১০৯ সর্গ।

তস্যাং রজন্যাং ব্যুষ্টায়াং যজ্ঞবাটং গতো নৃপঃ।

ঋষীন্ সর্ব্বাম্ মহাতেজাঃ শব্দাপয়তি রাঘবঃ॥

বশিষ্ঠো বামদেবশ্চ জাবালিরথ কাশ্যপঃ।

বিশ্বামিত্রো দীর্ঘতপা দুর্ব্বাসাশ্চ মহাতপাঃ॥

পুলস্ত্যোহপি তথা শক্তির্ভাগবশ্চৈর বামনঃ।

মার্কণ্ডেয়শ্চ দীর্ঘায়ুর্ম্মৌদ্গিল্যশ্চ মহযশাঃ॥

গর্গশ্চ চ্যবনশ্চৈব শতানন্দশ্চ ধর্ম্মবিৎ।

ভরদ্বাজশ্চ তেজস্বী অগ্নিপুত্রশ্চ সুপ্রভঃ॥

নারদঃ পর্ব্বতশ্চৈব গৌতমশ্চ মহাযশাঃ।

এতে চান্যে চ বহবো মুনয়ঃ সংশিতব্রতাঃ॥

কৌতূহলসমাবিষ্টাঃ সর্ব্ব এব সমাগতাঃ।

রাক্ষসাশ্চ মহাবীর্য্যা বানরাশ্চ মহাবলাঃ॥

সর্ব্ব এব সমাজগ্মুর্ম্মহাত্মানঃ কুতূহলাৎ।

ক্ষত্রিয়া যে চ শূদ্রাশ্চ বৈশ্যাশ্চৈব সহস্রশঃ॥

নানাদেশাগতাশ্চৈব ব্রাহ্মণাঃ সংশিতব্রতাঃ।

সীতাশপথবীক্ষার্থং সর্ব্ব এব সমাগতাঃ॥

তদা সমাগতং সর্ব্বমশ্মভূতমিবাচলং।

শ্রুত্বা মুনিবরস্তূর্ণং সসীতঃ সমুপাগমৎ॥

তমৃষিং পৃষ্ঠতঃ সীতা অন্বগচ্ছদবাঙ্মুখী।

কৃতাঞ্জলির্ব্বাষ্পকলা কৃত্বা রামং মনোগতং॥

তাং দৃষ্ট্বা শ্রুতিমায়াতীং ব্রাহ্মাণমনুগামিনীং।

বাল্মীকেঃ পৃষ্ঠতঃ সীতাং সাধুবাদো মহানভূৎ॥

ততো হলহলাশব্দঃ সর্ব্বেষামেবমাবভৌ।

দুঃখজন্মবিশালেন শোকেনাকুলিতাত্মনাং॥

সাধু রামেতি কেচিত্তু সাধু সীতেতি চাপরে।

উভাবেব চ তত্রান্যে প্রেক্ষকাঃ সংপ্রচুক্রুশুঃ॥

ততো মধ্যে জনৌঘস্য প্রবিশ্য মুনিপুঙ্গবঃ।

সীতাসহায়ো বাল্মীকিরিতিহোবাচ রাঘবং॥

ইয়ং দাশরথে সীতা সুব্রতা ধর্ম্মচারিণী।

অপবাদাৎ পরিত্যক্তা মমাশ্রমসমীপতঃ॥

লোকাপবাদভীতস্য তব রাম মহাব্রত।

প্রত্যয়ং দাস্যতে সীতা তামনুজ্ঞাতুমর্হসি॥

ইমৌ তু জানকীপুত্রাবুভৌ চ যমজাতকৌ।

সুতৌ তবৈব দুর্দ্ধষৌ সত্যমেতদ্‌ব্রবীমি তে॥

প্রচেতসোহহং দশমঃ পুত্রো রাঘবনন্দন।

ন স্মরাম্যনৃতং বাক্যমিমৌ তু তব পুত্রকৌ॥

বহুবর্ষসহস্রাণি তপশ্চর্য্যা ময়া কৃতা।

নোপাশ্নীয়াং ফলন্তস্যা দুষ্টেয়ং যদি মৈথিলী॥

মনসা কর্ম্মণা বাচা ভূতপূর্ব্বং ন কিল্বিষং।

তস্যাহং ফলমশ্নামি অপাপা মৈথিলী যদি॥

অহং পঞ্চসু ভূতেষু মনঃষষ্ঠেষু রাঘব।

বিচিন্ত্য সীতা শুদ্ধেতি জগ্রাহ বননির্ঝরে॥

ইয়ং শুদ্ধসমাচারা অপাপা পতিদেবতা।

লোকাপবাদভীতস্য প্রত্যয়ং তব দাস্যতি॥

তস্মাদিয়ং নরবরাত্মজ শুদ্ধভাবা

দিব্যেন দৃষ্টিবিষয়েণ ময়া প্রদিষ্টা।

লোকাপবাদকলুষীকৃতচেতসা যা

ত্যক্তা ত্বয়া প্রিয়তমা বিদিতাপি শুদ্ধা॥

 

১১০ সর্গ।

বাল্মীকেনৈবমুক্তস্তু রাঘবঃ প্রত্যভাষত।

প্রাঞ্জলির্জ্জগতো মধ্যে দৃষ্ট্বা তাং দেববর্ণিনীং॥

এবমেতন্মহাভাগ যথা বদসি ধর্ম্মবিৎ।

প্রত্যয়স্তু মম ব্রহ্মংস্তব বাক্যৈরকল্মষৈঃ॥

প্রত্যয়শ্চ পুরা দত্তো বৈদেহ্যা সুরসন্নিধৌ।

শপথশ্চ কৃতস্তত্র তেন বেশ্ম প্রবেশিতা॥

লোকাপবাদো বলবান্ যেন ত্যক্তা হি মৈথেলী।

সেয়ং লোকভয়াদ্‌ব্রহ্মন্নপাপেত্যভিজানতা॥

পরিত্যক্তা ময়া সীতা তদ্ভবান্ ক্ষন্তুমর্হতি।

জানামি চেমৌ পুত্রৌ মে যমজাতৌ কুশীলবৌ॥

শুদ্ধায়াং জগতো মধ্যে বৈদেহ্যাং প্রীতিরস্তু মে।

অভিপ্রায়ন্তু বিজ্ঞায় রামস্য সুরসত্তমাঃ॥

সীতায়াঃ শপথে তস্মিন্ সর্ব্ব এব সমাগতাঃ॥

পিতামহং পুরস্কৃত্য সর্ব্ব এব সমাগতাঃ॥

আদিত্যা বসবো রুদ্রা বিশ্বেদেবা মরুদ্গণাঃ॥

সাধ্যাশ্চ দেবাঃ সর্ব্বে তে সর্ব্বে চ পরমর্ষয়ঃ॥

নাগাঃ সুপর্ণাঃ সিদ্ধাশ্চ তে সর্ব্বে হৃষ্টমানসাঃ।

দৃষ্ট্বা দেবানৃষীংশ্চৈব রাঘবঃ পুনরব্রবীৎ॥

প্রত্যয়ো মে মুনিশ্রেষ্ঠ ঋষিবাক্যৈরকল্মষৈঃ।

শুদ্ধায়াং জগতো মধ্যে বৈদেহ্যাং প্রীতিরস্তু মে॥

সীতাশপথসংভ্রান্তাঃ সর্ব্ব এব সমাগতাঃ।

তাতো বায়ুঃ শুভঃ পুণ্যো দিব্যগন্ধো মনোরমঃ॥

তং জনৌঘং সুরশ্রেষ্ঠো হ্লাদয়ামাস সর্ব্বতঃ॥

তদদ্ভুতমিবাচিন্ত্যং নিরৈক্ষন্ত সমাহিতাঃ।

মানবাঃ সর্ব্বরাষ্ট্রেভ্যঃ পূর্ব্বং কৃতযুগে যথা॥

সর্ব্বান্ সমাগতান্ দৃষ্ট্বা সীতা কাষায়বাসিনী।

অব্রবীৎ প্রাঞ্জলির্বাক্যমধোদৃষ্টিরবাঙ্মুখী॥

যথাহং রাঘবাদন্যং মনসাপি ন চিন্তয়ে।

তথা মে মাধবী দেবী বিবরং দাতুমর্হতি॥

মনসা কর্ম্মণা বাচা যথা রামং সমর্চ্চয়ে।

তথা মে মাধবী দেবী বিবরং দাতুমর্হতি॥

যথৈতৎ সত্যমুক্তং মে বেদ্মি রামাৎ পরং ন চ।

তথা মে মাধবী দেবী বিবরং দাতুমর্হতি॥

তথা শপন্ত্যাং বৈদেহ্যাং প্রাদুরাসীত্তদদ্ভুতং।

ভূতলাদুত্থিতং দিব্যং সিংহাসনমনুত্তমং॥

ধ্রিয়মানং শিরোভিস্তু নাগৈরমিতবিক্রমৈঃ।

দিব্যং দিব্যেন বপুষা দিব্যরত্নবিভূষিতৈঃ॥

তস্মিংস্তু ধরণীদেবী বাহুভ্যাং গৃহ্য মৈথিলীং।

স্বাগতেনাভিনন্দৈনামাসনে চোপবেশয়ৎ॥

তামাসনগতাং দৃষ্ট্বা প্রবিশন্তীং রসাতলং।

পুষ্পবৃষ্টিরবিচ্ছিন্না দিব্যা সীতামবাকিরৎ॥

সাধুকারশ্চ সুমহান্দেবানাং সহসোত্থিতঃ।

সাধু সাধ্বিতি বৈ সীতে যস্যাস্তে শীলমীদৃশং॥

এবং বহুবিধা বাচো হান্তরীক্ষগতাঃ সুরাঃ।

ব্যাজহ্রুর্হৃষ্টমনসো দৃষ্ট্বা সীতাপ্রবেশনং॥

যজ্ঞবাটগতাশ্চাপি মুনয়ঃ সর্ব্ব এব তে।

রাজানশ্চ নরব্যাঘ্রা বিস্ময়ান্নোপরেমিরে॥

অন্তরীক্ষে চ ভূমৌ চ সর্ব্বে স্থাবরজঙ্গমাঃ।

দানবাশ্চ মহাকায়াঃ পাতালে পন্নগাধিপাঃ॥

কেচিদ্বিনেদুঃ সংহৃষ্টাঃ কেচিদ্ধ্যানপরায়ণাঃ।

কেচিদ্রামং নিরীক্ষন্তে কেচিৎ সীতামচেতসঃ॥

সীতাপ্রবেশনং দৃষ্ট্বা তেষামাসীৎ সমাগমঃ।

তন্মুহূর্ত্তমিবাত্যর্থং সমং সম্মোহিতং জগৎ॥[১]

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. সেই রজনী অতিবাহিত হইলে, মহাতেজা রাজা রামচন্দ্র যজ্ঞস্থল গমনপূর্ব্বক ঋষিসকলকে আহ্বান করাইলেন। অনন্তর বশিষ্ট, বামদেব, কশ্যবংশোদ্ভব জাবালি, দীর্ঘতপা, বিশ্বামিত্র, মহাতপা দুর্ব্বাসা, পুলস্ত্য, শক্তি, ভার্গব, বামন, দীর্ঘায়ু, মার্কণ্ডেয়, মহাযশা, মৌদ্গল্য, গর্গ, চ্যবন, ধর্ম্মজ্ঞ, শতানন্দ, তেজস্বী, ভরদ্বাজ, অগ্নিপুত্র, সুপ্রভ, নারদ, পর্ব্বত ও মহাযশা গৌতম, এবং অন্যান্য সংশতিব্রত মুনিগণ কৌতূহলাক্রান্ত হইয়া সকলেই সমাগত হইলেন। মহাবীর্য্য রাক্ষসগণ ও মহাবল বানরগণ, মহাত্মা ক্ষত্রিয়গণ, এবং সহস্র বৈশ্য ও শূদ্রগণ এবং নানা দেশাগত ব্রতধারী ব্রাহ্মণসকল কুতূহলবশতঃ সীতাশপথ দর্শন জন্য সকলেই সমাগত হইলেন।
    মহর্ষি বাল্মীকি, তৎকালে সমাগত জনমণ্ডলী কৌতুকদর্শনার্থ পর্ব্বতবৎ নিশ্চলভাবে দণ্ডায়মান, ইহা শ্রবণ করিয়া সীতাসহিত শীঘ্র গমন করিলেন। সীতাও কৃতাঞ্জলি, বাষ্পাকুলনয়না এবং অধোমুখী হইয়া মনোমধ্যে রামকে চিন্তা করিতে করিতে সেই ঋষির পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিতে লাগিলেন। ব্রহ্মের অনুগামিনী শ্রুতির ন্যায় বাল্মীকির পশ্চাদ্বর্ত্তিনী সেই সীতাকে দেখিবামাত্র সেই স্থলে অতি মহৎ সাধুবাদ হইতে লাগিল। তৎপরে দুঃখজ অতিমহৎ শোক হেতু ব্যথিতান্তঃকরণ জনসকলের বিপুল হলহলা শব্দ উত্থিত হইল। দর্শকবৃন্দমধ্যে সাধু রাম, কতকগুলি সাধু জানকী ও কতকগুলি উভয়ই সাধু, এই প্রকার কহিতে লাগিল।
    তদনন্তর মুনিশ্রেষ্ঠ বাল্মীকি সীতা সহিত জনবৃন্দমধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া রামকে এইরূপ বলিতে লাগিলেনঃ হে দাশরথি! ধর্ম্মচারিণী, সুব্রতা এই সীতা লোকাপবাদ হেতু আমার আশ্রম সমীপে পরিত্যক্তা হইয়াছিলেন। হে মহাব্রত রাম! ইনি এক্ষণে লোকাপবাদভীত তোমার নিকট প্রত্যয় প্রদান করিবেন; তুমি অনুজ্ঞা কর। এই দুর্দ্ধর্ষ যমল জানকীপুত্র তোমারই পুত্র, ইহা আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি। হে রাঘবনন্দন! আমি প্রচেতার দশম পুত্র, আমি মিথ্যা বাক্য স্মরণও করি না; ইহারা তোমারই পুত্র। আমি বহু সহস্র বর্ষ তপস্যা করিয়াছি; যদ্যপি এই জানকী দুশ্চারিণী হয়েন, তাহা হইলে আমি যেন তাহার ফল প্রাপ্ত না হই। কায়মনে এবং কর্ম্মদ্বারা আমি পূর্ব্বে কখনই পাপাচরণ করি নাই; যদ্যপি জানকী নিষ্পাপা হয়েন, তবে আমি যেন তাহার ফলভোগ করিতে পারি। হে রাঘব! আমি পঞ্চ ভূত ও ষষ্ঠস্থানীয় মনেতে সীতাকে বিশুদ্ধ বিবেচনা করিয়াই বননির্ঝরে গ্রহণ করিয়াছিলাম। এই অপাপা পতিপরায়ণা শুদ্ধচারিণী, লোকাপবাদভীত তোমার নিকট প্রত্যয় প্রদান করিবেন। হে রাজনন্দন! যেহেতু তুমি তোমার এই প্রিয়তমাকে বিশুদ্ধা জানিয়াও লোকাপবাদ ভয়ে পরিত্যাগ করিয়াছিলে, তজ্জন্যই দিব্যজ্ঞানে জানিয়াও এই শপথার্থ আদেশ করিয়াছি।
    রাম বাল্মীকি কর্ত্তৃক এইরূপে কথিত হইয়া এবং সেই দেববর্ণিনী জানকীকে দেখিয়া কৃতাঞ্জলিপূর্ব্বক জগৎস্থ জনগণের সমীপে এইরূপ বলিতে লাগিলেন। হে ধর্ম্মজ্ঞ! হে মহাভাগ! আপনি যাহা বলিতেছেন, তাহাই সত্য। হে ব্রহ্মন্! আপনার পবিত্র বাক্যেতেই আমার প্রত্যয় হইয়াছে, এবং বৈদেহীও লঙ্কামধ্যে পূর্ব্বকালে দেবগণ সমীপে প্রত্যয় প্রদান ও শপথ করিয়াছেন, তজ্জন্যই আমি ইঁহাকে গৃহে প্রবিষ্ট করিয়াছিলাম। হে ব্রহ্মন্! এই জানকীকে আমি পবিত্রা জানিয়া শুদ্ধ লোকাপবাদভয়ে ত্যাগ করিয়াছি। আর যমল কুশীলব আমারই পুত্র, আমি তাহা জানি, কিন্তু আপনি আমাকে ক্ষমা করিবেন। আমি যে কারণে জানকীকে ত্যাগ করিয়াছি, সেই লোকাপবাদ আমার পক্ষে সর্ব্বাপেক্ষা বলবান্। জগন্মধ্যে পবিত্রা জানকীতে আমার প্রীতি থাকুক।
    অনন্তর সীতা—শপথ বিষয়ে রামের অভিপ্রায় জানিয়া দেবগণ ব্রহ্মাকে পুরোবর্ত্তী করিয়া সেই স্থলে সমাগত হইলেন এবং আদিত্যগণ বসুগণ রুদ্রগণ বায়ুগণ বিশ্বদেবগণ সকল সাধ্যগণ দেবগণ সকল পরমর্ষিগণ নাগগণ পক্ষিগণ সকলেই হৃষ্টান্তঃকরণ হইয়া সে স্থলে আগমন করিলেন। রাম সমাগত সেই সকল দেবগণ ঋষিগণকে দেখিয়া পুনর্ব্বার বাল্মীকিকে সম্বোধন করিয়া বলিতে লাগিলেন।
    হে মুনিশ্রেষ্ঠ! পবিত্র ঋষিবাক্যে আমার প্রত্যয় আছে। জগতে বিশুদ্ধশালিনী সীতার প্রতি আমার প্রীতি থাকুক; কিন্তু সীতাশপথ দর্শনজন্য কৌতূহলাক্রান্ত হইয়া সকলে সমাগত হইয়াছেন।
    তখন দিব্য গন্ধবিশিষ্ট মনোহর এবং সর্ব্বপাপপূণ্য—সাক্ষী পবিত্র বায়ু প্রবাহিত হইয়া সেই জনবৃন্দকে আহ্লাদিত করিল। পূর্ব্বকালে সত্যযুগের ন্যায় সেই আশ্চর্য্য অচিন্তনীয় ব্যাপার, সকল রাষ্ট্র হইতে সমাগত জনমণ্ডলী সমাহিত হইয়া দেখিতে লাগিল। কাষায়—বস্ত্রপরিধানা সীতা সকলকে সমাগত দেখিয়া অধোমুখী, অধোদৃষ্টি এবং কৃতাঞ্জলি হইয়া এইরূপ কহিতে লাগিলেন। যদি আমি মনেতেও রাম ভিন্ন অন্য চিন্তা না করিয়া থাকি, তবে পৃথিবীদেবী আমাকে বিবর প্রদান করুন। “আমি রাম ভিন্ন জানি না,” আমার এই বাক্য যদি সত্য হয়, তবে পৃথিবীদেবী আমাকে বিবর প্রদান করুন।
    বৈদেহী এইরূপ শপথ করিলে, তখন অমিতবিক্রম, দিব্য রত্নালঙ্কৃত নাগগণ কর্ত্তৃক মস্তকে বাহিত, দিব্যকান্তি, দিব্য সিংহাসন রসাতল হইতে সহসা আবির্ভূত হইল এবং সেই স্থলে পৃথিবীদেবী দুই বাহুদ্বারা সীতাকে গ্রহণ করিয়া এবং স্বাগত প্রশ্নে অভিনন্দন করিয়া সেই উত্তমাসনে উপবেশন করাইলেন।
    সিংহাসনারূঢ়া সেই সীতাকে রসাতলে প্রবেশ করিতে দেখিয়া তদুপরি স্বর্গ হইতে পুষ্পবৃষ্টি হইতে লাগিল এবং দেবগণের অতি বিপুল সাধুবাদ হঠাৎ উত্থিত হইল। সীতার রসাতল প্রবেশ দেখিয়া অন্তরীক্ষগত দেবগণ হৃষ্টান্তঃকরণ হইয়া, “সীতা সাধু সীতা সাধু যাঁহার এইরূপ চরিত্র” ইত্যাদি নানাপ্রকার বাক্য কহিতে লাগিলেন। যজ্ঞস্থলাগত সেই সকল মুনিগণ ও মনুষ্যশ্রেষ্ঠ রাজগণ এই অদ্ভুত ঘটনা হেতু বিস্ময় হইতে বিরত হইতে পারিলেন না। তৎকালে আকাশে, ভূতলে স্থাবর জঙ্গম পদার্থ ও মহাকায় দানবগণ এবং পাতালে নাগগণ সকলেই হৃষ্টান্তঃকরণ হইয়াছিলেন। তাঁহারা হৃষ্টমনে শব্দ করিতে লাগিলেন; কাহারা বা ধ্যানস্থ হইলেন, কাহারাও বা রামকে দেখিতে লাগিলেন, এবং কেহ কেহ বা নিঃসংজ্ঞ হইয়া সীতাকে অবলোকন করিতে লাগিলেন। এইরূপে সমাগত সেই সকল ঋষি প্রভৃতির সীতার রসাতল প্রবেশ দেখিয়া এই প্রকার সমাগম হইয়াছিল এবং সেই মুহূর্ত্তে সমুদায় জগৎ সমকালেই মোহিত হইয়াছিল।

১ Comment

  1. আমরা শুধু বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের কথাই জানি, তিনি যে অনেক ভাল প্রবন্ধ ও গ্রন্থ সমালোচনাও লিখেছেন, এই সাইটে না এলে জানতে পেতাম না।

Leave a Reply