» » তৃতীয় কিস্তি

বর্ণাকার

প্রচেত গুপ্ত

একটু পরে রোদ উঠবে

ছাব্বিশ

কমলকান্তি সেন নাতনির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলেন।

বারিধারা ভুরু কুঁচকে বলল, ‘কী হল দাদু, হাসছ কেন?’

কমলকান্তি বললেন, ‘তোকে এমন একটা কথা বলব, তুই খুব খুশি হবি।’

বারিধারা বলল, ‘ইউনিভার্সিটির ব্যাপার নিয়ে যা বললে তাতেই আমি খুশি। তোমার প্ল্যানটা কাজে লাগাতে পারলে ভালো হবে। সবাই জব্দ হবে।’

কমলকান্তি বললেন, ‘এটা তার থেকে অনেক ভালো। ওটা তো শাস্তি, আর এটা হল পজিটিভ একটা বিষয়।’

বারিধারা চোখ বড় করে বলল, ‘তাই নাকি! শুনি কী কথা!’

কমলকান্তি একটু চুপ করে রইলেন। গলা নামিয়ে বললেন, ‘বৃষ্টি, আমরা যদি একটা স্কুল তৈরি করি কেমন হয়?’

বারিধারা খানিকটা থতমত খেয়ে গেল। একানব্বই বছরের একজন মানুষের মুখে এ কী  কথা! স্কুল তৈরি করবে! বৃদ্ধ এই মানুষটির তো এখন শান্ত হয়ে  অপেক্ষা করার সময়। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। তিনি বলছেন, নতুন কিছু করবেন! স্কুল গড়বেন! বারিধারা ঢোঁক গিলে বলল, ‘আমরা করব? আমরা কারা দাদু?’

কমলকান্তি জ্বলজ্বলে চোখে বললেন, ‘কেন? আমরা সবাই। এই আমি, তুই, মেঘ, জ্যোতিষ্ক, তোর মা, অর্চিন, আমাদের পরিচিত, বন্ধুবান্ধব সবাই তো আছে, আমরা কি কম লোক হলাম?’

বারিধারা ঘাবড়ে গেল। মানুষটার হঠাৎ হল কী! বয়স হয়েছে বলে দাদু ঝিমিয়ে পড়েনি ঠিকই, কিন্তু ‘কিছু করা’ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে বহুদিন। এখন তার জীবনযাপন হল, খাব, ঘুমোব, নাতনিদের সঙ্গে গল্প করব আর বই পড়ব। ব্যস, এর বেশি নয়। এমনকী অফিসের কোনও কাজেও নাক গলায় না। বাবা বললেও নয়। তবে কি এখন চুপচাপ বসে এটাই চিন্তা করতেন?অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন

বারিধারা নিজেকে সামলে বলল, ‘স্কুল করবে? সে তো অনেক হ্যাপা।’

কমলকান্তি সেন উৎসাহ নিয়ে বললে, ‘হ্যাঁ, স্কুল। সেখানে গ্রামের মেয়েরা পড়বে।’

বারিধারা বলল, ‘গ্রামে তো স্কুল আছে দাদু। আজকাল প্রায় সব গ্রামেই স্কুল হয়ে গেছে। সেখানে মেয়েরা পড়ে। আজকাল গ্রামগঞ্জের ছেলেমেয়েরা কত ভালো রেজাল্ট করছে জানো? খবরের কাগজে বেরোয়। দরিদ্র ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় খুব সাইন করছে।’

কমলকান্তি বললেন, ‘আমি জানি। তবে এটাও জানি, যত ছেলেমেয়ে পড়ছে তার থেকে বেশি ছেলেমেয়েরা পড়ছে না। বিশেষ করে মেয়েরা। গ্রামের দরিদ্র মেয়েদের স্কুল ড্রপ আউট ভয়াবহ জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে। একটা সময়ের পর নিজেরাও যায় না, বাড়ি থেকেও যেতে দেয় না। কয়েক বছর আগে আমি একটি রিপোর্ট পড়েছিলাম। ভয় পেয়ে যাওয়ার মতো রিপোর্ট।’

বারিধারা বলল, ‘তুমি কি তাদের সব ধরে ধরে এনে স্কুলে ভর্তি করবে ভেবেছ?’

কমলকান্তি সেন বললেন, ‘এই স্কুলটা সেরকম হবে না বৃষ্টি, অন্যরকম হবে। এমন স্কুল যা আগে কখনও হয়নি। এখানে মেয়েদের ধরে আনতে হবে না, তারা নিজেরাই আসবে। তাদের বাড়ি থেকে পাঠাবে।’

বারিধারা আগ্রহ নিয়ে বলল, ‘আগে কখনও হয়নি! সেটা কীরকম?’

কমলকান্তি ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে ঘরের সিলিংয়ের দিকে তাকালেন। তিনি যেন ছবির মতো তার স্বপ্নের স্কুলটা দেখতে পাচ্ছেন।

‘এই স্কুলে বাঁধাধরা কোনও সিলেবাস থাকবে না। পরীক্ষা, পাস-ফেল—এ- সব থাকবে না। যেসব গরিব মেয়ে নিয়ম করে স্কুলে যেতে পারে না বা শুরু করেও স্কুল ছেড়ে চলে গেছে, যাদের বাড়ি থেকে পড়তে দেওয়া হয় না তারা এখানে পড়বে। ছোট, বড় সবাই পড়তে পারবে। বয়েসের বার থাকবে না।’

বারিধারা হেসে ফেলল। দাদুর গায়ে হাত দিয়ে বলল, ‘যারা ইচ্ছে থাকলেও পড়তে পারে না, তারা তোমার স্কুলে পড়তে আসবে কী কারণে?’

কমলকান্তি সোজা হয়ে বসলেন।

‘আমরা ব্যবস্থা করব।’

বারিধারা হেসে বলল, ‘কী ব্যবস্থা? ধরো, গ্রামের কোনও গরিব ফ্যামিলি চায় মেয়ে লেখাপড়া করবে না, বিয়ে করবে। তুমি কী করবে? পুলিশ দিয়ে স্কুলে ধরে আনবে?’

কমলকান্তি বললেন, ‘সেটাই তো আমাদের স্কুলের আসল মজা হবে। আমাদের স্কুলে যে মেয়ে লেখাপড়া শিখবে সেই মেয়ের বিয়ের যাবতীয় খরচ আমাদের স্কুল থেকে বহন করা হবে। এটা শুধু নিছক একটা স্কুল নয়। একটা প্রাোজেক্ট। একটা প্রকল্প।’

বারিধারার এবার উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা হল।

‘বলো কী দাদু! আর ইউ ইন সেন্স?’

কমলকান্তি সাদা ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘মাই ডিয়ার বৃষ্টিরানি, তুমি কি কখনও দেখেছ কমলকান্তি সেন সেন্সের বাইরে গিয়ে কথা বলছে? দেখেছ কখনও?’

বারিধারা তাড়াতাড়ি বলল, ‘না, না, তা বলছি না, কিন্তু এই প্রাোজেক্ট তো বিরাট খরচের ব্যাপার দাদু। এত খরচ সামলাবে কী করে?’

কমলকান্তি হেসে বললেন, ‘সে কি আমি জানি না? আমার অনেকটা ভাবনাচিন্তা করা হয়ে গেছে। বাকিটা আমরা সবাই মিলে বসে ঠিক করব। সবার আইডিয়া নেব। সবাই মিলে একদিন বসতে হবে। শুধু বিয়ের খরচ নয়, আমাদের স্কুলে যে মেয়েরা পড়বে তারা যাতে পরে নিজেরা উপার্জন করতে পারে সেই ব্যবস্থাও থাকবে।’

বারিধারা বিড়বিড় করে বলল, ‘কীভাবে এসব হবে জানি না। তবে একসাইটিং লাগছে। কবে বসব দাদু?’

কমলকান্তি বললেন, ‘তোমার ঝামেলাটা মিটলেই বসব।’

বারিধারা বলল, ‘আমার ঝামেলার জন্য এত ভালো একটা কাজ আটকে থাকবে?’

কমলকান্তি বললেন, ‘আটকে থাকবে না। তবে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আটঘাঁট বেঁধে এগোতে হবে।’

বারিধারা বড় করে হেসে বলল, ‘এরকম একটা কিছু করতে পারলে খুব ভালো হবে।’

কমলকান্তি বাইরের জানলা দিয়ে বাইরে মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমাদের এই গোটা প্রাোজেক্টটার একটা নাম ভেবে ফেলেছি রে বৃষ্টি।’

‘নাম ভাবাও হয়ে গেছে! ওয়াণ্ডারফুল দাদু।’

কমলকান্তি নাতনির দিকে মুখ ফিরিয়ে লজ্জা লজ্জা হেসে বলল, ‘নামটা একটু বড়। সবাই মিলে যখন বসব তখন যদি অ্যাপ্রুভ হয় তবেই নামটা থাকবে। নইলে বাদ।’

বারিধারা ঝুঁকে পড়ে বলল, ‘আগে নামটা তো বলো! তারপর অ্যাপ্রুভের  কথা দেখা যাবে।’

কমলকান্তি নীচু গলায় বললেন, ‘আমাদের এই প্রাোজেক্টের নাম হবে ”একটু পরে রোদ উঠবে”।’

বারিধারা চুপ করে গেল। তার মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। ভালো কাজের এমন সুন্দর নাম হতে পারে! এত আধুনিক আর ইন্টারেস্টিং! সত্যি তো এটা মেয়েদের জীবনের মেঘ কেটে গিয়ে রোদ ঝলমল হয়ে ওঠবার প্রাোজেক্ট। এই রোদ তো আর চট বলতে উঠবে না, তার জন্য পরিশ্রম করতে হবে। সময় লাগবে। দাদু ঠিকই বলেছে। একটু পরে রোদ উঠবে।

বারিধারার ইচ্ছে করল, এখুনি দিদি আর মাকে ঘটনা গিয়ে বলে। কিন্তু আজ হাতে একদম সময় নেই। ইউনিভার্সিটির ঝামেলা রয়েছে। সে উঠে দাঁড়াল। কমলকান্তি সেনের মাথার সাদা চুল এলোমেলো করে দিয়ে হাসতে হাসতে বলল, ‘ইউ আর গ্রেট ডার্লিং। আই লাভ ইউ। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যদি বিয়ে করি তা হলে তোমাকেই বিয়ে করব। এরকম ইনোভেটিভ মাথাওলা বর আমার খুব প্রয়োজন।’

কমলকান্তি দুঃখ দুঃখ মুখ করে বললেন, ‘সরি বৃষ্টিরানি। তুমি যতই চাও, তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমার দিদির সঙ্গে আমার বিয়ের কথা অনেক আগে থেকেই পাকা হয়ে গেছে। মেঘ রাজকুমারীকে বিয়ে করলে শুধু তাকেই আমি কাছে পাব এমন নয়, তার বাবা আমাকে রাজত্ব দেবে বলেছে। এই অবস্থায় তোমাকে কী করে বিয়ে করি?’

বারিধারা ঠোঁট উলটে বলল, ‘তোমাকে বিয়ে করতে আমার বয়ে গেছে। আমার অনেক ভালো বর জুটবে।’

দাদু-নাতনি দুজনেই ‘হো-হো’ আওয়াজ করে হেসে উঠল।

বারিধারা বলল, ‘এখন আমি কাটলাম দাদু। পরে সব কথা হবে।  একটু পরে রোদ উঠবে জিন্দাবাদ।’

বারিধারা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কমলকান্তি ইজিচেয়ারে মাথা রেখে চোখ বুজলেন। চোখ বুজে তিনি যেন তার প্রাোজেক্টের গেটটা দেখতে পেলেন। গেটের মাথায় বড় বড় করে লেখা—

‘একটু পরে রোদ উঠবে’

নামটা কি কাব্যিক হয়ে গেল? মানুষের স্বপ্ন তো আসলে কবিতাই। এই প্রাোজেক্টে ঢোকবার সময়ে সবাই যেন ভাবে, এবার দুঃখ-দুর্দশার অন্ধকার কেটে ঝলমলে আলোর জীবন আসবে। তাতে নাম যদি বড় হয় ক্ষতি কী?

কমলকান্তি মনে-মনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা শুরু করলেন।

‘নাম পছন্দ হয়েছে গিন্নি?’

‘পছন্দ হয়েছে।’

কমলকান্তি বললেন, ‘একবার ভেবেছিলাম, তোমার নামেই করব। নীহারিকা। যেমন সবাই স্কুল-কলেজ, মন্দির, লাইব্রেরিতে মৃত মা, বাবা, বউয়ের নাম ব্যবহার করে। তারপর ভেবে দেখলাম, তুমি বিরক্ত হবে।’

‘শুধু বিরক্ত নয়, আমি খুব রেগে যেতাম। নাম দিয়ে ভালো কাজের মধ্যে ঢুকে পড়া এক ধরনের হামবড়াই ভাব থাকে। কাজের থেকে নামটা বড় হয়ে যায়। একটু পরে রোদ উঠবে খুব সুন্দর নাম হয়েছে।’

কমলকান্তি বললেন, ‘তোমার ছোট নাতনিরও পছন্দ হয়েছে।’

‘আমি খুশি।’

কমলকান্তি বললেন, ‘আমি জানি তুমি খুশি হবে। তবে কাজটা অনেক বড় করে ভেবে ফেলেছি।’

‘তোমাকে বড় কাজই মানায়।’

কমলকান্তি মনে-মনে হাসলেন। বললেন, ‘তোমাকে পাশে পেলে সুবিধে হত।’

‘আমি তো তোমার পাশেই আছি।’

কমলকান্তি বললেন, ‘তা ঠিক। তুমি আছ বলেই তো সাহস করে এত বড় একটা কাজের কথা ভাবতে পারলাম। নীহারিকা, আমার হাতে বেশিদিন সময় নেই। সময় ফুরিয়ে এসেছে। এবার আমার যাওয়ার পালা। তার আগেই কাজটা শুরু করে দিতে চাই।’

‘কতদিন বাঁচলে এটা কোনও কথা নয়। বেঁচে কী করলে সেটাই কথা।’

কমলকান্তি একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘আজকাল তোমার জন্য মন কেমন করে।’

‘মন কেমন কোরো না। আমাদের তো দেখা হবে।’

কমলকান্তি মলিন হাসলেন। বললেন, ‘অপেক্ষা করছি।’

‘এখন এসব নিয়ে ভেবো না। একটু পরে রোদ উঠবে নিয়ে ভাবো।’

কমলকান্তি মুচকি হেসে বললেন, ‘যথা আজ্ঞা মেমসাহেব।’

কমলকান্তি সেনের স্ত্রী নীহারিকা সেনকে সত্যি মেমসাহেবের মতো দেখতে ছিল। গায়ের রং ফর্সা টকটক করত। ব্রোচ লাগানো শাড়ি, কনুই পর্যন্ত জামা পরে, উঁচু হিলের জুতো পরে যখন হাঁটতেন তখন সকলে তাকিয়ে দেখত। পাতলা শরীরের এই মেয়েটির চোখে-মুখে ছিল বুদ্ধির ঝলকানি। চাপা ব্যক্তিত্বের কারণে সবাই কমবেশি সমীহও করে চলত। সবথেকে বড়  কথা, সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস আর তার কর্মচারীদের খুব ভালোবাসতেন নীহারিকা সেন। কর্মচারীরাও তাদের মালকিনকে বিশেষ পছন্দ করত। সাতদিনের অসুখে একেবারে শুকিয়ে গিয়েছিলেন নীহিরিকা। তবে মৃত্যু যে এমন দ্রুত আসবে কেউ ভাবতে পারেনি। যদিও এমনটাই হয়। জন্মের মতো দশ মাস ধরে সাজো সাজো রব তুলে নয়, মৃত্যু আসে অতর্কিতে। সাপের মতো চকিতে ছোবল দিয়ে চলে যায় নিঃশব্দে। শোক সামলাতে পারেননি কমলকান্তি সেন। ঠিক করেছিলেন, অফিস, ওয়ার্কশপ সব ছেড়েছুড়ে বাইরে চলে যাবেন। একমাত্র সন্তান বিমলকে কোনও বোর্ডিং স্কুলে দিয়ে দেবেন। ব্যবস্থাও প্রায় করে ফেলেছিলেন। মৃত নীহারিকাই বারণ করলেন। একদিন তিনি এলেন চিন্তায়।

‘এটা তুমি কী করছ। কাজকর্ম সব ছেড়ে দিচ্ছ?’

‘ভালো লাগছে না নীহারিকা।’

‘ভালো-মন্দ লাগবার প্রশ্ন নয়, এত বড় প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করাটা তোমার দায়িত্ব।’

‘কী হবে রক্ষা করে? আমার যা টাকাপয়সা আছে, ছেলে আর আমার চলে যাবে।’

‘আর কোম্পানির এতগুলো কর্মচারী? তাদের কী হবে?’

‘নতুন কেউ দায়িত্ব নেবে।’

‘না, দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে। তুমি সেন অ্যাসোসিয়েটসকে বড় করবে। তোমার চিন্তা কী? আমি তো তোমার সঙ্গে সবসময় আছি। তুমি ডাকলেই আসব।’

তারপর থেকে তিনি মাঝে মাঝেই মৃত স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। ওই নতুন প্রাোজেক্ট করবার তাগাদা স্ত্রীরই।

‘একটু পরে রোদ উঠবে’র প্রাথমিক খরচের একটা বড় অংশ নীহারিকা সেনের নামে রাখা টাকা থেকে নেওয়া হবে।

গত চল্লিশ বছর ধরে এই টাকা কোম্পানি থেকে ব্যাঙ্কে রাখা হয়। এটা নীহারিকা সেনের শেয়ার। এই টাকা দু’কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ঝাড়গ্রামের ভুলাভেদায় সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের যে জমি পড়ে আছে প্রাোজেক্ট হবে সেখানে। কলকাতা থেকে খুব দূরে হল না, আবার শহুরে হট্টগোলের বাইরেও হল। জমির পরিমাণও অনেক। স্কুলবাড়ি, হস্টেল, ট্রেনিং সেন্টার বানানোর পরও অনেকটা জায়গা পড়ে থাকবে। বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে হ্যান্ডিক্র্যাফটসের ওস্তাদদের এনে মেয়েদের ট্রেনিং দেওয়ানো হবে। তাঁতে কাপড় বোনা থেকে, পুতুল, মুখোশ, পিতল, ডোকরা, বাঁশ, মাটির কাজ শেখানো হবে। ধাপে ধাপে এসব জিনিস মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন শহরে শো-রুম হবে। এখানে থেকেই মেয়েদের বিয়ে, লেখাপড়ার খরচ উঠবে। সবাই মিলে বসলে নিশ্চয় আরও ভাবনার কথা জানা যাবে।

কমলকান্তির মন শান্ত লাগছে। ভালো লাগছে। বেঁচে থাকবার একটা মানে বোঝা যাচ্ছে। বাইরের মেঘ কেটে একটু রোদও উঠেছে।

এরকম একটা সময়ে একতলায় বাড়ির গেটের কাছে একটা ঘটনা ঘটল।

অর্চিন হন হন করে বাড়িতে ঢুকতে গেলে ভীম আটকাল।

অর্চিন বলল, ‘কী হয়েছে ভীমদা?’

ভীম নীচু গলায় বলল, ‘তোমাকে থানা থেকে খুঁজতে এসেছিল।’

অর্চিন চমকে উঠে বলল, ‘থানা থেকে!’

ভীম আরও গলা নামিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, একজন সাদা পোশাকের পুলিশ। স্যারের সঙ্গে কথা বলেছে।’

অর্চিন বলল, ‘তারপর?’

ভীম ভয় পাওয়া গলায় বলল, ‘তোমাকে সন্ধের পর থানায় যেতে বলেছে।’

অর্চিন একটু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর চিন্তিত মুখে বলল, ‘আচ্ছা’ বলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল অর্চিন।

সে জানতেও পারল না বাড়ির উলটো দিকের ফুটপাথ থেকে মাঝবয়সি এক মহিলা তার দিকে পরম মমতা মাখা চোখে তাকিয়ে আছে।