» » মহাসমর

বর্ণাকার

তিনি তার অসুখের কথা বললেন। সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘আমাদের এলাকার অসুখ আমাদের এলাকার ডাক্তার চিকিৎসা করতে পারে। আপনাদের এলাকার সৈন্যরা এখানে এসে অসুখে পড়লে ইংল্যাণ্ডের ডাক্তার কিছুই করতে পারে না। আমি আপনার চিকিৎসার জন্য আমার নিজস্ব ডাক্তারকে এখানেই পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

‘সালাহউদ্দিন! আমারা একে অপরের রক্ত আর কতকাল ঝরাবো?’ রিচার্ড বললেন, ‘এসো আমরা মিমাংসা ও আপোস করে ফেলি।’

‘কিন্তু আমি বন্ধুত্বের বিনিময়ে সে মূল্য দিতে পারবো না যা তুমি চাচ্ছ।’ সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘তুমি রক্ত ঝরাতে ভয় পাচ্ছ, কিন্তু আমার জাতি বায়তুল মোকাদ্দাসের জন্য জীবনের শেষ কোরবানী দিতে প্রস্তুত।’

সম্রাট রিচার্ড তাঁবু থেকে ফিরে এলেন সুলতান আইয়ুবী। এসেই তার নিজস্ব ডাক্তার কে বললেন, ‘সম্রাট রিচার্ড গুরুতর অসুস্থ। তুমি তাড়াতাড়ি ওখানে যাও।’

চিকিৎসক দেখলেন সম্রাটকে। তার রোগ আসলেই গুরুতর ছিল। দীর্ঘ দিন লেগে গেল সম্রাট রির্চাডের সুস্থ হতে।

সুলতান আইয়ুবী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। কিন্তু সম্রাট রিচার্ডের তরফ থেকে যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি ও মীমাংসার নতুন প্রস্তাব এলো। তিনি সুলতানকে জানালেন, ‘বায়তুল মোকাদ্দাস আমি মুসলমানদের ছেড়ে দিয়ে যাবো। কিন্তু আমার একটি দাবী আপনাকে রাখতে হবে, খৃষ্টান তীর্থযাত্রীদের জেরুজালেম যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে। আর সমুদ্র উপকূলের কিছু এলাকা খৃষ্টানদের ছেড়ে দিতে হবে।’

সুলতান আইয়ুবী এ শর্ত মেনে নিলেন। তার এ শর্ত মেনে নেয়ার পেছনে কারণ ছিল, সুলতান আইয়ুবীর বাহিনী ক্রমাগত যুদ্ধ করে রণক্লান্ত। যুদ্ধে প্রচুর সৈন্য শাহাদাত বরণ করায় সৈন্য সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। এই অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করার চাইতে সন্ধি করাই অধিক যুক্তিযুক্ত।

তিনি ভেবে দেখলেন, দুই বছরের অধিক সময় ধরে তার সৈন্যরা রাতদিন যুদ্ধ করেছে। তারা মানসিক দিক থেকে দুর্বল না হলেও শারীরিক দিক দিয়ে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে।

তাছাড়া তিনি নিজেও শারীরিক দিক দিয়ে অসুস্থ ও ক্লান্ত। এ অবস্থায় খৃষ্টানরা বায়তুল মোকাদ্দাসের দাবী ছেড়ে দিলে সেটা মুসলমানদের বিজয় বলেই গণ্য হয়। তাই তিনি সন্ধি প্রস্তাবে সম্মতি দিলেন।

সম্রাট রিচার্ড মুসলমানদের নির্ভীকতা ও জাতীয় চেতনা দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর স্বাস্থ্যও ভেঙ্গে গিয়েছিল। ওদিকে খবর যা পাচ্ছে তাতে বুঝা যাচ্চে দেশের অবস্থাও ভাল না। বিরোধী পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে এবং তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছে। মোট কথা, ইংল্যাণ্ডের রাজ সিংহাসন বিপদের সম্মুখীন।

এই সন্ধি চুক্তি ১১৯২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত হয়। সম্রাট রিচার্ড ৯ অক্টোবর তার সমস্ত সৈন্যসামন্ত নিয়ে ইংল্যাণ্ড যাত্রা করেন।

সম্রাট রিচার্ডের স্বদেশ যাত্রার পর সুলতান আইয়ুবী ঘোষণা করলেন, ‘সৈন্যদের মধ্যে যারা হজ্জে যেতে ইচ্ছুক, তারা যেন নাম লিষ্ট করায়। তাদের সরকারী ব্যবস্থায় হজ্জের জন্য পাঠানো হবে।’

হজ্জ যাত্রীদের লিষ্ট তৈরী হয়ে গেল। দেরী না করে তাদের সবাইকে হজ্জে পাঠিয়ে দিলেন সুলতান। তার নিজেরও হজ্জ করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু জিহাদ তাকে সে সুযোগ দেয়নি।

তার কাছে সফরের খরচ পরিমাণ নিজস্ব অর্থ ছিল না। সরকারী খরচে যেতেও আপত্তি ছিল তার। তিনি বলেন, ‘সরকারী অর্থ আমার নিজস্ব অর্থ নয়। এর থেকে আমার হজ্জের জন্য এক পয়সা নেয়াও আমি ঠিক মনে করি না।’

মিশরের লেখক মুহাম্মদ ফরিদুল ওয়াহেদিন লিখেছেন, ‘মৃত্যুর সময় সুলতান আইয়ুবীর মাত্র ৪৭ দিরহাম রৌপ্য ও এক ভরির মত সোনা ছিল। তার নিজস্ব কোন বাড়ীও ছিল না।’

সুলতান আইয়ুবী ৪ঠা নভেম্বর বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে দামেশকে গিয়ে পৌঁছেন। তার মাত্র চার মাস পরেই তিনি মহান স্রষ্টার সাথে মিলিত হন।

দামেশকে পৌঁছার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটনার চাক্ষুস বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন কাজী বাহাউদ্দিন শাদ্দাদ। তার বর্ণনা থেকে জানা যায়, সেখান তিনি তার সন্তান ও পরিবার নিয়ে অবস্থান করেন।

সুলতান আইয়ুবী বাকী জীবন বিশ্রামের জন্য এ শহরকেই বেছে নিয়েছিলেন। তার সন্তানরা তাকে একান্তভাবে কাছে পেয়ে যারপনাই খুশী। দামেশক ও আশপাশের লোকজন বিজয়ী সুলতানকে একনজর দেখার জন্য এসে ভীড় জমাতো তার মহলের সামনে। সুলতান আইয়ুবীও তার প্রতি জাতির এমন বিশ্বাস ও ভালবাসা দেখে অভিভূত। তিনি তার দুয়ার সর্বসাধারণের সাক্ষাতের জন্য সারাক্ষণ খোলা রাখার হুকুম দেন। সাক্ষাতের ব্যাপারে সবার জন্য ছিল সমান অধিকার। পুরুষ, নারী, বৃদ্ধ, শিশু, আমীর, গরীব, শাসক ও শাসিত সকলেই সাক্ষাত লাভে উন্মুখ ছিল, তিনি কাউকে নিরাশ করতেন না। দেশের কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরাও আসতেন সুলতানের সাথে দেখা করতে।

তিনি তাদের যথেষ্ট সম্মানের সাথে অর্ভ্যথনা জানাতেন। কবিরা তার কৃতিত্ব ও গুণগান বর্ণনা করে লম্বা লম্বা কবিতা লিখে পেশ করতো তার দরবারে।

সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ক্রমাগত যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় দিন রাত কোন সময়ই বিশ্রাম ও শান্তির ঘুমের সুযোগ ছিল না তার। এই বার যেন তিনি সামান্য বিশ্রামের সুযোগ পেলেন। তাছাড়া বয়সের কারণে তিনি শারীরিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।

দৈহিক অবসাদ কাটাতে এবং দেহকে আগের মত চাঙ্‌ড়া করে তুলতে তিনি ভাই ও সন্তানদের নিয়ে মাঝে মাঝে হরিণ শিকারে বের হতেন। তার ধারণা ছিল, কিছুদিন বিশ্রাম নিলেই তিনি  আগের মত পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন। তখন তিনি মিশর চলে যাবেন। কিন্তু দামেশকের প্রশাসনিক ও সরকারী কাজ তাকে আটকে দিল।

কাজী বাহাউদ্দিন শাদ্দান বলেন, ‘আমি সে সময় বায়তু মোকাদ্দাসের উজির ছিলাম। একদিন দামেশক থেকে সুলতান আইয়ুবীর চিঠি পেলাম। তিনি চিঠিতে আমাকে দামেশকে ডেকে পাছিয়েছেন।

আমি শীঘ্রই যেতে চাইলাম কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি ঝরায় রাস্তায় কাদা জমে গিয়েছিল। ফলে চিঠি পাওয়ার পরও দু সপ্তাহের বেশী সময় আমাকে বায়তুল মোকাদ্দাসেই থাকতে হ’ল।

২৩ মুহাররম শুক্রবার আমি দামেশকের দিকে রওনা হলাম। ১২ সফর মঙ্গলবার দামেশকে গিয়ে পৌঁছলাম। সে সময় সুলতান আইয়ুবীর সাথে সাক্ষাতের জন্য বৈঠকখানায় কতিপয় আমীর ও অফিসারবৃন্দ অপেক্ষা করছিলেন।

সুলতান আইয়ুবী আমার আগমন সংবাদ জানানো হলে শীঘ্রই তিনি আমাকে তার খাস কামরায় ডেকে নিলেন। তার সামনে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথেই তিনি বাহু বাড়িয়ে মুসাফা করলেন ও উঠে কোলাকুলি করলেন। আমি তাকে খুব প্রশান্ত চিত্ত ও উৎফুল্ল হৃদয়ের অধিকারী দেখতে পেলাম। কিন্তু আমি অবাক হয়ে গেলাম তার চোখে অশ্রু দেখে।

পরের দিন আবার তার খাস কামরায় গেলাম। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘সাক্ষাতের জন্য বাইরের কামরায় কে কে বসে আছে?’

তিনি তার দরবারের খাদেমদের ইনচার্জ জামালুদ্দিন ইকবালকে বললেন, ‘তুমি আমার পক্ষ থেকে ওদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে। বলবে, ব্যক্তিগত দুর্বলতার জন্য তিনি আজ দেখা করতে পারবেন না।’

তিনি আমার সাথে অনেক জরুরী কথা বললেন। আলোচনা শেষ হলে সেদিনের মত চলে এলাম আমি।

পরের দিন। তিনি আমাকে খুব ভোরে দেখা করার জন্য খবর পাঠিয়েছিলেন। আমি তখন গেলাম তখন তিনি বাগানে শিশুদের সাথে গেলছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘বৈঠখানায় কোন লোক অপেক্ষা করছে?’

আমি বললাম, ‘ এক ফিরিঙ্গী দুত বসে আছে।’

সুলতান বললেন, ‘তাকে এখাইে ডেকে নিয়ে এসো।’

তার ছোট শিশুটি সেখান থেকে চলে গেল। কিন্তু কোলের  বাচ্চাটি রয়ে গেল তার কোলে। সুলতান আইয়ুবী এই শিশুটিকে বুকে নিয়ে পরম প্রশান্তি পেতেন।

শিশুটি ফিরিঙ্গীকে দেখেই ভয়ে কেঁদে উঠল। কারণ শিশুটি এমন অদ্ভুত পোশাকের লোক আগে কখনও দেখেনি।

সুলতান আইয়ুবী দূতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বললেন, ‘তোমার এমন পোশাক ও চেহারা দেখে শিশুটি কাঁদছে।’

তিনি শিশুটিকে বুকের সাথে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে দূতকে বললেন, ‘আজ আর আলোচনা সম্ভব নয়। তুমি আাগামীকাল এসো।’ বিদায়ের পর তিনি বললেন, ‘কি রান্না হয়েছে? এখানে নিয়ে এসো।’

খুব হালাকা খাবার। সামান্য ক্ষীর ও রুটি নাস্তা নিয়ে আসা হ’ল। তিনি অল্প কিছু খেলেন। আমিও তার সঙ্গে নাশতা করলাম। তিনি বললনে, ‘কথা বলতওে অসুবধিা হয়। কারণ অর্জীণ রোগে খুব র্দুবল হয়ে গিয়েছি। হাজীরা কি এসে গেছে?’

আমি বললাম, ‘রাস্তায় ভীষণ কাদা। সম্ভবত কাল এসে পৌঁছতে পারবে।’ সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘আমি তাদের অভ্যর্থনা জানাতে যাবো।’

তিনি এক সামরিক অফিসারকে ডেকে বললেন, ‘হাজীরা আসছেন। রাস্তা পরিস্কার করো।’ আমি সুলতানের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে চলে এলাম।

পরের দিন তিনি অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করে হাজীদের অভ্যর্থনা করতে বের হলেন। আমরাও তার পিছনে ঘোড়ায় সওয়ার হলাম। তার ছেলে আল আফজাল এসে উপস্থিত হ’ল। জনসাধারণ বিজয়ী সুলতানকে একদম কাছ থেকে দেখার জন্য ছুটে রাস্তায় বেরিয়ে এলো। সকলেই তাঁর সাথে মুসাফা করতে চায়।

সুলতান আইয়ুবী জনগণের ভীড় ও চাপ দেখে সন্ত্রস্থ হয়ে উঠলেন। আততায়ী ও খুনী চক্র এর সুযোগ নিতে পারে। কারণ তিনি কোন দেহরক্ষী সঙ্গে আনেননি।

আমি জনতার ভীড় ঠেলে সুলতানের কাছে গেলাম ও তাকে বললাম, ‘আপনি রাজকীয় পোশাকে বের হয়েছেন অথচ সঙ্গে কোন প্রহরী আনেননি। আমি খুবই ভয় পাচ্ছি। যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায়?’

তিনি আমার কথার গুরুত্ব দিলেন। চমকে আমার দিকে তাকিয়ে নিজেই ঘোড়া ঘুরিয়ে অন্য পথে কেল্লার দিকে চললেন। আমি ও আল ফজল তার সাথে ছিলাম। আমরা ঝর্ণার পাশ দিয়ে দুর্গে প্রবেশ করলাম।

শুক্রবার সন্ধ্যা। সুলতান আইয়ুবীর শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়ল। মাঝ রাতে জ্বর শুরু হ’ল।

২১ ফেব্রুয়ারী ১১৯৩। তিনি বার বার মুর্ছা যেতে লাগলেন। তার শরীর শীতল হয়ে আসতে লাগলো। সে সময় তার ছেলে আল আফজাল তার কাছে ছিল। তিনি জ্ঞান ফিরলেই বলতেন, ‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।’

আল আফজাল খবর দিল আমাকে। তিনি সারা রাত যন্ত্রণায় ছটফট করে কাটালেন। আমরা কয়েকজন তাকে ঘিরে বসে রইলাম। এতে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তিবোধ করলেন। ভোরে তার কষ্টের প্রকোপ কমে গেল। তিনি অনেক সুস্থ বোধ করলেন। আমি সেখান থেকে বিদায় নিতে চাইলাম। তিনি বললেন, ‘আল আফজালকে সঙ্গে নিয়ে নাস্তা করে যাও।’

আমার সাথে কাজী আল ফজলও ছিলেন, তিনি অন্যখানে দাওয়াত আছে বলে চলে গেলেন। কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম, সুলতান আইয়ুবীকে এ অবস্থায় রেখে যেতে তার খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমরা খাবার কামরায় গেলাম। সেখানে অনেক লোক। সকলের চোখেই অশ্রু টলমল করছে।

পরের দিন থেকে সুলতানের অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যেতে লাগলো। কাজী আল ফজল প্রতিদিনই সুলতানকে দেখতে আসেন। সুলতানের অসুখ কিছু কম থাকলে তিনি আমাকে সাথে কথা বলেন, নইলে চোখ বন্ধ করে সুলতানের পাশে বসে থাকেন। সুলতানের চিকিৎসায় চারজন ডাক্তার নিয়োজিত ছিলেন। তাদের কারো মুখেই হাসি নেই। তাদের মুখের দিকে তাকালেই বুঝা যায় তারা কতটা নিরাশ।

আজ চারদিন ধরে সুলতানের শরীর খুব বেশী খারাপ। তার শরীরের যখন তখন অবস্থা।

ষষ্ঠ দিনে আামরা তাকে ধরে উঠালাম ঔষধ পান করানোর জন্য। পানি ঈষৎ গরম প্রয়োজন ছিল, তিনি পানি মুখে নিতে গিয়ে বললেন, ‘বেশী গরম। একটু ঠাণ্ডা করে দাও।’

যখন পানি ঠাণ্ডা করে তার হাতে দেয়া হ’ল, তিনি বললেন, ‘একদম ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।’ তিনি রাগ বা অভিমান না করে শুধু ক্ষীণ স্বরে বললেন, ‘হে আল্লাহ, এরা কেউ আমার উপকার করতে পারবে না।’

বাহাউদ্দিন শাদ্দাদ বলেন, ‘আামকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল আল আফজাল। তার চোখে অশ্রু দেখে আমারও চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। হায়, সমস্ত খৃষ্টান জগতকে কাঁপিয়ে দেয়া মানুষটি আজ এত অসহায়!’

আমরা ডাক্তারের কামরায় গেলাম। কাজী আল ফজল আমাদের দেখে বললেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, জাতি এক মহান নেতার নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই।’

অষ্টম ও নবম দিনে তিনি অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রইলেন। তিনি আর পানিও পান করতে পারলেন না। এ খবর শুনে সমস্ত শহরে যেন মৃত্যুর নিস্তব্ধতা নেমে এলো। শহরের সব মসজিদে সুলতানের আরোগ্যের জন্য দোয়া হতে লাগলো। মেয়েরা ঘরের কোণায় বসে জায়নামাজ ভিজিয়ে দিচ্ছিল আপন অশ্রুতে।

আমি ও কাজী আল ফজল রাতের প্রথম দিকে তার কাছে থাকতাম। শেষ রাতে থাকতো তার ছেলে ও পরিবারে লোকজন। আমরা লক্ষ্য করতাম, তিনি তাকাতেন ও কথা বলতে পারছেন না।

শেষ রাতে যখন তার পরিবারে লোকজন তার কাছে থাকতো তখনও আমরা সেখান থেকে চলে যেতে পারতাম না। অবশিষ্ট রাত আমারা কামরার বাইরে বারান্দায় বসে কাটিয়ে দিতাম। কেউ তার কামরা থেকে বের হলে তার কাচে থেকে জেনে নিতাম তার অবস্থা।

বাইরের লোকজন আমাদের চেহারা দেখেই বুঝতে পারতো সুলতানের অবস্থা ভাল নয়। তারা আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতো কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করতো না।

দশ দিনের দিন ডাক্তার তার পেট পরিষ্কারের ঔষধ দিল। তাতে রোগ কিছুটা কমলো। তিনি চোখ মেলে চাইলেন এবং পানি পান করলেন। লোকজন যখন এ খবর শুনলো তখন সবার মনে কিছুটা আশার আলো দেখা গেল।

রাতে আমরা তার কাছেই বসে ছিলাম। ডাক্তার এলেন। তার নাড়ি পরীক্ষা করে বললেন, ‘তার শ্বাসকষ্ট কমেছে। এখন তিনি স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন।’

আমরা বললাম, ‘তার শরীর খুব ঘামছে।’

তিনি বললেন, ‘ঘাম বের হওয়া ভালো।’

আমরা আশ্বস্ত হয়ে বসে রইলাম।

এই অসুস্থতার ১১তম দিনে সুলতান আইয়ুবীর অবস্থা আবার দ্রুত খারাপ হয়ে গেল। ডাক্তার দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিলেন তার কামরায়।

তার জীবনী শক্তি দ্রুত নিঃশেষ হয়ে আসছিল। সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর পুত্র আল আফজাল দেখলেন যে, সুলতানের আর বাঁচার আশা নেই। আল আফজাল সমস্ত আমীর ওমরাহ ও উজিরদের ডাকলেন। বললেন, ‘আব্বার মৃত্যুর পর তার গড়া এই সালতানাত আবার টুকরো টুকরো হয়ে যাক তা আমি চাই না। যে ঈমান ও একতার বন্ধনে তিনি আমাদের হৃদয়গুলোকে বেঁধে দিয়েছিলেন সেই বন্ধন অটুট রেখেই আগামী দিনগুলোতে আমাদের পথ চলতে হবে।

কোন রকম প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলার অবকাশ তৈরী হোক তা আমি চাই না। তাই আমি আবেদন জানাচ্ছি, আব্বার স্থলে আপনারা নতুন একজনকে সুলতান মনোনীত করুন এবং আসুন আমরা সবাই শপথ বাক্য পাঠ করে তার আনুগত্য মেনে নেই।

সবাই সর্বস্মতভাবে আল-আফজালকেই এ দায়িত্ব গ্রহণের আবেদন জানালে তিনি নিজে প্রথমে হলফনামা পাঠ করলেন। তারপর সমস্ত আমীর, উজির, সেনাপতি সকলেই তার আনুগত্য মেনে নিয়ে হলফনামা পাঠ করলেন।

এ ছাড়া উপস্থিত সকলেই সুলতান আইয়ুবীর মৃত্যুর পর তার রাজ্যের একতা ও শক্তি অটুট রাখতে তার পুত্র আল আফজালের আনুগত্যের পক্ষে শপথ গ্রহণ করল।

হলপ করার সময় আমীররা এমন দৃঢ় উক্তিও করল, ‘যদি আমাদের মধ্যে কেউ পরবর্তীতে অঙ্গীকার ভঙ্গ করি তবে তার বিবি তালাক হয়ে যাবে। সে আইনতঃ শাসন ক্ষমতা ও দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।’

৩ মার্চ ১১৯৩ সাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা। অসুস্থতার আজ ১১তম দিন। রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এখন এ মহলেই অবস্থান করছেন। একটু আগে শপথনামা পাঠের মধ্যে দিয়ে দেশের শাসনভার সুলতান আইয়ুবীর বড় ছেলে আল আফজালের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। তিনি সুলতানের সারা জীবনের সঙ্গী কয়েকজনকে নিয়ে সুলতান যে রুমে শয্যাশয়ী ছিলেন সে কামরায় এলেন। তারা সবাই সুলতানের জীবনের আশা ত্যাগ করেছিল। রাতে কাজী আবুল ফজল ও ইবনে জাকীকে ডাকা হ’ল। ইবনে জাকী বিজ্ঞ পণ্ডিত ও আইনজ্ঞ লোক ছিলেন। জেরুজালেম বিজয়ের পর সুলতান আইয়ুবী মসজিদুল আকসায় প্রথম জুম্মার খোৎবা দেয়ার জন্য তাকেই নির্বাচন করেছিলেন। তিনি ছিলেন দামেশকের প্রধান বিচারক।

কাজী বাহাউদ্দিন শাদ্দাদ বলেন, ‘রাতে আল আফজাল আমাদের দু’জনকে মুমূর্ষ সুলতানের পাশে থাকতে বললেন। আমরা মানে আমি ও ইবনে জাকি। সারা রাত বাইরে সুলতানের সংবাদের জন্য জনগণ উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। ইমাম আবু জাফর সুলতানের শিয়রে বসে কোরআন তেলাওয়াত শুরু করলেন। ইমাম আবু জাফর তার স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ‘আমি সুলতানের শিয়রে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছিলাম। তখন তিনি প্রায়ই বেহুশ। অনেকটা ঘোরের মধ্যে সময় কাটছিল তাঁর। আমি পবিত্র কোরআনের শুরু থেকে তেলাওয়াত আরম্ভ করলাম।’

৪ মার্চ ১১৯৩ তারিখের মধ্য রাত। ইমাম আবু জাফর বলেন, ‘আমি ২২পারা সুরা হজ্জের এই আয়াত পাঠ করছিলাম, ‘আল্লাহই সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। আল্লাহই সত্য! তিনি মৃতকে জীবিত করতে পারেন, তিনি ক্ষমতাশীল।’ এ সময় সুলতান আইয়বী ক্ষীণ স্বরে কিছু বললেন। কিন্তু তিনি কি বললেন আমি বুঝতে পারলাম না।

ফজরের আজান হ’ল। আমি কোরআন পাঠ বন্ধ করলাম। দেখলাম সুলতানের ঠোঁট সামান্য নড়ছে। কি বলছেন স্পষ্ট বুঝা গেল না, মনে হ’ল তিনি কালেমা পাঠ করছেন।

আমি তাকালাম সেখানে উপবিষ্ট কাজী বাহাউদ্দিন শাদ্দাদ ও ইবনে জাকির দিকে। তারা ঝুঁকে এলেন সুলতানের মুখের ওপর। তারা টের পেলেন, আজান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুলতান আইয়ুবী তার প্রভু মাহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর দরবারে হাজিরা দেয়ার জন্য রওনা হয়ে গেছেন। তারা একসঙ্গে বলে উঠলেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’

কাজী বাহাউদ্দিন শাদ্দাদ বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বে খোলাফায়ে রাশেদীনের পর কঠিন আঘাত পড়েছিল সুলতান আইয়বীর মৃত্যুতে। মানুষের ঢল নেমে এসেছিল রাস্তায়। শোকে তাদের অন্তরগুলো ছিল মুহ্যমান। মিছিলের পর মিছিল আসছিল মহলের দিকে। তাদের কণ্ঠে শোক ও মাতমের ধ্বনি। সবাই জোরে জোরে পড়ছির কালেমায়ে শাহাদত, ‘আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু……’

জোহরের সময় সুলতান আইয়ুবীর মরদেহ গোছল করানো হয়। মৃতদেহ বাহিরে আনা হ’ল কাফনের কাপড় পরিয়ে। সুলতানের কফিনটি যে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল সেটি দান করেছিলেন কাজী আল ফজল।

কফিন যখন মহলের চার দেয়ালের বাইরে আনা হচ্ছিল তখন নারী, পুরুষ ও শিশুর কান্না ও আহাজারিতে আসমান বিদীর্ণ হচ্ছিল। দামেশকের স্বজনহারা মানুষের বুক ফাটা ক্রন্দন সহ্য করার মত ছিল না।

নামাজে জানাজায় ইমামতি করলেন কাজী মহিউদ্দিন ইবনে জাকী। জানাজায় কত লোক হয়েছিল সে সংখ্যা নির্ণয় করার সাধ্য ছিল না কারো। শুধু অসংখ্য মানুষের ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল দূর দূরান্ত পর্যন্ত।

নামাজে জানাজার পর তার মৃতদেহ বাগানের একটি ঘরে রাখা হ’ল সামান্য সময়ের জন্য। এখানে তিনি অসুস্থ অবস্থায় কয়েকদিন কাটিয়েছিলেন। আছর নামাজের আগেই সুলাতান আইয়ুবীর মৃতদেহ কবরস্থ করা হ’ল।

সুলতান আইয়ুবীর একটি স্বপ্ন ছিল, ফিলিস্তিন বিজয়ের পর তিনি হজ্জের ফরজ আদায় করবেন। কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয়নি। ঐতিহাসিকরা বলছেন, এর কারণ ছিল অসুস্থতা ও আর্থিক অনটন। তার নিজস্ব অর্থ শেষ হয়ে গিয়েছিল। বায়তুল মালের অর্থে হজ্জ করার ব্যাপারে তার আপত্তি থাকায় তাঁর এ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। যে মর্দে মুজাহিদের পতাকাতলে দাঁড়িয়ে শত্রুর চক্রান্ত ছিন্নভিন্ন করেছে হাজারও মুজাহিদ, যার হাতে সৈন্য ও সম্পদ তুলে দিয়েছিল মিশর, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের শাসকবৃন্দ সেই সুলতান একটার পর একটা বিজয় ছিনিয়ে এনেও এতই নিঃস্ব ছিলেন যে, শেষ জীবনে হজ্জ করার প্রয়োজনীয় অর্থটুকুও তার হাতে ছিল না।

সম্রাট রিচার্ডের সাথে সুলতান আইয়ুবীর চুক্তির মেয়াদ ছিল তিন বছর স্থায়ী। বিদায়ের সময় সম্রাট রিচার্ড সুলতান আইয়ুবীকে একটি চিঠি দিয়ে যান, তাতে তিনি বলেন, ‘তিন বছর পর আবার আমি জেরুজালেম উদ্ধার করতে আসবো।’ কিন্তু তারপর শত শত বছর কোন খৃষ্টান সম্রাট শত চেষ্টা করেও বায়তুল মোকাদ্দাস দখল করতে পারেনি।

১৯৬৭ সালের জুন মাস। এই ঘটনার পৌণে আটশো বছর পর মুসলিম বিশ্ব আবার প্রত্যক্ষ করল এক বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক ঘটনা। আরব ও মুসলিম বিশ্বের পারস্পরিক অনৈক্য ও দুর্বলতার ফলে পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাস ও মসজিদুল আকসা আবার চলে গেলে কাফেরদের হাতে। খৃদষ্টানদের মদদে তার কর্তৃত্ব নিল অভিশপ্ত ইহুদী জাতি।

বেদনায় মুষড়ে পড়ল মুসলিম বিশ্ব। আটশো বছর আগের ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি ঘটল পবিত্র মাটিতে। মুসলমানদের রক্তে নতুন করে ভিজতে শুরু করল ফিলিস্তিনের মাটি।

ইতিহাস আগের মতই থাকল। ইহুদী ও খৃষ্টানরা একজোট হয়ে শুরু করল বিংশ শতাব্দীর নতুন ক্রুসেড। কখনও ঘোষণা দিয়ে কখনও ঘোষনা ছাড়া সেই ক্রুসেড চলতেই থাকল। আবার শুরু হ’ল মুসলিম জাতিসত্ত্বা বিনাশের ষড়যন্ত্র।

চক্রান্তের ধরনের কোন পরিবর্তন নেই। সেই অভিন্ন রূপ, অভিন্ন চালচিত্র। মুসলিম যুবকদের চরিত্র হননের সেই অভিন্ন কৌশল। মুসলমানদের ঈমান ক্রয় করে গাদ্দার বানানোর জন্য আজও ব্যবহৃত হচ্ছে সেই নিষিদ্ধ গন্ধম। নারীর মোহ, ক্ষমতার লোভ, গদির মায়া, সম্পদের আকর্ষণ, মদের নেশা কি নেই সেখানে?

শিয়া-সুন্নীর বিরোধ, নানা রকম ফেরকা ও উপদল সৃষ্টি, ভৌগলিক জাতীয়তার উন্মাদনা জাগানো এবং এ ধরনের নানা উপায় অবলম্বন করে মুসলিম জাতিসত্ত্বাকে খণ্ডবিখণ্ড করার চক্রান্ত, সেই ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধের বিষাক্ত ছোবল, সবকিছুই পরিবেশন করা হচ্ছে আরও উন্নততর পদ্ধতিতে, আধুনিক  প্রযুক্তির উৎকর্ষতার নিত্য-নতুন মোড়কে।

সভ্যতার সবচে বড় ট্রাজেডি, যে পাশবিক  শক্তি পৃথিবীর শান্তি বিঘ্ন করছে তার কণ্ঠেই শোনা যাচ্ছে মানবতার অদ্ভত মায়াকান্না। এই ষড়যন্ত্র বা আধুনিক ক্রুসেড এখন আর কেবল ফিলিস্তিন নয়, কেবল আরব বিশ্ব নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে গ্রাস করার জন্য সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে ছোবলের পর ছোবল হেনে চলছে। পৃথিবী এখন এক মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন।

এ বির্পযয় থেকে  বাঁচতে হলে কেবল মুসলামন নয় মানবতার স্বপক্ষ শক্তিকে আবার পাশবিক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মানবিক শক্তিকে আবার নামতে হবে সভ্যতা ও মানবতার অস্তিত্ব রক্ষার অনিবার্য সমরে।

এ লড়াই হবে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার লড়াই। বিজ্ঞান ও প্রযুতি হবে যুদ্ধের হাতিয়ার। রুখেতে হবে পাশবিক সংস্কৃতির সর্বনাশা ছোবল। মানুষের মনে আবার জাগিয়ে তুলতে হবে মানুষ ও মানবতার প্রতি মতত্ববোধ; পারস্পরিক ভালবাসা ও শ্রদ্ধার সৌরভ।

আজ শুধু ফিলিস্তিন নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের নির্যাতীত মানবাত্মা ক্রন্দন করছে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর মত এক মহান নেতার জন্য। যার বুক ভরা থাকবে স্নিগ্ধ ভালবাসার কোমল মায়ায়। যার হৃদয়ের আকাশ জুড়ে থাকবে মহত্বের সুউচ্চ মিনার। অন্তর জুড়ে থাকবে অনন্ত সুবাসিত পুষ্প-পরাগ।

কিন্তু সেই নেতা তখন আসবেন যখন মানবতার স্বপক্ষ শক্তি আবার যুথবদ্ধ হবে। ঈমানের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে রাসূলের প্রেমিকেরা। সব নীচতা, হীনতা, সংকীর্ণতা, কুসংস্কার ও কুপমণ্ডকতা মাড়িয়ে সত্যকে ধারণ করার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠবে আলোর পাখীরা।

জমিন তৈরী না হওয়া পর্যন্ত যেমন বীজ ফেললে সেই জমিতে ফসল ফলে না, তেমনি মানবতার স্বপক্ষ শক্তির হৃদয়ে ততক্ষণ সেই মহান নেতার আবির্ভাব কি করে আমরা আশা করতে পারি? তাই তো সভ্যতার স্বপক্ষ শক্তি আবার দাঁড়িয়েছে পাশবিকতার বিরুদ্ধে। মানবতার স্বপক্ষে উচ্চারিত হচ্ছে উচ্চকিত জনকল্লোল। একদিন এই জনরবে হারিয়ে যাবে আমাদের আত্মার ক্রন্দন।

জানি, একদিন নতুন আইয়ুবীর আগমন ঘটবে রক্তাক্ত বিশ্বের কান্না থামাতে। কিন্তু কে হবেন সে আইয়ুবী? এখন তিনি কোথায়? কার ঘরে? তার বাহিনীতে থাকবে কি আমার নাম? আমার সন্তানের? জানি না।

শুধু জানি, তিনি আসবেন। তিনি আসবেন সত্যের মশাল হাতে। যে মশালের আলোয় উদ্ভাসিত হবে মানুষের হৃদয়। ঘুচে যাবে অন্তরের অনন্ত অন্ধকার। চাঁদ উঠবে। ফুল ফুটবে। প্রেমের সুবাসে আবার সুবাসিত হবে পৃথিবীর মায়াকানন।