» » দ্বিতীয় কিস্তি

বর্ণাকার

প্রচেত গুপ্ত

একটু পরে রোদ উঠবে

কুড়ি

কমলকান্তি সেন মুগ্ধ এবং বিস্মিত।

শুধু মুগ্ধ এবং বিস্মিত বললে কম বলা হবে। তিনি অতিরিক্ত মুগ্ধ এবং অতিরিক্ত বিস্মিত। তার কারণ বড় কিছু নয়। কারণ দুটি রান্নার বই। প্রথমটি একটি সংকলন। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম দুই রান্না বইয়ের সংকলন। বাংলায় লেখা প্রথম রান্নার বই ‘পাকরাজেশ্বর’ ও ‘ব্যঞ্জন রত্নাকর’। দ্বিতীয় বইটি মনিরা বেগমের লেখা ‘বেগমের বাদশাহি রান্না’।অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন

কিছুদিন হল কমলকান্তি সেনের সংগ্রহে বই দুটি এসেছে। রান্নার বই যে এমন হতে পারে, তাঁর জানা ছিল না। গোটা জীবন খাওয়াদাওয়া বিষয়ে তিনি নির্লিপ্ত থেকেছেন। নব্বই পার হয়েও কখনও ভাবেন না আজ কী খাব? তিনি মনে করেন, জৈবিক কারণে মানুষ খেতে বাধ্য হয়। কোনও বিকল্প নেই। এই কাজ নিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামানো সময়ের অপচয়। কিন্তু রান্না একটি শিল্প। আর পাঁচটা বই পড়বার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎই রান্নার বইয়ের প্রতি কৌতূহল বোধ করেছিলেন। কয়েকটি বই উলটেপালটে দেখার পর সেই কৌতূহল আগ্রহে পরিণত হয়, তার পর থেকেই তিনি দেশি-বিদেশি নানা ধরনের রান্নার বই সংগ্রহে আনাচ্ছেন। এই বই দুটি সেই পথেই হাতে এসেছে। বইদুটি শুধু রেসিপি নয়, গবেষণাগ্রন্থও বটে। কত পরিশ্রম! কত যত্ন! এক যুগের মানুষ পরের যুগের মানুষের জন্য তার জ্ঞান, কীর্তি, সংস্কৃতি, রুচি সম্পদ হিসেবে রেখে যায়। এটাই নিয়ম। রান্নার আদবকায়দা জানিয়ে যাওয়াও তাই। যুগের পর যুগ খাবারের স্বাদ ধরে রাখবার আয়োজন। বিভিন্ন দেশ, ধর্ম, জাতি নিজেদের খাবারের স্বাদ, রুচি, সংস্কৃতিকে পরম আদরে অন্য দেশ, ধর্ম, জাতির হাতে তুলে দিয়েছে। কমলকান্তি জানেন, কিছু ভুয়ো ইনটেলেকচ্যুয়াল মনে করে, পাকপ্রণালী নিয়ে আলোচনা, চর্চা অর্থহীন। খাওয়ার মতো হেঁশেল বিষয়টাই নিম্নবুদ্ধির। কমলকান্তি সেন তাদের জন্য করুণা বোধ করছেন। বোকার দল। তিনি ক্রমশ বুঝতে পারছেন, রন্ধনশিল্প একটি উঁচুদরের শিল্প তো বটেই, সেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সভ্যতা ও ইতিহাস ধরা আছে। গুহামানব এক সময় পশুর মতো কাঁচা মাছ মাংস খেত। বুনো গাছপাতা খেত। যত সে সভ্য হতে লাগল, বুঝতে পারল, সে পশু নয়, তার খাদ্যে স্বাদ প্রয়োজন। সেই স্বাদ তাকে তৈরি করে নিতে হবে। তাকে সভ্য হতে হবে। এই শিল্পে যে এতরকম মাত্রা আছে, তাঁর জানা ছিল না।

তবে শুধু বই নয়, আজ এই বয়সে কমলকান্তি সেনের মনে হচ্ছে, পৃথিবীর অনেক কিছু না জেনেই চলে যেতে হবে। সেটা একদিক থেকে যেমন দুঃখের, তেমন আনন্দেরও। মৃত্যুর মুহূর্তে মনে হবে, আরও ক’টাদিন বেঁচে থাকলে ভালো হত। পৃথিবীর মতো সুন্দর আর বিস্ময়কর জায়গা থেকে কত কম জেনে বিদায় নিতে হচ্ছে। এটা একটা মন খারাপের কথা। আর আনন্দের বিষয় হল, মনে হবে, ভাগ্যিস মানুষ হয়ে জন্মেছিলাম। কোনও আপশোস নেই। যা পেয়েছি, তাই অনেক। এত পাবার কি আমি যোগ্য ছিলাম? না, ছিলাম না। পৃথিবী সুন্দর বলেই এই অকৃতী, অধমকে সে অনেক কিছু দেখাল, জানাল। তার কাছে আমি ঋণী রইলাম।

কমলকান্তি তাঁর ইজি চেয়ারে আয়েস করে বসেছেন। বাঁ হাতের কনুইয়ের জ্বালাটা কমেছে। খানিক আগে মণিকুন্তলা তার ঘরে চা পাঠিয়ে দিয়েছেন। বড় মগের লিকার চা। ছেলের বিয়ের পর পরই কমলকান্তি বলে দিয়েছিলেন শ্বশুরমশাইকে সেবা করবার জন্য তিনি ছেলের বিয়ে দেননি। বাড়িতে তিনি ছেলের বউ এনেছেন, তাঁর জন্য নার্স বা সেক্রেটারি আনেননি। সুতরাং চা,  জল, খাবার, ওষুধ, চাদর, অফিসের ব্যাগ নিয়ে মণিকুন্তলা যেন তাঁর কাছে না আসে। এর জন্য নির্দিষ্ট কাজের লোক বাড়িতে আছে। তারা সেই কাজ করবে। এমনকী বিয়ের পর মণিকুন্তলা শ্বশুরমশাইয়ের খাবার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

‘কী চাই?’

মণিকুন্তলা থতমত খেয়ে বললেন, ‘না, আপনি খাচ্ছেন…।’

কমলকান্তি ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘আমি খাচ্ছি তো কী? তোমার তদারকিতে সবই তো সুন্দর করে গোছানো আছে। আমি চটপট খাব আর অফিসে ছুটব।’

মণিকুন্তলা আরও ঘাবড়ে গিয়ে বলেছিলেন, ‘না, মানে যদি কিছু লাগে…।’

কমলকান্তি চাপা গলায় বললেন, ‘কিছু লাগলে তুমি কী করবে? বীণার মা নেই? এটা তো তার কাজ।’

মণিকুন্তলা এবার নিজেকে সামলে নেন। মৃদু স্বরে বলেছিলেন, ‘আমারও কাজ বাবা। আপনার খাওয়ার সময় পাশে থাকাটা এ বাড়ির বউ হিসেবে আমার কর্তব্য।’

কমলকান্তি বুঝতে পারলেন, এই মানসিকতা ভাঙতে গেলে কঠিন কথা বলতে হবে। তবে বিষয় কঠিন হলেও বলার ভঙ্গি যেন কড়া না হয়। মেয়েটি অতি ভালো। সে এতদিন যা জেনে এসেছে, সেটাই করছে।

কমলকান্তি মৃদু হেসে বললেন, ‘শ্বশুরবাড়ির প্রতি বাড়ির বউয়ের কর্তব্য বিষয়ে সিলেবাস কে তৈরি করেছে মণিকুন্তলা? সেই সিলেবাস কমিটিতে কারা ছিল? পুত্রবধূরা কি কেউ ছিল? নাকি শুধুই শ্বশুরমশাইদের মেম্বার করা হয়?’

মণিকুন্তলাও হেসে ফেললেন। বললেন, ‘আপনার খাওয়ার সময় আমি দাঁড়ালে আমার কোনও সমস্যা নেই বাবা। আমার তো এখন কোনও কাজ নেই। তাছাড়া আমার ভালো লাগবে।’

কমলকান্তি বললেন, ‘আচ্ছা, দাঁড়াতে হবে না। তুমি ওই চেয়ারটায় বসো। বসে আমাকে বলো, তুমি কি কখনও তোমার বাবার খাওয়ার সময় পাশে গিয়ে দাঁড়াতে?’

মণিকুন্তলা মজা পেয়েছিলেন। এ কেমন মানুষ রে বাবা! চিরকাল সবার কাছ থেকে শুনে আসছেন, খাবার সময় শ্বশুর-শাশুড়ির পাশে হাজির থাকাটা অবশ্য কর্তব্য। তার বান্ধবী, আত্মীয়রা কতবার ‘এই রে শ্বশুরমশাইয়ের খাবার টাইম হয়ে গেছে। আমি এবার পালাব’—বলে আড্ডা ভেঙে ছুটেছে। চাকরি করলে, ফাইল দেখতে দেখতে বা মিটিং করতে করতে, স্কুল-কলেজ হলে ক্লাসে পড়াতে-পড়াতে বা টিফিন খেতে খেতে বাড়িতে ফোন করেছে। চাপা গলায় কাজের লোকের কাছে থেকে রিপোর্ট নিয়েছে। ‘হ্যাঁ গো রতনের মা, বাবা খেতে বসেছেন? ডালটা দিয়েছ তো…মুগ, মুসুর দুটোই দিয়েছ তো? ভেরি গুড। খান না খান, রোজ দুরকম ডাল দেবে…তরকারি ঠিক আছে?…অ্যাঁ! কী বলছ? একটু মুখে দিয়েই সরিয়ে রাখলেন…সর্বনাশ! কেন? কী হল আবার…ঝাল বেশি বলছে…উফ রতনের মা, তোমাকে না বারবার বলেছি…ঝাল কম দেবে, ঝাল কম দেবে…বাড়ি ফিরে আমাকে একচোট শুনতে হবে, বাবাও বলবেন, তোমাদের দাদাবাবুও বলবে…যাক, মাছ দুটো দিয়েছ তো? অ্যাঁ! দুটো দাওনি! করেছ কী! কেলেঙ্কারি করেছ…তোমাকে যে পইপই করে বলে এলাম, খাক না খাক দুটো মাছ দেবে…বাটিতে দুটো মাছ দেখলে মানুষটা শান্তি পায়…ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে…এত বোঝো আর এটুকু বোঝো না? আমাকে বিপদে না ফেলে তুমি ছাড়বে না দেখছি রতনের মা…আমাকে চাকরিটা ছেড়ে হেঁশেল ঠেলতে হবে…টক দইটা দিয়েছ…খাবে না বলছে? কেন! দই আবার কী করল? তার ওপর রাগ কেন? সে তো আর তার ছেলের বউয়ের মতো চাকরি করতে যায়নি…গলা ব্যথা বলছে?…কী ঝামেলা…মানুষটা তো জ্বালিয়ে মারবে দেখছি…মতলব অন্য…চাইছে আমি কাজকর্ম ছেড়ে বাড়ি বসে ওনার সেবা করি আর বলি, বাবা এটা নিন, বাবা ওটা নিন…ধ্যুস…’

এই মানুষটা তো একেবারে উলটোকথা বলছে!

কমলকান্তি বললেন, ‘চুপ করে আছ কেন? উত্তর দাও। বিয়ের আগে তুমি কি খাবার সময়ে তোমার বাবার পাশে দাঁড়াতে?’

মণিকুন্তলা বললেন, ‘রোজ পারতাম না। মাঝে মাঝে দাঁড়াতাম। মা থাকেন।’

কমলকান্তি বললেন, ‘ভালো কথা। আমার এখানেও তাই হবে। মাঝে মাঝে আসবে। এসে গল্প করবে। খাবার টেবিলে গল্প হজমের জন্য ভালো। সাহেবরা করে। তবে অফিস বেরোনোর সময় গল্পের কতটা সময় থাকবে জানি না। একটা কাজ করা যাক, রাতে আমরা একসঙ্গে বসে খেতে পারি। তখন কথা হবে। কিন্তু নিয়ম করে আমার খাবার সময়ে এসে হাজিরা দেওয়া চলবে না।’

মণিকুন্তলা আর পারেননি। মুচকি হেসে ফেলেন। গলায় কৌতুক নিয়ে বলেন, ‘খাবার সময় আমি থাকলে আপনার সমস্যা কী?’

কমলকান্তি একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘একটাই সমস্যা। আমি জমিদার নই এবং তুমি জমিদারের পুত্রবধূ নও। তুমি যদি বলো, বাবাকে যত্ন করে খাওয়াতে আমার ভালো লাগে, আমি বলব এটা সত্য বলছ না। কম্পালসারি লাই। বাধ্যতামূলক মিথ্যে বলছ। লজ্জার কথা হল, আজও ছেলের বউদের শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে বানানো আদিখ্যেতা দেখাতে হয়। আমি এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে।’

‘আপনি বেশি ভাবছেন বাবা। সত্যি খাবার সময় আপনার পাশে থাকতে আমার ভালো লাগছে। আপনার ঠিকমতো খাওয়া হয় না। মা থাকলে একটা কথা ছিল। আর একটু ভাত দিই বাবা?’

কমলকান্তি বললেন, ‘তোমার বাবা-মাও তো এখানে নেই। তোমারও তো অভ্যেস বদলেছে। আমি কি তোমার খাবার সময় পাশে গিয়ে দাঁড়াই? বলি, আর একটু ভাত দেব মণিকুন্তলা? সবটাই পারস্পরিক হওয়ার কথা। ভালোবাসা, ভালোলাগা একতরফা হলেই সেটা বানানো, আদিখ্যেতা হয়ে যায়। হয় আদিখ্যেতা, নয় ফিউডাল অ্যাপ্রাোচ। সুতরাং আর নয়। আমি কেমন খেলাম, কী খেলাম, আর খাব কিনা—এইসব নিয়ে বাড়াবাড়ি দেখলে আমি বিরক্ত হব। অসুবিধে হলে তো তোমাকেই জানাব। তুমিও জানাবে।’

এই ঘটনার পর থেকে মণিকুন্তলা মানুষটাকে আরও বেশি পছন্দ করে ফেলেছিলেন। তিনি সামনে যেতেন না, তবে আড়াল থেকে কন্ট্রোল করতেন। এখনও করেন। আজও চা কাজের লোককে দিয়েই ওপরে পাঠিয়েছেন।

কমলকান্তি সেন বই খুললেন।

এই সব বই কি নিছকই সাজিয়ে-গুছিয়ে খিদে-তেষ্টা মেটানোর বই? এই বই কি ইতিহাস নয়?

বারিধারা ঘরে ঢুকে দাদুর ইজিচেয়ারের পাশে মোড়া নিয়ে ধপাস করে বসে পড়ল। কমলকান্তি বই থেকে মুখ না সরিয়ে বললেন, ‘কী বৃষ্টি দিদিমণি, আজ ইস্কুল যাওয়া নেই?’

বারিধারা ঘরে ঢুকে দাদুর গায়ে হাত দিয়ে রাগ রাগ গলায় বলল, ‘না ইস্কুল যাওয়া নেই। আজ ইস্কুল ছুটি। আজ আমার ইউনিভার্সিটি যাওয়া আছে। তবে দেরিতে যাওয়া আছে।’

কমলকান্তি এবার মুখ ফেরালেন। হাত বাড়িয়ে নাতনির চুল ঘেঁটে হেসে বললেন, ‘ইস্কুল, ইউনিভার্সিটি একই হল।’

বারিধারা বলল, ‘দাদু তোমার সঙ্গে আমার ইমপর্ট্যান্ট কথা আছে।’

কমলকান্তি চোখ গোল গোল করে বললেন, ‘তোমার সঙ্গে আমার ভেরি ইমপর্ট্যান্ট কথা আছে বৃষ্টি।’

বারিধারা বলল, ‘আমারটা আগে শুনতে হবে। লেডিস ফার্স্ট।’

কমলকান্তি ঝগড়ার অভিনয় করে বললেন, ‘অসম্ভব। বুড়ো ফার্স্ট।’

বারিধারা বলল, ‘উফ দাদু, ঠাট্টা নয়। আমার কথা শুনলে তুমি ঘাবড়ে যাবে।’

কমলকান্তি ইজি চেয়ারেই একটু ঘুরে বসলেন যেন। কোমর বেঁধে লড়াই করবার ঢঙে বললেন, ‘আমার কথা শুনলে তোর চোখ কপালে উঠবে।’

বারিধারা বুঝতে পারল, দাদু এখন ঠাট্টার মেজাজে আছে। থামানো যাবে না। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘আচ্ছা, বলো। আগে তুমিই বলো। বুড়ো ফার্স্ট চান্স পাক।’

কমলকান্তি একটু চুপ করে বললেন, ‘হ্যাঁ রে, বৃষ্টি, তোরা কুলফি খাস?’

বারিধারার চোখ চকচক করে উঠল। বলল, ‘কী বলছ দাদু! কুলফি খাব না! বেস্ট ডেসার্ট ইন ওয়ার্ল্ড। ভালো রেস্টুরেন্টের কুলফি খেলে তুমি পাগল হয়ে যাবে। খাবে?’

কমলকান্তি হেসে বললেন, ‘ভাবছি খাব। তোর মা বানাতে পারবে?’

বারিধারা হেসে বলল, ‘কেন পারবে না? তার ওপর তুমি খেতে চেয়েছ বলে কথা। খাওয়া নিয়ে যার কোনও চাওয়াচায়ি নেই, সেই মানুষটা মুখ ফুটে কিছু খেতে চাইলে মা ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু এই কি তোমার ইমপর্ট্যান্ট কথা দাদু? কুলফি খাওয়া?’

কমলকান্তি বললেন, ‘একেবারেই না। ইমপর্ট্যান্ট কথা অন্য। বৃষ্টি, তুই কি জানিস, এখন যেভাবে কুলফি বানানো হয়, সেই পদ্ধতি কে তৈরি করেছিল?’

বারিধারা বলল, ‘ও তাই বলো। রেসিপি বুক পড়তে পড়তে তোমার মাথা গেছে। নিশ্চয় কোনও সাহেব বানিয়েছিল।’

কমলকান্তি ঘাড় নাড়িয়ে, গোয়েন্দা গল্প বলবার ঢঙে চাপা গলায় বলতে শুরু করলেন, ‘একেবারেই নয়। নো সাহেব। মোগল সম্রাট আকবরের নাম শুনেছিস তো? সম্রাট জালাউদ্দিন মুহম্মদ আকবর? তাঁর ছিল বিশাল বাবুর্চিখানা। বাবুর্চিখানায় মেন শেফকে বলা হত মির বাকবাল। তাঁর আণ্ডারে ছিল অসংখ্য বাবুর্চি। প্রতিটা খাবারের পাত্র কাপড় দিয়ে থাকত মোড়া। তার ওপর থাকত খাবারের নাম আর বাবুর্চির সিলমোহর। মানে, দিস ফুড ইজ সেফ। বৃষ্টি, তুই শুনলে এক্সাইটেড হবি যে আকবরের বাবুর্চিরা যে পদ্ধতিতে বাদশাহের জন্য কুলফি বানাত, আজও সেই একই টেকনিকে কুলফি বানানো হয়। এমনকী তোর জন্যও।’

বারিধারা চোখ বড় করে বলল, ‘বলো কী দাদু! রিয়েলি?’

কমলকান্তি বই এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘বিশ্বাস না হলে এটা পড়ে দেখ।’

বারিধারা বলল, ‘ইন্টারেস্টিং।’

কমলকান্তি হেসে বললেন, ‘আর ইমপর্ট্যান্ট নয়?’

বারিধারা সুন্দর হেসে বলল, ‘অবশ্যই ইমপর্ট্যান্ট। আজ যে আমাকে ইউনিভার্সিটি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তার থেকে বেশি ইমপর্ট্যান্ট তো বটেই।’