☼ প্রচেত গুপ্ত ☼
একটু পরে রোদ উঠবে
চুয়ান্ন
বৈশাখী দাঁড়িয়ে আছেন ক্যানিং লঞ্চঘাটে।
সামনে দিয়ে হু হু করে মাতলা নদী বয়ে যাচ্ছে। সকালের রোদ পড়ে নদীকে দেখাচ্ছে ঝলমলে। মনে হচ্ছে, ভোরবেলা ঘুম ভেঙে উঠে সাজগোজ করে বেরিয়ে পড়েছে।
এখন ক’টা বাজে? বৈশাখী হাত উলটে ঘড়ি দেখলেন। ন’টা বেজে দশ মিনিট। বৈশাখী এখন ভুটভুটিতে নদী পেরোবেন। সেখান থেকে বাসে ধামখালি। ধামখালি থেকে ভ্যানে আরও খানিকটা গেলে গ্রামে পৌঁছবেন। গ্রামের নাম সুন্দর। নোনাজল। সুন্দরবনের সবটাই তো নোনাজল। সব মিলিয়ে ঘণ্টা আড়াইয়ের পথ। তাও ভুটাভুটি, বাস, ভ্যান সময় মতো পেলে। না পেলে আরও দেরি। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। তাড়াহুড়ো করাও যাবে না। লোকে সন্দেহ করবে। অ্যাকশনের নিয়ম হল, অ্যাকশনের সময় যতটা মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়, অ্যাকশনের পর পর মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয় তার থেকে অনেক বেশি।
বৈশাখী অ্যাকশন করেছেন কাল সন্ধেবেলা। তারপর বাসে উঠে শিয়ালদা এসেছেন। শিয়ালদা স্টেশনের বাইরের বাজারে শান্ত ভাবে খানিকক্ষণ ঘোরঘুরি করেছেন। হকারদের সঙ্গে দরদাম করেছেন। শাড়ি, জামা-কাপড়, উলটে পালটে দেখেছেন। তার মধ্যে একটা ছোকরা মতো ছেলে গায়ের ওপর একটা চাদর ফেলে দিয়ে কেনবার জন্য জোরাজুরি শুরু করে।
‘আপনি এতক্ষণ ঘাটাঘাঁটি করেছেন, এবার নিতে হবে।’
বৈশাখী অবাক হয়ে বললেন, ‘ঘাঁটাঘাঁটি করলাম কই!’
ছেলেটি দাঁত কিড়মিড় করে বলে, ‘ঘাঁটাঘাঁটি করেননি? এতবার যে চাদরটার ভাঁজ খুললেন।’
বৈশাখী আরও অবাক হয়ে বলেন, ‘আমি তো চাদরটায় হাতই দিইনি ভাই। তুমিই তো জোর করে খুলে দেখালে।’
ছোকরা এবার মেজাজ চড়িয়ে বলে, ‘ওই একই হল। এই ঘাঁটা জিনিস অন্য কোনও খদ্দের কিনবে?’
বৈশাখী বলেন, ‘সে তো তোমার ব্যাপার।’
ছোকরা বলল, ‘ও সব জানি না। এই মাল আপনাকেই নিতে হবে।’
বৈশাখী এবার ছেলেটির দিকে এ পা এগিয়ে যান।
‘ভাই তুমি কি গুণ্ডামি করছ?’
ছোকরাটি এবার চোখ পাকিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, করছি।’
বৈশাখী নীচু গলায় বললেন, ‘তুমি আমার ছেলের বয়সি, তোমাকে যদি একটা কষিয়ে চড় লাগাই তোমার কি খুব রাগ হবে?’
ছোকরাটি এবার থতমত খেয়ে যায়। পাড়াগাঁয়ের মানুষকে এইভাবে জোর-জবরদস্তি জিনিস গছানোর ব্যবসা সে অনেকদিন থেকেই করেছে। ঝামেলাও হয়েছে। তবে কেউ এই ভাবে ঠাণ্ডা গলায় চড় মারবার কথা বলেনি।
‘আপনি কী বলতে চাইছেন?’
বৈশাখী শান্ত ভঙ্গিতেই বললেন, ‘এবার বল, কোন গালে চড় মারব।’
ছেলেটি এবার চুপসে যায়। মহিলার ভাবভঙ্গি সুবিধের নয়। গলার স্বর, চোখের চাউনিতে এমন কিছু একটা আছে, যেটা ভয়ের।
‘বাজে কথা বলবেন না। আপনি যান তো।’
বৈশাখী আরও একটু এগিয়ে যান। কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে রাখেন জামা কাপড়ের ওপর। তারপর ফিসফিসিয়ে বলেন, ‘ক্ষমা চা। আগে ক্ষমা চা। নইলে একটা চড় নয়, আরও বেশি মারব। তুই আমাকে চিনিস না। একটু পরে চিনতে পারবি।’
ছেলেটি তাড়াতাড়ি হাত জোড় করে বলে, ‘ক্ষমা চাইছি। ভুল হয়ে গেছে। আপনি এখান থেকে যান।’
বৈশাখী এরপর স্টেশনে যান। সেখানে ক্যান্টিনে বসে রুটি তরকারি আর ডিমের ঝোল খান। বিভিন্ন ট্রেনের যাওয়া আসার অ্যানাউন্সমেন্ট শোনেন। রাত বাড়ে। এক সময় দার্জিলিং মেল স্টেশন ছেড়ে চলে যায়। আরও মিনিট কুড়ি পরে ওঠেন। লেডিজ রিটার্নিং রুমে যান। বাইরে মাঝবয়সি একজন মহিলা টেবিল চেয়ারে বসে ঢুলছেন। সামনে রিটার্নিং রুমের এন্ট্রি খাতা। বৈশাখী সামনে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দিতে তিনি চোখ খোলেন।
‘কী চাই?’
‘রিটার্নিং রুমে জায়গা চাই।’
মহিলা ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘মানে!’
বৈশাখী বলেন, ‘আমি দার্জিলিং মেল মিস করেছি। আমার আত্মীয়রা চলে গেছেন। এত রাতে মছলন্দপুর ফিরতে পারব না। কাল সকালে কোনও গাড়ি ধরে এন জি পি যাওয়ার চেষ্টা করব।’
মহিলা অতি বিরিক্ত নিয়ে বলেন, ‘জায়গা নেই।’
বৈশাখী বলেন, ‘আছে। একটা বেড হয়ে যাবে।’
মহিলা বলেন, ‘টিকিট দিন।’
বৈশাখী বলেন, ‘আমার আত্মীয়রা নিয়ে চলে গেছেন। এক সঙ্গে টিকিট ছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান। যেতেই হত!’
‘টিকিট ছাড়া রিটার্নিং রুমে অ্যালাও নেই। আমি কিছু পারব না।’
বৈশাখী গলা নামিয়ে বললেন, ‘ভাই, আমি প্ল্যাটফর্মেই থাকতে পারতাম, কিছুক্ষণ হল দুটো গুণ্ডা টাইপের লোক আমার পিছু নিয়েছে। যেখানে যাচ্ছি সেখানেই চলে যাচ্ছে। একটু আগে ক্যান্টিনে বসে খেলাম সেখানেও…প্ল্যাটফর্মে থাকতে কেন, স্টেশন থেকে বেরোতেই আমার ভয় করছে।’
মহিলা বললেন, ‘আপনি পুলিশে খবর দিন।’
বৈশাখী কাতর গলায় বললেন, ‘আপনি যাবেন? চলুন না। দুজনে গিয়ে পুলিশকে বলি।’
মহিলা এবার ঝামেলায় পড়া মুখ করে বললেন, ‘না না, ডিউটি ছেড়ে আমি কোথায় যাব?’
বৈশাখী আতঙ্কিত গলায় বললেন, ‘তাহলে আমাকেও একা পাঠাবেন না।’
মহিলা এবার খাতায় নাম-ঠিকানা না লিখেই বৈশাখীকে রিটার্নিং রুমের ডরমেটারিতে একটা বেডের ব্যবস্থা করে দিল।
বৈশাখী নিশ্চিন্ত হলেন। পুলিশ নিশ্চয় এতক্ষণে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে। যেখানেই খুঁজুক, শিয়ালদা স্টেশনের রিটার্নিং রুমে আসবে না। রাতে ভালো ঘুম হল না। ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুম। খুব ভোরেই বেরিয়ে পড়লেন। সাউথ সেকশনে গিয়ে স্টলে বসে চা খেলেন। তারপর ধীরস্থিরভাবে ক্যানিং লোকালে উঠে, একটা কোণের দিকে ফাঁকা বেঞ্চে বসে, জানালার হাওয়া খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়লেন। এই ঘুমও গভীর হল না। বৈশাখী ছেলেকে স্বপ্ন দেখলেন। অর্চিন আর তার বাবা একটা জঙ্গলের মধ্যে হাঁটছে। তারা নীচু গলায় কথা বলছে, কিন্তু সে কথা পুরো শোনা যাচ্ছে না। হঠাৎ অর্চিনের পায়ে একটা কাঁটা ধরনের কিছু ফোটে।
তার বাবা নীচু হয়ে বসে সেই কাঁটা তুলে দিতে যায়। অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। একটা সময়ের পর অর্চিন বাধা দেয়। এবার তাদের কথা স্পষ্ট শুনতে পায় বৈশাখী।
‘বাবা থাক। আমি কাঁটা নিয়েই হাঁটব।’
‘তোর কষ্ট হবে তো।’
‘হোক। আমি কাঁটা নিয়েই চলব।’
‘কতদিন এভাবে থাকবি?’
‘যতদিন পারি।’
‘কেন?’
‘পায়ে কাঁটা বিঁধে থাকলে আমার সব সময় তোমার কথা মনে পড়বে বাবা। মনে পড়বে, আমার বাবা খুব সুন্দর একটা মানুষ। আমার পায়ের কাঁটা তুলে দিতে অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। এটা ভালো হবে না?’
অর্চিনের বাবা হেসে বলে, ‘দূর বোকা ছেলে। আমি ভালো মানুষ কেন হতে যাব? আমি একটা খারাপ মানুষ। ক্রিমিনাল একজন। লোক ঠকিয়ে, জালিয়াতি করে জীবন শেষ করেছি।’
অর্চিন দেবশিশুর মতো হেসে বলল, ‘সে যাই হোক, আমার বাবা, খুব সুন্দর একজন মানুষ।’
স্বপ্নের এই পর্যায়ে এসে বৈশাখীর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি চোখ খুলে দেখেন ক্যানিং স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে।
বৈশাখীর খিদে খিদে পাচ্ছে। কিছু খেয়ে নেওয়াই ভালো। অনেকটা পথ যেতে হবে। তিনি এদিক-ওদিক তাকালেন। উলটো দিকে একটা দোকানে গরম পারোটা বিক্রি হচ্ছে। পেটাই পরোটা। ময়দার তাল পিটিয়ে মস্ত চেহারার পরোটা বানিয়ে উনুনে দেওয়া হচ্ছে। তারপর ছিঁড়ে, ওজন করে খদ্দেরদের দেওয়া হচ্ছে। বৈশাখী দুশো গ্রাম পরোটা কিনলেন। প্লেট নিয়ে এসে বসলেন বেঞ্চের ওপর।
গতকালের ঘটনা মনে পড়ছে। বৈশাখী বিরক্ত হলেন। এটা ভালো কথা নয়। কোনও অ্যাকশনের পরেই ঘটনা মনে পড়া ঠিক নয়। তার পরেও পড়ছে। কেন? অ্যাকশন বড় বলে? নাকি একেবারেই প্রস্তুতি ছিল না তাই?
ভবানীপুরের রেস্টুরেন্টে বসে কথা শুরুর একটু পরেই নিজের দর বোঝাতে ব্যাগ থেকে ইচ্ছে করে রিভলভারটা বের করে টেবিলে রেখেছিলেন বৈশাখী। রুমাল খোঁজবার ছুতোয়। নিখিলেশ উপাধ্যায় আড়চোখে দেখে কাজের কথা শুরু করেন। কথা বেশি ছিল না। কথা না বলে গল্প বলা উচিত। যে গল্পের ওপর দাঁড়িয়ে পুরো কাজটা বৈশাখীকে করতে হত।
সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামে এক কোম্পানিতে গিয়ে দাবি করতে হবে, কোম্পানির মূল কর্ণধারের আর একটি স্ত্রী ছিল। সেই মহিলা ছিলেন একজন প্রস্টিটিউট। কোনও এলাকায় তিনি কাজ করতেন না, কাজ করতেন সমাজের উচ্চবলয়ে। এই কোম্পানির কর্ণধারের সঙ্গে মহিলার কোনওভাবে আলাপ হয়। প্রেম হয়। শেষ পর্যন্ত গোপনে বিয়ে। ভদ্রলোকের স্ত্রী ছিল বলেই গোপনে বিয়ে। মহিলার নাম ধরা যাক অঞ্জলি। অঞ্জলির একটি মেয়ে হয়। মেয়ে বড় হয়। সেন অ্যাসোসিয়েটসের কর্ণধারের সঙ্গে অঞ্জলির চুক্তি হয়, তারা কখনও সামনে আসবে না। আড়াল থেকে টাকা পয়সা দেওয়া হবে। অঞ্জলি মারা যেতে টাকাপয়সা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার মেয়েও বিষয়টা নিয়ে খুব একটা নাড়াচাড়া করেনি। সে তার পিতৃ পরিচয় ভালো করে জানত না। কিন্তু সম্প্রতি ভদ্রলোকের মৃত্যুর পর জানতে পেরেছে, কে তার বাবা ছিলেন। কত বড় কোম্পানির মালিক তিনি। তাই মেয়ে ভদ্রলোকের ছেলের কাছে এসে সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের অংশীদার হতে চাইবে। সেই মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে বৈশাখীকে। তাকে বিয়ের যাবতীয় জাল কাগজপত্র, এমনকী জাল ফটোগ্রাফ পর্যন্ত দেওয়া হবে। ভদ্রলোকের বিয়ের ফটো উপাধ্যায়ের সংগ্রহে আছে। সেখানে কনের মুখ বদল করা হবে কম্পিউটারের কারসাজিতে।
অ্যাসাইনমেন্ট শোনবার পর বৈশাখী জিগ্যেস করেন, ‘টাকা-পয়সার কী হবে?’
নিখিলেশ বলেন, ‘সমস্যা পাকালে আমার কাছে আসবেন। আমি আপনার সঙ্গে নেগোসিয়েশনে যাব। আপনি টাকা, বাড়ি, জমি চাইবেন। আমি রফা করব। রফার পর টাকা আমার। আপনি আপনার চার্জ বুঝে নেবেন।’
বৈশাখী চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন, ‘রাজি নই। আমার রিস্ক খুব। চার্জের বাইরেও আমাকে শেয়ার দিতে হবে।’
নিখিলেশ ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘এরকম তো কথা ছিল না। আপনি তো চার্জ নিয়ে কাজ করেন। এডি সে রকমই আমাকে জানিয়েছে।’
বৈশাখী বললেন, ‘সব কাজ করি না। এই ধরনের কাজে ধরা পড়লে ভিতরে কম করে দশ বছর থাকতে হবে।’
নিখিলেশ থমথমে গলায় বললেন, ‘ধরা পড়বেন না।’
বৈশাখী ঠোঁটের কোণে হেসে বললেন, ‘ক্রাইমের আগে সবাই ওরকম ভাবে।’
নিখিলেশ বললেন, ‘আমি সবার মতো নয়। সব দিকের আটঘাট বেঁধে এগোচ্ছি। আমার নিজেরও বড় ঝুঁকি। আপনি ধরা পড়লে আমিও তো ফাঁসব।’
বৈশাখী স্থির চোখে খানিকক্ষণ বুড়ো মানুষটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘আর যদি আপনিই আমাকে ধরিয়ে দেন?’
নিখিলেশ উপাধ্যায়ের চোখ ঝলসে উঠল। এই মহিলা সামান্য জালিয়াত নয়। এর বুদ্ধি তুখোড়।
‘আপনাকে ধরিয়ে আমার লাভ?’
বৈশাখী তুচ্ছ করবার ভঙ্গিতে বললেন, ‘নিজে সাধু সাজবেন। কোম্পানির বিশ্বাসযোগ্য হবেন।’
নিখিলেশ উপাধ্যায় মুচকি হেসে বললেন, ‘আমি তো এমনিই বিশ্বাসযোগ্য। সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মূল লোক বলুন, বর্তমান মালিকই বলুন, সবাই আমাকে বিশ্বাস করে। নতুন করে আর কী আস্থাভাজন হব?’
বৈশাখী বললেন, ‘আপনি কতদিন এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত?’
নিখিলেশ বললেন, ‘আপনার কী প্রয়োজন? আপনি টাকা পাবেন, কাজ করবেন।’
বৈশাখী বললেন, ‘প্রয়োজন আছে। আমি বুঝতে চাইছি, আপনি যে গল্পটা সাজিয়েছেন, সেটা বিশ্বাসযোগ্য হবে কিনা।’
নিখিলেশ উপাধ্যায়, একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘এই কোম্পানি যিনি মূলত তৈরি করেছেন, অর্থাৎ যে মানুষটার বিরুদ্ধে গল্প সাজানো হচ্ছে, তিনি আমার থেকে বয়েসে অনেকটা বড়। আমি তার অধীনস্থ একজন এমপ্লয়ি ছিলাম। তার পরেও এক রকম বন্ধুত্ব তৈরি হয়। ধীরে ধীরে আমার ক্ষমতা, প্রতিপত্তি বাড়ে। আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে নিজেকে দক্ষ এবং আস্থাভাজন প্রমাণ করি। একটা সময়ের পর আমার বস কাম বন্ধু অবসরে যান। আমারও বয়স বাড়ে। কাজ ছাড়তে চাই আমিও। আমার বস আমাকে ছাড়তে দেন না। তিনি আমাকে বলেন, তোমাকে কোম্পানিতে থাকতে হবে। আমার ছেলেকে সাহায্য করতে হবে। কেউ জানবে না, আমি তোমার মাধ্যমে কোম্পানি চালাব। আমার সেই বস কাম বন্ধু কিছুদিন হল মারা গেছেন। এখন তার ছেলেই সব। আমি রয়ে গেছি। কোনও বড় ধরনের সমস্যা হলেই সামলাই।’
বৈশাখী বললেন, ‘ও আপনি তা হলে বিশ্বাসঘাতক?’
নিখিলেশ উপাধ্যায় ঠোঁটের কোণে হেসে বললেন, ‘বিশ্বাসঘাতক কে? আমি না সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মালিকরা? যাদের জন্য এই বুড়ো বয়সেও এত করলাম তারা আমাকে কী দিল? স্রেফ কয়েকটা টাকা মাইনে? কেন? এতই যদি বিশ্বাস, আস্থা, তারা আমাকে কোম্পানির একজন করে নিতে পারত না? উচিত ছিল না?’
বৈশাখী হাইয়ের মতো তুলে বললেন, ‘তাহলে প্রতিশোধ?’
‘খানিকটা তাই বলতে পারেন।’
দুজনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। নিখিলেশ উপাধ্যায় এবার সোজা হয়ে বসলেন। বললেন, ‘অনেক কথা হল। আপনি সবই জানলেন। আশাকরি আর সমস্যা রইল না। তা হলে কাজের কথায় আসুন। ফাইনাল বলুন কত টাকা নেবেন?’
বৈশাখী বললেন, ‘জাল কাগজপত্র একবার দেখব। তার আগে এক কাপ চা বলুন।’
নিখিলেশ উপাধ্যায় গলা বাড়িয়ে বেয়ারাকে ডাকলেন। পরদা সরিয়ে বেয়ারা মুখ বাড়াতে, সহজ ভঙ্গিতে চায়ের অর্ডার দিলেন।
সহজ না হওয়ার কোনও কারণ ছিল না। কারণ দুজনের কেউই তখন জানত না, একটু পরে কী ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে চলেছে।