পড়ল। যেটা পাহাড়ের পায়ের কাছ থেকে শুরু হয়ে, পাহাড়ের গা বেয়ে ওপরে উঠে গেছে। ডাকু বলল এটাই নাকি কেল্লার সািড়। আমরা উঠতে শুরু করলাম সিঁড়ি দিয়ে।

আমাদের ঘিরে ঘনবদ্ধ জঙ্গল। মোটা মোটা লতা দুলছে বিশাল বনস্পতিকে আকড়ে ধরে। শাল, কেন্দু, মহুয়া, নিম, জাম, আরও কত কী গাছ। পাতা ও শাখার আবরণে যেন চন্দ্রাতপ সৃষ্টি হয়েছে মাথার ওপরে।

যেতে যেতে চোখে পড়ল ময়ুর, বনমোরগ, আরও রকমারি পাখি। নানা অজানা গন্ধ পাই তরুলতার। এক জায়গায় কয়েকটা শিমুলগাছ দেখলাম। উজ্জ্বল রক্তবর্ণ ফুলের সমারোহে গাছ যেন অগ্নিশিখা। প্রায় ঘণ্টাখানেক চলার পর সামনে দেখলাম প্রাচীর। অর্থাৎ কেল্লায় পৌঁছেছি।

অন্তত দশ ফুট উঁচু পাথরের চওড়া প্রাচীর পাহাড়ের অনেকখানি জায়গা ঘিরে রয়েছে। সিঁড়ি শেষ হল প্রাচীরের গায়ে, এক ভাঙা তোরণের সামনে। সামনেই দেখলাম কেল্লা।

ভিতরের জমি মোটামুটি সমতল। প্রাচীরঘেরা অংশ প্রায় দুশো ফুট চওড়া। লম্বা কতটা বোঝা যাচ্ছিল না। প্রাচীর অদৃশ্য হয়েছে গাছপালার ভিতরে। আমাদের মুখোমুখি পাঁচিল—ঘেরা একটি একতলা বাড়ি। ঝোঁপ ও আগাছা পাথরের ঘরগুলিকে গ্রাস করেছে। ভিতরে ঢোকে না বোধহয় কেউ। কেল্লার উঠোন পাথরে বাঁধানো। কোথাও পাথর সরে। মাটি বেরিয়ে পড়েছে, সেখানে জন্মেছে উদ্ভিদ। তবে কেল্লার ভিতরের অংশে বড় গাছ বেশি নেই।

সামনের পাঁচিল—ঘেরা বাড়িটা দেখে মনে হল এটা ছিল বন্দিশালা। উঁকি মেরে দেখলাম—ভিতরে ছোট ছোট অনেক ঘর। জানলা নেই। শুধু ঘুলঘুলি। কপাটহীন ফটক ৪ দরজাগুলি হাঁ করে আছে। একটা অশ্বখগাছ লম্বা শিকড় ও ডালপালা বিস্তার করে বাডিটার। ঘাড়ে চেপে বসেছে।

ভিতরে বুনোজন্তু বা সাপ থাকতে পারে, তাই ঢুকলাম না ঘরের মধ্যে।

দক্ষিণদিকে একটু ঢালু। প্রায় একশো গজ লম্বা প্রাচীরের সীমানা ক্রমে বেঁকে গেছে। এই অংশেও একটা বাড়ি। লম্বা লম্বা পাঁচটি ঘর। সঙ্গে কয়েকটি ছোট ঘরও রয়েছে। এটা বোধহয় সৈন্যাবাস ছিল। দুর্গের কোথাও কোনো কারুকার্য নেই। চৌকো চৌকো প্রসব তৈরি।

কাছেই এক ঝরনা। এক কুণ্ড থেকে স্বচ্ছ ক্ষীণ জলধারা উপচে পড়ে বয়ে চলে অগভীর পাথুরে খাতের মধ্য দিয়ে। তারপর পশ্চিম প্রাচীরের গায়ে এক ফুটোর ভিতর দিয়ে গিয়ে কেল্লার বাইরে পাহাড়ের ঢালে নেমেছে। ঝরনার কাছে এক মস্ত শালগাছ। সেখানেই তাঁবু ফেলা স্থির হল।

বোসদা তখুনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাঁবু টাঙাতে। আমরাও হাত লাগালাম। ঝোঁপ কাটা, খুঁটি পোতা, তাঁবু খাটানো, জিনিস গোছ—গাছ করা ইত্যাদি করতে ঘণ্টা দুই সময় লাগল। এরপর ঝরনার জলে চান করলাম সবাই। চমৎকার ঠাণ্ডা জলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল যেন। দুপুরের খাওয়া সঙ্গেই এনেছিলাম, পাঁউরুটি ও মাংস। তাঁবুর সামনে সতরঞ্চি পেতে সবাই খাচ্ছি, এমন সময় হঠাৎ দেখি বোসদা বিস্ফারিত চোখে ওপর দিকে চেয়ে আছেন।

পরমুহূর্তেই শুকনো কাঁপা কাঁপা গলায় কথা এল, ব্রাদার, এ তো ডেঞ্জারেস জায়গা। এখানে তাঁবু ফেলা কি ঠিক হল?

আমরাও সকলে বোসদার দৃষ্টি অনুসরণ করে ওপর দিকে চাইতে, ব্যাপারটা বুঝলাম। শালগাছের গায়ে এক বিরাট মৌমাছির চাক।

ডাকু অভয় দিল—বিরক্ত না করলে কিছু বলবে না ওরা। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। তবে উনুনটা দূরে করুন।

ভরসা পেয়ে খাওয়া সেরে বোসদা কাঠ—কুটো সংগ্রহ করতে লেগে গেলেন। রাতের রান্নার জন্য উনুন জ্বালাতে হবে।

ডাকু বলল, আমি বেরোচ্ছি। দেখি যদি ছোটখাটো শিকার পাই খাবার মতো।

রতন বলল, মনে আছে তো ক্রোম—পাথর চিনিয়ে দিয়েছি। ওই রকম পাথর কোথাও দেখলেই স্যাম্পল নিয়ে আসবি। নিকেল মেশানো পাথর তো বাইরে থেকে চেনা যায় না। অ্যানালিসিস্ করে তবে জানা যায়, নিকেল আছে। কিন্তু আমার ধারণা ক্রোম পেলেই তার কাছে নিকেল থাকবে, মানে ক্রোম যদি পাই, তার ধারে—কাছের পাথর নিয়ে পরীক্ষা করলে হয়তো নিকেলের সন্ধান পাব। তাই ক্রোমের ওপর লক্ষ রাখব সবাই। তাছাড়াও যদি দেখি কোথাও পাথর খোঁড়াখুঁড়ির চিহ্ন, সেখান থেকে স্যাম্পল নিয়ে যাব।

ডাকু বন্দুক ঘাড়ে চলে গেল।

বোসদা বললেন, আমি ভাই আজ টায়ার্ড। কাল বেরোব। রান্নাটা করে ফেলব। তোমরা দজনে ঘুরে এসো। তবে তাড়াতাড়ি ফিরো কিন্তু সন্ধ্যার আগেই। তিনি সতরঞ্চি বিছিয়ে শুয়ে পড়লেন।

আমি রতনকে বললাম, পনেরো মিনিট অপেক্ষা কর। কেল্লাটা একটু ঘুরে দেখে নিই। হাজার হোক, সার্ভে করব বলে এসেছি যখন। তারপর তোর সঙ্গে যাব ক্রোমের খোঁজে।

অল্প সময়ে যতটুকু পারি দেখলাম কেল্লা। কেল্লার দুটি অংশ। দুর্গ প্রাচীরের পিছনে পাহাড়ের ঢাল খাড়াই নেমেছে অন্তত কুড়ি হাত। কোথাও স্বাভাবিক পাহাড়ের ঢাল। কোথাও বা পাথর কেটে ঢাল বানানো হয়েছে, কেউ যাতে সহজে উঠে আসতে না পারে। পব—পশ্চিমে দুটি সিঁড়ি নেমে গেছে কেল্লা থেকে। সিঁড়ির মুখে ভাঙা তোরণ। সাত্য এ দর্গের কোনো বিশেষত্ব নেই। নেহাত সাধারণ। শত্রুর আক্রমণ ঠেকাবার পক্ষেও মোটেই সুরক্ষিত নয়। ঝোঁপ—ঝাড় ভেদ করে দুর্গের ঘরগুলির ভিতরে ঢোকার আর উৎসাহ হল না।

পশ্চিম দিকে সিঁড়ি বেয়ে আমি ও রতন সোজা পাহাড়ের তলায় নেমে এলাম পাহাড়ের গা ঘেঁষে একটা নদী গেছে। মরা নদী। জল প্রায় নেই এখন।

রতন বলল, অনেক সময় বর্ষার জলে ধুয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে নানারকম পাথর এসে পড়ে নদীতে। নদী—খাতে লক্ষ রাখ। ক্রোম—পাথর দেখতে পেলে কোনখান থেকে নেমেছে পাথরটা, আন্দাজ করে খুঁজব।

স্রোত ধরে ধরে চললাম, সন্দেহ মতো কয়েকটা পাথর তুলে দেখালাম রতনকে। নাঃ, ক্রোম নয়। কতকগুলো হরিণ দেখলাম—ঘাস খাচ্ছে। খয়েরি গায়ে সাদা গোল গোল ছোপ। আমাদের দিকে উৎকৰ্ণভাবে তাকাল একটুক্ষণ। তারপরই ঠ্যাং তুলে লাফাতে লাফাতে দে দৌড়।

ঘণ্টাখানেক পর আমরা পাহাড়ের দক্ষিণ প্রান্তে উপস্থিত হলাম।

দক্ষিণদিকে পাহাড় ক্রমশ সরু হয়ে অন্য একটা পাহাড়ের গায়ে গিয়ে শেষ হয়েছে। দুই পাহাড়ের মাঝখানে খাদ। এখন খাদে ঢোকা উচিত হবে না মনে করে একটা পায়ে চলা পথ ধরে পাহাড়ে চড়তে লাগলাম। মতলব পাহাড়ের ওপর থেকে খাদের ভিতরে দেখব একবার। কয়েক পা যেতেই হঠাৎ রতনের ভয়ার্ত চাপা। স্বরে আমাকে থামতে হল।

প্রতাপ দাঁড়া। নড়িস নি একদম।

তখন কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি পাশের দিকে গাছের ওপরে একটা পাখিকে লক্ষ করছিলাম, দাঁড়িয়ে পড়ে সামনে চাইতেই দেখি সাক্ষাৎ যম।

মাটি থেকে প্রায় চারফুট খাড়া হয়ে ফণা ধরে সোজা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এক বিশাল সাপ। মাত্র পাঁচ ছয় হাত দূরে। অল্প অল্প দুলছে। তীব্র ক্রুর দৃষ্টি তার।

আমার সঙ্গে বন্দুক আছে, কিন্তু সেটা কাঁধে ঝুলছে। সেটা কাধ থেকে নামিয়ে গুলি করবার সময় নেই। আমি পাথরের মতো স্থির। জানি বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করলে আক্রমণ করবে সাপ। সম্মোহিতের মতো চেয়ে থাকি ওর চোখে চোখে। শরীর কেমন অবশ হয়ে আসে। হঠাৎ—গুড়ুম! এবং সেই মুহূর্তে ম্যাজিকের মতো সাপ অদৃশ্য।

পিছনে তাকিয়ে দেখলাম কিছু দূরে উঁচু পাথরের ওপর ডাকু দাঁড়িয়ে। তার বন্দুকের নল দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সাপটাকে পাওয়া গেল কাছেই। ছিন্নভিন্ন ফণা, অবশ্যই মৃত। তবে তখনও দেহটা পাকসাট খাচ্ছে।

ডাকু রেগে বলল, শুধু হাঁ করে প্রকৃতির সৌন্দর্য গিললেই হয় না। জঙ্গলের বিপদের কথাও খেয়াল রাখতে হয়।

সাপটা অন্তত আট ফুট লম্বা। সাদার ওপর সারা গায়ে কালো কালো ডোরা কাটা।

—কী সাপ? জিজ্ঞেস করলাম।

ডাকু বলল, শঙ্খচূড়। কিং কোবরা। সাপের রাজা। সাংঘাতিক বিষাক্ত।

আমরা সাপটার দেহ কাঠ—পাতা জ্বেলে পুড়িয়ে দিলাম।

বেলা আর বেশি নেই। রোদ পড়ে আসছে। খাদে ঢুকতে আর ভরসা হল না। সবাই ফিরে চললাম তাঁবুতে। একটু পরেই পেলাম সেই পরিচিত সিঁড়ি।

কেল্লার প্রাচীরের কাছে হাজির হয়েছি, ভাঙা তোরণ দিয়ে ঢুকব, এমন সময় কেমন একটা আওয়াজ এল কানে। বোঁ বোঁ বোঁ—কোনো এরোপ্লেন নাকি? তাকালাম। কই, না তো!

ডাকু পা টিপে টিপে উঠে প্রাচীরের পাশ থেকে একবার উঁকি মেরেই চট করে সরে এল। তারপর চাপা গলায় বলল, মৌমাছি! চারধারে উড়ছে। তাঁবুর ওপরেও। অন্ধকার হয়ে গেছে জায়গাটা।

সর্বনাশ! বোসদা যে রয়েছেন ওইখানেই!

বেশ কিছুক্ষণ পরে বোঁ বোঁ আওয়াজ কমল। ডাকু আবার উঁকি দিয়ে এসে বলল, চল এখন। ওগুলো চাকে বসেছে আবার। তাছাড়া সন্ধে হয়ে গেছে। আর উড়বে না।

সাবধানে তাঁবুর কাছে গেলাম। দুটো তাঁবু খাটানো হয়েছে। একটায় থাকবে রতন ও ডাক, অন্যটায় আমি আর বোসদা। বাইরে রান্নার জিনিসপত্র ছড়িয়ে আছে। এক হাঁড়ি ঢাকা দেওয়া খিচুড়ি। উনুনের আগুন নিবুনিবু। কিন্তু বোসদা কই?

আরো এগিয়ে আমাদের তাঁবুর ভিতর উঁকি দিতেই দেখি বোসদা আপাদমস্তক কম্বল মুড়ে শুয়ে রয়েছেন।

আমাদের গলা শুনে তিনি ফ্যাকাসে মুখ করে বেরিয়ে এলেন। উঃ ব্রাদার, কী ডেঞ্জারেস কাণ্ড! খুব বেঁচে গেছি প্রাণে। তাঁবুতে ঢুকে পেট্রোম্যাক্সে তেল ভরছি, হঠাৎ বাইরে কেমন অদ্ভুত শব্দ পেলাম। মুখ বের করে দেখে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। বাপরে! বোসদার কাঁপুনি তখনও থামেনি। বললেন, এখান থেকে সরে পড়ো ব্রাদার, প্লিজ! ওপাশে বরং তাঁবু খাটাব কালকে।

—ঠিক আছে, তাই হবে। আমরা বোসদাকে আশ্বস্ত করি।

ডাকু ইতিমধ্যে মৌচাকের নিচে গিয়ে দেখছিল। বলল, কেউ ঢিল মেরেছে বা খোঁচা দিয়েছে চাকে। অনেকখানি দেখছি ভেঙে ঝুলে পড়েছে। কিংবা শুকনো ডাল ছিটকেও লাগতে পারে। কিন্তু না, তেমন কোনো ডাল তো পড়ে নেই তলায়। কিন্তু কে ভাঙল চাক? কেন?

আমি বললাম, হয়তো কেউ আমাদের তাড়াতে চায় এখান থেকে। তাই বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে।

ডাকু বলল, হুঁ, তাই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু কেন?

রতন দৃঢ়স্বরে বলল, ডাকু জেনে রাখ, এ কীর্তি যারই হোক, তাড়াতে চাইলেই অত সহজে আমরা পালাচ্ছি না।

ডাকু বলল, রাইট।

ঝপ করে অন্ধকার নামল। পেট্রোম্যাক্সের উজ্জ্বল আলোর গণ্ডির ওপারে গাছপালা, কেল্লা বাড়ি সব কেমন ভুতুড়ে ঠেকে। চারপাশে চাপ চাপ অন্ধকার। যেন হাত দিয়ে ছোঁয়া। যায়। রাতে অরণ্যময় পর্বত মুখর হয়ে ওঠে। কত রকম আওয়াজ শুনি।

বোদা চোখ বড় বড় করে বললেন, টেরিফি। উঃ—একে বলে রিয়েল জঙ্গলে। ক্যাম্প—লাইফ! নিজেকে কার মতো লাগছে জানো ব্রাদার—লিভিংস্টোন।

পরিশ্রান্ত সবাই। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম। খিচুড়ি, আলুর দম ও আচার। বোসদার রান্নার হাত সত্যি খাসা। সবাই চেয়ে চেয়ে খেলাম। খাওয়ার পরই শোয়া। ক্যাম্পখাটে শুতে না শুতেই ঘুমের রাজ্যে ঢলে পড়ি।

ব্রাদার! ও প্রতাপ! বোসদার গলা!

কী ব্যাপার। উঠে বসলাম।

বোসদা বললেন, শোনো কীসের আওয়াজ। ওই দিক থেকে আসছে।

বোসদার মুখ ফ্যাকাসে। তিনি কেল্লা—বাড়ির দিকে দেখান।

সত্যি—বিচিত্র একটা শব্দ হচ্ছে থেকে থেকে। যেন কান্নার আওয়াজ। আর্তনাদ। খুব ক্ষীণ।

এ কীসের শব্দ?

তাঁবুর বাইরে উঁকি দিলাম। তাঁবুর সামনে কাঠ জ্বেলে রাখা হয়েছে যাতে বুনোজন্তু না আসে কাছে। সেই আগুনের স্বল্প আভার পিছনে গাটু আঁধার।

একটু গা শিরশির করছিল। মনে পড়ল এ পাহাড় ভালো নয়। রাতে কেউ থাকে না এখানে। বহু বন্দী যন্ত্রণাকাতর মৃত্যুবরণ করেছে কারাগারে। একি কোনো জীবন্ত প্রাণীর আর্তনাদ? না কোনো অতৃপ্ত আত্মার ক্রন্দনধ্বনি?

মনের ভয় মুখে প্রকাশ করলাম না। বললাম, ও কিছু না। বোধহয় কোনো পাখির বাচ্চা কাঁদছে। কাল জিজ্ঞেস করব ডাকুকে। আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে পড়ুন।

একটু পরেই বোসদার নাসিকা গর্জন শুনতে পেলাম। আমার কিন্তু অনেকক্ষণ ঘুম এল চোখে।