বিবিধ প্রবন্ধ

‘বিবিধ প্রবন্ধ’ (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ) সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি জ্ঞানগর্ভ চিন্তামূলক প্রবন্ধ গ্রন্থ। উক্ত গ্রন্থে বঙ্কিমচন্দ্র বিশ্বসাহিত্য পরিভ্রমণ করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র এতদিন পর্যন্ত দেশ বিদেশের যে সমৃদ্ধ আকরগ্রন্থ — যেমন, ইতিহাস, সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন,Continue Reading

প্রথম ভাগ

বিজ্ঞাপন ইতিপূর্বে কতকগুলি প্রবন্ধ “বিবিধ সমালোচনা” নামে আর কতকগুলি “প্রবন্ধ পুস্তক” নামে প্রকাশিত করা গিয়াছিল। এক্ষণে উভয় গ্রন্থই অপ্রাপ্য। দুইখানি পৃথক্ সংগ্রহ নিষ্প্রয়োজন বিবেচনায়, এক্ষণে ঐ প্রবন্ধগুলি এক পুস্তকে সঙ্কলন করিয়া “বিবিধ প্রবন্ধ” নাম দেওয়াContinue Reading

উত্তরচরিত

উত্তরচরিতের উপাখ্যানভাগ রামায়ণ হইতে গৃহীত। ইহাতে রামকর্ত্তৃক সীতার প্রত্যাখ্যান ও তৎসঙ্গে পুনর্ম্মিলন বর্ণিত হইয়াছে। স্থূল বৃত্তান্ত রামায়ণ হইতে গৃহীত বটে, কিন্তু অনেক বিষয় ভবভূতির স্বকপোলকল্পিত। রামায়ণে যেরূপ বাল্মীকির আশ্রমে সীতার বাস, এবং যেরূপ ঘটনায় পুনর্ম্মিলন,Continue Reading

গীতিকাব্য

কাব্য কাহাকে বলে, তাহা অনেকে বুঝাইবার জন্য যত্ন করিয়াছেন, কিন্তু কাহারও যত্ন সফল হইয়াছে কি না সন্দেহ। ইহা স্বীকার করিতে হইবে যে, দুই ব্যক্তি কখন এক প্রকার অর্থ করেন নাই। কিন্তু কাব্যের যথার্থলক্ষণ সম্বন্ধে মতভেদContinue Reading

প্রকৃত এবং অতিপ্রকৃত

কাব্যরসের সামগ্রী মনুষ্যের হৃদয়। যাহা মনুষ্যহৃদয়ের অংশ, অথবা যাহা তাহা সঞ্চালক, তদ্ব্যতীত আর কিছুই কাব্যোপযোগী নহে। কিন্তু কখনও কখনও মহাকবিরা, যাহা অতিমানুষ, তাহারও বর্ণনায় প্রবৃত্ত হইয়াছেন। তন্মধ্যে অধিকাংশই মনুষ্যচরিত্রচিত্রের আনুষঙ্গিক মাত্র। মহাভারত, ইলিয়দ প্রভৃতি প্রাচীনContinue Reading

বিদ্যাপতি ও জয়দেব

বাঙ্গালা সাহিত্যের আর যে দুঃখই থাকুক, উৎকৃষ্ট গীতিকাব্যের অভাব নাই। বরং অন্যান্য ভাষার অপেক্ষা বাঙ্গালায় এই জাতীয় কবিতার আধিক্য। অন্যান্য কবির কথা না ধরিলেও, একা বৈষ্ণব কবিগণই ইহার সমুদ্রবিশেষ। বাঙ্গালার প্রাচীন কবি—জয়দেব—গীতিকাব্যের প্রণেতা। পরবর্ত্তী বৈষ্ণবContinue Reading

আর্য্যজাতির সূক্ষ্ম শিল্প

একদল মনুষ্য বলেন যে, এ সংসারে সুখ নাই, বনে চল, ভোগাভোগ সমাপ্ত করিয়া মুক্তি বা নির্ব্বাণ লাভ কর। আর একদল বলেন, সংসার সুখময়, বঞ্চকের বঞ্চনা অগ্রাহ্য করিয়া, খাও, দাও, ঘুমাও। যাঁহারা সুখভিলাষী, তাঁহাদিগের মধ্যে নানাContinue Reading

দ্রৌপদী

কি প্রাচীন, কি আধুনিক, হিন্দুকাব্য সকলের নায়িকাগণের চরিত্র এক ছাঁচে ঢালা দেখা যায়। পতিপরায়ণা, কোমলপ্রকৃতিসম্পন্না, লজ্জাশীলা, সহিষ্ণুতা গুণের বিশেষ অধিকারিণী—ইনিই আর্য্যসাহিত্যের আদর্শস্থলাভিষিক্তা। এই গঠনে বৃদ্ধ বাল্মীকি বিশ্বমনোমোহিনী জনকদুহিতাকে গড়িয়াছিলেন। সেই অবধি আর্য্য নায়িকা সেই আদর্শেContinue Reading

অনুকরণ

জগদীশ্বরকৃপায়, ঊনবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক বাঙ্গালি নামে এক অদ্ভুত জন্তু এই জগতে দেখা গিয়াছে। পশুতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরা পরীক্ষা দ্বারা স্থির করিয়াছেন যে, এই জন্তু বাহ্যতঃ মনুষ্য—লক্ষণাক্রান্ত; হস্তে পদে পাঁচ পাঁচ অঙ্গুলি, লাঙ্গুল নাই; এবং অস্থি ও মস্তিষ্ক,Continue Reading

শকুন্তলা, মিরন্দা এবং দেব্‌দিমোনা

উভয়েই ঋষিকন্যা; প্রস্পেরো ও বিশ্বামিত্র উভয়েই রাজর্ষি। উভয়েই ঋষিকন্যা বলিয়া, অমানুষিক সাহায্যপ্রাপ্ত। মিরন্দা এরিয়ল—রক্ষিতা শকুন্তলা অপ্সরোরক্ষিতা। উভয়েই ঋষি—পালিতা। দুইটিই বনলতা—দুইটিরই সৌন্দর্য্যে উদ্যানলতা পরাভূতা। শকুন্তলাকে দেখিয়া, রাজাবরোধবাসিনীগণের ম্লানীভূত রূপলাবণ্য দুষ্মন্তের স্মরণ—পথে আসিল; শুদ্ধান্তদুর্লভমিদং বপুরাশ্রমবাসিনো যদি জনস্য।Continue Reading

বাঙ্গালির বাহুবল

বাঙ্গালির এক্ষণে উন্নতির আকাঙ্ক্ষা অত্যন্ত প্রবল হইয়াছে। বাঙ্গালি সর্ব্বদা উন্নতির জন্য ব্যস্ত। অনেকে তদ্বিষয়ে বিশেষ গুরুতর আশা করেন না। কেন না, বাঙ্গালির বাহুবল নাই। বাহুবল ভিন্ন উন্নতি নাই, ইহা তাঁহাদিগের বিশ্বাস। বাঙ্গালির বাহুবল নাই, ইহাContinue Reading

ভালবাসার অত্যাচার

লোকের বিশ্বাস আছে যে, কেবল শত্রু, অথবা স্নেহ—দয়া—দাক্ষিণ্যশূন্য ব্যক্তিই আমাদিগের উপর অত্যাচার করিয়া থাকে। কিন্তু তদপেক্ষা গুরুতর অত্যাচারী যে আর এক শ্রেণীর লোক আছে, তাহা সকল সময়ে আমাদের মনে পড়ে না। যে ভালবাসে, সেই অত্যাচারContinue Reading

জ্ঞান

ভারতবর্ষে দর্শন কাহাকে বলে? ইহার উত্তর দিতে গেলে প্রথমে বুঝিতে হইবে যে, ইউরোপে যে অর্থে “ফিলসফি” শব্দ ব্যবহৃত হয়, দর্শন সে অর্থে ব্যবহৃত হয় না। বাস্তবিক ফিলসফি শব্দের অর্থের স্থিরতা নাই,—কখন ইহার অর্থ অধ্যাত্বতত্ত্ব, কখনContinue Reading

সাংখ্যদর্শন

প্রথম পরিচ্ছেদ—উপক্রমণিকা এ দেশীয় প্রাচীন দর্শন সকলের মধ্যে বঙ্গদেশে ন্যায়ের প্রাধান্য। দেশীয় পণ্ডিতেরা সচরাচর সাংখ্যের প্রতি তাদৃশ মনোযোগ করেন না। কিন্তু ভারতবর্ষে যে সাংখ্য যে কীর্ত্তি করিয়াছে, তাহা অন্য দর্শন দূরে থাকুক, অন্য কোন শাস্ত্রেরContinue Reading

ভারত-কলঙ্ক : ভারতবর্ষ পরাধীন কেন?

ভারতবর্ষ এতকাল পরাধীন কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে সকলে বলিয়া থাকেন, ভারতবর্ষীয়েরা হীনবল এইজন্য। “Effeminate Hindoos” ইউরোপীয়দিগের মুখাগ্রে সর্ব্বদাই আছে। ইহাই ভারতের কলঙ্ক। কিন্তু আবার ইউরোপীয়দিগের মুখেই ভারতবর্ষীয় সিপাহীদিগের বল ও সাহসের প্রশংসা শুনা যায়। সেইContinue Reading

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা এবং পরাধীনতা

মানুষের এমন দূরবস্থা কখন হইতে পারে না যে, তাহাতে শুভ কিছুই দেখা যায় না। আমাদিগের গুরুতর দুর্ভাগ্যেও কিছু মঙ্গল খুঁজিয়া পাওয়া যায়। যে অশুভের মধ্যে শুভের অনুসন্ধান করিয়া তাহার আলোচনা করে সেই বিজ্ঞ। দুঃখও যেContinue Reading

প্রাচীন ভারতবর্ষের রাজনীতি : নারদবাক্য

মহাভারতের সভাপর্ব্বে দেবর্ষি নারদ যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্নচ্ছলে কতকগুলি রাজনৈতিক উপদেশ দিয়াছেন। প্রাচীন ভারতে রাজনীতি কত দূর উন্নতি প্রাপ্ত হইয়াছিল, উহা তাহার পরিচয়। মুসলমানদিগের অপেক্ষা হিন্দুরা যে রাজনীতিতে বিজ্ঞতর ছিলেন, উহা পাঠ করিলে সংশয় থাকে না। প্রাচীনContinue Reading

প্রাচীনা এবং নবীনা

আমাদিগের সমাজসংস্কারকেরা নূতন কীর্ত্তি স্থাপনে যাদৃশ ব্যগ্র; সমাজের গতি পর্য্যবেক্ষণায় তাদৃশ মনোযোগী নহেন। “এই হইলে ভাল হয়, অতএব এই কর,” ইহাই তাঁহাদিগের উক্তি, কিন্তু কি করিতে কি হইতেছে, তাহা কেহ দেখেন না। বাঙ্গালিরা যে ইংরেজিContinue Reading

দ্বিতীয় ভাগ

যে সকল প্রবন্ধ এই সংগ্রহে পুনর্মুদ্রিত হইল, তাহার অধিকাংশ বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হইয়াছিল; অল্পভাগ প্রচারে। ১২৭৯ সালে আমি বঙ্গদর্শন প্রকাশ আরম্ভ করি। চারি বৎসর আমি উহার সম্পাদকতা নির্বাহ করি। ঐ চারি বৎসরের বঙ্গদর্শন আর পাওয়া যায়Continue Reading

ধর্ম্ম এবং সাহিত্য

আমি প্রচারের একজন লেখক। তাহা জানিয়া প্রচারের একজন পাঠক আমাকে বলিলেন, “প্রচারে অত ধর্ম্মবিষয়ক প্রবন্ধ ভাল লাগে না। দুই একটা আমাদের কথা না থাকিলে পড়িতে পারা যায় না৷” আমি বলিলাম, “কেন, উপন্যাসেও কি তোমার আমোদContinue Reading