বিংশ পরিচ্ছেদ
প্রভাতের প্রথম আলোকে স্বামীর মুখের প্রতি চোখ পড়িবামাত্রই অচলার বুকের ভিতরটা হাহা-রবে কাঁদিয়া উঠিল। চোখের জল আর সে কোনমতে সংবরণ করিতে পারিল না। এ কি হইয়াছে! মাথার চুল ধুলাতে, বালুতে, ভস্মে রুক্ষ, বিবর্ণ; শীর্ণ বিরসমুখContinue Reading
প্রভাতের প্রথম আলোকে স্বামীর মুখের প্রতি চোখ পড়িবামাত্রই অচলার বুকের ভিতরটা হাহা-রবে কাঁদিয়া উঠিল। চোখের জল আর সে কোনমতে সংবরণ করিতে পারিল না। এ কি হইয়াছে! মাথার চুল ধুলাতে, বালুতে, ভস্মে রুক্ষ, বিবর্ণ; শীর্ণ বিরসমুখContinue Reading
তখনও কেদারবাবু আগেকার স্বাস্থ্য ফিরিয়া পান নাই। খাওয়া-দাওয়ার পরে আসিয়া বারান্দায় একখানা ইজি-চেয়ারে পড়িয়া খবরের কাগজ পড়িতে পড়িতে হয়ত একটু তন্দ্রাভিভূত হইয়াছিলেন, দরজায় ঠিকা গাড়ির কঠোর শব্দে চোখ মেলিয়া দেখিলেন, সুরেশ এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাঁহারContinue Reading
কেদারবাবু সংসারে সাধারণ দশজনের মত দোষে-গুণে মানুষ। মেয়ের বিবাহে জামাই যাহাতে পাস-করা হয়, অবস্থাপন্ন হয়, এই কামনাই করিয়াছিলেন। মহিম ভাল ছেলে, সে এম. এ. পাস করিয়াছে, দেশে তাহার অন্নবস্ত্রের সংস্থান আছে, অতএব তাহার হাতে কন্যাContinue Reading
মহিমের প্রতি অচলার সকলের চেয়ে বড় অভিমান এই ছিল যে, স্ত্রী হইয়াও সে একটি দিনের জন্যও স্বামীর দুঃখ-দুশ্চিন্তার অংশ গ্রহণ করিতে পায় নাই। এই লইয়া সুরেশও বন্ধুর সহিত ছেলেবেলা হইতে অনেক বিবাদ করিয়াছে, কিন্তু কোনContinue Reading
কঠিন নিমোনিয়া রোগ সারিতে সময় লাগিবে। কিন্তু মহিম ধীরে ধীরে যে আরোগ্যের পথেই চলিয়াছিল, এ যাত্রায় আর তাহার ভয় নাই, এ কথা সকলের কাছেই সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছিল। তাহার মুখের অর্থহীন বাক্য, চোখের উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি সমস্তইContinue Reading
একজনের উচ্ছ্বসিত অকপট প্রশংসার মধ্যে যে আর একজনের কত বড় সুকঠোর আঘাত ও অপমান লুকাইয়া থাকিতে পারে, বক্তা ও শ্রোতা উভয়ের কেহই বোধ করি তাহা মুহূর্তকাল পূর্বেও জানিত না। সুরেশ হাতের বাটি হাতে লইয়া আড়ষ্টContinue Reading
অচলার সমস্ত কাজকর্ম, সমস্ত ওঠা-বসার মধ্যেও নিভৃত হৃদয়তলে যে কথাটা অনুক্ষণ জ্বালা করিতেই লাগিল, তাহা এই যে সুরেশের মনের মধ্যে একটা প্রকাণ্ড পরিবর্তন কাজ করিতেছে, যাহার সহিত তাহার নিজের কোন সম্বন্ধ নেই। যে উদ্দাম ভালবাসাContinue Reading
হাওড়া স্টেশন হইতে পশ্চিমের গাড়ি ছাড়িতে মিনিট-দশেক মাত্র বিলম্ব আছে। বাহিরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, টিপি-টিপি বৃষ্টির আর বিরাম নাই। লোকের পায়ে পায়ে জলে-কাদায় সমস্ত প্লাটফর্ম ভরিয়া উঠিয়াছে,—যাত্রীরা পিছল বাঁচাইয়া ভিড় ঠেলিয়া কোনমতে মোটঘাট লইয়া জায়গা খুঁজিয়াContinue Reading
সুরেশ পাশের গাড়িতে গিয়া উঠিল সত্য, কিন্তু তিনি? এই ত সে চোখ মেলিয়া নিরন্তর বাহিরের দিকে চাহিয়া আছে—তাঁহার চেহারা, তা সে যত অস্পষ্টই হোক, সে কি একবারও তাহার চোখে পড়িত না? আর এলাহাবাদের পরিবর্তে এইContinue Reading
সেই ঘরের সম্মুখে ব্যাগের উপরে বসিয়া আশা ও আশ্বাসের স্বপ্ন দেখিয়া অচলার কোথায় দিয়া যে দুই ঘণ্টা অতিবাহিত হইয়া গেল, তাহা সে জানিতে পারিল না। কিছুক্ষণ সূর্য উঠিয়াছে। শীতের দিনের ধূলি-ধূসরিত তরুশ্রেণী কল্যকার ঝড়-জলে স্নাতContinue Reading
সেদিন স্টেশন হইতে পথে কিছু কিছু জলে ভিজিয়া কেদারবাবু সাত-আটদিন গাঁটের বাত ও সর্দিজ্বরে শয্যাগত হইয়া পড়িয়াছিলেন। কন্যা-জামাতার কুশল-সংবাদের অভাবে অতিশয় চিন্তিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি জব্বলপুরের বন্ধুকে একখানা পোস্টকার্ড লেখা ভিন্ন বিশেষ কিছু করিয়া উঠিতেContinue Reading
শীতের সূর্য অপরাহ্নবেলায় ঢলিয়া পড়িবার উপক্রম করিতেছিল, এবং তাহারই ঈষত্তপ্ত কিরণে শোন নদের পার্শ্ববর্তী সুদূর বিস্তীর্ণ বালু-মরু ধু-ধু করিতেছিল। এমনি সময়ে একটা বাঙলোবাটীর বারান্দায় রেলিং ধরিয়া অচলা সেইদিকে চাহিয়া চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া ছিল। তাহার নিজেরContinue Reading
এই জনহীন পুরীর মধ্যে কেবলমাত্র সুরেশকে লইয়া জীবনযাপন করিতে হইবে এবং সেই দুর্দিন প্রতি মুহূর্তে আসন্ন হইয়া আসিতেছে। বাধা নাই, ব্যবধান নাই, লজ্জা নাই—আজ নয় কাল বলিয়া একটা উপলক্ষ সৃষ্টি করিবার পর্যন্ত সুযোগ মিলিবে না।Continue Reading
দুই-একজন দাস-দাসী ব্যতীত দিন পাঁচ-ছয় হইল, বাটীর সকলেই কলিকাতায় চলিয়া গিয়াছেন। কেবল যাওয়া ঘটে নাই কর্তার। কি একটা জরুরী কাজের অজুহাতে তিনি শেষ-সময়ে পিছাইয়া গিয়াছিলেন। এ-কয়দিন রামচরণবাবু নিজের কাজ লইয়াই ব্যস্ত ছিলেন, বড়-একটা তাঁহাকে দেখিতেContinue Reading
প্রায় অপরাহ্নবেলায় ভোজন সমাধা করিয়া রামবাবু তৃপ্তি ও প্রাচুর্যের একটা সশব্দ উদ্গার ছাড়িয়া যখন গাত্রোত্থান করিতে গেলেন, তখন অচলা অনেক কষ্টে একটুখানি হাসিয়া বলিল, কিন্তু জ্যাঠামশাই, যেদিন জানতে পারবেন, আজ আপনার জাত গেছে, সেদিন কিন্তুContinue Reading
একটা কোচের উপর সুরেশ চক্ষু মুদিয়া শুইয়াছিল এবং সন্নিকটে একখানা চৌকি টানিয়া বৃদ্ধ রামবাবু তাহার পীড়িত বক্ষে অগ্নির উত্তাপ দিতেছিলেন, এমন সময়ে উভয়েই দ্বার খোলার শব্দে চাহিয়া দেখিলেন, অচলা প্রবেশ করিতেছে। সে বিনা আড়ম্বরে কহিল,Continue Reading
কিন্তু ইহার মধ্যে ভুল যে কত বড় ছিল, তাহাও প্রকাশ পাইতে বিলম্ব ঘটিল না। বাটী সাজাইবার কাজে ব্যাপৃত থাকিয়া এই-সকল অত্যন্ত মহার্ঘ ও অপর্যাপ্ত উপকরণরাশির মধ্যে দাঁড়াইয়া তাই সকল চিন্তাকে ছাপাইয়া একটি চিন্তা সকলের মনেContinue Reading
পরদিন প্রভাত হইতেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সেই মলিন আকাশতলে সমস্ত সংসারটাই কেমন একপ্রকার বিষণ্ণ ম্লান দেখাইতেছিল। সজ্জিত গাড়ি দ্বারে দাঁড়াইয়া; কিছু কিছু তোরঙ্গ, বিছানা প্রভৃতি তাহার মাথায় তোলা হইয়াছে; পাঁজির শুভমুহূর্তে অচলা নীচে নামিয়া আসিল এবংContinue Reading
সকালবেলা দুটিখানি গরম মুড়ি দিয়া চা খাওয়া শেষ করিয়া কেদারবাবু একটা পরিতৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলিলেন। উচ্ছিষ্ট বাসনগুলি লইতে মৃণাল ঘরে ঢুকিতেই কহিলেন, মা, তোমার এই গরম মুড়ি আর পাথরের বাটির চা’র ভেতরে যে কি অমৃত আছেContinue Reading
একমাত্র কন্যার মৃত্যুর চেয়েও যে দুর্গতি পিতার চক্ষে বড় হইয়া উঠিয়াছে, তাহার আভাসমাত্রেই মৃণাল কুণ্ঠিত ও লজ্জিত হইয়া যখন নিঃশব্দে সরিয়া গেল, তখন এই সাধ্বী বিধবা মেয়েটির লজ্জাটা যেন ঠিক একটা মুগুরের মত কেদারবাবুর বুকেContinue Reading
© All Right Reserved by Eduliture ২০২৪