চার
সেই রাত কখন শেষ হলো, বালিয়াড়ির ওপর ফুড়ুত করে উড়ে এল সূর্য, তারপর উড়তে উড়তে চলল আরেক বালিয়াড়ির দিকে–অস্থির গরম কড়াইয়ে অসম্ভব ঠাণ্ডা থেকেও সেদ্ধ ভাজা ভাজা হলুম, সে বর্ণনা দিচ্ছি না। কিন্তু আমরা ভাল খেতে পেয়েছি, শোবার জায়গা না পেলেও। জেলাশাসকের হত্যাকাণ্ড। সরকারের বড় বাড়ি থরথর করে কেঁপেছে। চিকনডিহির বাংলো পুলিশ আর লোজনে থইথই করল সারাদিন। ফোরেনসিক এক্সপার্টরা দফায় দফায় পরীক্ষা করলেন সবকিছু। আমাদের জুতোর ছাপ নিলেন। কেন নিলেন, তা কর্নেল এসে জানালেন যখন আমরা দায়মুক্ত হয়েছি। আর একজন লোক সত্যি ছিল–ওঁরা প্রমাণ নাকি পেয়েছেন সেই জানলার নিচের লোকটি। তাই আমরা বেকসুর খালাস। খালাস তবে সরকারী সাক্ষী হতে হবে।
তখন চিকনডিহির বাংলো বিলকুল ফাঁকা। আমরা বেরিয়ে এসে একটা ঝাউবনের কাছে চুপচাপ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এই অবিশ্বাস্য স্বাধীনতা নিয়ে এবার কণ্টডিহির পথে হেঁটে যাব। সেই সময় নির্জন তালাবন্ধ বাংলোর দিক থেকে কে ডাকল–হ্যালো ইয়ং ফ্রেণ্ডস! চমকে দেখি-কর্নেল সরকার।
আমরা ওঁকে শেষ দলটির সঙ্গে চলে যেতে দেখেছিলুম না? সবটাই রহস্যময় মনে হল। একি কোনও চতুর ফাঁদ পুলিশের? সেই ফাঁদে না পড়ার জন্য আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার।
এসে হাসি মুখে বললেন, বরং আজ রওনা না দিলেই পারতেন আপনারা। বাংলোর চাবি আমি নিয়েছি। আসুন না, গল্পগুজব করে আর একটা রাত্তির কাটিয়ে দিই। এমন জায়গা ফেলে আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।
অমু দিগু ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু ইয়ে, খাওয়াটাওয়া…
কর্নেল জোরে হাসলেন।…আমার লোক এসে পড়বে এক্ষুণি। বলা আছে– আজ রাতটা এখানে কাটাব। আসুন। কোনও অসুবিধে হবে না।
দিগু বলল, কিন্তু আর একটুও থাকতে ইচ্ছে করছে না।
অমুও বলল, হা কী হবে? এমন একটা ইয়ের পর-ওঃ, হরিবল!
আমি বললুম– না কর্নেল, আমরা যাই। ভীষণ খারাপ লাগছে।
কর্নেল গম্ভীর মুখে মাথা দোলালেন, দ্যাটস নথ দা টুথ মাই ফ্রেণ্ডস।
চমকে উঠলুম, কেন? দিগুও ফুঁসে উঠল একই সঙ্গে কী বলতে চান আপনি? আর অমু হাতের মুঠো পাকিয়ে বলল, তাহলে টুথটা কী!
নিজেদের মনকে প্রশ্ন করুন, জবাব পাবেন। কর্নেল ছড়ি দিয়ে বালির ওপর ঢ্যারা এঁকে ফের বললেন, আপনাদের প্রত্যেকের মনে এই চিহ্নটা রয়েছে–জাস্ট এ ক্রস। দুট রেখা যে বিন্দুতে মিলেছে দেখছেন, ওটা হলো মিঃ মজুমদারের মৃত্যু। ব্যাপারটা লক্ষ্য করুন, তাহলে আমরা চারদিকে চারটে রেখা পেয়ে যাচ্ছি। আপনারা তিনজন তার তিনটে–অ্যাণ্ড দা ফোর্থ..হু ইজ হি? পুলিশ বলছে জানলার নিচের লোকটা। গোরস্থানের দিকে তার জুতোর চিহ্ন পাওয়া গেছে। আর কী পাওয়া গেছে, জানেন? একটা ভাঙা কবরের কোণায় বালিতে ঢাকা একটা সমুদ্র-শামুক, তখুনি দিগু ছটফট করে বলল, আমি জানতুম–! কিন্তু কিছু বুঝিনি।
১৯৪২ এ এখানটা সমুদ্রের বানে ডুবেছিল। তাই অনেক বড়োবড়ো সমুদ্র শামুক এখানে পাওয়া যায়। খুব কঠিন খোল।–
দিগু কাঁপছিল। বলল, হা-হা, আমার কবিতায়
ওয়েট। কর্নেল হাত তুললেন।…যে কন্ট্রাক্টার সেই যুদ্ধের বাজারে সরকারকে কফিনের কাঠ সাপ্লাই করেছিল, তা বাজে কাঠ। তাই উইয়ের ঢিবিতে জমাট বেঁধে যায়।
দিগু বলল, সংহত কফিনে—
হ্যাঁ। তার মধ্যে শামুক ছিল এবং তার ভিতর লুকানো ছিল উজ্জ্বল স্ফটিকের মতো ভয়ঙ্কর বিষাক্ত পদার্থ ড্রাই এওজিন–যা জলে গলে যায়। বরফের সঙ্গে ভেজাল দিলে ধরা পড়ে না। মিঃ মজুমদারের মৃত্যুর কারণ তাই। ফোরেনসিক এক্সপার্টরা বলেছেন। তা–মিঃ দিগন্ত সেন, আপনি নিশ্চয় কোনওভাবে ওটার কথা। জানতেন, কবিতার মাধ্যমে আন্দাজে ঢিল ছোঁড়ার মতো কাকেও সতর্ক করে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু পুলিশকে বলেননি। আর পুলিশ কবিতা নিয়ে মাথা ঘামায় না। বিশেষ করে একালের কবিতা!..হেসে উঠলেন কর্নেল।
আমি বললুম– তাহলে কোন ফাঁকে খুনী মিঃ মজুমদারের গ্লাসে ড্রাই এওজিন রাখল?
আপনারা যখন মিসেস মজুমদারের চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়েছিলেন, তখন।
কিন্তু ভারত তো বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল।
লোকটা রাতকানা। আর তখন জ্যোৎস্নাও ছিল ক্ষীণ। তাছাড়া ওই ব্যস্ততা আর আতঙ্কের সময় লনের দিকে তাকানোর কথা তার নয়। সে ভাবছিল–মেমসাহেবের ঘরে ঢুকবে কি না।
দিগু বলল, জীপে আসবার পথে দূর থেকে একটা লোককে বালি সরাতে দেখেছিলুম ওই গোরস্থানে। সন্দেহ হয়েছিল। পরে এক ফাঁকে ওদিকে যাই। কিন্তু তখনই আমার কিছু কথা মনে পড়ে যায়। থমকে দাঁড়াই। একটু ভাবি। কোনও ফাঁদে ফেলবার জন্যে আমাকে এখানে ডাকা হয়নি তো? যাইহোক, গিয়ে ব্যাপারটা আবিষ্কার করি। কিন্তু আমি ভেবেছিলুম-ডায়মণ্ড স্মাগলিং, এর ব্যাপার।
এই সময় অমু বলল, আমি তোকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে কবরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকতে দেখি। তারপর আরও অদ্ভুত ভঙ্গিতে তুই চলে এলি। প্রতিটি জুতোর ছাপ মুছতে মুছতে!
দিগু বলল, হ্যাঁ–ফাঁদে পড়ার ভয়ে।
কর্নেল বললেন, ফাঁদ! রাইট, রাইট। বাই এনি চান্স–মিঃ সেন, রাত্রিদেবীর সঙ্গে আপনার পরিচয় ছিল?
ভীষণ ছিল–হিন্দুস্থান পার্কে থাকার সময় থেকে।
এগেন বাই এনি চান্স বিহ্বলবাবু আসতে বলার পর রাত্রিদেবী আপনাকে কিছু লিখেছিলেন? ভয় নেই–আমি প্রাইভেট হ্যাঁনড। পুলিশ নই।
হ্যাঁ। সাংঘাতিক একটা প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
যেমন?
মিঃ মজুমদারকে কোনও এক ফাঁকে খুন করতে হবে। তারপর রাত্রি আমার হবে।
আপনি সেই মতলব নিয়ে এসেছিলেন?
হুঁ।
আমি কাঁপছিলুম। রাত্রি! রাত্রি! কী সর্বনাশ, কী ধুরন্ধর! দিগুকে সে…।
অমু বলে উঠল, আশ্চর্য! কর্নেল! কর্নেল! রাত্রি আমাকেও তাই লিখেছিলেন। আমিও মিঃ মজুমদারকে খুন করতে এসেছিলুম। ঠিক একই পুরস্কার রাত্রি আমার হবেন।
কর্নেল আমাকে প্রশ্ন করলেন, অ্যাণ্ড মিঃ সকাল গুপ্ত?
গলা কাঁপল জবাব দিতে।…হ্যাঁ। আমাকেও। কিন্তু দ্যাট ইজ অ্যাবসার্ড, অসম্ভব।
দিগন্ত অস্থির হয়ে বলল, আমি তো খুন করিনি! এখানে এসে বিহ্বলবাবুকে খুন করার কথা আর ভাবতেও পারছিলুম না। সেটা হয়তো ভীষণ ভয়ে। জীবনে কখনও কারো গায়ে হাত তুলিনি। প্রেম আমাকে মানুষ খুন করাবে–প্রেমের এত বড় মর্যাদা দেবার সাহস আমার ছিল না।
কর্নেল বললেন, বাদশা জাহাঙ্গীর এবং শের আফগানের স্ত্রী নূরজাহানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে! ভালমন্দ যাই হোক, জাহাঙ্গীর প্রেমের ঐরকম মর্যাদা। দিয়েছিলেন।
অমু বলল, বিশ্বাস করুন। হয়তো পারতুম, কিন্তু ওইভাবে কাপুরুষের মতো নয়। মদ খেয়ে বিহ্বলবাবুকে টেনে নিয়ে যেতুম বালিয়াড়িতে–তারপর গলা টিপে মারতুম। এই ছিল আমার প্ল্যান।
আমি বললুম– হ্যাঁ–ওইভাবে খুন করা নীচতার পরিচয়, প্রেমিকের নয়। প্রেমিক ডুয়েল লড়বে। ওইভাবে বিষ খাইয়ে কাপুরুষের মতো মারে যে–সে প্রেমে নয়, প্রতিহিংসায় উগ্র।
কর্নেল মুচকি হেসে বললেন, তাহলে দেখা যাচ্ছে দেয়ার ওয়াজ এ ফোর্থ প্রেমিক–তাকেও চিঠি লিখেছিলেন রাত্রি, দ্যাটস মাই পয়েন্ট।
তিনজনে একসঙ্গে বললুম– হ্যাঁ। ঠিকই।
কিন্তু কে সে? কোথায় গেল সে? গোরস্থানে জুতোর ছাপ রেখে সে রাত্রিদেবীকে ফেলে কোথায় পালালো বলুন তো?
তিনজনে ঘাড় নাড়লুম। জানি না। সেই সময় কর্নেল একটা অদ্ভুত কথা বললেন। বিহ্বলবাবু তাকে নাকি আসতে বলেছিলেন, কী একটা রহস্যময় ব্যাপার ঘটছে বলে তার সন্দেহ। সেটা এখানেই নাকি ঘটছে ঘটতে পারে কর্নেল উপস্থিত থাকলে সেটার রহস্য ফাঁস করার আশা আছে। বিহ্বলবাবু তা নিয়ে খুব ধাঁধায় পড়েছেন। বিহ্বলবাবুর দুর্ভাগ্য!
তারপর স্তব্ধতা ভেঙে আমি বললুম– কাল রাত্রে রাত্রি গোরস্থানের দিকেই যাচ্ছিলেন। কেন, অনুমান করতে পারেন কর্নেল?
কর্নেল জবাব দিলেন, নিশ্চয় ড্রাই এওজিনভরা শামুকটা ফেলতে। কারণ দিগন্তবাবু যেভাবে হোক কিছু আঁচ করেছেন–এটাই ভেবেছিলেন উনি। তাছাড়া দিগন্তবাবু যে ওটা আবিষ্কার করেছেন, এটাই তো ওঁর পক্ষে বিপজ্জনক ঘটনা। সব প্ল্যান ভেস্তে যেতে পারে। তবে ভেস্তে যায়নি। এর কারণ, দিগন্তবাবু বিষকে হীরে ভেবেছিলেন–স্মাগলিং অ্যাফেয়ার।
দিগন্ত বলল, তাহলে রাত্রি মাত্র একজনকেই প্রেমিক হিসেবে পেতে চেয়েছিলেন। তার জন্যেই কি তিনি ওই সাংঘাতিক জিনিসটা লুকিয়ে রেখেছিলেন?
কর্নেল বললেন, তাই দাঁড়ায়। আততায়ীর প্রেমিকটিকে তিনি চিঠিতে জানিয়ে থাকবেন–
বাধা দিলুম–তা কেন? তাহলে তো তিনি যে কোনও সময় স্বামীকে ওই বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে পারতেন!
তাতে বিপত্তি ছিল, মাই ইয়ং ফ্রেণ্ড! তার চেয়ে নির্বাচিত প্রেমিকাকে দিয়ে কাজ করিয়ে অন্য প্রেমিকদের ওপর দায় চাপানো এবং সেই সঙ্গে নিজেও নিরাপদ থেকে যাবার উপায় তিনি বের করেছিলেন। তার অসুখ তো ভান–অভিনয় মাত্র। তিনি আততায়ীকে গ্লাসে বিষ রাখার সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন। ব্রোমাইড খাইয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টায় আমি তো টের পেয়েছিলুম। সম্ভবত বিহ্বলবাবুও একটা কিছু আঁচ ইতিমধ্যে করেছিলেন তাই আমাকে আসতে লিখেছিলেন। আমার দুর্ভাগ্য।
কথা বলতে বলতে সূর্য ডুবে গেল। কর্নেলের লোকটি সাইকেল চেপে এসে পড়ল। কিন্তু আর কেন থাকব? আমি বললুম–আমার থাকার উপায় নেই। কাজ আছে। আমার এখানে থাকতে একটুও ইচ্ছে করছে না।
দিণ্ড পা বাড়িয়ে বলল–ক্ষমা করবেন, কর্নেল। আমি যাই। তারপর আমাদের দিকে একবারও না তাকিয়ে লম্বা পায়ে চলে গেল।
অন্তু ইতস্তত করে বলল, যাবি সকাল থেকে যা না।
ক্রমশ একটা গভীর অন্ধ জেদ আমাকে পেয়ে বসছিল। কী ব্যর্থতা চারিদিকে! রাত্রিকে–যা বোঝা গেল, গ্রেফতার করা হবে এবার। প্রচণ্ড শূন্যতা ঝাঁপিয়ে পড়েছে আমার ওপর। রাত্রি-মোহময়ী রাত্রি! বললুম– না রে! আমি যাই। চলি কর্নেল। কর্নেল আর অমু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
একেই বলে গোধূলিকাল। রাস্তা ছেড়ে সোজা যে পথে এসেছিলুম, চললুম। বালিয়াড়ি ও ঢিবিগুলো ডিঙিয়ে। দিগুকে ধরা দরকার। কিন্তু তাকে রাস্তায় কোথাও দেখতে পেলুম না। এখানে ওকে খুঁজে বের করা কঠিন।
একটু পরে এক জায়গায় থমকে দাঁড়ালুম। হাঁটু দুমড়ে যেন ক্লান্তি আমাকে চাপ দিল। টেনে ধরল বালির স্তূপ।….
তারপর পিছনে হঠাৎ দিগুর কণ্ঠস্বর শুনলুম–সকাল! ও কী করছিস?
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
সকাল, কাল আসবার পথে কবরে তুই
অমনি বালি মাখানো বড় ছুরিটা তুলে লাফ দিলুম তার দিকে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য, কর্নেলের মিলিটারি আওয়াজ এল ঢিবির ওপর থেকে–খবদার! হাত ওঠান–হ্যাণ্ডস আপ!
আমি হুমড়ি খেয়ে বালির ছোট্ট স্কুপের পাশে সদ্য বেরকরা একজোড়া জুতো আর প্যান্টশার্ট বুকে চেপে, ছুরিটা সুদ্ধ আঁকড়ে ধরলুম। তারপর দৌড়ে যেতেই দিগু আমাকে পিছন থেকে চেপে ধরল। কর্নেল কাছে এসে বললেন, এইরকমটি আশা করেছিলুম।
না, কর্নেল একা নয়–অমু এসেছে। সে জুতোদুটো দেখে চেঁচাল–এই তাহলে চার নম্বর লোক!
না, আরও সব আসছে। পাঁচজন পুলিশ উঁচু বালিয়াড়ি দিয়ে নেমে আসছে আমার দিকে। আমি হাহাকার করার মতো বুক ফাটিয়ে গলা ভেঙে চেঁচিয়ে উঠলুম–আমি মিলন গাঙ্গুলী, দা ফোর্থ ম্যান। একই শরীরে থার্ড অ্যাণ্ড ফোর্থ ম্যান। সকাল গুপ্ত এবং মিলন গাঙ্গুলী। আমার স্ত্রী রাত্রিকে ফিরে পাবার লোভে মজুমদারকে খুন করেছি। তোমরা আমাকে মেরে ফেলল! লাথি মারো! আমি শালা মিলন গাঙ্গুলী…. কে আমার মুখে থাবার মতো হাত রাখল।
একটু পরে সবাই আস্তে আস্তে চলেছি রাস্তার দিকে। কর্নেল সরকারের গত রাত থেকে পেতে রাখা এত বড়ো ফাঁদটা টের পেয়েও পাইনি। আসলে আমার উপায় ছিল না। কিন্তু কী হবে বেঁচে? জীবনে এত ঘৃণা নিয়ে বাঁচা যায় না। কাল রাতে ওই ঘৃণাই রাত্রিকে খুন করবার জন্য তার গলায় আমার হাত উঠিয়েছিল– কিন্তু পুলিশের আলো তাতে বাধা দিয়েছিল।
তখন চিকনডিহির মাঠে সন্ধ্যা নেমেছে। পাশের ঝাউবনে চাপা শনশন শব্দে একটা বাতাস আসতে শুনলুম। আর স্তব্ধ মিছিল, বালিয়াড়ি, ওপরের হাঁস ও মৃদু ধূসরতা মিলে বিশাল একটা নির্জনতাই ফুটে উঠল। সেই বিষণ্ণ নির্জনত ঝাউবনের বাতাসটাকে বলতে থাকল :
ধীরে বও, ধীরে
সুবচনী হে বাতাস, এ সন্ধ্যায় আজ
বিষাদের সুর বাজে, মৃত্যু অনুগামী…