☼ প্রচেত গুপ্ত ☼
একটু পরে রোদ উঠবে
চৌত্রিশ
সেদিন কলিং বেল টিপতে শ্রবণ এসে দরজা খুলেছিল। নীল রঙের পায়জামা আর কালো রঙের টি শার্টে তাকে ঝলমলে লাগছে। ডানদিকের গালে খানিকটা সবুজ রঙের আঁচড়। নিশ্চয় ছবি আঁকছিল। মুখে রং লেগে গেছে।
বারিধারা থমকে গেল। কোথায় জ্বর! দিব্যি সুস্থ ছেলে। বরং অন্যদিনের থেকে বেশি ফ্রেশ লাগছে।
‘তোমার না জ্বর?’
শ্রবণ মুখ শুকনো করবার চেষ্টা করল। হল না। হেসে বলল, ‘ছিল। এখন কমে গেছে। নেই বলতে পারো।’
বারিধারা ভুরু কোঁচকাল। তার রাগ হচ্ছে। জলকাদায় তাকে বেরোতে হয়েছে। মায়ের সঙ্গে কথা বলবার ফাঁকেই শ্রবণের মেসেজের রিপ্লাই পাঠিয়েছিল।
‘জ্বর কত?’
জবাব এসেছিল দ্রুত—’জানি না। কপালে হাত দিয়ে মনে হচ্ছে অনেক। থার্মোমিটার খুঁজে পাচ্ছি না। বউদি কোথায় রেখে গেছে। তুমি এলে খুঁজে দিও।’
বারিধারা রেগে গিয়ে লিখেছিল—’আই কান্ট। আমি থার্মোমিটার খুঁজতে তোমার বাড়ি যেতে পারব না।’
জবাব এল—’আচ্ছা, থার্মোমিটার খুঁজতে হবে না। এমনি এসো।’
বারিধারা তারপর বিছানায় উঠে বসে হেসে বলেছিল, ‘যাক, মাতৃআজ্ঞাই পালন করলাম। শয্যাত্যাগ করেছি।’
মণিকুন্তলাদেবী রাগের ভান দেখিয়ে বললেন, ‘খুব করেছ, আমি ধন্য হয়েছি। এবার বাথরুমে যাও।’
এ বাড়িতে বিছানা তোলা, ঘর ঝাড়পোঁছ করবার জন্য একাধিক লোক আছে। তারপরেও মণিকুন্তলা নিজের বিছানা নিজেই তোলেন। ছোটবেলা থেকে মেয়েদেরও সেরকম শিখিয়েছেন। মেয়েদের বিছানায় বাইরের লোকের হাত দেওয়া উচিত না। মহিলা হলেও নয়। মেয়েদের বিছানা একটা ব্যক্তিগত বিষয়। অন্য কারও সেই ব্যক্তিগত বিষয় জানা উচিত নয়। কম বয়সে বারিধারা আর মেঘবতী দুজনেই অতি উৎসাহে সেই কাজ করেছে। তারাও যে ‘ব্যক্তি’ এবং তাদের যে ‘ব্যক্তিগত’ বিষয় থাকতে পারে, এটা ভেবে তাদের বিরাট আনন্দ ছিল। কিন্তু যত বড় হয়েছে এই সামান্য কাজে তাদের আলিস্যি এসেছে। মেঘবতী শ্বশুরবাড়িতে নিজেকে বদলেছে, বারিধারার আলিস্যি বেড়েছে। বকাবকি করলে মেয়ে ফাঁকিবাজির জন্য নানারকম যুক্তি দেখায়।
‘মা বাসি বিছানা হল বাসি লুচির মতো। খেয়ে দারুণ আরাম।’
মণিকুন্তলা কটমট করে বলেন, ‘তোমাকে তো বিছানা খেতে বলিনি বৃষ্টি। মাথা গরম করে দেওয়া কথা বলছ কেন?’
বারিধারা হেসে বলে, ‘বিছানা খাওয়া মানে কচমচ করে খাওয়া নয় মা। বাসি বিছানা খাওয়া হল বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়া, কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শোনা, পায়ের ওপর পা তুলে গল্পের বই পড়া।’
মণিকুন্তলা আরও রেগে যান। বলেন, ‘এই সবক’টা কাজ পরিষ্কার করেও করা যায়।’
বারিধারা ঝলমলে মুখে বলল, ‘যাবে না কেন? অবশ্যই যায়। লুচি কি ভেজেই গরম গরম খাওয়া যায় না? তার পরেও বাসির টেস্ট দারুণ। তুমি একটা বই টানটান, কাচা বেডকভার, নতুন বালিশের ওয়াড়, পাটভাঙা চাদরের মধ্যে পড়ো, আর দু দিন ফেলে রাখা, চাদর ঘুচিমুচি হওয়া বিছানায় পড়ো—দেখবে দুটো অন্যরকম লাগবে। গানের বেলায়ও তাই। এমনকী ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বললেও দেখবে, টাটকা বিছানা আর বাসি বিছানা আলাদা এফেক্ট তৈরি করছে। ইচ্ছে করলে তুমি পরীক্ষা করে দেখতে পারো। তারপর যদি বাইরে এমন মেঘবৃষ্টি থাকে, তাহলে তো কথাই নেই।’
মণিকুন্তলার মাথা গরম হয়ে যায়। এই মেয়ের কথা শুনলে রাগ না করে থাকা যায়! আলিস্যিপনার পক্ষে বানিয়ে কতরকম যুক্তি দিচ্ছে। মনে হয় পিঠে গুম গুম করে দিই দুটো। ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে তো কী হয়েছে? মা ছেলেমেয়েকে সবসময় দুটো মার দিতে পারে। তাও মণিকুন্তলা নিজেকে সামলালেন।
‘থাক অনেক লেকচার হয়েছে। এবার উঠে পড়ো। পরে কোনওদিন বাসি বিছানা নিয়ে গবেষণা কোরো। তোমার দাদুকেও নিও। তিনি নাতনির পাগলামিকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য সবসময় তো মুখিয়ে থাকেন।’
বারিধারা তড়াক করে খাট থেকে নেমে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘এটা ভালো আইডিয়া। বাসি বিছানা নিয়ে গবেষণা। বাইরে কি জল জমেছে মা?’
মেয়ের বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন, ‘নন্দ গাড়ি বের করবার সময় বলছিল। চৌমাথায় জল জমেছে।’
বারিধারা আড়মোড়া ভেঙে বলল, ‘সর্বনাশ হল। জল ভাঙতে হবে।’
‘সর্বনাশের কী? আজও বেরোতে হবে?’
বারিধারা আপন মনে বলল, ‘বেরোব না ভেবেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে বেরোতে হবে।’
নন্দকাকা শ্রবণের গলির সামনে নামিয়ে দিল।
‘আমি অপেক্ষা করি ছোড়দি?’
ঝরঝর করে বৃষ্টি পড়ছে। গলির মুখটাতেও জল জমেছে। বারিধারা প্যান্ট গুটিয়ে বলল, ‘না নন্দকাকু। আমি এখান থেকে ট্যাক্সিফ্যাক্সি কিছু একটা নিয়ে চলে যাব। তুমি বাড়ি যাও।’
গলির ভিতরে ঢুকতেই রাস্তার জমা জল বাড়ল। হাঁটু পর্যন্ত প্যান্টটা ভিজে গেল মুহূর্তে। তারমধ্যে আবার ওপর থেকে জল পড়ছে। ছাতায় ছাঁট আটকানো যায় না। ফলে শার্টটাও ভিজল। মোটামুটি ভিজে ঢাউস হয়ে সেদিন শ্রবণের বাড়ির দরজার সামনে হাজির হয়েছিল বারিধারা। গেট খুলে ঢোকবার সময় চরম কেলেঙ্কারিটা হল। পায়ের চটিটা বুড়ো আঙুলের কাছ থেকে ফটাং করে গেল ছিঁড়ে।
দরজা খুলে ‘জ্বর কমে গেছে’ জানিয়ে শ্রবণ বোকার মতো হাসল।
বারিধারার মাথায় তখন আগুন শোঁ শোঁ করছে। শ্রবণ তাকে মিথ্যে বলে নিয়ে এল! ক্যাবলা ছেলেটার তো বিরাট সাহস হয়েছে!
‘কী হল, ভিতরে তো আসবে? নাকি বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজবে? চটিও ছিঁড়েছ দেখছি। এসো বারি।’ অপরাধী অপরাধী গলায় বলল শ্রবণ।
বারিধারা একবার ভাবল, দরজা থেকেই অ্যাবাউট টার্ন করি। তারপর মনে হল, ক্যাবলাটাকে এত সহজে ছেড়ে দেব? জল বৃষ্টি কাদায় বের করে আনবার জন্য কোনও শাস্তি হবে না? অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। সেদিন সহজভাবেই বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল বারিধারা।
‘বাড়ির সবাই আছে? নাকি সেটাও জ্বরের মতো মিধ্যে বলেছ?’
শ্রবণ পড়া না-পারা ছাত্রের মতো নার্ভাস গলায় বলল, ‘না, বাড়ির কেউ নেই। ওটা মিথ্যে বলিনি।’
বারিধারা কাঁধের ব্যাগটা রাখল। শ্রবণের চোখে চোখ রেখে শান্ত গলায় বলল, ‘বাথরুমে সাবান আছে?’
শ্রবণ বলল, ‘আছে।’
‘কাচা তোয়ালে আছে?’
‘আছে।’
শ্রবণ ছুটে গিয়ে একটা সাদা তোয়ালে নিয়ে এল। কাচা তোয়ালের খবর তার জানার কথা নয়। আজ সকালেই তার ঘরে বউদি কাচা তোয়ালে রেখে গেছে। কোইনসিডেন্স। শ্রবণ ভাবল, ভাগ্যিস কোইনসিডেন্স বলে পৃথিবীতে একটা জিনিস আছে।
বারিধারা একটু চুপ করে থাকল। বলল, ‘তোমার নতুন পায়জামা, পরিষ্কার জামা আছে?’
শ্রবণ ঢোঁক গিলে বলল, ‘পায়জামা! আমি এখন কোথাও বেরোব না ধারা।’
বারিধারা দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ‘যা বলছি তার জবাব দাও। তোমার পরিষ্কার পায়জামা, জামা আছে কিনা বলো?’
শ্রবণ ভয়ে ভয়ে বলল, ‘আছে।’
‘এনে দাও। আমি চেঞ্জ করব।’
বাথরুম থেকে বেরিয়ে বারিধারা সেদিন যখন শ্রবণের ঘরে গিয়েছিল, শ্রবণ খানিকক্ষণের জন্য থ’ মেরে গিয়েছিল। এমন বারিধারাকে সে আগে কখনও দেখেনি। চেনাই যাচ্ছে না। কী সুন্দর! কী সুন্দর! কটকটে রোদ ঝলমল মেয়েটা এখন মেঘলা দিনের মতো স্নিগ্ধ লাগছে। বারিধারা স্নান করেছে। খোলা চুল। শ্রবণের নীল রঙের পায়জামা আর বেগুনি রঙের টি শার্ট পরেছে। দুটোই মাপে বড়। এতে একধরনের ছেলেমানুষির সৌন্দর্য হয়েছে।
‘আমার ভেজা জামাকাপড় তোমাদের ডাইনিঙের চেয়ারগুলোতে মেলে ফ্যান চালিয়ে দিয়েছি। অসুবিধে হবে না তো?’
শ্রবণ তাড়াতাড়ি বলল, ‘ছি ছি। কী অসুবিধে হবে?’
বারিধারা ঘরের একপাশে পাতা বেতের চেয়ারে বসতে বসতে স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘আমার কোনও অসুবিধে হবে না। ইনারগুলোরও আছে তো। হুট করে বাইরের কেউ এলে ঘাবড়ে যেতে পারে। ঘরের মধ্যে মেয়েদের ইনার কেন? সরি আমার অন্য কোনও উপায় ছিল না। ভিজে জিনিস পরে জ্বর ডেকে আনা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
শ্রবণের ঘরের মেঝেতে আঁকা, লেখার সরঞ্জাম ছড়ানো। শ্রবণ বিজ্ঞাপনের ডিজাইন বানাচ্ছে। বারিধারা সেদিকে তাকিয়ে বলল, ‘জ্বরের মধ্যেও কাজ করছ?’
শ্রবণ মাথা চুলকে বলল, ‘না মানে, জ্বরটা কমেছে…এতক্ষণ তো শুয়েই ছিলাম। শরীরটা ভালো লাগতে মনে হল, কাজটা শেষ করি।’
বারিধারা পায়ের ওপর পা তুলে ঠাণ্ডা গলায় বলল, ‘আমাকে ডেকেছ কেন?’
শ্রবণ এবার বেশি নার্ভাস হয়ে গেল। বলল, ‘ডেকেছি বুঝি বারি? হ্যাঁ, হ্যাঁ, ডেকেছি… আসলে হয়েছে কী জানো ধারা… আমার একটা কাজ আটকে যাচ্ছে… ভাবলাম তুমি যদি প্ল্যান দাও…।’
‘কী কাজ?’ বারিধারার গলা আরও তীক্ষ্ণ।
শ্রবণ এক গাল হেসে বলল, ‘একটা অ্যাড সামলাতে পারছি না। কনসেপ্টে গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।’
‘কীসের অ্যাড?’
শ্রবণ উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘জুতোর বিজ্ঞাপন। বড় কোম্পানি। অফিসে কাজটা এসেছে। ওরা আমাকে বলেছে ভাবনাচিন্তা করো। লেগে গেলে আমার লাভ হবে। বারি, জুতো নিয়ে নতুন কোনও কনসেপ্ট দিতে পারো। হাঁটছে, লাফাচ্ছে, ছুটছে এসব ঢের হয়েছে।’
বারিধারা বলল, ‘জুতোর বিজ্ঞাপনের কনসেপ্ট নিতে আমাকে বৃষ্টি-কাদার মধ্যে ডেকে আনলে? তাও আবার মিধ্যে কথা বলে?’
শ্রবণ তাড়াতাড়ি বলল, ‘না, ঠিক মিথ্যে নয়…মনে হল কী…ওরা তো সবাই বেরিয়ে পড়ল…আমি ভাবলাম, আজ আর অফিস যাব না, বাড়িতে বসে কাজ করব…তারপর মনে হল, তুমি যদি একবার ঘুরে যাও…।’
বারিধারা কটমট চোখে তাকিয়ে বলল, ‘আমি ঘুরে যাব কেন?’
শ্রবণ গালে হাত বোলাতে গিয়ে মুখে আরও খানিকটা রং লাগিয়ে ফেলল। বোকার মতো হেসে বলল, ‘সরি ধারা। ভেরি সরি। জ্বরের কথাটা বলা আমার ঠিক হয়নি। তুমি যে এতটা ভিজে যাবে, বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম গাড়ি করে একেবারে আমাদের বাড়ির গেট পর্যন্ত চলে আসবে। আমি ছাতা নিয়ে যাব, তুমি টক করে ঢুকে যাবে।’
বারিধারা হেসে ফেলতে গিয়ে নিজেকে সামলাল। তার প্রেমিকটি সত্যি হাঁদা আর ভালোমানুষ। ছেলেমানুষও বটে। ডেকে ফেলে এখন আর সামলাতে পারছে না। এই যুগে এমন একটা ভালোমানুষ আর ছেলেমানুষ নিয়ে সে কী করে চলবে? বারিধারা এবার চেয়ারের ওপর দুটো পা মুড়ে বসল।
‘তোমার জ্বর হয়েছে, আমি তোমাকে দেখতে এসেছি, আর আমিই তোমাকে বলব, আমার মাথায় ছাতা ধরে আমাকে নিয়ে যাও! তোমার মাথা কি একেবারে খারাপ হয়ে গেছে!’
শ্রবণ বুঝতে পারল সেমসাইড হয়ে গেছে। সে তাড়াতাড়ি বলল, ‘এইটুকু তো…ওতে আর জ্বরের কী হবে…তা ছাড়া…তা ছাড়া…।’
বারিধারা হাত তুলে থামাল।
‘চুপ করো। তোমার জ্বর নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তুমি কি ভেবেছিলে নন্দকাকাকে দেখিয়ে দেব যে আমি তোমাদের বাড়িতে এসেছি? আর ফিরে গিয়ে মাকে বলুক? বোকার মতো কথা বোলো না। আমি শুধু ভিজিনি, চটিটাও ছিঁড়ে গেছে। তোমার জন্যই ছিঁড়ে গেছে। এর মানে আমার শার্ট-প্যান্ট ফ্যানের হাওয়ায় শুকিয়ে গেলেও আমি এখন বেরোতে পারব না। আমার চটি নেই।’
‘আমার হাওয়াই চটি আছে। আনব?’
গুম গুম করে মেঘ ডেকে উঠল। এর মানে বৃষ্টি আরও বাড়বে। বারিধারা রাগী গলায় বলল, ‘বাজে কথা বলো না। ঘরে পরবার চটি পরে ঘরে বসে থাকা যায়, বাইরে বেরোনো যায় না। বাড়ি তো ফেরা যায়ই না। আর হাওয়াই চটি পরে কাদায় বেরোলে কী হবে জানো না? জামা-প্যান্টের ব্যাকগ্রাউন্ডে কাদা প্রিন্ট হয়ে যাবে। এমনিতে পায়ে কাদা থাকে, হাওয়াই চটি পরলে মাথা পর্যন্ত সেই কাদা যাবে। আমি কি তোমার মতো হাঁদা নাকি? আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি।’
শ্রবণ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘কী ডিসিশন!’
বারিধারা মুখ দিয়ে চুক চুক আওয়াজ করে বলল, ‘শুনলে তোমার পিলে চমকে যাবে। এইটুকু বলে বারিধারা চুপ করে গিয়েছিল।
শ্রবণ বিস্ফারিত চোখে ‘পিলে চমকানো’ সিদ্ধান্ত শোনবার জন্য অপেক্ষা করে রইল।
আবার গুরগুর করে মেঘ ডেকে উঠেছিল।
শ্রবণকে মিনিট দুয়েক টেনশনে রেখে বারিধারা তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল সেদিন।
‘চটি না সারিয়ে আমি এখান থেকে এক-পাও বেরোব না। দরকার হলে দুদিন, তিনদিন, সাতদিন এখানে বসে থাকব।’ শ্রবণ প্রায় আর্তনাদ করে উঠল। চোখ বড় হয়ে গেল তার।
‘কী বলছ বারি! সাতদিন এখানে থাকবে কী করে?’ দাদা-বউদি তো রাতেই চলে আসবে।’
বারিধারা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘আসবে তো আমার কী? তোমার প্রবলেম। আমাকে মিথ্যে বলে ডাকবার সময় মনে ছিল না? ওসব তুমি সামলাবে। আমাকে যদি জিগ্যেস করে, এই যে মেয়ে, এত রাতে তুমি আমাদের বাড়িতে বসে আছ কেন? আমি বলব, আমাকে না করে, দয়া করে আপনাদের ছেলেকে এই প্রশ্ন করুন। সে আমার থেকেও ভালো বলতে পারবে আমি এ বাড়িতে কেন রাত পর্যন্ত রয়ে গিয়েছি।’
শ্রবণ মাথা চুলকে হেসে বলল, ‘তুমি ঠাট্টা করছ বারি।’
বারিধারা মুখ ভেংচে বলল, ‘না, আমি সিরিয়াস কথা বলছি। রাত হলেই বুঝতে পারবে কোনটা ঠাট্টা, কোনটা সিরিয়াস। একবার তোমার বাড়ির লোকদের ফিরতে দাও। কাছাকাছি কোথায় মুচি বসে?’
শ্রবণ ঘাবড়ানো গলায় বলল, ‘মুচি? গলির মোড়ে মনে হয়। ঠিক মনে করতে পারছি না।’
বারিধারা ধমক দিয়ে বলল, ‘গলির মোড়ে কেউ নেই। জল জমে আছে। জমা জলের মধ্যে মুচি কী করে বসবে, নৌকো নিয়ে? ভেবে উত্তর দাও।’
শ্রবণ চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, ‘তাই তো। তাহলে কোথায় বসেছে? আমার তো মনেই পড়ছে না।’
বারিধারা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘তুমি এমন ভাব করছ যে, মুচিদের কেমন দেখতে হয় সেটাই জানো না। ওনারা কী কাজ করেন জানো, ওনারা ছাতা সারাই করেন? নাকি লেপ কম্বল বানান? বোকা একটা।’
শ্রবণ বলল, ‘তাহলে কী হবে?’
বারিধারা অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘সেটাই তো ভাবছি, কী হবে? তুমি চা বানাতে পারো?’
‘না, চা পারি না। কফি বানাতে পারি।’
বারিধারা সন্দেহের গলায় বলল, ‘সত্যি পারো? নাকি এটাও মিথ্যে।’
শ্রবণ হেসে বলল, ‘কফি বানানোটা কোনও কাজ হল? দুধ, জল, কফি। ব্যস, কফি রেডি।’
বারিধারা বলল, ‘ঠিক আছে, তুমি আমার জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এসো। আমি ততক্ষণে ভাবি কী করা যায়।’ শ্রবণ লাফ দিয়ে কফি বানাতে চলে গেলে বারিধারা নিজের মনে মনে খানিকক্ষণ হাসল। সত্যি ছেলেটা বড্ড ভালো। ভালো বলেই বোকা। বারিধারা উঠে জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ঝরঝর করে বৃষ্টি পড়ছে। বাইরেটা জলে ভিজে আছে। এই বিকেলে অদ্ভুত একটা ভেজা আলো। মেঘে ঢাকা আলো। সেই আলো একই সঙ্গে খুশি আর বিষণ্ণ। মনে হচ্ছে, কেউ ছবি আঁকতে গিয়ে খাতায় খানিকটা জল উলটে ফেলেছে। জল ফেলে দিয়ে মনটা খারাপ। আবার খাতার জল যখন নিজের মতো ছবি তৈরি করেছে, তাই দেখে মনটা খুশি। বারিধারারও সেদিন তাই হচ্ছিল। মন খারাপ, আবার মন খুশি। মন খুশি হওয়ার কারণ সে বুঝতে পারছিল। এমন একটা চমৎকার দিনে সে শ্রবণের কাছে এসেছে। কিন্তু মন খারাপের কারণ কী? বেশি মন ভালো হলে কি মন খারাপ লাগে? হয়তো তাই। যেমন বেশি ভালোবাসায় কান্না পায়। জানলার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে বারিধারার গান গাইতে ইচ্ছে করল। মনে হল, ইস, গলায় যদি সুর থাকত খুব ভালো হত। গলা ছেড়ে গান করত। শ্রবণও শুনত। কিন্তু তার গলায় মোটে সুর নেই। গলায় সুর না থাকলে গান অন্য কাউকে শোনানো যায় না। শুধু নিজে গুনগুন করে গাওয়া যায়। এটা একটা আপশোসের ঘটনা। বারিধারা তারপরেও তার সুরহীন গলায় গুনগুন করে উঠল—
আকাশের কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে,
দিগন্তে কার কালো আঁখি আঁখির জলে যায় ভাসি।।
ভালোবাসি, ভালোবাসি…
দু-লাইন গাইতেই বারিধারার মনে হল, তার গলায় সুর নেই তো কী হয়েছে? বয়ে গেছে। তার তো গাইতে ভালো লাগছে। সেটাই আসল। গান যখন নিজের গাইতে ভালো লাগে না, তখন গান আর গান থাকে না। সে হাজার গলা ভালো হলেও থাকে না।
কফি নয়, শ্রবণ চা-ই বানিয়ে এনেছিল। কফির কৌটো খুঁজে পায়নি। বউদিকে মোবাইলে জিগ্যেস করবে ভেবেছিল। তারপর ভাবল, থাক। বউদির সন্দেহ হতে পারে। যে ছেলে চা-কফি মোটে খায় না, সে সুদূর শ্রীরামপুরে ফোন করে কফির খোঁজ করলে সন্দেহ হওয়াটা স্বাভাবিক। তার থেকে চায়ের কৌটো পাওয়া গেছে যখন চাই-ই হোক।
চা খুব খারাপ হয়েছিল। কষটে মার্কা। তারপরেও বারিধারা তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভেঙে বলল, ‘বাড়ির লোকের হাত থেকে যদি বাঁচতে চাও একটাই ওয়ে। আমার চটির ব্যবস্থা করা। নতুন চটি কিনে আনতে চাইলে পারো। আমি যাব না। পায়ের মাপ বলে দিচ্ছি। তবে নতুন চটি পরে আমি প্রথমে দুটো দিন বাড়িতে হাঁটাচলা করে নিই। পায়ে ফোসকা পরে কিনা পরীক্ষা করি। নতুন চটি কিনলে তোমার বাড়িতে দুদিন থাকা মাস্ট। পথ একটাই, আমার এই চটিটাই সারিয়ে আনা। কলকাতা শহরে তো আর একজন মুচি থাকে না। তুমি আমার ছেঁড়া চটি নিয়ে বেরোও। যেখান থেকে পারো মুচি খুঁজে সারিয়ে আনো। ততক্ষণে আমার জামাপ্যান্টও শুকিয়ে যাবে। সেই ফাঁকে আমি তোমার ডিভানটায় শুয়ে খানিকটা ঘুমিয়ে নিই। আজ আমি সারাদিন ঘুমোব ভেবেছিলাম। তুমি মিথ্যে বলে আমাকে টেনে এনেছ। কাজটা অন্যায় করেছ। কিন্তু আজ আমার ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। তুমি আমার চটি সারিয়ে আনবে, আর আমি এখন ঘুমোব।’
শ্রবণ কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলল, ‘সরি ধারা। তুমি ভিজে যাবে, চটি ছিঁড়ে যাবে এত কিছু আমি ভাবিনি।’
বারিধারা ডিভানের ওপর ধপাস করে বসে পড়ল। বলল, ‘এতবার সরি বোলো না। রাগ বেড়ে যাবে। বালিশটা কই? ওই তো।’ বালিশ টেনে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল বারিধারা। বলল, ‘ও শোনো, বাইরে থেকে দরজা টেনে দিয়ে যাও। আমি যতক্ষণ ঘুমোব, এ ঘরে ঢুকবে না। ঘুম ভাঙলে আমি ডাকব। তখন আমাকে আর এক কাপ চা করে খাওয়াবে। বুঝেছ? এখন যেমন বাজে বানিয়েছ, তখন আরও বাজে চা বানাবে।’
শ্রবণ মাথা চুলকে বলল, ‘অবশ্যই চা খাওয়াব।’
বারি পায়ের কাছে দলা পাকিয়ে থাকা চাদরটা টেনে নিল গায়ের ওপর। চাদরে শ্রবণের গায়ের গন্ধ না? আহা! বারিধারা বলল, ‘এইটা তোমার জুতোর বিজ্ঞাপনের কনসেপ্ট হতে পারে কিনা ভেবে দেখো তো একবার।’
‘কোনটা?’ শ্রবণ আগ্রহের সঙ্গে বলে।
বারিধারা গম্ভীর ভাবে বলল, ‘প্রেমিকা বৃষ্টির জমা জলে চটি ছিঁড়ে ফেলেছে, প্রেমিক সেই চটি সারাতে বেরিয়েছে। খারাপ হবে? যাওয়ার আগে মাথার কাছে জানলার পর্দাটা টেনে দাও। ঘর অন্ধকার ছাড়া আমি ঘুমোতে পারি না।’
শ্রবণ পর্দা টেনে ঘর অন্ধকার করল। দরজা দিয়ে বেরোতে যাওয়ার সময় বারিধারা ডাকল।
‘এক মিনিট শ্রবণ, এদিকে একবার এসো তো। ঘুমোনোর আগে তোমার গায়ে হাত দিয়ে দেখব জ্বর আছে কিনা। নইলে ঘুমিয়ে শান্তি পাব না।’
শ্রবণ লজ্জা পেয়ে বলল, ‘জ্বরের কথাটা তো বানানো ধারা।’
বারিধারা মাথাটা একটু তুলে কড়া গলায় বলল, ‘কাছে আসতে বলছি এসো। অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করে আছি কিন্তু।’
শ্রবণ খানিকটা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আসে। ডিভানের কাছে আসতেই বারিধারা তার হাত ধরে টান দেয়। শ্রবণ বারিধারার গায়ের ওপর পড়ে। সে প্রায় আর্তনাদ করে ওঠে, ‘অ্যাই, কী করছ? কী করছ?’
বারিধারা শ্রবণকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে, গালে, গলায় মুখ ঘষতে থাকে। চাপা গলায় বলে, ‘শাস্তি দিচ্ছি। আর কখনও মিথ্যে বলে আমাকে ডাকবে? বলো, ডাকবে কখনও?’
শ্রবণ খানিকক্ষণ এই আক্রমণ প্রতিহত করবার চেষ্টা করে। একসময় হাল ছেড়ে দেয়। বুঝতে পারে, বারিধারা খেপে উঠেছে। খেপা মেয়ের এই খ্যাপামি তার অচেনা। অন্যরকম ভালো লাগার। এই ভালো লাগবার স্বাদ পেতেই কি সে বারিধারাকে মিথ্যে বলে একলা বাড়িতে ডেকে এনেছে? এবার শ্রবণ বারিধারাকে আদর করতে শুরু করে। আত্মসমর্পণ করে বারিধারা। একসময় জামা খুলে ফেলে। ঠোঁট কামড়ে ফিসফিস করে বলে, ‘এই নাও, তোমার জামা, তোমার জামা আমার লাগবে না।’
আধো মেঘের আলোয় উন্মুক্ত বারিধারাকে দেখে শ্রবণের মনে হয়, সে স্বপ্ন দেখছে। অবশ্যই স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্ন ছাড়া মানুষ এত সুন্দর হয়? সে বিড়বিড় করে কিছু বলতে যায়। বারিধারা কথা পুরো বলতে দেয় না, দু’হাতে তার মাথা ধরে টেনে নামায়।
তখন বাইরে জোরে বৃষ্টি নেমেছিল।
আজও সেই একই মতলব নাকি? বারিধারা ভুরু কোঁচকাল। ঘটনা যদি তাই হয়, এই ছেলের আজ বিপদ আছে। আজ একটা বড় টেনশনের দিন। আজ কোনওরকম এদিক-ওদিক করে সময় নষ্ট করা যাবে না।
আজ নন্দকাকুকে গলির মোড়ে দাঁড়াতে বলে বারিধারা শ্রবণের বাড়ি পর্যন্ত হেঁটে গেল। বেল টিপতে শ্রবণই দরজা খুলল। এ কী চেহারা! চুল উসকো-খুসকো। চোখ দুটো লাল করমচার মতো। গায়ে একটা চাদরও দিয়েছে। শুকনো মুখে হাসল।
‘এসো ভিতরে এসো।’
ভিতরে ঢুকে শ্রবণের কপালে হাত দিল বারিধারা। গা পুড়ে যাচ্ছে।
‘ওষুধ খেয়েছ?’
শ্রবণ হেসে বলল, ‘খাইনি। খাব।’
বারিধারা ধমক দিয়ে বলল, ‘খাইনি, খাব মানে কী? কোথায় প্যারাসিটামল আছে? দাঁড়াও নন্দকাকুকে দোকান থেকে আনতে বলছি।’ বলতে বলতে মোবাইল বের করল বারিধারা। শ্রবণ তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে বলল, ‘আরে অত ব্যস্ত হোয়ো না বারি। ওষুধ ঘরেই আছে।’
বারিধারা বলল, ‘কোথায় আছে?’
‘দাঁড়াও আমি দেখছি ধারা। মনে হচ্ছে ওই বাক্সে।’
বারিধারা বলল, ‘তোমাকে কিছু দেখতে হবে না। আমি দেখছি। তুমি বারি, ধারা আর ধারা, বারি বলা বন্ধ করে চুপ করে বসো।’
বারিধারা শুধু ওষুধ খাওয়াল না, শ্রবণকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে মাথা ধুয়ে দিল। তারপর বিছানায় শুইয়ে গায়ে চাদর টেনে দিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘এখন ঘুম দাও। আমি নীচে দরজা টেনে দিয়ে যাচ্ছি। অসুবিধে তো হবে না। অটোমেটিক লক।’
শ্রবণ বলল, ‘আর একটু থাকবে না?’
বারিধারা মাথা নামিয়ে শ্রবণের গরম কপালে চুমু খেল। বলল, ‘আজ ইউনিভার্সিটিতে আমার একটা খুব জরুরি কাজ আছে সোনা। চিন্তা কোরো না, ওষুধ খেয়েছ। জ্বর নেমে যাবে। বিকেলে ডাক্তার দেখিয়ে নিও। আমি ফোন করব।’
‘বারি, আমি একটা ফাটাফাটি বিজ্ঞাপন তৈরি করেছি। মুভি।’
বারিধারা সান্ত্বনার ভঙ্গিতে বলল, ‘খুব ভালো করছ।’
শ্রবণ উৎসাহের চোটে একটু উঠে বসে বলল, ‘ব্যাটারির বিজ্ঞাপন। টিভি, সিনেমা হলে দেখানো হবে। ওনলি টেন সেকেন্ডস।’
বারিধারা হেসে বলল, ‘বাঃ, আরও ভালো। তবে তুমি অমন করে উঠে বোসো না।’
শ্রবণ আরও খানিকটা উঠে বসল। তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল।
‘একটা লাভ স্টোরি ভেবেছি। শুনবে?’
বারিধারা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। বলল, ‘আজ নয় বাবু। বললাম না, আজ কাজ আছে। অন্য একদিন শুনব।’
গাড়িতেই বারিধারার মোবাইল বেজে উঠল। স্ক্রিনে ফুটে উঠল, ‘চিরসখা কলিং।’
‘কী হল আবার?’
‘ঘাম দিচ্ছে বারি, মনে হচ্ছে জ্বর গন।’
বারিধারা বিরক্ত গলায় বলল, ‘জ্বর গন হোক, তুমি কিন্তু বিছানা থেকে উঠবে না শ্রবণ।’
‘থ্যাঙ্ক ইউ ধারা। তুমি আমার জ্বর সারিয়ে দিয়ে গেলে। ভাগ্যিস ডেকেছিলাম।’
বারিধারা চাপা ধমক দিয়ে বলল, ‘আহ্লাদিপনা কোরো না। বিকেলে ডাক্তার দেখাবে।’
শ্রবণ বলল, ‘ব্যাটারি অ্যাডের কনসেপ্টটা তো শুনবে।’
বারিধারা হতাশ গলায় বলল, ‘বলো। তবে দশ সেকেন্ডসের বেশি সময় নেবে না।’
শ্রবণ জ্বরভাঙা গলায় বলতে শুরু করল।
‘লিফটে দুজন ছেলেমেয়ে উঠছে। হঠাৎ অন্ধকার। লিফট বন্ধ। এমন সময়…।’
ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছতেই বারিধারা খবর পেল, তাকে কল্যাণ সমাজপতি খুঁজছেন। তিনতলার ফাঁকা স্টাডিরুমে বারিধারা গিয়ে দেখল, সেখানে অরিন্দম সেনগুপ্তও আছেন। দুজন স্যারকে দেখে অবাক হল বারিধারা। দুজনের মুখ থমথম করছে।