☼ প্রচেত গুপ্ত ☼
একটু পরে রোদ উঠবে
আট
শ্রবণ পড়েছে মুশকিলে। সে আজ বাড়ি থেকে পালাবে, কিন্তু কী ধরনের ব্যাগ নেবে বুঝতে পারছে না। বাড়ি থেকে পালানোর সঙ্গে কোন ধরনের ব্যাগ মানায়? চাকা লাগানো ঢাউস ট্রলি ব্যাগ? নাকি পিঠে ঝোলানো রুকস্যাক? নাকি পুরোনো আমলের ট্র্যাঙ্ক, বেডিং? ব্যাগ কোম্পানিরা কত ধরনের ব্যাগ, সুটকেস বের করেছে। ট্র্যাভেল ব্যাগ, অফিস ব্যাগ, ট্রেকার্স ব্যাগ, হানিমুন ব্যাগ, ফ্যামিলি ট্যুর ব্যাগ। পালানোর জন্য কোনও ব্যাগ কি তারা তৈরি করেছে? শ্রবণ কি দোকানে গিয়ে জিগ্যেস করতে পারে? আজকাল সব কিছুই কাচঘেরা বড় বড় দোকানে বিক্রি হয়। যদিও এখন আর দোকানকে দোকান বলা যায় না, দোকান বললে প্রেস্টিজে লাগে। বলতে হয় শোরুম, আউটলেট। জামাকাপড়, জুতো, ব্যাগ, টিভি, কম্পিউটার থেকে শুরু করে ভেলি গুড়, ঘুঁটে, হ্যারিকেন, চরণামৃত পর্যন্ত সব কিছুর শোরুম হয়ে গেছে। কাচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেই এয়ারকন্ডিশন মেশিনের ফিনফিনে ঠাণ্ডা বাতাস দেয়। শার্ট-প্যান্ট-টাই পরা স্মার্ট ছেলেমেয়েরা স্মিত হেসে এগিয়ে আসবে।
‘বলুন স্যার।’
শ্রবণকে হাসি পাত্তা না দিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলতে হবে, ‘ব্যাগ দেখান।’
বিক্রেতা অতিরিক্ত স্মার্ট হওয়ার জন্য গলা নামিয়ে বলবে, ‘ধন্যবাদ স্যার। আপনাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি। আপনি একজন ব্র্যান্ড কনসাস মানুষ। নামীদামি কোম্পানির প্রতি আস্থাশীল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের বহু কাস্টমার আজও ব্র্যান্ড ব্যাপারটা বুঝতে চান না। তাঁরা প্রাোডাক্টের ভ্যালু দেখেন, ব্র্যান্ডভ্যালু দেখেন না। এঁদের নিয়ে আমরা খুবই সমস্যায় পড়ি। কিছুতেই বোঝাতে পারি না, জিনিস সস্তা বা টেকসই বলে কথা হয় না। কথা হয় ব্র্যান্ডের। জাপানের নিকিতানি, আমেরিকার ভিলাইস, হনলুলুর টিকিমাটা কোম্পানির জিনিস বাড়িতে পৌঁছোনোর আগেই ছিঁড়ে, ভেঙে বা রং চটে যাওয়াও একটা আনন্দের ঘটনা। গর্ব করে পাঁচজনকে বলা যায়। সস্তা বা টেকসই জিনিসে এই গর্ব নেই। কথাটা কে বুঝবে বলুন স্যার? সবথেকে বড় কথা কী জানেন স্যার? সব থেকে বড় কথা হল, ব্র্যান্ড আপনার সব প্রয়োজন মেটাতে পারে। অল পারপাস।’
এই সময়ে শ্রবণকে হয়তো হাত নেড়ে বলতে হবে, ‘চিন্তা করবেন না। এ সমস্যা থাকবে না। আমার কাছে খবর আছে, খুব শিগগিরই স্কুল সিলেবাসে ব্র্যান্ড বিষয়টা ঢোকানো হচ্ছে। ইংরেজি, অঙ্ক, ফিজিক্সের সঙ্গে ব্র্যান্ড পরীক্ষায় পাস করতে হবে। দেরিতে হলেও আমাদের দেশের বড় বড় মানুষজন পেরেছেন, ছোটবেলা থেকে ব্র্যান্ড সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের জ্ঞান বাড়ানো প্রয়োজন। যাকে বলে ব্র্যান্ডজ্ঞান। মানবজীবনের একটা বড় অংশ বেচাকেনার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তার জন্য ব্র্যান্ডজ্ঞান থাকতে হবে। সমস্যা একটাই। সিলেবাসে নতুন বিষয় ঢোকাতে হলে কিছু বাদ দিতে হয়। নইলে ছোট ছেলেমেয়েদের পক্ষে সিলেবাস কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে ইতিহাস বই থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের খানিকটা বাদ দেওয়া যেতে পারে। বিদেশের ব্র্যান্ড আগে না দেশের স্বাধীনতা আগে? অবশ্যই ব্র্যান্ড আগে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়! যাই হোক, আমাকে ব্যাগ দেখান।’
বিক্রেতা এবার স্তূপাকৃত ব্যাগের সামনে দাঁড় করাবে। হাত পাশে ছড়িয়ে বলবে, ‘দেখুন, কোনটা আপনার পছন্দ। আমাদের প্রায় আড়াইশো রকমের ভ্যারাইটি আছে। সাইজ আছে দেড় হাজার রকমের।’
ভুরু কুঁচকে বলতে হবে, ‘না না, এ সব নয়। এ সব আমি জানি। বেড়ানোর ব্যাগ, অফিসের ব্যাগ… এ সব আমার জানা আছে…আপনার কাছে পালানোর কোনও ব্যাগ আছে?’
‘সরি, আমি ঠিক শুনতে পেলাম না। কী বলছেন স্যার?’
এবার শ্রবণকে একটু গলা তুলে বলতে হবে, ‘বলছি, আপনাদের কোম্পানি বাড়ি থেকে পালানোর সময় নেওয়া যায় এমন কোনও ব্যাগ কি বের করেছে?’
বিক্রেতা ঢোঁক গিলবে। বলবে, ‘আমি ঠিক বুঝতে পারছি না স্যার। পালানোর ব্যাগ! সে আবার কী জিনিস?’
এবার একটু রাগ দেখালে কেমন হয়?
‘কী জিনিস মানে! পালানো কাকে বলে জানেন না? পৃথিবীর বড় বড় মানুষ ঘরসংসার, রাজ্যপাট ছেড়ে পালিয়েছিলেন। গৌতম বুদ্ধর নাম শোনেননি? সম্রাট অশোক? হিউয়েন সাঙ? কেউ চুপিচুপি পালিয়েছেন, কেউ ঘোষণা করে বাড়ি ছেড়েছেন। কেউ ধর্মপ্রচারে, কেউ বিশ্বভ্রমণে। আসলে সবই পালানো। পৃথিবীতে রোজ কত মানুষ পালায়, তার হিসেব রাখেন? আমি রাখি। প্রতি সেকেন্ডে আড়াইজন। আপনি বলছেন কিনা, পালানো কী জিনিস!’
বিক্রেতা রুখে দাঁড়াতে পারে। বলবে, ‘সরি। এ ধরনের কিছু আমাদের স্টকে নেই। আপনি অন্য কোথাও খোঁজ করুন।’
এই রুখে দাঁড়ানো দেখে ঘাবড়ালে চলবে না। গলা চড়িয়ে বলতে হবে, ‘নেই বললেই হবে? জাপানের নিকিতানি, আমেরিকার ভিলাইস, হনলুলুর টিকিমাটা কোম্পানি নিয়ে এত দরদ দেখালেন আর কাজের সময় লবডঙ্কা? এই তো এতক্ষণ ব্র্যান্ডের জয়গান করছিলেন। করছিলেন কিনা? বলছিলেন, তারা নাকি সব প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়। ঘোড়ার ডিম দেয়। ওদের বলুন, পালানোর জন্য আলাদা ব্যাগ চাই।’
চেঁচামেচির কারণে শোরুমের আরও পাঁচজন কর্মী এগিয়ে আসতে পারে। পারে কেন, অবশ্যই আসবে। হয়তো ম্যানেজারও আসবে। সিকিউরিটিকে নিয়ে আসবে। এতেও ঘাবড়ালে চলবে না। তর্ক চালিয়ে যেতে হবে। এতে দু ধরনের এফেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা। এক, ওরা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মাথা ঠাণ্ডা করাবে। দুই, ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে। দ্বিতীয়টাই ঘটবে। বোঝানো অনেক কঠিন কাজ। ঘাড়ধাক্কা অনেক সহজ ব্যাপার।
শ্রবণ এই সবের মধ্যে যাবে না। সে ঝামেলার মধ্যে নেই। সে ঠিক করল, রোজ যে ব্যাগটা কাঁধে ফেলে বেরিয়ে পড়ে, সেটাই নেবে। সেখানে ল্যাপটপের পাশে কটা জামাকাপড় অনায়াসে ঢুকিয়ে নেওয়া যাবে। আর কী লাগবে? একটা ল্যাপটপ এবং কটা জামাকাপড় জীবন কাটিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পকেটে পয়সা থাকলে বাকি সব বাইরে পাওয়া যায়। সবথেকে বড় কথা, রোজকার ব্যাগ সঙ্গে নিলে বাড়ির কেউ সন্দেহ করবে না।
পঁচিশ বছরের শ্রবণ বাড়ি থেকে কেন পালাচ্ছে? বাবা-মা, বড়দা, বউদির সংসারে তার সমস্যা কী?
কোনও সমস্যা নেই। এমন নয় যে, সে কারও ঘাড়ে বসে খায়। নামকরা এক বিজ্ঞাপন সংস্থার কলকাতা শাখায় কাজ করে। তার কাজ কনসেপ্ট ডেস্কে। এই ডেস্কে বিজ্ঞাপনের প্রাথমিক পরিকল্পনা তৈরি হয়। পত্রপত্রিকায়, টিভিতে, সিনেমা হলে, হোর্ডিংয়ে যেসব বিজ্ঞাপন দেখা যায়, তার প্রথম কাজ কনসেপ্ট ডেস্কেই তৈরি হয়। ছবি আঁকা, ফটো তোলা, কপি লেখা হয়। সেই ভাবনা দেখে বিজ্ঞাপন চূড়ান্ত হয়। শ্রবণ কপি লেখে। কখনও কখনও বিজ্ঞাপন কেমন হবে, সে পরিকল্পনাও দেয়। তবে তার চাকরি পাকা নয়। ফ্রিলান্স। আজকের দিনে বেশিরভাগ চাকরিই পাকা হয় না। টাকাপয়সা যদিও খারাপ পায় না শ্রবণ। ভালোই পায়। এদিক-সেদিক আরও কিছু কাজ করে। মাস গেলে বাড়িতে টাকাও দিতে চেয়েছিল সে। বাবা, দাদা, বউদি কেউই রাজি হয়নি। উলটে ধমক-ধামক দিয়েছে এবং ঠাট্টা করেছে। আসলে তারা শ্রবণকে এখনও সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে ধরে না। তার বুদ্ধি সম্পর্কেও ধারণা ভালো নয়। তার কাজকর্মকে এ বাড়ির কেউ মোটে গুরুত্ব দেয় না।
‘বাবা, এ মাস থেকে আমি কিছু কিছু টাকা দিতে চাই।’
শ্রবণের বাবা দীপ্ততোষবাবু অবাক হয়ে বললেন, ‘কাকে টাকা দিতে চাও?’
শ্রবণ বলল, ‘বাড়িতে।’
দীপ্ততোষবাবু আরও অবাক হয়ে বললেন, ‘কেন? বাড়িটা কি ব্যাঙ্ক, যে এখানে তুমি মাসে মাসে টাকা জমা করবে?’
শ্রবণ বলে, ‘তা কেন? আমি খাওয়াদাওয়ার খরচ দিতে পারি না?’
দীপ্ততোষবাবু একটু চুপ করে থেকে একটু ভাবলেন। তারপর বললেন, ‘অবশ্যই পারো। হোটেলে পারো। তোমার কি ধারণা বাড়িটা হোটেল? তুমি সুটকেস নিয়ে সেখানে এসে উঠেছ?’
শ্রবণ বলল, ‘হোটেল কেন হবে? বাড়িতে কি টাকাপয়সা দিতে নেই? সংসারে খরচ শেয়ার করা যায় না? তুমি দাও, দাদা দেয়। এবার থেকে আমিও দেব। আমিও তো এ বাড়ির একজন মেম্বার। খাইদাই, জল, ইলেকট্রিক খরচ করি।’
দীপ্ততোষবাবু বললেন, ‘ও এই কথা। বেশ ভালো। সংসারের খরচ যদি তুমিও খানিকটা দিতে চাও দেবে। চাকরিবাকরি করে উপার্জন করো, তখন দেখা যাবে। এখন বিরক্ত করছ কেন?’
শ্রবণ উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল, ‘আমি তো এখনই উপার্জন করি বাবা।’
দীপ্ততোষবাবু ছোট ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে শান্তভাবে বলেন, ‘উপার্জন করো? কীভাবে করো?’
‘বাঃ, তুমি জানো না? আমি যে…আমি যে বিজ্ঞাপনের ছবি আঁকি, কনসেস্ট বানাই, কপি লিখি…তারপর ধরো…কিছু কিছু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করি…ভালোই তো টাকাপয়সা পাই।’
দীপ্ততোষবাবু হাত তুলে বললেন, ‘চুপ করো। এসব যে কোনও চাকরি নয় এবং এগুলো যে কোনও উপার্জন নয় তুমি ভালো করেই জানো শ্রবণ।’
শ্রবণ অবাক হয়ে বলে, ‘তাহলে এগুলো কী!’
‘এগুলো…এগুলো মূলত ইয়ার্কি।’
শ্রবণ এই কথায় আকাশ থেকে পড়ে।
‘বাবা, এ তুমি কী বলছ। তুমি জানো আজকাল কত ছেলেমেয়ে এই ধরনের কাজ করে? এইসব কাজই তো এখন ইনথিঙ্ক। ইনোভেটিভ কাজ সব। এখন কি আর আদ্যিকালের মতো দশটা-পাঁচটার অফিস বলে কিছু আছে? বগলে ছাতা আর টিফিন বাক্স নিয়ে ছুটতে হবে? এখনকার জেনারেশন ধ্যাড়ধ্যাড়ে চাকরি খোঁজে না, নিজের পছন্দমতো কাজ খোঁজে। যাদের একটু বুদ্ধিসুদ্ধি আছে, কল্পনাশক্তি আছে, ছবি আঁকতে পারে, ফিল্ম তুলতে পারে, গাইতে পারে, কম্পিউটার নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে, তারা কোথাও বাঁধাধরা কাজ করে না। আর তুমি বলছ এগুলো কাজ নয়, ইয়ার্কি!’
দীপ্ততোষবাবু ঠাণ্ডা অথচ কঠিন গলায় বলেন, ‘তোমার লেকচার শেষ হয়েছে শ্রবণ?’
শ্রবণ ফোঁস ফোঁস করে বলে, ‘হয়েছে।’
‘তাহলে মন দিয়ে যা বলছি শোনো। আবার বলছি, এসব কোনও কাজ নয়, এসব হল ইয়ার্কি। ইয়ার্কি করে কিছু টাকাপয়সা রোজগার করা যেতে পারে কিন্তু তাকে উপার্জন বলা হয় না। তাকে বলা হয় কুড়িয়ে-বাড়িয়ে চলা। আমার সংসারে এখনও কুড়িয়ে-বাড়িয়ে চলা টাকার প্রয়োজন নেই। যখন প্রয়োজন হবে, অবশ্যই বলব। তুমি তখন দিও। এখন বরং মন দিয়ে ভদ্রলোকের মতো কোনও চাকরি-বাকরির চেষ্টা করো। তোমার দাদার মতো ব্যাঙ্কের অফিসার হতে তুমি পারবে না, সে যোগ্যতা তোমার নেই, অন্তত সরকারি অফিসে কেরানি হওয়ার চেষ্টা করো। তখন মাস গেলে উপার্জনের টাকা নিয়ে আসবে। আমি অবশ্যই নেব।’
অপমানিত শ্রবণ এর পর তার দাদা-বউদির কাছে যায়। দাদা বলে, ‘এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল শ্রবণ। কম্পিটিটিভ পরীক্ষার প্রিপারেশনের জন্য কোনও একটা কোচিং-ফোচিংয়ে ঢুকে যা। ক’মাস পরেই রেলে আর পোস্টাপিসে লোক নেবে শুনছি। ভালো করে পরীক্ষাটা দে।’
বউদি হাসতে হাসতে বলে, ‘ও রেলে কী কাজ করবে? রেল চালাবে?’
দাদা বলে, ‘দরকার হলে তাই চালাবে? ক্রিম দিয়ে দাঁত মেজে ফর্সা হোন লেখার থেকে তো বেটার।’
বউদি চোখ বড় বড় করে বলে, ‘হ্যাঁগো শ্রবণ, সত্যি সত্যি তোমাদের ওই ক্রিম দিয়ে দাঁত মাজলে ফর্সা হওয়া যায়?’
শ্রবণ রাগ দেখিয়ে বলে, ‘আমি জানি না বউদি। আমি ওই ক্রিমের বিজ্ঞাপনের কপি তো লিখিনি। যে লিখেছে সে বলতে পারবে। দাদা, তাহলে সংসারে আমার টাকার শেয়ার তোরা নিবি না?’
দাদা বলে, ‘কে বলেছে নেব না? অবশ্যই নেব। বড় হও, মানুষ হও, তবে নেব। এত হড়বড় করছিস কেন? টাকা দিস না বলে কি তোর কোনও সমস্যা হচ্ছে; খাওয়াদাওয়া কম দেওয়া হচ্ছে?’
মানুষ হও। পঁচিশ বছর শেষ হতে চলল, এখনও কি সে মানুষ হতে পারেনি! এরা তাকে মানুষ বলেই মনে করে না! তবে সে কী? এলেবেলে? এদের সঙ্গে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। শ্রবণ চুপ করে গেছে।
তারপরেও শ্রবণ বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে কেন?
পালাচ্ছে বাধ্য হয়ে। বারিধারা তাকে বলেছে। বলেছে, ভালোবাসার জন্য পৃথিবীতে মেয়েরাই শুধু বাড়ি থেকে পালায়। পালিয়ে বিয়ে করে। তা কেন হবে? ছেলেদেরও পালাতে হবে। এই কথায় শ্রবণ ঘাবড়ে যায়। বলে, ‘আমাদের তো এখন বিয়ের কোনও ব্যাপার নেই বারি! খামোকা পালাতে যাব কেন?’
বারিধারা গম্ভীরভাবে উত্তর দিয়েছে, ‘টেস্ট করে দেখছি। এরকম সিচ্যুয়েশন হলে কী হবে, সেটা আগে থেকে দেখে রাখতে চাইছি। দেখছি, তুমি কি তখন পারবে?’
শ্রবণ বলে, ‘পারবার প্রশ্ন উঠছে কেন? তোমার মতো চমৎকার একটা মেয়েকে বিয়ে করলে আমার বাড়ি থেকে আপত্তি করবে কেন?’
বারিধারা সহজভাবে বলে, ‘আমার বাড়ি থেকে করবে। তোমার মতো বোকা ও বেকার ছেলের সঙ্গে আমার বাবা কিছুতেই বিয়ে দেবে না। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর। পালানো ছাড়া আমার কোনও উপায় থাকবে না।’
শ্রবণ জোর করে হেসে বলে, ‘যখন হবে তখন দেখা যাবে ধারা। এখন চাপ নিও না।’
বারিধারা মিটিমিটি হেসে বলে, ‘কী দেখা যাবে? তখন আমি বাড়ি থেকে পালাব, তাই তো? যেমন সব মেয়েরা করে? সেটি হচ্ছে না চাঁদু, আগে তোমাকে পালিয়ে দেখাতে হবে। এবং সেটা এখনই দেখাতে হবে। আমি জানতে চাই ভালোবাসার জন্য ছেলেরাও বাড়ি থেকে পালাতে পারে কিনা। যদি দেখাতে পারো ভালো, নইলে গুডবাই।’
শ্রবণ এই মেয়েকে হাড়ে হাড়ে চেনে। এ হল ইয়েস-নো মেয়ে। একবার ইয়েস তো ইয়েস, একবার নো তো নো। নড়চড় নেই। বলতে লজ্জা করে, কিন্তু ঘটনা সত্যি যে, সেই এই মেয়েটিকে খুবই ভয় পায়। সকালে হুমকি দিয়ে ফোন বন্ধ করে দিয়েছে।
তাই কোনওরকম কারণ ছাড়াই শ্রবণ আজ বাড়ি থেকে পালাচ্ছে।