ছয়
বিচার সভা! স্বর্ণখচিত হীরক-মণিমুক্তাশোভিত, বিচিত্র পট্টবস্ত্রাবৃত স্বর্ণসিংহাসনে যমুনাবাই রাজরাজেশ্বরী বেশে বসিয়া আছে। মন্ত্রী, সভাপণ্ডিত, সভাসদ্, প্রভৃতি সারি দিয়া বসিয়া আছে। অসংখ্য প্রহরী রক্তবর্ণ সজ্জায় সুশোভিত হইয়া শান্তিরক্ষা করিতেছে।
‘জয় মহারানীর জয়! জয় মহারানীর জয়!’
শৃঙ্খলের ঝম ঝম শব্দ শ্রুত হইল। সকলেই চাহিয়া দেখিল, শৃঙ্খলাবদ্ধ শত শত বন্দী যোদ্ধার মধ্যে ভরত সিংহ দাঁড়াইয়া আছে।
কে একজন পার্শ্ব হইতে মৃদুস্বরে কহিল, ‘রাজপুত্র ক্ষমা চাহিও।’ পরিচিত স্বর।
রাজপুত্র চাহিয়া দেখিল, কিন্তু গোলমালের ভিতর সে লুকাইয়া পড়িল।
মহারানীর গলা কাঁপিয়া উঠিল, ‘রাজপুত্র।’
রাজপুত্র চাহিয়া দেখিল।
—কিছু কামনা আছে?
—কিছু না।
—তোমার আজ প্রাণদণ্ড হইবে।
রাজপুত্র কথা কহিল না, মনে হইল সমর সিংহ কোথায়!
—রাজপুত্র কিছু ভিক্ষা আছে?
রাজপুত্র মুখ তুলিল না। নত দৃষ্টিতে হাসিয়া মাথা নাড়িয়া বলিল—না।
—কিছু না?
—না।
—তোমার মা—তোমার মনে কোন সাধ নাই?
—না।
মহারানী আদেশ করিলেন—রাজপুত্রকে বধ্যভূমিতে লইয়া যাও।