» » চতুর্থ কিস্তি

বর্ণাকার

প্রচেত গুপ্ত

একটু পরে রোদ উঠবে

আটত্রিশ

জীবন হল নদীর মতো। চলতে চলতে হঠাৎ বাঁক নেয়। বাঁকের খবর আগে থেকে জানা যায় না। বাঁকে পড়ে অবাক লাগে। এ কোথায় এলাম! এখানেও যেন সেরকম রয়েছে। বারিধারা ভাবতেও পারেনি, মধুজা রায়ের মুখ থেকে তাকে এমন কথা শুনতে হবে। সে ভাবল, হয় সে ভুল শুনছে, নয়তো মধুজা রায় বানিয়ে বলছেন।

মধুজা রায় কথাটা আবার বললেন। এবার চোখমুখ শক্ত করে বললেন।

‘বারিধারা, তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে না। ওই ছেলেকে চড় মেরে তুমি ঠিক করেছ।’

বারিধারা ভুরু কোঁচকাল। ম্যাডাম এসব কী বলছেন! উনি কি অন্য কোনও ফন্দি করছেন? নিশ্চয় তাই। তবে করলেও কিছু এসে যায় না। সে তার শর্ত থেকে সরবে না। ওই বদ ছোকরাকে তিথির কাছে আগে ক্ষমা চাইতে হবে। দাদু তাকে বলে দিয়েছে।

‘যা খুশি হোক বৃষ্টি, যত খুশি বিপদ হোক, ওই ছেলে যতক্ষণ না তোর বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাইবে, তুই মাথা নামাবি না। তোর পয়েন্টে স্টিক থাকবি।’

বারিধারা দারুণ খুশি হয়ে বলেছিল, ‘শাবাশ দাদু। এই কারণেই কমলকান্তি ইজ দ্য গ্রেট। তবে আমার ইউনিভার্সিটিতে পড়াটা গেল। মধুজা ম্যাডাম খুব পাওয়ারফুল। আমাকে ছাড়বে না। নম্বরটম্বর কমিয়ে তো দেবেই, আরও অনেক কলকাঠি নাড়বে। সে নাড়ুক দাদু। তুমি যখন পাশে আছ, নো চিন্তা। আমি কাউকে কেয়ার করি না।’

কলমকান্তি দুপাশে অল্প অল্প মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললেন, ‘ঘটনা অত সহজ হবে না রে বৃষ্টি, অত সহজ হবে না। তোর ওই মধুজা ম্যাডাম তোর শর্তে রাজি হবে না, আবার চট করে পিছোতেও পারবে না। এটা ঠিকই, যে ছেলেকে তুই চড় মেরেছিস, সে তোকে কোনওরকম অপমান করেনি। তোর সামনে অপমান করেছে এমনটাও নয়। তুই তোর বন্ধুর মুখে শুনে রিঅ্যাক্ট করেছিস।’

বারিধারা বলল, ‘তাতে কী হয়েছে?’ অন্যের অপমান কি অপমান নয়? পথে যদি কোনও মেয়েকে অপমানের মুখে পড়তে দেখি, এগিয়ে যাব না? শুধু মেয়ে কেন, কাউকে হেনস্থা হতে দেখলেই তো প্রতিবাদ করা উচিত। তাই তো এতদিন শিখেছি। নিজের সম্মান বাঁচাতে গেলে সবার সম্মান বাঁচাতে হয়। তোমরাই তো শিখিয়েছ, একা ভালো থাকা যায় না, সবাই মিলে ভালো থাকতে হয়।’

কমলকান্তি হেসে বললেন, ‘ডার্লিং, তুমি ঠিকই বলছ। কিন্তু এগুলো নীতির কথা। উচিত-অনুচিতের কথা। বাস্তব জীবনে এই উচিত-অনুচিতকে কাজে লাগানো কঠিন। একগুঁয়েভাবে চললেই হয় না। প্রতিবাদের পিছনেও ভাবনাচিন্তা, কৌশল লাগে। তুমি প্রতিবাদ করে ঠিক করেছ কিন্তু একটা ছোট গোলমাল আছে। ঘটনার সময় তুমি যদি প্রতিবাদটা করতে তাহলে কোনও প্রশ্ন উঠত না। তোমার ম্যাডাম যা খুশি বলুন, যা খুশি করুন, আমি বলতাম, ক্ষমা চাইবে না। কিন্তু এখানে তো তা হয়নি।’

বারিধারা বলল, ‘দাদু, আমি তো জেনেছি পরে। তিথি বলেছে। আমার সামনে যদি ওই কথা বলত, তখনও চড় লাগাতম। পরে জেনেছি, তাই পরে মেরেছি।’

‘ঠিকই। কিন্তু টেকনিক্যালি একটু সমস্যা হয়ে গেছে বৃষ্টি ম্যাডাম। আর সেই কারণেই আপনার দিদিমণি ক্যাঁক করে আপনাকে চেপে ধরেছে। বার বার বলছে, ওই ছেলে কি তোমাকে কিছু বলেছে? তোমাকে অপমান করেছে? তুমি কেন গায়ে হাত তুলেছ? এটা একটা ডিসিপ্লিনের ব্যাপার। যতই হোক, ইউনিভার্সিটি চত্তরের মধ্যে ঘটেছে।’

বারিধারা বলল, ‘কথাটা ঠিকই, তাহলে কি আমাকে ওই গুণ্ডাটার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে? আমি মরে গেলেও চাইব না দাদু।’

কমলকান্তি সেন হাত বাড়িয়ে নাতনির চুল ঘেঁটে দিয়ে বললেন, ‘ওরে গাধা মেয়ে, সেই কারণেই তো প্ল্যান কষেছি। তোকে অপমান না করা সত্বেও তুই যদি একজনকে চড় মেরে ভুল করে থাকিস, ওই গুণ্ডাটা দশগুণ বেশি অন্যায় করেছে। আমরা সেই অন্যায়টা চেপে ধরব। তাকে আগে ক্ষমা চাইতে হবে। যাদের সামনে সে ওই নোংরা কথা বলেছে, তাদের সামনে চাইতে হবে। এটা একটা দাবার চালের মতো হল। আমি নিশ্চিত এই কন্ডিশনে তোর ম্যাডাম থতমত খেয়ে যাবে। খুব বেশি হলে উনি একটাই কথা বলতে পারেন। বলবেন, সে আমরা বুঝব। তুমি আগে অন্যায় স্বীকার করো। তুই ভয় না পেয়ে বলবি, আপনারাই বুঝুন, আগে ওকে ক্ষমা চাইতে বলুন। আমার জোর বিশ্বাস, তোর শর্ত শুনে ম্যাডাম পিছিয়ে আসবেন। পুরো ঘটনাটাই চেপে যেতে চাইবেন।’

বারিধারা দাদুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘পিছোক, এগোক আমার কিছু এসে যায় না। আমি একটুও ভয় পাব না। পাব কেন? আমার ইয়ং দাদু আমার সঙ্গে আছে না?’

কমলকান্তি ছদ্ম রাগ দেখিয়ে বললেন, ‘নাইনটি ওয়ান ইয়ং না তো কী? তোরা ব্যবস্থা করছিস না তাই, নইলে আমি এখনও একটা বিয়ে করতে পারি।’

বারিধারা দাদুর গালে চুমু খেয়ে বলল, ‘ইস, আমার দাদুর ওপর কাউকে ভাগ বসাতেই দেব না।’

কমলকান্তি সেনের পরিকল্পনায় বারিধারা যতটা না ভরসা পেয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি বল পেয়েছে। লড়াই করবার বল। কিন্ত এ কী ঘটল! মধুজা রায় যে নিজেই পিছিয়ে এলেন!

মধুজা রায় এবার থমথমে গলায় বললেন, ‘তুমি শুধু চড় মেরে ঠিক কাজ করোনি বারিধারা, আমারও ইচ্ছে করছে, ওই ছেলেকে ডেকে পাঠিয়ে ঠাসিয়ে একটা চড় লাগিয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বের করে দিতে। অতটা ক্ষমতা আমার নেই, তাই আমি পারছি না। সরি বারিধারা। ঘটনাটা না জেনে তোমাকে ডেকে ক্ষমা চাইবার কথা বলেছিলাম। আমি উইথড্র করছি।’

বারিধারা বিড়বিড় করে বলল, ‘ম্যাডাম, আমি ঠিক…।’

মধুজা রায় সোজা হলেন। বললেন, ‘বারিধারা, আমি জানতাম না, ওই বদ ছেলে তিথিকে কী বলেছে। আমি যখন শুনি, তুমি তোমার সহপাঠীকে অকারণে চড় মেরেছ, আমি খুব রেগে যাই। যে তোমাকে কিছু বলেনি তার গায়ে তুমি হাত দাও কোন সাহসে? ইউনিভার্সিটির ভিতরে এটা কিছুতেই অ্যালাও করা যায় না। ওপরমহল থেকে আমার কাছে কমপ্লেইন আসে। আমি তোমাকে ডেকে বকাঝকাও করি। কিন্তু এবার জানতে পেরেছি, কেন তুমি ছেলেটিকে মেরেছিলে। বেশ করেছ। ইউনিভার্সিটিতে যে একটা মেয়েকে সবার সামনে ওই কথা বলতে পারে, তার অনেক বেশি শাস্তি হওয়া উচিত। একজন টিচার তো বটেই, একজন মহিলা হয়ে এই নোংরামি মেনে নেওয়া যায় না। আমার বুঝতে ভুল হয়েছিল। তার জন্য তুমিও দায়ী বারিধারা। ঠিক কী ঘটেছিল, তুমি আমাকে বলোনি।’

বারিধারা অস্ফুটে বলল, ‘আপনাকে এই কথা বলতে লজ্জা করছিল।’

মধুজা রায় চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন, ‘ঠিকই। একজন ভদ্র, শিক্ষিত মেয়ের পক্ষে কথাটা মুখে আনা লজ্জারই। তোমার মতো বয়েসে আমি এই কথা রিপিট করতে পারতাম না। টিচারদের সামনে তো নয়ই। তোমার অস্বস্তিটা বুঝতে পারছি বারিধারা। তবে ভবিষ্যতে এরকম কোরো না। এখন ওসব লজ্জা-সঙ্কোচের যুগ নেই। যা হবে সরাসরি জানাতে হবে।’

বারিধারার ভীষণ ভালো লাগছে। মধুজা রায় সম্পর্কে তাদের একরকম ধারণা, আর এখন তাকে আরেকরকমভাবে দেখছে। আসলে মানুষের সবটা একরকম হয় না। রঙের মতো তার মধ্যেও নানারকম ভাগ থাকে। শেডস থাকে। ম্যাডাম যতই গোলমেলে হোন না কেন, তিথির এই ঘটনাটা নিশ্চয় তার মনের কোথাও আঘাত করেছে। তার ভিতরের ভালো অংশটা জেগে উঠেছে। তিনি না জেনেই রাগারাগি করেছিলেন। তার জন্য অনুতাপও বোধ করছেন। মধুজা রায়ের মতো মানুষ একজন ছাত্রীকে ‘সরি’ বলছেন, একথা কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবে না। বলবে, হতেই পারে না। উনি সবার কাছ থেকে সরি শুনতে অভ্যস্ত। বারিধারা অবশ্য একথা কাউকে বলতেও চায় না। এটা মধুজা রায়ের সঙ্গে তার জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন নয়।

মধুজা রায় খানিকটা অন্যমনস্কভাবে বললেন, ‘তবে আমি যেরকম ভেবেছিলাম সেরকমটা পারব না বারিধারা।’

বারিধারা উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘কী ভেবেছিলেন ম্যাডাম?’

‘ভেবেছিলাম বিষয়টা নিয়ে হইচই করব। ওই ছেলের পিছনে যত বড়ই সোর্স থাকুক, ওকে শাস্তি দিয়ে ছাড়ব।’

বারিধারা তাড়াতাড়ি বলল, ‘না না, সে সবের দরকার নেই। যা শাস্তি পাওয়ার সে তো পেয়েছেই।’

মধুজা রায় একটু কঠিনভাবে বললেন, ‘না পায়নি। এইসব ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। সবার জানা দরকার, এই ধরনের অসভ্যতা বরদাস্ত করা হয় না। পিছনে ক্ষমতাশালী কেউ থাকলেও হয় না।’

বারিধারার বিস্ময় বাড়ছে। যে মানুষটা নানা ধরনের ক্ষমতা দেখিয়ে চলতে ভালোবাসে তার মুখে এসব কী কথা! হয়তো এটাই নিয়ম। কোনও ঘটনা আকস্মিকভাবে মানুষের চরিত্র বদল করে।

মধুজা রায় বললেন, ‘কিন্তু আমি এক পা-ও এগোতে পারব না বারিধারা।’

বারিধারা বলল, ‘থাক ম্যাডাম, এখানেই ঘটনাটা শেষ করা যাক। তিথিকে তো আমি চড় মারবার কথা বলিনি। বলিনি তার কারণ, মেয়েটা নরম স্বভাবের, নার্ভাস প্রকৃতির মেয়ে। ভালো মেয়ে। আমার তো সেই কারণেই আরও রাগ হয়েছিল। একজন সহজ-সরল ভালো মেয়েকে বিশ্রী কথা কেন বলবে? সে কিছু বলতে পারবে না বলে? তিথি যখন আমাকে ঘটনা বলেছিল, ও প্রায় কেঁদেই ফেলেছিল। বেশি ভলো মেয়ে হলে যা হয়।’

মধুজা রায় ঠোঁটের কোণে হেসে বললেন, ‘ভালো মেয়ে! কে ভালো মেয়ে?’

বারিধারা এবার একটু অবাক হয়ে বলল, ‘আমি তিথির কথা বলছি ম্যাডাম। আপনি তিথিকে বোধহয় ঠিক স্পট করতে পারছেন না ম্যাডাম। শান্তশিষ্ট মেয়ে। নিজেকে আড়ালে রাখতে ভালোবাসে।’

মধুজা রায় খানিকটা রাগের সঙ্গে বললেন, ‘শান্তশিষ্ট কিনা জানি না। তবে তোমার ওই বন্ধুটি ভালো নয় বারিধারা। একেবারেই ভালো নয়। তুমি ওর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করো।’

‘মাফ করবেন ম্যাডাম, আপনার কোনও ভুল হচ্ছে বোধহয়। তিথিকে ইউনিভার্সিটির সকলেই ভালো মেয়ে বলে জানে। ও আমার খুব বন্ধু।’

মধুজা রায় একটু চুপ করে থেকে কিছু ভাবলেন। টেবিলে পড়ে থাকা পেনটা তুলে নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন, ‘আমিও তাই জানতাম, সেইরকমই খোঁজ পেয়েছিলাম। তোমাকে বকাঝকা করবার পর, আমি তোমাদের সবার সম্পর্কেই খোঁজখবর নিয়েছি বারিধারা। আমি জানতে পারি, সুদর্শন নামের এই ছেলেটি ভালো নয়। যেহেতু আমি কোনও না কোনও ভাবে ঘটনার মধ্যে ইনভলভড হয়ে পড়েছিলাম, আমার একটা রেসপনসিবিলিটি তৈরি হয়। অন্য কোনও টিচার হলে হয়তো চুপ করে যেত, কিন্তু আমার স্বভাব তো সেরকম নয়। আমার মনে হয়, ওই ছেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এটা তো একধরনের শ্লীলতাহানি। যে মেয়েটি ঠিক কাজ করেছে, সহপাঠিনীর অসম্মানের প্রতিবাদ করেছে, তাকে বকলাম, আর যে দোষী তাকে কিছু বললাম না, এটা তো হতে পারে না। নিজের কাছে নিজেকে আমি কী কৈফিয়ত দেব? কিন্তু তার জন্য আমার একটা কমপ্লেন দরকার। যেটা নিয়ে আমি মুভ করব। আমি তিথিকে ডেকে পাঠাই। তাকে বলি, তুমি আমাকে লিখে দাও, ওই ছেলে তোমাকে কীভাবে অপমান করেছে।’

বারিধারার চোখের পলক পড়ছে না। এই মহিলা এতদূর পর্যন্ত গেছেন! তিথিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তিথির নিশ্চয়ই হার্টফেল করবার মতো অবস্থা হয়েছিল। ও যা ভীতু। মধুজা রায় আলাদা করে ডেকেছে শুনলেই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। কিন্তু অবাক লাগছে, ম্যাডাম এতদূর পর্যন্ত গেলেন কেন! বিবেকের তাড়না! এতটা!

মধুজা ম্যাডাম ঠোঁটের হাসি ফুটিয়ে বললেন, ‘তোমার বন্ধু আমাকে লিখে দিয়েছে। সেই লেখা দেখে আমি আকাশ থেকে পড়ি!’

এই পর্যন্ত বলে মধুজা রায় থামলেন। ড্রয়ার খুলে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে বারিধারার দিকে এগিয়ে দিলেন। বারিধারা কী করবে বুঝতে পারছে না। নদী কি আবার বাঁক বদল করছে?

‘নাও ধরো। পড়ে দেখো তোমার বন্ধু কী লিখেছে।’

বারিধারা কাগজের ভাঁজ খুলল। কাঁপা হাতে বাংলা কয়েক লাইন লেখা।

মাননীয় উপাচার্য মহাশয়

বিশ্ববিদ্যালয়

স্যার,

আপনার অবগতির জন্য জানাই, আমি খবর পেলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে জড়িয়ে কেউ কেউ মিথ্যে রটনা করছে। বলা হচ্ছে, আমাকে নাকি আমার এক সহপাঠী অপমান করেছে। এই রটনা আমার পক্ষে মোটেই শোভন নয়। আমি আপনাকে স্পষ্ট জানাতে চাই, আমার সঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে কেউ কখনও খারাপ ব্যবহার করেনি। বিষয়টি নিয়ে কোনওরকম শোরগোল যেন না হয়। যদি হয়, তার সঙ্গে আমি কোনও ভাবে যুক্ত নই। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে এসেছি এবং তাই করতে চাই। আমার প্রণাম জানবেন।

ইতি…।’

বারিধারা চুপ করে রইল। মধুজা রায় চিঠি ফেরত নিয়ে বললেন, ‘এরপর আমি ওই ছেলের বিরুদ্ধে স্টেপ নেব কী করে? সব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া আমার উপায় কী? এই তোমার ভালো বন্ধু! এত ভীতু! যাই হোক তুমি যে ওই ছেলেকে একটা চড় অন্তত মারতে পেরেছ, এটাই অনেক। আমার এই ফাইল ক্লোজ করা ছাড়া আর কোনও উপায় রইল না। যাক, যা হওয়ার হয়ে গেছে।’

মধুজা রায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে ক্যান্টিনে এসে বসল বারিধারা। তার মন খারাপ। এই চিঠি যে তিথিকে চাপ দিয়ে লেখানো হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তারপরেও তিথি এটা লিখবে কেন? ছিছি। বারিধারা চা নিয়ে এল। চা খেতে খেতে তার মন খারাপ একটু একটু করে কাটতে লাগল। বরং ভালো লাগতে লাগল। মনে হল, তিথি ভয় পেয়ে কী লিখেছে, অরিন্দম, কল্যাণ স্যাররা এটা নিয়ে ঘোঁট পাকাতে গিয়ে ফেল করলেন, মধুজা ম্যাডাম তাদের কথা ভেবে ভয় পেয়ে ফাইল বন্ধ করছেন—এসব ভেবে কী হবে? যা খুশি হোক। তার যা করবার সেটা তো করেছে। সে একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে এবং তার জন্য ক্ষমাও চায়নি।

ক্যান্টিনে তিথিকে দেখে বারিধারা হাত তুলে ডাকল, ‘তিথি, অ্যাই তিথি।’