» » কেল্লাপাহাড়ের গুপ্তধন

বর্ণাকার

অজেয় রায়

কেল্লাপাহাড়ের গুপ্তধন

তিন

বংশী মারা গেছে সন্দেহ নেই। মাথার চুলে চাপ চাপ রক্ত জমাট বাঁধা। খুলির এক জায়গা হাঁ হয়ে গেছে। আর কোনো আঘাতের চিহ্নই নেই দেহে। বোঝা যায় বংশীর মৃত্যু হয়েছে। অনেকক্ষণ।

কিন্তু মরলো কী করে?

ডাকু বলল, খাদের ওপর থেকে পড়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া আর তো কোনো কারণ মনে। হচ্ছে না। কিন্তু পড়ল কেন? এরা পাহাড়ে চড়তে অভ্যস্ত। সহজে তো পা ফসকায় না। তবে মদ খেয়ে মাতাল হলে বেসামাল হতে পারে। হয়তো খাদের ধারে ধারে যাচ্ছিল কিংবা ঢালের গায়ে ওই মহুয়া গাছটায় চড়েছিল পাকা মহুয়ার লোভে, তারপর বেটাল হয়ে পড়ে গেছে। ইস, কী স্যাড় ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত বংশীর সঙ্গে এভাবে দেখা হবে, কে জানত।

বংশীর মৃতদেহের পাশেই একটি ছোট ঝুলি পড়েছিল। রতন সেটা তুলে দেখল। ভিতরে একটা হাতুড়ি। মাটিতে ছেনি বাটালি ইত্যাদি কয়েকটা জিনিস ছড়িয়ে পড়ে আছে। রতন সহসা কী একটা কুড়িয়ে নিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ডাকু এই দেখ।

রতনের হাতে একটা ছুরি। কাঠের খাপে পোরা। কাঠের হাতলে খোদাই করা পদ্ম। ঠিক মিউজিয়ামের ছুরির মত।

ডাকু খাপ থেকে ছুরি টেনে বার করল। ছুরির ফলা একটু বাঁকানো। বলল, এই সেই ছুরি। দু—বছর আগে এটাই আমি দেখেছিলাম বংশীর কাছে। বংশী ছুরিটা সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিল আজ।

রতন ছুরিটা চেয়ে নিল ডাকুর কাছ থেকে। তারপর গম্ভীরভাবে বলে, এ ছুরি আমি নিলাম।

সে কি! আমরা অবাক।

রতন বলল, হ্যাঁ। কারণ এ ছরিতে বংশীর আর কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমার আছে। বংশী কী ধাতু মেশাত এই ইস্পাত বানাতে তা বংশীর মুখে থেকে আর কেউ কোনোদিন জানতে পারবে না। তাই ছরিটা নিচ্ছি; অ্যানালিসিস করে দেখতে চাই, কী কী আছে এতে।

রতন এমন দৃঢ়স্বরে বলল কথাগুলো যে আমরা আর প্রতিবাদ করতে পারলাম না। এদিকে মৃতদেহের ব্যবস্থা করা দরকার। বংশীর গ্রামে খবর দিতে হবে। রতন বলল, ডাকু, তুই জগন্নাথপুর চলে যা। গাড়ির টায়ার নিশ্চয় এতক্ষণে বদলানো হয়ে গেছে। আমি আর প্রতাপ থাকছি এখানে।

ডাকু চলে গেল। একটু পরেই মোটরের ইনজিনের আওয়াজ পেলাম।

ডাকু প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ফিরে এল, সঙ্গে ছ—সাত জন গ্রামের লোক। কার্তিকও এসেছে। কার্তিক তো হাউমাউ করে একচোট কান্না জুড়ে দিল প্রাণহীন বংশীকে দেখে। যাহোক ওরা চটপট গাছের ডাল দিয়ে একটা মাচা বানিয়ে তার ওপর বংশীর দেহ চাপিয়ে নিয়ে গ্রামের দিকে চলে গেল। আমরাও ফিরলাম কেওঞ্ঝরগড়।

কেওঞ্ঝরগড়ে পৌঁছবার পরদিনই রতন ছুরিটা পাঠিয়ে দিয়েছিল ধাতুবিদ ডক্টর ত্রিপাঠীর কাছে অ্যানালিসিসের জন্যে। পাঁচদিন পরে ডক্টর ত্রিপাঠী রতনকে ফোন করলেন।

অ্যানালিসিস্ হয়ে গেছে। বিকেলে আসুন।

আমি ও রতন গেলাম।

ডক্টর ত্রিপাঠী সাহেবি কেতার মানুষ। ছোটখাটো শীর্ণকায়, ফরসা। মুখে সর্বদা পাইপ। আমরা বসতেই কফির অর্ডার দিয়ে বললেন, এ ছুরি কোত্থেকে পেয়েছেন?

রতন বলল, একজন দেশি কামারের কাছ থেকে।

স্ট্রেঞ্জ। ত্রিপাঠী বিস্ময় প্রকাশ করেন। আমি জানতাম দেশি কামার বড়জোর কার্বনস্টিল তৈরি করতে পারে। কিন্তু লোহার সঙ্গে অন্য ধাতু মেশায়, এই প্রথম জানলাম।

কেন, কী কী পেয়েছেন? রতন উত্তেজিত।

পেয়েছি অনেক কিছু। খুব ভালো কোয়ালিটির স্টিল। এতে আছে প্রায় টেন পারসেন্ট ক্রোম, ওয়ান পারসেন্ট নিকেল, সামান্য ম্যাঙ্গানিজ। কার্বন, সিলিকন ইত্যাদি। এবং বাকিটা আয়রন।

ক্রোম, নিকেল! ত্রিপাঠীর কথা শেষ না হতেই রতন চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে।

তার মানে বংশী ক্রোম আর নিকেল মেশাত লোহার সঙ্গে।

কে বংশী? ত্রিপাঠী জিজ্ঞেস করলেন।

ওই কামারের নাম, যে ছুরি তৈরি করেছে। বলল রতন।

সে কোথায় থাকে?

রামচন্দ্রপুরের কাছে এক গ্রামে। কিন্তু সে নেই। মারা গেছে।

বংশী ক্রোম আর নিকেল পেত কোত্থেকে? জানেন আপনি?

ত্রিপাঠী ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করেন।

সঠিক জানি না। আন্দাজ করছি। রতন থতমত খেয়ে বলে, খবর পেয়েছি, বংশ মহাগিরি রেঞ্জের এক পাহাড় থেকে কিছু ধাতু পাথর আনত গোপনে। সেই পাথর লোহার সঙ্গে মেশাত। আমার ধারণা ওই পাহাড়ে ক্রোম আর নিকেলের ডিপোজিট আছে। হয়তো একই জায়গায়। কাছাকাছি। বংশী নিশ্চয় এই দু—রকম পাথরই আনত। এই রকম ইস্পাত বানাবার কায়দা ওর এক পূর্বপুরুষ নাকি আবিষ্কার করেছিল। অবশ্য কোন ধাতুর কী গুণ আলাদা করে নিশ্চয় তারা বুঝত না। আপনি কী বলেন?

বুঝলাম রতন ত্রিপাঠীর কাছে কেল্লাপাহাড় বা জগন্নাথপুরের নাম চেপে যেতে চায়।

ত্রিপাঠী কয়েক সেকেণ্ড ভেবে বললেন, হয়তো ক্রোম আনত—কিন্তু নিকেল ইমপসিবল। উড়িষ্যায় নিকেল কোথাও নেই।

তাহলে নিকেল এলো কী করে? রতন জানতে চাইল।

খব সোজা। উল্কাপিণ্ড থেকে। উল্কাপিণ্ডে লোহার সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ নিকেল থাকে। দেশি কামার অনেক সময় পাহাড়—জঙ্গলে পড়ে থাকা উল্কাপিণ্ড ভেঙে নিয়ে আসে লোহার প্রয়োজনে। অনেক প্রাচীন জিনিসে নিকেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেই নিকেল এসেছে। উল্কাপিণ্ডের লোহার সঙ্গে।

রতন বলল, তা হতে পারে। কিন্তু উড়িষ্যায় নিকেল যে নেই, তার প্রমাণ কী?

ত্রিপাঠীর মুখে বক্ৰহাসি ফুটে ওঠে। বলেন—প্রমাণ হচ্ছে, এখনও কেউ তার সন্ধান পায়নি। থাকলে নিশ্চয় পেত। দেখুন, আপনার অনুসন্ধিৎসু মনের প্রশংসা করি। কিন্তু এসব হচ্ছে, অল্প বয়সের রোমান্টিক কল্পনা।

রতন তেতে ওঠে। বলে—আমার ধারণা একেবারে উড়িয়ে দেবার কারণ নেই। আগে তো অনেকে ভাবতেন, উড়িষ্যায় ক্রোম নেই। কিন্তু পরে তো পাওয়া গেছে। তেমনি নিকেলও থাকতে পারে।

ত্রিপাঠীর মুখ লাল হয়ে উঠল। বললেন, বেশ তো, দেখুন না খুঁজে। যদি নিকেল পেয়ে যান তাহলে তো ইউ উইল বি এ হিরো।

তাঁর কণ্ঠের প্রচ্ছন্ন বিদ্রূপ আমাদের কান এড়ালো না।

বাড়ি এসে রতন অনেকক্ষণ গুম মেরে বসে রইল।

তারপর হঠাৎ আমাকে বলল, জানিস প্রতাপ ছোটকাকার বন্ধু জিওলজিস্ট মিস্টার পট্টনায়ক একদিন দুঃখ করে বলেছিলেন—উড়িষ্যার এই অঞ্চলে, এই পাহাড় বনরাজো কত প্রাকৃতিক গুপ্তধন, কত খনিজ পদার্থ লুকিয়ে আছে। তাদের সামান্যই আবিষ্কার হয়েছে। আমরা যে কিছু খুঁজে পাব না তা কেউ বলতে পারে?

আমি বললাম, তোর কী মতলব বলতো?

রতন আর ভণিতা করল না।

কেল্লাপাহাড়ে যাব—নিকেল খুঁজতে। বাড়িতে বলব কেল্লা সার্ভে করতে যাচ্ছি, তাহলে কাকা আপত্তি করবে না। নিকেল খুঁজতে যাচ্ছি বললে কাকা আবার ত্রিপাঠীকে ফোন করে বসবে, তখন ও লোকটা বাগড়া দিয়ে সব ভণ্ডুল করে দেবে।

একা যাবি? আমি প্রশ্ন করলাম।

রতন বলল, কেন—তুই তো আর্কিওলজির লোক। তোর পুরনো কেল্লায় কোনো ইন্টারেস্ট নেই বলতে চাস?

একশোবার আছে। আর ডাকু? ডাকু যাবে না?

আলবৎ। ডাকু হবে আমাদের গাইড।

বিকেলে গেলাম ডাকুর ঘরে। গিয়ে দেখি শ্রীমান বন্দুক পরিষ্কার করছে। বলল, ভাবছি শিকারে যাব দু—একদিনের জন্য।

মতন বলল, শিকার—টিকার বাদ দে। তোকে কেল্লাপাহাড়ে যেতে হবে আমাদের সঙ্গে।

হঠাৎ?

রতন আসল কারণটাই বলে ফেলল। ডাকু বলল, ভালোই হল। আমিও ওদিকটায় যাবার প্ল্যান করছিলাম। যদি কিছু পাওয়া না যায়, একটা অ্যাডভেঞ্চার তো হবে।

রতনের কাকা সহজেই অনুমতি দিলেন। তবে এটাও বললেন যে আমরা যেন খুব বিেশ কিছু আশা না করি। যা শুনেছি, দুৰ্গটা খুব সাধারণ। আসলে ওটা ছিল এক সামন্ত রাজার জেলখানা। কিছু সৈন্যও থাকত। রাজা যুদ্ধে হেরে গেলে ওটা শত্রুরা ধ্বংস করে দেয়। তবে সুড়ঙ্গ—টুড়ঙ্গ নাকি আছে।

এটাও বলে দিলেন রতনের কাকা যে আমরা যেন তিন চার দিনের বেশি না থাকি, আর সঙ্গে যেন বন্দুক অবশ্যই থাকে।

অবাক করলেন বোসদা।

আড্ডা দিতে এসে শুনলেন আমাদের অভিযানের সংকল্প, আর ধাঁ করে বলে বসলেন, ব্রাদার, আমিও যাব। এই আবদারের পিছনে কারণটাও অবিশ্যি তখনই বলে দিলেন।

বুঝলে কিনা ব্রাদার, ছোটবেলা থেকে আমি অ্যাডভেঞ্চারের ভক্ত। প্রচুর বই পড়েছি অ্যাডভেঞ্চারের। কল্পনা করেছি গভীর জঙ্গলের মধ্যে তাঁবুর পাশে রাতে আগুন জ্বেলে বসে আছি, যেমন থাকত চাঁদের পাহাড়—এর শঙ্কর। কিন্তু লাক খারাপ। কোনো সত্যি অ্যাডভেঞ্চার জোটেনি ভাগ্যে। এবার সুযোগ যখন পেয়েছি ছাড়ছি না কিছুতেই।

বললাম, আপনার কষ্ট হবে।

আরে কষ্ট করতেই তো যাব। কষ্ট পাব, ভয় পাব, তবে তো! বুঝলে ব্রাদার, তোমাদের বউদি বড় খোঁচা দেয় আমায়। বলে, তুমি বেজায় কুনো। বসে বসে কেবল বই পড়ো। জঙ্গলে থেকেছ কখনও এক রাত্তির? এবার তার মুখ বন্ধ করে দেব। আমাদের ইতস্তত করতে দেখে বোসদা বললেন, আমি তোমাদের ভার হব না ব্রাদার। আমি নেব তোমাদের কিচেনের ভার। জানো, অফিসের পিকনিকে সব রান্না এই শর্মা এক হাতে সামলায়।

রতন অগত্যা বলল, ঠিক আছে, চলুন।

বোসদা চলে যেতে রতন বলল, উনি গেলে ভালোই হবে। তবে আমাদের অভিযানের আসল উদ্দেশ্য মানে নিকেলের ব্যাপারটা, ওঁকে জানানো চলবে না। যদি খালি হাতে ফিরি, লোকে ওর কাছেই জানবে আমরা শুধু দুর্গ দেখতে গিয়েছিলাম। তাছাড়া রান্নার হ্যাঁঙ্গামা নেবেন বলছেন। আমরা বেশি সময় পাব খুঁজতে।

রতনের কাকিমা বোসদা যাবেন শুনে খুব খুশি। কাকা নিজেই বোসদার ছুটির ব্যবস্থা করে দিলেন। বোধহয় ভাবলেন, ভালোই একজন গার্জেন রইল সঙ্গে।

যাবার দিন ডাকু বলল, জানিস ওই পাহাড়টার একটু বদনাম আছে শুনলাম।

—মানে ভূত—টুত নাকি? জিজ্ঞেস করি।

—হ্যাঁ ওই আর কি। যুদ্ধ হয়েছে। অনেক লোক মরেছে ওখানে, তাই! স্থানায় সে নাকি কেউ ও পাহাড়ে রাতে থাকে না।

বললাম, এ খবর বোসদাকে দিসনি। শেষে ভয় পাবেন অনর্থক।

আবার সেই কেওক্ষর—জাজপুর রোড। ভোরের আলো সবে ফুটছে। মোটর চলেছে। হু—হুঁ করে। বোসদা সমানে কথা বলছেন—বাঃ, কী দৃশ্য দু—পাশের! আচ্ছা ডাকু, পাহাড় কত উঁচু হবে? পাহাড়ে খুব জঙ্গল নাকি?…

আনন্দপুরে এক চায়ের দোকানে থামলাম আমরা। চা খাচ্ছি, এমন সময় আর একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল কাছে। আরোহী একা চালক, মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। লম্বা, ফরসা, রোদে পোড়া চেহারা। পরনে কালো ফুলপ্যান্ট ও হলুদ বুশ সার্ট। হাতে জ্বলন্ত চুরুট। আগন্তুক কৌতূহলভরে আমাদের লক্ষ করে গাড়ির মাথায় বাঁধা মোটঘাট দেখে ইংরেজিতে করলেন, শিকারে চলেছেন বুঝি?

রতন বলল, শিকার না। যাচ্ছি একটা পুরনো কেল্লা সার্ভে করতে।

পুরনো কেল্লা? কোথায়?

একটা পাহাড়ের ওপরে। এখানে পাহাড়টাকে বলে কেল্লাপাহাড়।

বুঝেছি। ভদ্রলোক গম্ভীরভাবে বলেন, তা আপনারা কি আর্কিওলজিকাল ডিপার্টমেন্টের লোক?

রতন উত্তর দিল।—না। আমাদের মধ্যে এই প্রতাপ অবশ্য আর্কিওলজিস্ট। বাকি আমরা যাচ্ছি শখ করে। একটা আউটিং বলতে পারেন। আপনি?

ও হো, দেখুন দিকি নিজের পরিচয় দিতে ভুলে গেছি। আর প্রশ্ন করে চলেছি। মাপ করবেন, বন—জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে বুনো হয়ে গেছি! আমার নাম চন্দ্রজিৎ সিং। উড়িষ্যায় ব্যবসা করি। কেল্লাপাহাড় আমি চিনি। ওই দিক থেকেই আসছি। ও জায়গায় যাওয়া কিন্তু এখন সে নয়।

কেন? প্রশ্নটা একই সঙ্গে আমাদের মুখ থেকে বেরিয়ে গেল।

কারণ একটা হাতি। হাতিটার মেজাজ বিগড়েছে। আর কেল্লাপাহাড়ের কাছেই ঘোরাফেরা করছে। জানেন তো, নিঃসঙ্গ খ্যাপা হাতি কী ভয়ংকর জীব। কেল্লাপাহাড়ের কাছে এক পাহাড়ে আমি কাঠ কাটার ইজারা নিয়েছি। সেই কাজে যাচ্ছিলাম। কিন্তু যেতে পারিনি। ফিরে এলাম।

আমরা মুখ চাওয়া—চাওয়ি করি। দলে শিকারী বলতে তো একমাত্র ডাকু। সে দেখি ভুরু কুঁচকে চুপ করে আছে। এমন সময় রতন বলে উঠল, বেরিয়েছি যখন, যাই। তেমন বিপদ বুঝলে ফিরে আসব। কি রে ডাকু?

ডাকু মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল—হুঁ।

আচ্ছা। গুডলাক্। চন্দ্রজিৎ সিং আমাদের হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে লম্বা পা ফেলে একটা দোকানের দিকে চলে গেলেন।

আমি বললাম, রতন, তোর কথা ভদ্রলোকের পছন্দ হয়নি। হয়তো ভাবলেন—ছেলেগুলো অতিরিক্ত ঠ্যাটা।

রতন বলল, ভাবুক গে।

আমরা আবার রওনা দিলাম। হাতির কথায় মনে একটু ভাবনা ঢুকিয়ে দিল যাহোক।

জগন্নাথপুরের কাছে গিয়ে গাড়ি জাজপুর রোড ছেড়ে ডান দিকে এক পাহাড়ি রাস্তা ধরল। প্রায় শুকনো নালার পাশে পাশে পাথুরে রাস্তা। এ জায়গা টোমকা এবং মহাগিরি পর্বতমালার মধ্যবর্তী অংশে। ডানদিকে দূরে দেখা যাচ্ছে ঢেউয়ের মতো পর্বতপুঞ্জ। নীলাভ অস্পষ্ট। বাঁ—দিকে কাছেই অল্প উঁচু এক পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে উদ্ভিদের ঘন সবুজ প্রলেপ।

ডাকু বলল, ওই বোধহয় কেল্লাপাহাড়।

প্রায় মাইল চার যাবার পর একটি গ্রাম পেলাম। ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম। গ্রামের নাম পলাশবুনি। গ্রামে খোঁজ করে জানলাম—হ্যাঁ এই বাঁ—পাশের পাহাড়ই হচ্ছে কেল্লাপাহাড়। তবে পাহাড় অবধি গাড়ি যাবে না। মাইল খানেক হাঁটতে হবে পাহাড়ে পৌঁছতে। অতএব গাড়ি ছেড়ে দিয়ে মোটঘাট কাঁধে তুলে আমরা পায়ে হেঁটে রওনা দিলাম কেল্লাপাহাড় লক্ষ্য করে।