দূরবীন

» দূরবীন

গ্রন্থকথা সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় দু-বছরেরও বেশি কাল ধরে ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল ‘দূরবীন’, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জোরালো, সংবেদনশীল কলমে অন্যতম মহৎ সৃষ্টি। চলমান শতাব্দীর দুইয়ের দশকের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে আটের দশক পর্যন্ত বিস্তৃত সময়ের প্ৰেক্ষাপটে সামাজিকContinue Reading

দূরবীন

» এক থেকে দশ পরিচ্ছেদ

এক ১৯২৯ সালের শীতকালের এক ভোরে হেমকান্ত চৌধুরির হাত থেকে দড়ি সমেত কুয়োর বালতি জলে পড়ে গেল। অসহনীয় শীতের সেই নির্জন ব্রাহ্মমুহূর্তের অন্ধকারে হেমকান্ত অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে শুনলেন জলে দড়ি ও বালতির পড়া ও ডুবে যাওয়ারContinue Reading

দূরবীন

» এগার থেকে বিশ পরিচ্ছেদ

এগার পিতার বাৎসরিক কাজটি হেমকান্ত প্রতিবছর বেশ ঘটা করেই করেন। শ’খানেক ব্রাহ্মণকে ভোজন করানো হয় এবং ভালরকম দক্ষিণা ও অন্যান্য দানসামগ্রী দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণ ছাড়াও আমন্ত্রিতের সংখ্যা বড় কম হয় না। এ বছর হেমকান্ত একটুContinue Reading

দূরবীন

» একুশ থেকে ত্রিশ পরিচ্ছেদ

একুশ রাজেন মোক্তারের ছেলে শচীন ল পাস করে ওকালতি শুরু করেছে সবে। শোনা যাচ্ছে কাছারিতে সে আরগুমেন্ট ভালই করে। হেমকান্তর পুরোনো উকিল গগন তালুকদার বড়ই বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কোর্ট কাছারি বড় একটা যান না। নতুনContinue Reading

দূরবীন

» একত্রিশ থেকে চল্লিশ পরিচ্ছেদ

একত্রিশ হেমকান্ত জীবনে অনেক সৌন্দর্য দেখেছেন, কিন্তু চৈত্রের শুরুতেই এক বিকেলে যে কালবৈশাখী এল তার মতো সম্মোহনকারক আর কিছুই হয় না। হেমকান্ত রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার বই পড়ছিলেন ছাদে বসে। রোদ পড়ে গেলে ছাদটি আজকাল মনোরম।Continue Reading

দূরবীন

» একচল্লিশ থেকে পঞ্চাশ পরিচ্ছেদ

একচল্লিশ বৈশাখ মাসে কোকাবাবুদের একটা মহাল কিনে নিলেন রাজেন মোক্তার। তাঁর বৈষয়িক অবস্থাটা বেশ ভালর দিকে। শচীন এখন বেশ পসার জমিয়ে ফেলেছে। সেজো ছেলে রথীন মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের খুবই মেধাবী ছাত্র। মাস্টারমশাইদের ধারণা সে ম্যাট্রিকে স্ট্যাণ্ডContinue Reading

দূরবীন

» একান্ন থেকে ষাট পরিচ্ছেদ

একান্ন কুঞ্জবনে আর এসো না, বুঝলে? কেন বলো তো! এটা তোমার জায়গা ছিল। একা একা বসে ভাবতে। আমি ঠাট্টা করে নাম দিয়েছিলাম কুঞ্জবন। কৃষ্ণ থাকত, কিন্তু রাধা আসত না। আজকাল রাধা আসে, কৃষ্ণও থাকে। তুমিContinue Reading

গোঁসাইবাগানের ভূত

» গোঁসাইবাগানের ভূত

কিছু ভুতুড়ে কথা এই উপন্যাসটি শারদীয় ‘আনন্দমেলা’-য় প্রথম বেরোনোর পরই অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল, রামনামকে ভূতের যদি এতই ভয় তবে ভূতের নিজের নাম কেন নিধিরাম? ভারি শক্ত প্রশ্ন। মাথাটাকে চুলকে আমি তখন বোঝালাম, নামের ‘রাম’ আরContinue Reading

কল্লোল যুগ

» আট

“কল্লোল”কে নিয়ে যে প্রবল প্রাণোচ্ছাস এসেছিল তা শুধু ভাবের দেউলে নয়, ভাষারও নাটমন্দিরে। অর্থাৎ “কল্লোলে”র বিরুদ্ধতা শুধু বিষয়ের ক্ষেত্রেই ছিল না, ছিল বর্ণনার ক্ষেত্রে। ভঙ্গি ও আঙ্গিকের চেহারায়। রীতি ও পদ্ধতির প্রকৃতিতে। ভাষাকে গতি ওContinue Reading

কল্লোল যুগ

» নয়

সান-ইয়াৎ-সেন আসত “কল্লোলে”। সান-ইয়াৎ-সেন মানে আমাদের সনৎ সেন। সনৎ সেনকে আমরা সান-ইয়াৎ-সেন বলতাম। ‘অৰ্ধাঙ্গিণী’ নামে একখানা উপন্যাস লিখেছিল বলে মনে পড়ছে। আধপোড় চুরুট মুখে দিয়ে প্রায়ই আসত আড্ডা দিতে, প্রসন্ন চোখে হাসত। দৃষ্টি হয়তো সাহিত্যেরContinue Reading

কল্লোল যুগ

» দশ

জিজ্ঞাসা ও নৈরাশ্য, সংগ্রাম ও অপূর্ণতা এই দুই যতির মধ্যে দুলছে তখন “কল্লোলে”র ছন্দ। সে সময়কার প্রেমেনের দুটো চিঠি—প্রথমটা এই— “অচিন, আমি অধঃপাতে চলেছি। তাও যদি ভালো ভাবে যেতে পারতুম! জীবন নিয়ে কি করতে চাইContinue Reading

কল্লোল যুগ

» এগার

ফুটবল খেলার মাঠে দু’জন সাহিত্যিককে আমরা আবিষ্কার করি। শিবরাম চক্রবর্তী সেন্টারের কাছে গ্যালারির প্রথম ধাপে দাঁড়াত—তাকে টেনে আনতে দেরি হত না আমাদের দশচক্রে। গোলগাল নধরকান্তি চেহারা, লম্বা চুল পিছনের দিকে ওলটানো। সমস্তটা উপস্থিতি রসে-হাস্যে সমুজ্জল।Continue Reading

কল্লোল যুগ

» বার

রবীন্দ্রনাথকে প্রথম কবে দেখি? প্রথম দেখি আঠারোই ফাল্গুন, শনিবার, ১৩৩০ সাল। সেবার বি-এর বছর, ঢুকিনি তখন “কল্লোলে”। রবীন্দ্রনাথ সেনেট হলে কমলা-লেকচার্স দিচ্ছেন। ভবানীপুরের ছেলে, কলকাতার কলেজে গতিবিধি নেই, কোণঠাসা হয়ে থাকবার কথা। কিন্তু গুরুবলে ভিড়Continue Reading

ঈশ্বরের বাগান

» ষোল

জানালা থেকে রোদ নেমে গেলেই কাবুলের চঞ্চলতা বাড়ে। বড় সুসময় বয়ে যাচ্ছে। বাবুর্চিপাড়া, বাবুপাড়া, কেরাণী পাড়ার ঘরগুলিতে এখন পুরুষদের সংখ্যা কম। কাজ কম্মের ধান্দায় দশটার আগেই পাড়া খালি করে তারা বের হয়ে যায়। তখন কাবুলContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

» হরিদাসের গুপ্তকথা

গ্রন্থপরিচয় ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’ নামের বইটি বেশ দুষ্প্রাপ্য। বইটি সম্পর্কে অনেকের ধারণা যে এটি বোধহয় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আপাত নিষিদ্ধ ধরনের কোন বই। কিন্তু বইটি এককালে বেশ জনপ্রিয় ছিল। বইটির লেখক শ্রীভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

» ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়

সাহিত্যিক ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮৪২-১৯১৬) একজন বাঙালী অনুবাদক, সম্পাদক, সাহিত্যিক। তিনি ১৮৪২ সালের ১০ জুলাই মাতামহাশ্রম চব্বিশ পরগণার অন্তর্গত বারুইপুর সন্নিহিত শাসন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যে ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রধানত মিশনরী স্কুলে অধ্যয়ন করেন। অল্প বয়স হতেইContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

» প্রকাশকের নিবেদন

“……কিন্তু কাব্যের সঙ্গে দ্বিতীয়বার পরিচয় ঘটলো এবং বেশ মনে পড়ে এইবারে পেলাম তার প্রথম সত্য পরিচয়। এরপরে এ বাড়ির উকীল হবার কঠোর নিয়ম-সংযম আর ধাতে সইলো না; আবার ফিরতে হলো আমাদের সেই পুরোনো পল্লী-ভবনে। কিন্তুContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

» » প্রথম খণ্ড : অতি আশ্চর্য্য

অতি আশ্চর্য্য ১৩১০ বঙ্গাব্দ। সূচনা : আমি কে? আমি হরিদাস। বত্রিশ বৎসর পূর্ব্বে আমি এই বাঙ্গালাদেশেই ছিলাম। সেই সময় আমার বাল্যজীবনের কতক কতক পরিচয় দিয়াছি। জন্মাবধি কতদিন পর্য্যন্ত মাতাপিতা জানিতাম না, আপন বলিয়া কাহাকেও চিনিতামContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

» » প্রথম কল্প : পাঠশালা

শিশুকাল থেকে চতুর্দ্দশ বর্ষ বয়সক্ৰম পৰ্য্যন্ত আমি গুরুগৃহে ছিলেম। আমার গুরুদেবের বাসস্থান কোথায় ছিল, শিশুকালে ঠিক জানতে না পেরে, পূর্ব্বে আমি বোলেছিলেম সুবর্ণগ্রাম। কথাটা ভুল ছিল; দেশের ভূগোলে তখন আমার জ্ঞান ছিল না, এখন বুঝ্‌তেContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

» » দ্বিতীয় কল্প : উপায় কি?

আরো দুই মাস কেটে গেল। গুরুপত্নী মুখ ফুটে আমাকে কিছু বোলতে পারেন না, আমিও নিজের ভাগ্যফল নিজে কিছু জানতে পারি না, মন কিন্তু সৰ্ব্বদাই অস্থির। যাঁর আশ্রয়ে থাকা, তাঁর অবস্থা প্রতিকূল, তিনি তাঁর নিজের আরContinue Reading