☼ প্রচেত গুপ্ত ☼
একটু পরে রোদ উঠবে
চোদ্দ
‘তোর মুখ শুকনো কেন কনি?’
‘কোথায় শুকনো মা।’
‘আমাকে লুকোস না, আমি তোর মা, আমি সব বুঝতে পারি। অবশ্যই কিছু হয়েছে। কী হয়েছে বল?’
‘উফ মা, তুমি বড্ড জ্বালাতন করো। বলছি তো আমার কিছু হয়নি।’
‘আমাকে বলবি না, সেটা বল। রাগ দেখাচ্ছিস কেন?’
‘কোথায় রাগ দেখালাম। মা, এক কথা বারবার বলছ কেন? আমার মাথা ধরেছে। অফিস থেকে ফিরেছি, আমাকে রেস্ট নিতে দাও।’
‘আমি জানি, তোর মাথা ধরেনি। তুই আমাকে মিথ্যে বলছিস। যাক, যখন বলবি না ঠিক করেছিস বলতে হবে না। অফিসে গোলমাল হয়েছে?’
‘জানি না। ঘ্যান ঘ্যান কোরো না মা। ভালো লাগছে না।’
‘দেখিস কনি, অফিসে গোলমাল করিস না।’
‘কেন? তোমার কী সমস্যা? তুমি তো আমার হয়ে অফিসে গোলমাল করতে যাবে না। গোলমাল করলে আমি করব।’
‘এখন যদি তোর চাকরিবাকরি নিয়ে সমস্যা হয় আমরা বিপদে পড়ে যাব।’
‘বলতে খারাপ লাগছে না? আর কতদিন আমাকে একা এতবড় সংসারের বোঝা টানতে হবে? বলো আর কতদিন?’
‘ভাইটাকে একটু বড় হতে দে।’
‘কেন? বাবা? বাবা কী করছে? কিছু টাকাপয়সা রোজগার করবার মতো ক্ষমতা কি তার নেই? সে কেন চেষ্টা করে না? তাকে কেন তুমি বলছ না মা? কেন বলছ না মেয়ের ঘাড়ে সবটা ফেলে দেওয়া ঠিক নয়?’
‘তুই তো তোর বাবাকে চিনিস কনি। সে বেরোতে চায় না। অসুখের পর নড়বড়ে হয়ে গেছে…কিছু করতে চায় না।’
‘তুমি আর বাবার হয়ে কথা বোলো না মা। চুপ করো।’
‘চুপই তো করে আছি। সারাটা জীবন চুপ করে থেকেছি বলেই তো আজ এই অবস্থা। কখনও স্বামীর ধমক খাচ্ছি, কখনও মেয়ের ধমক খাচ্ছি।’
‘আবার প্যানপ্যানানি শুরু করলে? আমার ভালো লাগছে না মা। বলছি তো আমার ভালো লাগছে না। কান্নাকাটির অনেক সুযোগ পাবে। এখন আমি তোমাকে এমন খবর দেব যে তোমাকে ডাক ছেড়ে কাঁদতে হবে।’
‘কী খবর?’
‘খুব ভালো খবর। যাকে বলে সুসংবাদ। সুসংবাদ কাকে বলে জানো?’
‘হাসছিস কেন? কী খবর বল। আমার হাত-পা কাপছে।’
‘আমার চাকরিটা চলে গেছে মা। আজ থেকে আমি বেকার। সংবাদ কেমন? যাও তাড়াতাড়ি বাবাকে গিয়ে দাও। বাবা যদি সুসংবাদ শুনে নড়েচড়ে বসে।’
এই কাল্পনিক কথোপকথন চালাতে চালাতে কর্ণিকা অফিসের করিডোর দিয়ে হাঁটছে। সে যাচ্ছে কর্মচারী বিষয়ক ম্যানেজারের ঘরে। কর্ণিকা হাঁটছে এবং ঘামছে। এবার আর বসের ঘরে বসে ঘামের বিভ্রম নয়। সত্যিকারের ঘাম। কর্মচারী বিষয়ক ম্যানেজার যে কণ্ঠস্বরে তাকে ইন্টারকমে ডাকলেন তাতে ঘাম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কর্ণিকা মনে করার চেষ্টা করছে যে চিঠিতে কী ভুল করেছে। আচ্ছা, এমন নয় তো, একবার বসের ভুল ডিকটেশন ধরার জন্য আজ শাস্তির কোপে পড়ল? প্রতিশোধ? তখন বস চুপ করে ছিলেন। আজ সুযোগ বুঝে আউট করে দিচ্ছেন। হয়তো দেখা যাবে যে বসের যা যা ভুল ধরেছিল, সেগুলো সে নিজেই করে বসে আছে? অসম্ভব কিছু নয়। হতে পারে। এখন বুঝতে পারছে, সেদিনের কাজটা তার ঠিক হয়নি। হঠকারী হয়ে গেছে। মা যদি শোনে তাহলে ভীষণ রেগে যাবে। মা কেন যে-ই শুনবে সে-ই রেগে যাবে। ‘পাকা মেয়ে’ বলবে। বলবে, ‘আমি হলেও তোমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিতাম। তোমার অফিস কোনও স্কুল নয়। তুমি সেই স্কুলের হেডমিসট্রেস নয়। এবার ঠেলা বোঝো।’
ম্যানেজার স্যার হাতের কাজ সরিয়ে তাকে গম্ভীর মুখে বসতে বললেন। কর্ণিকা তার ভয়ঙ্কর কল্পনার মতোই জড়সড় হয়ে চেয়ারে বসল।
ম্যানেজার স্যার বললেন, ‘কেমন আছেন কর্ণিকা?’
কর্ণিকা ঢোঁক গিলে অস্পষ্ট গলায় বলল, ‘ভালো স্যার।’
ম্যানেজার টেবিলের ওপর রাখা একটা খাম তুলে বললেন, ‘আপনার জন্য একটা খবর আছে।’
কর্ণিকার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। সে দুহাত দিয়ে চেয়ারের হাতল চেপে ধরল।
ম্যানেজার স্যার বললেন, ‘আপনার একটা প্রাোমোশন হয়েছে। আগামীকাল থেকে আপনি স্যারের মূল অ্যাসিসটেন্টদের একজন হলেন। এখন দুজন আছেন। তারা প্রাোডাকশন এবং ফিনান্স দেখেন। আপনি দেখবেন কো-অর্ডিনেশন। কোথাও কোনও সমস্যা হচ্ছে মনে হলে স্যারকে ইনফর্ম করবেন। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। স্বাভাবিকভাবেই আপনার স্যালারি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধের অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হল। এখন যা পান তার থেকে দ্বিগুণের বেশি। কিন্তু রেসপনসিবিলিটি বাড়ল দশগুণ। বসবার জন্য আপনাকে আলাদা চেম্বার দেওয়া হবে। কাল থেকে অফিস যাতায়াতের জন্য আপনি গাড়ি পাবেন।’ এতটা বলে ম্যানেজার স্যার খামটা এগিয়ে ধরলেন। বললেন, ‘নিন ধরুন। আপনার প্রাোমোশনের চিঠি।’ তারপর মৃদু হেসে বললেন, ‘এই বয়সে এত বড় দায়িত্ব এর আগে সেন অ্যাসোসিয়েটসে কেউ পেয়েছে বলে আমার মনে পড়ছে না। এটা একটা খুব ভালো বিষয়। ইয়াং থটস যে-কোনও কাজেই খুব ইমপর্টান্ট। কনগ্রাচুলেশন।’
কর্ণিকার মনে হচ্ছে, তার চেয়ার কাঁপছে। সে এখনই দড়াম করে চেয়ার থেকে মেঝেতে পড়ে যাবে। সে কি ভুল শুনেছে? এও কি বিভ্রম? কোনও রকমে বললে, ‘থ্যাঙ্কু স্যার। কিন্তু এতবড় দায়িত্ব কি আমি সামলাতে পারব?’
ম্যানেজার ভদ্রলোকের মুখ বলে দিচ্ছে তিনি খুব খুশি।
‘না পারবেন না, ভুল করবেন।’
কর্ণিকা অবাক হয়ে বলল, ‘সে কী!’
ম্যানেজার হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ ঠিক তাই। ভুল করতে করতে ঠিক করবেন। আমরাও তাই করি। এবার তাহলে আসুন? আমি কয়েকটা কাজ সেরে ফেলি?’
কর্মচারী বিষয়ক ম্যানেজারের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে কর্ণিকা নিজের টেবিলে না গিয়ে আগে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল। এই জায়গাটা ফাঁকা। অফিসের কেউ চট করে এদিকটা আসে না। কর্ণিকা মায়ের মোবাইল নম্বর টিপল। ভাই ফোন ধরল।
কর্ণিকা অবাক হয়ে বলল, ‘মানা তুই! স্কুলে যাসনি? মা কোথায়?’
ওপাশ থেকে চোদ্দো বছরের মানান বিরক্ত গলায় বলল, ‘একসঙ্গে অতগুলো প্রশ্ন করছিস কেন দিদি? দুটো প্রশ্নের তো কোনও মানেই হয় না। গলা শুনেই তো বুঝতে পারছিস আমি। তারপরেও বলছিস মানা তুই! স্কুলে যে যায়নি তাও বুঝতে পারছিস। স্কুলে নিশ্চয় মোবাইল নিয়ে যাব না। লুকিয়ে নিয়ে গেলেও ক্লাসে তোর ফোন ধরব না। তিনটের মধ্যে একটা প্রশ্নই ঠিকঠাক। মা কোথায়? মা দোকান বাজার কোথাও একটা বেরিয়েছে। আমাকে বলে যায়নি। ফোন নিয়ে যায়নি।’
কর্ণিকা কড়া গলায় বলল, ‘পাকা পাকা কথা বলবি না। স্কুলে যাসনি কেন?’
মানা শান্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘সমস্যা আছে।’
চোদ্দো বছর বয়সে কেউ দিদির সঙ্গে এভাবে কথা বলে? ছেলেটা বখে যাচ্ছে। লেখাপড়ায় মন নেই। পাড়ায় টই টই করে বেড়ায়। যখন-তখন স্কুল কামাই করে। এক সময় বাড়ির দায়িত্ব যে তাকেই নিতে হবে সে ব্যাপারে কোনও হুঁশ নেই। কর্ণিকা জোর ধমক দিতে গিয়ে নিজেকে সামলাল। আজকের দিনটা মন খারাপ করবে না।
‘মা এলে আমাকে মিসড কল দিতে বলবি। স্কুলে যাসনি কেন?’
বাপ্পা নীচু গলায় বলল, ‘বললাম তো সমস্যা আছে। বাড়িতে আয় বলব।’
কর্ণিকা ফোন কেটে দিল। নিশ্চয় বানিয়ে বানিয়ে কিছু একটা বলবে। কর্ণিকা মুখ তুলে সামনে তাকাল। এখান থেকে অনেকটা আকাশ দেখা যায়। অনেকদিন আকাশের দিকে তাকানো হয়নি। আজ আকাশটা যেন বেশি নীল। রোদ ঝলমল করছে। কী অদ্ভুত! খানিক আগে একরকম ভেবে ভয় পাচ্ছিল, হল একদম উলটো। চাকরি নট হবার বদলে প্রাোমোশন। জীবনের এটাই মজা। যা ভাবা হয় সবসময় তা ঘটে না। কোন দার্শনিক যেন বলেছিলেন, ‘লাইফ ইজ আনপ্রেডিকটেবল, বিকজ ইট ইজ লাইফ।’ জীবনের এই রহস্য যেমন মজার, তেমনই মনখারাপের। অর্চিনকে নিয়ে সে কত কিছুই না গোপনে ভাবে। ভাবে জীবনের ‘আনপ্রেডিকটেবল’ নিয়মে সব একদিন উলটে যাবে। না, যাবে না। কারণ অর্চিন তাকে নিয়ে ভাবে না। তার ভাবনার মানুষ আলাদা। সেই মেয়ের নাম ঋষা। অর্চিনের মতো ঝকঝকে ছেলের জন্য ঋষাই উপযুক্ত মেয়ে। সে সুন্দরী, বুদ্ধিমতী। তার মতো নার্ভাস নয়। ঋষাকে যে কর্ণিকা খুব বেশি চেনে এমন নয়। তার আলাপ ফেসবুকে। ঋষা ফেসবুকে বেশি থাকে না। এলেও টুকটাক দু-একটা কথা বলে অফলাইন হয়ে যায়। সে ফাঁকা সময়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের থেকে বই টই নিয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করে। নিজেই এই কথা ওয়ালে পোস্ট করেছে। কর্ণিকা এই মেয়েকে ঘাটায় না। তার ভয় করে। যদি অর্চিন জানতে পারে তাহলে নিশ্চয় রেগে যাবে। অর্চিন সব সময়েই তার সঙ্গে কেমন যেন রাগ রাগ করে কথা বলে। পাত্তা দিতে চায় না। অ্যাভয়েড করে। করুক। যত খুশি রাগ করুক। তবু সে এই ছেলেকে ভালোবাসে। নরমাল বুদ্ধির ভালোবাসা নয়, বোকার মতো ভালোবাসা। একটা ছেলে অন্য মেয়েকে ভালোবাসে, তাকে পাত্তা দেয় না, তারপরেও তাকে ভালোবাসার মানে কী? বোকামি ছাড়া আর কী? অর্চিন যখন তাকে হেলাফেলা করে, ফোন ধরে না, মেসেজের জবাব দেয় না, দেখা করে না খুব দুঃখ হয়। মনে হয়, ঘরের দরজা আটকে একচোট কাঁদি। মনে হয়, আর কোনওদিন সে হ্যাংলার মতো অর্চিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে যাবে না। তার নিজের কি কোনও দাম নেই? ঋষার মতো ঝকমকে মেয়ে না হোক, সে কি এতটাই হেলাফেলার? তার কি কোনও আত্মসম্মান বোধ নেই? দুদিন পরেই সব জট পাকিয়ে যায়। মনে হয়, ভালোবাসায় কীসের আত্মসম্মান? কীসের অবহেলা? ধ্যুস। আমার ভালোবাসা আমার কাছে। সব মানুষকে যে সমান হতে হবে, এক ভাবে চলতে হবে তার কি মানে আছে? অর্চিন আলাদা। আলাদা বলেই তো তাকে এত ভালোবাসে। কিছুতেই বেরোনো যায় না। সবথেকে বড় কথা হল, অন্য মানুষটা কেমন ভাবে নিল তার ওপর ভালোবাসা নির্ভর করে না। ভালোবাসা সবসময়ই একা এবং স্বাধীন। তাই এত প্রিয়। এমন তো নয় যে সে অর্চিন আর ঋষার মাঝখানে ঢুকতে চাইছে। মোটেও না। তাছাড়া চাইলেও যে কোনও লাভ হবে না, তাও ভালো করে জানা হয়ে গেছে। উলটে অর্চিন আরও সরে যাবে। এখন যেটুকু যা কথা বলে, যোগাযোগ করে তাও করবে না। ভালোবাসার কোনও পাওয়াই পূর্ণ হয় না, আবার অপূর্ণও হয় না। একটা সময় মনে হয়, আরও পেলে ভালো হত। একটা সময় মনে হয়, উফ এত পাওয়া তো কষ্টকর। দমচাপা। অল্প প্রেমের পরই প্রেমিক প্রেমিকারা ঘনিষ্ঠ হবার জন্য আকুলি বিকুলি করে। আবার দীর্ঘদিন প্রেমে ঘনিষ্ঠ থেকেও স্বামী স্ত্রী আলাদা হয়ে যায়। এর কোনও নিয়ম নেই। নিয়মে ঢোকাও যায় না।
অনেকটা ভেবে ফেলল কর্ণিকা। তারপরেই মোবাইল তুলে অর্চিনের নম্বর টিপল। প্রাোমোশনের খবরটা খুব জানাতে ইচ্ছে করছে।
‘বলো’ অর্চিনের গলা ভারী।
কর্ণিকা নীচু গলায় বলল, ‘একটা খুব ভালো খবর আছে। ভাবলাম তোমাকে জানাই।’
অর্চিন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘বলে ফেলো।’
‘অফিসে আমার একটা প্রাোমোশন হয়েছে। খুব বড় প্রাোমোশন।’
অর্চিন ওপাশে একটু চুপ করে থেকে বলল, ‘ভালো খবর।’
অর্চিনের প্রশংসায় কর্ণিকা উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘আমাদের বস একজন দারুণ মানুষ।’
অর্চিন ঠাণ্ডা গলায় বলল, ‘কেন? তোমাকে প্রাোমোশন দিয়েছে বলে?’
কর্ণিকা হেসে বলল, ‘না, তা নয়। আমার ধারণা, আমার এই প্রাোমোশন হয়েছে, বসের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।’
ওপাশে অর্চিন যেন একটু ঘাবড়ে গেল। বলল, ‘কী বললে!’
কর্ণিকার উৎসাহ বেড়ে গেল। যে ছেলে তার সঙ্গে কথা বলবার জন্য মোটে সময় পায় না, সে আজ এত প্রশ্ন করছে!
‘সত্যি! আমি একদিন স্যারের চিঠির ভুল ধরেছিলাম, আমার ধারণা সেই কারণে আমি প্রাইজ পেলাম।’
অর্চিন একটা ছোট শ্বাস ফেলে বলল, ‘তোমার বসের মনে হয় খানিকটা মাথার সমস্যা আছে।’
কর্ণিকা বলল, ‘মোটেই না। উনি একজন সিরিয়াস মানুষ। বিমলকান্তি সেনের মতো মানুষ খুব কম পাওয়া যায়।’
অর্চিন একটু চুপ করে বলল, ‘কী নাম বললে?’
কর্ণিকা বেশ গর্বের সঙ্গে বলল, ‘বিমলকান্তি সেন।’
কর্ণিকা কোথায় কাজ করে, কী কাজ করে সেসব নিয়ে কখনও উৎসাহ দেখায়নি অর্চিন। একটা চাকরি করে, ব্যস এইটুকুই জানে। আজ সে প্রথম জানল, কর্ণিকা কাজ করে সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসে। বিমলকান্তি সেনের অফিস। যার বাড়িতে সে থাকে। আশ্চর্য!
ঠিক একই সময় আর একটা খুব আশ্চর্যের ঘটনা ঘটল। ঘটছে বিমলকান্তি সেনের চেম্বারে।
বিমলকান্তি নিখিলেশ উপাধ্যায় হয়ে গেছেন! আসল নিখিলেশ উপাধ্যায় বসে আছেন তার উলটোদিকের চেয়ারে। আওয়াজ করে চা খাচ্ছেন। বদলে যাওয়া বিমলকান্তি ভাবছেন—
‘দায়িত্ব কি আমি ঠিকমতো পালন করতে পারছি? কমলকান্তিবাবু আমাকে তাঁর পুত্রকে গার্ড দিতে বলেছেন। অফিসে কোনও সমস্যায় পড়লে পরামর্শ দিতে বলেছেন। আমি কি এতদিন ধরে তা পেরেছি? যদি পেরে থাকি তাহলে নিশ্চয়ই আমার ওপর তার বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এবার বড় কোপ মারতে হবে।’
বিমলকান্তিবাবুর বাঁ হাঁটুর কাছটা কনকন করে উঠল। এই ব্যথা তার নয়। এই ব্যথা নিখিলেশ উপাধ্যায়ের। তিনি চা খাচ্ছেন না, তবু জিভে চায়ের স্বাদ পেলেন।
সব মিলিয়ে একক মুহূর্ত। কয়েক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ। আবার সব নরমাল। বিমলকান্তিবাবু আবার বিমলকান্তি হয়ে গেলেন। তিনি চুপ করে বসে আছেন। তার মানে, উপাধ্যায়বাবুকে বাবাই এখানে রেখেছেন! সমস্যায় পড়লে তাকে রক্ষা করবার জন্য! কী অদ্ভুত! এতদিনে কিছুই বোঝা যায়নি! বড় কোপ মানে কী?
কিন্তু সেসব পরের কথা। আসল কথা হল, আবার একই গোলমাল। প্রহ্লাদ দিয়ে যা শুরু হয়েছিল। তারপর বাবা হয়ে এখন উপাধ্যায়বাবু।
বিমলকান্তি সেন নিশ্চিত হলেন তার কোনও বড় গোলমাল হয়েছে। বড় গোলমাল ছাড়া একজন মানুষ অন্য মানুষ হয়ে যেতে পারে না। এই গোলমাল কি শুধুই বিভ্রম? মনের ভুল? নাকি অন্য কিছু? এমন কিছু যা বোঝা যায় না?