সাত
পরদিন সকালে পুলিশ ইন্সপেক্টর শর্মাজী এলেন সেচবাংলোয়। কর্নেল তখন ছিপ আর প্রজাপতি ধরা জাল নিয়ে বেরোবেন বলে তৈরি হচ্ছেন। বললেন, কী মিঃ শর্মা? আসামী কবুল করল কিছু।
শৰ্মাজী বললেন, মোহান্তজী ভীষণ ধূর্ত লোক। পেট থেকে কথা আদায় করা গেল না। তার ওপর প্রভাবশালী মহল থেকে ভীষণ চাপ শুরু হয়েছে। ওঁকে ছেড়ে দিতে হবে বলে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
ভোলা আর রামুকে পাওয়া যায়নি এখনও?
নাঃ। বেমালুম গা ঢেকে দিয়েছে। শৰ্মাজী হতাশভঙ্গিতে বললেন, তবে মোহান্তজীর পেছনের লোকটি কে, সেটা যতক্ষণ না জানা যাচ্ছে, ততক্ষণ কালোপাথর ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে না। বেদীর পাথরটা আর বিজ্ঞানী দীপ্তেন্দু। মিত্রের উদ্ভাবিত মিশ্র ধাতু–যার কোড নেম দিয়েছিলেন ব্ল্যাকস্টোন–উভয়ের মধ্যে সম্পর্কটা বোঝা যাচ্ছে না।
কর্নেল একটু হাসলেন। বোঝা গেছে খানিকটা। কাল রাত্রে দীপ্তেন্দুবাবুর ব্রিফকেসের গবেষণাপত্র ওল্টাচ্ছিলুম। আমি বিজ্ঞানী নই ঠিকই, কিন্তু প্রাথমিক কতকগুলো ব্যাপার আমার জানা আছে। পল্লবগ্রাহিতা বলতে পারেন।
বিলক্ষণ জানি। আপনি সর্বশাস্ত্রবিদ, পণ্ডিত মানুষ!
কর্নেল হো হো করে হেসে ফেললেন। দেখুন মিঃ শর্মা। পণ্ডিত এবং শিং ওয়ালা প্রাণীর কাছ থেকে আমি সব সময় একশো হাত দূরে থাকি। যাইহোক, দীপ্তেন্দুবাবুর নোটগুলোতে দেখছিলুম, একখানে মন্তব্য লেখা আছে : এক ধরনের কালো উল্কাপাথর পাওয়া গেছে বহু জায়গায়। বারাহিয়ার পার্বতীমন্দিরের ভেতর একটা বেদী আছে। সেটাও ওই শ্রেণীর পাথর। এ আসলে পাথরই নয়। একজাতের। মিশ্র ধাতু। খুব হাল্কা এবং শক্তিশালী।.কর্নেল উঠে গিয়ে ব্রিফকেসটা নিয়ে এলেন। এটা আর কাছে রাখা নিরাপদ নয়। আমার পরীক্ষা শেষ। আপনি নিয়ে যান এবার। তাছাড়া এটা কোর্ট এভিডেন্স।
শৰ্মাজী ব্রিফকেসটা নিয়ে বললেন, কিন্তু ব্যাপারটা এখনও পরিষ্কার হল না কর্নেল!
বেদীর পাথরটা দেখেই দীপ্তেন্দু মৈত্র ওইরকম ধাতু কৃত্রিম উপায়ে তৈরির অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন এটুকু অনুমান করতে পেরেছি। এবার বুঝতে আশা করি অসুবিধে হবে না মিঃ শর্মা, যিনি দীপ্তেন্দুবাবুর এই ব্রিফকেস চুরি, তাকে হত্যা এবং পরে অনুরাধাকে হত্যা–এতসব কাণ্ড করিয়েছেন, তাঁরই ওই বেদীটা হাতানোর চেষ্টা করা স্বাভাবিক। মোহান্তজীর পেছনের যে লোকটির কথা আপনি বলছিলেন, তিনি মূল অপরাধী। মেহান্তজী টাকার লোভে চেলাদের সাহায্যে তাঁরই হুকুম তামিল করেছেন।
মোহান্তজীকে কবুল করানো প্রায় অসম্ভব কর্নেল।
কর্নেল চুরুট ধরিয়ে একটু ভেবে নিয়ে বললেন, একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে দীপ্তেন্দু যেভাবে হোক, টের পেয়েছিল তার ব্রিফকেস চুরি করে ডেড মাইনের ৩৪৭ নং পিটে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। হা–মোহান্তজীই লুকিয়ে রেখেছিলেন ভোলা ও রামুর সাহায্যে। নিশ্চয় দরাদরি চলছিল। তাই ওই ব্যবস্থা।
বেশি টাকা চেয়েছিলেন হয়তো।
তাই মনে হচ্ছে। তবে একজায়গায় ব্রিফকেস, অন্য জায়গায় বেদীর পাথর লুকিয়ে রাখার অতিরিক্ত সতর্কতা। দীপ্তেন্দুবাবু রাত্রে পিট নং ৩৪৭-এ ব্রিফকেস উদ্ধার করতে গিয়ে খুন হলেন। তার আগে ব্যাপারটা তার প্রেমিকা অনুরাধাকে বলে থাকবেন। তা না হলে অনুরাধা জানবে কেমন করে?
ঠিক, ঠিক। শৰ্মাজী বললেন। এ-ও বোঝা যাচ্ছে আপনি মোহান্তজীকে কাল সকালে কালোপাথরের কথা বলার পর উনি ভয় পেয়েছিলেন তাই ওটা ফুলঝরিয়ার টিলা থেকে সরিয়ে পিট নং ৩৪৭-এ লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন। এ পর্যন্ত সব স্বচ্ছ।
এই সময় একজন পুলিশ অফিসার সঙ্গে কনস্টেবল সহ হন্তদন্ত হাজির হলেন। শৰ্মাজী বললেন, কী ব্যাপার মিঃ সিং?
সাব ইন্সপেক্টর সুরেশ সিং বললেন, স্যার! ভোলা আর রামুর ডেড বডি পাওয়া গেছে রেল লাইনের ধারে। গুলি করে মারা হয়েছে দুজনকে। দুজনেরই মাথার পেছনে দিকে গুলি লেগেছিল।
শৰ্মাজী লাফিয়ে উঠলেন। কী সাংঘাতিক কাণ্ড!
কর্নেল বললেন, লোকটা এবার মরিয়া হয়ে উঠেছে, মিঃ শর্মা! ভোলা আর রামুর মুখ চিরকালের মতো বন্ধ করে দিয়েছে।
কিন্তু কে সে?
এখন জানি না আমরা। শুধু এটুকু জানি, দীপ্তেন্দুর উদ্ভাবিত মিশ্ৰধাতুর ফর্মুলা আর কালো বেদীটা সে হাতাতে চেয়েছিল। ভেবে দেখুন মিঃ শৰ্মা, এ দুটো জিনিস যে-কোনও ধনী দেশকে বিক্রি করতে পারলে কোটিপতি হয়ে যেত।
মোহন্তজীকে কবুল করাতেই হবে তাতে আমার ভাগ্যে যা ঘটে ঘটুক। বলে শর্মজী সদলবলে বেরিয়ে গেলেন বাংলো থেকে। ওঁদের জিপ দুটো সবেগে নেমে গেল উতরাইয়ের রাস্তায়।…
সন্ধ্যায় ডঃ রায় তার কোয়ার্টারের বারান্দায় বসে গল্প করছিলেন স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে। একটু পরে সুমন এসে গেল। তারপর এল ভাবনা। আড্ডা জমে উঠল। অরুণেন্দু নেই। ওর টো টো করে ঘোরা স্বভাব। মঞ্জুশ্রী পরিহাস করে বলল, অরুদা ভূত খুঁজতে গেছে। ভূত সঙ্গে নিয়ে তবে ফিরবে দেখে নিও।
গেটের কাছে লম্বা চওড়া একটা মূর্তি ভেসে উঠল আবছা আলোয়। ডঃ রায় বললেন, কে ওখানে? গম্ভীর গলায় সাড়া এল–আসতে পারি ডঃ রায়?
আরে! কর্নেল সাহেব! আসুন, আসুন! ডঃ রায় উঠে গিয়ে অভ্যর্থনা করে নিয়ে এলেন কর্নেলকে।
কর্নেলকে দেখে ভাবনা মুখ টিপে হেসে বলল, আজ মাছ ধরতে যাননি কর্নেল?
গিয়েছিলুম। আজ দুটো মাছ ধরেছি। কর্নেল হাসতে হাসতে বললেন। ইয়ে–একটা প্রয়োজনে এলুম ডঃ রায়। সকালে আপনার ঘরে টাইপরাইটার দেখেছিলুম। একটা জরুরী চিঠি টাইপ করা দরকার। প্লিজ যদি
ডঃ রায় বললেন, স্বচ্ছন্দে! আসুন, ভেতরে আসুন।
ডাইনিং-কাম-ড্রয়িংরুমের একপাশে টেবিলের উপর ছোট্ট টাইপরাইটার। কর্নেল চিঠি টাইপ করতে বসলেন। ডঃ রায় বললেন, আপনি কাজ সেরে নিন। আমরা বাইরে আড্ডা দিই।
কিছুক্ষণ পরে চিঠি টাইপ করে বেরিয়ে এলেন কর্নেল। ততক্ষণে পটভর্তি কফি আর স্ন্যাক্স এসে গেছে। মীনাক্ষীদেবী সবাইকে কফি পরিবেশন করলেন। কর্নেল বললেন, অরুণেন্দুবাবুকে দেখছি না!
মঞ্জুশ্রী হেসে উঠল। অরুদা ভূত ধরে আনতে গেছে। এখনই এসে পড়বে দেখবেন।
কথায় কথায় মোহান্তজীকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ এল। তারপর দীপ্তেন্দুর ফর্মুলার কথা। ডঃ রায় বললেন, দীপ্তেন্দু গোপনে কী একটা রিসার্চ করছে, আভাস পেয়েছিলাম। কিন্তু খুলে কিছু বলেনি। ওর প্রতিভার পরিচয় পেয়েছি বহুবার। আমাকে যদি ব্যাপারটা বলত, গভমেন্ট থেকে ওর সেফটির ব্যবস্থা করতে পারতুম। বোকামি করে নিজের প্রাণটা খোয়ালো।
মীনাক্ষী বললেন, আর একটা প্রাণও গেল বোকামি করে। অরু কেন চেপে রেখেছিল, বুঝতে পারি না। তোমাকে জানিয়ে দিলেও তো পারত!
সুমন বলল, প্রেতশক্তিতে বিশ্বাস করতুম না। কিন্তু এখন করি। আমার ধারণা, অনুরাধা জানত, না কিছু। দীপ্তেন্দুর আত্মাই ওর হাত দিয়ে
মঞ্জুশ্রী বাধা দিয়ে বলল, শাট আপ! আবার আত্মা-টাত্মা আনা হচ্ছে? আবার কী সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে যাবে, দেখবে।
এইসব আলোচনা হতে হতে অরুণেন্দু এসে গেল। কর্নেলকে দেখে সে বলল, আরে আপনি! কতক্ষণ?
কর্নেল একটু হেসে বললেন, অরণেন্দুবাবু মঞ্জুশ্রীর যদি আপত্তি হবে, আমি কিন্তু সিয়াসের ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী। আজ রাতে যদিও আকাশ পরিষ্কার! তবুও তিথিটা অমাবস্যার।
সুমন বলল, ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া! শুরু হোক তাহলে।
ডঃ রায় হাসতে হাসতে বললেন, আজ আমিও আসরে যোগ দিতে রাজি।
মঞ্জুশ্রী বলল, বাবা যদি পার্টিসিপেট করেন, আমার আপত্তি নেই।
অরুণেন্দু কঁচুমাচু মুখে বলল, কিন্তু মিডিয়াম কে হবে; তেমন কাউকে তো দেখছি না।
ভাবনা বলল, আমি হবো।
তুমি–
ভাবনা জোর দিয়ে বলল, দেখ না বাবা মিডিয়ামের উপযুক্ত কি না আমি। পরীক্ষা করে দেখতে দোষ কী? না হলে মঞ্জু তো আছেই।
মঞ্জুশ্রী আপত্তি করে বলল, আমি ওসবে নেই।
অরুণেন্দু একটু ভেবে বলল, ঠিক আছে। দেখা যাক।
সেদিনকার মতো ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল সবাই। দরজা জানালা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে মোম জ্বালানো হল। ভাবনা বসল একদিকে, অন্যদিকে অরুণেন্দু, কর্নেল, ডঃ রায় মঞ্জুশ্রী, মীনাক্ষী ও সুমন।
অরুণেন্দু তার অভ্যাসমতো বক্তৃতা দিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়ে কলম ও কাগজ দিল ভাবনাকে। তারপর বলল, আজকের আসরে আমরা গান্ধীজীর আত্মাকে চাইব। রেডি!
সে টেবিলে সংকেত করলে সবাই চুপচাপ গান্ধিজীর সম্পর্কে চিন্তা করতে থাকলেন। মিনিট দুয়েক পরে ভাবনার কলম কেঁপে উঠল। অরুণেন্দু আলতোভাবে কাগজটা টেনে নিয়ে লিখল, আপনি কি গান্ধীজী?
এরপর সে রাতের মতো প্রশ্ন ও জবাব যা লেখা হল, তা এই :
আমি অনুরাধা।
তোমাকে ডাকিনি। তুমি যাও।
আমার বলার আছে।
কী?
কালো পাথর।
আবার এসব কী?
মোহান্তজী।
অরুণেন্দু মুখার্জী।
আমার নাম লিখছ কেন?
অনুরাধা, তামাশা কোরো না।
অরুণেন্দু মুখার্জী।
অরুণেন্দু কাগজটা নিয়ে খাপ্পা হয়ে বলল, নিকুচি করেছে! বললুম– ভাবনাকে দিয়ে হবে না। ভাবনা দুষ্টুমি করছে। সে কাগজটা ফেলে দিতে যাচ্ছিল রাগ করে। কর্নেল তার হাত থেকে ওটা টেনে নিলেন। সবাই হেসে উঠল। অরুণেন্দু উঠে গিয়ে আলো জ্বেলে দিল।
সেই সময় ভাবনা হঠাৎ টেবিলের ওপর মাথা খুঁজে পড়ে গেল–অনুরাধার যেমনটি হয়েছিল। অবাক হয়ে মীনাক্ষী বললেন, ও কী! অজ্ঞান হয়ে গেছে নাকি ভাবনা? মঞ্জু, শীগগির জল নিয়ে আয়!
জল আনবার আগেই ভাবনা মাথা তুলে একটু হাসল। আস্তে হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠেছিল যেন।
অরুণেন্দু বিস্মিত দৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে বলল, সত্যি বলছ?
সত্যি!
কিন্তু
কিন্তু কি?
তাহলে আমার নাম বারবার লেখার মানে কি? অরুণেন্দু ক্রুদ্ধস্বরে বলল।
আমি তো জানি না, কী লিখেছি!
অরুণেন্দু গুম হয়ে ভেতরে চলে গেল। মঞ্জুশ্রী হাসতে হাসতে বলল, অরুদা খুব চটে গেছে। কর্নেল, কাগজে কী লেখা হয়েছে, পড়ুন না আমরা শুনি?
কর্নেল প্রশ্নোত্তর গুলো পড়লেন। খুব হাসাহাসি পড়ে গেল। ডঃ রায় বললেন, অরুর চটে যাওয়ার কারণ আছে। ভাবনা তুমি নিশ্চয় দুষ্টুমি করছিলে।
ভাবনা সিরিয়াস হয়ে বলল, না মেসোমশাই! সত্যি বলছি, আমি জানি না কী লিখেছি। আমার হাত দিয়ে আপনা আপনি লেখা হয়ে গেছে।
সুমন বলল, যদি সত্যি অনুরাধার আত্মা এসে থাকে, তাহলে একটা ব্যাখ্যা দওয়া যায়।
মীনাক্ষী বললেন, কী ব্যাখ্যা?
অরুণেন্দু মোহান্তজীর চেলা। মোহান্তজীর নামের সঙ্গে তাই ওর নামটাও এসে যায়। অরুণেন্দু আর একটু ধৈর্য ধরলে পারতো। তারপর কী লেখা হচ্ছে বোঝা যেত কোথায় গড়াচ্ছে ব্যাপারটা।
কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। এবার ওঠা যাক, ডঃ রায়। প্রায় নটা বাজে।
ভাবনাও উঠল। মীনাক্ষী বললেন, একটু দাঁড়াও, ভাবনা। তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে সুশীলা।
ভাবনা বলল, থাক! আমি একা যেতে পারব।
কর্নেল বললেন, বরং আমি তোমাকে পৌঁছে দিতে পারি, ভাবনা।
বেশ তো! ভাবনা পা বাড়াল।
কর্নেল দরজার কাছে গিয়ে হঠাৎ ঘুরে বললেন, একটা কথা, ডঃ রায়! আপনার কি রিভলভার আছে?
ডঃ রায় চমকে গেলেন। কেন বলুন তো?
এমনি জানতে টাইছি।
ডঃ রায় বললেন, আছে। লাইসেন্সড আর্ম। ইণ্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় গুণ্ডা ডাকাতদের খুব প্রতাপ। তাই রাখতে হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ একথা জানতে চাইছেন কেন?
প্লিজ! অন্যভাবে নেবেন না। কর্নেল দ্বিধাগ্রস্ত ভাবে বললেন। যদি কিছু মনে করেন, অস্ত্রটা একটু দেখতে চাই। দেখার অধিকার আইনত আমার নেই। তবু জাস্ট এ রিকোয়েস্ট।
ডঃ রায় অবাক হয়ে দ্রুত ভেতরে গেলেন। মীনাক্ষী, মঞ্জুশ্রী সুমন উদ্বিগ্নমুখে কর্নেলের দিকে তাকিয়ে রইল। ভাবনা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
একটু পরেই ডাঃ রায় হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন। স্ত্রীকে বললেন, মিনু রিভলভারটা অন্য কোথাও রেখেছ নাকি? আমার ড্রয়ারে তো নেই ওটা। আলমারির লকারেও নেই।
মীনাক্ষী উদ্বিগ্নমুখে বললেন, সে কী! আমি তো কোথাও রাখিনি।
এস তো, ভাল করে খুঁজে দেখি। আশ্চর্য! ওটা যাবে কোথায়?
কর্নেল বললেন, ঠিক আছে! চলি ডঃ রায়। আমার ধারণা, আপনার রিভলভারটা চুরি গেছে। আপনি এখনই পুলিশে ফোন করে জানান।
বলে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। রাস্তায় পৌঁছে মৃদুস্বরে বললেন, ভাবনা, ওদিকে নয়। এদিকে এস।
ভাবনার মুখে হাসি ঝিলিক দিচ্ছিল। বলল, ওদিকে কেন? আমাদের বাড়ি তো উল্টোদিকে।
ওই গাছের পেছনে পুলিসের গাড়ি আছে। ওরা তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে।
ভাবনা বলল, এক সাহস হবে না করুর, আমি অনুরাধার মতো বোকা নই।
বোকা বুদ্ধিমানের ব্যাপার নয়, ডার্লিং! আজ সকাল থেকে অনুরাধার খুনীর হাতে একটা রিভলভার এসে গেছে। মরিয়া হয়েই এবার সে রিভলভার জোগাড় করেছে। ভোলা ও রামু তোরবেলা পুলিশের ভয়ে ট্রেনে চেপে কোথাও পালাবে। ভেবেছিল। সে ওদের গুলি করে মেরেছে।
গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টার মিঃ সিং কর্নেলকে নমস্কার করলেন। কর্নেল ভাবনাকে বললেন, যাও ডার্লিং! মিঃ সিং তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন। সাবধানে থেক কিন্তু!