» » সপ্তম কিস্তি

বর্ণাকার

প্রচেত গুপ্ত

একটু পরে রোদ উঠবে

তেষট্টি

ডিয়ার বারিধারা,

আমাকে কি আপনার মনে আছে?

যদি মনে না থাকে তা হলে গলা জড়িয়ে একটা চুমু পাবেন। আর যদি থাকে তা হলে পাবেন চাঁটি। এবার বলুন ম্যাডাম, কোনটা আপনার চাই? চুমু না চাঁটি? অবশ্য আমার চুমু আপনার মোটেও পছন্দ হবে না। শ্রবণের চুমু পেয়ে আপনার স্বভাব অতিশয় খারাপ হয়ে গেছে। অন্য কারও চুমু সইবে না। খ্যাসটা মার্কা লাগবে। তার ওপর মেয়েমানুষের চুমু। ছ্যা।

কীরে বারিধারা আমার মুখে চুমুর কথা শুনে অবাক লাগছে? হি হি। ঠিক করেছি, এই চিঠি লিখতে লিখতে যখনই আমার হাসি পাবে, অমনি আমি সেই হাসির কথা তোকে জানাব। এখন তো আমরা মুখোমুখি নেই, তুই আমার হাসি দেখতেও পাবি না। তাই লিখে লিখেই জানাব। এখন যেমন ‘হি হি’ লিখে জানালাম।

ঠাট্টা নয়, সত্যি বলছি, যেদিন তোর সঙ্গে দেখা হবে তোকে চুমু না খাই, ঠিক খিমচে দেব। তোর ওপর খুব রাগ হয়েছে। তিথিকে তুই ভুলে গেলি! সেই যে বিয়ে বলে ইউনিভার্সিটি থেকে চলে এলাম, তারপর একটা খোঁজ পর্যন্ত নিস না। আমার মনে আছে, তোর সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছে ক্যান্টিনে। তুই আমাকে ডাকলি, অ্যাই তিথি, আমি না শুনতে পাওয়ার ভান করে বেরিয়ে গেলাম। তাই না? আমি জানি, তুই নানা কৈফিয়েত দিবি। বলবি, তিথি, তুই তো সেদিন পালিয়ে গেলি। বলবি, বিয়ে করে নিজেই বেপাত্তা হয়েছিস। বলবি তিথি, তুই কি মোবাইলের নম্বরও বদলে ফেলেছিস? ফেসবুকেও থাকিস না। হোয়াটসঅ্যাপে নেই। এমএ শেষ করা তো দূরের কথা, বিয়ের পর ইউনিভার্সিটির দিকে পা পর্যন্ত বাড়াসনি। তুই কি এখন বিদেশে? আর সব্বার শেষে বলবি, তুই তো নিজেও একটা ফোন করতে পারতিস? এরকম হাজার কথা শোনাবি। তাই তো? আচ্ছা বাবা, আমি হার স্বীকার করছি। সব দোষ আমার। হয়েছে? সত্যি, আমরাই উচিত ছিল তোকে ফোন করা, যোগাযোগ করা। কেন করি না জানিস? আমার লজ্জা করে। অপরাধবোধ জাগে। নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। কথাগুলো কি সস্তা নাটকের মতো শোনাচ্ছে? হি হি। বিয়ের পর ঘর সংসার করতে এসে আমি খুব নাটুকে হয়ে গিয়েছি।

আজ সকালে ঘুম ভেঙেছে বৃষ্টিতে। ধড়াম ধড়াম করে বাজ পড়ছিল। কলকাতার বাইরে ঝড়বৃষ্টি বেশি হয়। আমার বাপের বাড়িতেও তাই হত। আমি খাট থেকে নেমে জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর জানলার পাল্লা খুলে অনেকক্ষণ হাত বার করে ভিজলাম। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর তোকে চিঠি লিখতে বসে গেলাম।

এরকম একটা বৃষ্টির দুপুর ছিল সেটা। ইউনিভার্সিটির তিনতলার বারান্দায় দুজনে গল্প করছিলাম। হঠাৎ আকাশ ফাকাশ কালো করে হেভি বৃষ্টি নামল। তুই চোখ চকচক করে বললি, ‘অ্যাই তিথি ভিজিবি? চল না নীচে নেমে ভিজি।’

আমি বললাম, ‘খেপেছিস? ইউনিভার্সিটিতে ভিজব কী!’

তুই চোখ পাকিয়ে বললি, ‘কেন ইউনিভার্সিটিতে কি ভেজা বারণ?’

তোর উদ্ভট কথায় আমি সবসময় মজা পেতাম। বললাম, ‘অবশ্যই বারণ। এখানে ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে, বৃষ্টিতে ভিজতে আসে না।’

তুই বললি, ‘তোকে কে বলল লেখাপড়া করবার জায়গায় ভেজা যায় না? এক সময়ে শান্তিনিকেতনে বৃষ্টি পড়লে মাস্টারমশাইরা ছেলেমেয়েদের ভেজবার জন্য ছুটি দিয়ে দিতেন। ছেলেমেয়েরা গুরু গুরু গুরু ঘন মেঘ গরজে গাইতে গাইতে সাইকেল চালিয়ে ভিজতে ভিজতে খোয়াই, কোপাইতে চলে যেত। তাদের সঙ্গে মাস্টারমশাইরাও যেতেন। আমি বইতে পড়েছি।’

আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘এটা শান্তিনিকেতন নয় আর আমাদের ভি সি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নন।’

তুই বললি, ‘নো প্রবলেম, চল, আমরা একটা জোব্বা নিয়ে ভি সি-র কাছে যাই। গিয়ে বলি স্যর আপনি এই জোব্বাটা গায়ে চাপিয়ে কিছুক্ষণের জন্য রবি ঠাকুর হয়ে যান।’

আমরা দুজনেই খুব হাসতে লাগলাম। এরপর তুই বললি, ‘দাঁড়া, তোকে ভেজবার একটা কায়দা শিখিয়ে দিই। যখন পুরো ভিজতে পারবি না তখন বৃষ্টিতে হাত বাড়িয়ে রাখবি। এক সময় দেখবি বৃষ্টির  জল তোর মন পর্যন্ত ভিজিয়ে দিয়েছে।’

তারপর আমরা দুজনে বারান্দা থেকে হাত বের করে জল ধরতে লাগলাম। মনে আছে? হি হি।

বারিধারা দেখেছিস এতদিন পরেও তোর কথা কেমন সব মনে রেখেছি? একেবারে ডায়লগ টু ডায়লগ বলে যাচ্ছি। তুই নিশ্চয় অবাক হচ্ছিস। ভাবছিস, গাধা মেয়েটার মেমরি এত শার্প! আসলে কী জানিস বারিধারা, যা মনে থাকবার তা নিজেই থেকে যায়। মন বাকি সব ফেলে দেয়।

বারিধারা, তোর চেনা তিথি একেবারে অন্যরকম হয়ে গেছে। সেই গল্প বলতেই আজ তোকে এই চিঠি লেখা।

বিয়ের পর গোলমাল হয়ে গেল। সেই গোলমালের কথা কাউকে বলতেও পারি না। আমার তো বন্ধু নেই। ছোটবেলায় তেমন করে কারও সঙ্গে মিশতে পারিনি। বড় হয়েও নয়। সত্যি কথা বলতে কী, তুই ছাড়া ইউনিভার্সিটিতে কারও সঙ্গে তেমন করে মিশিনি। অথচ তোকেই কেমন অপমানের মধ্যে ফেলেছি। ইউনিভার্সিটির বখাটে ছেলে যেদিন আমাকে নোংরা কথা বলল, সেদিন তুই এগিয়ে গিয়েছিলি। আমি ভয়ে পালিয়ে গেলাম। পালিয়ে শুধু যাইনি, তোকে মিথ্যেবাদীও বলে এসেছি। এরপরে কোন লজ্জায় তোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখি বল তো? আমি ডুব মেরেছিলাম। ভালো করেছিলাম না? শুধু আমার অন্যায়টা দেখবি, আমার লজ্জাটা দেখবি না? লজ্জাটাও তো একটা শাস্তি। নিজের একমাত্র ভালোবাসার বন্ধুর থেকে নিজেকে সরিয়ে শাস্তি দিয়েছি।

বারিধারা, তুই আবার ভাবতে বসিস না, আজ বৃষ্টি বলে আমি ইমোশনাল হয়ে তোর কাছে ক্ষমা চাইতে বসেছি। মোটেই নয় বস। কোথায় যেন শুনেছিলাম, আকাশ মেঘলা থাকলে মানুষের অনুভূতিগুলি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এ সব কবিদের হয়, আমার মতো হাবিজাবিদের হয় না। আমি সেদিন যা করেছিলাম, ঠিকই করেছিলাম বারিধারা। আমার মতো ভিতু, স্বার্থপর মানুষের (নাকি অমানুষ?) জন্য ওটাই সাজে। আমি মধুজা ম্যাডামের কাছে গিয়ে বলে এসেছিলাম, বারিধারা আমার নামে যা বলেছে সেটা সত্য নয়। দিন, আমি লিখে দিচ্ছি কেউ আমাকে অপমান করেনি। মধুজা রায় আমাকে ডেকে পাঠালে সেদিন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, একটা ছেলে আমার সঙ্গে নোংরা ব্যবহার করেছে, এটা জানাজানি হয়ে গেলে সর্বনাশ। বিয়ে ভেঙে যাবে। আমার বাড়ি থেকে ইউনিভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দেবে। একবারও তোর সাহস, তোর প্রতিবাদের কথা মাথায় আসেনি। আমার মতো মেয়ের জন্য এটাই স্বাভাবিক। তাই না? তোর কাছে ক্ষমা চাইতে যাব কোন দুঃখে? হি হি।

তা হলে এতদিন টেলিফোন করিনি কেন? না, সবটা লজ্জায় নয়। তুই শুনে খুশি হবি, আমার পুরোনো মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বাজেয়াপ্ত শুনে হাসছিস? হি হি। দেখ, আমিও হাসছি। ঘটনা কিন্তু সত্যি। বিয়ের পর যখন এ বাড়িতে এলাম, তার কিছুদিনের মধ্যে আমার বর বাবাজীবন বলল, ‘তি, তুমি তোমার মোবাইল ফোনটা আমার কাছে রেখে দাও।’

আমার বর বিয়ের পরদিন থেকেই আমাকে ‘তি’ ডাকে। আদরের ডাক। একদিনের আলাপে এত আদর ভাবা যায় না। আমিও ভাবতে পারিনি। আনন্দে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হল আমার। দ্রুত সেই পাগলামি কাটল। আদরের ভিতরে অন্ধকারটা দেখতে পেলাম। শৌর্য, আমার বরের নাম, সুন্দর নাম না? যখন সম্বন্ধ এসেছিল, তখন কতদিন একা একা রাতে ফিসফিস করে বলতাম, ‘শৌর্য, শৌর্য, শৌর্য…।’ হি হি।

বারিধারা, আবার আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামল। তোর ওখানে কি বৃষ্টি পড়ছে? এই চিঠি তোকে কীভাবে পাঠাব? আমি তো তোর ঠিকানা জানি না। আচ্ছা, একটা কাজ করব, ইউনিভার্সিটি গিয়ে ডিপার্টমেন্টে রেখে আসব। আর যদি বলিস চিঠি নিয়ে সটান তোর বাড়ি চলে যেতে পারি। এই রে তোর বাড়িও যে চিনি না। ইস কেমন পাগলের মতো বকছি। হি হি। আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি।

শৌর্যরা ধনী। পারিবারিক ব্যবসা। যখন বিয়ের কথা বলতে তার বাবা-মা-বোনেরা আমাদের বাড়ি এসেছিল, তখন মনে হয়েছিল যেমন অভিজাত, তেমন সম্ভ্রান্ত। সবাই নীচু গলায় কথা বলে। অল্প হাসে। শিক্ষিত তো। ওরা চলে যাওয়ার পর বাবা বলেছিল, ‘টাকা-পয়সাটা বড় কথা নয়, বড় কথা হল মানুষগুলো বড্ড ভদ্রলোক।’

সেই ‘ভদ্রলোক’ বুঝতে, চিনতে পারলাম অতি অল্প সময়ে। শৌর্য যখন আমার মোবাইল ফোন চাইল আমি অবাক হলাম।

‘আমার ফোন দেব কেন?’

শৌর্য বলল, ‘দেবে কারণ এখন আর তুমি আলাদা কেউ নয়। তুমি আর আমি এক। এবার তোমাকে একার জিনিস বাদ দিতে হবে। আমি তোমাকে নতুন ফোন দেব। দামি ফোন। সেখানে আমাকে জিগ্যেস করে তুমি নম্বর লিখে দেবে।’

আমি আরও অবাক হয়ে গেলাম, ‘এখানে যে আমার অনেক নম্বর আছে। পুরোনো নম্বর।’

শৌর্য আবার হাসল। জানিস বারিধারা, আমার বর সুপুরুষ। তার হাসিও সুন্দর! সেই সুন্দর হাসি হেসে বলল, ‘পুরোনো ঘরবাড়ি ছেড়েছ, পুরোনো পরিচিতও ছাড়বে। এখন থেকে আমার পরিচিতরাই তোমার পরিচিত হবে তি।’

আমি প্রায় কেঁদেই ফেললাম। বললাম, ‘কিছুতেই না।’

শৌর্য এবার কঠিন গলায় চাপা ধমক দিয়ে বলল, ‘আমি কোনও কথা দু’বার বলা পছন্দ করি না। আমি চাই না তুমি এমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখো যাকে আমি চিনি না। ফোন আমার কাছে দাও।’

জানিস বারিধারা, আমি সেদিনই বুঝেছিলাম। আমার বিয়ে খুব ভুল জায়গায় হল। এরপর শৌর্যর গোটা বাড়ি আমার পায়ে একটার পর একটা শিকল পরাতে লাগল। আমার লেখাপড়া বন্ধ করল। আমার বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ করল। আমার নিজের পছন্দ, ভালো লাগে এমন সব বন্ধ করল। বাপের বাড়িতে যেতে হলে অনুমতি লাগে। মাকে ফোন করতে হলে অনুমতি লাগে। নিজের মনের মতো একটা জিনিস কিনতে অনুমতি লাগে। এমনকী নিজের পছন্দ মতো সাজগোজ করতেও পারি না। কখনও বর চোখ পাকায়, কখনও শাশুড়ি-ননদ, এমনকী শ্বশুরমশাই পর্যন্ত।

মেয়েরা এখন আকাশে উড়তে পারে। কেউ অলিম্পিকে আকাশে ভল্ট দিচ্ছে, কেউ মহাকাশযানে চেপে মঙ্গলগ্রহে পাড়ি দেয়, কেউ যুদ্ধ বিমানের পাইলট। অথচ আমি একটা মেয়ে হয়ে পাঁকে গড়াগড়ি খাচ্ছি। মেয়েতে মেয়েতে কত তফাত! আমার ঘটনা শুনতে কেমন লাগছে বারিধারা? পচা মেগা সিরিয়ালের মতো না? হি হি। আমারও তাই মনে হতে লাগল। ভাবতে লাগলাম সিরিয়াল একদিন শেষ হবে। আমিও একদিন আকাশে উড়ব।

শেষ হল না। মিথ্যে জিনিস শেষ হয়, সত্য শেষ হয় না। এতদিন যে জিনিস সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না, এবার বুঝতে পারলাম তার দাম কত বেশি। তা হল নিজের স্বাধীনতা, নিজের অধিকার, নিজের মতামত। লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। শাশুড়ি বুঝতে পারলে তেড়ে আসত। জানিস, বারিধারা, বই নিয়ে বসলেও শৌর্য রেগে যেত। ধমক দিয়ে বলত, ‘বাড়ির বউ হয়েছ। বউ পড়ে সময় নষ্ট করো কেন?’ ভিতু আমি, শান্ত আমি বই বন্ধ করে রাখতাম। নিজেকে বন্দি করেই রাখতে শিখলাম। শৌর্য কিন্তু ভদ্র সভ্য। মদ, মেয়েমানুষ, বাইরের নেশা—কোনও দোষ নেই। ব্যবসার কাজ মন দিয়ে করে। বাড়ি ফিরে এসে আমাকেই শুধু চায়। নিয়মমতো বরের চাওয়া সুখের হওয়ার কথা, শৌর্যর চাওয়া ভয়ঙ্কর। একেক সময় মনে হয় পারভার্ট। বিকৃত। ইচ্ছে না থাকলেও কাপড় খুলে তার কাছে যেতে হবে। উদোম করে যত না ভোগ করে তার বেশি অপমান করে, যন্ত্রণা দেয়। এ কথা কাকে বলব? কে শুনবে? স্বামী স্ত্রীর শরীর কীভাবে ভোগ করবে সে তো তার অধিকার। আদরে সোহাগে না মেরে ধরে, আঁচড়ে, কামড়ে সে বুঝবে। তুমি বলবার কে হে? ভাবতাম পালিয়ে যাব। সাহসে কুলোয়নি। সবাই কী বলবে? সমাজ কী বলবে? মা বুঝতে পেরে বলত ‘মানিয়ে নে।’ বাবা বলত, ‘একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।’

বারিধারা আজ মনে হয় বৃষ্টি থামবে না। বেশ হয় না থামলে। সব ভেসে যাক। আমার ঘ্যানঘ্যানানি কেমন লাগছে? দাঁড়া, আর একটু বাকি আছে।

কাল একটা কাণ্ড করেছি। তুই বিশ্বাসই করবি না। সত্যি কথা বলতে কী, সেই ঘটনা জানাতেই আমার এই লম্বা চিঠি। কাল রাতে তখন খুব বৃষ্টি নেমেছে। আমি জানলার কাছে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম। শৌর্য ঘরে এসে নরম গলায় বলল, ‘তি, কী করছ?’ আমি চুপ করে রইলাম। শৌর্য খাটে বসে বলল, ‘তি, চলে এসো।’ আমি চুপ করে রইলাম। শৌর্য এবার অধৈর্য হয়ে উঠল। আমি জানলা দিয়ে অন্ধকারে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম। কী ভালো যে লাগছিল বারিধারা, তোকে কী বলব! শৌর্য এবার উঠে এসে আমার পিছনে দাঁড়াল। কড়া গলায় বলল, ‘এতবার ডাকছি শুনতে পারছ না?’

আমি অস্ফুটে বললাম, ‘না। পাচ্ছি না।’

শৌর্য আমার হাত ধরে তার দিকে ফেরাতে চেষ্টা করল। চোখ মটকে বিশ্রী হেসে বলল, ‘এসো, কাপড় খুলে তোমার সুন্দর বুক দুটো দেখি।’

আমি ঘুরে দাঁড়ালাম এবং ডান হাত তুলে শৌর্যর গালে সপাটে চড় মারলাম।

বারিধারা, সেদিন ইউনিভার্সিটিতে যা পারিনি, কাল সে কাজ পারলাম। সাহসী হতে অনেকটা সময় লাগল ঠিকই। তা লাগুক। সবারই সময় লাগে। মানুষ তো কোন ছাড়, পাখির ছানারও আকাশে উড়তে সময় লাগে। যাই হোক, আজ সকাল থেকে আমার বড় আমার দিকে ভয়ে-ভয়ে তাকাচ্ছে। তোর কি মনে হয়, ওর মা-বাবাকে নালিশ করেছে? করলে ভালো হয়। ওরাও আমাকে ভয় পাবে। যদি চড় মেরে দিই। হি হি।

যাক, এই হল আমার গল্প। এই গল্প তোকে না জানালে অন্যায় হত না?

এখন বল, এই চিঠি তোকে কেমন করে পাঠাব?

 ইতি তোর ভিতু তিথি। হি হি।