» নবম পরিচ্ছেদ : হরিদাসী বৈষ্ণবী

বিধবা কুন্দননন্দিনী নগেন্দ্রের গৃহে কিছু দিন কালাতিপাত করিল। একদিন মধ্যাহ্নের পর পৌরস্ত্রীরা সকলে মিলিত হইয়া পুরাতন অন্তঃপুরে বসিয়াছিল। ঈশ্বরকৃপায় তাহারা অনেকগুলি, সকলে স্ব স্ব মনোমত গ্রাম্যস্ত্রীসুলভ কার্যে ব্যাপৃতা ছিল। তাহাদের মধ্যে অনতীতবাল্যা কুমারী হইতে পলিতকেশাContinue Reading

» দশম পরিচ্ছেদ : বাবু

হরিদাসী বৈষ্ণবী দত্তদিগের গৃহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া দেবীপুরের দিকে গেল। দেবীপুরে বিচিত্র লৌহরেইলপরিবেষ্টিত এক পুষ্পোদ্যান আছে। তন্মধ্যে নানাবিধ ফল পুষ্পের বৃক্ষ, মধ্যে পুষ্করিণী, তাহার উপরে বৈঠকখানা। হরিদাসী সেই পুষ্পোদ্যানে প্রবেশ করিল। এবং বৈঠকখানায় প্রবেশ করিয়াContinue Reading

» একাদশ পরিচ্ছেদ : সূর্যমুখীর পত্র

“প্রাণাধিকা শ্রীমতী কমলমণি দাসী চিরায়ুষ্মতীষু। আর তোমাকে আশীর্বাদ পাঠ লিখিতে লজ্জা করি। এখন তুমিও একজন হইয়া উঠিয়াছ–এক ঘরের গৃহিণী। তা যাহাই হউক, আমি তোমাকে আমার কনিষ্ঠা ভগিনী ভিন্ন আর কিছুই বলিয়া ভাবিতে পারিতেছি না। তোমাকেContinue Reading

» দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : অঙ্কুর

দিন কয় মধ্যে, ক্রমে ক্রমে নগেন্দ্রের সকল চরিত্র পরিবর্তিত হইতে লাগিল। নির্মল আকাশে মেঘ দেখা দিল–নিদাঘকালের প্রদোষাকাশের মত, অকস্মাৎ সে চরিত্র মেঘাবৃত হইতে লাগিল। দেখিয়া সূর্যমুখী গোপনে আপনার অঞ্চলে চক্ষু মুছিলেন। সূর্যমুখী ভাবিলেন, “আমি কমলেরContinue Reading

» ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ : মহাসমর

কমলমণির আসন টলিল। আর তিনি থাকিতে পারিলেন না। কমলমণি রমণীরত্ন। অমনি স্বামীর কাছে গেলেন। শ্রীশচন্দ্র অন্তঃপুরে বসিয়া, আপিসের আয়ব্যয়ের হিসাব কিতাব দেখিতেছিলেন। তাঁহার পাশে, বিছানায় বসিয়া, এক বৎসরের পুত্র সতীশচন্দ্র ইংরেজী সংবাদপত্রখানি অধিকার করিয়াছিলেন। সতীশচন্দ্রContinue Reading

» চতুর্দশ পরিচ্ছেদ : ধরা পড়িল

গোবিন্দপুরে দত্তদিগের বাড়ীতে যেন অন্ধকারে একটি ফুল ফুটিল। কমলমণির হাসিমুখ দেখিয়া সূর্যমুখীরও চক্ষের জল শুকাইল। কমলমণি বাড়ীতে পা দিয়াই সূর্যমুখীর চুলের গোছা লইয়া বসিয়া গেলেন। অনেক দিন সূর্যমুখী কেশরচনা করেন নাই। কমলমণি বলিলেন, “দুটো ফুলContinue Reading

» পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ : হীরা

এমত সময়ে হরিদাসী বৈষ্ণবী আসিয়া গান করিল। “কাঁটা বনে তুলতে গেলাম কলঙ্কের ফুল, গো সখি কাল কলঙ্কেরি ফুল। মাথায় পরলেম মালা গেঁথে, কাণে পরলেম দুল। সখি কলঙ্কেরি ফুল।” এ দিন সূর্যমুখী উপস্থিত। তিনি কমলকে গানContinue Reading

» ষোড়শ পরিচ্ছেদ : “না”

সেই দিন প্রদোষকালে উদ্যানমধ্যস্থ বাপীতটে বসিয়া কুন্দনন্দিনী। এই দীর্ঘিকা অতি সুবিস্তৃতা; তাহার জল অতি পরিষ্কার এবং সর্বদা নীলপ্রভ। পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে, এই পুষ্করিণীর পশ্চাতে পুষ্পোদ্যান। পুষ্পোদ্যানমধ্যে এক শ্বেতপ্রস্তররচিত লতামণ্ডপ ছিল। সেই লতামণ্ডপের সম্মুখেই পুষ্করিণীতেContinue Reading

» সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : যোগ্যং যোগ্যেন যোজয়েৎ

হরিদাসী বৈষ্ণবী উপবনগৃহে আসিয়া হঠাৎ দেবেন্দ্র বাবু হইয়া বসিল। পাশে একদিকে আলবোলা। বিচিত্র রৌপ্যশৃঙ্খলদলমালাময়ী, কলকল-কল্লোলনিনাদিনী, আলবোলা সুন্দরী দীর্ঘ ওষ্ঠ চুম্বনার্থ বাড়াইয়া দিলেন–মাথার উপর সোহাগের আগুন জ্বলিয়া উঠিল। আর একদিকে স্ফটিকপাত্রে, হেমাঙ্গী একশাকুমারী টল টল করিতেContinue Reading

» অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : অনাথিনী

গভীর রাত্রে গৃহস্থ সকলে নিদ্রিত হইলে কুন্দনন্দিনী শয়নাগারের দ্বার খুলিয়া বাহির হইল। এক বসনে সূর্যমুখীর গৃহ ত্যাগ করিয়া গেল। সেই গভীর রাত্রে এক বসনে সপ্তদশবর্ষীয়া, অনাথিনী সংসারসমুদ্রে একাকিনী ঝাঁপ দিল। রাত্রি অত্যন্ত অন্ধকার। অল্প অল্পContinue Reading

» ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ : হীরার রাগ

হীরার বাড়ী প্রাচীর আঁটা। দুইটি ঝরঝরে মেটে ঘর। তাহাতে আলেপনা–পদ্ম আঁকা–পাখী আঁকা–ঠাকুর আঁকা। উঠান নিকান–এক পাশে রাঙ্গা শাক, তার কাছে দোপাটি, মল্লিকা, গোলাপ ফুল। বাবুর বাড়ীর মালী আপনি আসিয়া চারা আনিয়া ফুলগাছ পুতিয়া দিয়া গিয়াছিল–‍‍হীরাContinue Reading

» বিংশ পরিচ্ছেদ : হীরার দ্বেষ

প্রাতে উঠিয়া হীরা কাজে গেল। দত্তের বাড়ীতে দুই দিন পর্যন্ত বড় গোল, কুন্দকে পাওয়া যায় না। বাড়ীর সকলেই জানিল যে, সে রাগ করিয়া গিয়াছে, পাড়াপ্রতিবাসীরা কেহ জানিল, কেহ জানিল না। নগেন্দ্র শুনিলেন যে, কুন্দ গৃহত্যাগContinue Reading

» একবিংশ পরিচ্ছেদ : হীরার কলহ–বিষবৃক্ষের মুকুল

তা ত হলো। কুন্দ বশ হবে! কিন্তু সূর্যমুখী নগেন্দ্রের দুই চক্ষের বিষ না হলে ত কিছুতেই কিছু হবে না। গোড়ার কাজ সেই। হীরা এক্ষণে তাহাদের অভিন্ন হৃদয় ভিন্ন করিবার চেষ্টায় রহিল। এক দিন প্রভাত হইলেContinue Reading

» দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ : চোরের উপর বাটপাড়ি

হীরা দাসীর চাকরী গেল, কিন্তু দত্তবাড়ীর সঙ্গে সম্বন্ধ ঘুচিল না। সে বাড়ীর সংবাদের জন্য হীরা সর্বদা ব্যস্ত। সেখানকর লোক পাইলে ধরিয়া বসাইয়া গল্প ফাঁদে। কথার ছলে সূর্যমুখীর প্রতি নগেন্দ্রের কি ভাব, তাহা জানিয়া লয়। যেContinue Reading

» ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ : পিঞ্জরের পাখী

কুন্দ এখন পিঞ্জরের পাখী–“সতত চঞ্চল।” দুইটি ভিন্নদিগভিমুখগামিনী স্রোতস্বতী পরস্পরে প্রতিহত হইলে স্রোতোবেগে বাড়িয়াই উঠে। কুন্দের হৃদয়ে তাহাই হইল। এদিকে মহালজ্জা–অপমান–তিরস্কার–মুখ দেখাইবার উপায় নাই–সূর্যমুখী ত বাড়ী হইতে দূর করিয়া দিয়াছেন। কিন্তু সেই লজ্জাস্রোতের উপরে প্রণয়স্রোত আসিয়াContinue Reading

» চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ : অবতরণ

সেই দিন রাত্রে দেবেন্দ্র দত্ত একাকী ছদ্মবেশে, সুরারঞ্জিত হইয়া কুন্দনন্দিনীর অনুসন্ধানে হীরার বাড়ীতে দর্শন দিলেন। এ ঘর ও ঘর খুঁজিয়া দেখিলেন, কুন্দ নাই। হীরা মুখে কাপড় দিয়া হাসিতে লাগিল। দেবেন্দ্র রুষ্ট হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “হাসিসContinue Reading

» পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ : খোশ্ খবর

বেলা দুই প্রহর। শ্রীশ বাবু আপিসে বাহির হইয়াছেন। বাটীর লোক জন সব আহারান্তে নিদ্রা যাইতেছে। বৈঠকখানার চাবি বন্ধ। একটা দোআঁসলা গোছ টেরিয়র বৈঠকখানার বাহিরে, পাপোসের উপর, পায়ের ভিতর মাথা রাখিয়া ঘুমাইতেছে। অবকাশ পাইয়া কোন প্রেমময়ীContinue Reading

» ষড়্‌বিংশ পরিচ্ছেদ : কাহার আপত্তি

কমলমণি পত্র পড়িয়া বলিলেন, “কোন্ কারণে নিন্দনীয়? জগদীশ্বর জানেন। কিন্তু কি ভ্রম! পুরুষে বুঝি কিছুই বুঝে না। যা হৌক, মন্ত্রিবর আপনি সজ্জা করুন। আমাদিগের গোবিন্দপুরে যাইতে হইবে।” শ্রী। তুমি কি বিবাহ বন্ধ করিতে পারিবে? ক।Continue Reading

» সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ : সূর্যমুখী ও কমলমণি

যখন প্রদোষে, উভয়ে উভয়ের নিকট স্পষ্ট করিয়া কথা কহিতে সমর্থ হইলেন, তখন সূর্যমুখী কমলমণির কাছে নগেন্দ্র ও কুন্দনন্দিনীর বিবাহবৃত্তান্তের আমূল পরিচয় দিলেন। শুনিয়া কমলমণি বিস্মিতা হইয়া বলিলেন, “এ বিবাহ তোমার যত্নেই হইয়াছে–কেন তুমি আপনার মৃত্যুরContinue Reading

» অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ : আশীর্বাদ পত্র

শোকের বেগ সম্বরণ হইলে, কমলমণি পত্র খুলিয়া পড়িলেন। পত্রখানির শিরোনামায় তাঁহারই নাম। পত্র এইরূপ;- “যে দিন স্বামীর মুখে শুনিলাম যে, আমাতে আর তাঁর কিছুমাত্র সুখ নাই, যিনি কুন্দনন্দিনীর জন্য উন্মাদগ্রস্ত হইবেন, অথবা প্রাণত্যাগ করিবেন, সেইContinue Reading