» » চতুর্থ কিস্তি

বর্ণাকার

প্রচেত গুপ্ত

একটু পরে রোদ উঠবে

সাঁইত্রিশ

পলাশ চুপ করে আছে। টেবিলের উলটোদিকে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে দুই মাস্টার। অরিন্দম সেনগুপ্ত আর কল্যাণ সমজাপতি। ছাত্রের দিকে তাদের এরকম আগ্রহ সহকারে তাকিয়ে থাকবার কারণ আছে।

আরও মিনিট খানেক চুপ করে থাকবার পর অরিন্দমবাবু বললেন, ‘কি পারবে না?’

পলাশ মাথা চুলকে বলল, ‘সেটাই তো ভাবছি স্যার।’

কল্যাণ সমাজপতি বললেন, ‘পারতেই হবে পলাশ। এরকম ইস্যু চট করে পাওয়া যাবে না।’

অরিন্দমবাবু বললেন, ‘মধুজা রায়কে চাপ দেওয়ার খুব বড় একটা সুযোগ এসেছে। এবার ওর মুখোশ খুলে দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে ও যা করছে সেটা বেশিদিন চলতে দেওয়া যায় না। শুধু পাওয়ার দেখানো নয়, পাওয়ারকে কাজে লাগিয়ে নোংরা ঘটনাকে মদত দিতে শুরু করেছে এবার। পিছনে সাপোর্ট আছে বলে যা খুশি করে চলবে? কোনও বিহিত হবে না? আমরা তো পারছি না, এবার তোমরাই ভরসা পলাশ। স্টুডেন্টরা যদি এগিয়ে না আসে এদের দাপট আরও বাড়বে। ইউনিভার্সিটি ডকে উঠবে। ইউনিভার্সিটির ভিতর একটা মেয়ের সঙ্গে গুণ্ডারা অসভ্যতা করবে আর টিচার হয়ে তাকে সমর্থন করতে হবে!’

কল্যাণ সমজাপতি কিছু একটা বলতে গিয়ে চুপ করে গেলেন। মধুজা রায়ের রমরমার শুরু তো এখন হয়নি, হয়ছে বেশ কয়েক বছর আগেই। বহু যোগ্যকে বাদ দিয়ে এই মহিলাকে তখন মাথায় তোলা হয়েছিল। পার্টির  এডুকেশন সেলের মাতব্বররাই ধাপে ধাপে সেই কাজ করে। এই কাজের একটা পদ্ধতি ছিল। যাদের ‘তোলা হবে’ ঠিক হত তাদের প্রথমে কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে সেমিনার করিয়ে, পেপার পড়িয়ে পরিচয় করানো হত। পরের ধাপে পাঠানো হত, বাইরের রাজ্যে। ঝাড়খণ্ড, ত্রিপুরা, কেরল। সেখানে কখনও সেমিনার, কখনও ওয়ার্কশপ, কখনও  শিক্ষার পদ্ধতি নিয়ে আলাপ আলোচনা। এরপর আসত ‘বিদেশ’। চিন, ভিয়েতনাম, রাশিয়ায় সফর। বিদেশ চিরকালই বাঙালির কাছে বড় টোপ। ছুড়লেই কপ করে গিলে ফেলে। শেষ ধাপে বিভিন্ন কমিটিতে নাম ঢোকানো হত। মধুজা রায়ের বেলাতে এই সবক’টা ধাপই মানা হয়েছে। পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ত। শিক্ষামহলে অনেকেই জানত সেই সময় শাসক পার্টির এক নেতা নাকি মধুজা রায়ের সঙ্গে ভিয়েতনাম ট্যুরে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। নেতা দেখেছিলেন সে দেশের রাজনীতি, মধুজা দেখেছিলেন সেখানকার শিক্ষা পদ্ধতি। পার্টির সমর্থকরা বলত, এ সব গুজব। ‘সংগ্রামী’ নেতাকে ছোট করবার চেষ্টা। তাকে কালিমালিপ্ত করা। বিরোধীদের চক্রান্ত। ফলে এসব কেচ্ছা নিয়ে কেউ খুব একটা আলোচনায় যেতে ভরসা পেত না। কে কোথায় লাগিয়ে দেবে তার ঠিক নেই। দিলে মুশকিল হত। পার্টির ব্ল্যাক লিস্টে যেতে হত। শুধু পার্টি সমর্থকের বাইরে নয়, পার্টি সমর্থক শিক্ষকদেরও মধুজা রায়ের জন্য সেই সময় অপমান সহ্য করতে হয়েছে। কল্যাণ সমাজপতি নিজে একজন ভিকটিম। ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল থেকে রাতারাতি তাকে সরিয়ে মধুজা রায়কে আনা হয়েছিল। অপমানিত কল্যাণ সরকার পার্টি অফিসে যান।

‘এটা কী রকম হল মনোজদা।’

একসময় ‘মনোজদা’ শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কারখানার গেটে মিটিং, মিছিল করতেন, ব্যারিকেড করতেন। পরে পার্টি কী মনে করে ওকে নিয়ে এল শিক্ষক সংগঠন দেখভালের দায়িত্বে। দলের শিক্ষক সম্মেলনে প্রশ্ন উঠেছিল, শ্রমিকনেতা শিক্ষকদের বিষয় কী বুঝবেন? পার্টি নেতারা জানাল, ‘মনোজদা’ দলের একজন নীতিনিষ্ঠ সৈনিক। শ্রেণীহীন সমাজ তৈরির লক্ষ্যে তাঁর ভাবনা, তাঁর কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারখানার শ্রমিক আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে শ্রেণী-বিভাজন দূর করতেই দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর আর তর্ক চলে না। সবাই ‘মনোজদা’-কে মেনে নিতে বাধ্য হল। ‘শ্রেণী বিভাজন দূর’ করবার জন্য তিনি মন দিয়ে শিক্ষকদের প্রাোমোশন, বদলি, নিয়োগ, কমিটি গঠন ইত্যাদিতে নিজের এবং দলের মত চাপাতে শুরু করলেন। সেই ‘মনোজদা’-র কাছেই গিয়েছিলেন ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল থেকে অপসারিত কল্যাণ।’

‘মনোজদা’ বললেন, ‘কীসের কী হল কল্যাণ?’

কল্যাণ সমাজপতি বললেন, ‘আমাকে ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল থেকে সরিয়ে দেওয়া হল কেন?’

‘মনোজদা’ সহজভাবে বললেন, ‘তাতে কী হয়েছে? সবাইকে চিরকাল এক জায়গায় থাকতে হবে? অন্যরা সুযোগ পাবে না? এই যে আমাকেই দেখো না। জীবনের তিরিশ বছর শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করেছি, তারপর এলাম শিক্ষায়। আসলে আমি তো ওই সংগঠনে নতুন একজন নেতার জায়গা করে দিয়ে এলাম। আমি যদি ছেড়ে সরে না আসতাম তা হলে কি নতুন একজন জায়গা পেত? পেত না। অন্যকে জায়গা দেওয়া আমাদের মূল মন্ত্র কল্যাণ। এ কথা ভুললে চলবে না।’

কল্যাণ সমাজপতি থমথমে গলায় বলেছিলেন, ‘আপনার সঙ্গে আমার তুলনা চলে না মনোজদা। এরপর হয়তো পার্টি আপনাকে হেলথ সেক্টরের অর্গানাইজেশন দেখবার দায়িত্ব দেবে। আপনাদের অনেক প্রতিভা। আমি সামান্য শিক্ষক। পার্টি সদস্য। আমাকে এই অপমানের কারণ কী? কাউন্সিল থেকে সরাবার আগে একবার আমাকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করলেন না আপনারা?’

‘মনোজদা’ বললেন, ‘শান্ত হও কল্যাণ। পার্টি সদস্য হয়ে এই উত্তেজনা তোমাকে মানায় না। মধুজা রায়কে ঢোকানোর অর্ডার পার্টির ওপর মহল থেকে এসেছে। আমরা ইউনিভার্সিটি, কলেজগুলোকে ডাইরেক্ট পার্টি কন্ট্রোল থেকে সরিয়ে রাখতে চাইছি। এমন মানুষ সেখানে থাকবেন যাঁরা আমাদের সমর্থন করেন, পছন্দ করেন, আমাদের জন্য স্যাকরিফাইজ করবেন, কিন্তু সরাসরি দল করেন না। ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল, এগজিকিউটিভ কাউন্সিলগুলো থেকে আমরা ধাপে ধাপে সব পার্টি মেম্বার সরিয়ে নেব। এখানেও সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ হয়েছে। আমিই তোমাকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছি। আরও সরবে।’

‘মধুজা রায় পার্টির জন্য সাকরিফাইজ করবে বলে মনে করছেন আপনারা। পার্টির দুঃসময়ে সঙ্গে থাকবে?’

‘মনোজদা’ বললেন, ‘তুমি তো জানো পার্টির বিশ্বাসভাজন হতে অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তুমিও সেভাবেই পার্টিতে এসেছ। বুর্জোয়া কাঠামো এবং আমাদের সংগ্রামী চেহারার মধ্যে বিস্তর ফারাক। আমরা কষ্টি পাথর যাচাই করে তবে একজনকে পার্টির পবিত্র ভূমিতে পা রাখতে দিই। আমাদের বিচার ভুল হয় না। মধুজা রায়ের মতো শিক্ষিত, বুদ্ধিমতীকে পাশে পেয়ে আমাদেরই শক্তি বাড়ল। সবাইকে তো মিটিং, মিছিল করতে হবে না। কেউ কেউ কলেজ, ইউনিভার্সিটি পরিচালনা করবে। মধুজাকে আমরা সেইভাবে প্রাোজেক্ট করব। সে কোনওদিনই আমাদের ছেড়ে যাবে না।’

ক্ষমতা বদলের দুদিনের মধ্যে মধুজা রায় পালটে গেলেন। অন্য দলের জয়ের উল্লাসে যখন কলকাতা ফুটছে, মধুজা রায় টিচার্স রুমে বসে ঘোষণা করলেন, ‘এতদিনে শিক্ষাকে রাজনীতি মুক্ত করা হল। চলে যাওয়া পার্টির দাপটে নাভিশ্বাস উঠছিল। উফ, বাঁচা গেল! এবার মন দিয়ে লেখাপড়ার চর্চা করা যাবে।’

টিচার্স রুমে উপস্থিত সব শিক্ষক-শিক্ষিকারাই অবাক হয়েছিলেন। মধুজা রায়ের মুখে এ কী কথা!

এসব কথা তো আর পলাশকে বলা যাবে না। বলা যাবে না, মধুজা রায়ের মতো মানুষ কোনও নির্দিষ্ট দলের হয় না, এরা সব দলেরই বেনো জল। কল্যাণ সরকার তাই চুপ করে গেলেন। তা ছাড়া এখন মধুজা রায়ই প্রধান শত্রু। তাঁকে জোর ধাক্কা দিতে হবে। সত্যি কথা বলতে কী, এই ঘটনায় যতটা না বারিধারা নামে মেয়েটির মান-অপমানের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে, তার থেকে বেশি রয়েছে রাজনীতি। এতে লজ্জার কিছু নেই। বারিধারার ঘটনা একটা ইস্যু। এই ইস্যুটাকে ধরে রাজনীতি করে মূল জায়গায় আঘাত করতে হবে। এই ধরনের মানুষকে যারা মদত দেয়, তাদের সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।

কল্যাণ সরকার এবার মুখ খুললেন। বললেন, ‘পলাশ, তুমি, তোমাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলো।’

পলাশ বলল, ‘কী বলব সেটাই তো কথা স্যার। যতক্ষণ না বারিধারার বিরুদ্ধে মধুজা ম্যাডাম কোনও অ্যাকশন নিচ্ছেন ততক্ষণ তো আমরা কোনও মুভ করতে পারব না।’

কল্যাণ সরকার বললেন, ‘সুদর্শন নামের ওই গুণ্ডাটা কোন পার্টি করে?’

পলাশ বলল, ‘কোনও পার্টি করে বলে তো শুনিনি। গুলতানি মারা আর নেশা-ভাং করাই ওর কাজ।’

অরিন্দম সেনগুপ্ত বললেন, ‘আমরা যে শুনলাম, ওর কোনও আত্মীয় সরকারি অফিসার।’

কল্যাণ বললেন, ‘সরকারি অফিসার মানেই তো আর পলিটিক্যাল লোক নয় অরিন্দম।’

অরিন্দম বললেন, ‘সেটা ঠিক। কিন্তু রাজনৈতিক চেহারা না থাকলে কী হয়েছে? একটা খারাপ ছেলের বিরুদ্ধে স্টুডেন্টরা আন্দোলন করতে পারে না? যে মেয়েটিকে অপমান করছে সে তো সবার সহপাঠিনী।’

পলাশ সামান্য হেসে বলল, ‘স্যার, খারাপ ছেলের বিরুদ্ধে আন্দোলন বলে কিছু হয় না। কোনও স্টুডেন্ট মুভমেন্ট এরকম কখনও হয়নি। পলিটিক্স ছাড়া আবার আন্দোলন কী? যেখানে যত হইচই হয়েছে সবের পিছনেই রাজনীতি থেকেছে। খারাপ ছেলেকে ইউনিভার্সিটি তাড়িয়ে দিতে পারে। আরও বেশি কিছু হলে পুলিশ দিয়ে অ্যারেস্ট করাতে পারে। আর পাঁচটা ছেলেমেয়ে গিয়ে চড়-থাপ্পড় মারতে পারে। কিন্তু একটা মুভমেন্ট হবে কী করে? এই ক্ষেত্রেও তাই। শুনতে খারাপ লাগলেও আমাদের নামতে হবে মধুজা ম্যাডামের রাজনীতির বিরুদ্ধে, ঘটনার বিরুদ্ধে নয়। উনি সুদর্শনকে সাপোর্ট করছেন এটাই ইস্যু হতে পারে। সুদর্শন কী করেছে সেটা নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি।’

অরিন্দম বললেন, ‘আমরাও তাই চাইছি।’

পলাশ বলল, ‘তবে উনি সুদর্শনকে সাপোর্ট করছেন তার তো একটা প্রমাণ চাই। ছেলেমেয়েদের বিশ্বাস করাব কী করে?’

কল্যাণ বলল, ‘বারিধারা যদি বলে?’

পলাশ বলল, ‘আমরা তো চাইছি। কিন্তু আপনারা তো বারিধারার সঙ্গে কথা বলে তাকে রাজি করাতে পারেননি।’

অরিন্দম সেনগুপ্ত চাপা গলায় বললেন, ‘সেই জন্যই তোমাকে ডেকেছি। তোমরা ওকে রাজি করাও। তোমরা ওর বন্ধু, তোমাদের কথা শুনবে।’

পলাশ অন্যমনস্কভাবে বলল, ‘বারিধারা মেয়েটি অন্যরকম। নিজের ভাবনাচিন্তা স্পষ্ট। তেজ আছে কিন্তু অন্যের কথায় প্রভাবিত হবে কি না সন্দেহ।’

কল্যাণ ঝুঁকে পড়ে বললেন, ‘বন্ধুরা তো আর অন্য কেউ নও। রাজি করানোটা তোমার দায়িত্ব। তাকে বোঝাও। সে তোমাদের কাছে বলুক, কীভাবে মধুজা রায় তাকে হুমকি দিয়েছে। সুদর্শন নামের ছেলেটার কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছে। তারপর তোমরা সেই অভিযোগ নিয়ে গোলমাল শুরু করো। মিটিং, মিছিল, পোস্টার…যা তোমরা করতে পারো।’

পলাশ উঠে দাঁড়াল। চিন্তিত গলায় বলল, ‘ইচ্ছে তো খুব হচ্ছে, কিন্তু দুটো সমস্যা। এই সময়ে ছেলেমেয়েদের কতটা পাব বুঝতে পারছি না। সময়টা খারাপ। মধুজা রায়ের বিরুদ্ধে নামতে হলে সাহস করে নামতে হবে। কেরিয়ার নিয়ে ভাবলে চলবে না। আর দু’নম্বর পয়েন্ট হল, বারিধারা রাজি হবে কি না। দেখি আগে বারিধারাকে ধরতে চেষ্টা করি। ওকে কনভিন্স না করাতে পারলে কোনও লাভ হবে না। যাই দেখি বারিধারা এখন কোথায়?’

বারিধারা মধুজা রায়ের ঘরে।

ম্যাডামকে দেখে বারিধারার কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। ভদ্রমহিলা কোনও একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত। গলাও অনেক নরম।

‘কেমন আছো বারিধারা?’

বারিধারা বলল, ‘ভালো ম্যাডাম। আপনি?’

খুব অন্যমনস্কভাবে মধুজা বললেন, ‘একটু আগে পর্যন্ত ভালো ছিলাম। এখন আর নেই।’

বারিধারা খুব অবাক হল। মধুজা রায়ের এই ধরনের দার্শনিক কথা বলবার মানে? তিনি আজ একজন সাহসী মেয়েকে অপমান করবেন বলে ঠিক করেছেন। সেই মেয়েটি আর কেউ নয় তার ছাত্রী। সে একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। সেই প্রতিবাদের জন্য তাকে শাস্তি দেবেন। শাস্তি খুব সহজভাবে হবে না। একজন গুণ্ডার পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে। এই শাস্তি শান্তিপূর্ণভাবে সমাপন করতে পারলে তিনি আরও ক্ষমতা পাবেন। শিক্ষাজগতের সঙ্গে জড়িত ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ব্যক্তিরা তার প্রতি খুশি হবে। ছাত্রীকে অপমান করে ক্ষমতাশালীদের তুষ্ট দরকার মতো মজার সময় তিনি হঠাৎ দার্শনিক কথা বলছেন কেন?

বারিধারা বলল, ‘ম্যাডাম ঠিক বুঝতে পারলাম না।’

এবার জোর হাসলেন মধুজা রায়। নরম গলায় বললেন, ‘মধুজা তুমি নিশ্চয় আমাকে ভুল বুঝছ।’

বারিধারা এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে একটু চুপ করে রইল। তারপর বলল, ‘ম্যাডাম, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেদিন আপনি যেমন বলেছিলেন, আমি তাই করব। ওই ছেলের কাছে আজ আমি ক্ষমা চাইব। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে ম্যাডাম।’

মধুজা রায় ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘কী শর্ত?’

বারিধারা চোয়াল শক্ত করে এবার দাদুর শিখিয়ে দেওয়া প্ল্যান বলল।

‘ওই ছেলেকেও তিথির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যাদের সামনে সে তিথিকে অপমান করেছে সবার সামনে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’

এবার একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। মধুজা রায় স্থির চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন…।

বারিধারা চমকে উঠল। সে কি ঠিক শুনছে? হতেই পারে না, অসম্ভব। সে বিড়বিড় করে বলল, ‘ম্যাডাম, আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। আপনি কি দয়া করে আর একবার বলবেন?’