» » দ্বিতীয় কিস্তি

বর্ণাকার

প্রচেত গুপ্ত

একটু পরে রোদ উঠবে

সতের

চুমু কত প্রকার ও কী কী?

ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে জোর আলোচনা চলছে। টেবিল ঘিরে পাঁচজন বসে আছে। তিনজন মেয়ে, দুজন ছেলে। এর মধ্যে তিথি এবং স্বয়ংদ্যুতি কথা কম বলছে। তিথিকে লাজুক মেয়ে হিসেবে সকলেই কমবেশি মেনে নিয়েছে, কিন্তু হিস্ট্রির স্বয়ংদ্যুতি কেন এই আলোচনায় অংশ নিতে অস্বস্তি বোধ করছে, এটা বোঝা যাচ্ছে না। সে একজন লম্বা-চওড়া চেহারার ছেলে। দাড়ি-গোঁফ আছে। দাড়ি-গোঁফওয়ালা ছেলে লজ্জা পাবে না, এমন কোনও নিয়ম নেই। তার পরেও বাকিরা তাকে খেপাচ্ছে।

শমজিতা বলল, ‘তোর লজ্জা পাওয়ার কী আছে? তোকে কি চুমু খেতে বলা হয়েছে? নাকি তোর চুমুর এক্সপিরিয়েন্স জানতে চাওয়া হয়েছে? তোর মতো হাঁদা ছেলের যে এই বিষয়ে কোনও এক্সপিরিয়েন্স থাকবে না, তা আমরা জানি। তুই খামোকা লজ্জা পাচ্ছিস। কাম আউট। আলোচনায় অংশ নে।’

স্বয়ংদ্যুতি ভুরু কুচকে বলল, ‘আমি লজ্জা পাচ্ছি কে বলল?’

বারিধারা বলল, ‘আলবাত পাচ্ছিস। আমাদের কথা শুনে তোর চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা কোনও অশ্লীল কথা বলছি না। চুমু কোনও অশ্লীল বা নিষিদ্ধ ব্যাপার নয় যে, তা নিয়ে কথা বলা যাবে না। চুমু একটা খুবই সুস্থ, সুন্দর বিষয়। অনেক সময় অতি পবিত্র। প্রেমের সবথেকে ভালো এবং সহজ এক্সপ্রেশন হল চুমু। অথচ সেই চুমুর কথা শুনে তোর মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। হোয়াই? সন্দেহ হচ্ছে। মনে হচ্ছে, সামথিং রং উইথ ইউ। চুমু নিয়ে নিশ্চয় তোর কোনও গোলমাল আছে স্বয়ং। আছে নাকি?’

স্বয়ংদ্যুতি এবার ছেলেমানুষের মতো রাগ দেখিয়ে বলল, ‘বাজে কথা বলিস না। কোথায় আমার চোখ-মুখ লাল হচ্ছে?’

শমজিতা বলল, ‘হচ্ছে, কিন্তু দাড়ি-গোঁফের জন্য বোঝা যাচ্ছে না। দাঁড়ি-গোঁফের অনেক সুবিধে। আমি যদি ছেলে হতাম, দাড়ি-গোঁফ রাখতাম। দাড়ি-গোঁফের ফাঁকে ফিকফিক করে হাসা যায়, কেউ বুঝতে পারে না। এই তো ডিএনবি-র ক্লাসে আমার খালি হাসি পায়। কিন্তু হাসতে পারি না। উনি যেভাবে লেকচারের মাঝে মাঝে যাত্রাদলের বিবেকের মতো বয়েস অ্যান্ড গার্লস বলে হুঙ্কার মারেন যে, পেটে হাসি খিলখিল করে ওঠে। মুখে হাত ঢেকে বা রুমাল দিয়ে কত হাসব? দাড়ি-গোঁফ থাকলে নিশ্চিন্তে হাসতাম। কেউ দেখতে পেত না। মেয়েদের কত অসুবিধে। মনের এক্সপ্রেশন মুখে গোপন করা যায় না।’

অর্ণব বলল, ‘অসুবিধেও আছে। দাড়ি-গোঁফ থাকলে ঠিকমতো রাগ, ভয়, হাসি দেখানো হয় না। সবসময় একই রকম মনে হয়। তুই হয়তো হাসলি, মনে হবে, গোঁফের ফাঁকে ভেঙাচ্ছিস। অথবা তুই যদি রাগ করে দাঁত কিড়মিড় করিস, তাহলে মনে হবে খুশি হয়ে হাসছিস। আমার এক কাকাকে নিয়ে এই অসুবিধে হত। রাগছে না হাসছে বুঝতে পারতাম না। কাকা যেত খেপে।’ কথা শেষ করে অর্ণর হেসে উঠল।

শমজিতা বলল ‘বাজে কথা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তো এত বড় দাড়ি ছিল, উনি যখন হাসতেন কী সুন্দর লাগত।’

বারিধারা বলল, ‘ওনার হাসিমুখে ছবি আছে। কিন্তু উনি যে তখন হাসছিলেনই, এটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। কোনও সাক্ষী নেই। হয়তো সকালবেলা বিরক্ত করতে আসা ফ্যানদের দেখে দাঁত কিড়মিড় করছিলেন, তখন কেউ ফটো তুলেছে। পরে সেটাই হাসির ফটো বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

অর্ণব সিগারেটে টান দিয়ে বিজ্ঞভাবে বলল, ‘অত বড় মানুষদের কথা জানি না। তবে দাড়িটাড়ি বেশি থাকলে চুমু খাওয়ার সময় সমস্যা করে।’

শমজিতা চোখ পাকিয়ে বলল, ‘তুই জানলি কী করে? তোর তো এখনও ভালো করে গোঁফই বের হয়নি। ফরফর করে সিগারেট টানিস বলে নিজেকে বেশি ভাবছিস নাকি? দে সিগারেটটা দে। অনেক টেনেছিস।’

শমজিতা হাত বাড়িয়ে অর্ণবের হাত থেকে সিগারেট কেড়ে টানতে শুরু করল। অর্ণব বলল, ‘আমার মামাতো দাদা বিয়ের পর দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে ফেলেছিল।’

বারিধারা বলল, ‘সেটা চুমুর জন্য কে বলল? হয়তো চোর-ডাকাতের মতো দেখাচ্ছিল বলে তোর বউদি জোর করেছে। কাউকে কাউকে দাড়ি-গোঁফে ফিদেল কাস্ত্রো অথবা অপরাজিত সিনেমার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো রোমান্টিক লাগে, কাউকে আবার জগাই চোর, মাধাই ডাকাতের মতো দেখায়।’

অর্ণব গম্ভীরভাবে বলল, ‘না, আমাদের কাছে ঠিক খবর আছে। দাড়ি-গোঁফের কারণে মামাতো বউদির সুড়সুড়ি লাগছিল। পরে আমরা দাদাকে চেপে ধরেছিলাম। সে আমতা আমতা করেছে।’

স্বয়ংদ্যুতি বলল, ‘তোর এখনও গোঁফ গজায়নি বলে হিংসে করছিস। বানিয়ে বানিয়ে যা খুশি বলছিস।’

বারিধারা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কাপটা সরিয়ে রাখল। খানিক আগে সে একটা ভয়ঙ্কর কাজ করে এসেছে। কেউ তার মুখ দেখে বুঝতে পারছে না। ঘটনাটা কেউ জানে না। এমনকী তিনিও না। যদিও কাজটা তিথির। কাজ না বলে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ বলা ভালো। তিথির কাছে জোর করে নেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট। কাজটা সে আজ করবে না ভেবেছিল। আজ সে ইউনির্ভাসিটি কামাই করবে ঠিক করেছিল। তারপরে পরিকল্পনা বদলেছে। দিদির বাড়িতে বংশীবাদকের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করবার সময় তার মোবাইল ‘হাম্বা হাম্বা’ রবে ডেকে ওঠে। গৃহত্যাগী শ্রবণের মেসেজ। মেসেজ দীর্ঘ। বারিধারা দীর্ঘ মেসেজ মোটেও বরদাস্ত করতে পারে না। তবে আজকে পেরেছে। যতই হোক, ছেলেটা গৃহত্যাগী। শ্রবণের মেসেজটা এরকম—

‘বারি, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন ক’টাদিন আত্মগোপন করে থাকব। বাড়ি থেকে যখন পালিয়েছি, তখন ভালো করেই পালানো উচিত। কারও সঙ্গে দেখা করব না। অফিসেও যাব না। সেখানে নিশ্চয় আমার সন্ধানে বাবা বা দাদা এসে বসে আছে। আমাকে ধরবার চেষ্টা করছে। পুলিশেও যেতে পারে। গেলে যাক। আমার আত্মগোপনের ঠিকানা তিন নম্বর কনকবালা লেন, কলকাতা নাইন। শাম্বদের চিলেকোঠা। আমি চাই না, এই ঠিকানা কেউ জানুক। এমনকী তুমিও না। তোমাকে কিছু লুকোতে চাই না। তাই বললাম, ধারা, তুমি পড়েই এই মেসেজ ডিলিট করে ফেলবে। গুড বাই।’

মেসেজ দেখে বারিধারা হেসে ফেলল। সে ঠিক করল, বিকেলের পর শ্রবণের আত্মগোপনের ডেরায় হানা দেবে। সেখান থেকে তাকে বের করে দুজনে মিলে খানিকটা ঘুরবে। কোথাও বসে খাবে। তারপর ট্যাক্সি ধরে শ্রবণকে বাড়ি পৌঁছে তবে নিজে ফিরবে। বাড়ি থেকে পালানো বোকা প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর নিশ্চয় একটা অন্য ধরনের স্বাদ আছে। সেই স্বাদ ঝাল না মিষ্টি দেখতে হবে। বারিধারা একই সঙ্গে ভাবে, সেই যখন বেরোবেই, তখন ইউনিভার্সিটিতে ঢুঁ মারা যেতে পারে। মধুজা রায়ের ক্লাসটা করা যাবে, লাইব্রেরির বইটাও বদলানো যাবে। নন্দকাকার গাড়ি নামিয়ে দিল। ইউনিভার্সিটির গেট দিয়ে ঢোকবার সময় তার তিথির কাজটা মনে পড়ে গেল। নিজে থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই ধরনের কাজ ফেলে রাখা উচিত নয়। ফেলে রাখেওনি। বারিধারা ইউনিয়ন রুমের কাছে সুদর্শনকে একা পেয়ে যায়। নামটা সকালে মনে পড়ছিল না। এখন মনে পড়ে গেল। এটাই বোধহয় নিয়ম। এই ধরনের কাজের সময় মন অন্য সবকিছু ঝেড়ে ফেলে, কেবল দরকারি ইনফর্মেশনগুলো শরীরকে সাপ্লাই করতে থাকে। নাম, ঘটনা, রাগ। যদিও সুদর্শনের নাম না জানলে বারিধারার কিছু এসে যেত না। সে এই ছেলেকে চেনে। এর সম্পর্কে আগেও কমপ্লেন শুনেছে। শুধু অশ্লীল  কথা নয়, সুযোগ পেলে ছলেবলে মেয়েদের গায়ে হাত দিতেও এই ছেলে পিছপা হয় না। প্রায়ই ইউনিভার্সিটি আর পাড়ার রোয়াক গুলিয়ে ফেলে। এর জন্য সাহস লাগে। মদত আছে বলেই এই ধরনের ছেলে ‘বীরপুরুষ’ হয়েছে।

করিডরের একপাশে দাঁড়িয়ে বারিধারা সুদর্শনকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। সুদর্শন সত্যি সুদর্শন। লম্বা, ফর্সা। কায়দা করা জামা-কাপড়। ‘ভাই একটু শুনবে।’

সুদর্শন ভুরু কুঁচকে বলল, ‘আমাকে বলছ?’

বারিধারা সুন্দর করে হেসে বলল, ‘হ্যাঁ ভাই, তোমাকে বলছি।’

সুদর্শন খানিকটা অবাক এবং খুশি হয়েই এগিয়ে আসে। সুন্দর একটা মেয়ে মিষ্টি করে ডাকলে খুশি হওয়ারই কথা।

‘কী হয়েছে?’

বারিধারা চাপা গলায় বলে, ‘তুমিই তো সুদর্শন?’

সুদর্শন বলে, ‘হ্যাঁ, তুমি বারিধারা না? হিস্ট্রি ফাইনাল?’

বারিধারা গদগদ গলায় বলল, ‘তুমি আমাকে চেনো দেখে খুব ভালো লাগছে।’

সুদর্শন ঠোঁটের কোণে হেসে বলে, ‘আমি এখানকার সব মেয়েকে চিনি।’

বারিধারা চোখ বড় করে বলে, ‘বাঃ গুণী ছেলে। আচ্ছা, তুমি তিথিকে চেনো?’

সুদর্শন একটু থমকে, ভুরু কুঁচকে তাকায়। আগ্রহ আর সন্দেহ নিয়ে বলে, ‘চিনি মনে হচ্ছে। কী ব্যাপার বলো তো?’

‘তেমন কিছু ব্যাপার না। ও একটা জিনিস তোমার জন্য পাঠিয়েছে। নিজে হাতে দিতে লজ্জা পাচ্ছে। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। দিয়েছে বলাটা ঠিক হবে না। আমি নিয়েছি।’

সুদর্শন বলে, ‘কী জিনিস?’

বারিধারা অনুরোধের ভঙ্গিতে বলে, ‘একটু ওদিকে সরে যাবে? ওই যে পার্টিশানটার আড়ালে? আসলে তিথিকে আমি কথা দিয়েছি, জিনিসটা আড়ালে দেব।’

সুদর্শন বিরক্তির ভান করে বলে, ‘ইউনিভার্সিটির মধ্যে এসব আবার কী? আড়াল-টাড়াল কী ব্যাপার? যা বলবার এখানে বলো।’

বারিধারা বলে, ইসস জোরে বোলো না। সবাই শুনতে পাবে। প্লিজ একটু এসো। অবশ্য তুমি যদি বলো, আমি এখানেই না হয়…।’

সুদর্শন বলে, ‘আচ্ছা, এসো।’

পার্টিশানের আড়ালে যাওয়ার পর বেশিক্ষণ সময় নেয়নি বারিধারা। নেবেই বা কেন? ঠাসিয়ে একটা চড় মারতে কত সময় লাগে? ভীত, হতবাক সুদর্শন গালে হাত দিয়ে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে। বারিধারা শান্ত গলায় বলে, ‘আজ আড়ালে মারলাম ভাই। দ্বিতীয় দিন যদি এই ধরনের অসভ্যতার কথা শুনি, তাহলে ইউনিভার্সিটির গেটের সামনে টেনে নিয়ে গিয়ে সবার সামনে মারব। মনে থাকবে?’

যা কথা ছিল তাই করছে বারিধারা। বলেছিল, ওই বদ ছেলেকে চড় মারবার পর ক্যান্টিনে চা খাবে, তারপর ক্লাস করতে যাওয়া হবে। তাই এসেছে। এখন দুটো পিরিয়ড অফ। তারপর মধুজা ম্যাডামের ক্লাস। চুমু বিষয়ক আলোচনার সূত্রপাত করেছে শমজিতা। কাল রাতে তার মায়ের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে তার ঝগড়া হয়েছে। মা বলেছেন, আজকাল চুমু নিয়ে বড্ড বাড়াবাড়ি হয়। সিনেমা-টিনেমায় এমনভাবে দেখানো হচ্ছে, যেন কোনও ব্যাপার নয়। এ আবার কী! ছিছি! ছেলেমেয়েরা উচ্ছন্নে যাচ্ছে। এসব বিদেশ থেকে আসা ফ্যাশন। নোংরামি, অশ্লীলতা। শমজিতা আপত্তি করেছে। তার মতে, ভালোবাসার এমন সুন্দর প্রকাশকে নোংরা বলা মোটেও ঠিক নয়। জিনিসটাকে কেমনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটাই আসল কথা। আমাদের সমাজ প্রকাশ্যে চুমুকে মেনে নেয় না। সেই পরিস্থিতি এখন হয়নি। তার মানে, কোনও দিন হবে না, এমনটাও নয়। কদিন আগে তো ছেলেমেয়েরা হাত ধরাধরি করে প্রেম করছে, এটাও মেনে নেওয়া হত না। এখন দুটো ছেলেমেয়ে হাত ধরাধরি করে হেঁটে গেলে কেউ ফিরেও তাকায় না। ঘটনা অন্য কিছু না প্রেম, সেটা বোঝাই যায়। খারাপ কিছু হলে সব কিছুই খারাপ। চুমু খেলেও খারাপ, না খেলেও খারাপ। এসবের মধ্যে যায়নি, এমন অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা চুলোচুলি করে। সেটা কম নোংরা? বউকে চুমু খায় না, কিন্তু পেটায়—এটা কম অশ্লীল? শমজিতার মা এসব মানতে চাননি। তিনি মনে করেছেন, এখনকার ছেলেমেয়েরা ঠিক করছে না। শমজিতা ক্যান্টিনে, বন্ধুদের কাছে সেই প্রসঙ্গ তুলেছে।

বারিধারা হেসে বলল, ‘চুমু মানে তো শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার চুমু নয়, সন্তানকে বাবা-মায়ের চুমুও আছে। ঠাকুমা, দিদিমাকে নাতি-নাতনির চুমু আছে। ভাই-বোনের চুমু আছে। সবই ভালোবাসা। তাই আগে দেখতে হবে, চুমু কয় প্রকার ও কী কী? ভালোবাসার এই দিকটা নিয়ে অনেক রসাল আলোচনা হয়, কিন্তু অ্যাকাডেমিক চর্চা কখনও হয় না।’

অর্ণব বলে, ‘আপত্তিটা সেক্সের প্রশ্নে। চুমু যখন সেক্স অ্যাক্ট হিসেবে ব্যবহার হয়…।’

বারিধারা অবাক গলায় বলে, ‘আপত্তি কেন? কে তার ব্যক্তিজীবনে কীসে তৃপ্তি পাবে, কীসে খুশি হবে, কেমন ভাবে তার ভালোবাসার মানুষকে স্পর্শ করবে—তাতে অন্যদের আপত্তি হবে কেন! ভালোবাসা শরীর বাদ দিয়ে হয় নাকি? শরীর ভালোবাসা বাদ দিয়ে হতে পারে। তবে সোসাইটি পারমিট না করলে সেটা খোলাখুলি না হওয়াই উচিত।’

এবার তিথি মুখ খোলে। বলে, ‘বিষয়টা নিয়ে এত আলোচনার কী আছে? এত ঢাক পেটানোর তো কিছু নেই।’

বারিধারা বলে, ‘এটা কী বলছিস তিথি! লেখাপড়া শিখে এরকম বোকার মতো  কথা বলে নাকি? জীবনের সবকিছু নিয়েই আলোচনা করা উচিত। এরপর তো বলবি, সেক্স এডুকেশনের কোনও প্রয়োজন নেই।’

তিথি বলল, ‘আমাদের পুরোনো আমল কী খারাপ ছিল? তখন তো সেক্স এডুকেশন ছিল না?’

বারিধারা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, ‘খারাপ ছিল না, তবে ন’-দশ বছরে মেয়েদের ধরে ধরে বিয়ে দেওয়ার হিড়িক ছিল। তারা এগারো, বারোতেই মা হয়ে যেত। বাধ্য হত। বুড়ো বরের কাছ থেকে একটা চুমুও পেত না। চুমুহীন মা সব। এখনও হয় না এমন নয়, হয়। সেটা ভালোই বলছিস? চুমু ব্যাপারটাকে খারাপভাবে না দেখে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে দেখলে অনেক ভুল ধারণা কেটে যাবে।’

এই আলোচনার ফাঁকেই হিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের পিওন লব ক্যান্টিনে এসে উঁকি মারল। তারপর গুটি গুটি পায়ে টেবিলের কাছে এসে বলল, ‘বারিধারাদি, তোমাকে মধুজা ম্যাডাম এখুনি ডাকছে। এখুনি।’

সবাই অবাক হয়ে দেখল, তাদের হাসিখুশি লবদার মুখ থমথম করছে।