বিচার
চার
যমুনা ভরত সিংহের হাত আপনার হাতে লইয়া বলিল, ‘রাজপুত্র, এই ক্ষীণ বাহুতে এত শক্তি, আমার ত বিশ্বাস হয় না।’
রাজপুত্র হাসিয়া কহিল, ‘লোকে বেশী বাড়াইয়া বলে।’
যমুনা জিজ্ঞাসা কহিল—’এই বালক বয়সের মধ্যে এত বড় যোদ্ধা কি করিয়া হইলেন?’
‘আমি যুদ্ধের চেয়ে সেতার বাজাইতে, চারণদের গান শুনিতে ভালবাসি। পিতৃ আজ্ঞায় যুদ্ধ করি।’
‘আর আমাদের ধর্ম বলিয়া যুদ্ধ করি, না?’
‘না, সমর (পুরুষবেশে যমুনার ইহাই নাম), মানুষ মারাটা ধর্ম বলিয়া মনে হয় না। তবে সকলই করিতে হয়।’
সমর সিংহ কহিল, ‘তোমার প্রাণদণ্ডের আদেশ হইয়াছে, শুনিয়াছ?’
উ। শুনিয়াছি।
স। মরিতে তোমার ভয় হয় না?
উ। হয়, আমার মরিতে সাধ নাই।
সমর সিংহ কঠিন স্বরে কহিল, ‘তুমি রাজপুত। রাজপুত মরিতে ভয় পাইলে তাহার নরকে স্থান হয়, তুমি তবে কাপুরুষ?’
ভরত সিংহ কহিল, ‘তা বৈ কি!’ এবং কিঞ্চিৎ হাসিল।
‘তবে তোমাকে সকলে সাহসীর অগ্রণী বলে কেন?’
‘সকলেই কি সত্য বলে? তাহারা বোধ হয়—মিছা কথা কহে।’
‘মরিবার পূর্বে তোমার কি কিছু কামনা নাই?’
‘কত কামনা আছে। কিন্তু তাহাতে কাজ কি?’
‘মহারানীকে বলিয়া আমি তাহা পূর্ণ করাইয়া দিতে পারি।’
‘তাহা পার না। আপাততঃ আমার মাকে দেখিতে ইচ্ছা করে, তুমি দেখাইতে পার?’
যমুনা ভাবিয়া কহিল, ‘তোমার রানীমাতা এখানে আসিবেন কেন?’
‘তাই ত।’ রাজপুত্র পার্শ্ব পরিবর্তন করিয়া চক্ষু মুদিয়া রহিল।