প্রথম পরিচ্ছেদ : প্রথম বৎসর
হরিদ্রাগ্রামের বাড়ীতে সংবাদ আসিল, গোবিন্দলাল, মাতা প্রভৃতি সঙ্গে নির্বিঘ্নে সুস্থ শরীরে কাশীধামে পৌঁছিয়াছেন। ভ্রমরের কাছে কোন পত্র আসিল না। অভিমানে ভ্রমরও পত্র লিখিল না। পত্রাদি আমলাবর্গের কাছে আসিতে লাগিল। এক মাস গেল, দুই মাস গেল।Continue Reading
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
ভ্রমর রুগ্নশয্যাশায়িনী শুনিয়া ভ্রমরের পিতা ভ্রমরকে দেখিতে আসিলেন। ভ্রমরের পিতার পরিচয় সবিশেষ দিই নাই–এখন দিব। তাঁহার পিতা মাধবীনাথ সরকারের বয়স একচত্বারিংশৎ বৎসর। তিনি দেখিতে বড় সুপুরুষ। তাঁহার চরিত্র সম্বন্ধে লোকমধ্যে বড় মতভেদ ছিল। অনেকে তাঁহারContinue Reading
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
মাধবীনাথ কন্যার দুর্দশা দেখিয়া স্থির প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন যে, ইহার প্রতীকার করিবেন। গোবিন্দলাল ও রোহিণী এই অনিষ্টের মূল। অতএব প্রথমেই সন্ধান কর্তব্য, সেই পামর পামরী কোথায় আছে। নচেৎ দুষ্টের দণ্ড হইবে না–ভ্রমরও মরিবে। তাহারা একেবারে লুকাইয়াছে।Continue Reading
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
মাধবীনাথ হাসিতে হাসিতে ফিরিয়া আসিলেন। মাধবীনাথ, গোবিন্দলাল ও রোহিনীর অধ:পতনকাহিনী সকলই লোকপরম্পরায় শুনিয়াছিলেন। তিনি মনে মনে স্থিরসিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন যে, রোহিণী গোবিন্দলাল এক স্থানেই গোপনে বাস করিতেছে। ব্রহ্মানন্দের অবস্থাও তিনি সবিশেষ অবগত ছিলেন–জানিতেন যে,রোহিনী ভিন্ন তাঁহারContinue Reading
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
দেখো, ধীরে ধীরে শীর্ণশরীরা চিত্রানদী বহিতেছে–তীরে অশ্বত্থ কদম্ব আম্র খর্জুর প্রভৃতি অসংখ্য বৃক্ষশোভিত উপবনে কোকিল দোয়েল পাপিয়া ডাকিতেছে। নিকটে গ্রাম নাই; প্রসাদপুর নামে একটি ক্ষুদ্র বাজার প্রায় এক ক্রোশ পথ দূর। এখানে মনুষ্যসমাগম নাই দেখিয়া,Continue Reading
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
দ্বিতল অট্টালিকার উপরতলে রোহিণীর বাস–তিনি হাপ পরদানসীন। নিম্নতলে ভৃত্যগণ বাস করে। সে বিজনমধ্যে প্রায় কেহই কখনও গোবিন্দলালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসিত না–সুতরাং সেখানে বহির্বটীর প্রয়োজন ছিল না। যদি কালে ভদ্রে কোন দোকানদার বা অপর কেহContinue Reading
সপ্তম পরিচ্ছেদ
যখন নিশাকর আসিয়া বড় হলে বসিল, রোহিণীকে সুতরাং পাশের কামরায় প্রবেশ করিতে হইয়াছিল। কিন্তু নয়নের অন্তরাল হইল মাত্র–শ্রবণের নহে। কথোপকথন যাহা হইল–সকলই কাণ পাতিয়া শুনিল। বরং দ্বারের পরদাটি একটু সরাইয়া, নিশাকরকে দেখিতে লাগিল। নিশাকরও দেখিলContinue Reading
অষ্টম পরিচ্ছেদ
রূপো সরিয়া গেলে নিশাকর সোণাকে ডাকিয়া বলিলেন, “তোমরা বাবুর কাছে কত দিন আছ?” সো। এই–যত দিন এখানে এসেছেন তত দিন আছি। নি। তবে অল্পদিনই? পাও কি? সো। তিন টাকা মাহিয়ানা, খোরাক পোষাক। নি। এত অল্পContinue Reading
নবম পরিচ্ছেদ
গৃহে ফিরিয়া আসিয়া গোবিন্দলাল ভৃত্যবর্গকে নিষেধ করিলেন, “কেহ উপরে আসিও না।” ওস্তাদজী বাসায় গিয়াছিল। গোবিন্দলাল রোহিণীকে লইয়া গিয়া নিভৃতে শয়নকক্ষে প্রবেশ করিয়া দ্বার রুদ্ধ করিলেন। রোহিণী, সম্মুখে নদীস্রোতোবিকম্পিতা বেতসীর ন্যায় দাঁড়াইয়া কাঁপিতে লাগিল। গোবিন্দলাল মৃদুস্বরেContinue Reading
দশম পরিচ্ছেদ : দ্বিতীয় বৎসর
সেই রাত্রেই চৌকিদার থানায় গিয়া সংবাদ দিল যে, প্রসাদপুরের কুঠিতে খুন হইয়াছে। সৌভাগ্যবশতঃ থানা সে স্থান হইতে ছয় ক্রোশ ব্যবধান। দারোগা আসিতে পরদিন বেলা প্রহরেক হইল। আসিয়া তিনি খুনের তদারকে প্রবৃত্ত হইলেন। রীতিমত সুরতহাল ওContinue Reading
একাদশ পরিচ্ছেদ : তৃতীয় বৎসর
ভ্রমর মরে নাই। কেন মরিল না, তাহা জানি না। এ সংসারে বিশেষ দুঃখ এই যে, মরিবার উপযুক্ত সময়ে কেহ মরে না। অসময়ে সবাই মরে। ভ্রমর যে মরিল না, বুঝি ইহাই তাহার কারণ। যাহাই হউক, ভ্রমরContinue Reading
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : পঞ্চম বৎসর
ভ্রমর আবার শ্বশুরালয়ে গেল। যদি স্বামী আসে, নিত্য প্রতীক্ষা করিতে লাগিল। কিন্তু স্বামী ত আসিল না। দিন গেল, মাস গেল–স্বামী ত আসিল না। কোন সংবাদও আসিল না। এইরূপে তৃতীয় বৎসরও কাটিয়া গেল।গোবিন্দলাল আসিল না।তার পরContinue Reading
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ : ষষ্ঠ বৎসর
মাধবীনাথ আসিয়া ভ্রমরকে সংবাদ দিলেন, গোবিন্দলাল খালাস হইয়াছে, কিন্তু বাড়ী আসিল না, কোথায় চলিয়া গেল, সন্ধান পাওয়া গেল না। মাধবীনাথ সরিয়া গেলে ভ্রমর অনেক কাঁদিল, কি জন্য কাঁদিল, তাহা বলিতে পারি না। এ দিকে গোবিন্দলালContinue Reading
চতুর্দশ পরিচ্ছেদ : সপ্তম বৎসর
বাস্তবিক ভ্রমরের দিন ফুরাইয়া আসিয়াছিল। অনেক দিন হইতে ভ্রমরের সাংঘাতিক পীড়া চিকিৎসায় উপশমিত ছিল। কিন্তু রোগ আর বড় চিকিৎসা মানিল না। এখন ভ্রমর দিন দিন ক্ষয় হইতে লাগিলেন। অগ্রহায়ণ মাসে ভ্রমর শয্যাশায়িনী হইলেন, আর শয্যাত্যাগContinue Reading
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ
ভ্রমর মরিয়া গেল। যথারীতি তাহার সৎকার হইল। সৎকার করিয়া আসিয়া গোবিন্দলাল গৃহে বসিলেন। গৃহে প্রত্যাবর্তন করিয়া অবধি, তিনি কাহারও সহিত কথা কহেন নাই। আবার রজনী পোহাইল। ভ্রমরের মৃত্যুর পরদিন, যেমন সূর্য প্রত্যহ উঠিয়া থাকে, তেমনিContinue Reading
পরিশিষ্ট
গোবিন্দলালের সম্পত্তি তাঁহার ভাগিনেয় শচীকান্ত প্রাপ্ত হইল। শচীকান্ত বয়ঃপ্রাপ্ত। শচীকান্ত প্রত্যহ সেই ভ্রষ্টশোভ কাননে–যেখানে আগে গোবিন্দলালের প্রমোদোদ্যান ছিল–এখন নিবিড় জঙ্গল–সেইখানে বেড়াইতে আসিত। শচীকান্ত সেই দুঃখময়ী কাহিনী সবিস্তারে শুনিয়াছিল। প্রত্যহ সেইখানে বেড়াইতে আসিত, এবং সেইখানে বসিয়াContinue Reading