» » চতুর্থ কিস্তি

বর্ণাকার

প্রচেত গুপ্ত

একটু পরে রোদ উঠবে

পঁয়ত্রিশ

‘কী হয়েছে স্যার? আমাকে ডেকেছেন?’

অরিন্দম সেনগুপ্ত বললেন, ‘বসো বারিধারা। তোমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে।’

দুটো চেয়ার ছেড়ে বসা কল্যাণ সমাজপতির সামনে একটা খাতা। তিনি সম্ভবত কোনও স্টুডেন্টের নোটস দেখছেন। তিনিও অস্ফুটে বললেন, ‘বসো।’

বারিধারা উলটো দিকের চেয়ারে খানিকটা জড়সড় হয়েই বসল। যতই হোক দুজন মাস্টারমশাই।

অরিন্দমবাবু বললেন, ‘বারিধারা তোমার সঙ্গে মধুজা রায়ের গোলমালের কথা আমরা শুনেছি।’

বারিধারা চমকে উঠল। এই কথা স্যারেরা জানলেন কী করে! ঘটনা কী করে ছড়াল! সেদিন তো মধুজা ম্যাডাম তাকে একা ডেকে হুমকি দিয়েছিলেন। তখন তো ঘরে কেউ ছিলই না। সে নিজেও কাউকে বলেনি। এমনকী যাকে নিয়ে এত ঝামেলা, সেই তিথিকে পর্যন্ত নয়। তাহলে?

বারিধারার চমকে যাওয়ারই কথা। সে তো আর জানে না, মধুজা রায়ের অফিসের খবর তার খাস পিওন লবই পাচার করে। কাজটা অন্যায় জেনেও করে। ম্যাডাম যদি তার ভাইপোর চাকরি নিয়ে অন্যায় কাজ করতে পারে, সে করতে পারবে না কেন? চাকরি উনি না-ই দিতে পারতেন, কিন্তু উনি খবরটা জেনে নিয়ে নিজের ক্যান্ডিডেটকে ঢুকিয়ে দিলেন। এটা শুধু অন্যায় নয়, ভয়ঙ্কর একটা কাজ। ম্যাডাম খুব ভালো করেই জানতেন, বিষয়টা নিয়ে লব কিছু বলতে পারবে না। তার হাতে কোনও প্রমাণ নেই। আর থাকলেই বা কী হত? সে মধুজা রায় একজন প্রফেসর এবং ক্ষমতাশালী। ইউনিভার্সিটির ওপর মহলে যেমন হাত আছে, সরকারের দপ্তরেরও চেনা জানা। আর সে একজন সামান্য পিওন। লব বাধ্য হয়ে চুপ করে গিয়েছিল। তবে সেই ঘটনা নিয়ে মুখে কিছু না বলতে পারলেও প্রতিজ্ঞা করেছে, এই মহিলার সর্বনাশ দেখে ছাড়বে। সে জানে, ইউনিভার্সিটিতে মধুজা রায়ের বিরুদ্ধে এখন অনেকেই চলে গেছে। মধুজা রায় ক্ষমতার দম্ভে মত্ত। ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। রাজনৈতিক মদতও আছে। খেয়াল রাখেন না যে তাঁর বিরুদ্ধে অনেকেই ভিতরে ভিতরে ফুঁসছে। অপেক্ষা করে আছে একটা সুযোগ পেলেই চেপে ধরবে। এদের কাছেই লব খবর পাচার করে। অরিন্দম স্যারকেও সে বারিধারার খবর দিয়েছে। এই কথা বারিধারা জানবে কী করে? তার মুখ দেখে স্যারেরা বুঝতে পারলেন। কল্যাণ সমাজপতি খাতা থেকে মুখ তুললেন।

‘বারিধারা, আমরা সব কথা শুনেছি। তুমি ঠিক কাজ করেছ।’

অরিন্দম বললেন, ‘তুমি সাহসের কাজ করেছ। ওই ছেলেটা তোমার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে তাতে এই শাস্তিটাই ওর প্রাপ্য ছিল। আমি সুদর্শন নামের ছেলেটি সম্পর্কে আগেও কমপ্লেইন শুনেছি। গুণ্ডা টাইপ। লেখাপড়া করে না। ড্রপ দিয়ে বসে আছে। শুধু ইউনিয়নবাজি করে। দল বদলের পলিটিক্স। শুনেছি কলেজে একরকম ছাত্র রাজনীতি করত, ইউনিভার্সিটিতে এসে আরেক রকম করছে। যেখানে যাদের ক্ষমতা তাদের সঙ্গে থেকে গুণ্ডামি, অসভ্যতা করে।’

বারিধারা বলল, ‘স্যার, ছেলেটা কিন্তু আমার সঙ্গে কিছু করেনি।’

কল্যাণ সমাজপতি আর অরিন্দম স্যার একটু থমকে গেলেন। মুখ চাওয়াচায়ি করলেন। কল্যাণ সমাজপতি ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘তোমার সঙ্গে করেনি মানে? তুমি সুদর্শনকে চড় মারোনি?’

বারিধারা শান্তভাবে বলল, ‘মেরেছি স্যার। তবে আমার জন্য মারিনি।’

কল্যাণস্যার অবাক হয়ে বললেন, ‘তাহলে কার জন্য মেরেছ?’

তিথির জন্য স্যার। আমাদের ক্লাসের তিথি। ওই ছেলেটা দুদিন আগে সবার সামনে তিথিকে বিশ্রী একটা কথা বলে। স্ল্যাং। তিথি ভীতু ধরনের মেয়ে। সে কোনও প্রতিবাদ করতে পারেনি। পরে আমাকে বলে। আমি বলেছিলাম, ব্যবস্থা নেব। সেই ব্যবস্থাই নিয়েছি।’

অরিন্দমবাবু মাথা নেড়ে অস্ফুটে বলে, ‘একটু ভুল খবর পেয়েছিলাম।’

লবই ভুল করেছে। সে আড়াল থেকে মধুজা রায় আর বারিধারার কথা শুনেছে। কিন্তু তিথি নামটা গুলিয়ে ফেলেছিল। রিপোর্টটা তাই ভুল হয়েছে। নাম গুলিয়ে ফেলাটাই স্বাভাবিক। আজকাল অনেক মেয়ে নিজের বা বন্ধুর অপমানের প্রতিবাদ করে। পথ চলতে গেলে মেয়েদেরে এখনও নানারকম অসভ্যতার মুখোমুখি হতে হয়। আগে মেয়েরা মুখ বুজে থাকত, এখন প্রতিবাদ করে। তবে তার সংখ্যাও আর ক’টা? হাজারে একটা কিনা সন্দেহ। সেই জায়গায় শুধু প্রতিবাদ নয়, একেবারে প্রতিশোধ! তাও আবার নিজের জন্য নয়, বন্ধুর হয়ে।

কল্যাণ সমাজপতি একটু ভেবে নিয়ে বললেন, ‘বাঃ এটা তো আরও ভালো! তুমি একটা এক্সাম্পেল এস্টাবলিশ করলে বারিধারা। অন্যদের শেখা উচিত। অন্যায় করলে পার পাওয়া যায় না।’

অরিন্দম সেনগুপ্ত বললেন, ‘আমিও খুব খুশি হলাম বারিধারা।’

বারিধারা বলল, ‘থ্যাঙ্কু স্যার। কিন্তু আমি কিছু প্রমাণ করবার জন্য করিনি। আমার খুব রাগ হয়েছিল। ছেলেটা যদি কোনও চালাকচতুর সাহসী মেয়ের সঙ্গে এই অসভ্যতাটা করত, আমি হয়তো কিছু করতাম না। একটা সহজ সরল ভীতু মেয়ের সঙ্গে করল বলেই রেগে গিয়েছি। তবে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না স্যার, ঘটনা জানাজানি হল কী করে। আমি তো ওই ছেলেকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে চড় মেরেছি। কাউকে বলিওনি।’

অরিন্দমবাবু একটু চুপ করে থেকে কিছু একটা ভাবলেন। তারপর বললেন, ‘দেখো বারিধারা, এসব ঘটনা চাপা থাকে না। ওই ছেলেটির হায়ার লেভেলে চেনাজানা আছে। তার মারফতই তোমাদের মধুজা ম্যাডাম বিষয়টা জেনেছেন। আমরা শুনেছি, উনি তোমাকে ডেকে হুমকি দিয়েছেন। ওই ছেলেটির কাছে ক্ষমা চাইতেও বলেছেন।’

কল্যাণস্যার বললেন, ‘শুধু তাই নয় বারিধারা, আমার কাছে খবর আছে, উনি এক্সামিনেশন সেকশনে যোগাযোগ করেছিলেন। তোমার বিভিন্ন পরীক্ষার রেজাল্টের রেকর্ড চেয়ে পাঠিয়েছেন।’

বারিধারা অবাক হল না। মধুজা রায় যে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে শুরু করবে, সেটা তার আঁচ করাই আছে। তবে রেজাল্ট জেনে কী করবে?’

অরিন্দম সেনগুপ্ত বললেন, ‘আমরা ওখান থেকেই জানতে পেরেছি। আমরা আপত্তিও করেছি।’

বারিধারা বলল, ‘স্যার রেজাল্টের রেকর্ড নিয়ে উনি কী করবেন?’

কল্যাণ সমাজপতি বললেন, ‘কী আর করবেন, চাপ দেবেন ভেবেছিলেন হয়তো। লাভ হবে না। সবক’টা সেমিস্টারেই তুমি ফার্স্ট ক্লাসের থেকে অনেকটা করে এগিয়ে আছ।’

‘ম্যাডাম তো সে কথা জানেন।’ বারিধারা নীচু গলায় বলল।

অরিন্দমস্যার এবার নড়েচড়ে বসলেন।

‘দেখো বারিধারা, তুমি স্টুডেন্ট, একজন টিচারের নামে তোমাকে এভাবে বলা হয়তো ঠিক নয়, কিন্তু তোমরা জানো, তোমাদের মধুজা ম্যাডাম প্রপার টিচারের মতো বিহেভ করেন না। তোমার বেলাতেও করছেন না। তিনি তোমাকে কীভাবে বিপদে ফেলতে চান, উনিই জানেন। তবে তোমাকে রেজাল্টে আটকাতে পারবেন না। অন্য কেউ হলে নম্বর কমিয়ে ফার্স্ট ক্লাস আটকানোর চেষ্টা হত। সেটা সম্ভব নয়। তুমি অনেক এগিয়ে আছ। হয়তো চাপে ফেলতে চান। যাই হোক, তুমি আমাদের ডিপার্টমেন্টের একজন খুব ভালো ছাত্রী। এতদিন জানতাম তুমি পড়াশোনায় ভালো, এখন জেনেছি, তুমি মানুষ হিসেবেও ভালো। এটা ইউনিভার্সিটির জন্য গর্বের কথা। তুমি যদি দেখো, অন্যায়ভাবে কেউ তোমার ক্ষতি করবার চেষ্টা করে জেনে রাখবে, আমরা তোমার পাশে আছি।’

অরিন্দমস্যার এবার একমুখ হেসে বললেন, ‘ব্যস বারিধারা, তোমাকে আমাদের এই সাপোর্টের কথাটা জানানোর জন্যই ডাকা। তুমি মাথা নোয়াবে না।’

বারিধারার খুব আনন্দ হচ্ছে। এত ভালো, এত বড় দুজন মানুষ তাকে এভাবে সমর্থন করলেন, এটা খুব বড় পাওনা। সে অবশ্য বিশ্বাস করে, পৃথিবীটা পুরো নষ্ট হয়ে যায়নি। মধুজা রায়ের মতো মানুষই শুধু নেই, এই পৃথিবীতে অরিন্দমস্যার, কল্যাণস্যারের মতো মানুষও আছেন। তার ঠাকুরদা। কমলকান্তি সেন আছে। জামাইবাবুর মতো মজার পাগলাটে মানুষ আছে। তার মা, দিদির মতো সুন্দর মানুষ আছে। সব থেকে বড় কথা, তার শ্রবণের মতো বোকা অথচ ভালোমানুষ আছে।

বারিধারা চেয়ার থেকে উঠে স্যারদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে গেলে তাঁরা বাধা দেন। অরিন্দম সেনগুপ্ত চাপা গলায় বলেন, ‘যদি মনে করো তুমি কোনও কিছু করবে, আমাদের জানিও।’

বারিধারা একটু থতমত খেয়ে বলল, ‘আমি কী করব?’

কল্যাণস্যার হাত তুলে বলল, ‘আহা তুমি একা নও, যদি ভাবো, তোমরা বন্ধুরা মিলে এর প্রতিবাদে কোনও অ্যাজিটেশন-ট্যাজিটেশন করবে, আমাদের বোলো। সেখানে আমরা গিয়ে তোমাদের সমর্থন করব। কলেজের কোনও স্টুডেন্টের সঙ্গে নোংরা আচরণ করলে শিক্ষকদের উচিত পাশে দাঁড়ানো। সে যেই করুক। গুণ্ডাই করুক, আর টিচাররাই করুক।’

বারিধারা একটু ঘাবড়ে গিয়েই বলে, ‘না না, ওসব দরকার নেই স্যার।’

অরিন্দমস্যার একটু যেন হতাশ হলেন। বললেন, ‘না করতে হলেই ভালো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনাই হবে। এটা ক্ষোভ-বিক্ষোভের জায়গা নয়। তার পরেও অনেক ঘটনা বাধ্য করে। যাই হোক, আশা করি তোমার কোনও সমস্যা হবে না। তুমি এসো।’

কল্যাণ সমাজপতি বললেন, ‘তোমাকে আবার অভিনন্দন জানাচ্ছি বারিধারা। আশীর্বাদও করছি। তুমি এইভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’

বারিধারা মাথা চুলকে একটু দ্বিধার সঙ্গে বলল, ‘স্যার, ব্যাপারটা নিয়ে বেশি হইচই না হওয়াই ভালো। তিথি মেয়েটা নার্ভাস ধরনের। তাকে নিয়ে এত কিছু হলে হয়তো ইউনিভার্সিটিতে আসাই বন্ধ করে দেবে।’

অরিন্দম সেনগুপ্ত এবং কল্যাণ সমাজপতি পরস্পরের মুখের দিকে তাকালেন। অরিন্দম হেসে বললেন, ‘ডোন্ট ওয়ারি বারিধারা। তুমি না চাইলে এটা আর কেউই জানতে পারবে না। এটা তোমার ওপরই নির্ভর করছে। আমরা শুধু একটা কথাই বলতে পারি। একটা ন্যায়ের কাজ করতে গিয়ে অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করাটাও কিন্তু ঠিক নয়। যাই হোক বেস্ট অফ লাক। আশা করি এই বিষয়ে কোনও সমস্যা হবে না।’

কল্যাণস্যার ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘আজ মধুজা ম্যাডাম তোমাকে ডেকেছেন না?’

এনারা এতটা দূর জেনে গেছেন। বারিধারা বলল, ‘হ্যাঁ স্যার।’

কল্যাণস্যার বললেন, ‘ওই অসভ্য ছেলেটাকেও তো ডেকেছে।’

বারিধারা মাথা নাড়ল। নীচু গলায় বলল, ‘একটা মিটমাট চাইছেন।’

অরিন্দমস্যার স্থির চোখে বারিধারার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি মিটমাট করবে?’

বারিধারা একটু হেসে বলল, ‘আমার মিটমাট করবার কী আছে স্যার? আমি যা করবার তো করেই দিয়েছি। আমি তিথিকে বলেছিলাম, ওই ছেলেকে শাস্তি দেব। দেওয়া হয়ে গেছে।’

দুই মাস্টারমশাইয়ের কাছে কথাটার মানে খুব স্পষ্ট হল না। বারিধারাও করতে চায়নি। এই দুজনকে সে পছন্দ করলেও নিজের রণকৌশল যুদ্ধের আগে ফাঁস করতে চাইছে না। একানব্বই বছরের দাদু তাকে যে প্ল্যান দিয়েছে, সেটাকেই ঘষেমেজে নিয়েছে।

বারিধারা ঘর থেকে বেরোবার পর কল্যাণবাবু বললেন, ‘মনে হয় মেয়েটা কমপ্রাোমাইজ করে নিচ্ছে।’

অরিন্দমবাবু বললেন, ‘আমারও তাই মনে হচ্ছে। মেয়েটা মধুজা রায়ের কাছে সারেণ্ডার করবে। ওই ছেলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে।’

কল্যাণবাবু মুখ দিয়ে ‘চুক চুক’ ধরনের আওয়াজ করে বললেন, ‘সমস্যাটা অন্য অরিন্দমদা। বারিধারার চড় মারা হয়ে গেছে। এবার ওর কম্প্রোমাইজ করা বা না করায় কিছু এসে যায় না। কিন্তু মধুজা রায়ের এসে যায়। মেয়েটা যদি ওই ছেলের কাছে ক্ষমা চায়, তাহলে মধুজা রায়ের লাভ। সে ওই পাওয়ারফুল পারসেনের কাছে ক্রেডিট নিতে পারবে। নিজে আরও ক্ষমতা ম্যানেজ করবে। এই ধরনের বিষয়গুলো যে-কোনও মানুষের কাছেই সেনসেটিভ। যাক, আমরা তো বারিধারাকে অনেক উত্তেজিত করবার চেষ্টা করলাম। বললাম, প্রতিবাদ থেকে সোরো না। অ্যাজিটেশন করলে আমরা তোমার পাশে আছি। এর বেশি তো আর বলতে পারি না।’

অরিন্দমবাবু বললেন, ‘ঠিকই তো। আমরা তো বলতে পারি না তুমি একটা হইচই বাধাও।’

কল্যাণবাবু বললেন, ‘ঘটনাটা কিন্তু খুব সেনসেটিভ ছিল অরিন্দমদা। মধুজা রায়কে ছেলেমেয়েরা চেপে ধরতে পারত। খারাপ লোকদের সঙ্গে ওর যোগাযোগ ফাঁস হয়ে যেত। খুব মিস হয়ে গেল।’

অরিন্দমবাবু খানিকটা চুপ করে থেকে, খানিকটা আপনমনেই বললেন, ‘আমার এখনও আশা আছে। আমি পলাশকে একবার ডাকি।’

‘পলাশকে আপনি কিছু বলেছেন নাকি?’

অরিন্দমবাবু মোবাইলে নম্বর টিপতে টিপতে বললেন, ‘বলিনি, হিন্টস দিয়েছি।’

পলাশ এই ইউনিভার্সিটিরই হিস্ট্রির ছাত্র। এবার ফাইনাল দিয়েছে। সে গতবার স্টুডেন্টস ইউনিয়নের আর্টস ফ্যাকাল্টিতে জেনারেল সেক্রেটারি হয়েছিল। এবার নমিনেশন জমা দিতে পারেনি। তাকে নাকি হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তবে বিষয়টা নিয়ে পলাশের নিজেদের দলেই গোলমাল আছে। একদল বলছে, পলাশ ভয়ে নমিনেশন জমা দিতে আসেনি। তাকে কেউ মারেওনি, হুমকিও দেয়নি। এসব অজুহাত। আবার একদল বলেছে, পলাশের মতো লিডারশিপে থাকা ছেলে মার খেলে সাধারণ ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভয় ছড়াত। এমনিতেই এই সময়ে কেউ ক্ষমতার বাইরে থেকে রাজনীতি করতে চাইছে না, এতে তো আরও করবে না। ফলে পলাশের নমিশেন জমা না-দেওয়াটা ঠিক কৌশল হয়েছে। ভয় বা কৌশল যাই হোক না কেন, এই ঘটনায় পলাশের ইমেজে ক্ষতি হয়েছে। তার দলেরও হয়েছে। সে তক্কে তক্কে আছে। ইউনিভার্সিটিতে একটা কোনও গোলমাল পাকিয়ে নিজেদের হারানো জমি যদি খানিকটা ফিরে পাওয়া যায়।

ফোন করবার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পলাশ স্যারেদের কাছে চলে এলো।