যাস কোথা সই একলা ও তুই অলস বৈশাখে? জল নিতে যে যাবি ওলো কলস কই কাঁখে? সাঁঝ ভেবে তুই ভর-দুপুরেই দু-কূল নাচায়ে পুকুরপানে ঝুমুর ঝুমুর নূপুর বাজায়ে যাসনে একা হাবা ছুঁড়ি, অফুট জবা চাঁপা-কুঁড়ি তুই!Continue Reading

কত ছল করে সে বারে বারে দেখতে আসে আমায়। কত বিনা-কাজের কাজের ছলে চরণ দুটি আমার দোরেই থামায়॥ জানলা-আড়ে চিকের পাশে দাঁড়ায় এসে কীসের আশে, আমায় দেখেই সলাজ ত্রাসে অনামিকায় জড়িয়ে আঁচল গাল দুটিকে ঘামায়॥Continue Reading

রেশমি চুড়ির শিঞ্জিনীতে রিমঝিমিয়ে মরমকথা পথের মাঝে চমকে কে গো থমকে যায় ওই শরম-নতা॥ কাঁখচুমা তার কলসি-ঠোঁটে উল্লাসে জল উলসি ওঠে, অঙ্গে নিলাজ পুলক ছোটে বায় যেন হায় নরম লতা॥ অ-চকিতে পথের মাঝে পথ-ভুলানো পরদেশীContinue Reading

আজ নলিন-নয়ান মলিন কেন বলো সখী বলো বলো। পড়ল মনে কোন্ পথিকের বিদায় চাওয়া ছলছল? বলো সখী বলো বলো মেঘের পানে চেয়ে চেয়ে বুক ভিজালে চোখের জলে, ওই সুদূরের পথ বেয়ে কি দূরের পথিক গেছেContinue Reading

অধর নিসপিস নধর কিসমিস রাতুল তুলতুল কপোল; ঝরল ফুল-কুল, করল গুল ভুল বাতুল বুলবুল চপল॥ নাসায় তিলফুল হাসায় বিলকুল, নয়ান ছলছল উদাস, দৃষ্টি চোর-চোর মিষ্টি ঘোর-ঘোর, বয়ান ঢলঢল হুতাশ। অলক দুলদুল পলক ঢুল ঢুল, নোলকContinue Reading

১ আদর-গর-গর বাদর দর-দর এ-তনু ডর-ডর কাঁপিছে থর-থর। নয়ন ঢল-ঢল সজল ছল-ছল, কাজল কালো জল ঝরে লো ঝরঝর। ২ ব্যাকুল বন-রাজি শ্বসিছে ক্ষণে ক্ষণে, সজনি! মন আজি গুমরে মনে মনে। বিদরে হিয়া মম বিদেশে প্রিয়তম,Continue Reading

ঐ নীল-গগনের নয়ন-পাতায় নামল কাজল-কালো মায়া। বনের ফাঁকে চমকে বেড়ায় তারই সজল আলোছায়া॥ ঐ তমাল তালের বুকের কাছে ব্যথিত কে দাঁড়িয়ে আছে দাঁড়িয়ে আছে। ভেজা পাতায় ওই কাঁপে তার আদুল ঢলঢল কায়া॥ যার শীতল হাতেরContinue Reading

(ঝড় : পূর্ব-তরঙ্গ) আমি ঝড় পশ্চিমের প্রলয়-পথিক– অসহ যৌবন-দাহে লেলিহান-শিখ দারুণ দাবাগ্নি-সম নৃত্য-ছায়ানটে মাতিয়া ছুটিতেছিনু, চলার দাপটে ব্রহ্মাণ্ড ভণ্ডুল করি। অগ্রে সহচরী ঘূর্ণা-হাতছানি দিয়া চলে ঘূর্ণি-পরী গ্রীষ্মের গজল গেয়ে পিলু-বারোয়াঁয় উশীরের তার-বাঁধা প্রান্তর-বীণায়। করতালি-ঠেকা দেয়Continue Reading

হায় চির-ভোলা! হিমালয় হতে অমৃত আনিতে গিয়া ফিরিয়া এলে যে নীলকণ্ঠের মৃত্যু-গরল পিয়া! কেন এত ভালো বেসেছিলে তুমি এই ধরণির ধূলি? দেবতারা তাই দামামা বাজায়ে স্বর্গে লইল তুলি! হুগলি ৩রা আষাঢ়, ১৩৩২Continue Reading

চিত্ত-কুঁড়ি-হাসনাহেনা মৃত্যু-সাঁঝে ফুটল গো! জীবন-বেড়ার আড়াল ছাপি বুকের সুবাস টুটল গো! এই তো কারার প্রাকার টুটে বন্দি এল বাইরে ছুটে, তাই তো নিখিল আকুল-হৃদয় শ্মশান-মাঝে জুটল গো! ভবন-ভাঙা আলোর শিখায় ভুবন রেঙে উঠল গো। ২Continue Reading

তখনও অস্ত যায়নি সূর্য, সহসা হইল শুরু অম্বরে ঘন ডম্বরু-ধ্বনি গুরুগুরুগুরু গুরু। আকাশে আকাশে বাজিছে এ কোন্ ইন্দ্রের আগমনি? শুনি, অম্বুদ-কম্বু-নিনাদে ঘন বৃংহিত-ধ্বনি। বাজে চিক্কুর-হ্রেষা-হর্ষণ মেঘ-মন্দুরা-মাঝে, সাজিল প্রথম আষাঢ় আজিকে প্রলংকর সাজে! ঘনায় অশ্রু-বাষ্প-কুহেলি ঈশান-দিগঙ্গনে,Continue Reading

গাহি সাম্যের গান– যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান। গাহি সাম্যের গান! কে তুমি?–পারসি? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো? কনফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বলো আরও! বন্ধু, যা-খুশি হও, পেটে পিঠে কাঁধেContinue Reading

কে তুমি খুঁজিছ জগদীশ ভাই আকাশ পাতাল জুড়ে’ কে তুমি ফিরিছ বনে-জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড়-চূড়ে? হায় ঋষি দরবেশ, বুকের মানিকে বুকে ধরে তুমি খোঁজ তারে দেশ-দেশ। সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে তুমি আছ চোখ বুঁজে,Continue Reading

গাহি সাম্যের গান— মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান্‌ । নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি, সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি। – ‘পূজারি দুয়ার খোলো, ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজারContinue Reading

সাম্যের গান গাই!– যত পাপী তাপী সব মোর বোন, সব হয় মোর ভাই। এ পাপ-মুলুকে পাপ করেনিকো কে আছে পুরুষ-নারী? আমরা ত ছার;–পাপে পঙ্কিল পাপীদের কাণ্ডারি! তেত্রিশ কোটি দেবতার পাপে স্বর্গ সে টলমল, দেবতার পাপ-পথContinue Reading

কে তোমায় বলে ডাকাত বন্ধু, কে তোমায় চোর বলে? চারিদিকে বাজে ডাকাতি ডঙ্কা, চোরেরই রাজ্য চলে! চোর-ডাকাতের করিছে বিচার কোন সে ধর্মরাজ? জিজ্ঞাসা করো, বিশ্ব জুড়িয়া কে নহে দস্যু আজ? বিচারক! তব ধর্মদণ্ড ধরো, ছোটোদেরContinue Reading

কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা মা, কে দেয় থুতু ও-গায়ে? হয়ত তোমায় স্তন্য দিয়াছে সীতা-সম সতী মায়ে। না-ই হলে সতী, তবু তো তোমরা মাতা-ভগিনীরই জাতি; তোমাদের ছেলে আমাদেরই মতো, তারা আমাদের জ্ঞাতি; আমাদেরই মতো খ্যাতি যশContinue Reading

মিথ্যা বলেছ বলিয়া তোমায় কে দিল মনস্তাপ? সত্যের তরে মিথ্যা যে বলে স্পর্শে না তারে পাপ। গোটা সত্যটা শুধু তো সত্যকথা বলাতেই নাই, মিথ্যা কয়েও সত্যনিষ্ঠ হতে পারি আমরাই! সত্যবাক সে বড়ো কিছু নয়, কজনContinue Reading

সাম্যের গান গাই– আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি, অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী। নরককুন্ডContinue Reading

সাম্যের গান গাই যেখানে আসিয়া সম-বেদনায় সকলে হয়েছি ভাই। এ প্রশ্ন অতি সোজা, এক ধরণির সন্তান, কেন কেউ রাজা, কেউ প্রজা? অদ্ভুত দর্শন– এই সোজা কথা বলি যদি ভাই, হবে তাহা সিডিশন! প্রজা হয় শুধুContinue Reading