☼ প্রচেত গুপ্ত ☼
একটু পরে রোদ উঠবে
পঞ্চাশ
শেখর আজ পার্টি অফিসে যায়নি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই শেখর বুঝতে পেরেছে, শরীর ভালো নেই। গা ম্যাজ ম্যাজ করছে। সম্ভবত জ্বর আসছে। তমসাকে কিছু বলেনি। সে স্কুলে চলে গেছে।
তমসাদের স্কুলে একটা গোলমাল চলছে। অতিরিক্ত খারাপ নম্বর পাওয়ার কারণে হায়ার সেকেণ্ডারি টেস্ট পরীক্ষায় কয়েকজন মেয়েকে আটকানো হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, আবার পরীক্ষা দিতে হবে। পাস করলে তবেই ফাইনাল পরীক্ষায় বসবার সুযোগ মিলবে। এরপরই ফেল করা মেয়েদের বাড়ি থেকে গার্জেনরা এসে স্কুলে গোলমাল করেছে। তারা এক দুপুরে জোর করে হেডমিসট্রেসের ঘরে ঢোকে। হুমকি দেয়। গালমন্দ করে। এমনকী টিচার্স রুমের সামনে দাঁড়িয়েও চিৎকার করে। বলে, সব মেয়েকে টেস্ট পরীক্ষায় পাস করাতে হবে। নইলে স্কুল ভাঙচুর হবে। শিক্ষিকাদের আটকে রাখা হবে।
জানা গেছে, এই গোলমালের পিছনে রয়েছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী। সে-ই এই গার্জেনদের জড়ো করে স্কুলে পাঠিয়েছে। সঙ্গে কিছু গুণ্ডা। লোকটার এই স্কুলের ওপর বহুদিনের রাগ। ইচ্ছেমতো মেয়েদের ভর্তি করতে পারে না। নিজের লোকদের পিওন, দারোয়ানের চাকরি দিতে পারে না। স্কুলের জিনিসপত্র কেনবার বরাত আদায় করতে পারে না। গোলমালের পর হেডমিসট্রেস তাকে ফোন করেছিলেন। লোকটা ফোনই ধরেনি। হেডমিসট্রেস ভয় পেয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, ফেল করা মেয়েদের ছেড়ে দেওয়া হোক। তারা হায়ার সেকেণ্ডারি পরীক্ষায় খারাপ করলে নিজেরা বুঝবে। টিচারদের বেশিরভাগই বেঁকে বসেছে। তারা বলছে, পাস-ফেলটা বড় কথা নয়, কিন্তু আজ হুমকি শুনে নরম হলে, আগামী দিনেও সবসময় নরম হতে হবে। যে-কোনও বিষয়ে বাইরের গুণ্ডারা এসে গোলমাল পাকাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ টিচারদের চাপে হেডমিসট্রেস আবার পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন। রাখতে বাধ্য হয়েছেন। গতকাল নতুন পরীক্ষার দিনক্ষণ জানিয়ে নোটিস পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আজ আবার সেইসব গুণ্ডা গার্জেনরা গোলমাল করতে স্কুলে আসবে। শিক্ষিকারা সবাই আজ স্কুলে যাচ্ছে। তমসা তো যাবেই। সে এই ঘটনায় শিক্ষিকাদের মধ্যে বেশি সামনে এগিয়ে গেছে। গুণ্ডামি মোকাবিলা করায় সে সব থেকে কড়া। তাকে বড়দি ডেকেছিলেন।
‘তমসা, মনে রেখো মেয়েদের স্কুল…সত্যি যদি ওরা গোলমাল করে…সিকিউরিটির প্রশ্ন এসে যাচ্ছে…মাত্র এগারোটা মেয়ের জন্য…তার থেকে অ্যালাও করে দেওয়াটাই ভালো নয় কি?’
তমসা সাধারণত হেডমিসট্রেসের সঙ্গে একা কোনও আলোচনা করে না। সিনিয়র কাউকে নিয়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনায় সে উত্তেজিত। তাই একাই গিয়েছিল।
‘বড়দি, মেয়েদের স্কুল বলেই তো আমাদের বেশি করে রুখে দাঁড়ানো দরকার। এরপর তো ওরা রোজ ঝামেলা করতে আসবে। তা ছাড়া, সিকিউরিটির সঙ্গে আমাদের একটা সম্মান আছে।’
বড়দি বলেছিলেন, ‘মাথা ঠাণ্ডা করো তমসা। কোনও কোনও সময় কমপ্রাোমাইজ করাটা অসম্মানের নয়। বরং বুদ্ধিমানের। ওদের সঙ্গে টাকা, গুণ্ডা আছে। আমাদের সেসব কিছু নেই।’
তমসা বলল, ‘এক্ষেত্রে কমপ্রাোমাইজ করা মানে, হাতজোড় করা। করতে পারেন। আপনার ইচ্ছে। তবে বাকি দিনগুলো কিন্তু হাতজোড় করেই আপনাকে এই স্কুলে চাকরি করতে হবে। সেটা কি আপনি পারবেন?’
‘তুমি কি তাহলে কনফ্রনটেশনেই যেতে বলছ তমসা?’
তমসা বলে, ‘কনফ্রনটেশনের কী আছে? আমরা আমাদের নিয়মে চলব। সত্যি তো আমরা মেয়েগুলোর কেরিয়ার নষ্ট করতে চাইছি না। ওরা তো পরীক্ষায় বসবেই। একটু সতর্ক করে দিতে চাইছি মাত্র। এটা ওদের ভালোর জন্য।’
বড়দি বললেন, ‘ওদের বাড়ির লোক বুঝতে চাইছে না।’
তমসা হেসে বলল, ‘এটা ঠিক নয় বড়দি। ওদের ভুল বোঝানো হচ্ছে।
বড়দি বললেন, ‘তাহলে?’
তমসা বলল, ‘তাহলে আর কী? আপনার সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে। নড়চড় হবে না। যা ঘটবার ঘটবে। সেরকম হলে আমরা স্কুলের সব গার্জেনের কাছে অ্যাপিল করব। তারা কী চান জানতে চাইব। তবে এরা বড় কোনও গোলমাল পাকানোর লোক নয়। সে সাহস বা জোর তাদের নেই।’
তমসা খানিকটা টেনশনে আছে। সত্যি ঝমেলার কিছু হলে দায়িত্ব তার ঘাড়ে পড়বে। বড়দি সবার মধ্যে থেকে তার দিকেই বেশি করে আঙুল তুলবেন। বলবেন, তমসাই তাকে সবথেকে বেশি চাপ দিয়েছিল। নইলে এত বড় ঝামেলা হতই না। সকাল থেকেই তমসা খানিকটা ব্যস্ত ছিল। একে ওকে ফোন করছিল। থানাতেও কথা বলেছে। থানা খুব একটা গা করেনি। বলেছে, ঝামেলা হলে হেডমিসট্রেসকে জানাতে হবে। আগে থেকে লোক পাঠানো অসম্ভব।
তমসা এতেও চিন্তিত। প্রভাবশালী লোকটা আগে থেকে পুলিশকে চেপে দেয়নি তো? হতে পারে।
এই অবস্থায় শেখর শরীরের কথা বলে তাকে আরও টেনশনে ফেলতে চায়নি। ছেলেও স্কুলে। শেখর একটা বই নিয়ে বিছানায় শুয়েছে। খটোমটো বই। একটু খটোমটো নয়, বেশি খটমট।অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন
বইয়ের নাম থিওরি অব রিলেটিভিটি। লেখকের নাম বার্ট্রান্ড রাসেল। এক ধরনের ইন্টেলেকচুয়াল মানুষ আছে, যারা কথায় কথায় বলে ‘সবই আপেক্ষিক’। এই কথা বলে তারা নিজেদের পণ্ডিত এবং দার্শনিক প্রমাণ করতে চেষ্টা করে। কথাটা অর্থহীন। এই দুনিয়ার সবই যদি আপেক্ষিক হত, তাহলে আপেক্ষিকতা প্রমাণ করার প্রয়োজন হত না। তাই নিয়ে এত আলোচনাও থাকত না। অধিবিদ্যক অসম্ভব, যাকে বলা হয় মেটাফিজিক্যাল অ্যাবসার্ডিটিস, তার মধ্যে না গিয়েও বলা যায় জগতের সব কিছুই একজন পর্যবেক্ষক সাপেক্ষ আপেক্ষিক। কিন্তু মজার বিষয় হল, থিওরি অব রিলেটিভিটি, যাকে বাংলায় বলা যায় অপেক্ষবাদ, সে কিন্তু এই তত্ব মেনে নেয়নি। থিওরি অব রিলেটিভিটি প্রমাণ করবার চেষ্টা করেছে, যা আপেক্ষিক সেটা বাদ দিয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত পৌঁছতে সে সিদ্ধান্ত কখনওই কোনও পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে না। এই সিদ্ধান্তকে বলা হয় সেটমেন্ট। এই থিওরিতে দেখা গিয়েছে, একজন পর্যবেক্ষক যা দেখতে পান তার ওপরে এইসব পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাব আগে যা ভাবা গিয়েছিল তার থেকে বেশি। পারিপার্শ্বিকের এই ক্রিয়া কীভাবে সম্পূর্ণ দূর করা যায় থিওরি অব রিলেটিভিটি সেটাই দেখায়। এই থিওরিকে বিস্ময়কর যা কিছু আছে এটাই তার উৎস।
শেখর বইটা উলটো করে বিছানা থেকে নামল। টেবিলের ওপর ফ্লাস্ক ভর্তি চা রয়েছে। তমসাই করে রেখেছে। রোজই করে রাখে। শেখর প্রায়ই বারণ করে। সামান্য চা সে কি নিজে তৈরি করে নিতে পারে না? স্কুলের তাড়াহুড়োর মধ্যে আবার চা তৈরির ঝামেলা কেন? তমসা শোনে না। কিছু বলেও না। চা করে যায়। পাশে কাপ। আজকাল অনেক সুন্দর দেখতে কাপ পাওয়া যায়। শেখরের জন্য একটা ঘন লাল কাপ কিনেছে। শেখর লাল কাপে আরাম করে চুমুক দিল। চা যে সবসময় খুব ভালো হয়েছে তা নয়। তাড়াহুড়োতে গোলমাল করে তমসা। কখনও লিকার কড়া, কখনও চিনি দেয় না। তারপরেও শেখর খুব তৃপ্তি পায়। চায়ের জন্য নয়, তমসাকে সঙ্গে পাওয়ার জন্য। মনে হয়, তমসা সবসময় কাজে থাকবার জন্যই এই চাটুকু বানিয়ে দিয়ে গেছে।
চায়ের কাপ নিয়ে শেখর আবার ফিরে এল বইয়ের কাছে।
একটা ঘটনা যখন দুজন পর্যবেক্ষক অনুভব করেন, তখন তাদের অনুভূতির মধ্যে যেমন কিছু মিল থাকে, কিছু অমিলও থাকে। রোজকার জীবনে এই পার্থক্য চোখে পড়ে না। পড়বার প্রয়োজনও হয় না। কিন্তু পদার্থবিদ্যা তো রোজকার জীবন নয়। শুধু পদার্থবিদ্যা নয়, মনস্তত্বও তাই। এরা এই অনুভূতির পার্থক্য বিশেষভাবে নজর করে। কেন এমন হয়? ঘটনা একই। তারপরেও অনুভূতি কেন পৃথক হবে?
এর কারণ তিনটি। পর্যবেক্ষকদের বুদ্ধিবৃত্তি, ভাবনা, কল্পনা আলাদা, তাদের ইন্দ্রিয়গুলির বোধ আলাদা এবং তাদের ভৌত পরিস্থিতি আলাদা। ভৌত পরিস্থিতির অর্থ মূলত বস্তু হিসেবে যখন বিবেচনা করা হবে। ধরা যাক, আল্পস পর্বতের ওপর দুজন উঠেছেন। একজন সেখানকার সৌন্দর্য, রূপ, প্রকৃতি দেখবেন, অন্যজন হয়তো দেখবেন জলপ্রপাত থেকে কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এই পার্থক্য মনের। যদিও থিওরি অব রিলেটিভিটি শরীর বা মন অনুষঙ্গ নিয়ে কাজ করে না। মাথাও ঘামায় না। তার সবটাই ভৌত পার্থক্য। শুদ্ধ ভৌত। যাকে বলে ‘ফিজিকাল চেঞ্জ’। পর্যবেক্ষকদের বদলে যদি ক্যামেরা বা শব্দ রেকর্ড করবার যন্ত্র রাখা যায়, তবেই এই ভৌত পার্থক্য বোঝা যাবে। জীবের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। ধরা যাক, দুজন মানুষ তৃতীয় একজনের কথা শুনছে। যে কাছে থাকবে সে শুনবে জোরে। কোনও বস্তুর পতনের ক্ষেত্রেও দুজন দুই কোণ থেকে বিচার করবে। যন্ত্রের বেলায় তা হবে সমভাবে। পার্থক্য সমভাবে নথিভুক্ত করা যাবে। পর্যবেক্ষকদের বৈশিষ্ট্য ধরা পড়বে না।
শেখরের অল্প শীত শীত করছে। জ্বরটা এসে গেল মনে হয়। জ্বর এলে ঝামেলা আছে। অনেকগুলো কাজ আছে। কলেজ ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটা সংগঠন করবার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সংগঠনে থাকবে যারা মিটিং মিছিল করে না, যারা নিজের কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত এবং যারা কম্পিউটার, মোবাইল ফোন নিয়ে থাকতে ভালোবাসে, ওয়াটসঅ্যাপ, মেল, টুইটারে স্বচ্ছন্দ। কিছুদিন আগে পর্যন্ত মনে হত, রাজনীতি কি শুধুই ফেসবুকে আটকে থাকবে? অর্চিনকে একসময় এই বিষয়ে বুঝিয়েছিল। যারা শুধু ফেসবুকে ‘বিপ্লব’ করে তাদের সমালোচনা করেছে। কিন্তু এখন সেই মনোভাব বদলাচ্ছে। পার্টিও বদলাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। সে অন্যকে প্রভাবিত করতে পারছে। তাহলে সমাজ বদলের কাজে তাকে ব্যবহার করা হবে না কেন? অবশ্যই করতে হবে। পার্টির অনুমোদনও আছে। তবে সমস্যা একটাই, ওয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ফেসবুক এখন মূলত ব্যক্তি আক্রমণ, চুটকি, কেচ্ছায় মেতে রয়েছে। যেটুকু পছন্দ সবই ইস্যুভিত্তিক। ঘটনা ঘটলে তাকে শাবাশ বলা। এর মধ্যে একটা হিরোইজমও আছে। প্রতিবাদে, সমর্থনে নিজেকে ‘বড়’ করে দেখানোর চেষ্টা। এখান থেকে ছেলেমেয়েদের বের করে আনতে হবে। তার জন্য রাজনৈতিক ম্যাচিওরিটি তৈরি করা চাই। শুধু ইস্যু নয়, সঠিক পথের কথা নিজে থেকেই বলতে হবে। শুধু মধ্যবিত্তের ভালো লাগা, মন্দ লাগা না, কৃষক সমস্যা, শ্রমিক সমস্যা, যুব সমস্যার কথা বুঝতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা জানতে হবে। ওয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে সেসব কথা প্রচার করতে হবে। এই জন্যই শেখর তার এলাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটা সংগঠন তৈরির কথা ভেবেছে। পার্টির কাছে নির্দিষ্টভাবে অনুমোদন চেয়ে পাঠিয়েছে। সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি পার্টির কোনও যোগ থাকবে না। আড়াল থেকে কন্ট্রোল থাকবে। অর্চিন এখানে থাকলে নতুন সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া যেত। পুলিশের ঝামেলা-টামেলা এড়িয়ে আড়ালে থেকে কাজটা করতে পারত। নিজের বয়সি শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলত। সে তো কোনও কথা শুনল না।
শেখর বার্ট্রান্ড রাসেলের পাতা ওলটাল।
আগে জানতে হবে পদার্থবিদ্যার সঠিক উদ্দেশ্য কী? বস্তুজগতে বাস্তবে কী ঘটছে, তার খবরাখবর দেওয়াটাই পদার্থবিদ্যার মূল কাজ। একাধিক বিচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষকের ব্যক্তিগত অনুভূতির সম্পর্কে খবর জোগাড় করাটা তার কাজ নয়। পদার্থবিদ্যাকে ভৌত পদ্ধতির সেইসব অবয়ব নিয়ে কাজ করতে হবে যে অবয়বগুলি সব পর্যবেক্ষকের জন্যই এক। কারণ একমাত্র এই অবয়বগুলিতেই ভৌত ঘটনার নিজেস্ব বলে ভাবা যায়। এর জন্য দরকার, কোনও ঘটনা একজন পর্যবেক্ষকের কাছে কীভাবে আসছে, আরেকজনের কাছে কীভাবে আসছে, সেখান থেকে সরে যাওয়া। আসলে প্রয়োজন ঘটনার বিধিগুলি অভিন্ন হওয়া।
শেখর বই বন্ধ করল। তবে কি দুনিয়ার সব কিছু ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ দিয়ে বিচার করা যায়? সব কিছু না হলেও, বেশিটাই যায়। যদি কোনও ঘটনাকে ‘বস্তু’ হিসেবে না দেখা হয়, তবে তার মূল্যায়ন হবে অসম্পূর্ণ। কখনও কখনও ভুলও বটে। মানুষের দুঃখ, অভাব, যন্ত্রণারও একটা ফিজিক্যাল চেহারা আছে। ভৌত অবস্থান। তাকে সরাতে হয়। কখনও বিপ্লবে, কখনও ভালোবেসে। শুধু মন নয়, জীবনকে পদার্থবিদ্যার বিধি দিয়েও ভাবতে হয়।
শেখর গায়ে চাদর টানল। আপশোস হচ্ছে, ফিজিক্স নিয়ে লেখাপড়া করলে রিলেটিভিটি তত্ব ঠিকমতো বোঝা যেত। শুধু ফিজিক্স নয়, দর্শনও জানতে হবে। জীবনে কত কিছু জানবার বাকি রয়ে গেল। রাসেল বোঝবার জন্য কোনও মাস্টারের কাছে গেলে কেমন হয়? নাকি জীবনই মাস্টার? মাস্টার যারা চারপাশে আছে তারাও। যেমন অর্চিন।
শীত করছে। জ্বর বাড়ছে। শেখর গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়েও পড়ল একসময়।
বিকেলে তমসা এসে জানাল, তাদের স্কুলে কোনও গোলমাল হয়নি। বড়দি পরীক্ষার নতুন রুটিন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা মেয়েরা স্কুলের ভিতরে বাজি ফাটিয়েছে।
তমসা বলল, ‘ছি ছি। স্কুলে আমার মাথা হেঁট হয়ে গেল।’
শেখর শুকনো হেসে বলল, ‘শুধু মন দিয়ে বিচার করলেই হবে না। ঘটনার অবস্থান বিচার করতে হবে তমসা। থিওরি অব রিলেটিভিটি সেই কথাই বলছে।’