» » সপ্তম কিস্তি

বর্ণাকার

প্রচেত গুপ্ত

একটু পরে রোদ উঠবে

চৌষট্টি

ঋষা অফিসে বসে আছে। তার চোখ মুখ থমথম করছে। কিছুদিন হল ঋষা এই চাকরিটা করছে। খুব বড় কিছু নয়, আবার একেবারে ছোটও নয়। একটা এনজিও অফিসে কাজ। কৃষ্ণকলি এই কাজটা তাকে জোগাড় করে দিয়েছে।

‘বাড়িতে বসে না থেকে কাজটা কর না।’

ঋষা বলেছিল, ‘দুর, আমার চাকরিবাকরি করতে ভালো লাগে না।’

কৃষ্ণকলি মুখ বেঁকিয়ে বলেছিল, ‘কেন? তুই কোন রাজনন্দিনী যে চাকরি করতে ভালো লাগে না? নাকি বাপের রাজত্ব আছে? খাজনার টাকায় খাস?’

ঋষা আড়মোড়া ভেঙে বলেছিল, ‘এই তো সবে ইউনিভার্সিটির পাট চুকোলাম। এখন ক’টা দিন বিশ্রাম নিই।’

কৃষ্ণকলি রাগ করা গলায় বলল, ‘বিশ্রাম নিই বলছিস কেন? বল, ঘরে বসে, লিটল ম্যাগাজিন নামক একটা অখাদ্য জিনিসের পিছনে সময় নষ্ট করি। হাবিজাবি কিছু কবিতা লিখি। তাই তো?’

ঋষা খাটের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে বন্ধুর দিকে মিটিমিটি হেসেছিল। বলেছিল, ‘কবিতার ওপর তোর এত রাগ কেন কৃষ্ণ? লিখতে পারিস না বলে?’

কৃষ্ণকলি ঠোঁট উলটে বলেছিল, ‘বয়ে গেছে আমার! কবিতা বাঙালি জাতিটাকে ভোগে পাঠিয়েছে। কবিতা লেখা মানে কাজ না করবার ধান্দা। একটা অলস জাতি তৈরি হয়েছে। সবার পিছনে পড়ে আছে।’

ঋষা আরও মিটিমিটি হেসে বলল, ‘তাহলে বলছিস রবীন্দ্রনাথ না জন্মালে বাঙালির মঙ্গল হত?’

কৃষ্ণকলি এবার তেড়েফুড়ে উঠে বলল, ‘মাঝে মাঝে তো তাই মনে হয়। সবাই নিজেকে রবীন্দ্রনাথ ভাবে। বানান ঠিক করে দু-ছত্র লিখতে পারে না এদিকে রবীন্দ্রনাথের মতো দাড়ি রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মারতে হয় ঠাঁটিয়ে চড়।’

ঋষা  বালিশ আকঁড়ে ধরে বলে, ‘আহা, ভালো-মন্দ যাই হোক, কবিতা লিখছে তো। চুরি তো করছে না।’ কৃষ্ণকলি ভেংচি কেটে বলে, ‘আহা রে ধন্য করছে। কাজকর্ম না করে উনি কবিতা লিখছেন। লক্ষ লক্ষ ম্যান পাওয়ার নষ্ট। সারা দুনিয়ার অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের লক্ষ্য কাজ করব। আর এখানে দেখ, কী করো? না কবিতা লিখি।’

ঋষা এবার চিৎ হল। বলল, ‘তাহলে বলছিস কবিতা নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত? কবিতা লিখলেই ধরে ধরে জেলে পোরা ভালো?’

কৃষ্ণকলি জোরের সঙ্গে বলল, ‘অবশ্যই। বাঙালির এই অসুখ ছাড়াবার জন্য গভর্মেন্টের কড়া স্টেপ নেওয়া দরকার। কবিগুলোকে ধরে তিনটে করে কবিতা লিখতে দেওয়া হোক। পরীক্ষা করে দেখা হবে সেগুলো। কবিতা হয়েছে কিনা। ফেল করলেই পাথর ভাঙতে পাঠিয়ে দাও। কবিগিরি ছুটে যাবে।’

ঋষা হাসতে হাসতে উঠে বসল। বলল, ‘ভাগ্যিস কৃষ্ণ তুই গভর্মেন্টের কেউ নোস। তাহলে কবিদের বিরাট ঝামেলা হত।’

কৃষ্ণকলি দাঁতে দাঁতে ঘষে বলল, ‘আমি এমনিই ঝামেলা করে ছাড়ব। আমাকে গভমেন্টের কেউ হতে হবে না। এখন যেমন তোর সঙ্গে ঝামেলা করব। তোকে কাজে পাঠাব।’

ঋষা বলল, ‘কী কাজ?’

কৃষ্ণকলি বলল, ‘একটা এন জি ও। ভালো ছেলেমেয়ে খুঁজছে। আমার এক দিদি ওখানে আছে। আমাকে বলল, দেখ না, সিরিয়াস, বুদ্ধিমতী যদি কাউকে পাস।’

ঋষা বলল, ‘রক্ষে কর। এনজিও মানে ঘুরে ঘুরে জনসেবা তো? আমি নেই।’

কৃষ্ণকলি বলল, ‘ঘুরে ঘুরে নয়। অফিসে বসতে হবে। এরা খুব ভালো কাজ করে। খুব বেশি টাকা হয় তো দেবে না, আবার একেবারে খারাপও নয়। তোর এই পিজি খরচ অনায়াসে উঠে যাবে।’

ঋষা বলল, ‘কাজটা তুই নিচ্ছিস না কেন?’

কৃষ্ণকলি বলল, ‘গাধার মতো কথা বলছিস কেন? কবিতা লিখে লিখে বুদ্ধিসুদ্ধি একেবারে গেছে দেখছি। আমার ফাইনাল ইয়ার চলছে না? তুই কি বলছিস সে সব ছেড়ে চাকরি করব?’

ঋষা তারপর দুটো দিন ভেবেছে। তার ইচ্ছে আছে পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর পর নেটের জন্য প্রিপারেশন শুরু করবে। রিসার্চও করবে। সে কলেজে পড়াতে চায়। তার জন্য অনেকটা সময় লাগবে। তার আগে এন জি ও-র কাজটা কদিন করে দেখলে ক্ষতি কী? হাতে কিছু টাকা পয়সা পেলে ভালোই হয়। অর্চিনকে সাহায্য করা যাবে। ওর মায়ের কেস চালানোর টাকা পয়সা অবশ্য সব সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস দিচ্ছে। কিন্তু অর্চিনের নিজের জন্যও তো টাকা পয়সা দরকার। যদিও অর্চিন তার উপার্জনের টাকা নেবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। তা থাক। জোর করতে হবে। নিজে উপার্জন না করলে জোরও তো করা যায় না। অবশ্য অর্চিন সুন্দরবনে একটা ছোটখাটো কাজ জুটিয়ে নিয়েছে। ওখানকার একটা কো-অপারেটিভে হিসেব দেখে। মাছের কো-অপারেটিভ। পাকা কাজ নয়। সপ্তাহে তিনদিন যেতে হয়। ওরা অর্চিনের বিষয় তেমন কিছুই জানেন না।

কৃষ্ণকলি ওর দিদির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিল। ঋষা অফিসে গিয়ে দেখল, সত্যি কাজটা ভালো। এন জি ও-র নাম ‘উওম্যান হেলথ’। গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরিব মেয়েদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে। এর জন্য এদের বড় টিম আছে। তারা যে তথ্য পায় সেগুলো অফিসে এনে রিপোর্ট তৈরি হয়। রিপোর্ট পাঠানো হয় হু, ইউনেসকো ধরনের বড় বড় সংগঠনে। এই সব সংগঠন সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য টাকা অনুমোদন করে। কিন্তু কোন প্রকল্পে, কাকে টাকা পাঠানো হবে তার জন্য আগে ভালো করে খোঁজ খবর নেয়। শুধু সরকারের পাঠানো তথ্যের ওপর নির্ভর করে না। তথ্য অনেক সময়ই অসম্পূর্ণ, পক্ষপাতদুষ্ট,  জল মেশানো হয়। তাই হু, ইউনেসকো বহু এন জিও-র সঙ্গে ব্যবস্থা করেছে। তাদের কাছ থেকে রিপোর্ট নেয়। ‘উওম্যান হেলথ’ তেমনই একটা এন জি ও। ঋষার কাজ হল, ডেটা থেকে রিপোর্টের একটা অংশ তৈরি করে দেওয়া। সাতদিন কাজ করেই ঋষার সামনে একটা অন্য জগৎ খুলে গেল। সেই জগৎ যথেষ্ট দুঃখের। গ্রামগঞ্জের মেয়েরা শারীরিক ভাবে যে কত ধরনের সমস্যার মধ্যে আছে তার কোনও শেষ নেই! অপুষ্টি একটা গভীর সমস্যা। এর সঙ্গে তো মা হওয়ার সময়কার সমস্যা, বিভিন্ন অসুখে চিকিৎসা না পাবার সমস্যা, রক্তাল্পতার সমস্যা তো রয়েছেই। ঋষার যেমন দুঃখ হল, তেমন কাজ করবার জন্য মনে জোরও পেল। মনে হতে লাগল, এই কাজটা আর পাঁচটা চাকরির মতো শুধু উপার্জন নন, তার ওপরেও আরও কিছু আছে।

ঋষার কাজের উৎসাহে সবথেকে খুশি কৃষ্ণকলি।

‘শালা, আমার ওপর কৃতজ্ঞ থাকবি। মনে রাখবি, আমার মতো একজন পিজি পার্টনার পেয়েছিলি। আমিই না তোকে জোর জবরদস্তি করে ওখানে পাঠালাম। শালা, মুঝে ইয়াদ রাখোগি।’

ঋষা হেসে বলল, ‘শালা নয়, শালী বল। প্রথম মাসের মাইনে পেলে কী নিবি বল? কবিতার বই দেব?’

কৃষ্ণকলি বলল, ‘কবিতার বই! মারব একটা চড়। কবিতা তুমি মাথায় তুলে রাখো। আমাকে রেস্তোরাঁয় খাওয়াবি।’

ঋষা হেসে বলল, ‘সে না হয় খাওয়াব। কিন্তু কবিতার বই তোকে আমি দেবই দেব।’

এরপর কৃষ্ণকলি এগিয়ে এসে পিছন থেকে ঋষাকে জড়িয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে হাসি হাসি মুখে বলে, ‘এই একটা মজার কাণ্ড হয়েছে। আমার মনে হয় প্রেম হয়েছে।’

ঋষা নির্লিপ্ত গলায় বলে, ‘হতেই পারে। তোর প্রেম হওয়াটা নতুন কিছু নয়। এটা কত নম্বর হল?’

কৃষ্ণকলি বান্ধবীকে ছেড়ে দিয়ে বলল, ‘কেন, হিংসে হচ্ছে? আমি কি তোমার মতো ননী যে একজনকেই পেয়ে গলে যাব? ওগো আমার প্রাণসখা গো বলে যাত্রা দলের সখী হয়ে থাকব?’

ঋষা মুচকি হেসে বলল, ‘আহা, রাগ করছিস কেন? আমি তো খারাপ কিছু বলিনি, শুধু বলছি এটা তোর কত নম্বর প্রেম? আমি যতদিন দেখছি, তাতে হিসেব করলে মিনিয়াম এগারো বা বারো হবে। হবে না? নাকি আর দু-একটা বেশি?’

কথা শেষ করে খিলখিল করে হেসে উঠল ঋষা। কৃষ্ণকলি বলল, ‘বারো হোক, একশো বারো হোক, তোর কী?’

ঋষা সিরিয়াস হবার ভান করে বলল, ‘আমার কিছু নয়। আচ্ছা, বলো এবারের প্রেমিকটি কে শুনি। তুই ডায়েরিতে লিখে রাখিস তো কৃষ্ণ? নইলে গুলিয়ে যাবে।’

ঋষা এবার আরও জোরে হেসে উঠল।

কৃষ্ণকলি বলল, ‘যা বলব না।’

ঋষা কৃষ্ণকলিকে চেপে ধরে বলল, ‘আহা ননীর বন্ধু ফণী, রাগ করে না বাবু। নামটা শুনেই ফেলি।’

কৃষ্ণকলির চোখ বড় করে বলল, ‘নামটা আসল কথা নয়। ছেলে কী করে শুনলে চমকে যাবি ঋষা। সেন্সও হারাতে পারিস।’

ঋষা বলল, ‘সে কী রে! বল, বল। শুনে ধড়াস করে অজ্ঞান হয়ে পড়ি।’

কৃষ্ণকলি চোখ নাচিয়ে বলল, ‘এই ছেলে কবিতা লেখে। শুধু কবিতা লেখে না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো দাড়িও আছে।’

ঋষা সত্যি সত্যি চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল।

‘ঠাট্টা করছিস?’

কৃষ্ণকলি বলল, ‘ঠাট্টা না। ছেলের একটা বইও আছে। কবিতার বই। বইয়ের নাম…বইয়ের নাম…বইয়ের নাম…যাঃ নামটা ভুলে গেলাম।’

ঋষা বলল, ‘আর ইউ সিরিয়াস? নাকি বাকি প্রেমগুলোর মতো এটাও খুব তাড়াতাড়ি গণ কেস হবে?’

কৃষ্ণকলি নাটুকে কায়দায় বলল, ‘ভবিষ্যতে কী হবে তা জানি না বৎস্য। তবে এখন তো ঘটনা সিরিয়াসই মনে হচ্ছে।’

ঋষা নিজের বুকে হাত রেখে বলল, ‘কেমন ধড়াস ধড়াস করছে। সাসপেন্সে না রেখে এবার সবটা বলে ফেল। সত্যি সত্যি কিন্তু সেন্স হারাব। এমন একজন কবিতাবিরোধী কন্যার সঙ্গে কবির প্রেম!’

ঘটনা গুছিয়ে বলল কৃষ্ণকলি।

ক’দিন আগে কলেজ স্ট্রিটে অটো ধরবে বলে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ কথা কাটাকাটি শুনে পিছনে ফিরে দেখে পাঞ্জাবি পরা, দাঁড়ি গোঁফওয়ালা এক যুবক এক ট্যাক্সিওয়ালাকে শান্ত ভাবে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে। ট্যাক্সি ড্রাইভার দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে এসেছে। হাত-পা ছুড়ে ছেলেটির দিকে তেড়ে যাচ্ছে। পথের ঝগড়ায় মন দেওয়ার মতো সময় কৃষ্ণকলির ছিল না। সে দেয়ওনি। হঠাৎই ট্যাক্সি চালকের চিৎকার কানে এলও।

‘আরে ভাই, কবিতার বই নিয়ে আমি কী করব? গিলব? তোমার কবিতা দিয়ে আমার গাড়ি চলবে? যদি চলে, দাও পাতাগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে তেলের ট্যাঙ্কে ফেলে দিই।’

কোনও ট্যাক্সিচালকের মুখে এই ডায়লগ যে কারোরই জন্যই ইন্টারেস্টিং। সে ঝগড়ার সময়েই হোক, ভাব ভালোবাসার সময়েই হোক। কৃষ্ণকলি এগিয়ে যায় এবং ঘটনা জানতে পারে।

এই ছেলে ট্যাক্সি করে বরানগর থেকে কলেজস্ট্রিটে এসেছে। নামবার সময় জানতে পারে, সে মানিব্যাগটি আনতে ভুলে গেছে। কাঁধের ঝোলা ঝেড়ে ঘেঁটে একটা পয়সাও পায় না। পায় নিজের লেখা কবিতার বই। বাধ্য হয়ে ভাড়ার বদলে সে তার কবিতার বইটি ট্যাক্সি চালককে দিতে চাইছে।

কৃষ্ণকলির একই সঙ্গে মজা লাগে এবং যুবকটির প্রতি মায়া হয়। কৃষ্ণকলিকে এগিয়ে আসতে দেখে ট্যাক্সিচালক আরও বীরবিক্রমে চেঁচামিচি শুরু করে। ছেলেটি লজ্জিত হয়ে কুঁকড়ে যেতে থাকে। তার লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিই বলে দিচ্ছিল সত্যি সে টাকা পয়সা নিয়ে বেরোতে ভুলে গেছে।

কৃষ্ণকলি ড্রাইভারকে কড়া গলায় বলে, ‘থামুন। অনেক হয়েছে। আমি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি। কত হয়েছে বলুন।’

অচেনা যুবকটি এতটাই অবাক হয় যে কী করবে কী বলবে বুঝতে পারে না। কৃষ্ণকলি ভাড়া মিটিয়ে দিলে ট্যাক্সিচালক গজগজ করতে করতে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। কৃষ্ণকলি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলে, ‘যান। এরপর থেকে মানিব্যাগ সঙ্গে রাখবেন। শুধু কবিতা নিয়ে কলকাতার পথে বেরোনোও যায় না। কলকাতা অত কবিতাপ্রেমী নয়। পথে টাকা পয়সাও লাগে।’

ছেলেটি গদগদ গলায় বলে, ‘আমি যে কীভাবে কৃতজ্ঞতা জানাব…আমি লোকটাকে কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না…যদি কিছু মনে না করেন, এই বইটা কি আপনাকে দিতে পারি ম্যাডাম?’

কৃষ্ণকলি আর পারেনি। হেসে ফেলে। বলে ‘আচ্ছা দিন।’

প্রেমের পিছনে এটাই ঘটনা।

ঋষা চোখ কপালে তুলে বলে, ‘এ তো কবিতার মতো রোমাঞ্চকর! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। ছেলের নাম কী?’

কৃষ্ণকলি হাসিমুখে চুকচুক আওয়াজ করে বলল, ‘এখন বলব না। যেদিন আমাকে খাওয়াবি সেদিন কবিকেও নিয়ে আসব। আলাপ করিয়ে দেব। হাঁদাটা ছেলে ভালো। দেখবি, তোকেও বই দেবে।’

ঋষা বান্ধবীর গাল টিপে বলল, ‘আচ্ছা, তাই হবে।’

ঋষা অফিসে কামাই করে না। আজ বৃষ্টির মধ্যেও এসেছে। কয়েকজনের ডেটা নিয়ে আসবার কথা। অনেক দূর দূর থেকে আসে। তাকে না পেলে ফিরে যেতে হবে। তবে আজ এসেছিল মাত্র একজন। ঋষাকে কাজ বুঝিয়ে, কথা বলে চলে গেছে। তারপরই চোখমুখ থমথমে করে ঋষা বসে আছে। তার কান্না পাচ্ছে। সে শক্ত মেয়ে বলে কাঁদতে পারছে না। টেবিলে ফেলে রাখা মোবাইল ফোনটা নিতে গিয়ে হাত সরিয়ে নিল।