বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়

রাণুর প্রথম ভাগ

পৃথ্বীরাজ

8

একটা নির্জ্জন জায়গা বাছিয়া রসিক একখানা চিঠি পড়িতেছিল, মাখন আসিয়া নিঃশব্দে পাশে বসিল। বলিল, চৌধুরীরা খুব গাল পাড়ছে।

রসিক চিঠি হইতে মুখ তুলিয়া প্রশ্নের ভাবে মাখনের দিকে চাহিল।

সে সংক্ষেপে বলিল, কাল নষ্টচন্দ্র ছিল কিনা।

ওঃ, মনেই ছিল না, কাল বিকেলে এই চিঠিটা পেলাম কিনা। এ বছরটা আমার ফাঁকই গেল। কি কি লোকসান করলি?

দু কাঁদি কলা, একটা ফলন্তে কুমড়ো-গাছ আর পাতকুয়োর কেরাসিন তেল।

মন্দ হয় নি; ওদের অনেক গুলো কাচা ইটও পোড়াবার জন্যে সাজানো রয়েছে — যাক, আমার আর এ বছর মনেই ছিল না। বউ একটা চিঠি দিয়েছে, শোন্ — ‘প্রিয়তম প্রাণেশ্বর’ — বেশ বাংলা জানে, না?

মাখন ঘাড় নাড়িল।

‘প্রিয়তম প্রাণেশ্বর

তুমি গিয়েছ পর্য্যন্ত আমার যে কি করেই কাটছে তা অন্তর্যামীই জানেন। দাসীকে কি এমনি করেই পায়ে ঠেলে যেতে হয়? কোন্ গুরু অপরাধে অপরাধিনী আমি? কত জন্মের পুণ্যের ফলে তোমা হেন পতি লাভ করিলাম, কিন্তু কি পাপে আমি সে ধনে বঞ্চিত হলাম? আমার প্রাণে অহরহই বিরহের আগুন জ্বলছে, কিন্তু সে আগুন নিবুবার কেউ নেই — বোন ভাজ আর ছোট ভাইয়েরা সবাই বৈরী, খালি চিঠি লিখছি কি না ভেতরে ভেতরে সেই সন্ধান। আমি তো এ চিঠি বাটী হইতে লিখিতেছি না, অখিলদার বাটী হইতে। অখিলদার বউয়ের সঙ্গে খুব ভাব হইয়াছে। নাম শরৎকুমারী। তুমিও তারই ঠিকানায় চিঠি দিও আমায়, সে আমায় দিয়ে দেবে। বাড়ির ঠিকানায় কখনও চিঠি দিও না। আমরা দুজনে মিলে আজকাল ‘পৃথ্বীরাজ’ পড়ছি। আমার অনেক মুখস্থ হইয়া গিয়াছে। অখিলদার বউ বলে — অখিলদা নাকি বলেন, তুমি খুব সাহসী বীরপুরুষ। অখিলদা নিজে বড্ড স্বদেশী কিনা। কিন্তু হায় পোড়া অদৃষ্ট আমার, আমি বীরজায়া হইতে পারিলাম না; মনের সাধ মনে রহিয়া গেল, পিতা বিমুখ, বিধি বাম। এ পিতৃগৃহ আমার পক্ষে কারাগার হয়ে পড়েছে। হায় স্বামিন্‌, পৃথ্বীরাজ যেমন সংযুক্তাকে বীরদর্পে তাঁহার পিতৃগৃহ হইতে উদ্ধার করিয়া নিজের শৌর্য্যবীয্যের পরিচয় দিয়া বিশ্বজগৎকে স্তম্ভিত করিয়াছিলেন, তুমি কি আমায় সেইরূপ করিবে না?

তা বলে তুমি যেন সত্যিসত্যি অমন কিছু করতে যেও না বাপু, হ্যাঁ। আমার বড্ড ভয় করে। যেদিন অমন মারধোর করে চলে গেলে সেদিন আমার যে কি ভয় করেছিল।

শ্রীচরণে শতকোটি প্রণাম নিও। এখন তবে ৮০

                                                                                                                             ইতি

                                                                                                    তোমার শ্রীচরণের জন্মজন্মের দাসী

                                                                                                            শ্রীমতী অমলাবালা দেবী’

বেশ হয় কিন্তু তা হলে, না?

কি?

এই পৃথ্বীরাজের মত শ্বশুরবাড়ি থেকে কেড়ে নিয়ে আসা।

হুঁ।

কিন্তু ঘোড়া পাব কোথায়?

আমার বাবা যেটাতে চড়ে রুগী দেখতে যান, তাতে হবে না? বাবা তত বাতে ভুগছেন।

দূর, তার হাঁটুতে হাঁটুতে ঠেকাঠেকি হয়, শেষকালে তাড়া খেয়ে পৃথ্বীরাজ সংযুক্তা হুড়মুড় করে পড়ে মরব? তা ছাড়া চড়বার পর তার তা রাশ ধরে খানিকটা টেনে নিয়ে যেতে হয়, তবে চলে।

তা বটে, তবে দুজনের জায়গা বেশ হত; পেটটা বেশ মোট। আছে, আর পিঠটা খুব নীচু।

আমি একটা উত্তর লিখেছি। নে, পড়, দিকিন, পরের মুখে শুনি, কি রকম হল! তোদের ঘোড়ার কথাও আছে।

মাখন পড়িতে লাগিল —  ‘প্রিয়তমা প্রাণেশ্বরী অমলাবালা আমার শতসহস্র চুম্বন গ্রহণ কর — ’

রসিক টীকা করিল, দূর থেকে তা হয় না বটে; কিন্তু আমার পিসতুতো মেজদাকে গোড়াতেই ওই রকম লিখতে দেখেছি। মরুকগে, পড়।

‘আমাকে বীর বলে লজ্জা দিও না, তবে সেদিন আরও অনেককে ঠেঙাবার ইচ্ছে ছিল। আমার সঙ্গে যদি মাখন থাকত তো দেখতে। তাকে তুমি চেন না।’

রসিক বলিল, তোর কথাও লিখে দিলাম।

‘আগে বেশ ছিল। সবাইকে মেরে ধরে যুদ্ধ করে বিয়ে করে আনত। তাতে শ্বশুরবাড়িতে জ্বালাতন করবার লোকও অনেক কমে যেত। কিন্তু আজকাল অন্য রকম হয়ে গেছে। সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই। তা না থাক্‌গে। বাবা বলেন, নিজের বউ নিজের ঘরে নিয়ে আসব, তাতে আদালত আমার দিকে। সেখানে রায়সাহেবী খাটবে না, হ্যাঁ বাবা। তোমার যেমন সংযুক্তার মত হতে সাধ যায়, আমারও ঠিক তেমনি পৃথ্বীরাজের মত তোমায় নিয়ে অশ্বারোহণে বীরদর্পে মেদিনী কম্পিত করিয়া পালিয়ে আসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কোন সুবিধে নেই। মাখনের বাবার একটা ঘোড়া আছে। তার পিঠে চড়লেই কিন্তু সামনে পা দুটো বাড়িয়ে দিয়ে পেছনে হটতে আরম্ভ করে। তখন জিব দিয়ে টকাস টকাস করে এক রকম শব্দ করতে হয়, তা আমার ভাল আসে না।

আচ্ছা অমলা, আমি যদি একটা ভাল ঘোড়া যোগাড় করি তো আমার সঙ্গে পালিয়ে আসবে তো? আগেকার মেয়েরা আগুনে পুড়ে মরত, আর তুমি এইটুকু পারবে না? বাবা আমার আর একটা বিয়ে দিচ্ছিলেন, আমি করি নি। আমি তোমায় ভয়ানক ভালবাসি। আমারও বিরহানলে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। ঠাকুমা খালি মাঝে মাঝে সান্ত্বনা দেন। শীঘ্র পত্র দিবে। আমার চিত্তচকোর বড় ব্যাকুল হইয়াছে।

                                                                                                                             ইতি

                                                                                                                 জন্ম জন্ম তোমারই

                                                                                                                        রসিকলাল’

রসিক আবার একটু টীকা করিল, চিত্তচকোর এক রকম পাখি —  শেষকালে এই রকম লিখতে হয়। বেশ হয় নি লেখাটা?

মাখন বলিল, হু।

তাহার পরদিন বেশ করিয়া, এসেন্স মাখাইয়া পত্রখানি ডাকে দিয়া দুই তিন-দিন অতীত হইতেই রসিক গিয়া পোস্ট-আপিসে হাজিরা দিতে লাগিল। মাসখানেক নিয়মিতভাবে গেল, কিন্তু কোন উত্তর আসিল না। তখন নিরাশ হইয়া দিনকতক যাওয়াই ছাড়িয়া দিল; তাহার পর আবার আশায় বুক বাঁধিল। এই রকম করিয়া আশা-নিরাশার দ্বন্দ্বের মধ্যে অনেকদিন কাটিয়া গেল — দুই মাস, চার মাস, পাঁচ মাস কাটিয়া গেল — কোন উত্তরই নাই। রসিকও ক্রমাগতই বধূকে উদ্দেশ্য করিয়া মাখনের কাছে বলিতে লাগিল, আর এক মাস — আর পনরো দিন — আর এক সপ্তাহ দেখব, তারপর ধাঁ করে বিয়ে করে বসব, এই তোকে বলে রাখলাম মাখন।

ঠাকুরমা তাহার পিতাকে তাগাদা করিতে লাগিলেন, ছেলে যে এদিকে কালি হয়ে গেল, একটা হেস্তনেস্ত কিছু কর্‌।

তিনি বেহাইকে তিন-চারখানা পত্র দিলেন, প্রথমে খুব মিনতির ভাব, ক্রমে ক্রোধ এবং পরে কন্যার উপর নিজের দাবি সাব্যস্ত করিয়া। কোন জবাবই আসিল না।

রসিক শেষকালে হার মানিয়া একদিন মাখনের সঙ্গে পরামর্শ করিতেছিল — তাহাকে মালিনী সাজাইয়া কিংবা ভিখারী-বালক সাজাইয়া বধূসকাশে কি করিয়া পাঠানো যায়, এমন সময় তাহার ছোট বোন হাতে একটা চিঠি লইয়া আসিয়া বলিল, বকশিশ দাও।

রসিক আগ্রহভরে তিন-চার বার চাহিল, তাহার পর পুরস্কারস্বরূপ তাহার গালে একটা প্রচণ্ড চড় বসাইয়া চিঠিটা কাড়িয়া লইল।

লেখা ছিল —

‘জীবিতেশ,

কোথা হইতে পত্র দিতেছি, তুমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিবে না। তোমার প্রেমাবেগপূর্ণ পত্র যথাসময়ে পাইয়াছিলাম। আমার সেই হৃদয়ের নিধিকে সযতনে বাক্সে বন্ধ করে রেখেছিলাম। তিন দিন ছিল। তারপর চুরি যায়। তাহার পর বাড়িতে হৈ-হৈ পড়ে যায়। তোমার সুধামাখা লিপিখানিতে ঘোড়া, পৃথ্বীরাজ আর পালাবার কথা ছিল কিনা, সেই হোলো কাল। বাবা বললেন, ভ্যালা পাপ তো, এটারও মাথা খেয়েছে। স্থির হোলো, আমি গিয়ে মামার বাড়ি থাকব। এখানে দুকোশের মধ্যে পোষ্টাপিস নেই আর কড়া পাহারা। আমার কাগজ কালি কলম টিকিট সব কেড়ে নিয়ে একবস্থা করে এই দ্বীপান্তরে দিয়েছেন। সবাই বলে, তবে অমন ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে গেলেন কেন বাপু? আমি মনে মনে বলি, তোমরা সে যে কি ধন কি করে জানবে? হায় নাথ, এই পাঁচ মাস তেরো দিন যে কি নরকযন্ত্রণা ভোগ করছি, কে সেই অন্তরের গৃঢ় মর্ম্মবেদনা বুঝিবে; তোমার জন্যে প্রাণ সর্ব্বদাই হু-হু করিতে থাকে। শেষকালে আজ পাঁচ মাস তেরো দিন পরে আমার মামাতো বোন শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে দেখে তাহার হাতে পায়ে ধরে এই চিঠিখানা ফেলে দিতে বললাম। তার মত ধরাধামে আজ সুখী কে? আমারও ইচ্ছে হচ্ছে, আজ লজ্জা-সরম মান-অপমান জলাঞ্জলি দিয়ে তোমার কাছে ছুটে যাই! নারীর হৃদয় তুমি কি বুঝিবে সখে?

বাবা নূতন বছরে কোন খেতাব পান নি বলে তোমার ওপর ভারি চ’টে আছেন। বার্থ ডে লিষ্টের আশায় আশায় আছেন। এই ঝোঁকই হয়েছে কাল, কি যে লাভ এতে এই সবের জন্যে সাহেবদের এবার একটা মস্ত ভোজ দেবেন ইংরিজী মাসের তেরো তারিখে, শনিবার। খুব ঘটা হবে। আমায় শুনছি দিনকতকের জন্যে সেই উপলক্ষে নিয়ে যাবেন। অহো, এইটে যদি আমার স্বয়ম্বর-সভা হোত, আর পৃথ্বীরাজের মত বাবা তোমায় একটা মূর্ত্তি গড়ে দারোয়ান করে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতেন, আর অমনি আমি মালা নিয়ে সভার আর কারোর দিকে না চেয়ে সটাং গিয়ে তোমার মূর্ত্তির গলায় মালা দিয়ে দিতাম আর অমনি হৈ-হৈ পড়ে যেত, আর তুমি হঠাৎ কোথা থেকে এসে আমায় ঘোড়ায় তুলে নিয়ে পালাতে। আজকাল ঘোড়ার চেয়ে মটরে ঢের সুবিধে। না বাপু, তোমায় এসব লিখতে সাহস হয় না। একটা কাণ্ড করে বসবে আবার। তবে বড় দেখতে ইচ্ছে করে। এক বার কি এখানে আসতে পারবে না? আমি সেই দিন আমাদের পশ্চিম দিকের খিড়কির দরজার কাছে রাত সাড়ে সাতটার সময় দাঁড়িয়ে থাকব। অন্ধকার রাত্রি। বাড়ির আর সবাই তামাসা দেখবে, আমি একটা ছুতো ক’রে ওই দিকে সরে পড়ব। দোহাই তোমার, একবার এসো, শুধু একবারটি। এসো, এসো, এসো, এই তিন বার বলছি। আবার তো সবাই আমায় এই বনবাসে দেবেই।

তুমি চিঠির গোড়ায় শত সহস্র যে জিনিসের কথা লিখেছিলে তা আমারও ইচ্ছে হয়, কিন্তু লিখতে বড় লজ্জা করে, যাও। যদি আস তো যত চাও দোব। কেউ যেন টের না পায়। আমার কোটি কোটি প্রণাম নিও। এখন তবে ৮০

                                                                                                  ইতি তোমার চরণের জন্মজন্মের দাসী

                                                                                                            শ্রীমতী অমলাবালা দেবী’

রসিক অনেকক্ষণ মৌনভাবে কি চিন্তা করিতে লাগিল, তাহার পর অকস্মাৎ প্রশ্ন করিল, আজ ক তারিখ রে?

মাখন হিসাব করিয়া বলিল, তরশু মাইনে দিয়েছি — সাত তারিখে; আট, নয়, আজ দশ তারিখ।

রসিক আরও নিবিষ্ট মনে খানিকটা ভাবিল, তাহার পর বলিল, ও মেয়েমানুষ, কি বুঝবে? ঘোড়া হলে খুব মানাত, খটাখট খটাখট করে দুজনে এক ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটেছি — সে এক দেখতেই।

আর একটু পরে বলিল, মোটর চালাতেও আমার খুব অভ্যেস হয়ে গেছে — শ্বশুরবাড়িতে ওই কাজই করতাম কিনা সমস্ত দিন। মোটরের কথা তোর আমার মাথায়ই ঢোকে নি; বউ মেয়েমানুষ হলেও কি রকম বুদ্ধি দেখেছিস?

দুইটি হাঁটুর উপর থুঁতনিটা চাপিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। তাহার পর হঠাৎ উৎসাহভরে দাঁড়াইয়া উঠিয়া বলিল, হয়েছে রে, যাব; একটা অ্যায়সা মতলব এঁটেছি। তোকে বলব ’খন — কাল বিকেলে — সেইখানে।

তেরো তারিখের সন্ধ্যা উতরাইয়া গিয়া বেশ গা-ঢাকা-গোছের অন্ধকার হইয়াছে। সাঙ্কেতিক পশ্চিম-দরজার কাছে গিয়া রসিক দাঁড়াইল। সমস্ত লোক উৎসবের দিকে, এদিকটায় একেবারে কেহ নাই।

দরজা খুলিয়া রঙিন কাপড় পরা একটি কিশোরী মূর্ত্তি উঁকি মারিয়া আবার দরজাটা একটু ভেজাইয়া দিল। রসিক আরও খানিক অগ্রসর হইয়া বলিল, এস, এসেছি।

কিশোরী বাহির হইয়া আসিল। চোখোচোখি হইতেই রসিক হাসিয়া ফেলিল। মেয়েটি কিন্তু চোখ নত করিল এবং একটু পরে তাহার বুকটা ফুলিয়া ফুলিয়া উঠিতে লাগিল ও চাপা কান্নার আওয়াজ হইতে লাগিল।

রসিক বলিল, তবে চললাম; এইজন্যে আমি মেয়েমানুষকে দুচক্ষে দেখতে পারি না।

মেয়েটি ফোঁপানোর মধ্যে বলিল, কি বলছ?

মামার বাড়ি বড়, না শ্বশুরবাড়ি বড়?

শ্বশুরবাড়ি।

তা হ’লে এগিয়ে এস। মোটর ঠিক করে রেখেছি। ড্রাইভার বেটা তামাশা দেখছে। দেরি করো না, ভেস্তে যাবে।

মেয়েটি এইবার ভীতভাবে মুখের দিকে চাহিয়া দাঁড়াইয়া রহিল।

রসিক কোমর হইতে একটা ঝকঝকে ছোরা বাহির করিল, বলিল, তা হলে এই দেখ, তোমার সামনে নিজের বুকে আমূল বসিয়ে দেব। আর ভূত হয়ে ওদিক গিয়ে একটা এসপার কি ওসপার করে ছাড়ব।

বধূটি ভয়মুগ্ধভাবে চাহিয়া পা বাড়াইল। রসিক তাহার হাতটা ধরিলে দুইজনে খুব সন্তর্পণে মোটরে আসিয়া উঠিল, এবং এতক্ষণ পরে বধূকে একটা চুম্বন করিয়া মোটর ছাড়িয়া দিল। বলিল, ভয়, নেই, আমায় জড়িয়ে ব’স।

যেখানে উৎসব হইতেছিল, তাহার সামনে দিয়াই রাস্তা। রসিক গলা বাড়াইয়া চেঁচাইয়া বলিল, চললাম নিয়ে।

প্রথমটা সবাই হতভম্ব হইয়া গেল। পরমুহুর্ত্তে হৈ-হৈ পড়িয়া গেল। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব লক্ষ্য করিয়া দেখিয়া বলিয়া উঠিল, Oh my! — it’s my car running away! (সৰ্ব্বনাশ, এ যে দেখছি আমার গাড়ি ছুটে চলেছে!)

‘ধর ধর’ ‘সাজ সাজ রব পড়িয়া গেল। দুই-তিনটা ঘোড়া একখানা মোটরকার আর লোকের পাল ছুটিল, কিন্তু রসিককে তখন আর পায় কে? ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ মাইলের রাস্তা একদমে পার হইয়া একেবারে বাড়ির দরজার সামনে আসিয়া দাঁড়াইল এবং নিজে বাড়ির মধ্যে হনহন করিয়া ঢুকিয়া একটা ঘরে খিল দিয়া ভিতর হইতে বলিল, ওই এনে দিয়েছি সদর-দোরে, দেখগে সব।

Leave a Reply