☼ প্রচেত গুপ্ত ☼
একটু পরে রোদ উঠবে
দশ
‘জ্যাতিষ্কদা, লোকটা কে?’
‘ইনি একজন বংশীবাদক বারিধারা। বাঁশি বাজান।’
‘বংশীবাদক তো বুঝতেই পারছি, কিন্তু আপনি কোথা থেকে একে কালেক্ট করলেন?’
জ্যোতিষ্ক চোখমুখ উজ্জ্বল করে বলল, ‘রাস্তা থেকে। পৃথিবীর বেশিরভাগ মূল্যবান জিনিসই রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া যায়। যদি চাও, আমি উদাহরণ দিয়ে এই সেটমেন্ট প্রমাণ করতে পারি। করব?’
বারিধারা কৌতুকভরা গলায় বলল, ‘কোনও প্রয়োজন নেই। আমি আপনার কথা প্রমাণ ছাড়াই মেনে নিচ্ছি। কিন্তু আপনি এই বংশীবাদককে কোন রাস্তা থেকে এনেছেন? গ্রামের রাস্তা? গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির পথ?’
জ্যোতিষ্ক গদগদ ভঙ্গিতে বলল, ‘না, ঠিক রাস্তা নয়, জগুবাবুর বাজার। বাজারের পাশে চায়ের দোকান…সেখানে উনি বসেছিলেন।’
বারিধারা গুছিয়ে বসল। ঘটনা মনে হচ্ছে চমকপ্রদ। জামাইবাবু মানুষটাকে বারিধারার খুবই ইন্টারেস্টিং লাগে। সরকারি অফিসে বড় পোস্টে চাকরি করে। সেই চাকরিতে যথেষ্ট যুক্তি-বুদ্ধি এবং হিসেব লাগে। কিন্তু মানুষটা মাঝে মাঝে এমন সব কাণ্ড করে বসে যে, আঁতকে উঠতে হয়। সেই সব ‘কাণ্ড’ যুক্তি-বুদ্ধি বা হিসেবের ধারপাশ দিয়ে যায় না। প্রথমে মনে হয়, লোকটা কি পাগল! নাকি বোকা? গরু-গাধারাও তো আজকাল হিসেব করে চলে। হিসেব করে ঘাস খায়, হিসেব করে ডাকে। হিসেব করে বাঘের চামড়া পরে, তারপর বাঘ সেজে হিসেব করে হালুম-হুলুম করে অন্যকে ভয় দেখায়। চারপাশে গরু-গাধা ভালো, কিন্তু শুধু গরু-গাধা ভালো নয়, বাঁচতে গেলে কিছু মানুষও লাগে। বারিধারার মতে তার জামাইবাবু একজন চমৎকার মানুষ। একটু যা ‘আউট অফ সিলেবাস’। জানার বাইরে। তার দিদি এই মানুষটার জন্য মাঝে মাঝে কঠিন ঝামেলায় পড়ে। ঝামেলা নয়, বলা উচিত যন্ত্রণা। সে তো পড়তে হবেই। আউট অব সিলেবাস মানুষের সঙ্গে ঘর করতে গেলে যন্ত্রণায় পড়তে হবে না? মা-বাবাও জামাইয়ের কীর্তি অনেক সময় নিতে পারে না। বিরক্ত হয়ে যায়। আবার কিছু বলতেও পারে না। কিছু বলতে গেলে বড় মেয়ে রাগারাগি করবে। প্রথমে রাগারাগি, তারপরে কান্নাকাটি। বারিধারার কাছে এটাও মজার। সেরকম কিছু ঘটলে দিদি বাড়িতে চলে আসে। এসে বলে, ‘মা, তুমি আর বাবা নাকি আজ সকালে জামাইকে ফোন করেছিলে?’
মা বলে, ‘অবশ্যই করেছিলাম। চেনে না জানে না একটা লোককে মেয়ের বিয়ের জন্য গাদাখানেক টাকা দিয়ে বসেছে, তার পরেও তাকে ফোন করব না? পরে দেখা গেল, লোকটার কোনও মেয়েই নেই। কত বড় চিটিংবাজ! জ্যোতিষ্কর এই পাগলামি এবার বন্ধ করা দরকার।’
যে মেয়ে গতকাল বরের ওপর রেগে কাঁই হয়েছিল, সে আজ পুরো ডিগবাজি খায়। বরকে ডিফেন্ড করবার চেষ্টা করে। শান্তভাবে বলে, ‘মেয়ে নেই তো কী হয়েছে মা? হয়তো ভাইঝি আছে, ভাগনি আছে। হয়তো তাদের কারও বিয়ের জন্য তোমাদের জামাইয়ের কাছ থেকে টাকা চেয়েছিল। মেয়ের বিয়েতে টাকা লাগে আর ভাইঝি, ভাগনির বিয়েতে লাগে না, এমন তো কোথাও লেখা নেই মা।’
মা অবাক হয়ে বলল, ‘হয়তো! এতগুলো হয়তো মানে কী? হয়তোর ওপর দাঁড়িয়ে জ্যোতিষ্ক একটা লোককে অতগুলো টাকা দিয়ে দিল! ও কি পাগল?’
দিদি শান্তভাবে বলল, ‘অচেনা মানুষ তাই হয়তো বলছি মা। আমার তো তার গুষ্টির খবর জানা নেই। চেনা হলে মেয়ে না ভাইঝি না ভাগনি সিওর বলতে পারতাম।’
দিদির এই উদ্ভট যুক্তিতে মা খুবই অবাক হয়। বারিধারা হেসে ফেলে। বরকে সমর্থন করতে গিয়ে দিদি যা খুশি বলছে!
মা বলল, ‘এটা কোনও কথা হল মেঘ?’
দিদি বলল, ‘কথা হবে না কেন। অবশ্যই হল। তোমাদের কথা কথা আর তোমাদের জামাইয়ের কথা কথা নয়। সে কি কচ্ছপ? বোবা হয়ে জন্মেছে?’
মা কঠিন গলায় বলল, ‘তাহলে তুই কাল আমাকে বললি কেন? বললি কেন, জ্যোতিষ্ক কাকে না কাকে টাকা দিয়েছে… বল বললি কেন?’
‘বাঃ, আমার একটা সমস্যার কথা তোমাদের বলতে পারব না? বিয়ে হয়েছে বলে আমি কি তোমাদের কেউ নই?’
বারিধারা বুঝতে পারে, দিদি এবার সম্পূর্ণ অন্য কথায় চলে গেছে। ঠোঁট ফোলানো ধরনের কথা, কান্নার প্রিপারেশন।
মা নরম গলায় বলল, ‘আমি কি সে কথা বলেছি? কাল রাতে তোর বাবাকে ঘটনাটা বললাম। বললাম, জ্যোতিষ্কর এইসব খ্যাপামি এবার বন্ধ করা উচিত। তোর বাবাও গেল রেগে। বলল, ওই ছেলের মধ্যে সিরিয়াস বোধের খুব অভাব। আমি কাল সকালে কথা বলব। তারপর আজ সকালে ফোন করেছে। তখন আমিও জ্যোতিষ্কর সঙ্গে কথা বলেছি।’
দিদি ধরা গলায় বলল, ‘কথা বলেছি বলছ কেন মা? ধমক দিয়েছি বলো। তোমরা ওকে ধমক দিয়েছ।’
মা ভুরু কুঁচকে মেয়েকে বলল, ‘ধমক দিয়েছি কে বলল? জ্যোতিষ্ক নালিশ করেছে?’
বৃষ্টির আগে মেঘ যেমন গুড়গুড় করে ওঠে, দিদিও নাক টানল। কান্নার পূর্বাভাস। বলল, ‘আমার স্বামী যদি আমাকে কিছু বলে, সেটা নালিশ করা হল? বাবা যে তোমাকে কতকিছু বলে, সেটা কি নালিশ? জ্যোতিষ্ক কি নালিশ করবার মতো ছেলে? তাকে তোমরা এতদিনে এই চিনলে মা? সে আমাকে বলল, তোমার বাবা-মা আমাকে ফোন করেছিল। তাতেই আমি ধরে নিয়েছি।’
মা খেপে যায়। বড়মেয়েকে বলে, ‘অ্যাই তুই ফ্যাচফ্যাচানি বন্ধ কর তো। জ্যোতিষ্ক ছোট বাচ্চা নাকি যে তাকে ধমক দেব? যদিও তাই উচিত ছিল। এরপর থেকে তাই করব। তোর পছন্দ না হলে জ্যোতিষ্কের পাগলামি নিয়ে আর কোনওদিন আমাকে বলতে আসবি না। বর তোর, তোর পাগলামি, বোকামিও তোর। তুই সামলাবি।’
‘আমি কি তোমাদের সামলাতে বলেছি?’
মা এবার জোরে ধমক দেয়।
‘চুপ কর। একদম চুপ কর। যেমন বর তেমন তার বউ… একজন দানছত্র খুলে বসেছে, অন্যজন তাতে হাততালি দিচ্ছে… দুটোতে ভালো জুটেছে…। আমার চোখের সামনে থেকে যা এখন।’
এই ঘটনার অবধারিত ফলাফল হল, দিদি ওপরের ঘরে গিয়ে খানিকক্ষণ ফিচফিচ করে কাঁদবে। তারপর চোখের জল মুছে, গালে হালকা পাউডার দিয়ে গুনগুন করে গান করতে করতে নীচে যাবে। মায়ের কাছে আমের আচার খেতে বসবে। আচার খেতে খেতে দুজনে নীচু গলায় হেসে হেসে গল্প শুরু করবে। এই সময় বারিধারাকে তাদের ধারেকাছে ভিড়তে দেওয়া হবে না। গেলে তাড়া খাবে।
‘এখানে তোর কী চাই?’
‘কী চাই মানে! আমার বাড়িতে আমি যেখানে খুশি যাব।’
‘না, এখন যাবি না। এখন আমি আর মা গল্প করব। তুই তো সারাদিনই মাকে পাস। এই একঘণ্টা আমার। যা ভাগ।’
মা বলবে, ‘দিদি ঠিকই তো বলছে। তুই আর দিদি যখন আড্ডা মারিস, আমাকে ঘরে ঢুকতে দিস? এখান থেকে তুমি এখন যাও বৃষ্টি। যাওয়ার আগে খানিকটা আচার নিয়ে যাও।’
বকুনি, চোখের জল অতি দ্রুত গভীর ভাব-ভালোবাসায় ট্রান্সফার হয়েছে। বারিধারা মজা পায়। সে মুখ ভেংচে বলে, ‘বয়ে গেছে তোমাদের আচার খেতে, বয়ে গেছে তোমাদের সঙ্গে গল্প করতে।’
জ্যোতিষ্কদার বেহিসেবি কাণ্ড, দিদির যন্ত্রণা, বাপেরবাড়িতে দিদির অভিযোগ, জামাইকে বাবা-মায়ের ধমক, দিদির কান্না, মায়ের সঙ্গে আচার ভক্ষণ—সবটাই বারিধারা খুব এনজয় করে। নাটকের মতো। একটার পর একটা সিকোয়েন্স।
এখন যেমন নতুন সিকোয়েন্স শুরু হয়েছে।
মেঘবতী সোফায় চুপ করে বসে আছে। তার মুখ থমথমে, চোখ ছলছল। চোখ ছলছল দুটো কারণে হয়। এক, কান্না হবে, দুই, কান্না হয়ে গেছে। মেঘবতীর বেলায় একই সঙ্গে দুটো কারণ কাজ করছে। সে খানিক আগে কেঁদে উঠল এবং সে যে-কোনও মুহূর্তে আবার কেঁদে ফেলতে পারে। স্বামী জগুবাবুর বাজার থেকে একজন ভিখিরিকে যদি বাড়িতে তুলে নিয়ে আসে, তাহলে অতি বড় কঠিন স্ত্রীও চোখ ছলছল করে বসে থাকবে। মেঘবতী একই সঙ্গে চিন্তিত, ক্রুদ্ধ এবং অপমানিত। স্বামীর মাথাায় যে কিঞ্চিৎ গোলমাল আছে, সেটা বিয়ের পর পরই মেঘবতী বুঝতে পেরেছিল। রাস্তাঘাটে ‘সমস্যায় পড়া’ কাউকে দেখলে এই লোক নিজেকে সামলাতে পারে না। অস্থির হয়ে পড়ে। ‘কিছু একটা’ করতে চায়। এসব ক্ষেত্রে সমস্যা সত্যি কিনা সে বিচারও করে না। গোড়ার দিকে মেঘবতী তার সঙ্গে ঝগড়াও করেছে। একবার রাস্তায় দাঁড়ানো এক বৃদ্ধ ভদ্রলোককে সাহায্য করতে গিয়ে ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনা ছিল এরকম—
‘তুমি কী করে বুঝতে পারছ যে উনি সমস্যায় পড়েছেন?’
জ্যোতিষ্ক শান্তভাবে স্ত্রীকে বলে ‘বোঝাবুঝির কী আছে মেঘ? সমস্যা দেখতে হয়, বুঝতে হয় না। এটাই তো আমাদের দেশের সিস্টেমে সব থেকে বড় অসুখ। সিস্টেম মানুষের সমস্যা দেখতে পায় না, বুঝতে চেষ্টা করে। বুঝতে বুঝতে সময় চলে যায়। সমস্যা বাড়তে থাকে… বাড়তে থাকে… বাড়তেই থাকে। তখন নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হয়। একটা সমস্যা আর একটার সঙ্গে গিঁট পাকিয়ে যায়। সেই গিঁট বেশিরভাগ সময়েই খোলা যায় না। মানুষ বাধ্য হয়ে সমস্যার মধ্যে পড়ে থাকে। সরকারি কাজে এটাই কমন প্র্যাকটিস মেঘ। কোনও সমস্যা হলে আগে ফাইল চালু করো। তারপর মিলিয়ে দেখো, খাতায়-কলমে যাকে সমস্যা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে ফাইলের সমস্যা মিলছে কিনা। যদি মেলে, তখন সিস্টেম ঢুকবে পরবর্তী পর্যায়ে। বুঝতে হবে, এই সমস্যা সমাধানে টাকা পেতে সমস্যা আছে কি না। সমস্যা থাকাটাই স্বাভাবিক। গরিব দেশে টাকার সমস্যা থাকবে না, তো কী থাকবে? তাহলে চালু হবে নতুন সমস্যার ফাইল।’
মেঘবতী তার স্বামীকে থামাতে চায়।
‘তুমি ভাষণ বন্ধ করো। এটা তোমার সরকারি দপ্তর নয়, আমি তোমার দপ্তরের কর্মী নই। আমার বিরক্ত লাগছে।’
জ্যোতিষ্ক থামে না। বলে, ‘যখন শুরু করেছি, তখন শেষ করতে দাও প্লিজ। এটা তোমার জানা উচিত। শুধু তোমার কেন, সবার জানা উচিত।’
মেঘবতী হতাশ গলায় বলে, ‘আচ্ছা বল, আমি কান বন্ধ করে রাখছি।’
জ্যোতিষ্ক বলে, ‘সমস্যা ফাইলে যদি ডাউট দেখা যায়, তাহলে গেল। সমস্যা গিয়ে পড়বে বিশবাঁও জলে। ডিপার্টমেন্টে পাঠাও। ক্ল্যারিফিকেশন চাই। সেখান থেকে আরেক ডিপার্টমেন্ট…সেখান থেকে আরেক ডিপার্টমেন্ট…সেখান থেকে আরেক…মানুষের সমস্যা ফাইলের তলায় চাপা পড়তে থাকে। পড়তেই থাকে। যে বেচারি সমস্যায় পড়েছে, সে একবার এই টেবিল একবার ওই টেবিলে মাথা কুটে মরে। তাকে বলা হয়, আরে মশাই, আপনি যে খেতে পাচ্ছেন না সে তো আপনার চেহারাতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দেখলে তো হবে না, বুঝতে হবে। আপনার পেটে খেতে না পাওয়া আর আমাদের নিয়মে খেতে না পাওয়া এক কিনা বুঝতে হবে না? তবেই আপনার পাওনা টাকা-পয়সা দিতে পারব। চিন্তা করবেন না, মাস ছয়েক আরও কষ্ট করুন। প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে।’
মেঘবতী কড়া গলায় বলে, ‘তুমিও তো এই সিস্টেমে কাজ করো। তুমিও দায়ী।’
জ্যোতিষ্ক হেসে বলে, ‘অবশ্যই দায়ী। দায়ী বলেই তো ব্যক্তিগতভাবে প্রায়শ্চিত্ত করে বেড়াই মেঘ। সিস্টেম ভাঙি। ফাইল ছুড়ে ফেলে দিই। মিটিং ডাকি না। বোঝার বদলে মানুষের সমস্যা দেখে রিঅ্যাক্ট করি। চাকরিতে যে কাজ পারি না, বাইরে সেই চেষ্টা করি। আমার আর কতটুকু সাধ্য বলো।’
মেঘবতী স্বামীর দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বলে, ‘ও, এই তোমার পালামির কারণ?’
জ্যোতিষ্ক বলে, ‘পাগলামি?’
মেঘবতী কড়া গলায় বলে, ‘অবশ্যই পাগলামি। পাগলামি ছাড়া কী? মানুষের সমস্যা মনে হলেই লাফিয়ে গিয়ে পড়ছ, সেটা পাগলামি নয়? তুমি কি রাজাবাদশা? টাকার কুমির?’
জ্যোতিষ্ক মুচকি হেসে বলে, ‘আমি টাকার কুমির নই মেঘ। সামান্য সরকারি কর্মচারী। সমস্যায় পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে সব সময় টাকা লাগে না। তার পিঠে হাত রাখলেও অনেকটা করা হয়। কতটুকুই বা আমি করতে পারি? কিছুই নয়। মানুষের কত বড় বড় সব সমস্যা… আমি আমার ক্ষমতা অনুযায়ী যাতায়াতের পথে যতটুকু দেখি… বললাম তো এটা খানিকটা প্রায়শ্চিত্ত বলতে পারো, শখ বলতে পারো, বদভ্যাস বলতে পারো। সকলেরই তো কত বদভ্যাস থাকে…।’
কথা শেষ করে জ্যোতিষ্ক আওয়াজ করে হেসে ওঠে। মেঘবতীর গা জ্বলে যায়। সে বলে, ‘হাসছ কেন? একদম হাসবে না। তারপর গাড়ির জানলা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ওই লোক যে সমস্যায় পড়েছে বুঝতে পারছ কী করে?’
জ্যোতিষ্ক গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। স্ত্রীর সঙ্গে বক বক করলেও, তার চোখ রাস্তার উলটোদিকে।
‘তুমিও বুঝতে পারবে। এত রাতে একজন বৃদ্ধ মানুষ হাতে ঢাউস একটা সুটকেস নিয়ে রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। বাসে উঠছেন না, ট্যাক্সিও ডাকছেন না। তার মানে কী? মানে একটাই। উনি সমস্যায় পড়েছেন। অত বড় সুটকেস নিয়ে বাসে উঠতে পারছেন না। অথবা ট্যাক্সি ভাড়া নেই। আমি ঘটনাটা দেখেই গাড়ি দাঁড় করিয়েছি।’
মেঘবতী রাগী গলায় বলল, ‘তুমি এখন কী করবে? গিয়ে ট্যাক্সিভাড়া দিয়ে আসবে? নাকি আমরা সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকব?’
জ্যোতিষ্ক খানিকটা অন্যমনস্কভাবে বলল, ‘টাকা-পয়সা দিতে গেলে অপমানিত হতে পারেন। আমি বরং…দাঁড়াও গিয়ে কথা বলি। কাছাকাছি কোথাও যেতে চাইলে একটা লিফট দিতে পারি।’
জ্যোতিষ্ক গাড়ির দরজা খুলে নামল। খানিকটা হেঁটে বৃদ্ধ মানুষটির কাছে গেল এবং তার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে জ্যোতিষ্ককে ধরল।