ফখরুল মিসরী ও মুবী গন্তব্যে পৌঁছুতে না পারলেও এবং পথে ধরা পড়ে গেলেও তেমন কোন অসুবিধা ছিল না। কারণ, ইতিমধ্যে নাজি, ঈদরৌস ও তার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সহকর্মী সুলতান সালাহুদ্দীনের বিষের ক্রিয়ায় দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। নাজি ফাতেমী খেলাফতের একজন সেনাপতি হলেও প্রকৃতপক্ষে সেই মূল রাষ্ট্রনায়ক হয়ে বসেছিল। সে সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবীকে একজন ব্যর্থ ও অথর্ব গভর্নর প্রমাণিত করার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছিল। মুসলিম শাসকবর্গ নিজ নিজ হেরেমে বন্দী হয়ে পড়েছে সেই রূপসী মেয়েদের হাতে, যাদের কেউ খৃষ্টান, কেউ ইহুদী। নাম তাদের ইসলামী। এদের সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রে ভোগ-বিলাসিতা আর যৌনসম্ভোগে আকণ্ঠ নিমজ্জিত মুসলিম শাসকগণ। ইসলামে নিবেদিত ও দেশপ্রেমিক সুলতান সালাহুদ্দীন এখন তাদের চোখের কাঁটা। সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী যদি না থাকতেন, তাহলে ইতিহাসে সালাহুদ্দীন আইউবী নামক কোন ব্যক্তির নাম-চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যেত না। পৃথিবীর মানচিত্রে থাকত না এতগুলো ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব।
সামান্য ইঙ্গিত পেলেই নুরুদ্দীন জঙ্গী সৈন্য প্রেরণ করতেন সুলতান সালাহুদ্দীনের সাহায্যে। সুদানী সৈন্যদের আহ্বানে খৃষ্টানরা যখন মিসর আক্রমণের জন্য রোম উপসাগরে ছড়িয়ে পড়ল, তখন সংবাদ পাওয়ামাত্র নুরুদ্দীন জঙ্গী এমন এক খৃষ্টান দেশের সৈন্যদের উপর আক্রমণ করে বসেন, যারা মিসর আক্রমণের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাচ্ছিল। নুরুদ্দীন জঙ্গী নিজের সমস্যা অপেক্ষা সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবীর সমস্যাকে অধিক প্রাধান্য দিতেন।
কতিপয় বিশ্বাসঘাতক মুসলিম সেনানায়ক ও অসামরিক ব্যক্তি অনুভব করল, মিসরে সুলতান সালাহুদ্দীনের বিরুদ্ধে অস্থিরতা ও বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠছে। সেই বিদ্রোহের আগুনে হাওয়া দিতে শুরু করল তারা। তারা নেপথ্যে থেকে সুদানী সৈন্যদের উত্তেজিত করতে শুরু করল। তারা গুপ্তচর মারফত জানতে পারল, সুদানী সৈনদের সালারদের গোপনে হত্যা করে গুম করে ফেলা হয়েছে। সুদানী বাহিনীর নিম্নপদস্থ কমাণ্ডাররা সালারের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে এবং সালাহুদ্দীন আইউবীর মিসরে অবস্থানরত স্বল্পসংখ্যক সৈন্যের উপর হামলা করার পরিকল্পনা আঁটছেন। সুলতান সালাহুদ্দীনের আধা ফৌজ এবং রাজধানীতে সুলতানের অনুপস্থিতি থেকে ফায়েদা হাসিল করতে চাচ্ছে তারা। সেই পরিকল্পনার আওতায় কালো মেঘের ন্যায় ইসলামের চন্দ্রকে ঢেকে ফেলতে চাচ্ছে পঞ্চাশ হাজার সুদানী ফৌজ।
কায়রো পৌঁছে গেছেন আলী বিন সুফিয়ান। যাকে ধাওয়া করতে গেলেন, তার কোন সন্ধান পেলেন না। সুদানী হেডকোয়ার্টারে অবস্থানরত গোয়েন্দাদের তলব করলেন। তাদের একজন জানাল, গতরাতে একটি উট এসেছিল। তার আরোহী ছিল দুজন। একজন পুরুষ একজন নারী। এখন তারা কোন্ ভবনে অবস্থান করছে, তাও অবহিত করে গোয়েন্দা। আলী বিন সুফিয়ান ইচ্ছে করলে এক্ষুণি হানা দিয়ে তাদেরকে ধরে ফেলতে পারেন। কিন্তু তিনি ভাবলেন, বিষয়টি জ্বলন্ত আগুনে ঘৃতাহুতি হতে পারে। সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। শুধু মুবী আর ফখরুল মিসরীকে গ্রেফতার করাই আলী বিন সুফিয়ানের একমাত্র লক্ষ্য নয়। তার প্রধান লক্ষ্য, সুদানী বাহিনীর প্রত্যয় ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগতি লাভ করা, যাতে এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
গোয়েন্দাদের প্রতি নতুন নির্দেশনা জারী করেন আলী বিন সুফিয়ান। বেশ কিছু মেয়েও আছে তার গোয়েন্দাদের মধ্যে। তারা খৃষ্টান বা ইহুদী নয় মুসলিম। বিভিন্ন পতিতালয় থেকে তুলে আনা হয়েছে তাদের। কিন্তু তাদের প্রতি আলী বিন সুফিয়ানের আস্থা আছে ষোলআনা। তাদেরকে বলে দিলেন মুবীকে খুঁজে বের করতে।
চারদিন হল, আলী বিন সুফিয়ান রাজধানীর বাইরে ঘুরে ফিরছেন। সুদানী ফৌজী নেতৃত্বের চারপার্শ্বে ঘুরপাক খাচ্ছে তার কর্মতৎপরতা।
আজ পঞ্চম রাত। বাইরে খোলা আকাশের নীচে বসে দুজন গোয়েন্দার নিকট থেকে রিপোর্ট নিচ্ছেন তিনি। আলী বিন সুফিয়ান কখন কোথায় থাকেন, তা জানা থাকে তার লোকদের। দলের এক ব্যক্তি আরেকজনকে সঙ্গে করে তার নিকট আসে এবং বলে— ‘এ লোকটাকে জঙ্গল থেকে ধরে এনেছি। ঢুলুঢুলু শরীরে লোকটা একবার পড়ছে আবার উঠে দু কদম সম্মুখে এগিয়ে পুনরায় পড়ে যাচ্ছে দেখতে পেলাম। পরিচয় জানতে চাইলে বলল, আমাকে আমার বাহিনী পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও। নাম নাকি ফখরুল মিসরী। লোকটি ভাল করে কথা বলতে পারছে না। এমনি সময়ে ধপাস করে মাটিতে বসে পড়ে সে।’
‘তুমিই কি সেই কমাণ্ডার, যে একটি মেয়ের সঙ্গে রণাঙ্গন থেকে পালিয়ে এসেছে?’ জিজ্ঞেস করেন আলী বিন সুফিয়ান।
‘আমি সুলতান সালাহুদ্দীনের পলাতক সৈনিক। মৃত্যুদণ্ডের অপরাধে অপরাধী। তবে আগে আমার পুরো ঘটনা শুনুন, অন্যথায় আপনাদের সকলের মৃত্যুদণ্ড বরণ করতে হবে।’ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল লোকটি।
কথা বলার ভাব-ভঙ্গিতে আলী বিন সুফিয়ান বুঝে ফেললেন, লোকটি নেশাগ্রস্থ। তাই তাকে নিজের দফতরে নিয়ে যান এবং রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা থলেটি তাকে দেখান। জিজ্ঞেস করেন— ‘এই থলেটি কি তোমার? এর খাদ্য-দ্রব্য খেয়েই কি তোমার এই দশা?’
‘হ্যাঁ, ও আমাকে এর থেকেই খাওয়াত।’ জবাব দেয় ফখরুল মিসরী।
থলের ভিতরে পাওয়া পুটুলিটি আলীর সামনে রাখা। ফখরুল মিসরী ঝট করে পুটুলিটি হাতে নিয়ে খুলেই মিষ্টির মত একটি টুকরা তুলে নেয়। আলী বিন সুফিয়ান খপ করে তার হাতটা ধরে ফেলেন। ফখরুল মিসরী অস্থিরচিত্তে বলে, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে আমায় এটি খেতে দাও। এরই মধ্যে আমার জীবন। অন্যথায় আমি বাঁচব না।’
আলী বিন সুফিয়ান ফখরুল মিসরীর হাত থেকে টুকরাটি ছিনিয়ে নেন এবং বলেন— ‘তোমার পূর্ণ কাহিনী শোনাও, তারপর না হয় এসব খেয়ে জীবন বাঁচাবে।’
আলী বিন সুফিয়ানকে নিজের পূর্ণ কাহিনী শোনায় ফখরুল মিসরী। ক্যাম্প থেকে মেয়েটিকে ধাওয়া করা থেকে শুরু করে সর্বশেষ ঘটনা পর্যন্ত সবিস্তার বিবরণ দেয় আলী বিন সুফিয়ানের কাছে। সে জানায়, বণিকরা আমাকে কফি পান করায়, যার ক্রিয়ায় আমি ভিন্ন এক জগতে গিয়ে উপনীত হই। বণিকরা তাকে যা যা বলেছে, তাও শোনায় সে আলী বিন সুফিয়ানকে। মেয়েটির ফাঁদে আটকা পড়া সম্পর্কে ফখরুল জানায়, ‘বণিকদের দেওয়া কফি পান করে আমি নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ি। মেয়েটির বিবৃত কাহিনী শুনে আমার মনে সুলতান সালাহুদ্দীনের প্রতি অশ্রদ্ধা সৃষ্টি হয়। আমি তাদের ফাঁদে আটকা পড়ি। উটের পিঠে বসিয়ে মূবী আমাকে কোথায় যেন নিয়ে রওনা হয়। তার প্রেমে পড়ে আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
আমরা একটানা চলতে থাকি। মাঝে-মধ্যে সামান্য বিরতি দিয়ে মেয়েটি ছোট্ট পুটুলি থেকে আমাকে কি যেন খাওয়ায়। আমি নিজেকে রাজা ভাবতে শুরু করি। মেয়েটি আমাকে ভালবাসার নিশ্চয়তা দিয়েছিল, ওয়াদা দিয়েছিল আমাকে বিয়ে করবে। শর্ত দিয়েছিল, আমি তাকে সুদানী কমাণ্ডারদের নিকট পৌঁছিয়ে দেব।
আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। বিয়ে ছাড়াই মেয়েটিকে স্ত্রীর মত ব্যবহার করার চেষ্টা করি। মেয়েটি তার বাহুবন্ধনে জড়িয়ে নিয়ে প্রেম দিয়ে আমাকে পাগল করে তোলে।
তৃতীয়বার পানাহারের জন্য অবতরণ করে দেখি, থলে নেই। খাদ্যভর্তি থলেটি পথে কোথায় পড়ে গেছে যেন। পিছনে ফিরে গিয়ে থলেটি খুঁজে আনার জন্য বলে মুবী। আমি বললাম, আমি পলাতক সৈনিক। আশঙ্কা আছে, দলের লোকেরা আমাকে ধাওয়া করবে। কিন্তু জিদ ধরে বসে মেয়েটি। বলে, না, যে করেই হোক থলেটি খুঁজে আনতেই হবে। আমি তাকে বুঝাবার চেষ্টা করি যে, আমাদের ক্ষুধায় মরে যাওয়ার ভয় নেই। একান্ত প্রয়োজন হলে পথে কোন বাড়িতে গিয়ে কিছু চেয়ে খাব। কিন্তু লোকালয়ের কাছে ঘেঁষতে রাজি নয় মেয়েটি। আমি তাকে জোরপূর্বক উটের পিঠে বসিয়ে নিই এবং তার পিছনে বসে উট হাঁকাই।
সেদিন ছিল সফরের তৃতীয় দিন। সন্ধ্যার সময় মেয়েটি শহরের বাইরে সুদানীদের এক কমাণ্ডারের নিকট গিয়ে উপস্থিত হয়। আমি আমার মাথায় এমন অস্থিরতা অনুভব করলাম, যেন মাথায় কতগুলো পোকা কিলবিল করছে। ধীরে ধীরে আমি বাস্তব জগতে ফিরে আসি।’
ফখরুল মিসরী বুঝতে পারেনি, তার এ অস্থিরতা হাশীশ না পাওয়ার ক্রিয়া। তার কাল্পনিক রাজত্ব আর স্বপ্নের জান্নাত থলের মধ্যে কোথায় মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে। মেয়েটি তার সামনে কমাণ্ডারকে খৃষ্টানদের পয়গাম শোনায় এবং বিদ্রোহের জন্য উত্তেজিত করে। ফখরুল মিসরী পাশে বসে সব শুনতে থাকে। তার মাথার পোকাগুলো বড় হয়ে ছুটোছুটি করতে শুরু করে। নেশার ঘোর কেটে গেছে অনেকটা। আস্তে আস্তে তার মনে পড়তে শুরু করে, সে রণাঙ্গন থেকে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু মুবীর ধারণা, ফখরুল মিসরী এখনও নেশাগ্রস্থ। তাই সে নির্দ্বিধায় ফখরুল মিসরীর সামনেই কমাণ্ডারদের বলে, ‘সুলতান সালাহুদ্দীন ও আলী বিন সুফিয়ানের মধ্যে এমন ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করতে হবে, যেন উভয়ই উভয়কে নারীলোলুপ ও মদ্যপ ভাবতে শুরু করে। তাদের এই দীর্ঘ আলাপচারিতায় বিদ্রোহ নিয়েও কথা হয়।’ এতক্ষণে ফখরুল মিসরী সম্পূর্ণ সচেতন হয়ে উঠেছে। কিন্তু মাথার অস্থিরতা দারুণ পেরেশান করে রেখেছে তাকে। ‘মেয়েটি কমাণ্ডারকে বলে, বিদ্রোহ যদি করতে হয়, তাহলে সময় নষ্ট করা যাবে না। সুলতান সালাহুদ্দীন এখন রণাঙ্গনে আছেন এবং মহাব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
মেয়েটি তাদেরকে একটি মিথ্যে কথা বলে যে, তিন-চারদিন পর খৃষ্টানরা দ্বিতীয়বারের মত আক্রমণ করতে যাচ্ছে। এখানকার এই গুটিকতক সৈন্যকেও রণাঙ্গনে তলব করতে বাধ্য হবেন সালাহুদ্দীন। কমাণ্ডারও মুবীকে জানায়, ছয়-সাতদিনের মধ্যে সুদানী বাহিনী এখানকার সৈন্যদের উপর আক্রমণ করতে যাচ্ছে।’
এইসব কথোপকথন শুনতে থাকে ফখরুল মিসরী। মধ্যরাতের পর পৃথক একটি কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। তার শোয়ার ব্যবস্থা আছে সেখানে। মুবী ও কমাণ্ডারগণ অবস্থান করে অন্য কক্ষে। দুই কক্ষের মধ্যখানে একটি দরজা। বন্ধ করে দেওয়া হয় দরজাটি। কৌতূহলী হয়ে উঠে ফখরুল মিসরী। কান খাড়া করে বসে দরজা ঘেঁষে। অপর কক্ষ থেকে হাসির শব্দ শুনতে পায় সে। তারপর মেয়েটির কথা বলার আওয়াজ— ‘লোকটাকে হাশীশের জোরে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। প্রেম নিবেদন করে রূপের মোহজালে তাকে আবদ্ধ করে রেখেছি। আমার একজন রক্ষীর প্রয়োজন ছিল। হাশীশের থলেটি পথে কোথায় যেন পড়ে গেছে। ভোরে উঠে যদি খাবার না পায়, বেটা বড় পেরেশান করবে।’
তারপর থেকে ফখরুল মিসরীর কানে যেসব শব্দ ভেসে আসে, তাতে পরিষ্কার বুঝা গেল, তারা মদপান করছে, চলছে বেহায়াপনা। দীর্ঘ সময় পর কমাণ্ডারের কণ্ঠ শুনতে পায় ফখরুল মিসরী— ‘এ লোকটি এখন আমাদের জন্য সম্পূর্ণ বেকার। হয় তাকে বন্দীশালায় ফেলে রাখ, নতুবা শেষ করে দাও।’
প্রস্তাবে সায় দেয় মুবী।
পালাবার পথ খুঁজতে শুরু করে ফখরুল মিসরী। রাতের তখন প্রথম প্রহর। ফখরুল মিসরী কক্ষ থেকে বের হয়। পা টিপে টিপে বেরিয়ে পড়ে বাইরে। ভোর নাগাদ নিরাপদ দূরত্বে চলে যায় সে। মনে তার দ্বিমুখী সংশয়। পশ্চাদ্ধাবনের ভয়। উভয় দিকেই মৃত্যু দেখতে পাচ্ছে সে। নিজের বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও অপরাধী, সুদানীদের হাতে ধরা পড়লে তো মৃত্যু নিশ্চিত।
দিনভর একস্থানে লুকিয়ে থাকে ফখরুল মিসরী। নেশার টান, ভয় আর ক্ষোভ লোকটার দেহ ও দেমাগকে বেকার করে তুলছে। রাত নাগাদ চলনশক্তিও লোপ পেতে শুরু করে তার। অবশেষে তার এই অনুভূতিটুকুও নিঃশেষ হয়ে যায় যে, এখন দিন না রাত। নিজে এখন কোথায় আছে, তাও বলতে পারছে না সে। একবার ইচ্ছে হয়, ঐ খৃষ্টান মেয়েটাকে গিয়ে খুন করে আসে। আবার ভাবে, একটা উট বা ঘোড়া পেলে রণাঙ্গনে গিয়ে সুলতান সালাহুদ্দীনের পায়ে পড়ে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে। কিন্তু যাই সে ভাবছে, মুহূর্ত মধ্যে অন্ধকার এসে ঝাঁপসা করে দিচ্ছে তার সামনের সবকিছু।
এমনি অবস্থায় এই লোকটিকে পেয়ে যায় সে। লোকটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গুপ্তচর। তাই প্রশিক্ষণ অনুযায়ী ফখরুল মিসরীর সঙ্গে, সে বন্ধুত্ব ও সমবেদনামূলক কথা বলে এবং তুলে আলী বিন সুফিয়ানের নিকট নিয়ে আসে।
সুদানী বাহিনী যে আক্রমণ ও বিদ্রোহ করবে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জানা গেল, এ বিদ্রোহ সংঘটিত হতে পারে যে কোন মুহূর্তে। আলী বিন সুফিয়ান একবার ভাবলেন, তিনি সুদানী কমাণ্ডারদের বিদ্রোহের ব্যাপারে সতর্ক করবেন এবং সুলতান সালাহুদ্দীনকে সংবাদ দেবেন। কিন্তু হাতে তার সময় নেই। ইত্যবসরে আলী বিন সুফিয়ান সংবাদ পান, সুলতান তাঁকে ডাকছেন। আলী বিন সুফিয়ান শশব্যস্তে উঠে রওনা দেন। মনে তার আশঙ্কা, সুলতানকে ময়দানে রেখে এসেছি; এখন তিনি এখানে, কোন অঘটন ঘটেনি তো!
সুলতান সালাহুদ্দীন আলী বিন সুফিয়ানকে বললেন— ‘আমি সংবাদ পেয়েছি, উপকূলে খৃষ্টানদের একটি গ্যাং অবস্থান করছে। তাদের কেউ কেউ এদিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ময়দানে এখন আর আমার কাজ নেই। নায়েবদেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। এদিকে কোন সমস্যা হল কিনা ভেবে মনটা আমার বেজায় ছটফট করছিল। তাই চলে আসলাম। এদিকের খবর কী?’
আলী বিন সুফিয়ান সুলতান সালাহুদ্দীনকে সব খবর শোনান এবং বলেন, ‘আপনি যদি অনুমতি দেন, তা হলে আমি মুখের অস্ত্র ব্যবহার করে বিদ্রোহ দমন করার চেষ্টা করি কিংবা সুলতান জঙ্গীর সাহায্য আসা পর্যন্ত বিদ্রোহ মুলতবী রাখার ব্যবস্থা করি। এ কাজে আমি আমার গোয়েন্দাদেরই কাজে লাগাতে পারি। আমাদের সৈন্য কম। আক্রমণ হয়ে গেলে আমাদের পক্ষে মোকাবেলা করা কঠিন হবে।’
মাথা নত করে কক্ষে পায়চারী করতে শুরু করেন সুলতান সালাহুদ্দীন। গভীর ভাবনায় হারিয়ে যান তিনি। আলী বিন সুফিয়ান তাকিয়ে আছেন সুলতানের প্রতি। হঠাৎ থেমে গেলেন সুলতান। বললেন—
‘হ্যাঁ, আলী! তুমি তোমার ভাষা ও গুপ্তচরদের ব্যবহার কর। তবে আক্রমণ প্রতিহত করার কাজে নয়— আক্রমণের পক্ষে। আমাদের উপর সুদানীদের হামলা করাই উচিত এবং তা হওয়া দরকার যখন আমাদের বাহিনী ব্যারাকে ঘুমিয়ে থাকে ঠিক তখন।’
বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে সুলতানের প্রতি তাকিয়ে থাকেন আলী বিন সুফিয়ান। সুলতান বললেন— ‘এখানকার সব কজন কমাণ্ডারকে ডেকে পাঠাও এবং তুমিও এসে পড়। সুলতান সালাহুদ্দীন আলী বিন সুফিয়ানকে কঠোরভাবে বলে দেন, যেন তিনি কমাণ্ডারদের জানিয়ে দেন, তিনি যে ময়দান থেকে এখানে এসেছেন, তা যেন ঘুণাক্ষরেও অন্য কেউ না জানে। তিনি বলেন, ‘এখানে আমার উপস্থিতি গোপন রাখা অত্যন্ত জরুরী। আমি অতি সাবধানে সন্তর্পণে চলে এসেছি।’
* * *
তিন রাত পর।
আঁধার রাতের কোলে গভীর নিদ্রায় শুয়ে আছে কায়রো। একদিন আগে নগরবাসীরা দেখেছিল, তাদের নবগঠিত মিসরী বাহিনীটি শহর ত্যাগ করে কোথাও যাচ্ছে। প্রচার হয়েছিল, বাহিনী সামরিক মহড়ার জন্য শহরের বাইরে গেছে। নীলনদের কূলে বালুকাময় পার্বত্য এলাকায় উপনীত হয়ে তাঁবু গেড়েছে সৈন্যরা। বাহিনীর কেউ পদাতিক, কেউ অশ্বারোহী।
রাতের প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্ত। কায়রোর ঘুমন্ত বাসিন্দারা দূরে কোথাও প্রলয় সংঘটিত হওয়ার শব্দ শুনতে পায়। ঘোড়ার দ্রুত দৌড়াদৌড়ির আওয়াজও কানে আসে তাদের। জেগে উঠে ঘুমন্ত মানুষগুলো। তারা প্রথম প্রথম মনে করেছিল, সৈন্যদের মহড়া চলছে। কিন্তু শোরগোল ধীরে ধীরে নিকটে চলে আসছে এবং স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে ওঠছে। ঘরের ছাদে উঠে দেখতে শুরু করে জনতা। লাল বর্ণ ধারণ করছে আকাশ। কারও কারও চোখে পড়ছে, নীল নদ থেকে আগুনের শিখা উঠে এসে আঁধার রাতের বুক চিরে ডাঙ্গায় এসে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। তারপরই শহরে হাজার হাজার ঘোড়ার ছুটোছুটি— দৌড়াদৌড়ির শব্দ-শোরগোল শুরু হয়ে যায়। শহরবাসীরা এখনও জানে না, এটি মহড়া নয় রীতিমত যুদ্ধ। আর যে আগুন দেখা যাচ্ছে, তাতে সুদানী বাহিনীর সিংহভাগ পুড়ে ছাই-এ পরিণত হচ্ছে।
সুলতান সালাহুদ্দীনের এ এক অনুপম রণকৌশল। তিনি রাজধানীতে অবস্থানরত স্বল্পসংখ্যক সৈন্যকে নীল নদ ও বালুকাময় টিলার পর্বতশ্রেণীর মাঝে বিস্তীর্ণ মাঠে পাঠিয়ে দেন। তারা তাঁবু স্থাপন করে সেখানে অবস্থান নেয়। নিজের কৌশল ও দক্ষতা কাজে লাগান আলী বিন সুফিয়ান। সুদানী বাহিনীর মধ্যে গুপ্তচর ঢুকিয়ে তিনি বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে এবং কমাণ্ডার থেকে এই সিদ্ধান্ত আদায় করে নেন যে, রাতে যখন সুলতান সালাহুদ্দীনের সৈন্যরা গভীর নিদ্রায় ঘুমিয়ে থাকবে, ঠিক তখন সুদানী বাহিনী তাদের উপর হামলা চালাবে। ভোর নাগাদ এক একজন করে সৈন্য শেষ করে নির্বিঘ্নে রাজধানী দখল করে নেওয়া হবে। আর সুদানী বাহিনীর অপর অংশকে রোম উপসাগরের কূলে অবস্থানরত সালাহুদ্দীন বাহিনীর উপর আক্রমণ করার জন্য প্রেরণ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা মোতাবেক সুদানী বাহিনীর একটি অংশকে নিতান্ত গোপনে রাতে রোম উপসাগরের রণাঙ্গন অভিমুখে প্রেরণ করা হয়। অপর অংশ নীল নদের কূলে অবস্থানরত সৈন্য বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এ বাহিনীটি সমুদ্রের স্রোতের ন্যায় এক মাইল বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তৈরী করা সালাহুদ্দীন বাহিনীর তাঁবুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মুহূর্ত মধ্যে অতি দ্রুত সমগ্র এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ তাঁবুগুলোর উপর আগুনের তীর ও তেলভেজা কাপড়ে প্রজ্বলমান গোলা বর্ষিত হতে শুরু করে। অগ্নিবর্ষণ করতে আরম্ভ করে নীলনদও। তাঁবুগুলোতে আগুন ধরে যায়। আকাশময় ছড়িয়ে পড়ে অগ্নিশিখা। সুদানী বাহিনী তাঁবুতে না পেল সুলতান সালাহুদ্দীনের বাহিনীর কোন সৈন্য, না পেল কোন একটি ঘোড়া ও একজন আরোহী। সম্পূর্ণ শূন্য সবগুলো তাঁবু। এগিয়ে এল না কেউ মোকাবেলার জন্য। আর হঠাৎ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে তাঁবু এলাকার সর্বত্র। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে সমগ্র এলাকা।
সুদানী বাহিনীর জানা ছিল না, সুলতান সালাহুদ্দীন রাতের প্রথম প্রহরে ছাউনীগুলো থেকে তাঁর বাহিনীকে সরিয়ে নিয়ে বালুকাময় টিলাসমূহের পিছনে লুকিয়ে রেখেছেন এবং তাঁবুগুলোতে শুকনো ঘাসের স্তূপ ভরে রেখেছেন। তাঁবুর উপরে এবং ভিতরে তেল ছিটিয়ে রেখেছেন। সুলতান সালাহুদ্দীন কিশতীগুলোতে ছোট ছোট মিনজানীক রেখে সন্ধ্যার পর যথাস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
সুদানী বাহিনী যেই মাত্র ছাউনী এলাকায় প্রবেশ করে, অমনি সুলতান সালাহুদ্দীনের লুকিয়ে থাকা সৈন্যরা অগ্নিতীর এবং কিশতীতে রাখা মিনজানীক দ্বারা আগুনের গোলা নিক্ষেপ করতে শুরু করে দেয়। তাঁবুগুলোতে আগুন ধরে গেলে শুকনো ঘাস আর তেল এলাকাটাকে জাহান্নামে পরিণত করে। সুদানীদের ঘোড়াগুলো তাদের পদাতিক সৈন্যদের পিষতে শুরু করে। আগুনের বেষ্টনী থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাদের। হাজার হাজার সৈন্যের আর্তচীৎকার আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে তোলে। অন্ধকার রাতটাকে দিনে পরিণত করে প্রজ্বলিত আগুন। সুলতান সালাহুদ্দীনের মুষ্টিমেয় সৈন্য আগুনে প্রজ্বলমান সুদানীদের ঘিরে ফেলে। আগুন থেকে বেরিয়ে যেই পালাবার চেষ্টা করছে, তীর বিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ছে সে।
ওদিকে সুদানীদের যে বাহিনীটি রণাঙ্গন, অভিমুখে সুলতান সালাহুদ্দীনের বাহিনীর উপর আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাচ্ছিল, তাদের ব্যাপারেও উপযুক্ত ব্যবস্থা করে রেখেছেন সুলতান সালাহুদ্দীন। সুলতানের কয়েকটি ক্ষুদ্র বাহিনী বিভিন্ন স্থানে ওঁৎ পেতে বসে আছে পূর্ব থেকে। অগ্রসরমান সুদানী বাহিনীর পিছন ভাগে আক্রমণ চালিয়ে হুলস্থুল সৃষ্টি করে দেয় গোটা বাহিনীতে। এক আক্রমণে যতটুকু ক্ষতিসাধন করা সম্ভব ছিল, তা করে তারা অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যায়। বিপর্যস্ত সুদানী বাহিনী নিজেদের সামলে নিতে না নিতেই বাহিনীর পশ্চাদ্ভাগের উপর আক্রমণ আসে আবার। আক্রমণ চালিয়েই বিদ্যুদ্গতিতে অন্ধকারে হাওয়া হয়ে যায় তারাও।
ভোর পর্যন্ত সুদানীদের এই বাহিনীটির উপর হামলা হয় তিনবার। মনোবল হারিয়ে ফেলে সুদানী বাহিনী। মোকাবেলা করার সুযোগই পাচ্ছে না তারা। দিনের বেলা কমাণ্ডাররা বুঝিয়ে-শুনিয়ে মন ঠিক করে সৈন্যদের। কিন্তু রাতে ফেরার পথে গতরাতের ন্যায় একই দশা ঘটে তাদের। এবার অন্ধকারে তীরও বর্ষিত হয় তাদের উপর। অন্ধকারে ঘোড়ার ছুটোছুটির শব্দ শুনতে পায় তারা। কিন্তু দেখতে পাচ্ছে না কিছুই। এই ঘোড়াগুলোই তাদের করুণ দশা ঘটিয়ে যাচ্ছে নেপথ্যে থেকে।
তিন-চারজন ঐতিহাসিক— যাদের মধ্যে নীল পল ও উইলিয়াম অন্যতম— লিখেছেন, রাতের বেলা বিপুলসংখ্যক শত্রুসেনার উপর গুটিকতক সৈন্যের কমাণ্ডো আক্রমণ ও চোখের পলকে উধাও হয়ে যাওয়া ছিল সুলতান সালাহুদ্দীনের এমনি এক রণকৌশল, যা খৃষ্টানদের বিপুল ক্ষতিসাধন করেছে। এভাবেই দুশমনের অগ্রযাত্রাকে দারুণভাবে ব্যাহত করতেন সুলতান সালাহুদ্দীন। কৌশলের মার-প্যাঁচে ফেলে তিনি শত্রু সেনাদের তাঁরই নির্বাচিত স্থানে গিয়ে যুদ্ধ করতে বাধ্য করতেন। এ ঐতিহাসিকগণ সুলতান সালাহুদ্দীনের এই জানবাজ সৈন্যদের বীরত্ব ও বিদ্যুদ্গতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এ যুগের সমর বিশ্লেষকগণ স্বীকার করে থাকেন যে, বর্তমানকার গেরিলা ও কমাণ্ডো অভিযানের আবিষ্কর্তা হলেন বীর মুসলিম যোদ্ধা সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী। এ পদ্ধতিতে যুদ্ধ করেই তিনি শত্রুপক্ষের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতেন।
এ কৌশল অবলম্বন করেই তিনি মাত্র দু রাতে বার কয়েক কমাণ্ডো আক্রমণ চালিয়ে সুদানী সৈন্যদের যুদ্ধ করার মনোবল শেষ করে দিয়েছেন। সুদানীদের নেতৃত্বে বিচক্ষণ কোন মেধা ছিল না। বিধ্বস্ত এই সৈন্যদের সামাল দিতে পারল না কমাণ্ডাররা। সুদানী সৈনিকের বেশে আলী বিন সুফিয়ানের কিছু লোকও ছিল এ বাহিনীতে। তারা সংবাদ ছড়িয়ে দেয়, আরব থেকে এমন একটি বাহিনী আসছে, যারা সুদানীদের ঝাঁড়ে-বংশে নির্মূল করে দেবে। সুদানী সৈন্যদের মধ্যে ভীরুতা ও পলায়নপ্রবণতা সৃষ্টি করার কাজে সফল হয় আলীর লোকেরা। শৃংখলা হারিয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় তারা। নীল নদের কূলে এই বাহিনীটির যে পরিণতি ঘটে, তা নিতান্তই করুণ।
আরব থেকে বাহিনী আগমনের সংবাদ গুজব ছিল না। সত্যি সত্যিই একদিন এসে পৌঁছে নুরুদ্দীন জঙ্গীর একটি দুর্ধর্ষ বাহিনী। সংখ্যায় তারা বেশী নয়। ঐতিহাসিকদের কারও মতে দু হাজার অশ্বারোহী ও দু হাজার পদাতিক। মোট চার হাজার। কারও কারও মতে আরও কিছু বেশী। সে যাই হোক, এই বাহিনী সুলতান সালাহুদ্দীনের অনেক উপকারে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে বাহিনীটির নেতৃত্ব হাতে তুলে নেন সুলতান।
সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী এই আরব বাহিনী এবং নিজের বাহিনীর যৌথ অভিযান চালিয়ে সুদানীদের একজন একজন করে খুন করে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি কৌশল অবলম্বন করেন। সুদানী কমাণ্ডারদের গ্রেফতার করেন এবং তাদের বুঝাবার চেষ্টা করেন যে, এখন আর তাদের চূড়ান্ত পতন ছাড়া কোন পথ নেই। তবে আমি তোমাদের সমূলে বিনাশ করব না। সুলতানের শাস্তির ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিল কমাণ্ডাররা। সুলতান সালাহুদ্দীন তাদের ক্ষমা করে দেন এবং শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে সুদানীদের বেঁচে যাওয়া সৈনিকদের কৃষি-কর্মে পুনর্বাসিত করেন। তাদেরকে জমি দান করেন এবং চাষাবাদের জন্য সরকারী সহযোগিতা প্রদান করেন। তারপর তাদের অনুমতি প্রদান করেন, তোমাদের কেউ সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে চাইলে হতে পার।
এমনি বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার সাথে সুদানীদের দমন করে সুলতান সালাহুদ্দীন নুরুদ্দীন জঙ্গীর প্রেরিত বাহিনী এবং নিজের বাহিনীকে একত্রিত করে ওফাদার সুদানীদেরও তাদের সঙ্গে যুক্ত করে একটি সুশৃংখল শক্তিশালী বাহিনীর রূপ প্রদান করেন এবং খৃষ্টানদের উপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে শুরু করেন। আলী বিন সুফিয়ানকেও তার বিভাগকে পুনর্বিন্যস্ত করার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে গুপ্তচরবৃত্তি ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড আরও জোরদার করে চলেছে খৃষ্টানরা।