» » ষষ্ঠ কিস্তি

বর্ণাকার

প্রচেত গুপ্ত

একটু পরে রোদ উঠবে

পঞ্চান্ন

পেটাই পরোটা খেতে বেশ। নামেই পারোটা, আসলে ময়দার রুটি। ঘি-টিয়ের কারবার নেই। একটু তেলের ছিটে থাকে, আবার থাকেও না। বোঝা যায় না।

বৈশাখী আরও খানিকটা পরোটা নিয়ে বেঞ্চে ফিরে এলেন। নদী পেরোনোর আগে জল আর বিস্কুট কিনে নিতে হবে। বেশি নেওয়া যাবে না। দরকার নেই। নোনাজল গ্রামে পৌঁছে গেলে নিশ্চয় সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিছু নেওয়ার মতো জায়গা নেই। এমনিতেই সবসময় একটা একট্রা পোশাক থাকে। প্রসাধনের টুকিটাকি রাখতে হয়। লোক ঠকানোর ব্যবসায় সাজগোজ একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বাইরে ঢমক ঢামক দেখে বোকা হওয়ার জন্য সবাই মুখিয়ে থাকে। কম বয়েসে সাজগোজ তেমন লাগত না। শরীর ছিল। তবে বৈশাখী কখনওই শরীর বিলোননি। বিলোব বিলোব করে লোভ দেখিয়েছেন। তাতেই কাজ হাসিল। শরীর দিলে এই ব্যবসায় নাম খারাপ হয়। লোকে রাস্তার ‘কল গার্ল’ ভাবে। বড় কাজ পাওয়া যায় না। সেক্স একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যত দিন যাচ্ছে, এদেশে গুরুত্ব বাড়ছে। এটাকে যদি একটা ইণ্ডাস্ট্রি হিসেবে ধরা যায়, তাহলে বলতে হয় ইণ্ডাস্ট্রিতে পয়সা ঢুকছে। শরীর নিয়ে ছেঁদো মূল্যবোধ কমছে। বাইরের মনোভাব গেড়ে বসছে। এই যুগে অল্প আয়েসে পয়সা রোজগার দরকার। শরীর সবথেকে সুবিধের। সাবধানে থাকলে কোনও দাগ পড়বে না। ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই রিটার্ন। কিন্তু এসবের পরেও বুদ্ধির দাম এখনও অনেক বেশি। সে ভালো কাজেই হোক, বা মন্দ কাজেই হোক।

বৈশাখী এক কাপ চা নিলেন। মুখে নিয়ে নাকমুখ কোঁচকালেন। ইস বেশি চিনি দিয়েছে! নদীর দেশের লোক কি বেশি মিষ্টি খায়? নোনাজলে পৌঁছতে পৌঁছতে যেন অ্যাকশ্যানটা ভুলে যাওয়া যায়।

ভবানীপুরের রেস্টুরেন্টে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নিলিখেশ উপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘এডি আমাকে বলেছে, আপনি নাকি এ ধরনের কাজে পটু?’

বৈশাখী বললেন, ‘কোন ধরনের কাজ?’

নিখিলেশ বললেন, ‘এই যে জাল সম্পত্তির কারবার।’

‘কাজে পটু না, অভিনয়ে পটু।’

নিখিলেশ বললেন, ‘তাহলে তো একজন অভিনেত্রীকে ভাড়া করে আনলেই হয়ে যেত। তা তো হয় না। আপনি ভালো করেই জানেন বৈশাখী, ইমপস্টার হতে গেলে শুধু অভিনয় নয়, সাহস লাগে।’

বৈশাখী নির্বিকার মুখে বললেন, ‘বৈশাখী নয়, বৈশাখীদেবী। আপনি আমার থেকে বয়সে বড় নিখিলেশবাবু, কিন্তু প্রফেশনাল কাজে দূরত্ব রাখাই ভালো।’

নিখিলেশবাবু খানিকটা সঙ্কুচিত হয়ে বললেন, ‘সরি। বৈশাখীদেবী, আপনার চার্জটা আগে বলুন। টাকাপয়সার কথা ফাইনাল হয়ে গেলে, আমি আপনাকে কাগজপত্র দেখাব। আপনার একটা ফটো লাগবে।’

বৈশাখী টেবিলের ওপর রাখা ব্যাগটা নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন, ‘দেখুন মিস্টার উপাধ্যায়, বিপদে পড়লে কীভাবে নিজেকে উদ্ধার করতে হয় আমি জানি। আবার কীভাবে অন্যকে বিপদে ফেলতে হয় সে কায়দাও জানতে হয়। কিন্তু সবের জন্যই টাকার প্রয়োজন।’

নিখিলেশ উপাধ্যায় দাঁত চেপে বললেন, ‘এসব আপনার বিষয়। আপনি অ্যামাউন্ট বলুন বৈশাখীদেবী।’

বৈশাখী বুঝতে পারলেন, মানুষটা রেগে যাচ্ছে। পার্টি খুশি হলে যেমন কাজ পেতে সুবিধে, তেমন আবার কোনও কোনও সময় পার্টি রাগ করলেও ভালো। দর বাড়ে। পার্টি তাকে এমনি এই কাজে ডাকেনি। খোঁজখবর নিয়ে, জেনেবুঝেই ডেকেছে। আর এই লোকটা একেবারেই বাজে লোক। থার্ড গ্রেড। ক্রিমিনালরাও বিশ্বাসঘাতকতাকে ঘেন্না করে।

‘আমার চার্জের বাইরেও টাকা লাগবে। অপারেশনের পর আপনি কোম্পানির মালিকের সঙ্গে যত অ্যামাউন্ট নেগোসিয়েট করে পাবেন, তার সেভেন পার্সেন্ট আমাকে দিতে হবে।’

নিখিলেশ উপাধ্যায় চোখমুখ লাল করে বললেন, ‘ইমপসিবল! সে তো অনেক টাকা!’

বৈশাখী বললেন, ‘তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন! এডির সঙ্গে কথা বলুন। ওর হাতে নিশ্চয় অন্য লোক আছে। আপনাকে কম অ্যামাউন্টে কাজ করে দেবে।’

নিখিলেশ উপাধ্যায় একটু থম মেরে রইলেন। তাঁর গলা নামিয়ে বললেন, ‘দেখুন বৈশাখী, সরি বৈশাখীদেবী, আমার হাতে সময় কম। আপনি জাস্টিফায়েড একটা অ্যামাউন্ট বলুন। কাজটা করাব বলেই আপনাকে ডেকে এনেছি। আমি জানি, অন্য কাউকে দিয়ে কাজ করালে গোলমাল হয়ে যেতে পারে। বানিয়ে নিজেকে কোনও প্রপার্টির শেয়ার হোল্ডার প্রমাণ করতে হলে এক ধরনের স্কিল চাই। শুধু মামলা-মকদ্দমার ভয় দেখালে হবে না। কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির কথা বলে ব্ল্যাক মেইল করতে হবে। আপনাকেই আমার লাগবে। আপনি অ্যামাউন্ট বলুন।’

বৈশাখী একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘আচ্ছা, ফাইফ পার্সেন্ট দেবেন। আর কিন্তু দরাদরি করব না।’

নিখিলেশ উপাধ্যায় খানিকক্ষণ চুপ করে রইলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে, তাই হবে। তবে আমি টাকা পাওয়ার পর আপনি পেমেন্ট পাবেন। এবার কাগজপত্রগুলো দেখুন।’

নিখিলেশবাবু পাশে রাখা অ্যাটাচি থেকে কয়েক পাতা কাগজ বের করে বৈশাখীর দিকে এগিয়ে দিলেন। বৈশাখী কাগজ না ধরে বললেন, ‘আমি বুঝে গিয়েছি। কাগজ আমাকে দেখাতে হবে না। আপনি মুখে বলুন। কোম্পানির নাম কী? আমাকে কার কাছে যেতে হবে? কবে যেতে হবে? মাঝখানে আমাকে তিনটে দিন সময় দিতে হবে। আমি বাড়িতে যাব।’

কাগজ নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে নিখিলেশবাবু গলা খাদে নামিয়ে বললেন, ‘কোম্পানির নাম, সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস।’

বৈশাখী সোজা হয়ে বললেন। ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘কী নাম বললেন?’

নিখিলেশবাবু মুখ তুলে বললেন, ‘এনি প্রবলেম?’

বৈশাখীর চোখমুখের চেহারা বদলে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘কী নাম বললেন, আর একবার বলুন।’

‘সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। ক্যামাক স্ট্রিটে অফিস, কসবায় ওয়ার্কশপ। কর্ণধারের নাম কমলকান্তি সেন। তিনি ক’দিন আগে মারা গেছেন। তাঁর ছেলে বিমলকান্তি সেনই এখন অল ইন অল। যদিও বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি সবটা দেখছেন।’ এইটুকু বলে বৃদ্ধ নিখিলেশ উপাধ্যায় খানিকটা ঝুঁকে পড়লেন। তাঁর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। লোভে?

‘বৈশাখীদেবী, আপনি কমলকান্তি সেনের নামে অ্যালিগেশন আনবেন। বলবেন এই ভদ্রলোক আপনার মাকে লুকিয়ে বিয়ে করেছিল। সেই অর্থে আপনিও এই কোম্পানির সমান অংশীদার।’

বৈশাখী চেয়ারে হেলান দিলেন। রুমাল দিয়ে ঘাম মুছলেন। বিড়বিড় করে বললেন, ‘সেনবাড়ি…।’

নিখিলেশ উপাধ্যায় চোখ সরু করে বললেন, ‘ইয়েস, সেনবাড়ি। আপনি কী করে জানলেন?’

বৈশাখী নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘মনে হচ্ছে, এ বাড়ির সঙ্গে আমার আগেও কোনও যোগাযোগ হয়েছে।’

নিখিলেশ অবাক গলায় বললেন, ‘আগে যোগাযোগ! সেটা কীরকম?’

বৈশাখী এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললেন, ‘বিমলকান্তির স্ত্রী কি মণিকুন্তলা?’

নিখিলেশবাবু আরও অবাক হলেন। বললেন, ‘তাই। আপনি কী করে জানলেন?’

বৈশাখীদেবী এবার যেন অনেকটা নিশ্চিন্ত হলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘ওই কমলকান্তি সেনের বাড়িতে দুটি মেয়ে আছে না?’

নিখিলেশ খুশি হয়ে বললেন, ‘আপনি তো সবাই জানেন! হ্যাঁ, দুই মেয়ে, মেঘবতী আর বারিধারা! আমার বন্ধু কাম বসের নাতনি।’

বৈশাখী বিদ্রুপের হাসি হেসে বললেন, ‘আপনার বন্ধু! ঠিকই, বন্ধুই বটে। বাড়িতে আর কেউ নেই।’

নিখিলেশবাবু বললেন, ‘মনে হচ্ছে, আপনার কাজে সুবিধে হবে।’

‘অবশ্যই হবে। সব জানা থাকলে অপারেশনে সুবিধে হবে বই কী। চেনা জায়গায় কাজ করতে সুবিধে। যেমন আপনার হচ্ছে। বাড়িতে আর কে থাকে?’

নিখিলেশবাবু একটু থমকে থেকে বললেন, ‘দারোয়ান, ড্রইভার আর কাজের লোক টোক আছে, ও হ্যাঁ, একটা ছোকরাও থাকত। মণিকুন্তলার দূরসম্পর্কের কোনও আত্মীয়। কী যেন নাম…মনে পড়েছে…অর্চিন…শুনেছি, সেই ছেলের পেছনেও কী যেন কেলেঙ্কারি আছে…ওই ছেলে সেনবাড়ির আশ্রয়ে থেকে পড়াশোনা করত…।’

বৈশাখী উৎসাহ নিয়ে সোজা হয়ে বসলেন। বললেন, ‘বাঃ। আসল কেলেঙ্কারির পরিবারে সহজেই নকল কেলেঙ্কারি ঢোকানো যাবে। মিস্টার উপাধ্যায়, সেই ছেলেকে জানেন? তার সম্পর্কে কোনও ইনফর্মেশন আছে আপনার কাছে?’

নিখিলেশ গর্বের হাসি হেসে বললেন, ‘কেন থাকবে না? ছেলে রাজনীতি করে। পেছনে পুলিশ লেগেছে। সে এখন ভাগল বা। সেনবাড়ির মুখে কালি লেপে পালিয়েছে।’

বৈশাখী বললেন, ‘পালিয়েছে!’

‘হ্যাঁ, রাজনীতি করব বলে, লেখাপড়া ছেড়ে সুন্দরবনের কোন গ্রামে ঘাপটি মেরেছে।’

বৈশাখী থমথমে গলায় বললেন, ‘মানে!’

নিখিলেশ বললেন, ‘মানে আর কী, পালিয়েছে। পলিটিক্সে নাম লিখিয়ে কেরিয়ার বিসর্জন দিয়েছে হারামজাদা। আর্মস অ্যাক্টে পুলিশ পিছনে লেগে গেছে। যে কোনও দিন ধরে গারদে পুরবে। আমার কাছে গোপনে খবর এসেছে, সুন্দরবনের কাছে নোনাজল নামে একটা গ্রামে বেটা শেল্টার নিয়েছে। ক্যানিং থেকে নদী পেরিয়ে যেতে হয়। ভেবেছি, সম্পত্তি নিয়ে গোল পাকানোর সময় পুলিশকে খবর দেব। বেটাকে যাতে ধরে ফেলে। এটাতে সেনবাড়িও টালমাটাল হয়ে যাবে। যতই আশ্রিত ছোকরা হোক, পুলিশ তো ওই বাড়ির লোকদের ছেড়ে কথা বলবে না। সাঁড়াশি আক্রমণ হবে। কেমন ভেবেছি?’

বৈশাখী চুপ করে রইলেন। রুমাল দিয়ে ঘাম মুছলেন। ব্যাগ খুলে রুমাল ভেতরে রাখলেন। রুমালটা বেশ বড়। বললেন, ‘খুব ভালো ভেবেছেন মিস্টার উপাধ্যায়।’

‘আপনার কাজে এই ইনফর্মেশন কোনও হেল্প করল বৈশাখী, সরি বৈশাখীদেবী?’

বৈশাখী অন্যমনস্কভাবে বললেন, ‘অবশ্যই করল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম কাজটা করব না। আপনি অন্য লোক ঠিক করুন।’

নিখিলেশ উপাধ্যায় একটু চুপ করে থেকে কঠিন মুখ করে বললেন, ‘কেন?’

বৈশাখী বললেন, ‘আমার ইচ্ছে। জালিয়াতের ইচ্ছে থাকতে নেই?’

‘আমি তো টাকাপয়সায় এগ্রি করেছি। আপনি কি আরও চাইছেন?’

বৈশাখী বললেন, ‘না। আমি কাজ করব না।’

বৈশাখী উঠে দাঁড়ালেন। হাত ঘুরিয়ে ঘড়িতে সময় দেখলেন। তাঁকে যথেষ্ট ধীরস্থির দেখাচ্ছে।

নিখিলেশ উপাধ্যায় চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, ‘তা কী করে হবে বৈশাখীদেবী? কাজ তো আপনাকে করতেই হবে। আপনি সব জেনে গেছেন। বেশি জেনে গেছেন। কাজ যদি না করেন, আমি আপনাকে পুলিশে ধরিয়ে দেব। আপনি জেলখাটা ক্রিমিনাল। জালিয়াতির মামলা আপনার নামে আছে। আপনাকে পেলে পুলিশের সুবিধে হবে। হবে না?’

বৈশাখী নিশ্চিন্ত গলায় বললেন, ‘তা হবে। আপনি বরং পুলিশে খবর দিন।’

নিলিলেশ উপাধ্যায় দাঁতে দাঁত চেপে অসহায়ভাবে বললেন, ‘এই আপনার ফাইনাল কথা?’

বৈশাখী হেসে বললেন, ‘না ফাইনাল কথা নয়। এবার ফাইনাল কথা বলব। আপনার কাছে গিয়ে বলব।’

কথা শেষ করে বৈশাখী টেবিলের পাশ দিয়ে কয়েক পা এগিয়ে যান। তারপর চকিতে ব্যাগ থেকে রিভলভার বের করে বাট দিয়ে নিখিলেশ উপাধ্যায়ের ঘাড়ের পেছনে আঘাত করেন। বৃদ্ধ, নিখিলেশ কিছু বোঝার আগেই চেয়ারে মাথা এলিয়ে জ্ঞান হারান। এই কায়দা বৈশাখী শিখেছিলেন তাঁর স্বামীর কাছ থেকে। রক্ত ছাড়া হত্যা। যেখানে ছুরি বা গুলি ব্যবহার করা যাবে না, সেখানে দারুণ কাজ দেয়। গোটা শরীরের জোর নিয়ে আসতে হবে হাতে। মারতে হবে ঘাড়ের ঠিক মাঝবরাবর। হাড় ভেঙে যেন শ্বাসনালিতে ঢুকে যায়। বৈশাখী তা-ই করেছেন। শরীরের সব শক্তির সঙ্গে তিনি পেয়েছেন ঘৃণা। বিশ্বাসঘাতকের প্রতি ঘেন্না। আর সেই সঙ্গে সেনবাড়ির প্রতি কৃতজ্ঞতা।

বৈশাখী কোনও সুযোগ রাখেনি। রিভলভার ব্যাগে ঢুকিয়ে রুমাল বের করেন। নিখিলেশের গলায় ভালো করে প্যাঁচ দেন। সেই প্যাঁচ টেনে ধরে রাখেন টানা তিন মিনিট।

চুল ঠিক করে, শান্তভাবে পরদা সরিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়েন। একসময় রেস্টুরেন্ট থেকেও বেরিয়ে পড়েন। তারপর বাস ধরে শিয়ালদা।

পরোটার দোকানে দাম মিটিয়ে লঞ্চঘাটে নেমে আসেন বৈশাখী। এবার নদী পার হতে হবে। এত জল পেরিয়ে ছেলের কাছে যেতে বড় ভালো লাগছে। অনেক কান্না পেরিয়ে যাওয়া যেন। অর্চিন তাকে চিনতে পারবে? পারবে না।

‘আপনি কে?’

‘আমি কেউ নই।’

‘তবে? আপনি আমার কাছে কেন এসেছেন?’

‘আমি তোর কাছে থাকতে এসেছি অর্চিন। আর পারছি না। খুব ক্লান্ত লাগছে। খুব ক্লান্ত। বাকি জীবনটা তোর সঙ্গে থাকতে চাই সোনা আমার। তুই আমাকে ফিরিয়ে দিস না। আয়, বাছা কাছে আয়, তোকে আদর করি। কতদিন তোকে আদর করিনি।’

নদী পারাপারের নৌকোতে পা দেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে বৈশাখীর দু-পাশে দুজন এসে দাঁড়াল। একজন মহিলা, একজন পুরুষ। মহিলা কঠিনভাবে বৈশাখীর হাত চেপে ধরল। পুরুষটি নীচু গলায় বলল, ‘পালাবার চেষ্টা করবেন না বৈশাখীদেবী। আমরা পুলিশ। আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। নিখিলেশ উপাধ্যায় নামে এক বৃদ্ধকে খুন করবার অপরাধে আমরা আপনাকে অ্যারেস্ট করলাম। আসুন আপনি।’

নদীতে জোয়ার এসেছে। জল ফুলে উঠছে।