এ মোর অহঙ্কার

নাই বা পেলাম আমার গলায় তোমার গলার হার, তোমায় আমি করব সৃজন, এ মোর অহঙ্কার! এমনি চোখের দৃষ্টি দিয়া তোমায় যারা দেখল প্রিয়া, তাদের কাছে তুমি তুমিই। আমার স্বপনে তুমি নিখিল রূপের রাণী মানস-আসনে!– সবাইContinue Reading

তুমি মোরে ভুলিয়াছ

তুমি মোরে ভুলিয়াছ তাই সত্য হোক! – সেদিন যে জ্বলেছিল দীপালি-আলোক তোমার দেউল জুড়ি – ভুল তাহা ভুল! সেদিন ফুটিয়াছিল ভুল করে ফুল তোমার অঙ্গনে প্রিয়! সেদিন সন্ধ্যায় ভুলে পেরেছিলে ফুল নোটন-খোঁপায়!    ভুল করেContinue Reading

হিংসাতুর

হিংসাই শুধু দেখেছ এ চোখে? দেখ নাই আর কিছু? সম্মুখে শুধু রহিলে তাকায়ে, চেয়ে দেখিলে না পিছু! সম্মুখ হতে আঘাত হানিয়া চলে গেল যে-পথিক তার আঘাতেরই ব্যথা বুকে ধরে জাগ আজও অনিমিখ? তুমি বুঝিলে না,Continue Reading

বর্ষা-বিদায়

  ওগো বাদলের পরি! যাবে কোন দূরে, ঘাটে বাঁধা তব কেতকী পাতার তরি! ওগো ও ক্ষণিকা, পুব-অভিসার ফুরাল কি আজি তব? পহিল ভাদরে পড়িয়াছে মনে কোন দেশ অভিনব?    তোমার কপোল-পরশ না পেয়ে পাণ্ডুর কেয়া-রেণু, তোমারেContinue Reading

সাজিয়াছি বর মৃত্যুর উৎসবে

দেখা দিলে রাঙা মৃত্যুর রূপে এতদিনের কি গো রাণী? মিলন-গোধূলি-লগনে শুনালে চির-বিদায়ের বাণী। যে ধূলিতে ফুল ঝরায় পবন রচিলে সেথায় বাসর-শয়ন, বারেক কপোলে রাখিয়া কপোল, ললাটে কাঁকন হানি, দিলে মোর পরে সকরুণ করে কৃষ্ণ কাফনContinue Reading

আড়াল

আমি কি আড়াল করিয়া রেখেছি তব বন্ধুর মুখ? না জানিয়া আমি না জানি কতই দিয়াছি তোমায় দুখ। তোমার কাননে দখিনা পবন এনেছিল ফুল পূজা-আয়োজন, আমি এনু ঝড় বিধাতার ভুল–ভণ্ডুল করি সব, আমার অশ্রু-মেঘে ভেসে গেলContinue Reading

নদীপারের মেয়ে

নদীপারের মেয়ে! ভাসাই আমার গানের কমল তোমার পানে চেয়ে। আলতা-রাঙা পা দুখানি ছুপিয়ে নদী-জলে ঘাটে বসে চেয়ে আছ আঁধার অস্তাচলে। নিরুদ্দেশে ভাসিয়ে-দেওয়া আমার কমলখানি ছোঁয় কি গিয়ে নিত্য সাঁঝে তোমার চরণ, রাণী? নদীপারের মেয়ে! গানেরContinue Reading

১৪০০ সাল

(কবি-সম্রাট রবীন্দ্রনাথের ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে’ পড়িয়া) আজি হতে শত বর্ষ আগে কে কবি, স্মরণ তুমি করেছিলে আমাদেরে শত অনুরাগে, আজি হতে শত বর্ষ আগে! ধেয়ানী গো, রহস্য-দুলাল! উতারি ঘোমটাখানি তোমার আঁখির আগে কবে এলContinue Reading

চক্রবাক

এপার ওপার জুড়িয়া অন্ধকার মধ্যে অকূল রহস্য-পারাবার, তারি এই কূলে নিশি নিশি কাঁদে জাগি চক্রবাক সে চক্রবাকীর লাগি। ভুলে যাওয়া কোন জন্মান্তর পারে কোন সুখ-দিনে এই সে নদীর ধারে পেয়েছিল তারে সারা দিবসের সাথী, তারপরContinue Reading

কুহেলিকা

তোমরা আমায় দেখতে কি পাও আমার গানের নদী-পারে? নিত্য কথার কুহেলিকায় আড়াল করি আপনারে। সবাই যখন মত্ত হেথায় পান করে মোর সুরের সুরা, সব-চেয়ে মোর আপন যে জন সে-ই কাঁদে গো তৃষ্ণাতুরা। আমার বাদল-মেঘের জলেContinue Reading

সন্ধ্যা

−সাতশো বছর ধরি পূর্ব-তোরণ-দুয়ারে চাহিয়া জাগিতেছি শর্বরী। লজ্জায় রাঙা ডুবিল যে রবি আমাদের ভীরুতায়, সে মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত করি যুগে যুগে হায়! মোদের রুধিরে রাঙাইয়া তুলি মৃত্যুরে নিশিদিন, শুধিতেছি মোরা পলে পলে ভীরু পিতা-পিতামহ-ঋণ! লক্ষ্মী! ওগোContinue Reading

আমি গাই তারি গান

আমি গাই তারি গান– দৃপ্ত-দম্ভে যে-যৌবন আজ ধরি অসি খরশান হইল বাহির অসম্ভবের অভিযানে দিকে দিকে। লক্ষ যুগের প্রাচীন মমির পিরামিডে গেল লিখে তাদের ভাঙার ইতিহাস-লেখা। যাহাদের নিশ্বাসে জীর্ণ পুথির শুষ্ক পত্র উড়ে গেল একContinue Reading

জীবন-বন্দনা

গাহি তাহাদের গান– ধরণীর হাতে দিল যারা আনি ফসলের ফরমান। শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে ত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফলে। বন্য-শ্বাপদ-সংকুল জরা-মৃত্যু-ভীষণা ধরা যাদের শাসনে হল সুন্দর কুসুমিতা মনোহরা। যারা বর্বর হেথা বাঁধেContinue Reading

ভোরের পাখি

ওরে ও ভোরের পাখি! আমি চলিলাম তোদের কণ্ঠে আমার কণ্ঠ রাখি। তোদের কিশোর তরুণ গলার সতেজ দৃপ্ত সুরে বাঁধিলাম বীণা, নিলাম সে সুর আমার কণ্ঠে পুরে। উপলে নুড়িতে চুড়ে-কিঙ্কিণী বাজায়ে তোদের নদী যে গান গাহিয়াContinue Reading

কালবৈশাখী

১ বারেবারে যথা কালবৈশাখী ব্যর্থ হল রে পুব-হাওয়ায়, দধীচি-হাড়ের বজ্র-বহ্নি বারেবারে যথা নিভিয়া যায়, কে পাগল সেথা যাস হাঁকি– ‘বৈশাখী কালবৈশাখী!’ হেথা বৈশাখী-জ্বালা আছে শুধু, নাই বৈশাখী-ঝড় হেথায়। সে জ্বালায় শুধু নিজে পুড়ে মরি, পোড়াতেContinue Reading

নগদ কথা

দুন্দুভি তোর বাজল অনেক অনেক শঙ্খ ঘণ্টা কাঁসর, মুখস্থ তোর মন্ত্ররোলে মুখর আজি পূজার আসর,− কুম্ভকর্ণ দেবতা ঠাকুর জাগবে কখন সেই ভরসায় যুদ্ধভূমি ত্যাগ করে সব ধন্না দিলি দেব-দরজায়। দেবতা-ঠাকুর স্বর্গবাসী নাক ডাকিয়া ঘুমান সুখে,Continue Reading

জাগরণ

জেগে যারা ঘুমিয়ে আছে তাদের দ্বারে আসি ওরে পাগল, আর কতদিন বাজাবি তোর বাঁশি! ঘুমায় যারা মখমলের ঐ কোমল শয়ন পাতি অনেক আগেই ভোর হয়েছে তাদের দুখের রাতি। আরাম-সুখের নিদ্রা তাদের; তোর এ জাগার গানContinue Reading

জীবন

জাগরণের লাগল ছোঁয়াচ মাঠে মাঠে তেপান্তরে, এমন বাদল ব্যর্থ হবে তন্দ্রাকাতর কাহার ঘরে? তড়িৎ ত্বরা দেয় ইশারা, বজ্র হেঁকে যায় দরজায়, জাগে আকাশ, জাগে ধরা−ধরার মানুষ কে সে ঘুমায়? মাটির নীচে পায়ের তলায় সেদিন যারাContinue Reading

যৌবন

−ওরে ও শীর্ণা নদী, দু-তীরে নিরাশা-বালুচর লয়ে জাগিবি কি নিরবধি? নব-যৌবনজলতরঙ্গ-জোয়ারে কি দুলিবি না? নাচিবে জোয়ারে পদ্মা গঙ্গা, তুই রবি চির-ক্ষীণা? ভরা ভাদরের বরিষন এসে বারে বারে তোর কূলে জানাবে রে তোরে সজল মিনতি, তুইContinue Reading

যৌবন জল তরঙ্গ

এই যৌবনজলতরঙ্গ রোধিবি কি দিয়া বালির বাঁধ? কে রোধিবি এই জোয়ারের টান গগনে যখন উঠেছে চাঁদ? যে সিন্ধু-জলে ডাকিয়াছে বান–তাহারি তরে এ চন্দ্রোদয়, বাঁধ বেঁধে থির আছে নালা ডোবা, চাঁদের উদয় তাদের নয়! যে বানContinue Reading