☼ প্রচেত গুপ্ত ☼
একটু পরে রোদ উঠবে
আটচল্লিশ
শ্রবণ বিশ্বাস করছে না। তার কারণ এই ঘটনা বিশ্বাস করা যায় না। মুম্বইয়ের বিখ্যাত এক বিজ্ঞাপন সংস্থা প্রতি বছর একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিজ্ঞাপন বানানোর প্রতিযোগিতা। ওরা নাম দেয় ‘ট্যালেন্ট হ্যান্ট’। প্রতিভার সন্ধান। বয়স তিরিশ বছরের কম হলে যে-কোনও ছেলেমেয়ে অংশ নিতে পারে। যে-কোনও ভাষায় বিজ্ঞাপন বানানো যায়। স্টিল হতে পারে, আবার মুভিও হতে পারে। যার যেটা পছন্দ। পুরস্কার বিরাট। প্রথম হলে এক লক্ষ টাকা। সঙ্গে ট্রফি তো থাকেই। তারপরে আরও দশটা পুরস্কার রয়েছে। সারা দেশের কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিজ্ঞাপন সংস্থা তিনটে বিষয় বলে দেয়। তার মধ্যে থেকে কোনও একটা বেছে নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। তবে কাজটা মৌলিক হতে হবে।
শ্রবণ এর আগে বার তিনেক ট্যালেন্ট হান্টে অংশ নিয়েছে। কিছুই হতে পারেনি। এমনকী ওরা এক হাজার জনকে যে মেরিট সার্টিফিকেট দেয়, তাও পায়নি। শ্রবণ অবশ্য এতে ভেঙে পড়ে না। আবার পাঠায়। সে মনে করে, এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে হার-জিতটা আসল কথা নয়। আসল কথা হল, নতুন কাজ ভাবা। এটা কল্পনার প্র্যাকটিশ।
এবারও প্রতিযোগিতায় তিনটি বিষয় ছিল—আইসক্রিম, গাড়ি আর রং।
শ্রবণ ‘গাড়ি’ বেছে কাজ করেছিল।
নানারকম বিজ্ঞাপন বানিয়েছিল। মুভি নয়, স্টিল। কোনওটায় হাতে আঁকা, কোনওটা ফটোগ্রাফ দিয়ে। নীচে ক্যাপশন। কোনওটা আবার ফটোগ্রাফ আর হাতে আঁকা ছবি মিলিয়ে। শেষপর্যন্ত শ্রবণ হাতে আঁকা কাজটাই পছন্দ করে পাঠিয়ে দেয়। পাঠানোর আগে বারিধারাকে ফোন করে।
‘ট্যালেন্ট হান্টে পাঠানো কাজটা কি তুমি একবার দেখবে বারি?’
ওপাশ থেকে বারিধারা হাই তুলে বলে, ‘একেবারেই নয়। আমি দেখব না।’
শ্রবণ বলে, ‘কেন? আমার কাজ কি খারাপ, ধারা?’
বারিধারা বলল, ‘না, খারাপ না। খারাপ হয় না বলে, তুমি প্রাইজও পাও না। খারাপ হলে পেতে।’
শ্রবণ হতাশ গলায় বলে, ‘তুমি যে কী হেঁয়ালি করো বারি, আমি ঠিক বুঝতে পারি না। যাক, এবারের কাজটা একবার দেখো।’
বারিধারা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে, ‘তোমার এই বারি আর ধারার প্রবলেমটা কোনও দিনই কি মিটবে না? তুমি কি কিছুতেই একটা নামে স্থির থাকতে পারবে না? যাক এতদিন যখন পারোনি, আর পারতেও হবে না। বিজ্ঞাপনটা মেলে পাঠাও, দেখে নিচ্ছি।’
কাজ পাঠানোর মিনিটখানেকের মধ্যেই বারিধারা মেসেজ পাঠাল।
‘কাজটা খুবই খারাপ। আমি নিশ্চিত, এবার তুমি প্রাইজ পাবে। বড় কোনও প্রাইজ। খারাপ কাজ করবার জন্য অনেক আদর। এখনও প্রাইজ পাওনি বলে ভারচ্যুয়াল আদর করলাম। প্রাইজ পেলে রিয়েল আদর করব।’
শ্রবণ আর দেরি করল না। বিজ্ঞাপনটা পাঠিয়ে দিল। বারিধারা খারাপ বলেছে, নিশ্চয় তার খুব পছন্দ হয়েছে। সে একটা উলটো বলা মেয়ে। উলটো বলা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করলে সমস্যা। মেয়ে যা বলে, তা মাথা খাটিয়ে বুঝতে হয়। বেশিরভাগ সময়েই তা বোঝা যায় না। তখন খেতে হয় বকুনি। উলটো বলা মেয়ের এই বকুনি অতি আনন্দদায়ক। এই বকুনি শোনবার জন্য ছেলেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পারে।
শ্রবণের কাজটা এরকম—
বৃষ্টিতে শহরের রাস্তায় এক কোমর জল জমেছে। বাস, গাড়ি, টেম্পো, বাইক জলে নাক ডুবিয়ে কেতরে পড়েছে। হাতেটানা রিকশর সিট পর্যন্ত জল। এমনকী শহরের পথে নৌকা পর্যন্ত নেমেছে। রাস্তার ধারের নীচু ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। শুধু একটা গাড়িই দুপাশে জল ছিটিয়ে ছুটছে। গাড়ির মাথায় গোল করে পাকানো ছেঁড়া মাদুর, ভাঙা টিনের সুটকেস, তাপ্পিমারা স্কুলব্যাগ, জীর্ণ লেপকম্বল বাঁধা। গাড়ির তিন জানলা দিয়ে কয়েকটা ছেলেমেয়ে আর তাদের বাবা-মায়েরা মুখ বের করে মহা ফুর্তিতে হাত নাড়ছে। বোঝাই যাচ্ছে পথের ধারের নীচু বাড়ি থেকে এদের উদ্ধার করা হয়েছে। ছবিটায় রিয়েল ড্রইং আছে, আবার খানিকটা কার্টুন ভাবও রয়েছে। নীচে ক্যাপশন—
‘আমাকে কেউ আটকাতে পারে না, কারণ আমি সবাইকে নিয়ে চলতে জানি।’
কাল মুম্বই থেকে মেলে খবর এসেছে, শ্রবণ রায়ের বিজ্ঞাপন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে।
টুকরো টাকরা অর্ডারের জন্য শ্রবণকে ঘনঘন মেল দেখতে হয়। তাছাড়া যে অফিসের হয়ে ফ্রিলান্স কাজ করে, তারাও মেল করে নানারকম ইনস্ট্রাকশন পাঠায়। সেই কারণে মেল দেখা। এবং চমকে ওঠা।
তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠেছিল শ্রবণ। সে কি ঠিক পড়ছে? হতেই পারে না। সে নিশ্চয়ই ভুল পড়ছে। ইংরেজিতে সে এমনিতেই কাঁচা। প্যাঁচপয়জার বোঝে না। সংক্ষিপ্ত এবং সহজ চিঠিটি যে লেটার প্যাডে এসেছে, সেটি ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ আয়োজকদের। ঠিকানা, ফোন নম্বর, সবই আছে, সেখানে যে বাক্যটি লেখা আছে তার মানে হল—
অভিনন্দন আপনাকে। আপনি আমাদের ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন।
প্রথম। মানে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার! এক লক্ষ টাকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল, দেশের এত বড় একটা নামকরা বিজ্ঞাপন সংস্থা তার কাজকে শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি দিল। তার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে? আবার ভয়ও করছে। শ্রবণের পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছে। বুকও কি ধুকপুক করছে না। শ্রবণ ডিভানের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে আছে। সে বুকে হাত দিল। হ্যাঁ, কেমন একটা করছে যেন।
হতে পারে না। কিছুতেই হতে পারে না। অবশ্যই কোথাও ভুল হয়েছে। ভুল ঠিকানায় মেল চলে এসেছে। গোটা দেশ থেকে ছেলেমেয়েরা এখানে তাদের কাজ পাঠায়। তাদের মধ্যে আর কারও নাম শ্রবণ রায় হতে পারে। এত বড় একটা দেশে একজনের নামই কি শুধু শ্রবণ? এমন কোনও কারণ নেই।
আর যদি তা না হয়? যদি তাকেই এই মেইল পাঠানো হয়? সত্যি যদি সে ফার্স্ট হয়ে থাকে?
কপালের ঘাম মুছে বারিধারাকে ফোনে ধরল শ্রবণ। বারিধারা চাপা গলায় কথা বলল।
‘ব্যস্ত। পরে কথা বলব।’
শ্রবণ প্রায় আর্তনাদ করবার মতো করে বলে উঠল, ‘বারি, একটা বিপদ হয়েছে।’
‘বিপদ! কী হয়েছে?’
শ্রবণ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’
বারিধারা চাপা গলায় এবার দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ‘বললাম না ব্যস্ত? দেখা হবে না। কী হয়েছে বলো। চট করে বলবে। নিশ্চয় তুমি তোমার মতো কোনও উদ্ভট বিষয়ে জড়িয়ে পড়েছ।’
শ্রবণ হতাশ গলায় বলল, ‘তাই হয়েছে মনে হয়। আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে ধারা, আমি তোমাকে একটা মেল ফরোয়ার্ড করছি। তুমি দেখে এর অর্থ আমাকে বলো। এখনই বলবে।’
বারিধারা বলল, ‘পাঠাও। তবে এখন কিছু বলতে পারব না। এখন আমি লেখাপড়া করছি। দুদিন পরে আমার ফাইনাল পরীক্ষা। তোমার গলা শুনে মনে হচ্ছে, তেমন কিছু হয়েছে। কিন্তু আমি যদি পরীক্ষায় ফার্স্ট না হতে পারি আমার বিপদ আছে।’
শ্রবণ মুম্বইয়ের মেল বারিধারাকে ফরোয়ার্ড করল। একটা নয়, ইতিমধ্যে আরও দু-দুটো মেল চলে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে—এই আগামী ২৫ তারিখ আমাদের সংস্থার প্রতিষ্ঠাদিবস। ওই দিন আমরা আপনার হাতে পুরস্কার তুলে দিতে চাই। আপনার যাতায়াত এবং আতিথেয়েতার যাবতীয় দায়িত্ব আমাদের। আপনি যদি চান সঙ্গে একজনকে আনতে পারেন। তার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি জানালে আমরা যথাসময়ে প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা করব।’
শ্রবণের মাথা ঘুরছে। গা-হাত-পা ঝিমঝিম করছে। সে তার ডিভান থেকে নেমে বাথরুমে গেল। চোখে মুখে জল ছিটোল। ঘরে ফিরতেই মোবাইল ফোন বেজে উঠল। বারিধারা।
‘বলো বারি। মেলগুলো দেখলে? নিশ্চয় কেউ ঠাট্টা করেছে।’
ওপাশ থেকে বারিধারা শান্ত অথচ কান্না ভেজা গলায় বলল, ‘অভিনন্দন শ্রবণ।’ আমি বলেছিলাম, কাজটা মারাত্মক হয়েছে, তোমাকে এবার আটকাতে পারবে না।’
শ্রবণ বলল, ‘কী বলছ ধারা! ঘটনা সত্যি?’
বারিধারা বোধহয় আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেলল, ‘না, সত্যি নয়। তুমি আগে বাড়িতে সবাইকে বলো। তারা সব থেকে খুশি হবেন।’
শ্রবণ অস্ফুটে কিছু বলতে গেল। বারিধারা এবার প্রায় ধমক দিয়ে বলল, ‘আগে যাও।’
শ্রবণ নীচে নামল।
ছেলের সুখবর শুনে সুঙ্গমাদেবী হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছেন।
মেয়েদের এই এক বিচ্ছিরি স্বভাব। ভালোবাসার জনের ভালো কিছু হলে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। কেউ বারিধারার মতো নিঃশব্দে কাঁদে, কেউ মায়ের মতো হাউমাউ করে।
সুরঙ্গমাদেবী কপালে হাত ঠেকিয়ে বারবার বলতে থাকলেন, ‘সবই ঠাকুরের কৃপা…সবই ঠাকুরের কৃপা…। হ্যাঁ গো, আমি তোমায় বলেছিলাম না, আমার ছোটছেলে একদিন ফার্স্ট হবে? কী গো বলিনি? চুপ করে আছ কেন, বলো?’
দীপ্ততোষবাবু গম্ভীরভাবে বললেন, ‘তুমি যে ফার্স্টের কথা বলতে এটা সে ফার্স্ট নয় সুরঙ্গমা। তুমি লেখাপড়ায় ফার্স্ট হওয়ার কথা বলতে। শ্রবণ লেখাপড়ায় খুবই খারাপ একজন স্টুডেন্ট ছিল।’
সুরঙ্গমাদেবী বললেন, ‘ওই একই হল। ফার্স্ট ফার্স্টই। তার আবার লেখাপড়াই বা কী, আর না লেখাপড়াই বা কী; সবই ঠাকুরের কৃপা।’
দীপ্ততোষবাবু বিরক্ত হয়ে স্ত্রীকে বললেন, ‘একটু চুপ করো। ব্যাপারটা আমাকে বুঝতে দাও।’
সুরঙ্গমাদেবী বললেন, ‘ব্যাপার বুঝে আমার কাজ নেই। তুমি বোঝো। আমি আগে মন্দিরে পুজো দিতে চললাম।’
দীপ্ততোষবাবু খানিকক্ষণ ভুরু কুঁচকে থাকলেন। তারপর ছোটছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘কত টাকা বললে?’
শ্রবণ মাথা নামিয়ে ঢোঁক গিলে বলল, ‘যতদূর জানি এক লক্ষ টাকা।’
শ্রবণের কথা বলার ভঙ্গি দেখে মনে হবে, সে বিরাট কোনও অপরাধ করে ফেলেছে।
দীপ্ততোষবাবু এদিক-ওদিক তাকালেন। সম্ভবত দেখার চেষ্টা করলেন, এমন একটা অবিশ্বাস্য কথা আর কেউ শুনছে কি না। তারপর অবাক গলায় বললেন, ‘তুমি কী এমন কীর্তি করেছ, যাতে তোমাকে এতগুলো টাকা দেওয়া হচ্ছে?’
শ্রবণ মাথা চুলকে বলল, ‘বাবা, আমি একটা গাড়ি…আমি একটা গাড়ির ছবি এঁকেছি…।’
দীপ্ততোষবাবু চোখ বড় করে বললেন, ‘গাড়ির ছবির জন্য এক লক্ষ টাকা!’
শ্রবণ মাথা চুলকে বলল, ‘না, ঠিক গাড়ির ছবি নয়, আমি একটা বিজ্ঞাপনের প্রতিযোগিতায় কনসেপ্ট পাঠিয়েছিলাম। সেটায় আমি ফার্স্ট হয়েছি।’
দীপ্ততোষবাবু বললেন, ‘কী বিজ্ঞাপন?’
‘গাড়ির’। বলে শ্রবণ হাতে-রাখা খাম খুলে ছবিটা বের করে বাবার দিকে এগিয়ে দিল। দীপ্ততোষবাবু অনেকটা সময় নিয়ে ছবিটা দেখলেন। নীচের ক্যাপশনটা পড়লেন। মুখ তুললেন। তিনি একই সঙ্গে খানিকটা হতচকিত, খানিকটা অবিশ্বাসী, আর খানিকটা মুগ্ধ।
‘ওটা তোমার মাথা থেকে বেরিয়েছে?’
শ্রবণ কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বলল, ‘হ্যাঁ, সবটাই আমার। প্রথমে ভেবেছি, তারপর সেটাকে ছবিতে…।’
দীপ্ততোষবাবু বললেন, ‘তুমি কি মনে করো, এতে গাড়িটার বিক্রি বাড়বে? কতগুলো গরিব মানুষের বাক্সপেঁটরা যে গাড়ির ছাদে থাকে, সেই গাড়ি মানুষ কিনবে কেন? মানুষ গাড়ি কেনে সব দিক বিচার করে। গাড়ির বাইরের চেহারা, ভিতরের যন্ত্রপাতি, তার চলবার যোগ্যতা, পরিশ্রমের ক্ষমতা, যাত্রীদের আরামের কথা বিবেচনা করে একজন এতটাকা খরচ করে। তোমার এই বিজ্ঞাপনে তো সেসব কিছুই নেই!’
শ্রবণ এতক্ষণে যেন তার জানা প্রশ্ন পেল। সে বলল, ‘বিজ্ঞাপনের জন্য কেউ গাড়ি কেনে না। বিজ্ঞাপন নজর কাড়ে। বাইরে থেকে নজর কাড়ে। আমি ভেতর থেকে সেই মনোযোগ পেতে চেয়েছি। মানুষের একসঙ্গে থাকবার ইচ্ছেকে দেখাবার চেষ্টা করেছি। তার ওপর…তার ওপর বলবার চেষ্টা করেছি, এই গাড়িটা একটা ভালো গাড়ি…কারণ এটা দিয়ে ভালো কাজ করা যায়… বিপদে-পড়া মানুষকে উদ্ধার করা যায়…।’
দীপ্ততোষবাবু খানিকক্ষণ ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘এদিকে এসো। আমি তোমাকে আশীর্বাদ করব। এতদিন ভেবেছিলাম, তুমি হাবিজাবি কাজ করো। আজকাল ছেলেছোকরারা এসব ছবিটবির নামে আসলে কোনও কাজই করে না। আজ বুঝতে পারছি, ভুল ভাবতাম। কম্পিটিশনে ফার্স্ট হয়েছে বলে নয়, এমন একটা বিষয় তোমার মাথায় এসেছে বলে, পিতা হিসেবে আমি গর্ববোধ করছি। এসো।’
দাদা পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, ‘দেখিস প্রাইজ মানিটা উড়িয়ে দিস না। চাকরির অ্যাপ্লিকেশন করতে গেলে লাগবে। চাকরিবাকরি তো একটা করতে হবে। এক লক্ষ টাকা দিয়ে তো জীবন চলবে না!’
বউদি লাফিয়ে উঠে বলল, ‘ইস তুমি মুম্বই যাবে? কত ফিল্ম স্টার দেখতে পাবে!’
বিকেল হওয়ার মুখে শ্রবণ আরও একটা দারুণ খবর পেল। এবার শ্রবণের মনে হল, সত্যি তার হার্ট অ্যাটাক হবে। কেউ বাঁচাতে পারবে না। বিপদ পরপর আসে, আনন্দ কখনও পরপর আসে না।