ভোর পাঁচটা থেকে একটানা ন’টা পর্যন্ত ক্লাস চলল। তারপর একঘণ্টার জন্য টি-ব্রেক। ব্রেকফাস্টও ওই সময়ে দিয়ে দেওয়া হল। ভবন লাগোয়া আরেকটি মস্ত ঘর সেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা। ঘরটায় চার দেওয়াল ঘেঁষে সার সার আসন পাতা এবং প্রতিটি আসনের সামনে একটি করে একফুট উঁচু কাঠের চৌকি। চৌকির ওপরে রেশমের চাদরঢাকা থালা গ্লাস বাটি ইত্যাদি। সকলে বসে পড়ল। খুব সাধারণ ব্রেকফাস্ট। হাতে গড়া রুটি, তরকারি, নানারকম ফল এবং চা। পরিমাণও অঢেল নয়। খাওয়া শেষ করে বাকি সকলের সঙ্গে পরিচয়পর্ব শেষ হল। সব মিলিয়ে জনা দশেক। সকলেই ট্রেনিং-এর বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। সিনিয়ররা এখানে খেতে আসেন না। তাঁদের কেউ হয়তো নায়কের সঙ্গেই ব্রেকফাস্ট সারেন অথবা তাঁদের নিজেদের রুমে নির্দিষ্ট টাইমে পৌঁছে দেওয়া হয়। ওখানে কারও নাম শকুন্তলা, কেউ রম্ভা, কারও নাম কামিনী। উনিশ বছর বয়েসি মোহিনীর সঙ্গে আলাপ হল রূপসার। পাঞ্জাবের মেয়ে। অপরূপ সুন্দরী। যেমন লম্বা, তেমনই ফর্সা। চওড়া কাঁধ, টিকলো নাক। গালদুটো পাকা আপেলের মতোই টুকটুকে। পাতলা ঠোঁটদুটিতে যেন লাল লিপস্টিক মাখানো রয়েছে। লম্বাটে গড়নের মুখে কালো দীর্ঘ চোখদুটি খুব মায়াবী। যে দেখবে সেই ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়বে। হাসলে ডালিমের দানার মতো স্বচ্ছ এবং সুসজ্জিত দাঁতের সারি দেখা যায়। মেয়েটির সহজ এবং খিলখিল হাসি একেবারে সেতারের মূর্ছনার মতোই ছড়িয়ে পড়ে। রূপসা ওকে দেখে নিজেই গিয়ে আলাপ করল। চিত্রলেখা প্রথম দিনেই বলে দিয়েছিলেন এই কলাকুঞ্জে সকলের সঙ্গে সমভাবে মিশতে। এখানে যেন কোনওপ্রকার অপ্রীতিকর পরিবেশ কখনোই সৃষ্টি না হয়। এখানে প্রত্যেক গণিকার সমান সম্মান। কেউ যেন কারোর সঙ্গে কোনওপ্রকার অসম্মানসূচক ব্যবহার না করে। কোনওরকম সমস্যা হলে তা চিত্রলেখা অথবা রেহানাকে জানাতে। রূপমঞ্জরী প্রেম ও ভালোবাসার জায়গা, সুতরাং সেখানে সামান্যতম অশান্তিও কর্তৃপক্ষ বরদাস্ত করবেন না।
মোহিনীকে বারো বছর বয়েসে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল গোয়ার এক বেশ্যালয়ে। সেখানে প্রায় দুই বছর কাটিয়ে আরও সাতঘাটের জল খেয়ে তারপর একবছর আগে এখানে সুযোগ পেয়েছে।
কেমন আছ জিজ্ঞাসা করায় সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, খুব ভালো। অনেক নিশ্চিন্ত এখানে।
নিশ্চিন্ত এই শব্দটাই আলাদা করে কানে বেজেছিল রূপসার। সত্যিই মানুষ হয়তো চিরকাল নিশ্চিন্তিই খোঁজে।
একঘণ্টা ব্রেকের পর আবার শুরু হল ক্লাস। কলাকুঞ্জের ভবনের মধ্যেই ক্লাস। রূপসা অবাক হয়ে দেখছিল চিত্রলেখাকে। সত্যিই কারও কাছে বয়স শুধু একটা সংখ্যামাত্র। একবার রূপসাদের কামকলার তত্ত্ব শেখাচ্ছেন, আরেকবার চলে যাচ্ছেন যারা নাচ শিখছে তাদের দিকে। নাচ শেখানোর শিক্ষিকা নিজেও একজন গণিকা। এবং সেও একসময়ে মায়েরই স্টুডেন্ট ছিল। অন্য একদিকে চলছে গান এবং মৃদঙ্গ, সেতার, বীণা, বাঁশি ইত্যাদি শেখানোর ক্লাস। গান মানে ঠুংরি অথবা গজল।
চিত্রলেখা সবদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কখনও গান কখনও নাচ এমনকি একটি মেয়ে মৃদঙ্গ বাজাচ্ছিল তাকেও তাল ধরিয়ে দিলেন। আশ্চর্য গুণী মহিলা। চিত্রলেখার রূপ এবং গুণ যত দেখছিল ততই এতদিনের পুরোনো অনেক ধ্যানধারণা খসে পড়ছিল।
ক্লাস চলল দুপুর পর্যন্ত। তারপর চিত্রলেখা বললেন, আগামী তিনদিন তোমাদের একবেলা করে প্রশিক্ষণ চলবে। তারপর থেকে দুই বেলাই।
দুপুরে ছুটি হয়ে গেল। এবার স্নান-খাওয়া করে নিজের ইচ্ছেমতো সময় কাটানো। চিত্রলেখা বললেন, তোমরা রূপমঞ্জরীর যে কোনও জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারো। সবখানেই অবাধ। এখানে অনেক কিছু রয়েছে দেখার। সাধারণ ট্যুরিস্টরাও তো বাইরের অংশ ঘুরতে আসেন, সেদিকটাও গিয়ে দেখতে পার।
সুযোগ পেয়ে চিরশ্রী চিত্রলেখাকে জিজ্ঞাসা করল, মা, আমরা কি প্রেমকুঞ্জেও যেতে পারি?
চিরশ্রীর কথায় স্বভাবসিদ্ধ মিষ্টি হাসলেন চিত্রলেখা। বললেন, কয়েকটা দিন সবুর করো। তারপরে ওখানেই তো তোমাদের কাজ।
সকলেই বুঝল, এখন ওখানে যাওয়ার পারমিশন নেই। চারজন ঘুরতে শুরু করল পায়ে হেঁটে। বিশাল অঞ্চল। পায়ে হেঁটে সবটা ঘুরে দেখা সম্ভব না। দরকারও নেই, একদিনে সব দেখার। রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে ঘোড়ায় টানা রথ যাচ্ছে, কোনওটিতে সওয়ারি রয়েছে, কোনওটিতে নেই। এদিকটায় ট্যুরিস্ট অ্যালাউড নয়। এর বাইরের চৌহদ্দিতেই ট্যুরিস্টদের আনাগোনা। গাছে ঘেরা লাল মোরাম বিছনো রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রূপসা বলল, তোমরা কেউ শান্তিনিকেতনে গেছ?
সেটা কোথায়? জিজ্ঞাসা করল বিশাখা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম শুনেছ? পোয়েট।
টেগোর? হ্যাঁ, শুনেছি।
শান্তিনিকেতন নামের একটা জায়গায় উনি থাকতেন। সেই জায়গাটার সঙ্গে এখানকার খুব মিল রয়েছে। বলতে বলতেই রূপসার মনে পড়ল একবার এক ক্লায়েন্টের সঙ্গে দু’দিনের জন্য শান্তিনিকেতনে ঘুরতে গিয়েছিল। কী যেন নাম ছিল হোটেলটার… এখন মনে পড়ছে না। বেশ ঝাঁ-চকচকে। ওখান থেকেই একদিন ঘুরতে গিয়েছিল শান্তিনিকেতনের ভেতরে। কী সুন্দর জায়গাটা! ইচ্ছে করছিল পুরোপুরি থেকে যেতে। তারপর সেখান থেকে খোয়াইতে সোনাঝুরির হাট। ওখানকার মেয়েদের সঙ্গে নেচেওছিল রূপসা। খুব মজা হয়েছিল। ক্লায়েন্টটা সম্ভবত ফিল্মি ডিরেক্টর ছিল… মুখটা আর মনে নেই। রূপসা খেয়াল করে দেখেছে বেশ কয়েক বছর ধরে ওর কোনও ক্লায়েন্টের মুখ মনে থাকে না। শুধু মুখ না, চেহারাটাও মনে পড়ে না, কিন্তু দীপুদা…হ্যাঁ, দীপুদাকে মনে পড়ে, এতকাল পরেও পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে পড়ে। বিশেষ করে ওর শোধ নেওয়ার সেই মুহূর্তটা। দীপু রূপসার বাড়ি এসে ওর হাতে দুটো দশ টাকার নোট দিয়ে যাওয়ার জ্বালাটা বেশ কয়েকদিন ধরে পরম যত্নে বুকের ভেতর জিইয়ে রাখার পর একটা শনিবার দুপুরে সাইকেলটা নিয়ে রওনা দিয়েছিল রূপসা। সাইকেল চালিয়ে সোজা পদ্মকাকিমার বাড়ি। শনিবার দুপুরে কাকিমা যে বাড়িতে থাকে না সেটা রূপসার জানা ছিল। পাশের পাড়াতেই কাকিমার বাপের বাড়ি। শ্মশানকালীর মন্দির রয়েছে খুব জাগ্রত। কাকিমা প্রতি শনিবার দুপুরে চলে যায়। সন্ধেবেলায় মন্দিরে পুজো দিয়ে, তারপর ফেরে। সেই কারণে রূপসাকে কখনও শনিবার দুপুরের পর আচার নিয়ে আসতে বারণ করে।
কাকিমার বাড়ির সামনে গিয়ে যখন সাইকেলটা থামিয়েছিল রূপসা, তখন ঘেমে অস্থির। কপাল, নাকের পাটা, ঘাড়, গলা ঘামে জবজবে। একটু বেশিই হাঁপাচ্ছিল। সাইকেলের রডে ঝোলানো থলেতে একটা আচারের প্যাকেট।
বারান্দায় বসে পড়ছিল দীপু। রূপসাকে দেখে থমকে গিয়েছিল। তারপর প্রথমেই বলেছিল, মা তো নেই।
নেই? ওহো। আচ্ছা, বলে মুচকি হেসে রূপসা বলেছিল, আমাকে একটু জল খাওয়াবে, দীপুদা?
দীপু নিজের আড়ষ্টতা থেকে বেরোতে পারছিল না।
জল, একটু জল খাওয়াতে পারো আমাকে? হাতে ইশারা করে দেখিয়েছিল রূপসা।
হ্যাঁ দিচ্ছি। উঠে ঘরের ভেতর গিয়েছিল দীপু, আর রূপসা এক মুহূর্ত দেরি করেনি। একলাফে বারান্দায় উঠে ঘরের ভেতর ঢুকে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে দরজা গার্ড করে দাঁড়িয়েছিল।
দীপু রান্নাঘর থেকে জলের গ্লাস হাতে নিয়ে ওই ঘরে আসতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। জানলা দিয়ে আধো অন্ধকার ঘরে সদ্য বিকেলের রোদ ঢুকছে।
একটা জিনিস পরেছি দীপুদা, দেখবে? বলে ঠোঁট চেপে হেসেছিল রূপসা।
দীপু কিছু বলেনি। পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়েছিল এক জায়গায়।
ঘামে ভেজা ফ্রকটা চামড়া ছাড়ানোর মতো করে গা থেকে নামিয়ে রূপসা বলেছিল, এই দেখো ব্রেসিয়ার পরেছি। কেমন লাগছে আমাকে?
দীপু কাঁপছিল। শীত করছিল ওর। হাফপ্যান্ট পরা পা দুটো কাঁপতে শুরু করেছিল।
কী হল দীপুদা, আমাকে ভয় করছে? এসো, দেখো কেমন লাগছে এটা পরে?
দীপু অপলক তাকিয়েছিল সাদা ব্রেসিয়ারের আড়ালে থাকা বুক দুটির দিকে। যেন দুটি শঙ্খ অপেক্ষা করছে কেউ তাকে ঠোঁট ছুঁয়ে ধ্বনিত করবে বলে।
এসো, আমার কাছে। বলে হাত বাড়িয়েছিল রূপসা। নিটোল ভরাট, হাতদুটি সাপের শরীরের মতো মসৃণ এবং পেলব এবং সুন্দর। ওই আহ্বান আর অস্বীকার করতে পারেনি দীপু। জলের গ্লাসটা মাটিতে রেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসেছিল রূপসার দিকে। রূপসার গলা দিয়ে ঘাম নামছিল দুই বুকের মাঝের গভীর পিচ্ছিল পথে। দুই হাত দিয়ে রূপসার বুক স্পর্শ করেছিল, প্রথমে ধীরে তারপর অনভ্যস্ত সজোরে।
আচমকা বেদনায় আহ করে উঠেছিল রূপসা। দীপুর ততক্ষণে আর হুঁশ নেই। কখনও রূপসার কাঁধে কামড় বসাচ্ছে, কখনও নাভিতে চুমু খাচ্ছে, কখনও ঠোঁটে। ব্রায়ের ওপর দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ হাত বোলানোর পর ব্রায়ের হুক খোলার চেষ্টা করেছিল দীপু। পারল না। রূপসা টের পাচ্ছিল, ও নিজে মোটেই এই শরীরী সুখে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে না। বরং এক অন্যরকমের তৃপ্তি পাচ্ছে। সাদা ব্রায়ের ওপরে ওর নরম স্তনদুটিকে যত দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে দীপু, তার আনন্দমেশানো যন্ত্রণার থেকে এক অন্যরকমের তৃপ্তি পাচ্ছিল ও। আচমকাই রূপসা দীপুর পরনের স্যান্ডো গেঞ্জিটা এক টানে মাঝ বরাবর ফরফর করে ছিঁড়ে দিল। তারপর দীপুর পিঠে নিজের দুই হাতের নখ বসিয়ে চিরে দিল।
আআআ করে কঁকিয়ে উঠল দীপু। তারপর ব্রা খুলতে ব্যর্থ হয়ে ওর ভেতরেই হাত ঢোকাতে গেল। তখনই দীপুকে হঠাৎ এক ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিল রূপসা। তারপর আবার কাছে এনে দুই হাত দিয়ে ওর হাফপ্যান্টটা নামিয়ে দিয়েছিল। কাঁচা তেঁতুলের মতো দেখতে দীপুর পৌরুষটি তখন কঠিন, লালায়িত।
দীপু রূপসাকে শুইয়ে দিয়েছিল মেঝেতে। তারপর পেটে, নাভিতে, থাইয়ে নিজের জেগে ওঠা অস্থির পুরুষাঙ্গটি ঘষছিল। কী করবে বুঝতে না পেরে রূপসার শরীরটাকে নিয়ে হাঁচোড়-পাঁচোড় করছিল কিন্তু মুখে কোনও কথা ছিল না। দু-একবার রূপসার প্যান্টিটা টেনে নামাতে গিয়ে রূপসার থেকে বাধা পেয়ে দুই হাত দিয়ে খামচে ব্রেসিয়ারটাকে যে মুহূর্তে সরাতে যাবে তখনই রূপসা দীপুর হাতদুটো ধরে বাঁকা হেসে বলেছিল, তোমার মায়ের দেওয়া ব্রেসিয়ার, দীপুদা। আজ প্রথম পরলাম, কাকিমার ব্রেসিয়ার। কী ভালো, না, পরে দারুণ আরাম লাগছে।
কথাটা শোনার পর যেন চাবুকের আঘাত পেয়ে শিউরে উঠেছিল দীপু। চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে উঠেছিল। ছিটকে সরে গিয়েছিল রূপসার ওপর থেকে।
বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার, দেখো, পুরোনো ব্রেসিয়ার। সামান্য একটু ঢিলেও হয়েছে। এই আগের দিনই কাকিমা দিয়েছিল কয়েকটা। দেখো সামনে থেকে।
দীপু আর তার বুকের দিকেও তাকাচ্ছিল না। দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে বার বার বলছিল, তুই চলে যা…যা…! গোঙাতে শুরু করেছিল দীপু। অদ্ভুত শব্দ করে কাঁদতে শুরু করেছিল।
উঠে দাঁড়িয়েছিল রূপসা। নিজের ফ্রক ঠিক করে নিয়ে দীপুকে বলেছিল, তোমার গেঞ্জিটা ছিঁড়ে ফেললাম দীপুদা, এই কুড়িটা টাকা রাখো, একটা স্যান্ডো গেঞ্জি কিনে নিয়ো। বলে ব্রেসিয়ারের ভেতরে ভরা দুটো ভাঁজ করা দশটাকার নোট দীপুর পাশে রেখে দরজা খুলে যখন বাইরে বেরিয়ে এসেছিল, একরাশ ঠান্ডা হাওয়া জড়িয়ে ধরেছিল ওকে। গত কয়েকদিন ধরে ভারী হয়ে থাকা মনটা এই কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো হালকা ফুরফুরে হয়ে উঠেছিল।
সেদিন সন্ধেবেলাতেই ঝড় আছড়ে পড়েছিল রূপসার বাড়িতে। পদ্মকাকিমা, অসীমকাকু দুজনেই প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রূপসার বাড়িতে। আমার ছেলেটার মাথা খাচ্ছিস! এত শয়তান! নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতাম তোকে, বেশ্যামাগী, খানকি হবি বড় হয়ে…আরও কী কী যেন সব অনর্গল বলে যাচ্ছিল কাকিমা চিৎকার করে। সেই অশ্রাব্য গালিগালাজের প্রায় কিছুই কানে ঢুকছিল না রূপসার। শুধু গালাগালি করেই ক্ষান্ত হচ্ছিল না পদ্মকাকিমা, চিৎকার করার মাঝে মাঝে রূপসার একমাথা লম্বা চুলও মাঝে মাঝে হিড়হিড় করে টেনে নাড়িয়ে দিচ্ছিল, গালে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মারছিল। ঠোঁটের কোণ কেটে গিয়ে কষ বেয়ে ক্ষীণ রক্তধারা নামছিল রূপসার, জিভ বার করে সেই রক্তটুকু চেটে নিচ্ছিল ও। তাই দেখে পদ্ম আবারও হুংকার দিয়ে উঠেছিল, হ্যাঁ, ওই রক্তই খাবি তুই, পিশাচিনী! এই বয়েসেই এত রূপের দেমাক, একদিন এই রূপই তোকে খাবে এই বলে রাখলাম আমি। বেশ্যা কোথাকার!
রূপসার শরীরে পড়া প্রতিটি আঘাত, প্রতিটি কুৎসিত শব্দ ওকে আহত করার বদলে অদ্ভুত এক আনন্দ দিচ্ছিল। কেন দিচ্ছিল রূপসা ঠিক নিজেও বুঝতে পারছিল না কিন্তু মনে মনে একটা কথাই ভাবছিল। দীপুকে ছুড়ে দেওয়া ওই দশ টাকার নোটদুটো, পিঠে ইচ্ছে করে আঁচড়ের দাগ কেটে দেওয়া, যাতে পদ্মকাকিমা ছেলের পিঠের দাগগুলো দেখতে পায়। আচ্ছা দীপুদা কি ওর মাকে বলেছে যে ওর মায়েরই দেওয়া ব্রেসিয়ার পরে এসেছিল রূপসা, আর দীপু…
ভাবনার মাঝেই আবার গালে ঠাসিয়ে একটা থাপ্পড় পড়েছিল রূপসার, আর তখনই বাড়িতে ঢুকেছিল বিলু।
ছোট মফসসল পাড়া। এক বাড়িতে চেঁচামেচি হলে তার কারণ জানতে গোটা পাড়া হামলে পড়ে। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। বিশেষ করে ব্যাপারটা আমিষ সেটা আন্দাজ করার পর প্রতিবেশীদের উঁকিঝুঁকি বাড়ছিল। বাবাকে অবিশ্রান্ত খারাপ কথা বলে অপমান করে যাচ্ছিল দীপুদার বাবা অসীম। রূপসার বাবা কিছুই বলছিল না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল দীপুদার বাবার দিকে। রূপসার দিকে একবারও তাকায়নি।
বিলু বাড়িতে ঢুকে পদ্মকাকিমার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, কী কাকিমা, কী কেস হয়েছে?
পদ্মকাকিমা আবার হাঁউমাউ করে পুরো ঘটনাটা বলেছিল বিলুকে।
বিলু খুব সিরিয়াস মুখ করে ব্যাপারটা শুনতে শুনতে বার বার রূপসার দিকে আপাদমস্তক তাকাচ্ছিল তারপর ঠোঁট উলটে বলেছিল, ভেরি সরি কাকিমা, কী বলব বলুন, আজকালকার মেয়ে…আমাদের ফ্যামিলি প্রেসটিজ বলে আর কিছু রাখল না। যাক আপনারা বাড়ি যান, আমি কেসটা দেখছি।
কাকু-কাকিমাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল দাদা। ওরা চলে যাওয়ার পর বাবা ভাঙা গলায় শুধু বলেছিল, বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে। আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা। মরে যা তুই।
দাদা ধমকে উঠেছিল বাবাকে, আহ, থামো তো! উঠতি বয়সে এমন টুকটাক কেস সবারই হয়, তোমারও হয়েছিল। যাও পাতলা হও তুমি।
বাবাকে অন্য ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে, দাদা ঠোঁট চেটে বলেছিল, আর মাল পেলি না, শেষে ওই ঢ্যাঁড়শ দীপুটাকে…বলে গাল চুলকে বলেছিল, সেদিন ওই কুড়ি টাকাটা ওই দিয়ে গেছিল তো?
রূপসা দাদার চোখে চোখ রেখে বলেছিল, হ্যাঁ।
বিলু পকেট থেকে খৈনির ডিবে বার করে মশলা বানাতে শুরু করে বলেছিল, আমি ঠিকই বুঝেছি। যাক, চিন্তা করিস না। এসব ঝামেলা শুরুতে একটু-আধটু হয়, পরে সব সেটিং হয়ে যায়, বলে বাঁকা হেসে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল দাদা। আর তার ঠিক দু’দিন পরেই পাড়ার অঞ্জনদা এসে সরাসরি অফার দিয়েছিল রূপসাকে।
চলো, ঘোড়ার গাড়িতে চাপা যাক। চিরশ্রীর কথায় পুরোনো জীবন থেকে ফিরে এল রূপসা।
নিজেকে সামলে নিল দ্রুত। সামনে একটি খালি রথ এসে দাঁড়িয়েছে। চারজনেই উঠে পড়ল রথে।
সারথিকে বলা হল বিশেষ কিছু দেখাতে।
প্রেমশিলায় যাবেন?
প্রেমশিলা? সেটা কী?
চলুন, ভালো লাগবে।
বেশ, চলো তাহলে প্রেমশিলা।
সারথি রথ ছোটাল। কিছুক্ষণ পর থামল একটি পাহাড়ের সামনে। হ্যাঁ নকল, এবং উচ্চতা কুড়ি ফুটের বেশি নয়, কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই। পাহাড়ের গায়ে গাছপালাও রয়েছে।
এই তাহলে প্রেমশিলা। দুরন্ত দেখতে কিন্তু। কিন্তু এই পাহাড়ে কি চড়া যায়? জিজ্ঞাসা করল বিশাখা।
আজ্ঞে না। তবে ভেতরে ঢুকে দেখুন, ভালো লাগবে।
বেশ, তাহলে তুমি অপেক্ষা করো। বলে নেমে গেল চারজন। সেই পাহাড়ের সামনে একটি গুহামুখ। গুহামুখটি লতাপাতা জড়ানো পাথুরে দরজা দিয়ে ঢাকা। সামনে দাঁড়িয়ে এক প্রহরী। ওরা সামনে দাঁড়ানো মাত্র প্রহরী দুই হাত জড়ো করে প্রণাম করে দরজা খুলে দিল। ভেতরে প্রবেশ করল চারজনে। ভেতরটা আলো-আবছায়া। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ভিতরে খুব হালকা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় মশাল জ্বলছে। একটু খেয়াল করলে অবশ্য বোঝা যাবে ওগুলো প্রকৃত আগুন নয়, কিন্তু দেখতে আগুনের মতো, আর সেই মশালগুলির সামনে এক একটি করে মিথুন মুদ্রায় নারী ও পুরুষের ভাস্কর্য। সে যে কী অপূর্ব নিজের চোখকেও বিশ্বাস হয় না। রূপসার প্রথমটায় মনে হয়েছিল কলকাতার কোনও নামী ক্লাবের দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল। কিন্তু সেই ভাবনাটা পলকেই মিলিয়ে গেল ওই ভাস্কর্যগুলো দেখে।
বিশাখা বলে উঠল, উফফ অসামান্য! ভাবা যায় না! এ যেন অজন্তা-ইলোরাকেও হার মানায়। কী নিখুঁত কাজ!
আমি কখনও অজন্তা-ইলোরা দেখতে যাইনি, তবে খাজুরাহো দেখেছি। এখানের মূর্তিগুলো যেন অবিকল সেইরকম।
গুহা যেমন হয় ঠিক তেমনই দেওয়াল। আর মূর্তিগুলো, দেওয়ালচিত্রগুলো যেন পাথরের চিত্রিত এবং খোদিত এমনভাবে সৃষ্ট। কম করে তিরিশটি সঙ্গম- মুদ্রার ভাস্কর্য। ছুঁলে যেন নড়ে উঠবে এমনই জীবন্ত। এমন পরিবেশে এই মূর্তিগুলো দেখতে দেখতে একটা ছিকছিকে ভয় লাগছিল। মনে হচ্ছিল প্রতিটি মূর্তিই আসলে জ্যান্ত। মানুষের উপস্থিতিতে ওরা থমকে গিয়েছে। কিংবা কেউ জাদুমন্ত্রে এই রমণরত অবস্থাতেই থামিয়ে দিয়েছে। প্রস্তরীভূত করে দিয়েছে ওদের।
প্রায় আধঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে দেখল ওরা। তারপর অপালা বলল, চলো এবার বেরোনো যাক। আজব একটা জায়গায় এসেছি বটে। দেখে মনে হচ্ছে জ্যান্ত মানুষকে ধরে পাথরের মূর্তি বানিয়ে রেখেছে, কেমন অস্বস্তি হয়।
সায় দিল সকলেই। বেরিয়ে এল গুহা থেকে।
রথে চড়ে বসল। এবার ঘরে ফেরার পালা। সকলেই চুপ। চারটি মেয়েই চুপ করে ভাবছিল তাদের অনাগত অজানা ভবিষ্যতের কথা।
সময়কে স্রোতের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কালস্রোত কথাটি সেই কারণেই। বহতা নদীর মতো সময় অস্থির, কোথাও তার এক মুহূর্ত থামার উপায় নেই। এই বিশ্বজগতের সবকিছুই ভেসে চলেছে এক অখণ্ড সময়ের স্রোতে। সেই বহমানতার নিয়মেই বদলাতে থাকে সবকিছু। রূপসা, অপালা, চিরশ্রী, বিশাখার এই রূপমঞ্জরীতে পা রাখার প্রথম দিনটিও কালের স্রোতেই ভাসতে ভাসতে এক মাস দুই মাস তিন মাস পেরিয়ে গেল কবে নিজেরাও তা টের পেল না। একমাত্র রূপসা বাদে সকলেই তার পুরোনো নামটুকুও বিস্মৃত হল। চিত্রলেখার শিক্ষায় কত রকমের কলায় যে নিপুণ হয়ে উঠল আরও চারটি মেয়ে। নৃত্য, গীত, বাদ্য, বসনভূষণ, ছলাকলা, অঙ্গরাগ শুধু নয়, কামকলার বহু রকমের মুদ্রায় শিক্ষিত হয়ে উঠল অপালা, চিরশ্রী, বিশাখা আর রূপসা। সব মিলিয়ে চব্বিশজন গণিকা রয়েছে এই রূপমঞ্জরীতে। বয়স তেরো থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে। দেশ-বিদেশ থেকে ক্লায়েন্টরা আসে। সকলেই কোটি কোটি টাকার মালিক। আসলে রূপমঞ্জরীর প্রেমকুঞ্জে একটি রাত্রিবাসের যা খরচ তা বহন করার সাধ্য সকলের নেই। একমাত্র হিসাব না করার মতো অর্থ এবং শখ থাকলে তবেই প্রেমকুঞ্জে থাকা যায়। প্রেমকুঞ্জ রূপমঞ্জরীর গর্ভস্থল। বহিরাংশে যে সকল ট্যুরিস্ট ঘুরতে আসেন বা কটেজে দুই-এক রাত্রিবাসও করে যান তাঁদের এই গর্ভস্থলে প্রবেশাধিকার শুধু নেই নয়, তাঁরা কেউ বুঝতেও পারেন না প্রেমকুঞ্জের অবস্থান কোথায়। এমনভাবেই তৈরি। রূপমঞ্জরীর ওয়েবসাইটেও প্রেমকুঞ্জের কোনও উল্লেখ নেই। কারণ, আধুনিক ভারতবর্ষ প্রকাশ্য গণিকাবৃত্তিকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে স্পা, ম্যাসাজ পার্লার, ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছে। এবং সেইগুলির যা মূল্য তা থেকে যে কোনও বুদ্ধিমান ব্যক্তিই আন্দাজ করতে পারেন অন্দরমহলে কী কাণ্ড চলে। প্রশাসন সবই জানে, কিন্তু সেই সমঝোতা অন্য। এই দেশে বেশ্যাবৃত্তি বেআইনি হলেও পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বেশ্যালয় কিন্তু কলকাতা শহরের সোনাগাছিতেই, যা এই রূপনগরের পাশেই। সুতরাং…এর বেশি কিছু বলার অপেক্ষা থাকে না।
রূপমঞ্জরীর মধ্যে প্রেমকুঞ্জে যাঁরা আনন্দ নিতে চান এবং গণিকাদের সাহচর্য নিতে আগ্রহী তাঁরা সব খরচ আর পাঁচটা হোটেলের মতো করে করলেও প্রেমকুঞ্জে যাঁরা থাকতে চান তাঁদের জন্য একটা স্পেশাল ব্যবস্থা।
প্রেমকুঞ্জ এক অদ্ভুত জায়গা। কলাকুঞ্জের অন্দরমহল পেরিয়ে পিছনে একটি রাস্তা সোজা গিয়ে পৌঁছেছে প্রেমকুঞ্জে। মস্ত এক অট্টালিকা। প্রাচীন প্রাসাদ যেমন হয়, তেমনই স্থাপত্যে তৈরি। ভিতরে প্রবেশ করলে ঠিক যেন একটি ফ্রেম সমেত কাচ বাঁধানো ফটো। কাচের অংশটি পুরোটাই জলাশয়। অর্থাৎ সুইমিং পুল। শুধু নির্মাণটি রাজাদের আমলের। আর চারধারে ফ্রেম অংশটি লম্বা সার সার খিলানে সাজানো বারান্দা। এবং বারান্দার একপাশে পর পর ঘর। অধিকাংশ ঘরই মিলনকক্ষ। তার মধ্যে কোনওটি বিশাল হলঘর যেখানে সকলে মিলে নাচ-গান-পানাহারের ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রেমকুঞ্জ যৌনতার মুক্তাঞ্চল গণিকারা এখানে তাদের নায়ক বা ক্লায়েন্টদের সঙ্গে তাদের ইচ্ছেমতো প্রেমলীলা করে। কোনও নিষেধ নেই। নায়কের নির্দেশেই সবকিছু চলে। তার জন্য দিন প্রতি এক একজন নায়ক প্রায় লক্ষাধিক টাকাও ব্যয় করে। অবশ্য প্রেমকুঞ্জে যারা নায়ক হয় তাদের কাছে এক লক্ষ টাকা হাতের ময়লা ছাড়া আর কিছুই নয়। নায়ক যদি ইচ্ছে করে তবে সে এখানেও তার ঈপ্সিত সুখ নিতে পারে অথবা তার ইচ্ছে হলে নায়িকা তাকে নিজের নামাঙ্কিত কক্ষেও নিয়ে যেতে পারে। রূপসা ও তার তিন সখী চিত্রলেখার কাছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর যখন প্রেমকুঞ্জে কাজ করার অধিকার পেল, পুরো হতবাক হয়ে গিয়েছিল অন্দরমহলে গিয়ে। এ যেন প্রাচীন ভারতবর্ষের একখণ্ড এখনও থেকে গিয়েছে। আধুনিক সভ্যতা যাকে স্পর্শ করতে পারেনি। চারজন কেউই গণিকাবৃত্তিতে নতুন নয়, একাধিক পুরুষসঙ্গ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সকলের থাকা সত্ত্বেও এই পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে প্রথম দিকে বেশ অস্বস্তিই হত। সবই মনে হত যাত্রা, নাটক কিংবা সিনেমার শূটিং। তারপর ধীরে ধীরে মজা লাগতে শুরু করল। প্রথম দিকে মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি ইত্যাদির অভাব যেন দম বন্ধ করে দিত ওদের। সেটাও একসময় কেটে গেল। এমনকি এই রূপমঞ্জরীর বাইরে যে আধুনিক পৃথিবী রয়েছে তার থেকে বঞ্চিত থাকার কষ্টটাও কবে যেন কমে গেল। চিত্রলেখা ট্রেনিং-এর সময় মাঝে মাঝেই বলতেন, আমি জানি তোমাদের প্রথম প্রথম কষ্ট হবে, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, আধুনিক জীবনযাত্রা ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হবে, কিন্তু এটাও মনে রেখো, যেদিন এগুলোকে ভুলতে পারবে সেদিনই শান্তি পাবে। কী রয়েছে বলো বাইরের পৃথিবীতে? শুধু হানাহানি, খুন, লড়াই, ঈর্ষা, চুরি, ডাকাতি এই তো! এসব থেকে দূরে থাকাই ভালো। রূপমঞ্জরীর পৃথিবীতে শুধু প্রেম রয়েছে, ভালোবাসা রয়েছে। প্রকৃতির স্বাভাবিক সৌন্দর্য রয়েছে। তাকে উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছ তোমরা। গ্রহণ করো। ভুলে যাও বাইরের কদর্য জগতকে। এতকাল তো তোমরা বাইরের পৃথিবীকে দেখেছ, খুব সুখী হতে পেরেছ কি? পারোনি। কেউ সুখী নয়, এমন কি এখানে যারা তোমাদের সঙ্গসুখ লাভ করতে আসবে তারাও কেউ সুখী নয় বলেই আসবে। আর নিজে সুখী না হতে পারলে অন্যকে সুখী করবে কীভাবে? তাই নিজেকে বোঝাও। অতীতকে ভুলে গিয়ে মনে মনে এই ভাবনাকে প্রশ্রয় দাও যে তুমি প্রাচীন ভারতবর্ষের এক গণিকা।
চিত্রলেখা এমনভাবে কথাগুলো বলতেন যে সরাসরি বুকের ভেতরে গিয়ে গেঁথে যেত। এবং দিনের পর দিন এক প্রাচীনতায় বসবাস করতে করতে একসময় সেটাই যেন সত্যি হয়ে উঠল। আর ইচ্ছে করত না বাইরের পৃথিবীকে দেখতে।
এ যেন এক স্বপ্নের জগত। ঝগড়া, অশান্তি, খুনোখুনিহীন একটা আলাদা পৃথিবী।
বিকেল চারটে নাগাদ রূপবাজারে ঘুরছিল রূপসা। সঙ্গে ফিলিপ। ফিলিপ একজন আমেরিকান ধনকুবের। বয়স একান্ন। শৌখিন লোক। ছয় ফুটের ওপর হাইট। পেটাই চেহারা। সোনালি চুল, দাড়ি-গোঁফ। খালি গা। পরনে একটি সিল্কের সাদা ধুতি। গলায় একটি সোনার হার, অন্যটি ফুলের, দুই হাতে সোনার বালা। ফিলিপের শরীর থেকে ভুরভুর করছে কস্তুরী আর চন্দন মেশানো গন্ধ। গত পরশু থেকে ফিলিপ রূপসার নায়ক হয়েছেন। নিউইয়র্কে থাকেন। ভারতবর্ষে বেড়াতে এসেছেন পনেরো দিন আগে। অনেক জায়গা ঘুরে শেষে কলকাতা এবং তারপর রূপনগরে। রূপনগরের প্রেমকুঞ্জের কথা তাঁর আগে থেকেই জানা ছিল, তাই সেক্রেটারি ওঁর হয়ে বুকিং করে নিয়েছিল আগেই। ফিলিপ প্রেমকুঞ্জে প্রবেশ মাত্র ওঁকে যখন ক্যাটালগ দিয়ে নায়িকা পছন্দ করতে বলা হয় উনি তখন রূপসাকে পছন্দ করেন। প্রেমকুঞ্জের নিয়ম এমনই। নতুন ক্লায়েন্ট এলে ওই সময় যে গণিকারা নির্দিষ্ট কারও সঙ্গে এনগেজড নেই তাদের প্রোফাইল দেখানো হয়, ক্লায়েন্ট সেখান থেকে নিজের ইচ্ছেমতো গণিকা বেছে নিতে পারে। একজনকেও বাছতে পারে অথবা একাধিকও। ফিলিপ শুধু রূপসাকে বেছেছেন। এই রূপমঞ্জরীতে রূপসার বেশ কদর রয়েছে। ওর শ্যামলা অথচ মসৃণ ত্বক এবং গোটা শরীরের মধ্যে ভারতীয় নারীত্ব পূর্ণমাত্রায়। ফলে ক্লায়েন্টদের কাছে রূপসার চাহিদা সবসময়েই। এই রূপমঞ্জরীতে রূপসাদের স্যালারি হয় একটি বিশেষ পদ্ধতিতে। একটা ফিক্সড স্যালারি তো রয়েছেই কিন্তু তার ওপর রয়েছে কমিশন। প্রতি মাসে তুমি যত ক্লায়েন্ট অ্যাটেন্ড করতে পারবে, তাদের স্যাটিসফাই করতে পারবে এবং তাদের থেকে আরও নগদ খসাতে পারবে তার জন্য আলাদা কমিশন। এই কমিশনের জন্যই এখানকার বেশ্যারা আপ্রাণ চেষ্টা করে তাদের ক্লায়েন্টকে নানা ছলাকলায় একবারে নিংড়ে নেওয়ার। কিন্তু ক্লায়েন্ট প্রেমকুঞ্জের ভেতর খরচ করবে কোথায়? তার জন্যই রূপবাজার। এই বাজারে হরেক রকমের দোকান। কোথাও সুগন্ধী বিক্রি হচ্ছে তো কোথাও অলঙ্কার, কোথাও বস্ত্র তো কোথাও কথা বলা তোতাপাখি। সুরা কিংবা পুষ্পহার ইত্যাদি নিয়ে এক একটি ছোট দোকানে এক একজন দোকানি বসে। আর নায়িকারা তাদের নায়কদের নিয়ে আসে এই বাজারে। বায়না করে আমাকে তোতাপাখি কিনে দাও কিংবা স্বর্ণালঙ্কার। কস্তুরী মৃগ কিংবা মুক্তাভস্ম দেওয়া তাম্বুল অথবা সুরা। প্রেমরসে মত্ত নায়ক তখন নায়িকার মুখ থেকে একটি আবদার শোনার অপেক্ষায়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রেশমি থলে থেকে বেরিয়ে আসে স্বর্ণমুদ্রা। হ্যাঁ, এটাই দস্তুর। এখানে এই রূপবাজারে কেনাকাটি করতে হলে ইউরো বা টাকা অথবা ডলার নয়, স্বর্ণমুদ্রায় পেমেন্ট করতে হয়। আর এই স্বর্ণমুদ্রা কিনতে হয় রূপমঞ্জরীর কাউন্টার থেকে। ধরা যাক ক্লায়েন্ট একলাখ টাকা জমা করল, তার পরিবর্তে কাউন্টার থেকে ওই মূল্যের স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হল। এবার গণিকার কাজ হল ওই স্বর্ণমুদ্রা সে যতটা খসাতে পারবে তার ওপর পারসেন্টেজ। এক একটি স্বর্ণমুদ্রার ক্রয়মূল্য এক হাজার টাকা। গণিকা তার নায়কের কাছে বায়না করল আমাকে একটি সোনার কর্ণিকা কিংবা কটিবন্ধ কিনে দাও। দোকানি তার দর হাঁকল দশ স্বর্ণমুদ্রা অর্থাৎ দশ হাজার টাকা। সেই অলংকার দিয়ে নায়ক তার নায়িকার মন জয় করল। এইভাবে সেই স্বর্ণমুদ্রা খরচ করে দেখা গেল সেই একশোটি মুদ্রার মধ্যে নব্বইটি খরচ করেছে। প্রেমকুঞ্জ থেকে ফেরার সময় বাকি দশটি মুদ্রা কাউন্টারে জমা দিলে তার দশ হাজার টাকা রূপমঞ্জরীতে তার থাকা খাওয়া ফুর্তি ইত্যাদি সহ মোট খরচের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট হবে। এটা নেহাতই একটা খেলা। আর ক্লায়েন্ট ফিরে যাওয়ার পর সেইসব জিনিস আবার বাজারে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেরত চলে যায়। শুধু সেই গণিকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যুক্ত হয় অতিরিক্ত ইনসেনটিভ। এই ইনসেনটিভটাই সবথেকে বেশি আকর্ষণীয়। সেই কারণে সকল গণিকাই তার নায়কের কাছ থেকে ছলাকলার মাধ্যমে যত বেশি সম্ভব মুদ্রা খরচ করানোর চেষ্টায় থাকে। কিন্তু এই সকল খরচই এমনভাবে করতে হবে যাতে নায়ক একবারের জন্যও রুষ্ট না হয়, একবারও তার মনে এমন ভাবনা না আসে যে তাকে ঠকানো হচ্ছে। চিত্রলেখা তাঁর প্রশিক্ষণকালে রূপসাদের শিখিয়েছিলেন, বারাঙ্গনা ছয় প্রকার, যথা, (১) পরিচারিকা, (২) কুলটা, (৩) স্বৈরিণী, (৪) নটী, (৫) শিল্পকারিকা, (৬) প্রকাশবিনষ্টা। এর মধ্যে তোমরা মূলত নটী। আর নটীর মধ্যে শিল্পকলার সমাবেশ সবথেকে বেশি থাকে। অভিনয়ও একটি কলা। যার দ্বারা তোমরা নায়কের মনকে বশ করবে। তাকে সম্মোহিত করবে। মনে রাখবে তোমার ক্লায়েন্ট কিন্তু এখানে অর্থব্যয় করতেই এসেছেন। তোমার কাজ হল তাঁর খরচটাকে বাড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু সরাসরি জোর করে নয়। প্রেমের মাধ্যমে।
রূপসা চিত্রলেখার প্রতিটি শিক্ষাকে এমনভাবে আত্মস্থ করেছে যে খুব দ্রুত রূপমঞ্জরীর একজন অন্যতম ব্যস্ত গণিকা হয়ে উঠেছে। ম্যানেজমেন্ট ওর কাজে খুশি। সারাদিনে যেটুকু সময় নিজস্ব অবসর জোটে তখন খুব মন দিয়ে চিত্রলেখার শিক্ষাগুলিকে মনে মনে আওড়ায়, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নাচ, অভিনয় এবং নানারূপ আভরণ কীভাবে পরিধান করতে হয়, কী ভঙ্গিতে শরীরকে নিরাভরণ করলে নায়কের কাম সর্বাপেক্ষা অধিক বৃদ্ধি পায় এইসব অনুশীলন করে। এবং চিত্রলেখা কিছু বইও দিয়েছেন ওদের সকলকে, কামশাস্ত্র এবং অন্যান্য কলা বিষয়ক। সেগুলোকেও খুব মন নিয়ে পাঠ করে রূপসা। এখন ও নিজেও কোনো পুরুষকে দেখে অনায়াসে বুঝে যায় সে পুরুষ বৃষ না মৃগ, শশ না অশ্ব প্রকৃতির? যেমন এই ফিলিপ বৃষ জাতীয় পুরুষ।
বহুগুণ বহু বন্ধুঃ কামোঃ নতাংগঃ
সকল রুচিত দেহঃ সত্যবাদী বৃষোহয়ম।
বৃষ শ্রেণির পুরুষের কপাল উঁচু এবং চওড়া। গলা এবং পেট মোটা। দেহ গৌরবর্ণ, হাত এবং পা লম্বা হয়। হাত-পায়ের তালু রক্তাভ। মধুরভাষী, লজ্জা খুব কম এবং সিংহের মতো এদের বিক্রম হয়। প্রায় সবকটি লক্ষণই ফিলিপের সঙ্গে মেলে। ফিলিপের শিশ্নটি অন্তত নয় ইঞ্চি দীর্ঘ এবং দৃঢ়। মিলনের সময়ে প্রবল বিক্রম।
অবশ্য দীর্ঘকাল আগে থেকেই সব পুরুষের শরীর রূপসার কাছে একইরকম লাগে। কোনও আলাদা অনুভূতি নেই। চিত্রলেখা অভিজ্ঞ, ঠিক চিনেছেন রূপসাকে। বলেছেন, তোমাকে নিয়ে আমার বেশ চিন্তা। তুমি পুরুষকে তীব্র ঘৃণা করো, তোমার সঙ্গমের মধ্যেও সেই ঘৃণা প্রকাশ পায় অথচ কামকলায় তুমি পটু। পুরুষকে ভালোবাসতে শেখো। তোমার কাজকে উপভোগ করো।
রূপসা শুনে বলেছে, চেষ্টা করব, মা। পুরুষের কাছে আমি কোনওদিন এমন কিছু পাইনি যার জন্য তার প্রতি প্রেম জন্মাবে। তবু চেষ্টা করব।
হ্যাঁ, সঙ্গমকে প্রতিহিংসা কোরো না, এ হল প্রেমের প্রকাশ।
রূপসা শোনে, বোঝে, কিন্তু এটাও বোঝে পুরুষের জন্য ওর অন্তরে শুধু এক পৃথিবী ঘৃণা, আক্রোশ ছাড়া আর কিছু নেই। আর সেই ঘৃণা, সেই ক্ষোভকে উগরে দেওয়ার প্রশস্ত পথই এই গণিকাবৃত্তি। ওর রূপ, লাবণ্য, সঙ্গমের ক্ষমতা, উৎকর্ষের কাছে বিভিন্ন পুরুষ যখন ঘায়েল হয়ে সারমেয়বৎ আচরণ করে তখন রূপসার মনে হয় তার এই গণিকাবৃত্তি সার্থক।
রূপসা আজ সেজেছে ফুলের সাজে। খোঁপায়, গলায়, দুই হাতে, কোমরে জুঁই ফুলের মালার সাজ। এ সবই একটু আগে ফিলিপ কিনেছে রূপবাজার থেকে। তারপর নিজে হাতে সাজিয়েছে রূপসাকে। রূপসাও একটি মালা নিয়ে পরিয়েছে ফিলিপকে।
ফিলিপের একহাতে সুরাপাত্র, অন্যহাতে রূপসাকে বেড় দিয়ে জড়িয়ে ঘুরছে। বাজারের মাঝে মোরগের লড়াই চলছে। তাই দেখছে অনেকে ভিড় করে। এও এক খেলা। এখানেও বাজি লড়ে দুই গণিকার নায়ক। ওই স্বর্ণমুদ্রাতেই বাজি লড়া হয়। বাজারে ঘুরতে ঘুরতে ফিলিপ মাঝে মাঝেই রূপসাকে আলিঙ্গন, চুম্বন করছে। স্তনে, পিঠে, নিতম্বে ইচ্ছেমতো হাত বোলাচ্ছে। রূপসাও সাপের মতো প্রায় জড়িয়ে রয়েছে ফিলিপকে। ওর হাতেও একটি স্ফটিকের পানপাত্র। তারমধ্যে খুব সামান্যই অতি মূল্যবান সুরা অবশিষ্ট রয়েছে। আজ ফিলিপ ফিরে যাবে। এই দুইদিনে ফিলিপকে প্রচুর আনন্দ দিয়েছে রূপসা। ফিলিপও খুব খুশি রূপসাকে পেয়ে। ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বারবার বলেছে পৃথিবীর বহু দেশের নানা ব্রথেলে গিয়েছে ফিলিপ, সেরা সুন্দরীদের সঙ্গ করেছে কিন্তু রূপমঞ্জরীর মতো ব্রথেল এবং রূপসার মতো বেশ্যা ও আগে কখনও পায়নি।
রূপসা খুব খুশি হয়েছে, মানে খুশির ভান। কারণ এখানে যে নায়করা আসে তাদের সকলেরই এক রা। রূপসারা আসলে হল সেলসম্যান। কাস্টমারকে মিষ্টি কথা, আচরণে সন্তুষ্ট করে তাদের কাছ থেকে সর্বাধিক খরচটি করিয়ে নেওয়ার কৌশলই হল একজন আদর্শ সেলসম্যানের কাজ।
বাজার থেকে কেনাকাটি শেষ হওয়ার পর ফিলিপ বলল, চলো এবার স্নান করি।
হ্যাঁ, চলো।
বাজার ছেড়ে বেরিয়ে এল দুইজনে প্রেমকুঞ্জের স্নানাগারে। পাথরে বাঁধানো চৌকো একটি জলাশয়। বুক সমান সুগন্ধী জল। নানা রকমের ফুল ছড়ানো রয়েছে। সেখানে জলকেলিতে ব্যস্ত কয়েকজন গণিকা তাদের নায়কদের নিয়ে। খিলখিল হাসির রব উঠছে থেকে থেকে। কেউ আবার জলেই সঙ্গমরত। কারও পরনে নামমাত্র বস্ত্র, কারও সুতোটি নেই। ফিলিপ আগেই রূপসাকে নিরাবরণ করে ফেলল তারপর নিজের বস্ত্রটি খুলে ফেলে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে রূপসাকে পাঁজাকোলা করে জলে নামল, স্নানবিলাস চলল বেশ কিছুক্ষণ। তারপর ফিলিপ জল থেকে উঠে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। রূপসা ফিলিপের গোটা শরীরে চন্দনবাটা লেপে দিতে থাকল। চন্দন, কুমকুম, নানারকমের ফুল, মালা, তাম্বুল, সুরা, সুগন্ধী ইত্যাদি সব রাখাই থাকে প্রেমকুঞ্জের বিভিন্ন স্থানে। রূপসার নিজের ঘরেও এইসকল উপচার সাজানো থাকে। পরিচারক এসে সাজিয়ে দিয়ে যায়। বৃষ প্রকারের পুরুষের যা গুণ থাকে তার প্রায় সবই ফিলিপের রয়েছে কিন্তু ফিলিপ সেই প্রকারের পুরুষ যারা সঙ্গম-এর সময় সঙ্গীকে যন্ত্রণা দিতে এবং নিতে ভালোবাসে। রূপসার এই অত্যাচার সহ্য হয় না। কিন্তু ওর কপালে অধিকাংশই জোটে এমন। শরীরের নানা জায়গায় কালশিটে, দংশন, নখের আঁচড়ের দাগ তো রয়েছেই তার সঙ্গে ফিলিপের পাশবিক শক্তির ঝাঁঝ সহ্য করা কোনও ভারতীয় মেয়ের পক্ষে খুব কঠিন। গোটা শরীরে ব্যথা করে দিয়েছে। কিন্তু উপায় নেই, ক্লায়েন্টকে কোনওভাবেই নিজের অপছন্দ জানানো যাবে না। পুরো কাহিল হয়ে পড়েছে রূপসা। আজ সন্ধেবেলায় ফিলিপ নিজের দেশে ফিরে যাবে। বিকেলেই এখান থেকে চলে যাবে ও। তারপর টানা একদিন রেস্ট নিতে হবে।
চন্দন মাখাতে মাখাতেই ফিলিপ চিত হয়ে শুল। ওর পুরুষ অঙ্গটি আবার জেগে উঠেছে। অপরিসীম শক্তি। আজ সকাল থেকে এই দুপুরের মধ্যে তিনবার মিলিত হয়েছে ফিলিপ। কিন্তু ক্লান্তি নেই। ফিলিপ উঠে বসে রূপসাকে চিত করে শুইয়ে দিল তারপর রূপসার পা দুটিকে জড়ো করে সোজা ওপরে তুলে দিয়ে নিজের নিজেকে প্রবেশ করাল রূপসার মধ্যে। চোখ বন্ধ করে আহ করে উঠল রূপসা। মিলনের এই আসনটির নাম বেণুদারিতক। গতকাল ফিলিপকে শিখিয়েছিল রূপসাই। অনেকগুলো আসনের মধ্যে এটাই ওর পছন্দ হয়েছে। অনেকবার বলেছে রূপমঞ্জরীতে আবার আসবে, এত অসাধারণ জায়গা আগে কখনও দেখেনি, ওর মতে ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ কলা নাকি কামকলা। শুনে বেশ হাসিই পেয়েছে রূপসার। এত কিছু থাকতে শেষে কামকলা! অবশ্য যার যা ভালো লাগে।
আধঘণ্টা ধরে নানা ভঙ্গিতে সঙ্গম চলল দুজনের। কখনও ফিলিপের ওপর উঠে বসে পীড়িতক আসনে, কখনও ফিলিপ উঠে দাঁড়িয়ে রূপসাকে নিজের লিঙ্গে গেঁথে কোলে নিয়ে স্থিররত আসনে। ফিলিপ যেন একটা ঝড়।
মিটে যাওয়ার পর ক্লান্ত রূপসা শরীর এলিয়ে দিল ফিলিপের কোলে। ফিলিপ দুটি সাজানো পান তুলে নিয়ে একটি পান রূপসার মুখে দিল, অন্যটি নিজের। গোটা শরীর ক্লান্তি আর বেদনায় জর্জরিত। ফিলিপও যেন একটু ক্লান্ত মনে হল এবার। রূপসাকে বলল, চলো, একসঙ্গে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করা যাক। তোমার ঘরেই কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে নিই।
ক্লায়েন্টের আবদার। উঠল রূপসা। চিরশ্রীকে দেখল রূপসা, ও নিজের নায়কের সঙ্গে জলে নামছে। রূপসার সঙ্গে এক মুহূর্ত চোখাচোখি হতে রূপসা হাত নাড়ল। চিরশ্রীও চুমু খাওয়ার ভঙ্গি করল ওকে। ওর নায়কটিও হাসল রূপসাকে দেখে। রূপসাও। এখানে সকলে সারাক্ষণ হাসিখুশি। প্রেমকুঞ্জের বাইরে বেশ কয়েকটি রথ দাঁড়িয়ে। এদের এখানেই ডিউটি। একটিতে উঠে বসল রূপসা। সারথিকে বলল, রূপসায় চলো।
গাড়ি চলতে শুরু করল। পথটুকু ফিলিপ নিজেই কথা বলে গেল। সেই একই বিষয়, রূপসার প্রশংসা, রূপমঞ্জরীর সুখ্যাতি। এখানে বিদেশি ক্লায়েন্টদের মধ্যে একটা ব্যাপার খেয়াল করেছে রূপসা, এদের মধ্যে ভণ্ডামোটা কম। শরীর ভোগ করতে এসে সেটাই ভোগ করে এবং ভালো লাগলে শরীরেরই প্রশংসা করে। অনেক ইন্ডিয়ান আসে যারা আবার ন্যাকান্যাকা প্রেমের কথা বলে, ভালো লাগে না রূপসার। কিন্তু এই পেশায় আসলের থেকে ভণিতাটাই প্রধান। চিত্রলেখাও তাঁর ট্রেনিং-এ বারবার শেখান, শরীরভোগকে সর্বোচ্চ সুখকর করে তুলতে পারে প্রেম, নায়ককে যত প্রেমময় করে তুলতে পারবে সে তত সুখ পাবে।
রূপসার নিজের ঘরে পৌঁছে দুজনেই সোজা বিছানায়। এসি অন করাই ছিল। ঘরের ভেতরে মনোরম ঠান্ডা। টাটকা ফুলের গন্ধে ম ম করছে। সুন্দর পরিষ্কার টান টান বিছানা।
ফিলিপ বলল, এসো, আজকের মতো একসঙ্গে একঘণ্টা ঘুমিয়ে নিই। তারপর বিদায় নেব। তোমার জন্য আমি একটা বিশেষ উপহার রেখে যাব আজ। বলে নিজের আঙুল থেকে একটা হিরে বসানো সোনার আঙটি খুলে রূপসার আঙুলে পরিয়ে দিল। ফিলিপের যা মোটা আঙুল রূপসার বুড়ো আঙুলে পরালেও ঢিলে হবে তবু অনামিকায় ওই বহুমূল্য আঙটিটি পেয়ে খুব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ফিলিপকে গভীরভাবে চুম্বন করল। ঠোঁটে, গলায়, বুকে। আঙটিটির মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা হবেই। এটা যদিও ফিলিপ জানে না যে ও চলে যাওয়ার পরেই রূপসাকে এই আঙটিটি জমা করে দিতে হবে রূপমঞ্জরীতে। গণিকারা যা ব্যক্তিগত উপহার পায় তা সবই জমা করে দিতে হয়, ফলে সকল গণিকার মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে ঈর্ষার কোনও সুযোগ নেই। এবং কে কী উপহার পেল তা যেহেতু একমাত্র সেই গণিকা এবং ম্যানেজমেন্ট ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না ফলে সকলের মধ্যেই দিব্যি সদ্ভাব। তবে প্রাপ্ত উপহারের মূল্য হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ইনসেনটিভ জমা পড়ে যায় গণিকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
এবার ফিলিপ আর আদরের আগ্রহ দেখাল না। রূপসাকে কোলবালিশের মতো জড়িয়ে শুয়ে পড়ল। আর শোবার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম। ফিলিপের নির্লোম বিশাল চেহারার মধ্যে আটকে থেকে রূপসাও ঘুমিয়ে পড়ল একসময়।
ঘুমের মধ্যেই ছেঁড়া ছেঁড়া কতগুলো ছবি তৈরি হতে থাকল তারপর ছবিগুলো পরপর জুড়ে গিয়ে চলচ্চিত্রের মতো একটা স্বপ্ন। স্বপ্নে চরিত্রগুলো কথা বলতে শুরু করল….