» » প্রথম কিস্তি

বর্ণাকার

প্রচেত গুপ্ত

একটু পরে রোদ উঠবে

দুই

‘কেন পারবে না? কেন?’

‘তুমি কি পাগল হয়ে গেলে বারি?’

‘হ্যাঁ পাগল হয়ে গিয়েছি। তাতে তোমার সমস্যা কোথায়? তুমি তো পাগলের ডাক্তার নও যে ছুটে এসে আমার ট্রিটমেন্ট করবে। তুমি কিছুই নও। তুমি একজন বেকার।’

‘আমি কিছু নই! আমি বেকার! এটা কী বলছ বারি? আমি একজন আর্টিস্ট। ফটোগ্রাফার এবং কপিরাইটার। অ্যাডভার্টাইজিং অফিসে কাজ করি। আজও বেলা তিনটের সময় অফিসে যাব। তিনটে নয়, আড়াইটে। আমি কেন বেকার হব?’

‘আর্টিস্ট নয় শ্রবণ, ফ্রিলান্স আর্টিস্ট। বিজ্ঞাপন অফিসে ফ্রিলান্স আর্টিস্ট বেকারের থেকেও খারাপ। আমি যা জিগ্যেস করছি, তুমি সে কথার উত্তর দাও। কী কারণে পারবে না সেটা যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলো। তুমি তো জানো আমি যুক্তি পছন্দ করি শ্রবণ।’

‘কী উত্তর দেব ধারা? এটা কি উত্তর দেওয়ার মতো কথা হল?’

‘কথা হল না! তাহলে কোনটা কথা হল? তোমার কথাটাই শুধু কথা হল? আমার কথাটা কথা নয়?’

‘আহা, রাগ করছ কেন? বারি আমি তা বলতে চাইনি। ইনফ্যাকট আমি তো কোনও কথাই বলিনি।’

‘তুমি কী বলতে চেয়েছ আমার জানার কোনও ইচ্ছে নেই শ্রবণ। প্রয়োজনও নেই। তুমি বলো পারবে কি পারবে না। ইয়েস অর নো।’

‘ধারা প্লিজ, প্লিজ বারি…আমার কথাটা মন দিয়ে শোনো। লক্ষ্মী মেয়ে। ধারা, কথাটা হল…।’

‘একটা নাম বলো শ্রবণ। হয় বারি বলো, নয় ধারা বলো। একবার বারি, একবার ধারা অসহ্য লাগে। মাথা ঝিমঝিম করে। আমার পুরো নাম বলতে তোমার অসুবিধে হচ্ছে? অসুবিধে কেন হবে? বারিধারা উচ্চারণে তো কোনও ঝামেলা নেই। তোমাকে অনেকবার বলেছি, ছেলেদের আদিখ্যেতা আমি পছন্দ করি না। প্রেমিকার নাম ভেঙে ভেঙে বলবার কী হয়েছে? আমি কি তোমাকে শ বা ব বলে ডাকছি? বলো ডাকছি? একটা মেয়ে হয়ে আমি আহ্লাদিপনা করছি না, তুমি কেন করছ? বেশি প্রেম দেখাচ্ছ?’

‘ওহ এত চটছ কেন? আচ্ছা, বাবা ভুল হয়ে গেছে। এবার থেকে পুরো নাম ধরে ডাকব। বারিধারা, বারিধারা, বারিধারা। হয়েছে? তুমি মাথা ঠান্ডা করো।’

‘আমার মাথা ঠান্ডা না হলে তোমার কী সমস্যা? তুমি তো এখন আমাদের বাড়িতে এসে আমার মাথায় বরফ দেবে না। তাহলে? আগে আমার কথার জবাব দাও। বলো কেন পারবে না? সমস্যা কোথায়?’

‘উফ বারি, সরি বারিধারা তুমি একবার ভেবে বলো। এটা কি সম্ভব?’

‘অবশ্যই সম্ভব।’

‘বলা নেই কওয়া নেই, কীভাবে আমি…বারি, তুমি একবার ঘটনাটা চিন্তা করে দেখো ধারা…সরি বারিধারা…।’

‘ঠিক আছে। বুঝেছি আমার জন্য তুমি সামান্য কাজটা পারবে না।’

‘এটা সামান্য কাজ! এটা সামান্য হল?’

‘সামান্য অসামান্য কিছু জানার দরকার নেই। আমার বোঝা হয়ে গেছে।’

‘ধারা, তুমি আমাকে ভুল বুঝছ।’

‘তোমাকে ভুল বুঝলেও তোমার মুরোদ আমার বোঝা হয়ে গেছে শ্রবণ। তোমার হল বিড়ালের মুরোদ। বিড়াল যেমন ম্যাও ম্যাও করে তুমিও তেমনি একবার বারি, একবার ধারা, একবার বারি, একবার ধারা করতে পারো। এতদিন জানতাম আমি একজন মানুষ প্রেমিকের সঙ্গে প্রেম করছি। এখন দেখছি ভুল জানতাম। আমি একজন বিড়াল প্রেমিকের সঙ্গে প্রেম করি। আমি ফোন রাখছি। তুমি যদি আমাকে আর কখনও, কোনওভাবে বিরক্ত করতে চেষ্টা করো তোমার বিপদ আছে। তুমি জানো আমি কমলকান্তি সেনের নাতনি, বিমলকান্তি সেনের মেয়ে। কেবলা বড় মেয়ে নয়, সাংঘাতিক ছোট মেয়ে। আমি কাউকে মিথ্যে হুমকি দিই না।’

‘বারি শোনো…ধারা, ফোন কেটো না প্লিজ….ধারা…বারি…।’

বারিধারা মোবাইল সুইচ অফ করে খাটের ওপর ধপাস করে শুয়ে পড়ল। আজ ইউনিভার্সিটি না গেলে কেমন হয়?

কী কী কাজ আছে? মনে মনে একটা তালিকা তৈরি করে ফেলল বারিধারা।

১) দুটো ক্লাস আছে। তার মধ্যে একটা মধুজা রায়ের ক্লাস।

২) লাইব্রেরি থেকে বই তোলবার ব্যাপার আছে।

৩) তিথির হয়ে একটা ছেলেকে চড় মারবার আছে।

তিনটে কাজই গোলমেলে। তবে তুলনামূলকভাবে তিন নম্বরটায় ঝামেলা কম। তিথির ওই ছেলেটার কী যেন নাম? মনে পড়ছে না। থাক মনে পড়তে হবে না। চড় মারবার সঙ্গে নামের কোনও সম্পর্ক নেই। এমন নয় যে কারও নাম রামের বদলে শ্যাম হলে চড়ের কোনও হেরফের হয়। সুতরাং নাম জেনে লাভ কী? তিথির কাছ থেকে চড় মারবার এই দায়িত্ব সে নিয়েছে পরশু দিন। একরকম জোর করেই নিয়েছে। তিথি যখন কাঁদো কাঁদো মুখে ঘটনাটা বলে, বারিধারা অবাক হয়।

‘তুই ঠাসিয়ে একটা চড় মারলি না কেন?’

ত্রিধি আরও কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, ‘আমি ওসব পারি না।’

বারিধারা চোখ পাকিয়ে বলল, ‘তাহলে কী পারিস ফিচফিচ করে কাঁদতে?’

তিথি বলল, ‘সেটা আমার মতো মেয়ের জন্য সহজ। দরকার হলে কাঁদব, কিন্তু ওসব পারব না। আমি তো আর তোদের মতো স্মার্ট নই। কলকাতায় থাকি না। মফসসল থেকে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে কলকাতায় পড়তে আসি।’

বারিধারা তিথির চিবুকে হাত দিয়ে ভেংচি কেটে বলল, ‘কোথায় পড়তে আসি? স্কুলে? ওসব ন্যাকা কথা একদম বলবি না।’

তিথি বারিধারার হাত ধরে বলল, ‘আমি কোনও রকম সিন ক্রিয়েট করতে পারি না। পারি না বলেই চুপ করে চলে এসেছি।’

বারিধারা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘এর মধ্যে সিনের কী আছে। ঠাসিয়ে একটা চড় মারবি, ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ চা খাবি, তারপর ক্লাসে চলে যাবি। ফিনিশ।’

তিথি মুখ নামিয়ে বলল, ‘আমি জানি, সেটাই উচিত ছিল। কাল সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।’

বারিধারা একটু ভাবল। তারপর তিথির পিঠে চাপড় মেরে বলল, ‘ঠিক আছে তোকে ভাবতে হবে না। তোদের মতো আতুপুতুদের দ্বারা চড়টড় হবে না। চোখের জলই হবে। তুই আমাকে সুপারি দে।’

তিথি অবাক হয়ে বলল, ‘সুপারি দেব মানে! সুপারি আবার কী?’

বারিধারা চোখ কপালে তুলে বলল, ‘সে কী রে! সুপারি কী জানিস না? ইউনিভার্সিটিতে পড়িস সুপারি জানিস না! হিন্দি মুভিতে তো সুপারির ছড়াছড়ি। যাক, আমাকে ভাড়া কর। যেমন সুপারি কিলার হয়, আমি তেমন হব সুপারি চড়ার। তোর থেকে সুপারি নিয়ে ওই ছেলেকে চড় মেরে আসব।’

তিথি চমকে উঠে বলল, ‘থাক, দরকার নেই। একটা হুজ্জুতি হবে।’

‘অবশ্যই দরকার আছে। তোর ওই ছেলেকে চড় না মারলে, ও এরকম ঘটনা আরও ঘটাবে। এরা চড় খেলে চুপ করে যায়। হুজ্জুতির ভয় পাস না।’

তিথি নার্ভাস গলায় বলল, ‘বারিধারা, ইউনিভার্সিটিতে জানাজানি হয়ে যাবে।’

বারিধারা চোখ কটমট করে বলল, ‘বোকার মতো কথা বলিস না। জানাজানি হলে হবে। আচ্ছা, ঠিক আছে আড়ালে ডেকে মারব। আজ তো আর হল না, কালও হবে না। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাব। শ্রবণের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। পরশু মারব। তুই মাথা ঘামাস না।’

সেই ‘পরশু’ই হল আজ। চড় মারবার দিন। দিনটা কি পিছোনো যায়? তালিকার দু নম্বরেও সমস্যা আছে। বইয়ের ব্যাপারটাও ঝামেলায় ফেলবে। না তোলা হলে অন্য কাউকে ইস্যু করে ফেলবে। তার মধ্যে একটা লেখাপড়ার বই, অন্যটা গল্প-উপন্যাসের। লেখাপড়ার বইটা হল দার্শনিক নিৎসজের ‘দাস স্পেক জারাথ্রুসত্রা’ আর উপন্যাস হল জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামির ‘নরউইগিয়ান উডস’। মুরাকামির এই উপন্যাসের বিরাট চাহিদা। লাইব্রেরিতে পড়তে পারছে না। বইটা যখন আনবার জন্য বলা হল, লাইব্রেরিয়ান ‘অসিতদা’ অবাক হয়েছিল।

‘এটা কী!’

‘বই।’

‘বই তো বুঝেছি। লাইব্রেরিতে আনতে বলছ যখন, তখন তো আর মোবাইল ফোন বা হোমিওপ্যাথি ওষুধ হবে না, বই-ই হবে। কীসের বই সেটা, জানতে পারি? ফিলসফি? হিস্ট্রি?’

‘না, গল্পের বই। নভেল।’

‘অসিতদা’ বলল, ‘এই বইয়ের লেখক কে?’

‘কী বলছ অসিতদা। মুরাকামি কে! পৃথিবীর জীবিত পপুলার লেখকদের মধ্যে অন্যতম। এখন নাম্বার ওয়ানও বলা যায়। অ্যালিস মনরো, মারিও ভার্গাস লোসা, মোদিয়ানা, মো-ইয়াং-রাও-এর মতো লেখকরাও মুরাকামির জনপ্রিয়তার ধারেকাছে আসে না। ‘নরউইগিয়ান উডস’ বইটা জাপানে সবার বাড়িতে আছে। এই বইয়ের নামটা বিটলসের বিখ্যাত গানের লাইন। বাংলায় অনেক লেখক যেমন রবীন্দ্রনাথের গানের লাইন দিয়ে গল্প উপন্যাসের নামকরণ করে, সেরকম। বিটলস কী জানো তো? গানের দল।’

সেই বই লাইব্রেরিতে ঢোকবার পর কাড়াকাড়ি চলছে। বইটার এমন কিছু দাম নয়। ইচ্ছে করলে কিনে নেওয়া যায়। ডাউনলোড করে ই-বুক হিসেবেও পড়া যায়। কিন্তু লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে বলে সবার ওদিকেই নজর। তার ওপর বইটা কদিনের জন্য দখলে রাখাও একটা তৃপ্তি। বেশ ব্যাগে ব্যাগে ঘুরবে। ভালো বই ব্যাগে থাকলে মন ভালো থাকে।

আজ লাইব্রেরিতে নিৎসজে, মুরাকামি দুজনেরই থাকবার কথা। না গেলে মিস। আচ্ছা, তাও না হয় হল। ক’দিন পরে আবার বই আসবে। কিন্তু মধুজা রায়ের ক্লাস?

মধুজা ম্যাডাম দুদিন ইউনিভার্সিটিতে আসেন। বাকি দিনগুলো তিনি খুবই ব্যস্ত থাকেন। সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সিলেবাস কমিটির মিটিং, সিলেকশন কমিটির ইন্টারভিউ, গবেষণা কমিটির স্ক্রুটিনি, ট্রান্সফার কমিটির ঝাড়াইবাছাই—সবে থাকতে হয়। ইউনিভার্সিটিতে পড়াতে আসবেন কখন? সময় কই? এর সঙ্গে আবার নিয়মিত শিক্ষাবিদদের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে প্রণাম করা এবং আশীর্বাদ নেওয়ার ব্যাপার আছে। সবার বাড়িতে নয়, ‘ফোন ধরা শিক্ষাবিদ’দের বাড়ি। ‘ফোন ধরা শিক্ষাবিদ’ মানে যাদের ফোন নেতা, মন্ত্রী, আমলা, উপাচার্যরা ধরে। চারটে অনুরোধ করলে তারা দুটো শোনে। তিনটে কমিটির কথা বললে একটায় নাম ঢুকিয়ে দেয়। কমিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। নামের পাশে যত কমিটি, তত ব্যস্ততা, তত দাপট। মধুজা ম্যাডাম এত দাপট এবং ব্যস্ততার মধ্যে যে দুদিন সময় করে ইউনিভার্সিটিতে আসেন, তাই অনেক। দু দিনের মধ্যে একদিন টিচার্স রুমে বসে বিশ্রাম নেন। নিতেই হবে। এত কমিটিতে থাকলে বিশ্রাম লাগে। ক্লাস করবার সময় পান মোটে একদিন। এই ক্লাস মিস করলে মুশকিল। তবু আজ যেতে ইচ্ছে করছে না।

মণিকুন্তলা ঘরে ঢুকলেন।

মণিকুন্তলা তিনতলায় এলেও ছোট মেয়ের ঘরে ঢুকতে চান না। তার কারণ, এই মেয়ের কাছে বেশিক্ষণ থাকলেই তার প্রেসার বেড়ে যায়। তার পরেও কেন জানি বার বার আসেন।

তার মানে এই নয়, তিনি মেয়েকে ভালোবাসেন না। খুবই ভালোবাসেন। তার পরেও এই অবস্থা। আসলে বারিধারার সঙ্গে একটুক্ষণ কথা বলবার পরই কোনও না-কোনও ইস্যুতে তার ঝগড়া লেগে যায়। মেয়ের চ্যাটাং চ্যাটাং কথা তিনি সহ্য করতে পারেন না। তার ওপর নানা ধরনের দুষ্টুবুদ্ধি। লেখাপড়ায় বাড়াবাড়ি ধরনের ভালো হলেও এই মেয়ে তার বড় মেয়ের মতো শান্তশিষ্ট নয়, ভদ্র-সভ্যও নয়। এই মেয়ের সবথেকে খারাপ অভ্যেস হল, যা মনে হয় তাই মুখ ফুটে বলে ফেলবে। যা পছন্দ সেটাও বলবে, আবার যা পছন্দ নয় সেটাও বলবে। সভ্য সমাজে এ জিনিস চলে? চলে না। সভ্য সমাজের নিয়মই হল, অপছন্দের কথা সব সময় বলতে নেই। ধারা এই সামান্য সহবতটুকু জানে না। জানে না বললে ভুল হবে, মানে না। জীবনে এই মেয়ে তো পদে পদে হোঁচট খাবে। শ্বশুরবাড়িতে গেলে দু দিন পরেই ঘাড় ধাক্কা। কাজের জায়গাতেও টিকতে পারবে না। অনেক বোঝানো হয়েছে, বকাঝকা হয়েছে। স্থায়ী লাভ হয়নি। ক’দিন সাবধানে থাকে, তারপর আবার যে-কে সেই। উলটে অভিনয় করে আরও গা জ্বালিয়ে দেয়।

‘কী মুশকিল, যা মনে এসেছে তা বলব না! মা তুমি এটা আমাকে কী শিক্ষা দিচ্ছ?’

মণিকুন্তলাদেবী রাগী গলায় বলেন, ‘একটি চড় লাগাব। উনি যেন কত শিক্ষা নিচ্ছেন। ছি ছি, দিদির শাশুড়িকে কেউ ওভাবে বলে? মহিলা নাহয় একটু বেশিই সাজগোজ করে, তা বলে…ছি ছি।’

বারিধারা আকাশ থেকে পড়ল। বলল ‘কী বলেছি! আমি তো গাড়িতে ওঠবার সময় ওকে ভক্তিভরে প্রণাম করতে গেলাম। উনি বললেন, থাক থাক প্রণাম করতে হবে না। আজকালকার ছেলেমেয়েরা সব গোল্লায় গেছে। বড়দের মোটে ভক্তিশ্রদ্ধা করে না। এখন প্রণাম করছ, আমি চলে গেলেই বলবে, বুড়িটার জন্য কোমরে হ্যাঁচকা টান লেগে গেল। আমি তখন বললাম, ছি ছি মাসিমা, আপনাকে বুড়ি বলব কেন! আপনি মোটেই বুড়ি নন। আপনাকে দেখতে বুড়ি বুড়ি লাগে। তা বলে কি আপনি সত্যিই বুড়ি? অনেক সময় বাড়াবাড়ি ধরনের সাজগোজ করলে বয়স বেশি লাগে। আপনি কি বাড়াবাড়ি ধরনের সাজগোজ করেছেন? এই কথা শুনে ওর মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। এর মধ্যে আমি খারাপটা কী বলেছি মা? কেন তুমি আমাকে মিছিমিছি বকছ? আচ্ছা ঠিক আছে, ফোন করে ওনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মাসিমা আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি ঠিকই বলেছেন, এখনকার ছেলেমেয়েরা সব গোল্লায় গেছে। আমিও গোল্লায় গেছি। আমাকে আপনি ক্ষমা করুন।’

মা হয়ে এই মেয়েকে বেশিক্ষণ সহ্য করা যায়? করা উচিত?

মণিকুন্তলা ঘরে ঢুকে বললেন, ‘কীরে ফোন বন্ধ করে রেখেছিস কেন? দিদি পাচ্ছে না।’

বারিধারা উঠে বসল। দুটো হাত বাড়িয়ে বলল, ‘মা চট করে একটু কাছে এসে তো।’

মণিকুন্তলা থমকে গেলেন। কাছে ডাকছে! নিশ্চয় কোনও দুষ্টু বুদ্ধি আছে। বললেন, ‘কী হয়েছে?’

বারিধারা হেসে বলল, ‘একটা কথা বলব।’

মণিকুন্তলাদেবী বললেন, ‘বল।’

‘কানে কানে বলব।’

মণিকুন্তলাদেবী সতর্ক হয়ে বললেন, ‘এখান থেকে বল।’

বারিধারা বেচারা মুখ করে বলল, ‘আরে, এ কথা কানে কানে ছাড়া বলা যায় না।’

মণিকুন্তলাদেবী হাসি গোপন করে বললেন, ‘তাহলে বলতে হবে না।’

বারিধারা ঝট করে খাট থেকে নেমে লাফ দিয়ে গিয়ে মাকে জাপটে ধরল। চিৎকার করে বলল, ‘আই লাভ ইউ মামি। আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে চুমু খেতে চাই। উমমম…।’

মণিকুন্তলাদেবী বললেন, ‘ছাড়, ছাড় বলছি। এই জন্য তোর ঘরে আসতে চাই না। খালি অসভ্যতা।’

মণিকুন্তলা খুব ভালো করেই জানেন, এই জন্যই তিনি মেয়ের ঘরে বার বার আসতে চান।