» » চক্রান্তের মূল নায়করা

বর্ণাকার

ইয়ার লতিফ

পলাশির ষড়যন্ত্রে ইয়ার লতিফের ভূমিকা নিতান্তই নগণ্য। উত্তরভারতীয় এই যোদ্ধা ছিলেন দু’হাজারি মনসবদার। জগৎশেঠদের সুরক্ষার জন্য তিনি তাঁদের কাছ থেকে একটা মাসোহারা পেতেন। নবাবের সৈন্যবাহিনীতে তাঁর স্থান খুব একটা উঁচুতে ছিল না। তবু তাঁর ছিল প্রবল উচ্চাকাঙক্ষা। তাই ওয়াটস যখন উমিচাঁদের সাহায্যে সিরাজের জায়গায় নবাব হওয়ার বাসনা আছে এমন কারও খোঁজ করছিলেন, তখন ইয়ার লতিফ উমিচাঁদকে তাঁর মনোবাসনার কথা ব্যক্ত করেন এবং ইংরেজদের সঙ্গে যোগ দিতে তিনি রাজি আছেন বলে জানান। তিনি এটাও বলেন যে, জগৎশেঠরা তাঁর পেছনে আছেন যেটা পরে মীরজাফরও দাবি করেছিলেন। যদিও ওয়াটস উমিচাঁদের মারফতই ইয়ার লতিফের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তবে সম্ভবত ইয়ার লতিফ উমিচাঁদেরই পছন্দসই লোক। ইয়ার লতিফের প্রস্তাব যে শুধু ওয়াটসই লুফে নিলেন তা নয়, ক্লাইভও এ-প্রস্তাবে সায় দিলেন। যদিও স্ক্র্যাফ্টন বলেছেন, ইয়ার লাতিফ নবাব হওয়ার পক্ষে ‘যোগ্য লোক’ এবং তাঁর পেছনে জগৎশেঠদের সমর্থন আছে এবং যদিও ওয়াটস প্রথমে প্রায় একই ধরনের কথা বলেছিলেন, ক্লাইভ কিন্তু ইয়ার লতিফ সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানতেন না। তা সত্ত্বেও তিনি লতিফকে সিরাজের পরিবর্তে মসনদে বসাবার পরিকল্পনায় সামিল হয়েছিলেন।1 আসলে ইংরেজরা বিপ্লব ঘটাবার আগ্রহে ও তাগিদে সিরাজদৌল্লার পরিবর্তে নবাব হতে চায় এমন যে-কোনও রাজপুরুষকে খুঁজে বার করতে চাইছিল। ব্যক্তি হিসেবে তিনি কেমন হবেন তা নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা ছিল না। এ-বক্তব্য যে একেবারে যথার্থ তার প্রমাণ, ইয়ার লতিফকে নবাব করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক’দিন পরেই যখন মীরজাফরের হদিস পাওয়া গেল, তখন তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে ইয়ার লতিফকে পরিত্যাগ করে মীরজাফরকে নবাব করার পরিকল্পনা করল। আমরা অন্যত্র বলেছি, ইংরেজরা বুঝতে পেরেছিল যে ইয়ার লতিফকে সামনে রেখে সিরাজদৌল্লাকে হঠাবার যড়যন্ত্র সফল করা মুশকিল হতে পারে। সেজন্য যেই মীরজাফরের মতো শক্তিশালী আরেকজন প্রার্থী পাওয়া গেল, তক্ষুনি তারা ইয়ার লতিফকে বাদ দিয়ে মীরজাফরকে মসনদে বসাবার সিদ্ধান্ত নিল।

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. ওয়ালসকে স্ক্র্যাফ্‌টনের চিঠি, ১৮ এপ্রিল ১৭৫৭, Hill, II, p. 343; Watts’ Memoirs, পৃ. ৭৭, ৮০; ক্লাইভকে ওয়াটস, ২৩ এপ্রিল ১৭৫৭, Hill, II, p. 353; ওয়াটসকে ক্লাইভ, ২৬ এপ্রিল ১৭৫৭, Hill, II, p. 362; ওয়াটসকে ক্লাইভ, ২৮ এপ্রিল ১৭৫৭, Hill, II, p. 366.