☼ প্রচেত গুপ্ত ☼
একটু পরে রোদ উঠবে
ষাট
‘কেমন আছ বাবা?’
‘ভালো আছি। তুমি কেমন আছ বিমল?’
বিমলকান্তি মলিন হেসে বললেন, ‘তুমি সব জানো বাবা।’
কমলকান্তি বললেন, ‘তারপরেও তোমার কাছ থেকে জানতে চাইছি। একজন মানুষ কেমন আছে, প্রকৃত ভাবে তা কেবল সে নিজেই বুঝতে পারে। বাইরে থেকে আমরা নানারকম ভাবি, কিন্তু সেটা ঠিক হয় না। ঘটনার ওপর মানুষের ভলো থাকা, মন্দ থাকা নির্ভর করে না। নির্ভর করে তার বোধের ওপর, চেতনার ওপর। কেমনভাবে সে নিজেকে রাখতে চাইছে এটাই আসল। সেকথা অন্য মানুষ জানবে কী করে?’
বিলমকান্তি একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘বাবা, মনটা খুব খারাপ।’
কমলকান্তি বললেন, ‘কেন?’
‘উপাধ্যায়কাকুর মতো একজন মানুষ, যাকে তুমি এত পছন্দ করতে, তিনি এমন কাজ করতে পারলেন। কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’
কমলকান্তি বললেন, ‘প্রথমটায় মন আমারও খারাপ হয়েছিল বিমল। তারপর বুঝতে পেরেছি, এটাই ভালো হয়েছে। মানুষটাকে আমরা চিনতে পারিনি। সে নিজেই তার পরিচয় দিল। এমন যদি হত, সে কোনওদিন নিজেকে ধরা না দিত? সেটা কি তোমার জন্য, সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের জন্য বেশি মন খারাপের ব্যাপার হত না? সবাই জানত, ও খুব বড় মনের মানুষ ছিল। কমলকান্তি সেন আড়াল থেকে যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে সেটাই পালন করছে। এই ভুল জানাটা কি ভালো হত?’
বিমলকান্তি বললেন, ‘ভালো হত বাবা। মানুষ বিশ্বাস ভাঙলে বড় আঘাত লাগে।’
কমলকান্তি একটু যেন হাসলেন। বললেন, ‘এত বড় হয়ে ছেলেমানুষের মতো কথা বলছ বিমল। বিশ্বাস কোনও স্থির বিষয় নয়। সে হল নদীর পাড়ের মতো। একদিক ভাঙবে, একদিকে গড়বে। উপাধ্যায় শেষ বয়সে বিশ্বাস ভাঙলে, কর্ণিকা নামের মেয়েটি জীবনের শুরুতেই নতুন করে তোমার বিশ্বাস অর্জন করল।’
বিমলকান্তি অস্ফুটে বলল, ‘সেটা ঠিক। মা কেমন আছেন?’
কমলকান্তি হেসে বললেন, ‘খুব ভালো। আমাকে পেয়ে আহ্লাদে আটখানা। পুত্র হলেও তুমি এখন বড়, তোমাকে বলতে লজ্জা নেই, বুড়োবুড়িতে চুটিয়ে প্রেম করছি। এতদিন অনেক খামতি পড়েছে। পুষিয়ে দিতে হবে। একানব্বই বছর কি প্রেমের জন্য ঠিক বয়স নয়?’
বিমলকান্তি লজ্জা পেয়ে চুপ করে রইলেন। বাবা-মায়ের প্রেম নিয়ে কোনও মন্তব্য করা যায়? কমলকান্তি চুপ করে রইলেন।
‘এ সব রস তোমরা বুঝবে না। আমার ছোট নাতনি বুঝবে। সে কোথায়?’
বিমলকান্তি বললেন, ‘বৃষ্টি ভালো আছে। ইউনিভার্সিটির পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে।’
কমলকান্তি বললেন, ‘জানি।’
‘তাকে কি তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলব?’
কমলকান্তি বললেন, ‘প্রয়োজন নেই। সে আমার সঙ্গে সবসময়ই কথা বলে। হাজার প্রশ্ন। আমি জবাব দিই না। ও বুদ্ধিমতী। নিজের মতো উত্তর তৈরি করে নেয়। কখনও ভুল হয়, কখনও ঠিক হয়। তবু সেটাই আমার কথা। গভীর ভালোবাসার সম্পর্কে ঠিক ভুল কোনও বিষয় নয়। মেয়েটাকে যত্নে রেখো।’
বিমলকান্তি হালকা চিন্তিতভাবে বললেন, ‘বাবা, তুমি তো জানো, বারিধারার মধ্যে কোনও সিরিয়াস বোধই নেই। লেখাপড়ায় ভালো রেজাল্ট করেছে, করেছে হেলাফেলায়। একটি ছেলেকে ভালোবাসে, সম্ভবত বিয়েও করবে, সেও উড়নচণ্ডী ধরনের।
কমলকান্তি হাসলেন। বললেন, ‘সিরিয়াস বিষয়টা হাবেভাবে দেখানোর বিষয় নয় বিমল। কেউ যদি হাসি রসিকতায় কোনও সিরিয়াস কাজ করে বসে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মুখ গম্ভীর ডাক্তার অসুখ সারানোর থেকে হাসিমুখের ডাক্তার পেট কাটলে ব্যথা কম লাগে। এ কথা তোমাকে আগে বলেছি। তুমি মানতে চাওনি। সে তো তোমার ব্যাপার। আমার বিশ্বাস সেনবাড়ির সব থেকে সিরিয়াস মানুষটির নাম বারিধারা। আর উড়নচণ্ডীকে ভালোবেসে কেউ যদি তার সঙ্গে ঘর বাঁধতে যায়, তা হলে ক্ষতি কী? শিল্পী মানুষ উড়নচণ্ডী হবে না তো কী হবে? দশটা-পাঁচটার অফিসার?’
বিমলকান্তি অস্ফুটে বলল, ‘বৃষ্টি যদি সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে নিজেকে জড়াত তা হলে আমি অনেকটা নিশ্চিন্ত হতে পারতাম। আমার তো বয়স হচ্ছে। এরপর কে? উপাধ্যায়কাকুর ঘটনা মানসিকভাবে আমাকে দুর্বল করে দিয়েছে। বাইরের কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না।’
কমলকান্তি একটু চুপ করে রইলেন। বললেন, ‘তোমার দুই মেয়ে-দুই জামাই। ব্যবসার দায়িত্ব কাকে দেবে তুমি ঠিক করবে। কীভাবে রাজি করাবে তুমি ঠিক করবে। বড় মেয়ের কথা মাথায় রেখো। শুধু ইমোশন দিয়ে যদি আমাদের মেঘবতীকে বিচার করা হয় তা হলে খুব ভুল হবে। মেঘের ভিতরটা খুব শক্ত। হালকা-পলকা ঘটনায় সে যেমন আবেগতাড়িত হয়, যে-কোনও কঠিন কাজ সে ঠাণ্ডা মাথায় সামলাতে জানে। ব্যবসায় যেমন অর্থের প্রয়োজন, তেমন আবেগের প্রয়োজন। মেঘের এই আবেগ আছে। সে পারবে।’
বিমলকান্তি বললেন, ‘ওই মেয়ে বহুদিন আগে না বলে দিয়েছে।’
‘আবার বোঝাও। সময় বদলালে মানুষের মনও বদলায়।’
বিমলকান্তি বললেন, ‘আচ্ছা বলব। বাবা, আর একটা কথা ছিল।’
কমলকান্তি বললেন, ‘কী কথা? তাড়াতাড়ি বলবে। এবার আমাকে ফিরতে হবে। তোমার মা অপেক্ষা করছে।’
বিমলকান্তি উদ্বিগ্ন গলায় বললেন, ‘আমার একটা সমস্যা হচ্ছে বাবা। আমি মাঝে মাঝে সামনে থাকা অন্য কোনও মানুষের মতো হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে, তার শরীর, মন দুটোই আমার। তার কথা আমার কথা। তার সুখ-দুঃখ, আমারই সুখ-দুঃখ। তার চোখ দিয়ে জগৎ দেখতে পেয়েছি।’ একটু থেমে থেকে বিমলকান্তি বললেন, ‘বলতে অস্বস্তি হচ্ছে, কিন্তু অফিসের খুব সাধারণ স্টাফ প্রহ্লাদ থেকে শুরু করে আপনি পর্যন্ত এই ঘটনা আমার ঘটেছে। খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও আমি প্রহ্লাদ হয়ে গিয়েছিলাম, এমনকী আমি তুমিও গিয়েছিলাম… একবার উপাধ্যায়কাকুর মনের কথাও জেনেছিলাম…নিজের মনের কথা ভেবে…সেই কথা জেনে সন্দেহ হয়েছিল…কিন্তু নিজের পাগলামি ভেবে আমল দিইনি। মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়। মনে হয় ভিতরে পাগলামি ডেভেলপ করছে। নইলে একজন মানুষ অন্য একটা মানুষ হয়ে যাবে কেন? কাউকে বলতে পারি না। লজ্জায় নয়, বলি না বাড়ির সবাই ভয় পেয়ে যাবে এই চিন্তা করে।’
বিমলকান্তি চুপ করলেন। কপালে হাত দিয়ে মাথা নামিয়ে চুপ করে বসে রইলেন।
কমলকান্তি শান্ত ভাবে বললেন, ‘আমি জানি বিমল। আগে জানতাম না, পরে জানতে পেরেছি। অফিসের ওই মেয়েটি তোমাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে পাঠিয়েছিল।’
বিমলকান্তি মুখ তুলে অস্ফুটে বললেন, ‘হ্যাঁ, বাবা।’
কমলকান্তি বললেন, ‘তিনি তোমাকে বলেছেন, এটা কোনও মানসিক রোগ কি না সেটাই তিনি বুঝতে পারছেন না। তাই তো?’
‘হ্যাঁ, বাবা। তারপর থেকে আর এমনটা হয়নি, কিন্তু আমার ধারণা যে কোনও সময় আবার হতে পারে। বাবা, আমার ভয় করে।’
বিমলকান্তির গলায় আত্মসমর্পণের সুর। মানবজন্মের শুরু থেকে এই আত্মসমর্পণে পিতার কাছে পুত্র ভরসা চায়। আশ্রয় চায়। এই আত্মসমর্পণ একমাত্র পিতার কাছেই করা যায়। তখন পুত্রকে কাছে টেনে নিয়ে পিতাই বলতে পারে, ‘দুর বোকা, আমি আছি তো।’
কমলকান্তি পুত্রকে কাছে টানতে পারলেন না। সে ক্ষমতা এখন আর তার নেই। তবে সস্নেহে বললেন, ‘ভয়ের কী আছে? কোনও ভয় নেই। একজন মানুষ যদি তার সামনের মানুষটার মতো হতে পারে, সে তো আনন্দের। ক্ষণিকের জন্য হলেও তার সুখ-দুঃখ যদি নিজের হয়ে যায়, সে তো বিরাট পাওয়া। তার প্রতিবাদ, চক্রান্ত যদি তুমি জানতে পারো, তার থেকে সুবিধের কী আছে? এ সবের থেকে বড় কথা কী জানো বিমল, নিজের চোখে দেখা পৃথিবীটা একরকম, অন্যের চোখে দেখা আরেকরকম। সে পৃথিবী আলাদা। সে পৃথিবী দেখবার সুযোগ সবাই পায় না। তুমি পেয়েছ। এটা তোমার পরম সৌভাগ্যের। একে আনন্দ করে গ্রহণ করো।’
বিমলকান্তি নীচু গলায় বললেন, ‘তারপরেও অন্য মানুষ হয়ে যেতে অস্বস্তি হয়।’
কমলকান্তি নরম গলায় বললেন, ‘যখন থেকে তুমি বুঝতে পারবে এটা কোনও অসুখ নয়, এটা তোমার পাওনা, সেদিন থেকে আর অস্বস্তি হবে না। দেখবে, আর সামনের মানুষটা হতে পারবে না। তুমি এমনিই তার চোখ দিয়ে তার সুখ-দুঃখ বুঝতে পারবে। তাকে বুঝতে পারবে।’
পিতা-পুত্র দুজনেই চুপ করে রইল।
কমলকান্তি বললেন, ‘আমি এবার আসি বিমল? তোমার মা অপেক্ষা করছে। বয়স হয়েছে তার। আমাকে না দেখতে পেলে বড্ড ব্যাকুল হয়ে পড়ে। একবার হারিয়েছিল, দ্বিতীয়বার আর হারাতে চায় না।’
বিমলকান্তি বললেন, ‘আবার কবে আসবে?’
কমলকান্তি হেসে বললেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে সবসময় আছি। ছেড়ে যায়নি কখনও। সাবধানে থাকবে। মনে রাখবে, মেঘ আসবেই। বিষণ্ণ, বিষাদমাখা, অন্ধকার মেঘ। সেই মেঘ না এলে জীবন সম্পূর্ণ হয় না। কিন্তু মেঘ আবার কাটেও। কেটে পরে রোদ ওঠে। ঝলমলে রোদ। চারপাশে আলো ছড়িয়ে দেয়। এই রোদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যে যার মতো করে অপেক্ষা করে। কেউ উদ্যমী হয়, কেউ চুপ করে বসে থাকে। আজ এলাম।’
মণিকুন্তলার পায়ের আওয়াজে বিমলকান্তির ঘোর কাটল। তিনি মুখ তুলে কমলকান্তি সেনের শূন্য চেয়ারের দিকে তাকালেন।
‘এ কী তুমি এখানে! তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছি।’
মারা যাওয়ার পর নিয়ম না করেও বাবার ঘরে মাঝে মাঝে আসেন বিমলকান্তিবাবু। বিশেষ করে অফিস যাওয়ার সময় একবার উঁকি মেরে যান। আবার অনেকদিন আসাও হয় না। বিমলকান্তি সেন প্র্যাকটিকাল মানুষ। রোজ মৃত বাবার ঘরে এসে ছবিতে প্রণাম ঠুকতে হবে, এমন ধারণায় তিনি বিশ্বাস করেন না। এ বাড়ির কেউই করে না। তারা কমলকান্তি সেনকে মনের ভেতর থেকে ভালোবাসে। কপালে হাত ঠুকে শ্রদ্ধা তাদের জানাতে হয় না। আজ বিমলকান্তি ঘরে এসেছিলেন। ঢুকে মনে হল, বাবার ইজি চেয়ারটার পাশে খানিকক্ষণ বসি। মোড়া টেনে নেন। এ ঘর থেকে কোনও কিছুই সরানো হয়নি। সব কিছুই আগের মতো রয়েছে। মণিকুন্তলাই সরাতে দেননি। তিনি অলৌকিকতায় বিশ্বাস করেন না। তারপরেও তার মনে হয়, শ্বশুরমশাই আজও এ ঘরে আছেন। একজন মানুষ তার জীবন দিয়ে উপস্থিত থাকে, মৃত্যু দিয়েও থাকতে পারে। বাবার ইজি চেয়ারের পাশে, বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ বিমলকান্তিবাবুর মনে হয়, সামনে বাবা বসে আছেন। যেমন তিনি থাকতেন।
এরপরেই মৃত বাবার সঙ্গে বিমলকান্তি কথা শুরু করেন।
মণিকুন্তলা অবাক হয়ে বললেন, ‘কী গো। এতক্ষণ এ ঘরে বসে আছ?’
বিমলকান্তি খানিকটা লজ্জাই পেলেন। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘এই তো একটু আগে এসছি।’
মণিকুন্তলা কিছু বলতে গিয়ে থমকে গেলেন। বাবার শূন্য চেয়ারের পাশে ছেলে কেন চুপ করে বসে আছে, তাই নিয়ে কথা বলবার অধিকার তার নেই। দুনিয়ার কারওরই নেই।
মণিকুন্তলা বললেন, ‘তোমার সঙ্গে একটা কথা ছিল। তোমার কি এখন সময় হবে?’
বিমলকান্তি বুঝতে পারলেন তাঁর মনটা ঝরঝরে লাগছে। মনে মনে বাবার সঙ্গে কথা বলে অনেকটা হালকা হতে পেরেছেন। শুধু হালকা নয়, কিছু খুব জরুরি পরামর্শও পেয়েছেন। কাউকে এ কথা বলতে গেলে হাসবে। হাসাই উচিত। তিনি যে মৃত বাবার সঙ্গে কথা বলে মনে করছে, সেটা তো আসলে চিন্তা। নিজের সঙ্গে নিজের কথা। বাবার পরামর্শ তো আসলে নিজের চিন্তা করে বের করা উপায়। তারপরেও ভাবতে ভালো লাগছে, বাবা এতক্ষণ ছিল।
‘বলো মণিকুন্তলা।’
মণিকুন্তলা আলমারিতে হাত রেখে বললেন, ‘এবার আমাদের বাবার প্রাোজেক্টটা নিয়ে কাজ শুরু করবার সময় এসে গেছে।’
বিমলকান্তি উৎসাহ নিয়ে বললেন, ‘কীভাবে শুরু করবে ভাবছ।’
মণিকুন্তলা বললেন, ‘আগে সবাই মিলে কথা বলে নিই।’
বিমলকান্তি বললেন, ‘অবশ্যই। তুমি একদিন মিটিং ডাকো। এই ঘরেই মিটিং হবে। বাবার সামনে কথা হয়ে যাবে।’
কথাটা বলে বিমলকান্তি ‘হো হো’ করে হাসলেন। মণিকুন্তলা অবাক হলেন। ব্যাপার কী। তার সিরিয়াস ভাব বুড়ো বয়সে যে এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গেছে। ভারী ভালো লাগছে।
বিমলকান্তিবাবু বললেন, ‘মণিকুন্তলা, তুমি কি জানো একটু পরে রোদ উঠবে মানে কী? বাবা তার ড্রিম প্রাোজেক্টের এরকম একটা অদ্ভুত নাম কেন দিলেন? জানো তুমি?’
মণিকুন্তলা বললেন, ‘অবশ্যই জানি।’
বিমলকান্তি আগ্রহ নিয়ে বললেন, ‘বলো তো।’
মণিকুন্তলা বললেন, ‘একটু পরে রোদ উঠবে কথাটার মানে একটু পরে রোদ উঠবে। ঠিক হয়েছে?’
বিমলকান্তি আবার হেসে উঠলেন। স্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘খুব ঠিক হয়েছে। সাধে কি বাবা তোমাকে এত গুরুত্ব দিতেন? তোমার কাজ থেকে আমারও অনেক কিছু শেখবার আছে।’
দুপুরের পর থেকেই টিভিতে খবর বলতে শুরু করল, বঙ্গোপসাগরের ওপর একটা নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এই নিম্নচাপ গভীর হবে। তারপর এগিয়ে আসবে স্থলভাগের দিকে। রাত থেকে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা। কিন্তু বিকেলের পর থেকেই আকাশ মেঘে মেঘে ছেয়ে গেল। চারপাশ থম মেরে গেল। বৃষ্টি নামল সন্ধের পর থেকে।