চন্দন
ভোর চারটের সময় সূর্যদেব ঘুম থেকে ওঠেননি। তারার আলো আর জোছনায় ধুয়ে যাচ্ছে রূপনারায়ণের জল। এত ভোরেও অনেক মানুষ স্নান সারছেন স্টিমারঘাটে। অধিকাংশই বয়স্ক এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। চন্দনের মতো উনিশ বছরের ছেলে একজনও নেই।
রূপনারায়ণে এখন ভাঁটা। জলে টান নেই। সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে জল তেমন ঠান্ডাও নয়। গুপগুপ করে গোটাকয় ডুব দিয়ে নদীর পাড়ে বসল চন্দন। তার মা পারুল নতুন সাবান দিয়ে বলেছেন ভালো করে মাখতে। ধুঁধুলের ছোবড়াও দিয়েছেন গা ঘষার জন্য।
শুকনো গামছা ঘাটে রেখে সিঁড়িতে বসল চন্দন। মোড়ক খুলে সবুজ রঙের সাবান গায়ে ঘষতে লেবু লেবু গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। আহ! কী আরাম!
বাড়িতে বরাবর হাফপ্যান্ট পরে থাকে চন্দন। স্যামিলটন হাই স্কুলে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত হাফপ্যান্ট পরেছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হাফপ্যান্ট পরে দিয়েছে। জয়েন্ট এনট্রান্স পরীক্ষাও।
জয়েন্ট এনট্রান্স পরীক্ষার দিন সকালে প্রথমবার ফুলপ্যান্ট পরে চন্দন। কুঁচকির কাছে সুড়সুড়ি লাগছিল। জয়েন্ট এনট্রান্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার দিন পোশাক নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যাবে না। আবার হাফপ্যান্ট গলিয়েছিল সে।
ভাগ্যিস গলিয়েছিল! সুড়সুড়ি নিয়ে পরীক্ষা দিলে মেডিক্যালের মেরিট লিস্টে তার পঁচানব্বই র্যঙ্ক হতো? উচ্চ মাধ্যমিকে ফার্স্ট হতো সে?
পরীক্ষার পর থেকে ফুলপ্যান্ট পরা অভ্যাস করছে চন্দন। এখন ব্যাপারটা সড়োগড়ো হয়ে গেছে। তবে জাঙিয়া পরতে অসুবিধে হয়। প্যান্টের নীচে ঢলঢলে পপলিনের আন্ডারউইয়্যার বা হাফপ্যান্ট পরে চালিয়ে দেয়। কিন্তু কলকাতার হোস্টেলে ওই সব পরলে গাঁইয়া বলবে। ওখানে হাল ফ্যাশানি জিনিস পরতে হবে।
মাঠে হাল চালিয়ে, বীজ ছড়িয়ে, শ্যালোর জলে চান করে, টিউব ওয়েলের হ্যান্ডেল টিপে টিপে চন্দনের চেহারাটি হয়েছে ছোট ভীমের মতো। সাড়ে পাঁচফুট হাইট। হাত, পা ও বুকের পেশি গুলিগুলি। বুক ভরতি বাড়াবাড়ি রকমের লোম। মাথায় ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল। গোঁফদাড়ি গজানোর পরে তার বাবা পবন সরকার প্রথমবার দাড়ি কামিয়ে দিয়েছিলেন। তবে গোঁফটা রেখে দিয়েছিলেন। সেই গোঁফ এখনও রয়ে গেছে। রোদ্দুরে কাজ করে করে চন্দনের গায়ের রং কুচকুচে কালো। পারুল অপত্য স্নেহে বলেন, ‘কেষ্ট ঠাকুর!’
ধুঁধুল দিয়ে হাত, পা, বুক, মুখ, বগল ঘষে জলে ঝাঁপ দেয় চন্দন। পবন বলে দিয়েছেন, সাতটার মেচেদা লোকাল ধরবেন। তার জন্য বাড়ি থেকে ছ’টায় বেরোতে হবে। তার আগে বর্গভীমার মন্দিরে পুজো আছে। তমলুকের স্টিমারঘাটে দাঁড়িয়ে গামছা দিয়ে গা ঘষতে থাকে চন্দন।
যিশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় দু’হাজার বছর আগে থেকে নানা গ্রন্থে তমলুকের উল্লেখ পাওয়া যায়। নানান নামে। যেমন তাম্রলিপ্ত, তাম্রলিপ্তি, তামালিপ্ত, তমোলিপ্ত, দামলিপ্ত। প্রাচীন তমলুকের নাম সম্ভবত দামলিপ্ত। অতীতে বাংলাদেশে দ্রাবিড় জাতির প্রাধান্য ছিল। দ্রাবিড়, তামিল, তামল বা দামলদের আবাস স্থল হিসেবে এই নাম। পরে আর্যরা এই অনার্য এলাকায় নিজেদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করে নতুন নাম দেয় তাম্রলিপ্ত। এখানে বিশাল বন্দর ছিল। জাহাজ তৈরি হতো।
এই যে স্টিমারঘাট, এখানেই কি ছিল তাম্রলিপ্ত বন্দর? যেখান থেকে বাংলার ছেলে বিজয় সিংহ লঙ্কা জয় করেছিলেন? চন্দন জানে না। সে শুধু জানে, তমলুক থানার অন্তর্গত নতুনগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নিরুপদ্রব জীবনযাপন ছেড়ে সে কলকাতার জনসমুদ্রে ঝাঁপাতে যাচ্ছে। অস্ত্র বলতে মেধা। আর কিছু নেই।
পারবে না সে? ওই শহরকে জিতে নিতে?
সূর্যদেব মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিয়েছেন। ঘাটে স্নানার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। ভিজে গামছা কোমরে জড়িয়ে, লেবু সাবানে হাতে নিয়ে চন্দন দৌড় লাগায়। তার বাবা-মা, পবন আর পারুল বর্গভীমার মন্দিরের সামনে অপেক্ষা করছেন।
পবন হাওড়া কোর্টের করণিক। প্রতিদিন ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে নতুন গ্রাম থেকে বাস ধরে মেচেদা স্টেশন যান। সেখান থেকে ভিড়ে ঠাসা লোকাল ট্রেন ধরে হাওড়া স্টেশন। মিনিট দশেকের হাঁটাপথে হাওড়া কোর্ট।
কোর্টে চাকরি করার সুবিধে হল, লম্বা লম্বা ছুটি পাওয়া যায়। সেই সময়ে প্যান্টশার্ট পরা কোর্টের ক্লার্ক পবনবাবু হেটোধুতি পরা পবনচাষি হয়ে যান। চন্দনকে নিয়ে আগাছা নিড়ানো, জমি তৈরি করা, শ্যালোর জল দেওয়া, এনড্রিন মারা চলতে থাকে।
পবনের বাড়িটি বেশ। মেচেদা-নতুনগ্রাম সড়কের ওপরে, বিজয় মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডের উল্টোদিকে, চৌমাথার বাসস্ট্যান্ড থেকে মিনিট পাঁচেক হেঁটে গেলেই ‘আবাসবাড়ি’। হ্যাঁ, পবনের বাড়ির এটাই নাম। এইরকম কাব্যি করা নামের গোপন রহস্য হল, পবন অ্যামেচার সাংবাদিকতা করেন। স্যামিলটন হাইস্কুলের মাস্টারমশাই গোপাল নস্কর তাঁর ছোটবেলার বন্ধু। মাস্টারির পাশাপাশি গোপাল একটা সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। চারপাতার কাগজের নাম ‘বেলাকূল’। সেই কাগজের অবৈতনিক এবং আন-অফিশিয়াল সম্পাদক হলেন পবন। নিয়মিত খবর লেখা ছাড়াও বিজ্ঞাপন জোগাড় করা, ডিটিপি করা, ছবি বাছা, পাতা সাজানো, প্রেসকে ম্যাটার পাঠানো, প্রেস থেকে কাগজ আনা, জেলার দশটা পয়েন্টে কাগজ ডিসট্রিবিউশানের ব্যবস্থা করা—সবটাই পবন দেখেন।
বেলাকূলের জন্যে পবন প্রচুর সময় দেন। লেখেন অনেক। পড়েন তারও বেশি। বাংলা ও ইংরিজি সংবাদপত্র পড়ে তার থেকে আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও রাজ্যের খবর বেছে নিয়ে স্থানীয় রুচি অনুযায়ী সাজাতে হয়। জেলার খবর বড় করে দেওয়া বাধ্যতামূলক। উচ্চমাধ্যমিকে চন্দন ফার্স্ট হওয়ার পরে সেই খবর গত সংখ্যার বেলাকূলের প্রথম পাতায় ছবিসহ ছাপা হয়েছে। কাগজটার সার্কুলেশান এক হাজার থেকে বারোশোর মধ্যে থাকে। গত সংখ্যাটি রিপ্রিন্ট করতে হয়েছে।
এডিটোরিয়াল পলিসি ঠিক করা আর সম্পাদকীয় লেখা ছাড়া গোপাল কাগজের জন্যে আর কিছু করার সময় পান না। শিক্ষকতার বাইরে অতিবাম রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ইন্ডিয়ান পিপলস পার্টি নামের একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠনের তিনি রাজ্য সেক্রেটারি। এদিকে পবন সরকারপন্থী জনমোর্চা পার্টির গণ সংগঠনে চাঁদা দেন। নিয়মিত মিছিল মিটিংয়ে যান। মুখ্যমন্ত্রী সন্দীপ সামন্ত বনধ ডাকলে কোর্টে না গিয়ে বাড়িতে চাষের কাজ করেন। বিরোধী নেতা মৃন্ময় চ্যাটার্জি বনধ ডাকলে কোর্টে যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও তড়বড় করে মেচেদা লোকালে ওঠেন।
গোপালের ধাঁচ অন্য। সম্পাদকীয়তে ‘সশস্ত্র বিপ্লব’ ছাড়া অন্য বিষয়ে আলোচনাই করবেন না। ‘কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণ’কে ধিক্কার জানাবেন না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটালিজম নিয়ে কথা বলবেন না! ঘুরে ফিরে সেই চাষিদের আত্মহত্যা, পাট্টা বিলি নিয়ে জনমোর্চার দুর্নীতি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পে দলবাজি, মুখ্যমন্ত্রী সন্দীপ সামন্তর ঔদ্ধত্য—এইসব নিয়েই লিখে যাবেন।
নতুনগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাঁজাপলাশ গ্রামে গোপালের বাড়ি। গ্রামের একপ্রান্তে, সমুদ্রের ধারে। দোতলা বাড়িটির চারিদিকে পাঁচিল ঘিরে দুর্গ বানিয়ে রেখেছেন গোপাল।
গোপাল বিয়ে করেননি। তাঁর বোন তাপসী নস্কর পেশায় সেবিকা। সে কলকাতার নার্সিংহোম শান্তিধামে চাকরি করে। ন’মাসে ছ’মাসে বাড়ি আসে। কাজেই গোপালের বাড়িতে আর কারও থাকার কথা নয়। অথচ গোপালের বাড়িতে সবসময় জনাদশেক ছেলেমেয়ে থাকে। তারা হিন্দি বা দক্ষিণ ভারতীয় কোনও একটি ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলে। বাংলা প্রায় জানেই না। তারা কারা, আন্দাজ করতে পারেন পবন। তবে কখনও এই নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করেননি।
পবনের বউ পারুলের মতো জেদি এবং একগুঁয়ে মহিলা কম দেখা যায়। করণিকবৃত্তি, চাষের কাজ ও সাংবাদিকতার নামে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর ত্রিমুখী আক্রমণের সামনে সংসারের হাল একা ধরে রেখেছেন ছোটখাটো চেহারার এই মহিলা। বাড়ির হাজারটা সমস্যা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত পারুলের সবচেয়ে বড় সমস্যার সাইজ খুব ছোট। সমস্যাটির নাম নন্দন। তাঁর বড় ছেলে।
নন্দন বামন। বাইশ বছর বয়সে তার উচ্চতা তিনফুট। হাত-পা ছোট ছোট। তুলনায় মুখটা বেঢপ বড়। চোয়াল সামনের দিকে এগোনো। বুদ্ধি অবশ্য স্বাভাবিক। দশ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনোর পরে স্যামিলটন হাইস্কুলে সহপাঠীদের অত্যাচারে সে ইশকুলে টিকতে পারেনি। নতুনগ্রামেও সে খোরাকের পাত্র।
বাঁজাপলাশ গ্রামের ঘরে ঘরে বামন। জেলে-সম্প্রদায় অধ্যুষিত গ্রামটিতে অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সোসাইটি থেকে একাধিক রিসার্চ হয়েছে শুধু এইটা জানতে, যে এই ছোট্ট গ্রামে এত বামন কেন? কিন্তু নন্দন তো আর বাঁজাপলাশ গ্রামে থাকে না! তার বাড়ি নতুনগ্রামে। এখানে সে একা। বাঁজাপলাশের বামনদের সঙ্গে সে মেশে না। পারুল মিশতে দেন না। বিজয় মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে প্রতি বছর শীতকালে সার্কাস আসে। বাঘ-সিংহর ওঠাবসা বা সিলমাছের নাকে বল ব্যালান্স করা—এই সব খেলা এখন উঠে গেছে। চোখ বেঁধে ট্রাপিজ, এক চাকার সাইকেল চালাতে চালাতে রাশিয়ান মেয়েদের কাপডিশ লোফালুফি—এই সবের খেলার মধ্যে ক্লাউনদের হট্টগোল থাকে। মুখে রং মেখে, নাকে লাল বল লাগিয়ে, মাথায় শঙ্কু আকারের টুপি চড়িয়ে, ববি প্রিন্টের পোশাক পরে তারা লোক হাসায়। সকালবেলা দেখা যায় রাশিয়ান মেয়েরা আসলে নেপালি মেয়ে। রিংমাস্টার নিমের দাঁতন দিয়ে দাঁত মাজছে। ক্লাউনরা লুঙি পরা বামন। রোদে পিঠ দিয়ে বসে বিড়ি ফুঁকছে।
এই বামনদের সঙ্গে নন্দনের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। যেভাবে একজন প্রান্তিক অন্য প্রান্তিকের সঙ্গে জোট বেঁধে ঘেটো তৈরি করে, সেভাবেই এদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। পবন এবং পারুল পুরোটাই খেয়াল করেছিলেন এবং প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। পরিণতি যা হওয়ার তাই হল। সার্কাসের মালিক আপ্পারাও একদিন পবনকে সার্কাসের গেস্ট কার্ড দিতে এসে বলল, নন্দন সার্কাসে যোগদান করতে ইচ্ছুক। পবনের মতো আছে কি?
পবন-পারুল আপত্তি করেননি। নন্দনকে মানুষ করা নিয়ে বরাবরই সংশয় ছিল। বামন, স্কুলছুট ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুজনেই গোপনে চোখের জল ফেলেছেন। এ বরং শাপে বর। পাকাপাকি রোজগারের ব্যবস্থা হল। ‘দ্য গ্রেট অলিম্পিক সার্কাসে’ নন্দন জয়েন করে গেল। আপ্পারাও বলেছে, সার্কাসে অনেক বামন মেয়ে আসে। বামনদের মধ্যে প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে, সন্তান উৎপাদন সবই হয়। সেই সব সন্তান বামন হয়, এমনটা নয়।
নন্দন সারা বছর দ্য গ্রেট অলিম্পিক সার্কাসের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। গরম আর বর্ষাকালে সার্কাস বন্ধ থাকে। তখন বাড়িতে আসে। নতুনগ্রামে এখন তার আলাদা খাতির। আবাসবাড়িতে আলাদা ঘর আছে। সেই ঘরে আছে মাপসই খাট, আলমারি, চেয়ার টেবিল। তারই উপার্জনের টাকায় সেসব কেনা হয়েছে।
নন্দন এখন নতুনগ্রামে বর্ষাকালের ছুটি কাটাতে এসেছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সেও বর্গভীমার মন্দিরে হাজির।
বর্গভীমা মন্দির সম্পর্কে বলা হয় এটি এগারোশো বছরেরও বেশি পুরনো। বিশ্বকর্মা এই মন্দিরের নির্মাণকার। বিষ্ণু যখন সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবী পার্বতীকে একান্ন টুকরো করে দিয়েছিলেন, তখন তাঁর বাম গুলফ পড়েছিল এখানে। এই মন্দির একান্ন পিঠের এক পিঠ। যার অন্য নাম বিভাস। মন্দির সংলগ্ন একটি বিশাল পুকুর আছে। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে হয় সিনেমার সেট।
সেই মন্দিরের সামনে পবন, পারুল আর নন্দন দাঁড়িয়ে রয়েছেন। চন্দন ছুটতে ছুটতে এসে বলল, ‘আমার দেরি হয়ে গেল?’
পবন কোনও কথা না বলে সিঁড়ি বেয়ে তড়বড় করে উঠে গেলেন পুরোহিতের খোঁজে। নন্দন ভাইকে বলল, ‘ভয় করছে?’
‘ভ্যাট!’ ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে পারুলের দেওয়া ফতুয়া গলিয়ে নেয় চন্দন। ভিজে হাফপ্যান্টের ওপরে পায়জামা চড়ায়। হাওয়াই চপ্পল খুলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠে।
সংক্ষিপ্ত পুজো। মিনিট দশেকের মামলা। এখানে প্রতিমাটি কালির। তারারূপিণী দেবী বর্গভীমাকে প্রণাম করে, প্রসাদ নিয়ে চারজনে বেরিয়ে এল।
‘একটা রিকশা নিয়ে নেব?’ হাতঘড়ি দেখে চিন্তিত মুখে বলেন পবন, ‘পাঁচটা বাজতে যায়।’
‘বাবুয়ানি কোরোনি কো!’ স্বামীকে মুখঝামটা দিয়ে বাজারের সংকীর্ণ রাস্তা বেয়ে চৌমাথার বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগোন পারুল। পিছন পিছন বাকি তিনজন।
আবাসবাড়ি ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে চারদিকে চোখ বোলায় চন্দন। গত চার বছর, ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত, পড়াশুনার জন্য সে আলাদা ঘর পেয়েছিল। ছোট্ট, কিন্তু নিজের। একদিকে বইয়ের তাক। তাতে সারিসারি বই রাখা রয়েছে। ক্লাস ওয়ান থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত কোনও বই সে নষ্ট করেনি। খবরের কাগজের মলাট দিয়ে বছরওয়ারি সাজিয়ে রেখেছে। ইলেভেনে ওঠার পর পড়ার চাপ বেড়ে গিয়েছিল। স্যামিলটন স্কুলের টেক্সট বইয়ের বাইরে অনেক রেফারেন্স বই পড়েছে। গোপালস্যার বাবাকে বলে দিতেন আর বাবা কলেজ স্ট্রিট থেকে কিনে আনতেন। সেই সব বই আর কাজে লাগবে না।
পরীক্ষার এক মাস আগে থেকে সে ঘড়ি ধরে টেস্ট পেপার সলভ করেছে। দিস্তে কাগজ পরীক্ষার পাতার মাপে কেটে রাখতেন পারুল। ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে, হাতমুখ ধুয়ে, দুধমুড়ি খেয়ে চন্দন টেস্ট পেপার সলভ করতে বসত। পারুল তিনঘণ্টা পরে পেপার নিয়ে নিতেন। সারাদিনে চারটে পেপার সলভ করত চন্দন। রাতে বাড়ি ফিরে খাতা দেখে নম্বর দিতেন পবন। সত্তর পার্সেন্টের কম কখনও পায়নি, পঁচাত্তর পার্সেন্টের বেশিও না। উচ্চ মাধ্যমিকে ওটাই দাঁড়িয়েছিল পঁচানব্বই পার্সেন্টে।
সেইসব সলভ করা উত্তরমালা থাকে থাকে সাজানো। মায়াভরে টেক্সট বই, খাতা, টেস্ট পেপার, রেফারেন্স বই, নোট, পেন্সিল রাখার বাক্সর ওপরে হাত বোলায় চন্দন। ফিশফিশ করে বলে, ‘সাবধানে থাকিস। কাল সন্ধেবেলাই আমি ফিরছি!’
‘ওরে, তোর হল? হুমগড়ের এক্সপ্রেস বাস সাড়ে ছ’টায় চৌমাথা পেরোয়। ওটা না পেলে লোকাল বাসে যেতে হবে। তা হলে আর মেচেদা লোকাল পাওয়া যাবে না। মেদিনীপুর লোকালে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।’ দরজা থেকে হাঁক পাড়েন নন্দন। চন্দন শুনতে পায় পবন পারুলকে বলছেন, ‘এত বড় ট্রাঙ্ক আর মুড়ির টিন নিয়ে ট্রেনে ওঠা যাবে না। টিনটা থাক!’
‘তুমি থামো তো!’ চন্দনের হাতে কাঁসার থালায় দুধ-মুড়ি এগিয়ে দিয়ে পারুল বলেন, ‘নতুন জায়গায় যাচ্ছে। খেতে পাবে কি না ঠিক নেই। তুমি উল্টো না গেয়ে রেডি হয়ে নাও।’
কালো রঙের ট্রাঙ্কটা চন্দনের জন্যেই কেনা হয়েছে। ট্রাঙ্কের গায়ে পবন সাদা তেলরং দিয়ে লিখে দিয়েছেন, ‘চন্দন সরকার। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজ।’ লেখার দু’পাশে দুটো গোলাপ ফুল আঁকা রয়েছে।
হাপুশ হুপুশ করে দুধমুড়ি খেয়ে নেয় চন্দন। টেলারিং শপ থেকে কাটিয়ে আনা নস্যিরঙা প্যান্ট আর লাল-নীল চেক শার্ট পরে। নস্যি রঙা মোজা পরে নতুন বুটে পা গলায়। এই বুট পরে দু’দিন থাকতে হবে? বিরক্ত হয়ে চন্দন বলে, ‘মা, চপ্পল দিয়েছ?’
‘তিনজোড়া শার্টপ্যান্ট, তিনজোড়া জাঙিয়া-গেঞ্জি-মোজা, দু’জোড়া পাজামা-ফতুয়া, হাপ্প্যান্ট, গামছা, গায়ের চাদর, চপ্পল—সব দেওয়া আছে। তোষক আর বালিশ তোর বাপ দিতে দিল না। বলল, শিয়ালদায় সস্তায় পাওয়া যায়। এখন তো বলছে মুড়ির টিনও নেবে না।’ হরি মন্দিরে প্রণাম করতে করতে বলেন পারুল। মায়ের দেখাদেখি চন্দনও কপাল ঠেকায়।
‘পেন্নাম করে নে। কলকাতায় হরি মন্দির পাবি না। হরি মন্দির এখানকার কালচার। কলকাতার ফ্ল্যাট বাড়িতে ঠাকুর ঘরও থাকে না।’ টিপ্পনি কাটে নন্দন।
‘চ চ! অনেক হল।’ এক হাতে ট্রাঙ্ক নিয়ে তড়িঘড়ি আবাসবাড়ি থেকে বেরোয় পবন, ‘হুমগড়ের বাস আসতে আর পাঁচ মিনিট বাকি।’
চারজনে মিলে বাড়ি থেকে বেরোয়। নতুনগ্রাম-মেচেদা সড়ক এখন ফাঁকা। রিকশা বা তিনচাকার ভ্যানের উপদ্রব শুরু হয়নি। লোকাল বাসের প্যাঁকপ্যাঁকানি শোনা যাচ্ছে না। ভোরে যারা হাঁটতে বেরোয় তারা ছাড়া জনমানব নেই। পুলিশ লাইনের ছোকরা পুলিশরা এই সময় দৌড়তে বেরোয়। তেমন একটা দল তাদের পেরিয়ে চলে গেল। নীল ট্র্যাক স্যুট আর কেডস পরা ছেলেগুলোকে দেখে চন্দনের মনে হল, ওইরকম একটা ট্র্যাক স্যুট থাকলে ভালো হতো। কলকাতায় নিশ্চয় পাওয়া যায়!
রাস্তা দিয়ে হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে একজন বললেন, ‘কীরে পবন, এত সকালে?’ চন্দন দেখল, শক্তিধর মাইতি।
চন্দন শক্তিধরকে শক্তিকাকু বলে ডাকে। উনি বিশাল বড়লোক বাড়ির ছেলে। প্রচুর জমিজমা আছে। নতুনগ্রামের সবচেয়ে বড় গয়নার শো-রুম ‘মাইতি জুয়েলার্স’-এর মালিক। ওদের পুরো পরিবার আগে ‘জাতীয়তাবাদী পার্টি’-র কট্টর সমর্থক ছিল। সম্প্রতি রাজ্যস্তরের জনপ্রিয় নেতা মৃন্ময় চ্যাটার্জি ‘জাতীয়তাবাদী পার্টি’ ছেড়ে নতুন দল গঠন করেছে। নাম ‘নবযুগ পার্টি’। শক্তিধর নিখুঁত পালটি খেয়ে নবযুগ পার্টিতে যোগদান করেছেন। পবন বলেন, ‘নবযুগ নয়, ওটা ন্যাবাযুগ পার্টি। শক্তিধরের ন্যাবা হয়েছে।’
এখন অবশ্য ওইসব কথা বলার সময় নয়। শক্তিধরের প্রশ্ন শুনে পবন বললেন, ‘ছেলেটাকে কলেজ পৌঁছতে যাচ্ছি।’
‘আজ তা হলে কোর্টে যাচ্ছিস না?’ উত্তরের আশা না করে দ্রুত হেঁটে বেরিয়ে যান শক্তিধর।
‘না। এক্কেবারে সোমবার।’ চেঁচিয়ে বলেন পবন।
বাস স্ট্যান্ডে জনাপাঁচেক যাত্রী দাঁড়িয়ে। বাক্সপ্যাঁটরা দেখে অনুমান করা যায়, এরা দূরপাল্লার যাত্রী। অফিসযাত্রীদের ভিড় শুরু হবে আরও পরে। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে পবন চা খাবার জন্য পকেট থেকে খুচরো পয়সা বার করছিলেন। পারুল বললেন, ‘বাস আসছে।’
সত্যিই তাই। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসের পাশ দিয়ে কর্কশ এয়ারহর্ন বাজাতে বাজাতে আসছে হুমগড়গামী লালরঙা বাস।
কন্ডাক্টরের সাহায্য নিয়ে পবন বাসের খোলে ট্রাঙ্ক আর মুড়ির টিন ঢোকাচ্ছেন। পারুল চন্দনকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘সাবধানে যাবি।’
‘আচ্ছা।’ নিচু হয়ে মা আর দাদাকে প্রণাম করে চন্দন। নন্দন একটা পুঁচকে মোবাইল ভাইয়ের হাতে দিয়ে বলে, ‘এটা রাখ। সিম কার্ড ভরে অ্যাক্টিভেট করা আছে।’
‘মোবাইল? নতুন?’ চোখ গোল করে চন্দন বলে, ‘কোত্থেকে পেলে?’
‘বেশি কথা বলিস না। রাখ!’ পুঁচকে কিন্তু তাগড়াই হাত দিয়ে চন্দনের পিঠ থাবড়ে দেয় নন্দন। ‘ওতে আমার আর বাবার নম্বর সেভ করা আছে।’
পবন মালপত্র রেখে সিটে বসে চ্যাঁচাচ্ছেন, ‘উঠে আয়। বাস ছাড়বে।’
পারুল আবার চন্দনকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘সাবধানে যাস। কাল বাবার সঙ্গে ফিরে আসিস।’
কোনওরকমে মায়ের বেড় থেকে নিজেকে মুক্ত করে বাসে উঠে চন্দন বলল, ‘কাল শনিবার। বাবার ছুটি।’
‘তা হলে?’ আঁতকে ওঠেন পারুল।
উত্তর দেওয়ার জন্য কেউ অপেক্ষা করে নেই। লাল রঙের বাস একগাদা যাত্রী গিলে, পিলে চমকানো হর্ন বাজাতে বাজাতে মেচেদার দিকে ছুটে যাচ্ছে। চৌরাস্তার বাস স্ট্যান্ড এখন শুনশান। বামন বড়ছেলের হাত ধরে চোখের জল মুছতে মুছতে পারুল আবাসবাড়ির দিকে হাঁটা লাগালেন।
নতুনগ্রাম থেকে মেচেদা আসতে সময় লাগল আধঘণ্টা। ট্রাঙ্ক আর মুড়ির টিন চন্দনের জিম্মায় রেখে পবন দৌড় দিয়েছেন ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য। কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন।
এমনটা নয় যে চন্দন আজ প্রথম কলকাতা যাচ্ছে। হাওড়া কোর্টে পবনের কাছে বহুবার গেছে। গঙ্গা পেরিয়ে কলকাতা গেছে বারপাঁচেক। তার মধ্যে একবার ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হওয়ার জন্য। কিন্তু কলকাতায় কখনও একা রাত কাটায়নি। একটু ভয় করছে। পবন অবশ্য বলেছেন, আজ হোস্টেলের ব্যবস্থা না হলে ব্যাগপত্তর নিয়ে ফিরে আসবেন। আবার সোমবার যাবেন।
চন্দন বিরক্ত হয়ে ভাবল, শনিবারে কখনও কেউ কলেজে ভরতির দিন ফেলে?
টিকিট নিয়ে পবন হন্তদন্ত হয়ে এসে বললেন, ‘চল। মেচেদা লোকালের অ্যানাউন্সমেন্ট হয়ে গেছে।’
‘তোমার টিকিট?’ জানতে চেয়ে জিভ কাটল চন্দন। পবনের মান্থলি কাটা আছে।
স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু হচ্ছে বলে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা। সামনের কামরা ছেড়ে দ্বিতীয় কামরায় উঠে জানলার দিকের দুটো সিট নিয়ে বসে, ট্রাঙ্ক আর টিন সিটের তলায় ঢুকিয়ে পবন বললেন, ‘হাওড়ায় নেমেই বাসস্ট্যান্ডের দিকে দৌড়তে হবে। তাই সামনের দিকে বসলাম।’
আস্তে আস্তে কামরা ভরতি হচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ নিম্নবিত্ত। দাশনগর আর টিকিয়াপাড়ার লেদ মেশিন ফ্যাক্টারিতে শ্রমিকের কাজ করে। কামরায় বসেই বিড়ি ধরাল। চারজন সহযাত্রী জুটিয়ে টুয়েন্টি নাইন খেলতে বসে গেল।
কোলাঘাট স্টেশনে আর এক দঙ্গল লোক ওঠার পরে আর কোনও বসার জায়গা খালি রইল না। পরের স্টেশনগুলোয় শুধুই লোক উঠছে। কেউ নামছে না। কামরায় ঠাসাঠাসি ভিড়। দম আটকে মরে যাওয়ার মতো অবস্থা!
আন্দুলের পর থেকে অবস্থা বদলাল। ট্রেন একটু একটু করে খালি হচ্ছে। সাঁত্রাগাছিতে চা-ওয়ালার কাছ থেকে দুভাঁড় চা নিলেন পবন। একটা ভাঁড় ছেলেকে ধরিয়ে অন্য ভাঁড় নিজে নিয়ে সশব্দে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘আহ! ফাসক্লাস।’
চা খেতে খেতে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে চন্দন। একে একে পেরিয়ে যাচ্ছে রামরাজাতলা, দাশনগর, টিকিয়াপাড়া। ট্রেন খালি হয়ে যাচ্ছে। এখন এই কামরায় ফেলে ছড়িয়ে জনাতিরিশেক লোক রয়েছে। এরা সবাই হাওড়া যাবে? তারপর নদী পেরিয়ে কলকাতা শহরে? এরা কি জানে যে তাদের সঙ্গে যাচ্ছে চন্দন সরকার? যে আজ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হতে যাচ্ছে?
‘ভ্যাবলার মতো বসে রয়েছিস কেন?’ পবনের ধমক খেয়ে চটকা ভাঙে চন্দনের। খালি ভাঁড় জানলা দিয়ে ফেলে দেখে, ট্রেন কারশেডে দাঁড়িয়ে।
‘প্ল্যাটফর্ম পায়নি।’ হাই তুলে পবন বলেন, ‘হাওড়া স্টেশনে থেকে ইস্টার্ন আর সাউথ ইস্টার্ন রেলের দুটো লাইন বেরিয়েছে। রেল লাইনের ওপর দিয়ে যেখানে জিটি রোড গেছে সেখানে একটা ব্রিজ আছে। ব্রিজটার নাম ”বাঙালবাবুর ব্রিজ”। ওই জায়গাটা ভীষণ সরু। ইংরিজিতে যাকে বলে ”বটল নেক”। অত সরু জায়গা দিয়ে বেশি লাইন পাঠানো যায় না। ব্রিজের আগে-পরে রেল ইয়ার্ডে প্রচুর জায়গা থাকলেও বটল নেকের জন্য সব ট্রেন এইখানে দাঁড়াতে বাধ্য হয়। এই রুটিন হল্টকে ডেলি প্যাসেঞ্জাররা কী নামে ডাকে জানিস?’
‘না।’ ঘাড় নাড়ে চন্দন। হর্ন দিয়ে ট্রেন চলতে শুরু করল।
‘হালুয়া। হাওড়া আর লিলুয়ার সন্ধি।’
‘হিঃহিঃ!’ হেসে ফেলে চন্দন।
‘হাওড়া আর টিকিয়াপাড়ার মধ্যেকার এই রুটিন হল্টেরও একটা ডাকনাম আছে। সেটা কী বল তো?’
‘দাঁড়াও দাঁড়াও! বলছি।’ উত্তেজিত হয়ে বলে চন্দন, ‘হাকিয়াপাড়া। নানা! এটার কোনও মানে নেই। তুমি বলে দাও।’
‘সব সময়েই কি আর সন্ধি হয় রে!’ সিটের তলা থেকে ট্রাঙ্ক আর মুড়ির টিন বার করে পবন বলেন, ‘বলা হয়, ”টিকিয়াপাড়া, একটু দাঁড়া”।’
‘দারুণ তো!’ চোদ্দো নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাফিয়ে নেমেছে চন্দন।
‘আর কথা নয়। তাড়াতাড়ি চল। হাওড়া ময়দান-শিয়ালদার স্টেট বাস ধরতে হবে।’ হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে বলেন পবন। ‘পৌনে নটা বাজে। তোর ফার্স্ট ক্লাস দশটার সময়।’
চন্দন পবনের পিছনে দৌড় দেয়।