বিচার
পাঁচ
তার পরদিন সমর সিংহ রাজপুত্রকে ধরিয়া বসিল, ‘কাল তোমাদের বিচার, তুমি রানীর নিকট প্রাণভিক্ষা চাহিয়ো।’
রাজপুত্র হাসিয়া উঠিল, ‘তাই ত ভাই, ওরূপ ব্যবসা যে কখন করি নাই।’
—নাই করিলে, এখন প্রাণের জন্য সব করিতে হয়।
রাজপুত্র কথা কহিল না।
—বল, কাল ক্ষমা চাহিবে?
—বোধহয় পারিব না।
সমর সিংহ শিহরিয়া উঠিল, ‘তাহলে যে প্রাণ যাইবে।’
‘কি করিব ভাই! অন্য উপায় যে আর দেখিতেছি না।’
সমর সিংহ খুব কাছে আসিয়া বসিল। বলিল, ‘তোমার জননীর মুখ স্মরণ কর। তুমি তাঁহার একমাত্র পুত্র, তোমার মৃত্যুতে তাঁহারাও মরিবেন।’
পূর্বদিনের মত ভরত সিংহ পুনরায় পাশ ফিরিয়া শুইলেন। সমর সিংহ বসিয়া রহিল। রাত্রি বাড়িয়া যাইতেছে। প্রহরী বলিল, ‘এইবার যাইতে হইবে।’
সমর সিংহ ডাকিল—রাজপুত্র!
—কি ভাই!
—এই চারি-পাঁচদিন তোমার কত শুশ্রূষা করিয়াছি, অন্ততঃ আমার জন্য তুমি বাঁচিবার চেষ্টা কর।
‘আহা তোমার জন্য বড় দুঃখ হয়; কেন ভাই আমার এত করিতেছ?’
সমর সিংহ মুখ ফিরাইয়া কহিল—‘সে কথা জিজ্ঞাসা করিয়ো না। বল তুমি বাঁচিবে?’
রাজপুত্র হাসিল। বলিল, ‘সে ত ভাই, তোমাদের রানীর হাত।’
সমর সিংহ প্রফুল্ল হইয়া উঠিল, ‘ভাই, তুমি একবার ক্ষমা চাহিলেই তিনি ক্ষমা করিবেন।’
‘আর যদি না চাই?’
সমর সিংহ মলিন হইয়া গেল। ঘাড় নাড়িয়া বলিল, ‘সে যে প্রাণের চেয়েও গর্ব ভালবাসে, তাই বড় ভয় হয়।’
প্রাতঃকালে মলিনা বলিল, ‘মহারানি! এস সাজাইয়া দিই। আজ যে রাজপুত্রের বিচার!’
মহারানী বড় বিরক্ত হইলেন। রক্ত-পদ্মের মত চক্ষু দুইটি ফিরাইয়া বলিলেন, ‘মহারানি মহারানি সর্বদা করিস কেন? যমুনা বলিতে পারিস না?’
সে বিস্মিত হইয়া ভাবিল, মহারানী বলিলে যে মুক্তার হার খুলিয়া দিতে পারে, সে আজ এমন করে কেন?
যমুনা বলিল, ‘আমি বিচার করিব না।’
‘তা কি হয়?’
—খুব হয়! বাবার সময় কি রাজত্ব চলিত না?