☼ প্রচেত গুপ্ত ☼
একটু পরে রোদ উঠবে
উনিশ
‘অব ম্যায় কেয়া করু, কেয়া করু, কেয়া করু, কেয়াআআআ করু…’
বারিধারা গুনগুন করে গান গাইছে। গাইছে আর টকটক করে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে। তার চোখমুখ দেখে কে বলবে, খানিকক্ষণ আগে সে এক বিরাট বিপদের মধ্যে পড়েছে? জীবন এক কঠিন সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে গুণ্ডার পায়ে ধরে ক্ষমা, অন্যদিকে কেরিয়ার। তাকে দেখে বরং উলটোটাই লাগছে। মনে হচ্ছে, কোনও কারণে মেয়েটার অতি ফুর্তি হয়েছে। সেই কারণে গান ধরেছে। ফুরফুরে ভঙ্গিতে নিজেকে জিগ্যেস করছে, এখন আমি কী করব?
শাম্বদের চিলেকোঠায় তিন-চারজন বন্ধুর অবাধ গতি। অবাধ গতি বললে কম বলা হবে। তারা নিজের বাড়ির মতো করে চিলেকোঠা ব্যবহার করতে পারে। তাই করে। যখন খুশি আসে। চাবি দিয়ে দরজা খুলে খাটে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে। কখনও একটু ঘুমিয়ে নেয়। কখনও বই পড়ে, গান শোনে, আড্ডা দেয়, ছবি আঁকে। কখনও লেখাপড়াও করে। এই বন্ধুদের মধ্যে একজনের বাড়ি কলকাতার বাইরে। ঝড়বৃষ্টি বা ট্রেনের গোলমালে আটকে গেলে সে চিলেকোঠায় শেল্টার নেয়। মজার কথা হল, চিলেকোঠার চাবি কারও কাছ থেকে নিতে হয় না। চাবি থাকে সিঁড়িতে। দোতলার ল্যান্ডিংয়ে পাথরের যে পরির মূর্তিটা আছে তার ডানার পিছনে। শাম্বর এই জনা চার বন্ধু ছাড়া কেউ জানে না। যারা জানে না তারা মাথা কুটলেও চাবি পাবে না। বারিধারা এসে চাবি নিয়ে সটান উঠে যায়। উত্তর কলকাতার এই বিশাল তিনতলা বাড়িতে শাম্ব তার মাকে নিয়ে থাকে। সে একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। চকচকে কর্পোরেট অফিস, ভোঁ বাজানো কারখানা থেকে বোকা বোকা বিয়েবাড়ি—সব ধরনের ফোটো তোলে। বেশিরভাগ সময়ই তাকে বাড়িতে পাওয়া যায় না। চিলেকোঠা কে খুলে দেবে? মা তো আর ওপরে উঠতে পারবে না। সেই কারণেই পরি সিস্টেম। পরির ডানায় চাবি রাখার পিছনে এক ধরনের মজাও আছে। উড়ে যাওয়ার মজা। চিলেকোঠার ঘরে যাওয়া মানে যেন গোলমালের পৃথিবী থেকে নিজের জগতে উড়ে যাওয়া।
গৃহত্যাগী শ্রবণের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে বারিধারা। তাকে নিয়ে বেরোবে। এমনটাই ঠিক করা ছিল। মাঝখানে ইউনিভার্সিটির ঘটনা এসে পড়ল। মধুজা রায়ের ঘর থেকে নেমে বারিধারা আর ক্যান্টিনে ফিরে যায়নি। ক্লাসও করল না। তিথিদের সঙ্গে দেখা হওয়া মানেই ওদের সব বলতে হবে। লাভ কী? ওরা টেনশন করবে। কাল পর্যন্ত তো সময় আছে। সে মোবাইলে টেক্সট করে দিল।
‘কেটে পড়ছি। নোটসটা রেখে দিস।’
ওদিক থেকে দ্রুত জবাব এল—’হোয়াই? হঠাৎ কী হল!’
বারিধারা লিখল—’শ্রবণ।’
‘ফাইন। বাট ডিআর? ডেকেছিল কেন?’
বারিধারা লিখল—’পরে বলব। এখন ওনলি প্রেম আর প্রেম।’
‘বেস্ট উইশেস।’
মেসেজের সঙ্গে তিথি স্মাইলি পাঠাল।
বিজ্ঞানের কী অগ্রগতি! এখন কত আয়েসে হাসি কান্না রাগ ভালোবাসা চালাচালি করা যায়। দূর থেকে মন বোঝানোর কী চমৎকার আয়োজন! অথচ কত সময় পাশের মানুষটার খুশি, দুঃখ বোঝা যায় না। বারিধারার মনে হয়, এরকম কোনও ব্যবস্থা থাকলে বোঝা যেত। বিজ্ঞান প্রযুক্তি যেভাবে লাফাতে লাফাতে এগোচ্ছে, হয়তো খুব তাড়াতাড়ি এরকম ব্যবস্থা এসে যাবে। মানুষের কপালে মোবাইল ফোনের মতো এলইডি স্ক্রিন থাকবে। তাতে সত্যি মনটা ধরা পড়বে। ধরা যাক, কেউ হয়তো মনে মনে রাগ করেছে, কিন্তু মুখে হাসছে। তখন কপালের এলইডি স্ক্রিনে ‘লাল মুখ’ ফুটে উঠবে। লাল মুখ হল রাগের চিহ্ন। আবার উল্টোটা হতে পারে। মুখ বেজার, কিন্তু ভেতরে গুরগুরিয়ে হাসি। স্ক্রিনে হাসিটাই দেখা যাবে। উল্টোদিকের মানুষটার মনের সত্যি অবস্থা ধরা পড়ে যাবে। মোবাইলের মেসেজে অবশ্য সত্যি মিথ্যে বোঝা যায় না। যাকে খুশি ‘স্মাইলি’ পাঠানো যায়। যাকে খুশি ‘হার্ট’। যার সঙ্গে কোনও পরিচয় নেই, তার জন্যও দাঁত বের করতে হার্টের ছবি পাঠিয়ে ‘ভালোবাসি’ বলতে কোনও সমস্যা নেই। বারিধারা এইসব ব্যবহার থেকে যতটা পারে দূরে থাকে। যত দিন যাচ্ছে, এসব আর কেউ বিশ্বাস করছে না।
শাম্বদের চিলেকোঠার ঘরটা বাইরে থেকে ছবির মতো। মস্ত ছাদের এক কোনায় পাকা ঘর। মাথায় পুরোনো দিনের অ্যালুমিনিয়ামের অ্যান্টেনার খানিকটা এখনও তেরেবেঁকে রয়ে গেছে। শাম্ব ফেলতে দেয়নি। কাক বসলে নাকি ফোটোগ্রাফিক ডিজাইন তৈরি হয়। তখন শাম্ব ক্যামেরা বাগিয়ে ফটো তোলে। ঘরের ভিতরটা ঠাণ্ডা। বড় বড় দুটো জানলা। অনেকটা দূর পর্যন্ত পুরোনো কলকাতার স্কাইলাইন দেখা যায়। হাওড়া ব্রিজও। অবশ্য আজকাল মাল্টিস্টোরিড, হোর্ডিং, নিওন সাইনও উঁকি মারে। ঘরের একদিকে খাট পাতা। সেখানে শুয়ে জানলা দিয়ে আকাশ দেখে সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। বারিধারার অবশ্য ভালোলাগা অন্য কারণে।
‘তোদের এই ঘরটা ইন্টারেস্টিং। কিন্তু ইন্টারেস্টের কারণ ঘর নয়।’
শাম্ব অবাক হয়ে বলে, ‘মানে! ঘরের কারণে ঘর ইন্টারেস্টিং নয় কথাটার মানে কী? পাগলের মতো কথা।’
বারিধারা হেসে বলল, ‘ঠিকই বলছি। সি বিচ কি বিচের জন্য ভালো লাগে? সি বিচ ভালো লাগে সমুদ্রের জন্য। সমুদ্র যদি ভালো না লাগে, সমুদ্রসৈকতও ভালো লাগবে না। তোর এই চিলেকোঠার ঘরটাও তাই। ছাদটার জন্যই এত ইন্টারেস্টিং।’
সত্যি ছাদটা সুন্দর। পুরোনো দিনের উঁচু আর মোটা পাঁচিল। পাশে দাঁড়ালে বুক পর্যন্ত হয়ে যায়। শীতের সময় বা সন্ধের পর ছাদে মাদুর পেতে শুয়ে থাক। আশেপাশে এর থেকে উঁচু কোনও বাড়ি নেই। কেউ যে ডিঙি মেরে দেখবে তার উপায় নেই। কত শীতের দুপুরে বারিধারা বই নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়েছে। একবার তো ঘুমিয়ে পড়ে কেলেঙ্কারি হয়েছিল। শাম্বদের নতুন কাজের মাসি বিকেলে ছাদে তালা দিয়ে নেমে পড়েছিল। বারিধারা ঘুম ভেঙে দেখে সন্ধে। বাড়ি ফিরতে হবে। শাম্বদের চিলেকোঠা এত মজার তার অন্যতম কারণ, এই জায়গার হদিশ চার বন্ধুর বাইরে কাউকে জানানোর নিয়ম নেই। এটা একটা গোপন ডেরা। বারিধারা দিদিকেও বলেনি। ঠাকুর্দা কমলকান্তি সেনকেও নয়। অতএব আটকা পড়ে যে বাড়ির কাউকে ফোন করবে সে পথ নেই। চিলেকোঠার ঘরে ঢুকে শাম্বকে মোবাইলে ধরতে গেল বারিধারা। লাইন আউট অফ রিচ। নিশ্চয় কোথাও ছবি তুলতে গেছে। কলকাতা থেকে দূরে কোথাও। শ্রবণকে ফোন করল বারিধারা। লাভ হল না। সুইচ অফ। অফিসে মিটিং করছে? এখন কী হবে? বাড়িতে ফোন করা মানে ‘নিয়ম ভঙ্গ’। বারিধারা ঠিক করল, যদি সারারাত চিলেকোঠার ঘরে থাকতে হয় তাহলেও চুক্তি ভঙ্গ করবে না। এদিকে শীত করছে। গায়ে একটা হাফ হাতা সোয়েটার। চাদর বলতে বিছানার চাদর। জানলা-দরজা বন্ধ করে সেই চাদর জড়িয়ে বসে রইল বারিধারা। ঝামেলার ব্যাপার হল, দুদিন আগেই ঘরের বাল্বটা গেছে কেটে। এই দুদিনের মধ্যে কেউ আসেনি। বাল্বও বদলানো হয়নি। অন্ধকার ঘরে মশার কামড় খেতে খেতে বারিধারা বুঝতে পারল তার খিদে পেয়েছে। মশা তাড়াবার জন্য মোবাইলের টর্চ জ্বেলে রাখল। একসময় মনে হল, খুব তেষ্টা পেয়েছে। সঙ্গে খিদে। ঘরে খাবার, জল কিছুই নেই। মোবাইল তুলে দেখল বারিধারা চার্জ শেষ। ঘড়িও দেখা যাচ্ছে না। একেই বলে বিপদ যখন আসে আটঘাট বেঁধে আসে। বারিধারা ঠিক করল, ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির দরজায় ধাক্কা মারবে। নীচের লোকজন যদি শুনতে পায়। এই ভেবে যেই খাট থেকে নেমেছে, অমনি একটা আওয়াজ হল—ধুপ। কে যেন ছাদে লাফিয়ে পড়ল। সাহসী বারিধারা ভয়ে চিৎকার করে উঠল।
‘ওরে বাবারে।’
বলেই আবার লাফ দিয়ে উঠে পড়ল খাটে। ঘটনা শেষ হয়েছিল দারুণ মজার মধ্যে দিয়ে। বারিধারা তারপর থেকে এই চিলেকোঠার ঘরটাকে আরও ভালোবেসে ফেলেছে।
বারিধারা ছাদের মুখে এসে থমকে দাঁড়াল। শ্রবণকে কীভাবে চমকে দেওয়া যায়?
শ্রবণকে এখন যে-কোনওভাবেই চমকে দেওয়া যায়। সে খাটের ওপর বসে আছে। একটা লম্বা ঝুলের হাফ প্যান্ট আর কালো রঙের গেঞ্জি পরেছে। সামনে নোটখাতা খোলা। হাতে পেন্সিল। সে মন দিয়ে বিজ্ঞাপনের খসড়া তৈরি করছে। তার অফিস তাকে ছাতা বিষয়ে অ্যাড তৈরির অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছে। স্টিল এবং মুভি দুটোই হবে। টাইট কম্পিটিশন। আরও দুটো ছেলেমেয়ে অফিসে ঘুরঘুর করে। তাদেরও রেডি করতে বলা হয়েছে। যারটা ভালো হবে বস তারটা নেবে। ক’দিন পরেই প্রেজেন্টেশন। এখন পর্যন্ত নোটখাতায় শ্রবণ তিন ধরনের প্ল্যান করছে।
১) খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ফুটপাথের ওপর একজন ছাতাসারাইওলা ছাতা মেরামত করছে। তার মাথা প্ল্যাস্টিকে ঢাকা। সামনে একজন মাঝবয়সি লোক ব্যাটারির খোলের ওপর গালে হাত দিয়ে বসে আছে। বৃষ্টিতে নির্বিকারচিত্তে ভিজছে। তলায় ক্যাপশন লেখা—এল সি দাসের ছাতা না পেলে ভিজব।
২) একটা দোকান। দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা এল সি পাল। বাইরে লম্বা লাইন। লাইনে কড়া রোদের মধ্যে যারা দাঁড়িয়ে আছে তারা কেউ ঘামছে, কেউ হাতপাখা নিয়ে খাওয়া খাচ্ছে। তলায় ক্যাপশন—রোদ তাড়াতে চাই এল সি দাসের ছাতা।
৩) এই থিমটা বেশ অ্যাডাল্ট। বড় হোটেলের সুইমিংপুলের পাশে একটা বড় রঙিন ছাতা। ছাতার আড়ালে সুন্দরী। মুখে দুষ্টু হাসি। হাত, পা অল্প অল্প দেখা যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, মেয়েটি জামাকাপড় তেমন পরে নেই। তলায় ক্যাপশন—এল সি দাসের ছাতা, রোদ, বৃষ্টি আর লজ্জা ঢাকে।
তিন থিমের পাশে অল্প অল্প স্কেচ করেছে শ্রবণ। জিনিসটা ভিস্যুয়ালি দেখতে চাইছে। কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না। এই ধরনের প্রাোডাক্টের বিজ্ঞাপনে বুদ্ধির থেকে চমক বেশি লাগে! সেটাই মিসিং।
হঠাৎ আওয়াজ—’ধুপ।’
শ্রবণ চমকে মুখ তুলল। বারিধারা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। ছোট লাফ দিয়ে সে-ই আওয়াজ করেছে। এখন দুই কানে হাত রেখে মুখ ভেঙাচ্ছে।
‘আমাকে হনুমানের মতো দেখাচ্ছে? লেডি হনুমান?’
শ্রবণের মুখ থেকে বিজ্ঞাপনের চিন্তার ভাঁজ চলে গেল। সে গদগদ মুখে বলল, ‘এসো বারি, ভিতরে এসো।’
‘আগে বলো, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে। নইলে ঢুকব না।’
শ্রবণ হেসে বলল, ‘কী ছেলেমানুষি করছ বারি।’
বারিধারা গম্ভীর গলায় বলল, ‘ছেলেমানুষি নয় শ্রবণ, সিরিয়াস মানুষি। আমাকে হনুমানের মতো দেখানোর খুবই প্রয়োজন আছে। কিছুদিনের মধ্যে লঙ্কাকাণ্ড শুরু হবে। মেয়েরা হতে চায় রামায়ণের সীতার মতো। অশোকবনে বসে পুঁই পুঁই করে কাঁদতে চায়। আমি হব হনুমান। লেজে আগুন লাগিয়ে লঙ্কা ছারখার করব। সেই জন্য এখন থেকে প্র্যাকটিস করছি। হনুমানের মতো লাফ মারছি, দাঁত খিচোচ্ছি। ঠিক হচ্ছে কিনা বলো?’
শ্রবণ কেবলা মুখ করে বলল, ‘কী সব বলছ ধারা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না বারি।’
বারিধারা ঘরে ঢুকে ব্যাগটাকে ছুড়ে দিল খাটের ওপর। তারপর খাটের ওপর ধপাস করে বসে পড়ে বলল, ‘বুঝতে হবে না। যখন আগুন লাগাব তখন বুঝতে পারবে। তুমি কি কোনওদিনও একবার বারি, একবার ধারা বলা ছাড়বে না? যাক, যা খুশি করো। আপাতত খাট থেকে নেমে পড়ো সাহেব। আমি এখন শোবো। খুব টায়ার্ড লাগছে।’
শ্রবণ তাড়াতাড়ি খাতা, পেন, ব্যাগ সব মেঝেতে চালান করল। নিজেকেও। বারিধারা হাত-পা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। কালো জিনসের ওপর সে একটা কুর্তি পরেছে। কুর্তির রং হলুদ। শ্রবণের মনে হল, ক্লান্ত হওয়ার পরও মেয়েটাকে খুব সুন্দর লাগছে।
শ্রবণ গদগদ ভঙ্গিতে বলল, ‘আমি যে এখানে আছি তুমি জানলে কী করে?’
বারিধারা নির্লিপ্ত গলায় বলল, ‘হাত গুনে। তুমি জানো না, আমি অ্যাসট্রনমি শিখছি? তুমি নিজে যে মোবাইলে জানিয়েছ সেটা ভুলে গেলে?’
শ্রবণ লজ্জা পেয়ে বলল, ‘ও হো, একদম ভুলে মেরেছি। বারি, আমি জানতাম তুমি আসবে।’
বারিধারা বড় বড় চোখ করে অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ‘কী করে জানতে? তুমিও হাত গুনতে শিখেছ!’
শ্রবণ মেঝেতে বসেছে। সে এগিয়ে এল। খাটের ওপর থুতনি রেখে বলল, ‘আমি তোমার কথা শুনেছি ধারা। বাড়ি থেকে পালিয়েছি।’
বারিধারা ডান পায়ের ওপর বাঁ পা তুলে নাড়তে নাড়তে বলল, ‘আমি খুশি হয়েছি।’
শ্রবণ একটু চুপ করে থেকে গাঢ় স্বরে বলল, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি বারি।’
ফস করে কথাটা বলেই শ্রবণ লজ্জা পেল। বোকার মতো হয়ে গেল। অতি বোকার মতো। এমনিতে সে যথেষ্ট স্মার্ট। সে যে ধরনের কাজ করে তাতে স্মার্ট না হয়ে উপায় নেই। কিন্তু বারিধারার সামনে তার কী যে হয়! অনেকবারই ভেবেছে ভেবেচিন্তে কথা বলবে। শেষ পর্যন্ত হয় না। ধেড়িয়ে ফেলে।
বারিধারা গম্ভীর গলায় বলল, ‘ভুল করো।’
শ্রবণ বলল, ‘বেশ করি বারি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসো ধারা?’
বারিধারা চিৎ অবস্থা থেকে পাশ ফিরল। বিকেলের আলো ছাদ ভেঙে ঘরে এসেছে। বারিধারার চোখেমুখে পড়েছে। এই আলোয় একই সঙ্গে তেজ আর স্নিগ্ধতা। বারিধারা বলল, ‘না, বাসি না।’
এবার হাসতে হাসতে শ্রবণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বারিধারা। প্রায় ঝুলন্ত অবস্থায় ডান হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরল। বাঁ হাত দিয়ে মুখটা তুলে ধরল জোর করে। তারপর তার নীচের কালো ঠোঁটটা নিজের মুখের ভিতর নিয়ে চোখ বুজল পরম তৃপ্তিতে।
দীর্ঘক্ষণ তারা এভাবেই রইল। তারপর যখন বিছানার ওপর এলো তখন দুজনেই পোশাকহীন।